• Bangla - রহস্য গল্প

    রঙিন চোখের খুনি

    অভিরূপ সেন ১ শহরের এক অভিজাত এলাকায় সকালের শান্ত পরিবেশটা যেন আচমকাই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল পুলিশের সাইরেনে। পান্থপথের পাশের বহুতল বিল্ডিং—‘সিলভার ওক টাওয়ার’—যার একাদশতলার ১১-বি ফ্ল্যাট থেকে ভেসে এসেছিল এক নারীর ভীতিকর চিৎকার, পরে যা নিস্তব্ধতায় রূপ নেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে হাজির হয় কলকাতা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের এসিপি নীলাঞ্জনা সরকার। ভিতরে ঢুকেই তার অভিজ্ঞ চোখে ধরা পড়ে অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা। ড্রয়িংরুমে ছড়িয়ে থাকা রক্ত, উল্টে থাকা চেয়ারের ছায়া এবং একটি পড়ে থাকা ওয়াইনগ্লাস। ঘরের মাঝখানে পড়ে আছে তরুণী মেয়েটির নিথর দেহ, যার চোখদুটো যেন অস্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল। নীলাঞ্জনা হাঁটু গেড়ে বসে, লাশের চোখের দিকে তাকায়। কনট্যাক্ট লেন্স—কিন্তু সেগুলি স্বাভাবিক নয়। একটিতে…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    হাওড়ার হীরের বাক্স

    দেবাশিস লাহা ১ হাওড়া স্টেশন তখনও ভোরের কুয়াশায় ঢাকা, ট্রেনের আওয়াজ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে প্ল্যাটফর্মজুড়ে। ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে মানুষের ভিড় তখনও জমে ওঠেনি, শুধুই কিছু কুলি, এক-আধজন ঘুমন্ত ভিখারি আর স্টেশন মাস্টারের হ্যান্ডল্যাম্পের আলোয় ঝিম ধরা রেললাইন। ঠিক তখনই, সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরের ছায়াঘেরা জায়গায় হঠাৎ দেখা যায় এক লোককে—মাথা ও মুখ ঢাকা, কাঁধে ব্যাগ, হাতে একটা লাল রঙের ট্রাঙ্ক। কেউ তাকে ভালো করে লক্ষ্য করেনি, শুধু কুলি কানু দে পরে বলেছিল, লোকটা যেন ছায়ার ভেতর থেকে উঠে এসেছিল, আর ওই ট্রাঙ্কটা রেখেই হাওড়ার ঝাঁকুনি মেশানো শব্দের ভেতর মিলিয়ে গেল। প্রথমে কেউ গুরুত্ব দেয়নি, এমনকি দু’ঘণ্টা পরেও যখন ট্রাঙ্কটি…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    চন্দ্রমল্লিকা রহস্য

    অনিন্দ্য ঘোষ ১ শিউলি আর আতরের গন্ধে ভরে উঠেছিল পুরনো রায়চৌধুরি বাড়ির আঙিনা। দীপাবলির উৎসব, তাই শতবর্ষীয় অন্দরমহল আজ নতুন আলোয় আলোকিত। লালটেন থেকে ফেয়ারি লাইট, পায়রা কাঁপানো পটকা আর চিত্তাকর্ষক রকমারি মিষ্টির হাঁড়ি—সবই যেন একটা নিখুঁত নাট্য মঞ্চের পরিপাটি প্রপস। ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁতেই ছোটদের দল মেতে উঠল ফোয়ারা আর চাকরি নিয়ে, আর প্রবীণরা চায়ের কাপ হাতে স্মৃতির আলো-আঁধারিতে গল্পে মশগুল। বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কবিতা তখন সবে সিঁড়ি দিয়ে নামছে—হলুদ তসর শাড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, হাতে একটা তাজা চন্দ্রমল্লিকা ফুল। চোখে চোখ রেখে কারও সঙ্গেও কথা বলছে না, কেবল নিঃশব্দে হাঁটছে—একটা নিস্তব্ধ অভিমান যেন তার চলনে ধরা দেয়। তাকে…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    ঘুমন্ত শহরের কান্না

    অধ্যায় ১ ড. শৌনক ভট্টাচার্য বসেছিলেন নিজের স্টাডি রুমে, জানলার বাইরে কুয়াশা নামছিল ধীরে ধীরে। কলকাতার ডিসেম্বরে এমন হিমেল সন্ধ্যা যেন তার প্রিয় — নিঃশব্দে পুরনো বইয়ের পাতা উল্টে দেওয়ার মতো। কাঁপা আলোয় টেবিলের উপর ছড়িয়ে ছিল কিছু নীলচে বিবর্ণ মানচিত্র, কয়েকটি পুরনো পাণ্ডুলিপি আর একটি হলুদ হয়ে যাওয়া খাম। সেই খামের ভেতর থেকে বেরিয়ে ছিল একটি চিঠি, যা সম্ভবত ১৯২০ সালের দিকে লেখা — পাঠক ছিল ‘নলিনীপ্রসাদ ভট্টাচার্য’, যিনি ছিলেন তাঁর প্রপিতামহ। চিঠিতে লেখা ছিল এক প্রাচীন শহরের নাম — ‘বোধানগর’। শহরটির নাম ইতিহাসে প্রায় উধাও, কিন্তু লোককথায় মাঝেমাঝে ওঠে আসে; বলা হয়, “বোধানগর আজও জেগে ওঠে কাঁদতে।” শৌনকের…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    মরণফাঁদ

    দিব্যজ্যোতি হালদার অধ্যায় ১: বছর সাতেক পর দীপঙ্কর চৌধুরী পা রাখল মুর্শিদাবাদের পুরনো রাজবাড়ির উঠোনে। হাওয়ায় একরকম বাষ্পঘন গন্ধ—পুরনো কাঠ, চুনকাম ধরা দেয়াল, আর দাদুর ব্যবহৃত তেল-সুগন্ধির মিশেল। ইংল্যান্ডে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার পর এমন প্রাসাদোপম, অলস অথচ রহস্যময় পরিবেশে ফিরে আসাটা একধরনের সাংস্কৃতিক ধাক্কা। অথচ মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা—এই বাড়িতেই তার শৈশব কেটেছে, তার ঠাকুমার সঙ্গে কান্না-মাখা গল্পের সন্ধ্যা, পেছনের বাগানে আমগাছের ডালে দোল খাওয়া, আর গজদরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ের মুখোশ পরা কল্পনা। সেই গজদরজা—মুখ্য আকর্ষণ, আর একসাথে সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিস এই বাড়ির—আজও একইরকম দাঁড়িয়ে, জং ধরা লোহার দাঁতের মতো নখর ছড়ানো দরজা, যার পেছন থেকে মাঝরাতে কান্নার…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    শঙ্খ নদীর ধারে

    বিভাস সেনগুপ্ত এক নীলয় রায় জানালার ধারে বসে ছিল ট্রেনের কামরায়, মাথায় হেডফোন, চোখ দু’টো দৃঢ়ভাবে বাইরে, কিন্তু মন দূরে, একেবারে অন্যখানে। বাইরের কুয়াশায় ঢাকা দৃশ্যপট যেন তার ভেতরের অস্পষ্ট অনুভূতিগুলোরই প্রতিচ্ছবি ছিল। তার ব্যাগে একটি Nikon DSLR, দুটি লেন্স, একটি নোটবুক আর মুঠোফোন ছাড়া তেমন কিছু ছিল না। কলকাতা শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে সে চলেছে পুরুলিয়ার দিকে—এইবার শুধু একটি প্রজেক্টের জন্য নয়, বরং নিজের ভেতরের এক চাপা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য। সে শুনেছিল শঙ্খ নদীর পাড় ঘিরে একটি লোককথা—“নদী নাকি কথা বলে, যদি তুমি কান পেতে শোনো।” শহুরে যুক্তিবাদী মানুষদের কাছে হয়তো এসব নিছক রূপকথা, কিন্তু নীলয়ের কাছে…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    পটচিত্রের অভিশাপ

    শ্রীজিত সাহা অধ্যায় ১: হাটের হদিস কলকাতার গাঢ় ধূসর সকালে শহরের বুক চিরে যখন শরদ রায় তাঁর পুরনো অ্যাম্বাসাডার গাড়ি নিয়ে রওনা দিলেন, আকাশে তখনও কুয়াশার বৃষ্টি লটকে ছিল। পেছনের সিটে রাখা ছিল একটি ধুলোমাখা ক্যামেরা, নোটবই, এবং বছর তিরিশেক পুরনো বাংলার লোকশিল্প বিষয়ক একটি জীর্ণ বই। শরদ একজন খ্যাতনামা শিল্প সংগ্রাহক হলেও তাঁর সংগ্রহ মানেই কেবল গ্যালারির ঝকঝকে ফ্রেম বা বিদেশ থেকে আনা মিনিয়েচার নয়—তিনি খোঁজেন মাটির গন্ধে মাখা হারিয়ে যাওয়া শিল্প, লোকজ ঐতিহ্য। আর তাই আজ তিনি চলেছেন নদিয়ার ধারের এক প্রাচীন গ্রামে, যেখানে প্রতি বছর বসে “মারগাঁ হাট”—এক আশ্চর্য হাট, যেখানে লোকশিল্পীরা নিজেদের সৃষ্ট পট, মুখোশ, মাটির…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    রক্তের গন্ধ

    অধ্যায় ১ পুরুলিয়ার ঘন অরণ্য পেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে নির্জর বসু যখন সেই পুরনো কটেজটির সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন সূর্য সবে পশ্চিমে হেলে পড়েছে। রোদ আর পাতার ফাঁক দিয়ে আলো-ছায়ার খেলা কেমন একটা বিমুগ্ধ নীরবতা তৈরি করেছিল। শহরের শব্দদূষণ, অফিসের ইমেল, অপ্রয়োজনীয় কথোপকথন—সব ছাড়িয়ে, এই নির্জনতার মাঝে এসে যেন কিছুটা হালকা অনুভব করছিল সে। কটেজটা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভিতরে কী অপেক্ষা করে আছে—চুন-ঝরানো দেওয়াল, কাঁচভাঙা জানালার পাশে গাছের লতানো ডাল, আর এক পাশে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ লেগে থাকা আগুন নিভে যাওয়া উনুন। দুলাল কাকা, কটেজের কেয়ারটেকার, চুপচাপ একটা চাবি এগিয়ে দিলেন—চোখেমুখে কোনো উৎসাহ নেই, যেন এক…

  • Bangla - প্রেমের গল্প - রহস্য গল্প

    কুশলনগরের কাঠের ব্রিজ

    সমাপ্তি বর্মন সকালটা ছিল মেঘলা, অথচ বৃষ্টির কোনো আভাস নেই। রুক্মিণীর মাথার ওপর দিয়ে পাখির ছায়া উড়ে গেল—একটা নীল কুড়ুলি, সেইরকম রঙিন পালকের পাখি যেটা কেবল কুশলনগরের আকাশেই দেখা যেত তাদের ছোটবেলায়। বিশ বছর পর এই জায়গাটায় ফিরে আসার সাহস সে নিজের কাছেই একটা বিস্ময় মনে হচ্ছিল। পাশে বসে থাকা ভাই অর্ণব হঠাৎ বলে উঠল, “এই রাস্তার বাঁকে একটা নারকেল গাছ ছিল, মনে আছে?” রুক্মিণী হেসে মাথা নাড়ল। “আর মনে নেই? ওই গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আমি তোকে গুমরার জুস খাওয়াই বলেছিলাম, আর তো তোর গায়ে গড়িয়ে পড়েছিল!” দুজনেই হেসে উঠল। সেই হাসির মধ্যে ছিল পুরনো দিনের গন্ধ, ছিল শৈশবের ডাকে…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    নীল পাথরের কঙ্কাল

    এক রাজস্থানের জয়সলমের থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে, বিস্তীর্ণ মরুভূমির বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে এক পরিত্যক্ত দুর্গ—সোনাভর কোট। কেবল উড়ে বেড়ানো ধুলো, জ্বলে ওঠা মরীচিকা আর কয়েকটা গাছের কঙ্কালই সাক্ষী ছিল যে একদা এখানে সভ্যতা ছিল। সেই দুর্গের কাছাকাছি স্থানে খনন কাজ শুরু হয়েছিল Archaeological Survey of India-এর তত্ত্বাবধানে, যার নেতৃত্বে ছিলেন দিল্লির প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ডঃ বিপ্লব রায়চৌধুরী। ইতিহাসের গায়ে জমে থাকা ধুলো সরাতে তাঁর হাতের জুরি ছিল না। তাঁর দলে ছিলেন গবেষক তানিয়া শেখাওয়াত, স্থানীয় শ্রমিক গণেশরাম, আর কিছু ছাত্রছাত্রী। খননের প্রথম তিন দিন কেটেছে কেবল পোড়ামাটির পাত্র, ধ্বংসপ্রাপ্ত ইটের খণ্ড এবং কিছু অনির্বচনীয় নিদর্শন খুঁজে পাওয়ায়। কিন্তু চতুর্থ…