প্রতীক দত্ত অরিন্দম সেনের জীবনের দিনযাপন ছিল সুশৃঙ্খল, নিয়মমাফিক ও দৃষ্টিতে পরিপূর্ণ এক সংসারের ছবি। সকালবেলা তার ঘুম ভাঙত অ্যালার্ম ঘড়ির একঘেয়ে শব্দে, তারপর দাঁত ব্রাশ, চায়ের কাপ, অফিসের ফাইল আর প্রতিদিনের সেই একই রুটিন। স্ত্রী স্নিগ্ধা যত্নে তার সকালের নাশতা তৈরি করত, সন্তান স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিত, আর ঘরজুড়ে যেন সবকিছু সুন্দর ছন্দে চলছিল। বাইরের চোখে অরিন্দম ছিল এক আদর্শ স্বামী ও দায়িত্বশীল বাবা। অফিসে সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, আর পাড়াপড়শির চোখে এক স্থির-স্বভাবের মানুষ। কিন্তু এই নির্দোষ ছবির ভেতরে লুকিয়ে ছিল এক অদৃশ্য ক্লান্তি, যা কাউকে জানানোর উপায় ছিল না। প্রতিদিন ঘরে ফেরার পর তিনি দেখতেন টিভির…
-
-
ইরা মুখার্জি পর্ব – ১ উত্তর কলকাতার পুরোনো একতলা-বাড়িগুলোর গায়ে সময়ের দাগ খুব স্পষ্ট। ঝাপসা রঙের দেওয়ালে শ্যাওলার ছোপ, টিনের ছাদের নীচে শালিকদের বাসা, আর লোহার গেটের খোঁচা খাওয়া রঙ ম্লান হয়ে আছে বহুদিন। সেই রকমই এক বাড়ি, রায়বাড়ি—যার বারান্দায় বিকেলবেলা বাতাস অন্যরকম লাগে। এখানে প্রতিদিন বসে পড়েন অমলবাবু, সদ্য অবসর নেওয়া এক স্কুলশিক্ষক। হাতে এক কাপ চা আর সামনে পত্রিকা, যদিও অক্ষরের ভেতর ডুবে থাকার বয়স তার অনেক আগেই ফুরিয়েছে। চায়ের ধোঁয়া আর নিস্তব্ধতার ভেতর তিনি শুনতে পান আশেপাশের বাচ্চাদের চিৎকার, রাস্তায় সব্জিওয়ালার হাঁকডাক, আর মাঝে মাঝে হাওয়ার ঝাপটায় শিউলির গন্ধ। অমলবাবুর বারান্দার একপাশ থেকে হঠাৎ চোখে পড়তে শুরু…
-
শাশ্বত বসু সেদিন সন্ধেটা মেঘলার জীবনে অদ্ভুত এক মোড় নিয়ে এল। শহরের এক নামী সাহিত্যিক সংগঠন আয়োজিত বার্ষিক সাহিত্য উৎসবে স্বামী অনিকেতের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি, মূলত সামাজিক কর্তব্যবোধ থেকে। সাহিত্য নিয়ে মেঘলার আগ্রহ একসময় প্রবল হলেও সংসারের চাপে, অফিস আর গৃহস্থালির দায়ে সেই আগ্রহ অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলের ভেতরে ঢুকতেই বাতাসে বইয়ের গন্ধ, মঞ্চে আলো, দর্শকসারিতে অচেনা অথচ উৎসুক মুখগুলো যেন তাঁর ভেতরে বহু পুরোনো দিনের আবেগকে নাড়া দিল। হাতে ধরা শাড়ির আঁচলটা আঁটসাঁট করে তিনি বসেছিলেন প্রথম সারির মাঝ বরাবর। তখনই হঠাৎ মঞ্চে নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এল—সেই কণ্ঠস্বর, যা তিনি কোনোদিন ভুলতে…
-
১ অনিন্দিতা দিনের ব্যস্ততম কাজ শেষ করে অফিসের বাইরে আসে। রাস্তায় হঠাৎ বাতাসের আভাস কিছুটা শান্ত, কিছুটা খটখটে। তিনি পায়ের ধাপে হেঁটে যাচ্ছেন, মাথায় ঘুরছে আজকের অফিসের চাপ আর নির্দিষ্ট মিটিংগুলোর খুঁটিনাটি স্মৃতি। মন খালি করার জন্য চোখে পড়ল রাস্তায় একটি ছোট্ট ক্যাফে, যার বাইরে ধোঁয়াশা-ভরা জানালা আর নরম আলো যেন তাকে টেনে নিল। অনিন্দিতা ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে মনে হয়, সে যেন ভিন্ন জগতে প্রবেশ করেছে। কাঠের ফার্নিচার, লো ফ্লোর লাইট, এবং কোমল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক—সবকিছু এক ধরণের সান্ত্বনা দেয়। তিনি নিজের হাতে মোবাইলটি নিয়ে একটু বসে পড়েন, কিন্তু চোখেরা অজান্তে তাকিয়ে থাকে অভ্যন্তরের দিকে। এবং ঠিক সেই মুহূর্তে, তার চোখ…
-
সায়ন্তনী ধর পর্ব ১: অচেনা স্পর্শ কলকাতার ভিজে সন্ধ্যে। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ফ্ল্যাটের বারান্দা যেন একা বসে আছে। রিমঝিম ভেজা আলোয় স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে, হাতে এক কাপ কফি। তিরিশ পেরোনো এই নারী, সংসার আর অফিসের একঘেয়েমি পেরিয়ে আজ হঠাৎ যেন নিজের ভেতরেই অস্থিরতা টের পাচ্ছে। বিয়ের আট বছরের সম্পর্ক—অর্ণব, তার স্বামী, এখন প্রায় যন্ত্রের মতো। অফিস থেকে ফিরে শুধু ক্লান্ত শরীর আর একবিন্দু নিরুত্তাপ আলাপ। শারীরিক সম্পর্কও বহুদিন হয়ে উঠেছে দায়িত্বের মতো—যেন টিক চিহ্ন দিয়ে শেষ হওয়া কর্তব্য। স্নিগ্ধা আয়নায় তাকায়। চোখের নিচে হালকা কালি, ঠোঁটে এক চাপা অভিমান। অথচ শরীর তার এখনো মায়াবী, নরম চামড়ার নিচে লুকোনো এক অদম্য কামনা…