• Bangla - প্রেমের গল্প

    নিষিদ্ধ স্পর্শ

    নন্দিতা রায়চৌধুরী পর্ব ১: শহরের রাতের জানালা শহরের এই দিকটায় রাত নামতে সময় লাগে না। দিনের কোলাহল ধীরে ধীরে গলে যায়, গাড়ির হর্ন আর মানুষের ভিড় একসময় মিলিয়ে যায় নিঃশব্দের ভেতরে, শুধু দূরের আলোয় রঙিন হয়ে থাকে আকাশটা। রিমি জানলার সামনে বসে ছিল একা। ছোট এক বেডরুম ফ্ল্যাট, ভেতরে খুব বেশি আসবাব নেই—শুধু একটা পুরোনো সোফা, বুকশেলফে ঠাসা কয়েকটা বই, আর এককোণে অগোছালো গিটার। সবকিছুই যেন অসমাপ্ত, অর্ধেক। ঠিক যেমন তার জীবন। সে জানলার কাঁচে হাত রাখল। গরম শরীর থেকে শীতল কাচে স্পর্শ ছড়িয়ে গেল। বাইরে রাস্তার আলো, মানুষের ছায়া, চলমান ছুটোছুটি—সবই যেন অন্য কারও জীবন। তার জীবন আলাদা, নিঃসঙ্গতায়…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চিঠির কালি, প্রেমের রঙ

    অনুরিমা মিত্র ১ কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পুরোনো লাইব্রেরিটি যেন সময়ের কোনো থেমে থাকা ঘড়ি। চারপাশে নীরবতা, মাঝে মাঝে কেবল পাতার ওলটানোর শব্দ কিংবা দূর থেকে ভেসে আসা কারো কাশির আওয়াজ শোনা যায়। এই নিস্তব্ধতার মাঝেই অনির্বাণ যেন খুঁজে পায় নিজের আশ্রয়। তার সহপাঠীরা যখন ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছে কিংবা মাঠে খেলায় ব্যস্ত, তখন সে লাইব্রেরির কাঠের লম্বা টেবিলে বসে পড়ে ইতিহাসের বই, পুরোনো পত্রিকা আর আর্কাইভ ঘাঁটাঘাঁটি করে। অনির্বাণকে দেখলে অনেকেই বলে—সে যেন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে জানে না, তার জগত অন্য কোথাও। কিন্তু সে জানে, এই নিস্তব্ধতা তাকে শান্তি দেয়, শব্দের বাইরে এক গোপন কথোপকথন তাকে টানে।…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    স্মৃতির ক্যাফে

    অংশুমান সেনগুপ্ত কোলাহলমুখর শহরের ভেতরেও কিছু জায়গা থাকে যেখানে সময় যেন থেমে যায়, আর মানুষ খুঁজে পায় একটুখানি নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। শহরের পুরোনো এক গলির ভেতর লুকিয়ে আছে ছোট্ট একটি ক্যাফে—“স্মৃতির ক্যাফে।” বাইরে থেকে খুব বেশি চমকপ্রদ নয়, কাঠের দরজার উপরে ঝুলছে ম্লান হয়ে যাওয়া নামফলক, জানালার কাচে প্রতিদিনের ধুলো জমে থাকে। কিন্তু দরজার ভেতরে ঢুকলেই অন্য এক জগৎ—হালকা বাদামি আলোয় সাজানো কাঠের টেবিল, দেয়ালে কিছু সাদা-কালো পুরোনো ছবি, আর কোণের শেলফে ছড়িয়ে থাকা বইপত্র। এখানে প্রবেশ করা মানেই শহরের কোলাহল ফেলে আসা, যেন অন্য এক জগতে ঢুকে পড়া। সেই সন্ধ্যাতেই অর্ণব প্রথমবার এই ক্যাফের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। বাইরে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    নিষিদ্ধ আলোর ছায়া

    অদ্রিতা সেন পর্ব ১ : নীরবতার প্রথম ফাটল কলকাতার উত্তর শহরের পুরনো বাড়ি। উঁচু ছাদের ঘর, লাল ইটের দেওয়াল, বারান্দায় শুকোতে দেওয়া সাদা শাড়ি আর মাটির টবে মানিকজোড় তুলসী গাছ—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত নস্টালজিয়ার ছবি। এই বাড়ির ভেতরেই বাস করে মৈত্র পরিবার। বড়ো ছেলে অনিরুদ্ধ মৈত্র, তার স্ত্রী অনন্যা আর ছোটো ভাই অরিত্র। গল্প শুরু হয় এখান থেকেই। অরিত্র, পেশায় তরুণ অধ্যাপক। শহরের নামী কলেজে ইতিহাস পড়ান তিনি। মেধাবী, সুদর্শন, আর ভেতরে ভেতরে সংবেদনশীল। বাবা-মা চলে যাওয়ার পর বড়ো ভাই-ই তার অভিভাবক। পরিবারের সকলেই তাকে নিয়ে গর্বিত। অন্যদিকে অনন্যা—অরিত্রর কাকিমা। বয়সে সামান্য বড়ো, কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    শেষ বাঁশির আগে

    আরিন মজুমদার পর্ব ১ : প্রথম বাঁশি বৃষ্টি ভিজে মাঠে সেই বিকেলটা যেন কলকাতার অন্য সব বিকেলের থেকে আলাদা। সল্টলেক স্টেডিয়ামের প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে সবুজ ঘাসের উপর ছোট ছোট জলকণা জমে উঠেছিল, যেন প্রত্যেকটা ঘাসের ডগায় একেকটা গল্প আটকে আছে। ঈশা চক্রবর্তী হাতে মেডিকেল কিট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মাঠের এক কোণে। নতুন দায়িত্বে এসেছে—দলের অফিশিয়াল ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার থাকলেও, পেশাদার ফুটবল দলের সঙ্গে এটাই প্রথম। ঈশার চোখে বারবার চলে যাচ্ছিল নির্ভয় গাঙ্গুলির দিকে। দলের স্ট্রাইকার, এক সময়ের জাতীয় দলের প্রতিশ্রুতিমান নাম। কিন্তু গত মরশুমে হাঁটুর গুরুতর ইনজুরির পর সবকিছু পাল্টে গেছে। স্পোর্টস পেজের শিরোনামে সে আজ…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    গ্রামের নির্জন খামারবাড়ি

    পিউ রায় এক অভীক যখন শহরের ব্যস্ত রাস্তা, ক্লান্ত করা যানজট এবং কংক্রিটের পাহাড় ছেড়ে গ্রামে প্রবেশ করে, তখন তার মন যেন এক নতুন পৃথিবীর দিকে উন্মুক্ত হয়ে যায়। গাড়ির জানালা দিয়ে যে সব সবুজ মাঠ, বিস্তীর্ণ খামার, এবং ধীরে ধীরে পাহাড়ের পটভূমিতে ছড়িয়ে থাকা পুরনো খামারবাড়ি দেখা যাচ্ছিল, তা যেন শহরের ব্যস্ততা এবং ধোঁয়াশাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলিয়ে দেয়। গাড়ি যখন ধীরে ধীরে কাঁচা পথের দিকে প্রবেশ করে, অভীক দেখতে পায় কাদা জমির উপর বৃষ্টির জল ঢেউ খেলাচ্ছে, আর পাখির ডাক পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলছে। শহরের কাচ-লোহা আর কংক্রিটের গন্ধ যেন একেবারে বাতাসে মিলিয়ে গেছে, কিন্তু গ্রামে প্রবেশের…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    তারার আলোয় প্রতিশ্রুতি

    সৌমেন বিশ্বাস গ্রামের বার্ষিক মেলার আলোকে রাতের আকাশের সঙ্গে মিশে এক রঙিন মায়াজালে মোড়ানো ছিল। চারপাশে বাজছিল ঢোলের তালে, নাগরদোলার ঘূর্ণনমুখী গতি আর বাতাসে মেখে দিচ্ছিল আতশবাজির ঝলক। ছোট্ট আর্য মেলার প্রবেশদ্বারের দিকে হাঁটছিল, চোখ ভরা বিস্ময় আর উত্তেজনায়। সে দেখছিল রঙিন স্টলগুলো, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, চকলেটের খোসা ছুঁড়ে দিচ্ছিল শিশুদের আনন্দ, আর ফুচকা-ঝালমুড়ি ও নকশির পিঠের মধ্যে মানুষের ভিড় যেন এক জীবন্ত চিত্রকলা। তার পায়ে হেঁটে আসা আকাশছোঁয়া আলো আর বাতাসের খেলা তাকে যেন অন্য জগতে নিয়ে যাচ্ছে। সে হঠাৎ অনুভব করল, মেলার এই চঞ্চলতা যেন তার হৃদয়কেও ছুঁয়ে যাচ্ছে। আর ঠিক সেই সময়, মেঘলা তার বন্ধুদের সঙ্গে ঠোঁটগোল,…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    তোমার জন্য আকাশ

    নবনীতা সেনগুপ্ত নীলাঞ্জনার শৈশব কেটেছিল নদীর ধারের ছোট্ট এক গ্রামে। দিনগুলো ছিল সাদামাটা, কিন্তু সেই সরলতায় এমন এক আবেশ ছিল যা তাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। সকালের শুরু হতো পাখির ডাক দিয়ে, দুপুরের গরমে ধানের গন্ধ ছড়িয়ে যেত বাতাসে, আর সন্ধ্যা নামলেই আকাশটা ভরে উঠত অসংখ্য তারায়। তখনই নীলা অনুভব করত, এই আকাশের ভেতর যেন লুকিয়ে আছে অদ্ভুত এক ডাক, এক রহস্য, যা তাকে ছুঁয়ে যায় প্রতিদিন। এই শৈশবের দিনগুলোতে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিল ঈশান। বয়সে তিন বছরের বড় হলেও তাদের মধ্যে কোনো ভেদরেখা ছিল না। ঈশান দূর সম্পর্কের দাদা, শহরে পড়াশোনা করে ছুটিতে গ্রামে ফিরত। নীলার কাছে সে ছিল…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    নিষিদ্ধ আঙিনা

    শাশ্বত বসু সেদিন সন্ধেটা মেঘলার জীবনে অদ্ভুত এক মোড় নিয়ে এল। শহরের এক নামী সাহিত্যিক সংগঠন আয়োজিত বার্ষিক সাহিত্য উৎসবে স্বামী অনিকেতের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি, মূলত সামাজিক কর্তব্যবোধ থেকে। সাহিত্য নিয়ে মেঘলার আগ্রহ একসময় প্রবল হলেও সংসারের চাপে, অফিস আর গৃহস্থালির দায়ে সেই আগ্রহ অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলের ভেতরে ঢুকতেই বাতাসে বইয়ের গন্ধ, মঞ্চে আলো, দর্শকসারিতে অচেনা অথচ উৎসুক মুখগুলো যেন তাঁর ভেতরে বহু পুরোনো দিনের আবেগকে নাড়া দিল। হাতে ধরা শাড়ির আঁচলটা আঁটসাঁট করে তিনি বসেছিলেন প্রথম সারির মাঝ বরাবর। তখনই হঠাৎ মঞ্চে নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এল—সেই কণ্ঠস্বর, যা তিনি কোনোদিন ভুলতে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    গোলাপবাগানের গোপন কথা

    অঙ্কিতা ভট্টাচাৰ্য এক প্রথম দেখা, প্রথম স্পর্শ, প্রথম নিঃশ্বাসে ভেসে আসা এক অচেনা গন্ধ—এসবই এক গবেষণার কাজে গ্রামের অচেনা জমিদারবাড়ির দিকে এগিয়ে আসা তরুণী ইরা সেনের কাছে যেন এক অজানা অভিজ্ঞতা। কলকাতার ব্যস্ত ভিড়, শহুরে ছন্দ, লাইব্রেরির ধুলো-মাখা বইয়ের স্তূপ ছেড়ে সে এসেছে এই প্রত্যন্ত গ্রামে, যেখানে আজও সময় যেন ঘুমিয়ে আছে শেকড়ের মধ্যে। তার গবেষণার বিষয় ছিল বাংলার পুরনো জমিদারবাড়ি ও তাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্থাপত্য এবং সংস্কৃতি, কিন্তু কাগজে-কলমে যেটা শুষ্ক মনে হয়, বাস্তবে এসে দাঁড়ালে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অদ্ভুত রহস্য আর আবেগ। সেই অনুভূতিই ইরার বুক কাঁপিয়ে দিল যখন রিকশা থেকে নামতেই তার চোখে ভেসে উঠল…