• Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    অদেখা সত্য

    সোনালী গুপ্ত অধ্যায় ১ – নিখুঁত প্রারম্ভ রচনার জীবন শুরু হয়েছিল এক নিরবচ্ছিন্ন শান্তির আভায়, যা অনেক দিন ধরে সে অনুভব করছিল। সকালগুলো নরম আলোয় ভরে ওঠা রঙিন কফির গন্ধ এবং অরুণের সঙ্গে হালকা কথোপকথনের মধ্য দিয়ে শুরু হতো। শহরের মাঝারি আয়ের একটি বস্তিতে বসবাস করলেও তাঁদের জীবনযাত্রা সবসময়ই সরলতার মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে পেত। রচনা এবং অরুণের সম্পর্ক দেখলে মনে হতো, তাঁদের সুখী দাম্পত্য জীবন যেন এক নিখুঁত ছায়া যা কখনও ফাটে না। রান্নাঘরে অরুণের হাসি, রচনার চোখে তার মৃদু দৃষ্টি, ছোট্ট বিকেলের খোলা জানালার বাইরে পাখির ডাক—সবকিছুই যেন এক নিরবসঙ্গীতের মতো। তবে, রচনার মন কিছুটা অশান্ত থাকত এমন সময়গুলোতে।…

  • Bangla - কল্পবিজ্ঞান

    মরীচিকার শহর

    অম্বরীশ সেন অচেনা সকালের শহর—এ যেন এক অনন্ত মরীচিকা, যেখানে প্রতিটি দিন শুরু হয় সম্পূর্ণ নতুন এক জগৎ নিয়ে। আরিয়ানের ঘুম ভাঙতেই জানালার বাইরে যে দৃশ্য ধরা পড়ে, তা কখনোই আগের দিনের সঙ্গে মেলে না। কখনো দেখা যায় রাস্তার দুই ধারে গজিয়ে উঠেছে অচেনা ভবন, আবার কখনো আগের দিনের চেনা পার্কের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বিশাল কাঁচের টাওয়ার। ফুটপাতের রঙিন পাথর রাতারাতি বদলে গেছে, ট্রাফিক সিগন্যালের স্থানে হঠাৎ দেখা যায় একটি হোলোগ্রাফিক স্ক্রিন, যা শহরের নতুন মানচিত্র দেখাচ্ছে। এমনকি আকাশের রঙও যেন প্রতিদিনের সকালকে আলাদা করে তুলতে চায়—কখনো হালকা বেগুনি, কখনো সোনালি, আবার কখনো অদ্ভুত নীলচে ধূসর। আরিয়ান প্রথমে ভাবে এটা…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    অন্তরঙ্গ পরিচয়

    অন্তরা মান্না অধ্যায় ১ – মায়ার জীবন, বাইরের চোখে, এক নিখুঁত শান্তির গল্পের মতো মনে হয়। সকালে উঠে রিয়াদের সঙ্গে চায়ের কাপ ভাগ করে নেওয়া, রাস্তার ধারের ছোট্ট ফুলের দোকান থেকে রঙিন ফুল আনা, এবং বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে হালকা আড্ডা—সবকিছু যেন একটি সুন্দর ছন্দে বাঁধা। মায়া মনে করত, এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই তার জীবনের আসল সম্পদ। রিয়াদের হাসি, তার কোমল স্পর্শ, এমনকি তার ক্ষুদ্র অভ্যাসগুলোও—যেমন বইয়ের পাতায় আঙুল রেখে পড়া, কফি খাওয়ার ধরণ—সবই মায়ার মনে একধরনের উষ্ণতা সৃষ্টি করত। তারা দুজনেই একে অপরের মেলবন্ধনে গভীরভাবে জড়িয়ে ছিল, এমনকি দিনের শেষে নিঃশব্দে একে অপরের হাত ধরার অভ্যাসও মায়াকে অদ্ভুত সান্ত্বনা দিত।…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চৌধুরীবাড়ির শেষ অতিথি

    তিথি বসু পর্ব ১: সেই ভগ্নপ্রায় দরজার শব্দ নদীয়ার কুয়াশা ঢাকা বিকেলে ট্রেন থেকে নামতেই শুভমর মনে হলো সময়টা যেন হঠাৎ করে থমকে গেছে। বাইরের হাওয়া ঠান্ডা, কিন্তু বাতাসের মধ্যে কিছু একটা গুমোট। সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রিকশাওয়ালার দিকে এগোল। “চৌধুরীবাড়ি যাবেন?” জিজ্ঞেস করতেই রিকশাওয়ালার মুখটা কেমন থমথমে হয়ে গেল। “চৌধুরীবাড়ি? ওই যে শ্মশানের পাশে যেটা?” শুভম মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, ওটাই। আমি গবেষণার জন্য এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি আছে।” রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “আমি ওইদিক যাই না বাবু। ওখানে এখন কেউ থাকেও না।” শেষমেশ অনেক বোঝানোর পরে একজন রাজি হলো। অন্ধকার নেমে আসছিল, আর চৌধুরীবাড়ির পথটা খড়ি গাছ…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অন্তহীন অন্ধকারে

    অনির্বাণ ঘোষ অদ্ভুত ধ্বনি গাঁয়ের শেষ সীমানায়, ঘন জঙ্গল আর বুনো পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল বহুতলা ভুতের বাড়ি, যেখানে কোনোদিন মানুষের পা পড়েনি। গাঁয়ের বয়স্করা বলতেন, “এ বাড়ি শাপিত, এখানে বাস করা লোকের ভাগ্য বিপর্যস্ত।” কিন্তু আধুনিক যুবকরা এসব অন্ধবিশ্বাসকে গা ছেড়ে দিয়েছিল, আর তার মধ্যে এক জন ছিল আরিফ। এক রহস্যপ্রেমী সাংবাদিক, যিনি শহর থেকে এই গ্রামে এসেছিলেন কিছু অদ্ভুত ঘটনা অনুসন্ধান করতে। আরিফের প্রথম দিনের সন্ধ্যায় যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত যাচ্ছিল, তখন গাঁয়ের বাজারের এক কনফেকশনারি দোকানে বসে শুপ্রা নামক এক স্থানীয় মেয়ের সাথে পরিচয় হলো। শুপ্রা কথায় কথায় বলল, “আপনি কি বহুতলা ভুতের বাড়ি সম্পর্কে জানেন?”…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    নয়ন ঘোষাল নেই

    অনিন্দ্য দাশগুপ্ত পর্ব ১: যে মানুষটি নিখোঁজ পুজোর ঠিক আগের বিকেল, আকাশে হালকা সোনালি রোদ। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার এক ফ্ল্যাটবাড়িতে চার তলায় হঠাৎ কোলাহল—”নয়নবাবু কোথায়? ফোন ধরছেন না!” ফ্ল্যাটের দারোয়ান রবীন, পাশের ফ্ল্যাটের মৌসুমীদির সঙ্গে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে আছে। নয়ন ঘোষাল, ৬৮ বছর বয়স, অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কেরানি। প্রতিদিন সকালে বারান্দায় বসে চা খেয়ে ‘আনন্দবাজার’ পড়তেন। ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হতো না, নাতির পড়াশোনা তদারকি করতে হতো না, এমনকিছুই ছিল না তাঁর জীবনজুড়ে। স্ত্রী সুপর্ণা গতবছর চলে গেছেন—স্তব্ধতা ও অভ্যাসের মাঝখানে একা দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি যেন হঠাৎ নেই। “ফোন বন্ধ, দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ নয়। মানে উনি নিজের…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    অলীক ধোঁয়া লেখক

    দীপন চক্রবর্তী পর্ব ১ ঘড়ির কাঁটা রাত সোয়া বারোটায় এসে থেমে গেছে যেন। কলকাতার উত্তরের এই পুরনো পাড়াটায় এমনিই রাতের নির্জনতা নেমে আসে একটু আগে, কিন্তু আজকের রাতটা যেন আরও ভারী, যেন বাতাসেও কেউ গোপনে নিঃশ্বাস ফেলছে। রায়চৌধুরি বাড়িটা ছিল এক সময় নামকরা জমিদারদের বাসভবন, এখন তা আধভাঙা প্রাসাদ, চারপাশে বড় বড় শালিকের ডাক আর পেছনের বাঁশবনে মৃদু শব্দে ফিসফিসে বাতাস। আজ সেই বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী সায়ন্তন রায়চৌধুরি ফিরেছে বিদেশ থেকে, বারো বছর পর। এয়ারপোর্ট থেকে সে সোজা এসেছিল এখানেই, চালকের হাতে চাবি দিয়ে ঢুকেছিল সেই গম্বুজওয়ালা লোহার ফটক ঠেলে। কিন্তু তার ফেরা শুধুমাত্র একটা ছুটির কারণে নয়। পৈতৃক সম্পত্তির…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    অলীক ছায়ার ঘর

    অলীক ছায়ার ঘর রোজকার আলোচ্য বিষয়ের বাইরে কলকাতার একটি ছোট্ট ফ্ল্যাট, বালিগঞ্জের গলিতে। জানালার পাশে বসে শিউলি তাকিয়ে থাকে একঘেয়ে আকাশের দিকে। মেঘ জমেছে, কিন্তু বৃষ্টি আসে না। যেমন তার জীবনে জমেছে ক্লান্তি, কিন্তু উপশম নেই। দশ বছর হয়ে গেল বিয়ের। রঞ্জনের সঙ্গে একসময় প্রেম ছিল, হাতে হাত রেখে সিনেমা দেখা, ট্রামে চেপে লেকের ধারে হাওয়া খাওয়া। এখন সেইসব স্মৃতি যেন পুরোনো কাপড়—আছে, কিন্তু ব্যবহার হয় না। রুটিনে বেঁধে গেছে জীবন। সকালে উঠে রান্না, অফিস, বিকেলে ফিরে টিভির আওয়াজ, রাতে নিঃশব্দ বিছানা। রঞ্জন বলে, — “আজ আবার টিফিনে ঝোল কম ছিল।” শিউলি মৃদু হেসে বলে, — “তুমি তো এমনিতেও কম…