• Bangla - ভূতের গল্প

    ঝড়ের রাতে

    আকাশে হঠাৎ করেই যেন অদ্ভুত এক পরিবর্তন দেখা দিল। বিকেলের শেষ আলোটুকু ম্লান হয়ে যেতেই গ্রামের আকাশ ভরে উঠল কালো মেঘে। দূর থেকে আসা বজ্রপাতের গর্জন যেন ঘুমন্ত প্রকৃতিকে এক এক করে জাগিয়ে তুলছিল। চারপাশের গাছপালার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলক এসে পুরো আকাশকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো আলোকিত করে তুলছিল। গ্রাম্য জনজীবন এতদিন ছিল শান্ত ও ধীর—যেখানে সন্ধ্যা মানেই ধূপকাঠির গন্ধ, দূরে কুঁড়েঘরে আলোর ক্ষীণ দীপশিখা আর গৃহস্থালির ছোটখাটো ব্যস্ততা। কিন্তু এই দিনটি যেন ভিন্ন কিছু ঘোষণা করছিল। বাতাসে অদ্ভুত শিরশিরানি, শীতলতা আর অস্থিরতা জমে উঠতে লাগল। ঝড়ের আগমনী সঙ্কেতকে কেউই সাধারণ চোখে নিতে পারল না। বর্ষার দিনে ঝড়-বৃষ্টি নতুন…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    নিষিদ্ধ স্পর্শ

    নন্দিতা রায়চৌধুরী পর্ব ১: শহরের রাতের জানালা শহরের এই দিকটায় রাত নামতে সময় লাগে না। দিনের কোলাহল ধীরে ধীরে গলে যায়, গাড়ির হর্ন আর মানুষের ভিড় একসময় মিলিয়ে যায় নিঃশব্দের ভেতরে, শুধু দূরের আলোয় রঙিন হয়ে থাকে আকাশটা। রিমি জানলার সামনে বসে ছিল একা। ছোট এক বেডরুম ফ্ল্যাট, ভেতরে খুব বেশি আসবাব নেই—শুধু একটা পুরোনো সোফা, বুকশেলফে ঠাসা কয়েকটা বই, আর এককোণে অগোছালো গিটার। সবকিছুই যেন অসমাপ্ত, অর্ধেক। ঠিক যেমন তার জীবন। সে জানলার কাঁচে হাত রাখল। গরম শরীর থেকে শীতল কাচে স্পর্শ ছড়িয়ে গেল। বাইরে রাস্তার আলো, মানুষের ছায়া, চলমান ছুটোছুটি—সবই যেন অন্য কারও জীবন। তার জীবন আলাদা, নিঃসঙ্গতায়…

  • Bangla - তন্ত্র

    মহাশ্মশান

    সুতীৰ্থ সান্যাল ১ কাশীর গঙ্গার ধারে অনন্তকালের মতো জ্বলতে থাকা মহাশ্মশান যেন মৃত্যুর এক অনন্ত নাট্যমঞ্চ। দিনের আলো ঢলে পড়তেই ঘাটের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে গলিত মোমের মতো গরম ধোঁয়া, ছাইয়ের তীব্র গন্ধ, আর কাঠ পুড়বার ফসফস শব্দ। কখনো শোনা যায় শবযাত্রার করুণ সুর, কখনো আবার ভেসে আসে পুরোহিতদের গম্ভীর মন্ত্রোচ্চারণ। নদীর জলকেও মনে হয় যেন এক অন্তহীন ছাইয়ের আয়না, যেখানে মৃতদেহ ভেসে আসে, দাহ হয়, আর আগুনের পর শেষ হয়ে যায় সব। আকাশের কালো ধোঁয়া আর লালচে শিখা যেন মিলেমিশে আড়াল করে দেয় চাঁদ-তারা। এই শ্মশানই কাশীর মানুষের কাছে মুক্তির দ্বার, কিন্তু একইসঙ্গে ভয়েরও। কারণ এখানে জীবন আর মৃত্যু দু’জন…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চিঠির কালি, প্রেমের রঙ

    অনুরিমা মিত্র ১ কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পুরোনো লাইব্রেরিটি যেন সময়ের কোনো থেমে থাকা ঘড়ি। চারপাশে নীরবতা, মাঝে মাঝে কেবল পাতার ওলটানোর শব্দ কিংবা দূর থেকে ভেসে আসা কারো কাশির আওয়াজ শোনা যায়। এই নিস্তব্ধতার মাঝেই অনির্বাণ যেন খুঁজে পায় নিজের আশ্রয়। তার সহপাঠীরা যখন ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছে কিংবা মাঠে খেলায় ব্যস্ত, তখন সে লাইব্রেরির কাঠের লম্বা টেবিলে বসে পড়ে ইতিহাসের বই, পুরোনো পত্রিকা আর আর্কাইভ ঘাঁটাঘাঁটি করে। অনির্বাণকে দেখলে অনেকেই বলে—সে যেন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে জানে না, তার জগত অন্য কোথাও। কিন্তু সে জানে, এই নিস্তব্ধতা তাকে শান্তি দেয়, শব্দের বাইরে এক গোপন কথোপকথন তাকে টানে।…

  • Bangla - কল্পবিজ্ঞান

    চন্দ্রপুরীর বাসিন্দা

    তানভীর আহসান ১ চাঁদের বুকে ভোর হয় না, সূর্যের আলো যখন ঘুরে আসে তখনই কেবল অন্ধকার দূর হয়, আর সেই মুহূর্তগুলোই মানুষের হৃদয়ে জন্ম দেয় নতুন আশার আলো। পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার দূরে, মহাকাশের বিশাল শূন্যতাকে অতিক্রম করে, বাংলাদেশ বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে মানুষের প্রথম চন্দ্রনগরী—“চন্দ্রপুরী”। গম্বুজের মতো কাচের বিশাল কাঠামোর নিচে গড়ে উঠেছে এক টুকরো প্রাণ, যেখানে পৃথিবীর সবুজ শস্য আর কৃত্রিম জলাধারের ঝিলিক ভেসে ওঠে। এই স্বপ্নের নগরীতে মানুষের প্রতিটি নিশ্বাসই যেন একেকটি বিজয়ের গল্প বলে। চারপাশে ধূসর পাথরের মরুভূমি, আকাশে নক্ষত্রের ঠাণ্ডা ঝিকিমিকি আর দূরে পৃথিবীর নীলাভ বলয়, কিন্তু চন্দ্রপুরীর গম্বুজের ভেতরে মানুষের চোখে ভাসে সবুজ…

  • Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিক নগরী

    অরিন্দম সেনগুপ্ত পর্ব ১ – নগরীর নীচে প্রাচীন নগরীর বুক চিরে যখন প্রথম খননের কোদাল পড়ল, তখন কারো ধারণা ছিল না কী অদ্ভুত রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে। নদীর ধারে বসে থাকা নগরটির ইতিহাস বহুবার লেখা হয়েছে, বহুবার পড়া হয়েছে, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকেরা জানতেন, কাগজে লেখা ইতিহাস আর মাটির নীচে চাপা ইতিহাসের মাঝে কতখানি ফারাক থাকে। ড. দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ছিলেন এই অভিযানের প্রধান। তাঁর বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই, কিন্তু চোখে এক ধরনের অদম্য কৌতূহল। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় বসে বসে তিনি বহুবার এমন সব পুঁথি পড়েছেন যেখানে বলা হয়েছে এই নগরী একসময় আচার, যজ্ঞ আর রহস্যময় তন্ত্রচর্চার কেন্দ্র ছিল। তবে সবটাই…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গঙ্গার তলদেশে

    অর্ক গাঙ্গুলী এক গঙ্গার জলে ভোরের আলো তখনও পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি। ঘাটে দাঁড়িয়ে নদীর বুকের দিকে তাকিয়ে যেন মনে হচ্ছিল এক বিশাল, অগাধ রহস্য ছড়িয়ে আছে সামনে। অরিন্দম ঘোষ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, হাতে ডাইভিং স্যুট আর সরঞ্জাম। তাঁর চোখে ছিল অভিজ্ঞতার গভীরতা, কিন্তু সেই চোখের ভেতরে লুকিয়ে ছিল অন্যরকম এক অস্বস্তি। জীবনে বহুবার ডুব দিয়েছেন, সমুদ্রের অন্ধকার গহ্বর থেকে শুরু করে পাহাড়ি নদীর স্রোত—সবই তাঁর অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে আছে। তবুও আজ গঙ্গার তলদেশে নামার আগে অদ্ভুত এক অশনি বার্তা যেন তাঁকে গ্রাস করেছিল। সেই মুহূর্তেই মাঝি জগন্নাথ এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে বলল, “বাবু, গঙ্গা সব দেখে, সব রাখে। তবে যা সে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    জলকুমারীর ডাক

    ১ অন্ধকার নেমে এসেছে গ্রামের উপর, চারদিকে নিস্তব্ধতা আর ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। আকাশে তখন অর্ধচন্দ্র, তার আলোয় গাঢ় ছায়ার মতো ঘিরে আছে তালগাছ আর বাঁশঝাড়। গ্রামের মাঝখানে পুরোনো সেই পুকুর, যেটি নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত থাকলেও এতদিন কেউ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু সেদিন রাতে হঠাৎ করেই অদ্ভুত কিছু ঘটে। প্রথমে ভেবেছিল হয়তো চাঁদের প্রতিফলন, কিন্তু দেখা গেল পুকুরের তলদেশ থেকে অস্বাভাবিক নীল আলো উঠছে—ধীরে ধীরে জলের উপরিতলে ছড়িয়ে পড়ছে। আলো এতটাই অচেনা আর মায়াবী ছিল যে গ্রামের লোকেরা ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে রইল। বাতাস যেন হিম হয়ে গেল, পুকুরপাড়ের কুকুরগুলো হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল,…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালীঘাটের নীলবসনা সাধক

    কেশব চক্রবর্তী অধ্যায় ১ – রাতের কালীঘাট রাত নেমে আসে কালীঘাটের সরু গলিগুলোয় যেন ছায়ার আঁচড়, আর সেই আঁধারের মধ্যে ঢোকে এক অদ্ভুত স্থিরতা। মন্দিরের ঘন্টার টিকটিকি দূরে গুনগুন করে, আর মানুষের ঢল ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। হরিপদ, যিনি প্রতিদিনের মতো মন্দিরের পাশে তার ফুলের টিকিতে বসে বিক্রি করেন, আজ রাতটা কিছুটা ভিন্ন মনে করছিলেন। গলির বাতাস হঠাৎই অস্বাভাবিকভাবে শীতল হয়ে আসে, এমনভাবে যেন ঘন কুয়াশার মতো অদৃশ্য হাত তাঁর গায়ে লেগে থাকে। হরিপদ লক্ষ্য করেন, মন্দিরের আলো দূরে আরও ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে, আর সেই ক্ষীণ আলোর মাঝে হঠাৎ এক নীলবসনা মানুষ প্রবেশ করে। সাধকের গায়ে শুধু নীল কাপড়,…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    স্মৃতির ক্যাফে

    অংশুমান সেনগুপ্ত কোলাহলমুখর শহরের ভেতরেও কিছু জায়গা থাকে যেখানে সময় যেন থেমে যায়, আর মানুষ খুঁজে পায় একটুখানি নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। শহরের পুরোনো এক গলির ভেতর লুকিয়ে আছে ছোট্ট একটি ক্যাফে—“স্মৃতির ক্যাফে।” বাইরে থেকে খুব বেশি চমকপ্রদ নয়, কাঠের দরজার উপরে ঝুলছে ম্লান হয়ে যাওয়া নামফলক, জানালার কাচে প্রতিদিনের ধুলো জমে থাকে। কিন্তু দরজার ভেতরে ঢুকলেই অন্য এক জগৎ—হালকা বাদামি আলোয় সাজানো কাঠের টেবিল, দেয়ালে কিছু সাদা-কালো পুরোনো ছবি, আর কোণের শেলফে ছড়িয়ে থাকা বইপত্র। এখানে প্রবেশ করা মানেই শহরের কোলাহল ফেলে আসা, যেন অন্য এক জগতে ঢুকে পড়া। সেই সন্ধ্যাতেই অর্ণব প্রথমবার এই ক্যাফের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। বাইরে…