• Bangla - প্রেমের গল্প - ভ্রমণ

    মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে

    সায়ন্তনী ঘোষ পর্ব ১: ট্রেন যখন ছাড়ে, মন তখন কোথাও আটকে থাকে কলকাতা স্টেশনটা যেমন সব সময় গমগম করে, সেদিনও ঠিক তেমনই ব্যস্ত আর পাঁপড়ের মতো শব্দে ভরা ছিল। তবে আমাদের ভেতরে যেন কোনও শব্দ ছিল না। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম দু’জন দু’দিকে মুখ করে — কেউ কিছু বলছে না, কেউ কিছু বলার চেষ্টাও করছে না। ট্রেন ছাড়ার দশ মিনিট আগে, আমার হাতের বোর্ডিং পাসটা খানিকটা ভিজে গিয়েছিল, জানি না মেঘের জল ছিল না চোখের জল। রুদ্র আমার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, পিঠে রুকস্যাক, আর একটা নীল চেক শার্ট গায়ে। এই মানুষটার সঙ্গে আট বছর কেটে গেছে, অথচ আজও মাঝে…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    সাগরসঙ্গমের সন্ধানে

    ইন্দ্রনীল লাহা ১ কলকাতার জানুয়ারি শীতভরা সকালে এসপ্ল্যানেড বাসস্ট্যান্ডটা যেন একটু বেশিই কোলাহলময় লাগছিল। চারপাশে ঠান্ডা কুয়াশা, পুণ্যার্থীদের গমগম আওয়াজ, ঠাকুরের প্রসাদের গন্ধ, আর চায়ের দোকানে জমে ওঠা ভিড়—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত উৎসবের আমেজ। অনির্বাণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল বাকিদের সঙ্গে, গলায় ম্যারুন রঙের একটা মাফলার পেঁচানো, চোখে একটা নিরুত্তাপ ছায়া। তার পাশে ঈশান ফোনে ব্যস্ত—বাসের টাইমিং, হোটেলের কনফার্মেশন মেল, সব কিছু একে একে দেখে নিচ্ছে। তৃণা বসে ছিল ওদের ব্যাগের পাহাড়ের পাশে, ঠান্ডায় হাত ঘষছে, আর বিক্রম তার নতুন DSLR ক্যামেরা নিয়ে একের পর এক ক্লিক করে চলেছে—কখনও ফুটপাথের বাউল, কখনও বাসের ছাদের ওপরে বাঁধা বস্তা। “এই মেলা কিন্তু মিথ্যা…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    ডুয়ার্স ডায়রিজ

    স্নেহা চৌধুরী ১ রেলগাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের সবুজ সমুদ্রের মতো বিস্তৃত চা-বাগান আর দূরের বনভূমি দেখে পবিত্রর মনে হল যেন কারও আলতো হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে তার হৃদয়ের গোপনতম কোণ। পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে থাকা ডুয়ার্সের অপার সৌন্দর্য তাকে বহুবার ডেকেছে, কিন্তু এবার সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার রূপ একেবারেই ভিন্ন—সঙ্গে নতুন বউ অনুরাধা, আর তাদের প্রথম মধুচন্দ্রিমা। নিউ মাল জংশনে নামার সময় সকালটা ছিল কোমল কুয়াশায় মোড়া, আকাশে রোদের ঝলকানি আর বাতাসে হালকা শীতের আমেজ। অনুরাধা ঘাড়ের ওপর শাড়ির আঁচল টেনে বলল, “এতটাই নির্জন জায়গা! একটু ভয় ভয় করছে জানো?” পবিত্র হেসে বলল, “তাই তো এখানে এসেছি। শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে, শুধু…

  • Bangla - ভ্রমণ

    বালুচরের দিনগুলি

    মালবিকা সেনগুপ্ত   ঢাকার ধুলো-ধোঁয়া আর ট্র্যাফিকের চক্রব্যূহ পেরিয়ে যখন জয়িতা নামল মেঘনাঘাটের ছোট্ট ফেরিঘাটে, তখন সূর্য মাথার উপর একচিলতে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে। চারপাশে জনমানবশূন্য প্রান্তর, দুটো হেমন্তের কাক আর কয়েকটা শুকনো পাতার ঝটপট আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ নেই। ঠিক এইখানেই সে শুট করবে তার নতুন ট্র্যাভেল ভ্লগ: “Unfiltered Bengal”-এর এক বিশেষ পর্ব। “মোবাইল ডেটা কাজ করছে না? নো টাওয়ার?” – ক্যামেরাম্যান শান্তু মাথা চুলকে বলল। জয়িতা মাথা নাড়ল। ও জানত এই চর অঞ্চলে ঢুকলেই নেটওয়ার্ক ঘুমিয়ে যায়, মানুষের শব্দের চেয়ে নদীর শব্দ বেশি জোরালো হয়। “চর বলরামপুর”, গুগল ম্যাপে মাত্র একটা বিন্দু। কিন্তু সেই বিন্দুর মধ্যে যেন সারা…

  • Bangla - ভ্রমণ

    কাঞ্চনজঙ্ঘা: একটি শেষ চিঠি

    ঋদ্ধিমান চক্রবর্তী পর্ব ১: চিঠির খামে কাঞ্চনজঙ্ঘা পুজোর ঠিক আগের দিন সকালে মিঠির চিঠিখানা হাতে আসে—একটা পুরোনো বাদামি খামে, অদ্ভুত সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা ‘মিতালী সেন’ নামটা ঠিক তার ছেলেবেলার ডাকনামের পাশে। তবে এই ডাকনামটা আজ বহু বছর কেউ ডাকে না, এমনকি নিজের কাছেও মিঠি অনেককাল হয়ে গেছে মিসেস মিতালী বসু। কিন্তু চিঠিটা খুলতেই মনে হল, সময় যেন উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছে। প্রেরক: প্রমথেশ চৌধুরী। ঠিকানা: সেন ভিলা, হিলকার্ট রোড, দার্জিলিং। তারিখ: ১৯৮৬। মিঠি শিউরে উঠেছিল। ১৯৮৬? তা হলে এই চিঠিটা এখন তার হাতে পৌঁছেছে ৩৯ বছর পরে? চিঠির ভাঁজে আরও ছিল একটি ছোট স্কেচ—হাতের আঁকা, পেনসিলে আঁকা কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া, এক…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    দিল্লির গোপন দরজা

    শৌনক বসু ১ পুরনো দিল্লির অন্ধগলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে ড. অনির্বাণ চক্রবর্তী প্রথমবারের মতো অনুভব করল যেন সময়ের চামড়া একটু একটু করে খসে পড়ছে। চকবাজারের ঘিঞ্জি পথ, পানের দোকানের কড়া গন্ধ, আর মাটির উপরে গড়াগড়ি দেওয়া জ্যান্ত মশাগুলোর মধ্যেও কিছু ছিল, যা তাকে এই জায়গাটার দিকে ফের টেনেছিল বহু বছর পর। সে একবার এখানে এসেছিল ২০০৯ সালে, তখন সে এম.ফিল ছাত্র। আজ ২০২৫—আরও পরিণত, আরও ক্লান্ত, কিন্তু সেই পুরোনো আগ্রহটা আবার যেন জেগে উঠেছে। তার ব্যাগে ছিল পাণ্ডুলিপির মতো পুরনো এক নকশা—এক মুঘল কেল্লার অংশবিশেষ, যা কোনও সরকারি দলিলেও নেই, কিন্তু আগ্রহী কেউ কেউ বলেন, ওটা “মেহরআলী কেল্লা”—একটা হারিয়ে যাওয়া…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    শঙ্খ নদীর ধারে

    বিভাস সেনগুপ্ত এক নীলয় রায় জানালার ধারে বসে ছিল ট্রেনের কামরায়, মাথায় হেডফোন, চোখ দু’টো দৃঢ়ভাবে বাইরে, কিন্তু মন দূরে, একেবারে অন্যখানে। বাইরের কুয়াশায় ঢাকা দৃশ্যপট যেন তার ভেতরের অস্পষ্ট অনুভূতিগুলোরই প্রতিচ্ছবি ছিল। তার ব্যাগে একটি Nikon DSLR, দুটি লেন্স, একটি নোটবুক আর মুঠোফোন ছাড়া তেমন কিছু ছিল না। কলকাতা শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে সে চলেছে পুরুলিয়ার দিকে—এইবার শুধু একটি প্রজেক্টের জন্য নয়, বরং নিজের ভেতরের এক চাপা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য। সে শুনেছিল শঙ্খ নদীর পাড় ঘিরে একটি লোককথা—“নদী নাকি কথা বলে, যদি তুমি কান পেতে শোনো।” শহুরে যুক্তিবাদী মানুষদের কাছে হয়তো এসব নিছক রূপকথা, কিন্তু নীলয়ের কাছে…

  • Bangla - ভ্রমণ

    তিন দিন টোকিওতে

    বর্ণালী চট্টোপাধ্যায় টোকিওর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাঁচের দেওয়ালের ওপারে ছড়ানো রোদটা কেমন কৃত্রিম বলে মনে হচ্ছিল ঋতাভরীর। নয় ঘন্টার বিমানে ক্লান্ত শরীর, চোখের নিচে কালচে ছাপ, আর মাথার ভেতরে যেন শব্দহীন কোনো তীব্র গুঞ্জন— ঠিক যেমনটা হয় ঘুমহীন দীর্ঘ যাত্রার শেষে। প্লেন যখন নামছিল, তখন উপর থেকে দেখা শহরটা তাকে মায়াবী লেগেছিল— ছিপছিপে বাড়িগুলো, পরিপাটি রাস্তা, যেন কারও মন খারাপ করার অবকাশ নেই। কিন্তু মাটিতে নামার পরেই সে বুঝেছিল, দুনিয়াটাই বদলে গেছে। চারদিকে অচেনা হরকানা, কাতাকানা, কাংজি— সব মিলিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। যে কায়দায় এক অফিসার তার পাসপোর্ট চেক করছিল, সেখানে স্নিগ্ধতা ছিল ঠিকই, কিন্তু মানুষের মতো নয়, যেন…

  • Bangla - ভ্রমণ

    সারনাথের সকাল

    অতনু রায়চৌধুরী অধ্যায় ১: নিঃশব্দের পথ বারাণসীতে পৌঁছেছিলাম আগের দিন সন্ধ্যায়। শীতের কুয়াশায় ঢাকা ঘাটগুলো তখন ধূপ আর সান্ধ্য আরতির আলোয় মায়াবী হয়ে উঠেছে। কিন্তু শহরের কোলাহল, ভিড়, আর টানাটানির ভিড়ে কোথাও যেন আমার মন শান্তি খুঁজে পাচ্ছিল না। হোটেলের জানালা দিয়ে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে থেকে রাতটা কেটেছিল। ঘুম এসেছিল, কিন্তু মনটা যেন ঘোরের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলছিল—কোন এক দূর, স্নিগ্ধ স্থানে। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল। হঠাৎ মনে হল, আজ সারনাথ যাওয়া যাক। বারাণসীর কেন্দ্র থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে, যেখানে গৌতম বুদ্ধ প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছিলেন—এই জায়গাটাই যেন ডেকেছিল আমাকে। চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম, অটোতে চেপে বসি। রাস্তার…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    মানিকছড়ির মায়া

    শ্রেয়সী ঘোষাল ১ তপনজ্যোতি মুখার্জি ক্যামেরার ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আগরতলা রেলস্টেশনের ঠিক বাইরে। ভোরবেলা ট্রেন এসে পৌঁছেছে, কিন্তু ত্রিপুরার পাহাড়ি বাতাসে যেন এক অজানা কিছুর গন্ধ ছিল—অদ্ভুত, রহস্যময়, আর আকর্ষণীয়। সামনে এসে দাঁড়ালেন মৃণালিনী ধর, তার একহাতে একটি নোটবুক, আর অন্যহাতে একটি পুরনো মানচিত্র। এই মানচিত্রেই চিহ্নিত করা ছিল মানিকছড়ি—একটা প্রায় হারিয়ে যাওয়া পাহাড়ি গ্রামের নাম, যেটা আজকের কোনও আধুনিক ম্যাপে খুঁজে পাওয়া যায় না। তপনজ্যোতি, একজন ডকুমেন্টারি নির্মাতা, পুরনো লোককথা নিয়ে কাজ করেন। কিছুদিন আগে একটি ট্রাইবাল মিউজিয়ামে পুরনো বই ঘাঁটতে গিয়ে এই ‘সময়-বিচ্ছিন্ন’ গ্রামের খোঁজ পান। তখনই ঠিক করেন, তিনি সেখানে যাবেন—যা খুঁজে পাওয়ার নয়, তাকেই…