১ অর্পিতা শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হেঁটে চলছিল, যেখানে ব্যস্ত মানুষের হাহাকার আর যানজটের শব্দ যেন তার মনকে আরও একরকম বিচ্ছিন্ন করে তুলছিল। হঠাৎ তার নজর পড়ল পুরনো, অদ্ভুত আকৃতির এক দোকানের দিকে, যেটি শহরের অন্যান্য আধুনিক ভবনের মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা এবং রহস্যময়তা ছড়াচ্ছিল। দোকানের জানালা ফ্যাকাশে আলোর রেখা দিয়ে ভিজে ছিল, আর কাঁচের পৃষ্ঠে বয়সের ছাপ এবং ধুলো মিশে এক অদ্ভুত আভা তৈরি করছিল। অর্পিতার মনে জোরালো কৌতূহল জাগল, যেন তার অন্তরই তাকে ডেকেছিল। ধীরে ধীরে সে ধাপ ফেলল, এবং দোকানের ভিতরে প্রবেশ করতেই এক ভিন্ন জগতের অনুভূতি জাগল। বাতাসে ঘন অজানা গন্ধ আর ম্লান আলো মিশে যেন কোনো…
-
-
অমৃতা মাঝি ১ শান্তিনিকেতনের উপকণ্ঠের সেই পুরনো আশ্রমটি বছরের পর বছর ধরে ধুলো ও সময়ের ছায়ায় অজানার মতো লুকিয়ে ছিল। মূল পথে পৌঁছুতে গেলে পথচলার প্রায় সব জায়গায় গাছপালা ও ঘাসের লাজুক আঁচড় চোখে পড়ত। আশ্রমের প্রাচীন দেওয়ালগুলোতে আজকাল আর কোনো রঙ বা আলোর ছোঁয়া নেই, শুধুই কিছু পুরনো খণ্ডিত মূর্তি আর ধুলো মেখে যাওয়া ভগ্নাংশের অবশিষ্টাংশ। হরিপদ মণ্ডল, যিনি আশ্রমের আশেপাশের জমি দেখাশোনা করতেন, একদিন হঠাৎ করেই কয়েকটা পুরনো গর্ত খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার কৌতূহল মূলত ধন বা পুরনো শিল্পকর্মের প্রতি নয়; বরং আশ্রমের নিঃশব্দ ইতিহাসের মধ্যে লুকানো কিছু রহস্য উন্মোচনের জন্য ছিল। তিনি তার ছোটো কেঁচো-ছোঁচে…
-
দিব্যজ্যোতি দেৱচৌধুৰী ১ অভিজিৎ বহুদিনীয়া ছাত্ৰবাসৰ বিৰক্তিকৰ ভিৰভাঁটিৰ পৰা মুক্তি বিচাৰিছিল। গুৱাহাটী বিশ্ববিদ্যালয়ৰ গৱেষক হিচাপে তেওঁৰ দিনচৰি কাগজ-পত্র, কিতাপ আৰু গৱেষণাৰ চাপত ভৰ্তি। তেওঁ ভাবিছিল—এটা শান্ত, নিৰ্জন ঘৰ পাই থকাৰ পৰা হয়তো মনৰ স্থিৰতা আহিব, আৰু নতুন প্ৰবন্ধ লিখাৰ বাবে প্ৰয়োজনীয় মনোযোগ পোৱা যাব। সেই অনুসন্ধানতেই একদিনে তেওঁ পালে মাৰ্গহাটৰ এটা পুৰণি দুইতলা ঘৰৰ ঠিকনা। গুৱাহাটীৰ মূল নগৰৰ কোলাহলৰ পৰা অলপ আঁতৰৰপৰা হলেও, ঘৰখনৰ সৰু উঠোন আৰু মাটিৰ গন্ধত ভিজা পৰিৱেশত এক ধৰণৰ সান্ত্বনা আছিল। যদিও ঘৰৰ বাহ্যিক গঠনটো সলনি-ভাঙি পোৱা যায়—মজবুত কাঠৰ দৰজাৰ কাষে কাষে কাষ্ঠখণ্ড মলিন হৈ পৰা, জানলিৰ কাচবোৰত দাগ ধৰা—তথাপি সেই নিঃশব্দত অভিজিৎ এক ধৰণৰ অদ্ভুত…
-
এক গ্রামের নাম শালপুকুর। নদীর ধার ঘেঁষে, সবুজ ক্ষেত আর তালগাছে ঘেরা এই গ্রাম বরাবরই শান্ত, নিরিবিলি। কোলাহলহীন জীবনযাত্রায় মানুষজন এখনো প্রথা মেনে চলে। গ্রামের মাঝখানে একটি পুরনো পুকুর—যার নাম থেকেই গ্রামটির নামকরণ। শালগাছ আর পুকুরের শাপলা মিলেমিশে গ্রামটিকে সাজিয়ে রেখেছে অন্যরকম আবহে। আধুনিকতার ছোঁয়া খুব কমই পৌঁছেছিল এই গ্রামে। ইন্টারনেট ধরা দিত কেবল পাহাড়ি মেঘের মতো—কখনো আসত, আবার হঠাৎ হারিয়ে যেত। ঠিক এই কারণে সরকার ও মোবাইল কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে শালপুকুর গ্রামে একটি আধুনিক 5G টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামের মানুষজন প্রথমে খুশি হয়ে ওঠে। তারা ভাবে, অবশেষে তাদের ছেলে-মেয়েরা শহরের মতো ভিডিও কল করতে…
-
সৌরভ রায় এক বহু বছর পর পাহাড়ের পাদদেশে পুরনো কাঠের বাড়িটায় ফিরেছেন অনিরুদ্ধ মুখার্জি। সময়টা নভেম্বরের শেষ, হিমেল বাতাস জানালার কাঁচে ঘষটে যাচ্ছে, আর গাছের ডালপালা কেমন যেন সুর করে কাঁপছে। কলকাতার শহুরে কোলাহল থেকে পালিয়ে আসা এই লোকটা একসময় নামী সাইকোলজিকাল থ্রিলার লেখক ছিলেন, কিন্তু গত ছয় বছর ধরে তার কলমে শব্দ নেই, চরিত্র নেই, কেবল এক শূন্যতা। বাড়িটা ছোট, কাঠের, একটু ঝুঁকে পড়েছে যেন সময়ের ভারে, কিন্তু তবু গৃহস্থালি আবহে নরম একটা শান্তি আছে এখানে। একসময় এই বাড়ির ঘরে ঘরে শব্দ ভেসে বেড়াত—পাখির ডাক, টাইপরাইটারের শব্দ, আর মাঝেমধ্যে হাসির ছায়া। এখন শুধুই নীরবতা, আর তাতে ভর করে আছে…
-
অগ্নিভ বসু ১ মেঘে ঢাকা আকাশ, ছেঁড়া ছেঁড়া কুয়াশার চাদরে মোড়া বাঁকুড়ার পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে একটি জিপ। স্টিয়ারিংয়ের পাশে বসে ডঃ নীলাভ মুখার্জী ডায়েরির পাতায় অস্থির হাতে কিছু নোট নিচ্ছিলেন—যার বেশির ভাগই ছিল স্থানীয় পুরাতাত্ত্বিক মানচিত্রের হালনাগাদ তথ্য। তাঁর মুখে সিগারেট, চোখে ক্লান্তির ছাপ। পেছনে বসে ছিলেন গবেষক মালবিকা রায়, যিনি জানালার কাঁচ সরিয়ে বাইরের পাহাড়ঘেরা দিগন্তে তাকিয়ে ছিলেন, যেন কোন কিছু চেনার চেষ্টা করছেন—যা হয়তো কোনো ছবি বা কাহিনি পড়ে মনে গেঁথে গিয়েছিল। গাড়িচালক রঘু হাঁসদা হঠাৎ বলে উঠল, “আর একটু সামনে গেলেই গোবিন্দপাহাড়পুর, বাবু। আপনারা যেই দেউলের খোঁজ করছেন, সেটার ধ্বংসস্তূপ ওই গ্রামের ওপারেই। তবে লোকজন…