• Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    টিফিনবক্স

    চৈতালি মুখার্জী ১ ভোর সাড়ে চারটে। দমদমের একটি পুরোনো একতলা বাড়ির উঁচু-নীচু ইটের মেঝেতে পা রাখতেই ঠান্ডা সরে আসে পায়ের পাতায়। মীরা কাঁধে গামছা ঝুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোয়। উনুনে কেরোসিন ঢালার শব্দ, দেশলাইয়ের কাঠি ঘষে আগুন জ্বালায় সে—শব্দ হয় ফিসফিসে, অথচ বুকের ভিতর এই মুহূর্তেই যেন এক ধরণের আগুন জ্বলে ওঠে। চাল ধোয়া জল হাতে করে হাঁড়িতে ফেলে সে, পেঁয়াজ কুচো করে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে—তাড়াহুড়োতে আঙুল কেটে গেলে পাত্তা দেয় না। চাপা নিঃশ্বাস ফেলে সে মাঝে মাঝে—আজ তিনটি নতুন অর্ডার এসেছে, তার মানে ১৩টা টিফিন বানাতে হবে, একটাও যেন কম তেল না হয়, বেশ ঝাল না হয়, আরেকটায় যেন কড়ি…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প

    নিঃশব্দ পাঠশালা

    অর্পিতা দাশগুপ্ত অধ্যায় ১: ইশারার প্রথম পাঠ নবনীতা মুখার্জি যখন প্রথম “পূর্ব আনন্দনিকেতন বিশেষ বিদ্যালয়”-এর ধুলোমাখা ফটকে পা রাখেন, তখন আকাশে কুয়াশা জমেছিলো যেমন, তেমনি তাঁর মনের ভিতরেও ছিল অনিশ্চয়তার এক অদৃশ্য কুয়াশা। শহরের একপ্রান্তে ঝাঁপসা হয়ে থাকা এই স্কুলটিকে অধিকাংশ মানুষ ‘বাতিল জায়গা’ বলে এড়িয়ে যায়। গেটের ধারে একটা মরচে পড়া সাইনবোর্ড—যেখানে অর্ধেক লেখা খসে গেছে, তবু বোঝা যায়: এটি বাকপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত একটি বিদ্যালয়। স্কুল চত্বরের ভাঙা পাঁচিল, পুরোনো আমগাছের নিচে জমে থাকা শুকনো পাতা, আর একটি কাঠের বেঞ্চে বসে থাকা কেয়ারটেকার রফিক মিঞা—এই ছিল নবনীতার নতুন কর্মস্থল। সদ্য বিএড পাশ করা নবনীতা এই স্কুলে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষিকার…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প

    পেনশনের শেষ চেক

    সন্দীপন ধর খামে মোড়া নীরবতা রমেশচন্দ্র বসু বসে আছেন জানালার ধারে রাখা সেই পুরনো বেতের চেয়ারে। জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া বিকেলের আলো তার রুপোলি চুলে খেলে যাচ্ছে। মাথার ঠিক পাশেই একটা ছোট কাঠের তাক, সেখানে রাখা তার স্ত্রীর একটা ছবি — মেঘলা শাড়ি, মৃদু হাসি, কপালে ছোট্ট টিপ। নাম ছিল তার — কাবেরী। আজ অনেকদিন পর আবার পোস্টম্যান এসেছিল। লাল-হলুদ ইউনিফর্ম, কাঁধে ব্যাগ। সে বলল, “বসুবাবু, আপনার পেনশনের শেষ চেকটা এসেছে।” রমেশচন্দ্র ধীরে হাত বাড়িয়ে খামটা নিলেন। যেন মৃদু এক স্নেহে ছুঁলেন। এই খামে শুধু টাকা নেই, আছে একটা দীর্ঘ জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা। অফিসের শেষ বেতন মাসেরও বেশি…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প

    ফেরিওয়ালার স্বপ্ন

    মৃণাল সেনগুপ্ত ১ শীতের কুয়াশাঘেরা সকাল। কাটিয়াতলা গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে এক চেনা হুইলগাড়ি—লোহার চাকা ঘষটে ঘষটে আওয়াজ তুলছে, আর গাড়ির উপরে বাঁশের ঝুড়ি ভর্তি পুরোনো বইয়ের স্তূপ। হুইলগাড়িটা ঠেলে নিয়ে চলেছে মধু, যাঁর পুরো নাম মধুসূদন পাল—গ্রামেরই সন্তান, বয়স প্রায় পঁইচাল্লিশ, গায়ে সাদা ধুতি, গায়ে উলের পাতলা চাদর, পায়ে ছেঁড়া চটি, আর কাঁধে ঝোলানো একটা ছাপানো কাপড়ের ব্যাগ, যাতে থাকে তার দিনভর খরিদ্দারদের টাকা-পয়সা, খাতা আর তার সবচেয়ে প্রিয় কলমটা। গায়ে যেন একটা শান্ত সুবাস মেখে থাকে মধুর—পুরোনো কাগজের গন্ধ, সময়ের গন্ধ। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছেরা তাকে চেনে, পুকুরের মাছেরা যেন তার গলার আওয়াজ…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প - ছোটদের গল্প

    আলোর কাক

    তিয়াস চক্রবর্তী ১ বটগাছটা ছিল বিশাল, ছায়াময় আর পুরনো। বনের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেই গাছটাকে পাখিরা ডাকে “আকাশদ্বার”—যেন তার ডালপালায় সিঁড়ি বেয়ে আকাশ ছোঁয়া যায়। সেখানে বাস করত রকমারি পাখি—নীল টিয়া, সবুজ বেনেবউ, সোনালি ঘুঘু আর শাদা পায়রা। প্রত্যেকের নিজের গান ছিল, নিজের আভিজাত্য। গাছজুড়ে প্রতিদিন সকালবেলা এক অপূর্ব সঙ্গীতসন্ধ্যা বসত—কারও কণ্ঠে মিষ্টি রাগ, কারও গলায় ঝংকারের ঝরনা। এই সংগীতের মাঝেই বসবাস ছিল একমাত্র সেই পাখিটির—যার গলায় ছিল না কোনো সুর, যার গায়ে ছিল না কোনো রং। তার নাম কেউ নেয় না—সবাই তাকে বলে “ওই কাকটা।” সে নিজে নিজের নাম রেখেছিল কাকু। কাকু কালো, সাধারণ, আর তুচ্ছ—এই তিন অভিধায়…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প - সামাজিক গল্প

    তালপাতার পাখা

    স্নেহাশিষ রায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে। জাদরেল রোদের আভা ছড়িয়ে পড়েছে শহরের স্টেশনে। গরম বাতাসে ছিন্ন কাপড়ের মতো ওড়ানো যাচ্ছে না কোনো মন। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ৩২ নম্বর লোকাল ট্রেনের কামরায় যেন আগুনের ঢেউ বইছে। সেই উত্তপ্ত কামরার মধ্যে দিয়ে হাঁটছে দশ বছরের একটি ছেলে—হাতে একগুচ্ছ তালপাতার পাখা। ছোট্ট শরীরে ঘাম জমে রেখার মতো গড়িয়ে পড়ছে, তবে চোখে কোনো ক্লান্তি নেই। তার ঠোঁটে এক মৃদু ডাক—“তালপাতার পাখা নিন… গরমে আরাম… পাঁচ টাকায় একখানা…”। প্রতিটি যাত্রীকে দেখে সে যেন কল্পনা করে, কে কিনবে, কে ফিরিয়ে দেবে। কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয়, কেউ তিরস্কার করে—“যাও যাও, বিরক্ত করো না।” তবু সে এগিয়ে যায়।…