• Bangla - তন্ত্র

    কালীঘাট কোডেক্স

    অভ্রাংশু দত্ত অধ্যায় ১ – হারানো পান্ডুলিপি কলকাতার রাত কখনোই পুরোপুরি ঘুমোয় না। দক্ষিণ শহরতলির রাস্তাগুলোতে আলো-অন্ধকারের খেলা যতই সস্তা ল্যাম্পপোস্টে ঝিলমিল করুক, কালীঘাট মন্দির চত্বর যেন অন্য এক জগতের ছায়ায় ঢাকা থাকে। মন্দিরের চৌহদ্দিতে শঙ্খ আর ঘণ্টার ধ্বনি মিলেমিশে যায় গঙ্গার স্রোতের দূরবর্তী শব্দের সঙ্গে। কিন্তু আজ রাতটা অন্যরকম। অয়ন মুখার্জি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, হাতে একটি পুরনো টর্চ আর নোটবুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণ প্রাচীরের কাছে—যেখানে সাধারণ ভক্তরা কখনো যায় না। সে আসলে খুঁজছে এক গোপন সূত্র। সপ্তাহ খানেক আগে মন্দিরের পুরনো ভাণ্ডারঘরে সংস্কারের সময় মজুরেরা ভাঙা ইটের দেয়ালের ফাঁক থেকে একটা অদ্ভুত কাগজের খণ্ড পেয়েছিল। হলদেটে, প্রায় ঝুরঝুরে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চতুর্দোলার কনে

    অদ্রীশ সেনগুপ্ত পর্ব ১ : পূর্ণিমার রাত পূর্ববঙ্গ থেকে ভেসে আসা লোককথার মতোই যেন গল্পটা শুরু হয়েছিল। নদীর ধার ঘেঁষে ছোট্ট গ্রাম—দেবীপুর। এই গ্রামে আজও অনেক পুরনো আচার চলে, আর আছে নানারকম অদ্ভুত গল্প, যেগুলো নিয়ে লোকেরা আড্ডা দেয় সন্ধেবেলা পুকুরঘাটে বা মাঠের আলপথে বসে। তবে সবচেয়ে বেশি ফিসফাস হয় যে কাহিনী নিয়ে, তা হলো চতুর্দোলার কনে। এই গ্রামে বছর পঁচিশ আগে একটা বিয়ে ভেস্তে যায়। কনে সীতারা—সাদা মুখশ্রী, টকটকে লাল শাড়ি পরা, চোখে ভয় আর লজ্জার ছায়া। হঠাৎই বিয়ের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকের মতে সে বিষ খেয়েছিল। কিছুদিন পর মৃতদেহকে গ্রামের লোকেরা মন্দিরের পাশে এনে চার বাঁশে বাঁধা…

  • Bangla - তন্ত্র

    শবনৃত্য

    ঋত্বিক বসু পর্ব ১ শ্মশানের ধোঁয়া যেমন ধীরে ধীরে রাতের বাতাসে মিলিয়ে যায়, তেমনই গোপালচন্দ্রর জীবনও এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় মিশে গেছে। সে এই শ্মশানকর্তার কাজ করছে প্রায় পনেরো বছর। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত—কখনও কফিনে ঢাকা শরীর, কখনও শবযাত্রার সানাই, আবার কখনও হাহাকার করা আত্মীয়দের চোখের জলে ভিজে যাওয়া কাঠের চৌকি। তার কাছে সব যেন একই রকম। শ্মশান মানেই মৃত্যু, মৃত্যু মানেই চুপচাপ এক ছায়ার দিকে মিলিয়ে যাওয়া। কিন্তু সে রাতে কিছু যেন অন্যরকম ছিল। আগুন নিভে এসেছে, শেষ কাঠটুকু ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। গোপালচন্দ্র বাঁশের ঝুড়ি হাতে গঙ্গার জলে ভিজিয়ে ছাই ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। চারদিক নির্জন, কেবল রাতের পেঁচার ডাক আর…

  • Bangla - তন্ত্র

    শবর মন্ত্র

    ভাস্কর চক্রবর্তী কলকাতার জনবহুল শহরের বুকেই যেন অধ্যাপক অরিন্দম মুখার্জীর জীবন বাঁধা ছিল বই, গবেষণাপত্র আর ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ত ভিড়ের মাঝে। নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে তিনি বহুদিন ধরেই আদিবাসী সমাজ, লোকাচার, লোকসংগীত ও তন্ত্রসংক্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁর ডেস্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা নথি, পুরনো গ্রন্থ আর নোটবইতে বারবার উঠে এসেছে এক শব্দ—“শবর মন্ত্র।” এই শব্দটি তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে টানছিল, কারণ এ নিয়ে খুব বেশি লিখিত তথ্য পাওয়া যায়নি, কেবল অস্পষ্ট কিছু উল্লেখ রয়েছে প্রাচীন পুঁথি আর কয়েকটি বিদেশি ভ্রমণকারীর ডায়েরিতে। যতই তিনি এ বিষয়ে পড়েছেন, ততই তাঁর মনে হয়েছে যে এর আসল সূত্র কেবল বইয়ে নয়, লোকসমাজের বুকে লুকিয়ে আছে।…

  • Bangla - তন্ত্র

    মৃত্যুমণ্ডল

    অরুণাভ বসু অমাবস্যার সন্ধ্যা নামার অনেক আগেই আকাশে অদ্ভুত একটা চাপা গুমোট তৈরি হয়েছিল, যেন দিনের আলোও বাতাসে লুকিয়ে থাকা অজানা আশঙ্কাকে অস্বীকার করতে পারছিল না। নীরজ সেই সকাল থেকেই গুরুর নির্দেশমতো ঘর ছাড়িয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি জিনিস জোগাড় করতে বেরিয়েছিল—একটি প্রাচীন লাল কাপড়ের টুকরো, কালো মোমবাতি, শিবের জীর্ণ মূর্তি, আর সেই দুর্লভ পুঁতির মালাটি, যা এক সময় গুরুর গুরু তার হাতে তুলেছিলেন। প্রতিটি জিনিস যেন নিজের ভেতর গোপন কোনো স্পন্দন বহন করছিল, নীরজ মনে মনে বুঝতে পারছিল, এ রাত শুধু আরেকটা সাধনার রাত নয়; এ রাতে এমন কিছু ঘটতে চলেছে, যার ওজন বহন করা সহজ নয়। শহরের ভাঙা প্রাচীন অলিগলি,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চৌধুরীবাড়ির শেষ অতিথি

    তিথি বসু পর্ব ১: সেই ভগ্নপ্রায় দরজার শব্দ নদীয়ার কুয়াশা ঢাকা বিকেলে ট্রেন থেকে নামতেই শুভমর মনে হলো সময়টা যেন হঠাৎ করে থমকে গেছে। বাইরের হাওয়া ঠান্ডা, কিন্তু বাতাসের মধ্যে কিছু একটা গুমোট। সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রিকশাওয়ালার দিকে এগোল। “চৌধুরীবাড়ি যাবেন?” জিজ্ঞেস করতেই রিকশাওয়ালার মুখটা কেমন থমথমে হয়ে গেল। “চৌধুরীবাড়ি? ওই যে শ্মশানের পাশে যেটা?” শুভম মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, ওটাই। আমি গবেষণার জন্য এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি আছে।” রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “আমি ওইদিক যাই না বাবু। ওখানে এখন কেউ থাকেও না।” শেষমেশ অনেক বোঝানোর পরে একজন রাজি হলো। অন্ধকার নেমে আসছিল, আর চৌধুরীবাড়ির পথটা খড়ি গাছ…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের হাসি

    সঞ্জয় দে পর্ব ১: বাড়ির রহস্য অভিজিৎ ছিল ইতিহাসের ছাত্র। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল পুরনো বাড়িগুলোর ইতিহাস খোঁজা, বিশেষত সেগুলোর যেগুলো সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে অথবা কেউ তাদের কাহিনী জানে না। একদিন, তার বন্ধু প্রীতম তাকে একটি পুরনো বাড়ির কথা জানায়, যে বাড়ি সম্পর্কে নানা গুজব ছড়িয়ে আছে। লোকজন বলে, এখানে অদ্ভুত হাসির শব্দ শোনা যায় এবং অনেক মানুষ এখানে হারিয়ে গেছে। সেই রাতের পর থেকেই বাড়িটির নাম তার মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। অভিজিৎ ভেবেছিল, এই বাড়ির রহস্য উন্মোচন করতে পারলে তার গবেষণায় নতুন একটি দিক যোগ হবে। তাই এক সকালে, তার গবেষণার জন্যই সেদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত…

  • Bangla - তন্ত্র

    নিশিবৃত্ত

    অমাবস্যার সন্ধ্যা নামার অনেক আগেই আকাশে অদ্ভুত একটা চাপা গুমোট তৈরি হয়েছিল, যেন দিনের আলোও বাতাসে লুকিয়ে থাকা অজানা আশঙ্কাকে অস্বীকার করতে পারছিল না। নীরজ সেই সকাল থেকেই গুরুর নির্দেশমতো ঘর ছাড়িয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি জিনিস জোগাড় করতে বেরিয়েছিল—একটি প্রাচীন লাল কাপড়ের টুকরো, কালো মোমবাতি, শিবের জীর্ণ মূর্তি, আর সেই দুর্লভ পুঁতির মালাটি, যা এক সময় গুরুর গুরু তার হাতে তুলেছিলেন। প্রতিটি জিনিস যেন নিজের ভেতর গোপন কোনো স্পন্দন বহন করছিল, নীরজ মনে মনে বুঝতে পারছিল, এ রাত শুধু আরেকটা সাধনার রাত নয়; এ রাতে এমন কিছু ঘটতে চলেছে, যার ওজন বহন করা সহজ নয়। শহরের ভাঙা প্রাচীন অলিগলি, গঙ্গার তীরের…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    সন্ন্যাসিনীর কুটির

    জয়ন্ত কুমার চক্রবর্তী অধ্যায় ১: আগমনী ছায়া অক্টোবরের শেষভাগ। পাহাড়ি হাওয়ার কাঁপন তখন নতুন করে জানান দিচ্ছিল আসন্ন শীতে পাহাড়ের নিঃসঙ্গতা কেমন হতে চলেছে। অনির্বাণ রায়, এক শহুরে গ্রাফিক ডিজাইনার, ছুটির ফাঁকে একা একাই বেরিয়েছিল উত্তরবঙ্গের দূরবর্তী একটি পাহাড়ি গ্রামে। লোকাল ট্রেনের স্টেশন থেকে তিন ঘণ্টা জিপে চড়েই যেতে হয় সেই গ্রামে, নাম দারগাঁও। এই জায়গাটি এখনও গুগল ম্যাপেও পুরোপুরি চিহ্নিত নয়, অথচ স্থানীয় ট্রেকার আর পুরনো লোককথা শুনতে ভালোবাসা মানুষের মধ্যে এটি একটি গোপন রত্নের মতো। তার সফরের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতি দেখা, পাহাড়ি ধ্বংসাবশেষ ঘোরা আর একটু নির্জনতা খোঁজা। কিন্তু লজে পৌঁছনোর পর প্রথম সন্ধ্যাতেই এক বৃদ্ধা, ললিতা মল্লিক…

  • Bangla - তন্ত্র

    অঘোরীর চোখ

    শুভাশীষ পাল                                         পর্ব ১: পাহাড়ের গা থেকে যাত্রা শিলিগুড়ি থেকে জিপ ছাড়ল সকাল আটটায়। ঋষভ জানালার ধারে বসে রেকর্ডারটা হাতে নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটা লাইন বলল, “আজ আমরা যাচ্ছি দার্জিলিং জেলার গভীর এক গ্রামে, যেখানে এখনও লোকমুখে ভয়ের সুরে উচ্চারিত হয় এক অঘোরী তান্ত্রিকের নাম—ভৃগুনাথ।” শান পিছনের সিটে বসে ক্যামেরার ব্যাগ আঁকড়ে ধরেছিল। মাথায় হালকা ঠান্ডা, বাইরে কুয়াশা। সামনে বসে গাইড টেমবা চুপচাপ পাহাড়ি রাস্তা দেখে গাড়ি চালাচ্ছিল, তার চোখে ছিল একটা অদ্ভুত স্থিরতা, যেন সে জানে তারা কোথায় যাচ্ছে, কিন্তু চায় না তারা সেখানে পৌঁছাক। চিলোংবস্তির নামটা প্রথম শোনা গিয়েছিল এক পুরোনো তান্ত্রিক পাণ্ডুলিপিতে, যেটা ঋষভ সংগ্রহ করেছিল…