• Bangla - ভ্রমণ

    পুরুলিয়ার লাল মাটি

    ঐশী মুখার্জি ট্রেনটা আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ছিল পুরুলিয়ার ছোট্ট স্টেশনে। জানালার ফাঁক দিয়ে লালচে ধুলো হাওয়ায় উড়ছিল, যেন মাটির গন্ধে মাখানো কোনো অদৃশ্য ধোঁয়া। রিনি ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে বসেছিল জানালার ধারে। কলকাতার চাকরিজীবনের ব্যস্ত, ধাতব আওয়াজে ভরা দিনগুলো থেকে বেরিয়ে সে এসেছিল, ঠিক এক মাসের জন্য। নিজের ইচ্ছেতেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে, বন্ধুদের কাছে এখনো সে সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক, অনেকটা পাগলামির মতো শোনায়। কিন্তু রিনির মনে হচ্ছিল, এই লালমাটি-ঢাকা পথই তাকে নতুন কিছু শিখিয়ে দেবে। স্টেশনটা ছোট, নিস্তব্ধ, বাইরে নামতেই সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি আর হকারের ডাক একসাথে কানে বাজলো। রোদটা ঝলমল করছিল, তবুও হাওয়ায় একটা শুষ্ক ঠান্ডা মিশে ছিল। রিনি বুকের ভেতর হঠাৎ…

  • Assamese

    ব্ৰহ্মপুত্ৰৰ এটা ৰাতি

    দেৱজ্যোতি ফুকন ১ বিহানৰ সুৰুয মূৰ তুলিবলৈ চেষ্টা কৰিলে কিন্তু গুৱাহাটীৰ আকাশ তেতিয়াই ধোঁৱাজুলি ৰঙৰ কপালেৰে ঢকা হৈ পৰিছিল। জাহাজঘাটলৈ নামি অহা জনসমুদ্ৰত আম্বুবাচী মেলাৰ জোয়াৰ স্পষ্ট — ৰঙীন গামোচা, ঢোলবাদন, পুৰণি ভক্তিগীতৰ ভাঁজেৰে জুৰি থকা নদীৰ গন্ধ। ব্রহ্মপুত্ৰৰ ওপৰত তেতিয়াই গাঢ় কুয়াশাৰ চাদৰ মাৰি বসি আছে, যেন কোনোৱে আকাশৰ পৰা নদীক ধূৱাৰে ঢাকি দিছে। নাওখন পানীৰ কাষত থিয় হৈ আছে, কিন্তু কাষ চাপিলেই দেখা যায় — কাণ্ডাৰীৰ হাতত ৰঙিন মাফ্লাৰ মৰা, চকুৰে দূৰলৈ চাওঁতে ধোঁৱাৰ মাজেৰে কিবা চিনিবলৈ চেষ্টা কৰিছে। যাত্ৰীৰ ভিৰ নাওৰ কাষৰ জাপি ধৰি ৰৈ আছে — কেউবা চাহৰ দোকানলৈ গৈছে, কেউবা গামোচাৰ পৰা মাটিৰ ধূলি ঝাড়ি…

  • Bangla - ভ্রমণ

    বালুচরের দিনগুলি

    মালবিকা সেনগুপ্ত   ঢাকার ধুলো-ধোঁয়া আর ট্র্যাফিকের চক্রব্যূহ পেরিয়ে যখন জয়িতা নামল মেঘনাঘাটের ছোট্ট ফেরিঘাটে, তখন সূর্য মাথার উপর একচিলতে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে। চারপাশে জনমানবশূন্য প্রান্তর, দুটো হেমন্তের কাক আর কয়েকটা শুকনো পাতার ঝটপট আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ নেই। ঠিক এইখানেই সে শুট করবে তার নতুন ট্র্যাভেল ভ্লগ: “Unfiltered Bengal”-এর এক বিশেষ পর্ব। “মোবাইল ডেটা কাজ করছে না? নো টাওয়ার?” – ক্যামেরাম্যান শান্তু মাথা চুলকে বলল। জয়িতা মাথা নাড়ল। ও জানত এই চর অঞ্চলে ঢুকলেই নেটওয়ার্ক ঘুমিয়ে যায়, মানুষের শব্দের চেয়ে নদীর শব্দ বেশি জোরালো হয়। “চর বলরামপুর”, গুগল ম্যাপে মাত্র একটা বিন্দু। কিন্তু সেই বিন্দুর মধ্যে যেন সারা…

  • Bangla - ভ্রমণ

    কাঞ্চনজঙ্ঘা: একটি শেষ চিঠি

    ঋদ্ধিমান চক্রবর্তী পর্ব ১: চিঠির খামে কাঞ্চনজঙ্ঘা পুজোর ঠিক আগের দিন সকালে মিঠির চিঠিখানা হাতে আসে—একটা পুরোনো বাদামি খামে, অদ্ভুত সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা ‘মিতালী সেন’ নামটা ঠিক তার ছেলেবেলার ডাকনামের পাশে। তবে এই ডাকনামটা আজ বহু বছর কেউ ডাকে না, এমনকি নিজের কাছেও মিঠি অনেককাল হয়ে গেছে মিসেস মিতালী বসু। কিন্তু চিঠিটা খুলতেই মনে হল, সময় যেন উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছে। প্রেরক: প্রমথেশ চৌধুরী। ঠিকানা: সেন ভিলা, হিলকার্ট রোড, দার্জিলিং। তারিখ: ১৯৮৬। মিঠি শিউরে উঠেছিল। ১৯৮৬? তা হলে এই চিঠিটা এখন তার হাতে পৌঁছেছে ৩৯ বছর পরে? চিঠির ভাঁজে আরও ছিল একটি ছোট স্কেচ—হাতের আঁকা, পেনসিলে আঁকা কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া, এক…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    অপরিচিত শহর

    কৌশিক দে অধ্যায় ১:  সুজন মল্লিক এক সাধারণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে জীবন ছিল একদম নির্ধারিত, সহজ, এবং পরিচিত। প্রাতঃকালের সূর্য ওঠার সাথে সাথে বাড়ির আঙিনায় গরু-ছাগল বাঁধা, মাঠে কাজের জন্য লোকজনের তাড়া, শীতের সময় কুপি দিয়ে আগুন জ্বালানো এবং বিকেলে পাট ক্ষেতের পেছনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার দিনযাপন। গ্রামের ছোটখাটো জীবন, যেখানে সমস্যা ছিল না বললেই চলে, একটানা গতিশীল থাকত। তবে সুজনের মনে এক অজানা আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার গ্রাম থেকে বেরিয়ে বড় শহরের এক নতুন দুনিয়ার দিকে পা বাড়ানোর। সে জানত, বড় শহরে যদি কাজের সুযোগ পায়, তবে সেখানে তার জীবনের বড় পরিবর্তন ঘটবে। গ্রামে সে যা কিছু জানত,…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    মেঘমল্লার

    মেরিলিনা মিত্র রেশমি সেনগুপ্ত আজকাল খুব ভোরে উঠে পড়েন। দুধের পাত্র বসিয়ে দেন চুলায়, চায়ের পাতা মেপে রাখেন একটা ছোট্ট কৌটোয়, আর বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ, যেন কোনো অদৃশ্য সুরকে কান পেতে শুনছেন। শহরটা জেগে ওঠে অজস্র শব্দে—ট্রাফিক, রিকশার ঘণ্টা, খবরের কাগজ ছুঁড়ে ফেলার আওয়াজে—কিন্তু রেশমির মনে হয়, এসব শব্দের ভিতর কোথাও যেন হারিয়ে আছে সেই সুর, যে সুর একদিন তাঁর গলা দিয়ে বেরোত, মেঘমল্লার বা ভৈরবী হয়ে। একসময় সারা কলকাতা চিনত রেশমির নাম—‘তালতলা মহোৎসবে যাঁর আলাপ শুনলে পাখিরাও স্তব্ধ হয়ে যেত।’ তারপর? সংসার। দুই সন্তানের মা, অরিন্দমের স্ত্রী, মাসে দু’বার পায়েস রান্না করা এক গৃহবধূ। রান্নাঘরের জানলা দিয়ে…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    নয়ন ঘোষাল নেই

    অনিন্দ্য দাশগুপ্ত পর্ব ১: যে মানুষটি নিখোঁজ পুজোর ঠিক আগের বিকেল, আকাশে হালকা সোনালি রোদ। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার এক ফ্ল্যাটবাড়িতে চার তলায় হঠাৎ কোলাহল—”নয়নবাবু কোথায়? ফোন ধরছেন না!” ফ্ল্যাটের দারোয়ান রবীন, পাশের ফ্ল্যাটের মৌসুমীদির সঙ্গে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে আছে। নয়ন ঘোষাল, ৬৮ বছর বয়স, অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কেরানি। প্রতিদিন সকালে বারান্দায় বসে চা খেয়ে ‘আনন্দবাজার’ পড়তেন। ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হতো না, নাতির পড়াশোনা তদারকি করতে হতো না, এমনকিছুই ছিল না তাঁর জীবনজুড়ে। স্ত্রী সুপর্ণা গতবছর চলে গেছেন—স্তব্ধতা ও অভ্যাসের মাঝখানে একা দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি যেন হঠাৎ নেই। “ফোন বন্ধ, দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ নয়। মানে উনি নিজের…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    ফেরা

    অধ্যায় ১: ফিরে আসা ট্রেনটা যখন শিয়ালদা স্টেশনে ঢুকল, তখন ঘড়িতে সকাল আটটা কুড়ি। জানলার বাইরে শহরটা যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে—ছোট ছোট চায়ের দোকান, ব্যস্ত হকার, হর্ন বাজানো ট্যাক্সির ভিড় আর মানুষের ছুটে চলা। অনুরাধা জানলার পাশে বসে ছিল নিঃশব্দে, কাঁধে একটি বাদামী চামড়ার ব্যাগ, চোখে পুরনো শহরটার টুকরো টুকরো ছবি। ট্রেনের গতি কমতে কমতে থেমে গেল, আর ঠিক তখনই যেন সময় থমকে দাঁড়াল তার কাছে। বিয়ের পঁচিশ বছর পর সে এই শহরে ফিরে এসেছে—যে শহর একদিন ছিল তার নিজের, আর এখন যেন একটু দূরের, অচেনা। মাথার মধ্যে কুয়াশার মতো ভেসে উঠছে সেই সব সকাল, যখন সে কলেজ শেষে মঞ্চে…

  • Bangla - ছোটগল্প

    পাহাড় ডাকে

    শ্রীজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ট্রেন ছাড়ার হুইসেল যখন শিয়ালদহ স্টেশনের কোলাহল কেটে রাতের নিস্তব্ধতাকে চিরে দিল, তখন আমি জানলার পাশে বসে সামনের সাত দিনের চিন্তায় ডুবে ছিলাম। ব্যাগে জুতসই জামাকাপড়, হাতে একটা নোটবুক, মাথায় শুধু একটাই ইচ্ছা—নিজেকে একটু খুঁজে পাওয়া। নামটা আগেই ঠিক ছিল—কালিম্পং। দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিক ঘুরে ফেলেছি অনেকবার, কিন্তু এই পাহাড়ি শহরটা আমার কাছে ছিল এক রহস্য। ট্রেন ছুটছে—কাঁচের বাইরে শহরের আলো এক এক করে ফিকে হয়ে আসছে। পাশে বসা সত্তরোর্ধ্ব ভদ্রলোক হঠাৎ কথা বলে উঠলেন, “উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন?” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ, কালিম্পং।” তিনি চোখ মুছলেন, “কালিম্পং মানে আমার শৈশব। আপনার ভালো লাগবে, খুব ভালো।” রাত বাড়ছে, ট্রেন এগোচ্ছে শিলিগুড়ির…