গ্রামের কালীমন্দিরে দুর্গাপূজার অষ্টমীর রাত মানেই এক অন্যরকম আবহ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত এই মন্দিরের পুজো দেখতে। সন্ধ্যা থেকেই মন্দিরের চত্বর আলোয় ভরে উঠেছিল, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের শব্দ, কাশীর বাঁশির সুর আর ধূপকাঠির ধোঁয়া মিলেমিশে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করেছিল। গ্রামের ছোটো থেকে বড়ো সবাই নতুন কাপড় পরে এসেছিল, কেউ প্রণাম দিতে, কেউ আবার প্রতিমা দর্শন করে আনন্দ পেতে। মন্দিরের সামনের উঠোনে তখন নাচগানের আসর বসেছিল, কচিকাঁচারা ধুনুচি হাতে ঘুরছিল আর মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেছিল। একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুমুদিনী দেবী, গ্রামের জমিদারবাড়ির বিধবা, তাঁর চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা, যেন উৎসবের আনন্দের ভেতরও কোথাও এক অজানা ভয় তাঁর বুক চেপে ধরেছিল। পুরোহিত…
-
-
কল্যাণ মুখার্জী শ্মশান ঘাটে সেই রাতে যেন অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল। চারিদিকে ঘন কুয়াশার চাদর, দূরে শ্মশানের পুরনো বটগাছের ডালে ডালে বাদুড়ের কর্কশ ডাক, আর মাঝেমধ্যেই কুকুরের হাহাকার যেন ভয়কে আরও ঘনীভূত করে তুলছিল। অমাবস্যার ঘন অন্ধকার নয়, তবু পূর্ণিমার আলোয় চারদিক সাদা হয়ে উঠলেও সেই আলোতে ছিল এক অস্বাভাবিক রক্তাভ আভা। যেন চাঁদ নিজেও এই রাতের সাক্ষী হতে গিয়ে অচেনা কোনো রূপ ধারণ করেছে। গ্রামের মানুষজন শ্মশানের সীমানা থেকে দূরে, পুকুরপাড়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে আতঙ্কে তাকিয়ে ছিল। কারও চোখে ভীতি, কারও চোখে কৌতূহল, কিন্তু সবার মনে একই প্রশ্ন—আজ রাতেই কি ভৈরবনাথ তাঁর বহুদিনের সাধনার সফলতা অর্জন করতে চলেছে? সেই…
-
অৰুণেশ দাস ১ অসম–অৰুণাচল সীমান্তত অৱস্থিত গাঁওখন যেন সঁচাকৈ সময়ৰ পৰা আঁতৰি থকা এক টুকুৰা পৃথিৱী। গাঁওখনৰ ওচৰেদি জংঘল বিস্তৃত, ডাঙৰ ডাঙৰ গছপুল, বনৰ শীতল ছাঁ আৰু মাজে মাজে খৰস্ৰোতা নদী খিনি যেন প্ৰতিদিন গাঁওটোক বোকা কৰি ৰাখে। দূৰৰ পাহাৰবোৰ সুৰ্য্যোদয়ৰ লগে লগে সোনালী আভাত জ্বলি উঠে, সন্ধিয়া নামিলে ধোঁৱা–মেঘৰ ঢাপত আৱৰি যায়। গাঁওখনৰ মানুহবোৰ সাধাৰণ, দিনত জঙলি খেতি–কামত ব্যস্ত, নিশা উঠোনত মাটিৰ দীঘল দীঘল গগৈ বা বৈঠকত আড্ডা মাৰে। এই গাঁওৰ মাজতেই এজনা সৰু কিশোৰ, নাম তেওঁৰ নীলমণি, দিনৰ দুখ–সুখৰ মাজত নিজকে মেলাই ৰাখে। তেওঁৰ বয়স প্ৰায় চৌদহ–পঞ্চদশ, কিন্তু মনত এক গভীৰ কৌতূহল সদায় জাগি থাকে। বিশেষকৈ, সন্ধিয়া নামি…
-
শ্রীজিত সাহা অধ্যায় ১: হাটের হদিস কলকাতার গাঢ় ধূসর সকালে শহরের বুক চিরে যখন শরদ রায় তাঁর পুরনো অ্যাম্বাসাডার গাড়ি নিয়ে রওনা দিলেন, আকাশে তখনও কুয়াশার বৃষ্টি লটকে ছিল। পেছনের সিটে রাখা ছিল একটি ধুলোমাখা ক্যামেরা, নোটবই, এবং বছর তিরিশেক পুরনো বাংলার লোকশিল্প বিষয়ক একটি জীর্ণ বই। শরদ একজন খ্যাতনামা শিল্প সংগ্রাহক হলেও তাঁর সংগ্রহ মানেই কেবল গ্যালারির ঝকঝকে ফ্রেম বা বিদেশ থেকে আনা মিনিয়েচার নয়—তিনি খোঁজেন মাটির গন্ধে মাখা হারিয়ে যাওয়া শিল্প, লোকজ ঐতিহ্য। আর তাই আজ তিনি চলেছেন নদিয়ার ধারের এক প্রাচীন গ্রামে, যেখানে প্রতি বছর বসে “মারগাঁ হাট”—এক আশ্চর্য হাট, যেখানে লোকশিল্পীরা নিজেদের সৃষ্ট পট, মুখোশ, মাটির…
-
ঋষভ নাথ ১ নৱেম্বৰৰ শেষ সপ্তাহ, মজুলীত ৰাস উৎসৱৰ উমাহে সমগ্ৰ দ্বীপখনক ধুনীয়া পুৰণি সংগীতৰ ৰিহাৰে মেৰাই পেলাইছিল। অনিৰ্বাণ, ৰিতিকা, জিষ্ণু আৰু সঞ্জুক্তা — গুৱাহাটীৰ এটা নামী কলেজৰ চাৰিজন বন্ধু — এবছৰীয়া মিডিয়া প্ৰজেক্টৰ বাবে মজুলীলৈ আহিছিল, মূল উদ্দেশ্য আছিল “মুখা শিল্পৰ অন্তৰাল” নামে এখন চুটি তথ্যচিত্র নিৰ্মাণ কৰা। তেওঁলোকে এখন দূৰ-অঞ্চলৰ সত্ৰত মুখাৰ কামৰ দৃশ্য ধারণ কৰি আছিল, যি সত্ৰখন মূলধাৰাৰ পর্যটন পথৰ পৰা আঁতৰত আছিল। খুদি খুদি ঘৰ, কলাপাতত ঢকা পথ আৰু সত্ৰটোৰ আশে-পাশে বিস্ময়জনক নিস্তব্ধতা — এক অলক্ষিত ওজোপুৱালি যেন বাজি আছিল সেই ঠাইখনত। এই মুখা শিল্পীজন আছিল এগৰাকী বুঢ়া, দীঘল দাঁতিৰ বগা দাঁত, কঁপনি ধৰা হাত,…