উপাসনা রায় উত্তর কলকাতার যে রাস্তার নাম বারবার বদলেছে, সেখানে একটা বাড়ি আছে যার নাম কখনও বদলায়নি—লোকমুখে “কালোজানালা বাড়ি”। অর্পণ যখন প্রথম দিন চাবিটা হাতে পেল, বিকেলের আলো তখন ছেঁকে পড়ছে ছাদের ধুলোতে; সিঁড়ির মুখে জোনাকি বাতির মতো ঝুলছে পুরনো বাল্ব, আর মেঝের কালো-সাদা মোজাইকের ফাঁক থেকে উঠছে এক ধরনের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ—আদ্রতা আর শেওলার মিশ্রণ। বাড়িওয়ালার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই, দালাল বাবু বলেছিল, “এখানে যারা থাকে তারা নিজ দায়িত্বে থাকে। পানীয় জল নিজের মতো জোগাড় করবেন, আর… কালো জানালাগুলো বন্ধ রাখবেন।” কথাটা বলে একটু থেমে হেসেছিল, যেন মজা করছে। অর্পণ ভেবেছিল, পুরনো বাড়ির দোষ। কিন্তু যে জানালাগুলোর কাঠে সরু লোহার…
-
-
কুহেলি দত্ত ১ বসন্তের সেই দুপুরে, যখন পাতাঝরা শিমুল গাছের তলায় বাতাস হালকা রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছিল, মেঘলার জীবনে প্রথমবার ঢুকে পড়েছিল ঈশান। কলেজের নতুন ক্লাসরুমে যখন সবাই নিজেদের চেয়ারে বসে কেমন যেন অচেনা অস্বস্তিতে গুটিয়ে ছিল, তখন মেঘলার চোখ পড়ে এক ছেলেকে—লম্বা, শান্ত মুখ, চোখের ভেতরে কেমন এক গভীর দৃষ্টি, যেন বহু কথা জমে আছে সেখানে। ঈশানের পাশে বসেছিল মেঘলা, নিছক সিট খালি ছিল বলে, কিন্তু সেই সিট ভাগাভাগি করতে করতেই দুজনের ভেতরে জড়িয়ে গিয়েছিল এক অদৃশ্য সুতো, যেটা তারা প্রথমে টেরও পায়নি। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, দুজনে একসাথে ক্লাসে যেত, লাইব্রেরিতে বসে একে অপরের কবিতার খাতা দেখত,…
-
অর্ঘ্যনীল চট্টোপাধ্যায় পর্ব ১ ঘড়ির কাঁটা ঠিক বারোটার ঘর ছুঁতেই হালকা একটা কাঁপুনির শব্দ উঠল ঘরটার কোণ থেকে। জানলার বাইরে শীতের রাত, অন্ধকার নেমে এসেছে জলের মতো। অনিরুদ্ধের হাতে তখনও লেখা শেষ হয়নি, কাঠের টেবিলের উপরে একটা হলুদ আলো ছড়াচ্ছে বাল্বটা। হঠাৎ করেই টেবিলের পাশে রাখা পুরোনো রেডিওটা একটানা গোঁ গোঁ শব্দ করতে লাগল। প্রথমে ভেবেছিল বোধহয় কোনও তার আলগা হয়েছে। কিন্তু তারপর স্পষ্ট গলার স্বরে ভেসে এল—”আপনার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় শুরু হচ্ছে এখন…” অনিরুদ্ধ চমকে উঠে তাকাল রেডিওর দিকে। বেজে চলেছে এক নারীকণ্ঠ, অবিশ্বাস্যভাবে পরিষ্কার উচ্চারণ, অথচ কোনও রেডিও চ্যানেলের নাম নেই, কোনও জিঙ্গেল নয়। শুধু একটানা সেই কণ্ঠ…