• Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    ছাদবাগানের লুকোনো আকাশ

    অনিতা রায় কলকাতার দক্ষিণের ব্যস্ত এলাকায় দশতলা এক বহুতলের চতুর্থ তলায় মৌসুমি সেনগুপ্তের ফ্ল্যাট। বাইরে থেকে দেখে মনে হয়, এ এক স্বপ্নময় শহুরে সংসার—সাদা দেয়ালের পরিপাটি ফ্ল্যাট, বারান্দায় কিছু শুকনো টব রাখা, জানালার পাশে গামছা শুকোতে দেওয়া, আর ভেতরে এক স্বামী-স্ত্রী ও তাদের স্কুলপড়ুয়া ছেলের নিখুঁত রুটিন। কিন্তু সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর থেকে রাত অবধি চলতে থাকা মৌসুমির দিনচক্রের ভেতরে সেই নিখুঁত ছবির ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে থাকে অদৃশ্য শূন্যতা। ভোর ছ’টা বাজতেই অ্যালার্মের আওয়াজে উঠে রান্নাঘরে ঢোকা, ছেলের টিফিন আর স্বামীর চায়ের কাপ সামলানো, এর পর বাসন মাজার শব্দে ভেসে আসা শাশুড়ির ফিসফিসে মন্তব্য, সব কিছুই যেন তাকে এক অবিরাম…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    রাত্রির নীল পত্র

    তিথি রায় রাত্রি নেমেছিল ধীরে ধীরে, যেন শহরের গায়ে গায়ে নরম নীল পর্দা টেনে দিচ্ছিল কেউ। নয়না বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হাতে একটা কাপে শেষ চুমুকের চা। চারতলার উপর থেকে নীচে তাকিয়ে দেখে—পথে আলো জ্বলছে, কিন্তু কারো চেহারা স্পষ্ট নয়। কলকাতার এই অংশটা এতদিনে তার চেনা হয়ে গেছে, তবু এই নির্জনতা যেন তাকে আলাদা করে একটা দুঃখ দেয়। অরিন্দম আজও বাড়ি ফেরেনি—সাংহাতিক কাজের চাপ। নয়না জানে না, সে কি এই নিঃসঙ্গতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, না এর মধ্যেই কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত আরামের ছায়া আছে। আজ বিকেলে যখন সে ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরেছিল, তখনই ফ্ল্যাটের পোস্টবক্সে একটা অচেনা চিঠি খুঁজে পায়—নীল খামে মোড়ানো,…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    ঘুঙুর

    মহুয়া নাগ এক রাধিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পায়ের ঘুঙুরজোড়ায় আলতো করে আঙুল বোলায়। সে জানে এই ঘুঙুরগুলো কেবল একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, এগুলো তার অস্তিত্বের প্রতিধ্বনি। ঘরে বাতাস চলাচল করে না, মশারির ফাঁকে ভোরের আলো ঢুকে চিবুকে ছুঁয়ে যাচ্ছে; তবু তার মন যেন কোথাও চলে গেছে—এক বিস্তৃত মঞ্চে, যেখানে কেবল সে আছে, তার নাচ আছে, আর আছে নিঃশব্দ দর্শক। বাইরে থেকে শোনা যায় তবলার ঠেক-ঠুক শব্দ—তার বাবা সুবীর সেনের রেওয়াজ চলছে, ভোর পাঁচটার ধারা বজায় রেখে। রাধিকা সেই তাল চেনে, সেই লয় তার ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিদিন, কিন্তু আজকাল সে তবলার তাল নয়, শরীরের সঞ্চালনের ভাষা বুঝতে চায়। তার মা মীনাক্ষী…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    সহেলীর আত্মকথা

    জয় সাহা গলির মেয়ে সহেলীর জন্ম এক ছোট্ট শহরের এক অজপাড়া গলিতে। সে ছিল এক সাধারণ মেয়ে, যেখানে সমাজের চোখে তার কোন বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। তার জীবন ছিল একেবারে নিরস, রুটিনমাফিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কাজ ছিল ঘরের কাজ, মা-বাবার সহায়তা, ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা, আর মাঝে মধ্যে স্কুলে যাওয়া। তবে, সহেলী কখনোই এই নির্ধারিত জীবনটিকে সঙ্গী করতে পারেনি। তার মন ছুটতে চেয়েছিল দূরে, তার চোখ ছিল নতুন দিগন্তে, যেখানে জীবনের অনেক সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে জানত, সে তার ছোট্ট গলির মধ্যেই বন্দী। সেই গলির প্রাচীরের বাইরের পৃথিবী তার জন্য এক কল্পনা মাত্র। সহেলী ছিল খুব চুপচাপ। একা থাকলেই…