দেবায়ন মুখোপাধ্যায় এক পিতার মৃত্যুর পরে বছরখানেক কেটে গেছে, কিন্তু ঋষভের জীবনে সেই শূন্যতা যেন আজও পুরোপুরি ভরেনি। শহরের ব্যস্ততা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ আর বন্ধুদের হাসিঠাট্টার মাঝেও কিছু একটা চুপচাপ গুমরে গুমরে উঠত ভেতরে—একটা অপূর্ণতা, একরকম গোপন আর অজানা অভাব। এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে সে ফিরে এসেছে পুরনো বাড়িতে—উত্তর কলকাতার অন্ধকার আর ধূলিধূসর অট্টালিকা, যার প্রতিটি দেয়ালে, জানালায়, এমনকি বাতাসে লেগে আছে সেই মানুষটার ছায়া, যাঁকে সে পুরোপুরি চিনতেই পারেনি কখনও। দেবদ্যুতি সেন—ঋষভের বাবা—ছিলেন এক সময়ের বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত, কিন্তু পরবর্তী জীবনে তাঁর আচরণ হয়ে উঠেছিল রহস্যময়, চাপা, এমনকি ভীতিকরও কিছুটা। নিজের ঘরে একা একা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা, কুঠুরি বন্ধ…
-
-
অভিষেক দাশগুপ্ত ১: মেটিয়াবুরুজের গলিগুলো ভোরবেলা সবচেয়ে বেশি কথা বলে—হলুদ আলোয় ভিজে থাকা চায়ের দোকান, ঠেলাগাড়িতে করে পাঁউরুটি বয়ে নিয়ে চলা কিশোর, আর কুকুরের দল ঘুম থেকে উঠে একে অপরকে চেনার জন্য ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয়। সৌভিক ঘোষ, শহরের এক ক্ষুদ্র কুরিয়ার কর্মী, প্রতিদিন এই জীবনের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে ফেরে। মাথায় হেলমেট, পিঠে বড় ডেলিভারি ব্যাগ, আর মুখে একরকম নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে, সে বাইকে চড়ে চুপচাপ চলে যায় অজানা ঠিকানার খোঁজে। সেদিন সকালটাও তেমনই ছিল—সৌভিক মেটিয়াবুরুজের কুরিয়ার হাব থেকে ডেলিভারির জন্য তিনটি পার্সেল হাতে পায়। দুইটা ছিল সাধারণ—একটা ফুড প্রসেসরের বাক্স, আরেকটা একটা নতুন মোবাইল ফোন। কিন্তু তৃতীয় প্যাকেটটা…
-
অরুণাভ ভট্টাচার্য ১ সন্ধ্যা নামছিল ধীরে ধীরে, কিন্তু কালীঘাটের শ্মশানে সেই আলো-আঁধারির খেলা যেন কালেরও ঊর্ধ্বে। পুরনো বটগাছের গায়ে লেপ্টে থাকা শ্যাওলার মতো এক ধরণের অদৃশ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল চারপাশে। অগস্ত্য ধীর পায়ে ঢুকল ভেতরে। মাথায় পুরনো ছাইরঙা চাদর, চোখে লালসালুকে ছেয়ে যাওয়া অভ্যস্ত দৃষ্টির অভিব্যক্তি — এক সমাজচ্যুত তান্ত্রিক, যার নাম এখন আর কেউ স্মরণ করে না। কেউ বলে সে পাগল, কেউ বলে অভিশপ্ত, কিন্তু সে জানে — সে ফিরে এসেছে শ্মশানে একটা মাত্র মুখ খুঁজতে, যেটা তার নিজের। এখানে, এই আগুন আর ছাইয়ের ভেতরে লুকিয়ে আছে সেই মুখ — পাঁচ মুখো তান্ত্রিকের একটি অংশ — যে নাকি শুধুমাত্র…
-
সুজয় দেবনাথ পর্ব ১ কলকাতার বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যাগুলোতে শহরের ভিড়ও যেন ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেদিনের সন্ধ্যাও কিছুটা তেমনই ছিল। অন্বেষা ল্যাপটপের সামনে বসে, কানে হালকা সঙ্গীত চালিয়ে, ডায়েরির শেষ পাতাটা ঘাঁটছিল। সে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে এই ছায়াময় দুনিয়ার সঙ্গে। সাংবাদিকতা, বিশেষ করে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং, তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে গত পাঁচ বছরে। চোখে-মুখে তীব্র কৌতূহল আর লেখার গভীরে যে তীক্ষ্ণতা, তা তাকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয় সহকর্মীদের ভিড়েও। ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে নামটা ভেসে উঠল—সুব্রতদা। ‘শুন অন্বেষা, তোকে একটা জায়গায় যেতে হবে। একটু স্পর্শকাতর কেস। দার্জিলিংয়ের কাছাকাছি চিমলিং নামে এক গ্রামে গত কয়েক মাস ধরে কিছু…