সুদীপ দে শাল, শিমুল আর পলাশের ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট গ্রামটির নাম রামচক। গ্রামের চারপাশ যেন এক অদৃশ্য পর্দায় ঢাকা—দিনে শান্ত, অথচ রাতে গোপনে কেঁপে ওঠে। এখানে বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এক ভয়াল কাহিনি, যা শোনার পর শিশুদের চোখ ভিজে যায় আর প্রৌঢ়দের মুখে ছায়া নেমে আসে। বলা হয়, প্রতি বছর এক বিশেষ পূর্ণিমার রাতে, যখন আকাশে চাঁদ যেন দগ্ধ প্রদীপের মতো জ্বলতে থাকে আর মাটির ধুলো রূপালি আলোয় ভিজে ওঠে, তখন গ্রামে অদ্ভুত ঢাকঢোল বাজতে শুরু করে। শোনা যায়, শঙ্খধ্বনি, বংশীর আওয়াজ আর মেয়েলি হাসির কোলাহল—যেন কোনো অচেনা উৎসব শুরু হয়েছে। অথচ সেই রাতেই গ্রামবাসীরা ভয়ে নিজেদের ঘরে…
-
-
প্রনব কুমার সিনহা এক কলকাতার এক ব্যস্ত সন্ধ্যায়, শহরের কোলাহলের ভেতর থেকে অর্ণব সেনের মনটা যেন ছুটে যাচ্ছিল অন্য এক জগতে। তিনি পেশায় সাংবাদিক, কিন্তু নেহাত সংবাদ সংগ্রহ নয়, অর্ণবের আলাদা দুর্বলতা ছিল ইতিহাস ও লোককথার প্রতি। কলেজের সময় থেকেই তার অভ্যাস—শহরের পুরোনো ঘাট, অজানা গলি বা অচেনা গ্রামে গিয়ে স্থানীয় লোকেদের কাছ থেকে অদ্ভুত গল্প শোনা। সেদিনও একে একে রাত নেমে আসছিল বাগবাজার ঘাটে, হাওয়ায় ভেসে আসছিল ভেজা কাদার গন্ধ আর গঙ্গার জলে তরঙ্গের গুঞ্জন। সেই সময়েই হঠাৎ তার সঙ্গে পরিচয় হলো এক বৃদ্ধ নাবিকের, যার মুখে জড়ানো ছিল বহু বছরের লোনা জলের স্মৃতি। ঝাপসা চোখ, মুখে সাদা দাড়ি,…
-
১ শান্তিনিকেতনের আকাশে সেই রাতে চাঁদের আলো ম্লান, যেন সেও কোনো অজানা শোকের আভাস বহন করছে। গ্রীষ্মের শেষ প্রান্তে শরতের হালকা শীতল হাওয়া এসে পৌঁছেছে, চারপাশে অদ্ভুত এক নীরবতা, মাঝে মাঝে শুধু দূরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। মজুমদার বাড়িটি লাল ইটের পুরনো দোতলা, চারদিকে শিউলি আর শিরীষ গাছ, যেগুলোর ছায়া পড়ে গেছে বাড়ির বারান্দায়। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ হঠাৎই ভেসে আসতে শুরু করল বেহালার সুর—এমন সুর, যা একদিকে কোমল অথচ তীব্র বেদনা বহন করছে। প্রতিবেশীরা প্রথমে ভেবেছিল অনিন্দ্যবাবু হয়তো নতুন কোনো রাগ নিয়ে পরীক্ষা করছেন, কারণ তিনি প্রায়ই গভীর রাতে সঙ্গীত চর্চা করতেন। কিন্তু এই সুরে ছিল অন্যরকম…
-
দীপঙ্কর মাহাতো পুরুলিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামটিতে ঢোকার পথটাই যেন শহরজীবনের ব্যস্ততা থেকে এক অলক্ষ্য ছেঁটে ফেলা। ঝাউগাছ, শাল, পিয়াল আর মহুয়ার সারি সারি গাছের ফাঁকে রাস্তা বেঁকে গেছে পাহাড়ের বুক চিরে। মে মাসের শুকনো রোদ আর ধুলোভরা বাতাসের মধ্যেও সেখানে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল, যেন প্রকৃতি নিজেই শব্দ চেপে বসে আছে। এমনই নিঃসঙ্গ, প্রায় বিস্মৃতপ্রায় এই জায়গাতেই নিজের শেষ জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডা. অনিরুদ্ধ গুহ। কলকাতার এক খ্যাতনামা হাসপাতালে চব্বিশ বছর ধরে সার্জারি বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি, সহকর্মী আর ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছিলেন এক কঠোর অথচ নীতিনিষ্ঠ পথপ্রদর্শক। তবে সময়ের নিয়মে অবসরের দিন ঘনিয়ে এলে…