সোমনাথ দত্ত এক কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অডিটোরিয়ামে সেদিন ছিল ‘ইস্টার্ন ফরেস্ট কনজারভেশন’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার। চারপাশে ব্যানার, স্টল, আর নানা দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা ভিড় জমিয়েছিল। আলো-আঁধারির হলঘরে মাইক্রোফোনে চলছিল বক্তৃতা, আর পাশে বড় স্ক্রিনে ভেসে উঠছিল বনের প্রাণিকুল, বিরল উদ্ভিদ আর সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ছবি। প্রথম সেশনের শেষে, চায়ের বিরতিতে, ড. অনির্বাণ সেনগুপ্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন কফির কাপ হাতে, একদম কর্নারের দিকে। গম্ভীর মুখ, পরিমিত কথা বলা মানুষ তিনি, কিন্তু প্রকৃতি নিয়ে কথা উঠলে চোখে একধরনের শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস জ্বলে ওঠে। ঠিক তখনই এক পরিচিত মুখ—গাঢ় বাদামি চামড়া, খসখসে হাত, মাথায় ধুলো-ধূসরিত টুপি—হেঁটে এলেন তাঁর দিকে। লোকটি নিজের নাম…
-
-
সঞ্চারী নাগ উত্তরাধিকার চৌধুরী বাড়িটা যেন কলকাতার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক টুকরো ইতিহাস। বাইরের রাস্তায় কোলাহল, গলিপথে ঠেলাঠেলি অটো আর ছেঁড়া পোস্টারের ভিড়, কিন্তু উঁচু পাঁচিল ঘেরা সেই বনেদি বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই যেন সময় একেবারে অন্য গতিতে বয়ে চলে। আঙিনার মাঝখানে একটা বিশাল আমগাছ, তার চারপাশে বিক্ষিপ্ত ছায়া পড়ে আছে, আর সেই ছায়ার মধ্যে পড়ে আছে বহু প্রজন্মের অগণিত স্মৃতি। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেই প্রথমেই চোখে পড়ে একপাশের শীতল ঘরখানা, যেখানে ঢাকা দেওয়া আছে পুরোনো কাঠের আসবাবপত্র। ধুলো জমে থাকা পর্দার ফাঁক গলে আসা আলোয় দেখা যায় দেয়ালের কোণায় দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল আয়না, লম্বা কাঠের ফ্রেমে বসানো, যার…
-
নিবেদিতা চক্রবর্তী অধ্যায় ১: কুমিরডাঙার বাংলো অরিত্র বসুর মনটা বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারী হয়ে আছে। ছবি আঁকার চেষ্টা করলেই মনে হয়, ব্রাশটা যেন বাতাসে দোলা খায়, কিন্তু রঙে ডুবে না। ক্যানভাসে রঙ মিশে যায় ঠিকই, কিন্তু তাতে জীবন থাকে না। তার ভেতরের কিছু যেন চুপ করে বসে আছে, আর তা না জাগলে কিছুই উঠে আসে না ক্যানভাসে। কলকাতার কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে, এক বন্ধুর পরামর্শে সে চলে এল পুরুলিয়ার এক প্রাচীন, নির্জন গ্রামে—কুমিরডাঙা। পাহাড়, জঙ্গল আর অদ্ভুত নীরবতায় ঘেরা এই গ্রাম এখনো যেন কালের গায়ে আঁচড় পড়তে দেয়নি। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক চলে না, ইলেকট্রিকের তার আসে আবার যায়—আর…