সমাপ্তি বর্মন সকালটা ছিল মেঘলা, অথচ বৃষ্টির কোনো আভাস নেই। রুক্মিণীর মাথার ওপর দিয়ে পাখির ছায়া উড়ে গেল—একটা নীল কুড়ুলি, সেইরকম রঙিন পালকের পাখি যেটা কেবল কুশলনগরের আকাশেই দেখা যেত তাদের ছোটবেলায়। বিশ বছর পর এই জায়গাটায় ফিরে আসার সাহস সে নিজের কাছেই একটা বিস্ময় মনে হচ্ছিল। পাশে বসে থাকা ভাই অর্ণব হঠাৎ বলে উঠল, “এই রাস্তার বাঁকে একটা নারকেল গাছ ছিল, মনে আছে?” রুক্মিণী হেসে মাথা নাড়ল। “আর মনে নেই? ওই গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আমি তোকে গুমরার জুস খাওয়াই বলেছিলাম, আর তো তোর গায়ে গড়িয়ে পড়েছিল!” দুজনেই হেসে উঠল। সেই হাসির মধ্যে ছিল পুরনো দিনের গন্ধ, ছিল শৈশবের ডাকে…
-
-
সায়ন্তন কর সন্ধ্যার পর যখন ছায়া গাঢ় হতে থাকে, আর শহরের ধূলোমাখা রাস্তায় একের পর এক বাতাসের সোঁদা স্পর্শ হয়, তখন মা বারান্দায় বসে থাকেন। তাঁর চেহারা যেন শূন্য এক আর্তনাদ, চোখে জল নেই, শুধু একটি অভ্যাস গড়ে উঠেছে—অর্ণবের জন্য অপেক্ষা। দশ বছর আগে, অর্ণব ছোট্ট ছেলে, মা’কে বলেছিল,“বড় হবো মা, শহরে গিয়ে চাকরি করব। তোমার কষ্ট আর সহ্য হয় না।”তার মুখে ছিল প্রত্যয়ের ঝিলিক, মায়ের চোখে ছিল আশীর্বাদের মায়া। মা হাসি দিয়ে শুধু বলেছিলেন,“ঠিক আছে, কিন্তু দরজাটা খোলা রাখব রে। তুই ফিরবি একদিন।”এই কথাটা অর্ণব আজও মনে রেখেছে, মনে রেখেছে মা’র সেই দরজার কথা, যা সেদিন থেকেই খোলা রাখা…