• Bangla - সামাজিক গল্প - স্মৃতিকথা

    ধুলো জমা স্মৃতি

    মৈনাক ঘোষ অধ্যায় ১ ঈশানীর কাছে উত্তর কলকাতার সুবর্ণা দিদার বাড়ি মানে ছিল একটা নিঃশব্দ, ধুলো জমে যাওয়া সময়ের বাক্স। বহুদিনের পুরনো এই দোতলা বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই একটা শীতল বাতাস শরীর বেয়ে নামে, যেটার উৎস জানে না কেউ। দালানে ফেলে রাখা কাঠের চেয়ার, দেয়ালে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ছবি, আর সিঁড়ির কর্কশ কড়কড়ে শব্দ সব যেন এক অতীতের গর্জন ছড়িয়ে রাখে। সে এসেছে এইবার ছুটি কাটাতে, কিন্তু সঙ্গে নিয়েছে নিজের ল্যাপটপ আর কিছু গবেষণার বই—কারণ প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে তার এম.ফিল. চলছে, আর সে এই ছুটির সময়টাও খালি যেতে দিতে চায় না। দ্বিতীয় দিনের সকালে, বৃষ্টি নামার পরপরই, সে দিদার ঘরের পাশে একটা…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    ক্যারম বোর্ড আর শীতের কম্বল

    মেঘালি দাস ঋত্বিক মৈত্র ডান হাতে একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগ আর বাঁ হাতে পুরনো স্কচটেপের খোপ ধরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল স্টোর রুমের দরজার সামনে। জানলা দিয়ে ঢুকে পড়া বিকেলের হালকা রোদ যেন স্টোর রুমটার চারপাশে ধুলোর আস্তরণে সোনালি পরত ছড়িয়ে দিয়েছে। দোতলার দক্ষিণ ঘরের এক কোণে আটকে থাকা এই ছোট্ট ঘরটা বহুদিন পর খোলা হচ্ছে আজ। কলকাতার মধ্যবিত্ত এক বাড়ির ক্লান্ত দেয়ালের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্টোর রুমটা যেন নিজের ভেতরে আর্কাইভ করে রেখেছে মৈত্র পরিবারের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো। হোস্টেলে যাওয়ার আগে নিজের প্রিয় ক্যারম বোর্ডটা নিয়ে যেতে চায় ঋত্বিক—এটাই তো ছিল তার আর বাবার একমাত্র ‘বন্ধুত্বের খেলা’, সন্ধ্যায় আলো-আঁধারিতে দুটো…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    বৃষ্টি ভেজা ছেলেবেলা

    অর্ঘ্য মৈত্র পর্ব ১: দোতলার জানালার ধারে বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ করে। জানালার পাশে বসে চুপচাপ শুনছি সেই শব্দগুলো, ঠিক যেমন করে শোনতাম ছোটবেলায়। সেই দোতলার ঘরটা, যেখানে একটা কাঠের টেবিল ছিল, তার ওপর সাদা কাপড়ে মোড়া একটা গোল ক্যালেন্ডার। জানালার ওপাশে ছিল বকুলগাছ, আর গাছের মাথায় লুকিয়ে থাকত বৃষ্টির ফোঁটাগুলো। আজকের দিনটা যেন সেই পুরোনো দিনের মতই, শুধু বদলে গেছে সময় আর শহর। মনে হচ্ছে, যেন আবার ফিরে গেছি দক্ষিণ কলোনির সেই ছোট্ট বাড়িটায়, যেখানে আমার ছেলেবেলা জমে ছিল একেকটা গল্পের মত। আমি অর্ঘ্য, জন্মেছিলাম এক শীতের সকালে। মা বলে, সেদিন খুব কুয়াশা ছিল, হাসপাতালের জানালা দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছিল…

  • Bangla - রহস্য গল্প - স্মৃতিকথা

    রাত্রির ডাক

    অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ১. মহুয়ার গন্ধে ডুবে মধ্যরাতের সোঁদা গন্ধটা যেন গায়ে লেগে আছে। মহুয়া গাছের তলায় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, আমি কোন শহরের বাসিন্দা ছিলাম না কোনোদিনই। লাল মাটির রাস্তা, অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া একটানা বাঁক, আর সেই বাঁকের ওপারে যেন অপেক্ষা করে আছে কোন অচেনা কিছু, এক রহস্য—জঙ্গলের রহস্য। আমি নেহাতই এক নগরপ্রেমী মানুষ। কলকাতার ট্র্যাফিক, অফিসের তাড়া, বইপত্র আর রাত্রির ঘুমহীনতা নিয়ে আমার জীবন। তবু বছর খানেক আগে এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে ঝাড়খণ্ডের দালমা পাহাড়ের ধার ঘেঁষে এক জঙ্গলসাফারিতে গেছিলাম, আর সেখানেই আমার জীবনের গল্পটা একটু বদলে যায়। সে রাতে আমরা ছিলাম “চিলমারি কটেজ” নামে এক ছিমছাম, কাঠের ঘরের মতো…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    একটা সাইকেলের স্মৃতিকথা

    সুদীপ্ত চৌধুরী পর্ব ১ আমার জন্ম হয়েছিল এক গরম দুপুরে, হাওড়ার একটি ছোট গ্যারেজের ভেতর। চারপাশে ধুলো, কাঠের গন্ধ, আর যন্ত্রপাতির আওয়াজ। তখন আমি কিছুই বুঝতাম না—শুধু টের পাচ্ছিলাম, কিছু একটা নতুন হচ্ছে। লোহা, রাবার আর রঙের গন্ধে ভরা সেই অদ্ভুত পরিবেশে কেউ আমাকে তৈরি করছিল, নিঃশব্দে, নিখুঁতভাবে। আমার কঙ্কাল জুড়ে নিচ্ছিল একে একে চাকা, হ্যান্ডেল, প্যাডেল। আমার গায়ে পড়ছিল চকচকে লাল রঙ, ঠিক যেন একটা নতুন জামা। সেই রঙে আমার আত্মা খুঁজে পেল নিজেকে। আমার গায়ে প্রথম স্পর্শ দিয়েছিল একটি খুদে হাত—সে ছিল শিবু, বছর আটেকের এক ছেলেমানুষ। ওর বাবা সেই গ্যারেজে কাজ করত, আর আমাকে তৈরি করেছিল তাঁরই…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    এক মুঠো পুরোনো আলো

    সোমা মিত্র আমার স্মৃতি পুরোনো অ্যালবামের মতো—কিছু ছবি রঙ হারিয়েছে, কিছু এখনো ঝকঝকে। উত্তর কলকাতার যে বাড়িটাতে আমার জন্ম, সেই লালবাড়িটা এখন আর নেই। সেটার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে চকচকে অ্যাপার্টমেন্ট, নাম—“মঙ্গলতারা হাইটস”। মাঝে মাঝে ভাবি, নামটা কত গ্ল্যামারাস, অথচ সেই নামের নিচেই চাপা পড়ে গেছে আমার ছোটবেলার চটি পায়ে দৌড়ানো বারান্দা, কাঁঠালের গন্ধমাখা দুপুর, আর দিদার হাতে বাঁধা তুলসী মালা। আমাদের বাড়িটা ছিল এক রকম রেওয়াজি—সকালে প্রার্থনা, দুপুরে শব্দ করে পাখার ঘুরন্ত আওয়াজ, আর সন্ধ্যেবেলা harmonium-এর একঘেয়ে সুর। বাবা অফিসফেরতা এককাপ চায়ে দিন শেষ করতেন, আর মা রান্নাঘরের কোণে বসে চুপচাপ মাছ কুটতেন—কখনোই অকারণে হাসতেন না। তবু আমি জানতাম, মা…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    নীল রাত্রির লেপচাজগৎ

    সুকান্ত রাহা লেপচাজগৎ—একটি নাম, যা উচ্চারণ করলেই মন যেন শীতল হিমালয়ী বাতাসে ভরে ওঠে। এই নামের মধ্যেই জড়িয়ে আছে পাইনবনের গাঢ় সবুজ, কুয়াশার মতো মায়া, আর সেই নীরবতা যা কেবল পাহাড় জানে। কলকাতার ক্লান্ত, কংক্রিট-ভেজা দিনগুলো পেরিয়ে, আমি এসেছিলাম এখানে—একটি নির্জন আশ্রয়ের সন্ধানে। সকালটা ছিল জানুয়ারির শেষ ভাগে, শীত এখনো রয়ে গেছে হাড়ে-মজ্জায়। দার্জিলিং থেকে ছোট একটি গাড়িতে চড়ে কুয়াশা ভেদ করে আমি পৌঁছালাম লেপচাজগৎ—দার্জিলিংয়ের কোলঘেঁষা অথচ পর্যটকদের চোখ এড়িয়ে থাকা এক অপার বিস্ময়। এই গ্রাম যেন নিজের সৌন্দর্য আড়াল করে রাখে, কেবল সেইসব মানুষের জন্য, যারা তাকে খুঁজতে জানে। গেস্ট হাউসটির নাম ‘উত্তরধ্বনি’। কাঠের তৈরি এক পুরোনো বাংলো—ছাদে শুকনো…