• Bangla - হাস্যকৌতুক

    ঠাকুমার টিকটক

    ঋজু সেন ঠাকুমা ও ‘ShortyShorts’-এর প্রথম সাক্ষাৎ কলকাতার বালিগঞ্জে পুরনো বনেদি দোতলা বাড়ি, ছাদের কোণে একটা নারকেল গাছ, দেওয়ালে ফাটল, আর উঠোনে ঝাঁপিয়ে পড়া হিবিসকাস ফুল। বাড়িটার বয়স প্রায় একশো। আর তার একজন স্থায়ী বাসিন্দা—শৈলজা বসু, ওরফে ‘ঠাকুমা’। বয়স ৮২, চোখে চশমা, মুখে হাঁ করা চমকানো অভিব্যক্তি প্রায় সর্বক্ষণ। কিন্তু তিনি হাঁটেন সোজা, শাড়ি পরেন রঙিন—তুলসী পাতার মতো সবুজ, চেরি ফুলের মতো গোলাপি। ঠাকুমা সারাদিন খবরের কাগজ পড়েন, টিভি দেখে রান্নার শো, আর মাঝে মাঝে শঙ্খ বাজিয়ে জানান দেন তিনি এখন “যোগা” করছেন। কিন্তু এই পরিপাটি নিয়মমাফিক জীবনে হঠাৎ একদিন হট্টগোল লাগে। নাতি অভ্র, ক্লাস টুয়েলভে পড়ে, তার ঘরে বসে…

  • Bangla - রহস্য গল্প - হাস্যকৌতুক

    নতুনপাড়ার ‘নিরুদ্দেশ’

    হিমাদ্রি মুখার্জী ১ দক্ষিণ কলকাতার ‘উজ্জ্বল আলয়’ হাউজিং কমপ্লেক্সের সকালটা ছিল একেবারে সাধারণ। দুধওয়ালা এসে গেটের বাইরে হাঁক দিলো, মুন্না ওয়াচম্যান ঝিমোতে ঝিমোতে ঘাড় তুলে চাবি দিলো, আর বাচ্চারা স্কুলবাস ধরতে দৌড়োতে লাগল। নবদম্পতি তুহিন আর বুবলি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে নিজেদের ইউটিউব ভিডিওর থাম্বনেইল নিয়ে আলোচনা করছিল, ঠিক তখনই বুবলি ফিসফিস করে বলল, “তুমি লক্ষ করেছো, ৪০৩ ফ্ল্যাটের জানালাটা কাল রাত থেকে বন্ধই আছে। আজ সকালেও কেউ বেরোলো না!” তুহিন কপাল কুঁচকে বলল, “অ্যাই, ঠিক বলেছো তো! বিমলবাবু তো রোজ সকাল সাতটায় হাঁটতে বেরোন, আর অঙ্কুর গলা ফাটিয়ে গেম খেলে—আজ একটাও শব্দ নেই!” সন্দেহজনকভাবে তারা দুজনে দোতলায় উঠে…

  • Bangla - হাস্যকৌতুক

    দেবদাসের ফেরত আসা

    তপোভন দত্ত পর্ব ১: ফেরার প্রথম দৃশ্য “ডাইরেক্ট নেমে যা বাস থেকে, তোকে কেউ ফুল নিয়ে স্বাগত জানাবে না!” — বাসের কন্ডাক্টরের চিৎকারে ঘুম ভাঙল দেবদাসের। চোখ খুলতেই সামনের দৃশ্য দেখে নিজের চোখে বিশ্বাস হচ্ছিল না — এই তো তার চেনা গ্রাম, নারায়ণপুর। পঁচিশ বছর বাদে ফিরে এসেছে, চুলে পাক ধরেছে, পকেটে এখন আর প্রেম নেই, আছে একটা পুরোনো মোবাইল, দুটো হ্যাংওভার ট্যাবলেট, আর একগুচ্ছ ফুসকু কথা — যেগুলো সে পরোর উদ্দেশ্যে বলবে ঠিক করেছে। ডান হাতের ছোট্ট ট্রলি টেনে টেনে সে যখন বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরোচ্ছে, তখন তার মাথায় সিনেমাটিক ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে — অবশ্য সেটা কল্পনায়, বাস্তবে বাজছে পাশের…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের হোস্টেল

    কলকাতার উত্তরে অবস্থিত “চন্দ্রমোহন কলেজ”-এর হোস্টেলটা শহরের মধ্যে হলেও একেবারে বাইরের অংশে পড়ে। চারদিকের কোলাহলের মধ্যেও হোস্টেলের গেট পেরোনোর পরেই যেন এক অদ্ভুত নীরবতা আচ্ছন্ন করে রাখে জায়গাটাকে। পুরনো লাল ইটের বিল্ডিং, জংধরা লোহার গ্রিল, আর হোস্টেলের চারপাশে ছড়ানো অশ্বত্থ ও কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো যেন দিনের বেলাতেও ছায়া ফেলে রাখে আশপাশে। সোহম মুখার্জি, সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া ছাত্র, বাবা-মায়ের সঙ্গে এসে উঠল ওই হোস্টেলে। তার সঙ্গে একই ঘরে থাকবে রাহুল দে, ওর স্কুলজীবনের বন্ধু, আর তুষার সাহা — এক আধুনিক, সদ্য দেখা হওয়া ফেসবুক-বন্ধু। রুম নম্বর ৭ — তিনতলার এক কোণে, যেটা দেখে মনে হয় অনেক বছর কেউ পরিষ্কার করেনি। সিলিং…

  • Bangla - হাস্যকৌতুক

    অফিসের ওঝা বাবু

    রূপম মৈত্র অধ্যায় ১: আগমন শুভ হউক সকাল সাড়ে ন’টায় ‘Eastern Cloudwave Solutions’-এর রিসেপশনে এক নতুন মুখ। মাথায় টাক, কপালে লাল চন্দনের তিলক, হাতে রুদ্রাক্ষের মালা, কাঁধে একটি ছোট ব্যাগ, আর গলায় গামছার মতো হলুদ স্কার্ফ। নাম তপন কুমার ওঝা। ড্রয়িং-রুম থেকে উঠে আসা না-খাওয়া বাবাজীর মতো চেহারা দেখে রিসেপশনিস্ট জুয়েলী প্রথমে ভেবেছিল, হয়তো ভুল করে কেউ পুরোহিত ডেকেছে অফিস পুজোর জন্য। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন শীটে নাম দেখে বুঝল, এ তো আজকের নতুন সিস্টেম অ্যাডমিন। “ওঝা বাবু?” বলে একটু হেসে ফেলেছিল সে, কারণ পদবি তো এমনই ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জুয়েলী বুঝে গেল, এই তপন কুমার শুধু নামেই ওঝা নন—মনপ্রাণে তিনি…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের হাসি

    সঞ্জয় দে পর্ব ১: বাড়ির রহস্য অভিজিৎ ছিল ইতিহাসের ছাত্র। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল পুরনো বাড়িগুলোর ইতিহাস খোঁজা, বিশেষত সেগুলোর যেগুলো সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে অথবা কেউ তাদের কাহিনী জানে না। একদিন, তার বন্ধু প্রীতম তাকে একটি পুরনো বাড়ির কথা জানায়, যে বাড়ি সম্পর্কে নানা গুজব ছড়িয়ে আছে। লোকজন বলে, এখানে অদ্ভুত হাসির শব্দ শোনা যায় এবং অনেক মানুষ এখানে হারিয়ে গেছে। সেই রাতের পর থেকেই বাড়িটির নাম তার মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। অভিজিৎ ভেবেছিল, এই বাড়ির রহস্য উন্মোচন করতে পারলে তার গবেষণায় নতুন একটি দিক যোগ হবে। তাই এক সকালে, তার গবেষণার জন্যই সেদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - হাস্যকৌতুক

    প্রেমপত্র বিভ্রাট

    সৌভিক ভট্টাচার্য ১ সৌমিক দে নামের সেই সাধারণ ছাত্রটির জীবন ছিল একঘেয়ে – সকালে স্কুল, বিকেলে টিউশন, রাতে মা-বাবার বকুনিতে পড়াশোনা। ক্লাস নাইনের গড়পড়তা ছাত্র সে, কিন্তু তার চোখে একটা স্বপ্ন লুকিয়ে ছিল—মীনাক্ষী সেন। হ্যাঁ, সেই মেয়েটি যে আঁকা-আঁকিতে দুর্দান্ত, প্রতিটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে আনে, আর যার হাসিতে সৌমিকের হৃদয়ের কাঁপুনি বেড়ে যায়। মীনাক্ষী তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেও সেটা সৌজন্যবোধ না প্রেম—সে বিষয়ে সৌমিকের কখনও সাহস হয়নি ভাবারও। তবে প্রেমে পড়া তো আর যুক্তির বিষয় নয়—একদিন হঠাৎ ক্লাসরুমে মীনাক্ষী যখন তার খাতা ফেরত দিয়ে বলল, “তোর লেখা কবিতাটা দারুণ লেগেছে”, তখনই সৌমিক যেন ভেসে গেল এক অলীক মেঘের…

  • Bangla - কল্পবিজ্ঞান - হাস্যকৌতুক

    জিরো-জী সুন্দরী

    সঞ্চারী নাথ মঙ্গলেও চা মঙ্গল গ্রহের লালাভ আকাশের নিচে গড়ে উঠেছিল ‘জিরো-জী টাউন’—ভারতীয় বাঙালিদের প্রথম মহাকাশ উপনিবেশ। মাধ্যাকর্ষণ প্রায় শূন্য, তাই সবকিছু ভাসমান, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। এই শহরের মাঝখানে ভাসমান ছোট্ট এক ক্যাপসুল, যার নাম ‘চা-রকেট’। চন্দন ঘোষ, বয়স তিরিশের কাছাকাছি, ‘চা-রকেট’ চালান। তার বানানো চায়ের স্বাদে মঙ্গলবাসীর হৃদয় জয় করেছে। একদিন বিকেলে, ঝুমুর সেন নামে এক মহাকাশ প্রকৌশলী ‘চা-রকেট’-এ এসে এক কাপ লাল চা অর্ডার করল। ঝুমুর ছিল নতুন পোস্টিং পাওয়া, তার কাজ মহাকাশ ক্রায়োজেনিক রিয়্যাক্টর ঠিক রাখা। তার আগমন চন্দনের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত, আর সেই ছোট্ট ‘ভাসমান চা’-র দোকানে দুজনের মধ্যে অদ্ভুত একটা টান…

  • Bangla - হাস্যকৌতুক

    ফ্ল্যাট নাম্বার ৪২০

    অভীক ভট্টাচার্য পর্ব ১: পুলকের আগমন মেঘমল্লার হাউজিং-এর D ব্লকের চতুর্থ তলার ৪২০ নাম্বার ফ্ল্যাটে এক আশ্চর্য বিকেলে ঢুকল নতুন ভাড়াটে—পুলক চ্যাটার্জি। বয়স পঁয়ষট্টির ঘরে, চুলে পাক ধরেছে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, আর কাঁধে একটা জীর্ণ রেক্সিনের ব্যাগ। তবে যে জিনিসটা প্রথমেই নজর কাড়ল তা হলো তাঁর বুকের উপর ঝোলানো একটা প্ল্যাকার্ড: “I AM RETIRED BUT STILL DANGEROUS.” তীর্থ তখন অফিস থেকে ফিরছে। জলের বোতলটা সবে ফ্রিজে ঢুকিয়েছে, দরজার সামনে শব্দ পেয়ে তাকাতেই দেখে ওই প্রবীণ ভদ্রলোক তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন। —“তুমি তীর্থ তো? আমি তোমার নতুন রুমমেট—পুলক চ্যাটার্জি। এক্স-কোড নেম: রেড কোবরা।” তীর্থ মুখ হাঁ করে তাকিয়ে রইল। —“কোড…

  • Bangla - হাস্যকৌতুক

    হরিদাসের হেয়ার স্টাইল

    শ্যামল সেন অধ্যায় ১ হরিদাস চট্টোপাধ্যায়, পাড়ার সকলে যাকে আদর করে হরিদাস কাকা বা হরিদাস বাবু বলে ডাকে, তিনি উত্তর কলকাতার এক পুরনো ভাড়াবাড়িতে থাকেন। তাঁর বয়স পঞ্চান্ন ছুঁইছুঁই, চেহারায় মোটাসোটা, গায়ের রঙ গমগমে, মাথার সামনের দিকে টাক, আর পিছনের দিকে কিছু ঝাঁকড়া চুল, যেগুলো তিনি প্রতিদিন সকালে খুব যত্ন করে সিঁদুরি তেল মাখিয়ে আঁচড়িয়ে নেন। গাল ভর্তি বড় বড় গোঁফ, যা তিনি বিশেষ যত্নে কেটে রাখেন যেন পাড়ার ছেলেরা তাকে “মশাই” সম্বোধন করার সময় ভক্তি ভরে বলে। হরিদাস বাবুর দৈনন্দিন জীবনের ছন্দ এতটাই একঘেয়ে যে পাড়ার মানুষ তার সময়ানুবর্তিতার উদাহরণ টানে, “ওই দেখ, হরিদাস কাকা বেরোলো মানেই সাতটা বেজেছে।”…