অধ্যায় ১ – পুরনো পাঠশালা
মফস্বলের সেই ছোট্ট শহরটা যেন সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে কোনো পুরোনো ছাপ রেখে গেছে। নতুন রাস্তা, দালান-কোঠা, আধুনিক দোকানপাট গজালেও শহরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে এক শতাব্দী প্রাচীন পাঠশালা, যার বয়সের ভাঁজগুলো গুনে বের করা যায় দেয়ালের ফাটল আর খসে পড়া চুনকাম থেকে। পাঠশালাটির বিশাল দোতলা কাঠামোতে মিশে আছে ব্রিটিশ আমলের গন্ধ, লম্বা বারান্দা, কাঠের দরজা-জানালা, আর ঘন ছায়াময় আঙিনা। দিনের বেলায়ও ভেতরে ঢুকলে অদ্ভুত একটা স্যাঁতসেঁতে শীতলতা ছড়িয়ে পড়ে, যেন অদৃশ্য চোখ কেউ তাকিয়ে আছে। স্থানীয় মানুষের মুখে শোনা যায়, এই পাঠশালার প্রতিটি ইট নাকি কোনো না কোনো স্মৃতির সাক্ষী, আর তার কিছু স্মৃতি অন্ধকারে ঢাকা। তবু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরের নতুন প্রজন্ম এসে ভর্তি হয় এই স্কুলে—তাদের কাছে এটা কেবল পড়াশোনার জায়গা, কিন্তু বয়স্কদের চোখে এটা ভয় আর কুসংস্কারের প্রতীক। শহরের বয়োজ্যেষ্ঠরা প্রায়ই বলেন, “পাঠশালার ছাদের ঘরটায় ওঠা মানেই বিপদ ডেকে আনা,” কিন্তু শিশুরা, যারা এসব কাহিনি কেবল ভূতের গল্প ভেবে হাসাহাসি করে, তাদের কাছে এসব কথার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
পাঠশালার ইতিহাস নিয়েও নানা কথা প্রচলিত। বলা হয়, স্কুলটা তৈরির কিছু বছর পর থেকেই এর দোতলার ছাদের ঘরটা তালাবদ্ধ থাকে। সেই ঘরের ভেতর নাকি রাতে হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়—কারও কান্না, কারও করুণ আহাজারি, কখনও বা ফিসফিস কণ্ঠস্বর। বহু আগে এক শিক্ষক নাকি সাহস করে দরজা খুলেছিলেন, আর পরদিন সকালে তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। তার পর থেকেই ছাদের ঘর তালা দেওয়া, আর সেই জায়গাটা নিয়ে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা কাহিনি। “কালরাত্রির ছাপ”—এই নামটাই লেগে যায় সেই ঘরের সঙ্গে। কথিত আছে, এক তান্ত্রিক নাকি একসময় ওই পাঠশালার ভেতরে কোনো ভয়ঙ্কর সাধনা করেছিলেন, যেটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, আর তার প্রতিক্রিয়াই লুকিয়ে আছে ছাদের ভেতরে। তবে এসবই লোককথা, যেগুলো মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। শহরের নতুন প্রজন্ম, যাদের কাছে ভূত-প্রেত মানে ইউটিউব বা সিনেমার দৃশ্য, তারা এসব গল্পকে কুসংস্কার ভেবে অবজ্ঞা করে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যারা বহুদিন এই শহরে থেকেছে, তারা ছাদের ঘরের প্রসঙ্গ উঠলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়, এমনকি কেউ কেউ সেখানে তাকাতেও সাহস পায় না।
তবু পড়াশোনা চলতে থাকে, স্কুলের ঘণ্টাধ্বনি প্রতিদিন সকালের কুয়াশা ভেদ করে বাজে, মাঠে ছেলেমেয়েরা দৌড়ঝাঁপ করে, শ্রেণিকক্ষগুলোতে পাঠ চলে আগের মতোই। কিন্তু বাতাসে যেন চাপা অস্বস্তি মিশে থাকে—শিক্ষকরাও জানেন, সেই ছাদের ঘরটায় কেউ যায় না। কোনো ছাত্র-ছাত্রী যদি ভুল করে সিঁড়ির ধারে চলে যায়, অন্যরা তাকে টেনে নিচে নিয়ে আসে। শহরের মেলা বা আড্ডায় মাঝে মাঝেই গল্প উঠে আসে—কেউ বলে রাতের অন্ধকারে ছাদের জানালা দিয়ে লালচে আলো বেরোয়, কেউ বলে ভেতর থেকে যেন মন্ত্রপাঠের গুঞ্জন ভেসে আসে। অথচ এসব কথার কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ কেউ কখনও দিতে পারেনি। পাঠশালার ভেতরে নতুন ছাত্র-ছাত্রীরা যখন প্রথম আসে, তাদের মনে একধরনের কৌতূহল কাজ করে—কি আছে সেই ঘরে? কেন সবাই ভয় পায়? কিন্তু যত দিন যায়, তারা বুঝতে পারে শহরের মানুষের আতঙ্কের গভীরতা। তাই প্রথম দিন থেকেই পাঠশালার ছাদের ঘরটা হয়ে ওঠে এক অদৃশ্য চরিত্র, যাকে নিয়ে রহস্য জমে থাকে। পুরোনো পাঠশালাটা দাঁড়িয়ে থাকে নীরব প্রহরীর মতো, চারপাশের ভিড়ের মধ্যেও তার ভিতরে বয়ে চলে অজানা অন্ধকারের গল্প, যা হয়তো সময়ের সঙ্গে আরও ঘনীভূত হয়ে উঠছে।
অধ্যায় ২ – নিষিদ্ধ কক্ষ
অর্ণবের বয়স মাত্র পনেরো, কিন্তু কৌতূহল আর দুঃসাহস যেন তার রক্তে মিশে আছে। ছোটবেলা থেকেই সে ভৌতিক গল্পে মুগ্ধ, আর যখনই পাঠশালার ছাদের ঘরের কথা উঠত, তার মনে হতো—ওই ঘরের ভেতরে এমন কী আছে, যা নিয়ে এত আতঙ্ক? সহপাঠীরা ভয়ে ঘরের কাছে যেত না, শিক্ষকেরা মুখ ফিরিয়ে নিতেন, কিন্তু অর্ণবের চোখে ঝিলিক দিত রহস্য উদ্ঘাটনের তৃষ্ণা। একদিন দুপুরবেলায়, যখন ক্লাস শেষ হয়ে সবাই বাড়ি চলে গেছে, আর পাঠশালার বারান্দায় সুনসান নিরবতা নেমে এসেছে, তখনই সে সাহস সঞ্চয় করে দোতলার দিকে এগিয়ে গেল। সিঁড়ির ধাপে ধাপে উঠতে উঠতে তার বুক ধড়ফড় করছিল, তবু সে থামল না। ঘরের দরজাটা পুরনো কাঠের, জায়গায় জায়গায় পোকায় খাওয়া, আর তালাটা মরচে পড়া। অর্ণব ভেবেছিল হয়তো ভেতরে ঢোকা কঠিন হবে, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তালাটা হালকা ধাক্কাতেই খুলে গেল। যেন কেউ চায়নি এই ঘরটা এতদিন ধরে সত্যিই বন্ধ থাকুক। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই এক শীতল বাতাস তার মুখে আঘাত করল, আর অদ্ভুত গন্ধে ভরে গেল চারপাশ—ধুলো, স্যাঁতসেঁতে কাঠ আর কোনো পুরনো জ্বালানি ধূপের মিশ্রণ।
ঘরের ভেতরে আলো প্রায় পৌঁছাতেই পারছিল না। ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে ঢোকা রোদে ধুলো নাচছিল, যেন অদৃশ্য জীবন্ত কণারা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে ভাঙা বেঞ্চ-টেবিল, কিছু অচেনা লোহার যন্ত্র, আর কোণের দিকে রাখা এক বিশাল কাঠের আলমারি। অর্ণব ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সেই আলমারির দিকে। তার হাত কাঁপছিল, কিন্তু চোখে ছিল তীব্র আগ্রহ। আলমারির দরজায় হাত দিতেই কড়িকাঠ থেকে এক কর্কশ শব্দ বেরোল, আর ধুলো ঝরে পড়ল। অনেক টানাটানির পর দরজাটা ফাঁক হলো। ভেতরে সাজানো কিছু পুরোনো কাগজ, ভাঙা মাটির পাত্র, আর মাঝখানে রাখা এক বিশাল মোটা কাপড়ে মোড়ানো বস্তু। অর্ণব সাবধানে কাপড়টা সরাতেই দেখা গেল—এটা আসলে এক তান্ত্রিক পুঁথি। পুঁথির বাঁধাই করা কালচে চামড়ার ওপর ফিকে লাল দাগের মতো চিহ্ন, আর ভেতরের পাতাগুলোতে ছাপা নেই, বরং হাতে আঁকা অদ্ভুত প্রতীক ও অচেনা অক্ষর। কিছু লেখা আগুনের মতো আঁকাবাঁকা, কিছু আবার মন্ত্রপাঠের মতো সাজানো। অর্ণব কিছুই পড়তে পারছিল না, তবু তার মনে হচ্ছিল পাতাগুলো যেন তাকে ডেকে নিচ্ছে, শব্দ না করেও কানে গুনগুন করে মন্ত্র উচ্চারণ করছে। সে কৌতূহলী হয়ে কয়েকটা পাতা উল্টাল, আর প্রতিটি পাতায় আঁকা প্রতীক তার চোখে জ্বলে উঠল একেবারে অচেনা শক্তির মতো। মনে হচ্ছিল পাতার ভেতর থেকে কোনো অদৃশ্য সত্তা তাকিয়ে আছে, ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করছে।
ঠিক তখনই অর্ণবের মনে হলো—সে একা নয়। ঘরের অন্ধকারে কোথাও কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে। শব্দটা ভারী, ধীর, আর অদ্ভুতভাবে কাছাকাছি। তার বুকের ভেতর ধকধকানি বেড়ে গেল, গলা শুকিয়ে এল। সে তাড়াহুড়া করে পুঁথিটাকে আবার কাপড়ে জড়িয়ে আলমারির ভেতরে রেখে দিল, যেন কোনো নিষিদ্ধ জিনিসকে আবার বন্দি করতে চাইছে। দরজা ঠেলে বন্ধ করল, আর ঘুরতেই তার মনে হলো ঘরের এক কোণে ছায়ার ভেতর থেকে দুটো চোখ জ্বলজ্বল করছে। আলো আর অন্ধকারের ফাঁকে সেই দৃষ্টি অর্ণবের শরীর ঠান্ডা করে দিল। সে আর পিছনে তাকাল না, পাগলের মতো দৌড়ে বেরিয়ে এল কক্ষ থেকে, দরজাটা ধাক্কা মেরে বন্ধ করল, আর সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল নিচে। নিচে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে দাঁড়াতেই তার মনে হলো ঘরটার ভেতরে কেউ এখনও নিঃশ্বাস ফেলছে, যেন বাতাস ভারী হয়ে বেরিয়ে আসছে ফাঁকফোকর দিয়ে। চারপাশে তখন নিস্তব্ধ দুপুর, মাঠ ফাঁকা, পাখির ডাকও থেমে গেছে। অথচ অর্ণব বুঝতে পারল—সে যা দেখল, যা অনুভব করল, তা কোনো কল্পনা নয়। “নিষিদ্ধ কক্ষ”-এর ভেতরে লুকানো আছে এমন কিছু, যা মানুষ বহু বছর ধরে ভয় পেয়েছে, আর আজ তার কৌতূহল সেই নিষিদ্ধ রহস্যকে জাগিয়ে তুলল। তার ভেতরে ভয় আর আকর্ষণ একসঙ্গে কাজ করতে লাগল—সে জানত, এই রহস্য থেকে সরে আসা সহজ নয়।
অধ্যায় ৩ – প্রথম পাঠ
পাঠশালার আঙিনায় দুপুরের রোদ ঝিমোচ্ছে, পাখির ডাকও যেন কেমন নিস্তেজ হয়ে এসেছে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অর্ণব তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে বসেছিল পিছনের বারান্দায়। আগের দিনকার নিষিদ্ধ কক্ষে ঢোকার সাহসিকতার কাহিনি শুনে সবাই হাঁ করে তাকিয়েছিল তার দিকে। অর্ণব আলমারির ভেতরে পাওয়া পুঁথির কথা যখন বলল, তখন বাকিরা অবাক চোখে একে অপরের দিকে তাকাল। কেউ বিশ্বাস করতে চাইল না, কেউ আবার মনে মনে ভয়ে কেঁপে উঠল, কিন্তু সবার মধ্যেই একরকম কৌতূহল জন্ম নিল। অর্ণব গোপনে পুঁথির কয়েকটা পাতা দেখে রেখেছিল—সে বলল পাতাগুলিতে অদ্ভুত চিহ্ন আর অজানা ভাষার মন্ত্র লেখা আছে। কথাগুলো বলার সময় তার চোখে কেমন যেন অদ্ভুত ঝিলিক ফুটে উঠছিল। এক বন্ধু মজা করে চ্যালেঞ্জ করল, “চল তো দেখি, একটা পড়ে শোনাও, দেখি হয়তো ভূত-টুত এসে হাজির হবে।” অন্যরা হেসে উঠল, কিন্তু হাসির আড়ালে ভয়ও লুকিয়ে ছিল। অর্ণবের মনে হচ্ছিল, এটা কেবল খেলাচ্ছলে চেষ্টা করা, কিছুই ঘটবে না। বন্ধুরা চারপাশে গোল হয়ে বসতেই সে সেই অচেনা মন্ত্রের কয়েকটি শব্দ উচ্চারণ শুরু করল—তার কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে অদ্ভুত ভারী হয়ে উঠছিল, যেন নিজের অজান্তে অন্য এক শক্তি তাকে উচ্চারণে বাধ্য করছে।
মন্ত্রের শেষ শব্দ মুখ থেকে বেরোতেই হঠাৎ চারপাশের বাতাস যেন ঘূর্ণি তুলল। বারান্দার জানালাগুলো প্রচণ্ড শব্দে কাঁপতে কাঁপতে হুড়মুড় করে বন্ধ হয়ে গেল, আর দরজার কপাট ধাক্কা খেয়ে গম্ভীর আওয়াজ তুলল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এক শূন্যতার স্রোত—পাখিদের ডাক হঠাৎ থেমে গেল, দূরের কোলাহল নিস্তব্ধ হয়ে গেল, আর ভেতরে শুধু শোনা গেল এক অদৃশ্য ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ। বন্ধুরা আতঙ্কিত হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরল, কেউ চিৎকার করে উঠল, আবার কেউ বলল এটা নিশ্চয়ই কাকতালীয়। ঠিক তখনই করিডরের দিক থেকে এক তীব্র অন্ধকার ছুটে গেল ঝাপটার মতো। সেটা মানুষের ছায়ার মতো হলেও চোখের পলকে এত দ্রুত মিলিয়ে গেল যে সবাই একে বাতাসের খেলাই ভেবে নিতে চাইলো। কিন্তু অর্ণব স্থির হয়ে বসে রইল—তার চোখে আতঙ্ক জমাট বেঁধে গেল। সে স্পষ্ট দেখেছিল, সেটা কোনো সাধারণ ছায়া নয়; ছায়ার ভেতরে যেন দুটি উজ্জ্বল বিন্দুর মতো চোখ ছিল, যা মুহূর্তের জন্য তাকে স্থির করে দিয়েছিল।
ঘটনার পর কয়েক মিনিট কেউ কোনো কথা বলতে পারল না। সবাই দিশেহারা হয়ে হাসি চাপার চেষ্টা করল, বলল—“আরে এসব কাকতালীয়, জানালার কপাট পুরোনো, হাওয়ায় বন্ধ হয়েছে, আর আলো-ছায়ার খেলাতেই অন্ধকারকে ছায়া ভেবেছিস।” কিন্তু অর্ণবের শরীর কেঁপে উঠছিল বারবার। তার মনে হচ্ছিল, মন্ত্র উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা সত্যিই জেগে উঠেছে, যা বহুদিন ধরে বন্দি ছিল এই পাঠশালার দেয়ালের ভেতর। তার বুকের ভেতরে ভয় এক অদ্ভুত শীতলতা হয়ে জমে গেল—যেন কেউ তার বুকের ওপর বসে আছে। যদিও বন্ধুরা ঘটনাকে হালকাভাবে নিল, অর্ণব আর হাসতে পারল না। তার মনে হচ্ছিল অচেনা ছায়াটা এখনও পাঠশালার করিডরে লুকিয়ে আছে, নিঃশ্বাস ফেলছে, আর তাকে তাকিয়ে দেখছে। মজা করে শুরু করা এই “প্রথম পাঠ”-এর পরই অর্ণব বুঝল, নিষিদ্ধ কক্ষের পুঁথির মন্ত্র আসলে খেলাচ্ছলে উচ্চারণ করার মতো কোনো শব্দ নয়—এটা এক অজানা শক্তির আহ্বান, যা তার জীবনের ওপর ভয়াবহ ছায়া ফেলতে শুরু করেছে।
অধ্যায় ৪ – কালরাত্রির ছায়া
রাতের পাঠশালা সাধারণত নিস্তব্ধ থাকে, কেবল মাঠের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর দূরের কুকুরের ঘেউ-ঘেউ শব্দই তার সঙ্গী। পাহারাদার হরিপদ তখন প্রতিদিনের মতো টহল দিতে দিতে স্কুলের করিডরে ঢুকেছিল। হাতে কেরোসিনের লন্ঠন, চোখে ক্লান্তি, তবু দায়িত্বে ঢিল দেওয়ার লোক ছিল না সে। কিন্তু সেদিন রাতে হঠাৎ তার চোখে পড়ল—দোতলার করিডরের কোণে দাঁড়িয়ে আছে একটা লম্বা ছায়া। প্রথমে সে ভেবেছিল হয়তো ছাত্রদের কেউ গোপনে ঢুকেছে কিংবা কোনো চোর। “কে রে?” বলে হাঁক দিলেও ছায়াটা নড়ল না, দাঁড়িয়ে রইল একেবারে নিস্তব্ধ। তার কণ্ঠস্বর শুনে বাতাস যেন হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল। হরিপদ এগোতে লাগল, কিন্তু যতই সে কাছে যায়, ছায়াটা ততই ঝাপসা হতে থাকে। একসময়ে হঠাৎ করে সেটা মিলিয়ে গেল—যেন কখনো ছিলই না। করিডরের ফাঁকা জায়গা আবার কেবল অন্ধকারে ঢাকা পড়ল। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেল, কপালে ঘাম জমল, কিন্তু সাহস করে সে মাঠ পর্যন্ত টহল দিয়ে এল, তারপর আবার করিডরে ফিরে এল। তবু বুকের ভেতরে এক অজানা আতঙ্ক চেপে বসেছিল—সে জানত, এই ছায়াটা সাধারণ কিছু নয়।
পরদিন সকালে স্কুলে হইচই পড়ে গেল। মাঠের ঘাসের ওপর হরিপদর দেহ পড়ে আছে, মুখ বেয়ে জমে থাকা অদ্ভুত কালো দাগ যেন শিরার মতো ছড়িয়ে গেছে চোখ থেকে গলা পর্যন্ত। তার চোখদুটো উল্টে সাদা হয়ে আছে, ঠোঁট ফেটে গিয়েছে, যেন মৃত্যুর আগে সে কোনো ভয়ানক দৃশ্য দেখেছিল। শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী সবাই দৌড়ে এল, কেউ কেঁদে উঠল, কেউ আবার ভয়ে আঁতকে সরে গেল। চিকিৎসক ডাকা হলেও তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না—শরীরে কোনো আঘাত নেই, রক্তপাতও হয়নি, অথচ মুখজুড়ে সেই রহস্যময় কালো দাগ। “এটা নিশ্চয়ই অভিশাপ,” ফিসফিস করে উঠল শহরের প্রবীণরা। শিক্ষকরা চুপ হয়ে গেলেন, ছাত্ররা আতঙ্কে একে অপরের হাত আঁকড়ে ধরল। বাতাসে যেন হঠাৎ শোক আর ভয় একসাথে ভেসে বেড়াতে লাগল। ক্লাসের ঘন্টা বেজে উঠলেও কেউ পড়াশোনার দিকে মন দিল না। করিডরের দেয়ালে, জানালার কাঁচে যেন অদৃশ্য ছায়া নড়ছে—কেউ কেউ শপথ করে বলল, তারা কালরাত্রির ছায়াকে এখনও ঘুরে বেড়াতে দেখছে। স্কুলের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল দাবানলের মতো।
এই ঘটনার পর অর্ণব আরও গুটিয়ে গেল। সে জানত, সবকিছুর সূত্রপাত হয়েছিল তারই কৌতূহল থেকে—নিষিদ্ধ কক্ষে ঢোকা, পুঁথির মন্ত্র পড়া, আর সেই অন্ধকার ছায়ার জাগরণ। কিন্তু সে কাউকে কিছু বলতে সাহস পেল না। বন্ধুদের সামনে মুখ খুলতে গেলেই বুকের ভেতর এক অদৃশ্য চাপ অনুভব করত, যেন কেউ তাকে সতর্ক করছে। অর্ণব রাতে বিছানায় শুয়ে বারবার মনে করতে লাগল করিডরের দিকে ছুটে যাওয়া সেই ছায়াটাকে। হরিপদর মৃত্যুর সঙ্গে কি তার কোনো সম্পর্ক আছে? তার কানে যেন ফিসফিস করে ভেসে আসছিল সেই মন্ত্রের শব্দ, চোখ বন্ধ করলেই যেন ভেসে উঠছিল হরিপদর মৃত মুখ আর কালো দাগ। ক্লাসে বসে সে খাতা-কলম হাতে রাখলেও, মন পড়ে থাকত ভয়ের ঘূর্ণিপাকে। অন্য ছাত্ররা আতঙ্কে অস্থির, শিক্ষকরা মুখ বুজে চলেছেন, কিন্তু অর্ণব জানত—এটা কাকতালীয় নয়। কালরাত্রির ছায়া আসলেই জেগে উঠেছে, আর সেই ছায়া এখন তাদের সবার ওপরে ধীরে ধীরে তার শীতল অন্ধকার নামিয়ে আনছে।
অধ্যায় ৫ – অদ্ভুত পরিবর্তন
দিন কয়েকের মধ্যেই পাঠশালার পরিবেশে এক অদ্ভুত পরিবর্তন অনুভূত হতে লাগল। প্রথমে সবাই ভেবেছিল হরিপদর মৃত্যুর পর মানুষের কল্পনায় ভয় জন্ম নিচ্ছে, তাই স্বাভাবিক ঘটনাকেও অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ভয় বাস্তব রূপ নিতে শুরু করল। অর্ণবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অমিত প্রথম আক্রান্ত হলো। স্কুলে আসতে আসতেই দেখা গেল তার মুখ ফ্যাকাশে, চোখের তলায় কালো দাগ, যেন কয়েক রাত ধরে ঘুমোয়নি। জিজ্ঞেস করলে সে কাঁপা গলায় বলল—“রাতে শুতে গেলেই দেখি এক কালো অবয়ব আমার বুকের ওপর বসে আছে। শ্বাস নিতে পারি না, গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। মনে হয় কেউ শ্বাসরোধ করে মারতে চাইছে।” তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ল, বারবার কাশিতে গলা ভেঙে যাচ্ছিল। শিক্ষকরা ভেবেছিলেন হয়তো সাধারণ অসুখ, কিন্তু অমিতের বর্ণনা শোনার পর অন্য বন্ধুরা আতঙ্কে কেঁপে উঠল। কারণ তাদের অনেকেরই রাতের ঘুমে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল—অচেনা চোখের দৃষ্টি, অন্ধকারে ফিসফিসানি, আর ঠান্ডা বাতাস বুক চেপে বসার অনুভূতি। যেন কালরাত্রির ছায়া ধীরে ধীরে প্রত্যেকের জীবনে প্রবেশ করছে।
শুধু ছাত্রদের নয়, ক্লাসরুমের ভেতরেও অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে লাগল। মাঝপাঠে হঠাৎ বৈদ্যুতিক বাতি নিভে যেত, আবার জ্বলে উঠত। জানালা বন্ধ থাকলেও কাগজ উড়ে যেত এদিক-ওদিক। সবচেয়ে ভয়ানক ছিল ব্ল্যাকবোর্ডের ওপর হঠাৎ করে অচেনা আঁকিবুঁকি দেখা দেওয়া। চক ব্যবহার না করেই যেন অদৃশ্য হাত দিয়ে কেউ লিখে দিচ্ছে অজানা প্রতীক, যার কোনো মানে বোঝা যেত না। প্রতীকগুলো অনেকটা অর্ণব যে পুঁথিতে দেখেছিল তার অচেনা অক্ষরের মতো। শিক্ষকরা সেটা মুছে ফেলতে চাইলে লেখা আরও গাঢ় হয়ে যেত, মুছলে আবার ফিরে আসত। ছাত্রছাত্রীদের বুক কেঁপে উঠত প্রতিবার। একদিন তো পুরো ব্ল্যাকবোর্ড ভরে গেল অজানা আঁকায়, আর হাওয়ার ঝাপটায় সেই চক-গুঁড়ো উড়ে গিয়ে কয়েকজনের চোখ-মুখ ঢেকে দিল। সেই মুহূর্তে সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে। শিক্ষকরা অবশ্য সবকিছু ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করলেন—বললেন, এগুলো ছাত্রদের দুষ্টুমি, হয়তো কারও মানসিক চাপের ফল, বা নিছক কাকতালীয়। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মন থেকে সেই ভয় দূর হলো না। তাদের চোখে দেখা অভিজ্ঞতাকে তারা অবহেলা করতে পারল না।
ক্রমে পাঠশালার আবহাওয়া বদলে গেল। খেলার মাঠে হাসি-আনন্দ মিলিয়ে গেল, আড্ডার জায়গায় নেমে এল চাপা আতঙ্ক। ছোটরা ক্লাস শেষে দৌড়ে বাড়ি চলে যেত, বড়রা ফিসফিস করে নিজেদের ভয় শেয়ার করত। অমিতের অসুস্থতা বাড়তে লাগল—সে স্কুলেই মাঝে মাঝে হঠাৎ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ত। অথচ ডাক্তাররা তার শরীরে কোনো শারীরিক অসুখ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সবাই অনুভব করতে লাগল, অদৃশ্য এক শক্তি তাদের ওপর নেমে এসেছে। শিক্ষকরা যতই কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিক না কেন, ছাত্রদের মনে একটাই বিশ্বাস জমাট বাঁধল—কালরাত্রির ছায়া এখন শুধু স্কুলের নিষিদ্ধ কক্ষে সীমাবদ্ধ নেই, সে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে। অর্ণবের বুকের ভেতর অপরাধবোধ আরও ভারী হয়ে উঠল, কিন্তু সে মুখ খুলতে পারল না। কারণ সে জানত, সত্যিটা বললেই সবাই বুঝতে পারবে—এই ভয়াবহ পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল তার হাত দিয়েই।
অধ্যায় ৬ – প্রাচীন কাহিনি
পাঠশালার ভেতরে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনার পর ছাত্রছাত্রীদের মনে ভয়ের ছায়া জমে উঠেছিল। শিক্ষকরা যতই যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চান না কেন, সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। এমন সময় এক বৃদ্ধ শিক্ষক, যিনি স্কুলের সবচেয়ে পুরোনো কর্মীদের একজন—প্রফেসর মহাদেব মুখোপাধ্যায়, হঠাৎ একদিন আড্ডার ছলে সত্যিটা প্রকাশ করে ফেললেন। তিনি ছিলেন ইতিহাসের শিক্ষক, বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও চোখে-মুখে অদ্ভুত এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সবসময় দেখা যেত। একদিন বিকেলে, যখন ছাত্ররা খেলার মাঠে ভয়ে ফাঁকা করে রেখেছে আর কেবল কয়েকজন সাহসী ছেলে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, তখন মহাদেববাবু ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর যেন দূর অতীতের স্মৃতিকে টেনে আনছিল—“তোমরা কি জানো, এই স্কুলটা আসলে একসময় স্কুলই ছিল না? ব্রিটিশ আমলে এই জমিদারবাড়ি ছিল, এক নির্দয় জমিদারের গোপন আস্তানা। বাইরে থেকে তিনি দানশীল বলে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু অন্তরে লুকিয়ে ছিল ভয়ানক কাহিনি।” ছাত্ররা অবাক হয়ে শুনছিল।
মহাদেববাবু আরও বললেন, “সেই জমিদার এক তান্ত্রিককে আশ্রয় দিয়েছিল। তান্ত্রিকটির নাম লোকমুখে আজ আর নেই, কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে তিনি কেবল ‘কালরাত্রির সাধক’ নামে পরিচিত। তিনি শনি আর অমাবস্যার রাতে গোপন সাধনা করতেন, আর লোকজন বিশ্বাস করত, তাঁর পূজার দেবী ছিলেন ‘কালরাত্রি’। এই পূজা ছিল ভীষণ ভয়ংকর, কারণ তিনি নাকি জীবন্ত বলি দিয়ে মন্ত্র সাধনা চালাতেন। গ্রামের অসহায় মানুষ, বিশেষত দরিদ্র পরিবার থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশুদের গল্প আজও শোনা যায়—কেউ আর ফিরে আসেনি। বলা হয়, তান্ত্রিক রাতের অন্ধকারে তাঁদের আত্মাকে বলি দিতেন তাঁর সাধনায়। জমিদার তাঁর অট্টালিকার ভেতরে এসব ঘটতে দিতেন, কারণ তাঁরও বিশ্বাস ছিল, এই তান্ত্রিকের শক্তি তাঁকে অপরাজেয় করে তুলবে। ফলে এই অট্টালিকার ভেতরে তৈরি হয়েছিল অশুভ শক্তির আস্তানা।” কথাগুলো বলতে বলতে মহাদেববাবুর গলা ভারী হয়ে উঠছিল, যেন তিনি নিজের চোখেই অতীতের সেই ভয়াবহ দৃশ্যগুলো দেখছেন। ছাত্ররা নিঃশ্বাস ফেলে শুনছিল, কারও মুখ থেকে একটি শব্দও বেরোচ্ছিল না।
তিনি আরও ফিসফিস করে বললেন, “শেষমেশ গ্রামের মানুষ আর সহ্য করতে পারেনি। একদিন গোপনে বিদ্রোহ জেগে ওঠে, আর তান্ত্রিককে হত্যা করা হয়। বলা হয়, তাঁর শরীর থেকে শক্তি তখনও বেরোয়নি, তাই মৃত্যুর আগে তিনি সমস্ত সাধনার শক্তিকে একটি পুঁথির ভেতরে আবদ্ধ করে রাখেন। সেই পুঁথি কখনও হারিয়ে যায়নি—বরং লুকিয়ে থাকে এই অট্টালিকার এক নিষিদ্ধ ঘরে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা জমিদারবাড়ি অধিগ্রহণ করে, আর তাকে পাঠশালায় রূপান্তরিত করে দেয়। কিন্তু সেই ঘর, সেই পুঁথি আর সেই শক্তি রয়ে যায় ছাদের নিচে। তোমরা আজ যেটাকে ‘নিষিদ্ধ কক্ষ’ বলো, ওটাই ছিল তান্ত্রিকের সাধনার আসন।” মহাদেববাবুর কথা শুনে ছাত্ররা গা-শিউরে উঠল। সব ঘটনার সঙ্গে হঠাৎ মিল পেতে লাগল—পুঁথি, মন্ত্র, ছায়া, আর মৃত্যুর রহস্য। মনে হচ্ছিল, তারা সবাই অজান্তেই সেই প্রাচীন শক্তিকে জাগিয়ে তুলেছে। আর এখন পুরো পাঠশালাই সেই অভিশপ্ত কাহিনির ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে।
অধ্যায় ৭ – অশুভ বিস্তার
মন্ত্রের প্রথম উচ্চারণের পর থেকেই পাঠশালার ভেতরে অদ্ভুত ঘটনা ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলল। অর্ণব এবং তার বন্ধুরা প্রতিদিন ক্লাসে বসতে বসতে মনে করছিল, কিছু একটা ভুলভাবে জাগিয়ে উঠেছে। প্রথমে ছোট ছোট ঘটনা—একজন ছাত্র খেলতে খেলতে পড়ে গেল, অন্যজনের চোখের সামনে হঠাৎ কিছু অদৃশ্য শক্তি উড়ে এল বলে তিনি চমকে উঠলেন। শিক্ষকেরা এগুলোকে স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেন, কিন্তু দিনে দিনে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়ে গেল। একদিন পাঠশালার করিডরের কোণে একজন ছাত্র হঠাৎ হাউ হাউ করে চিৎকার করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। চোখ দু’টো রক্তমাখা লাল, মুখ ফ্যাকাশে, শরীর কাঁপছে—দেখে মনে হচ্ছিল যেন ছায়া তার সমস্ত শক্তি শুষে নিচ্ছে। আরেকজন শিক্ষক ক্লাসে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল, মনে হলো বাতাসের মধ্যে কোনো অদৃশ্য শক্তি তার শ্বাসরোধ করছে। এ ধরনের ঘটনা ক্রমশই সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠল। ছাত্রছাত্রীরা দারুণ ভয়ে করিডোরে হাঁটতে পারত না, কেউ কাউকে ছুঁতে ভয় পেত।
শহরের মানুষজনও এখন আতঙ্কে ছিল। হরিপদর মৃত্যুর পর যে অদ্ভুত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল, তা ক্রমে স্কুলের প্রতিটি কক্ষে ছড়িয়ে পড়ছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে পাঠশালায় পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। খেলার মাঠ ফাঁকা হয়ে গেল, ক্লাসরুমের জানালায় ধুলো জমে গেল, আর শিক্ষকরা সবাই একরকম চুপচাপ হয়ে রইলেন। গ্রামের লোকেরা বলল, “শিশুদের আর পাঠানো যাবে না, স্কুলে এমন অশুভ শক্তি বাস করছে যা আমাদের বোঝার বাইরে।” ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই আতঙ্কে থাকত, কেউ কেঁপে কেঁপে চলত, কেউ আবার গোপনে মন্ত্রের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় খুঁজতে চেষ্টা করত। অর্ণবের মন ভেঙে যাচ্ছিল, কারণ সে জানত—সব ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হলো তারই কৌতূহল এবং সেই মন্ত্র, যা আজ স্কুলের ভিতরে বিস্তার লাভ করছে।
ছায়াটা ক্রমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠল। রাতের নিশ্বাসে, ক্লাসের ঘরে, খেলার মাঠের কোণে—যেখানে যেখানে চোখ যায়, সেখানে তার উপস্থিতি যেন অনুভূত হতে লাগল। অদ্ভুত গন্ধ, হঠাৎ হাওয়ার ঝাপটা, শীতল বাতাসের চাপ—সবই ছায়ার উপস্থিতি জানিয়ে দিত। কখনও মনে হত, সে কিছু খুঁজছে; কেউ কেউ বলল, মনে হচ্ছে সে আত্মার মতো ঘুরছে এবং অনুসন্ধান করছে, তার লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট কোনো শিকার। অর্ণবের মনে দারুণ ভয় জমে গেল, কিন্তু সে কাউকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না। বন্ধুরা ভয়ে কেঁপে উঠলেও অর্ণবের মনে আরও দায়িত্বের চাপ পড়ছিল—তিনি জানতেন, যদি ছায়ার শক্তি এইভাবে ছড়িয়ে থাকে, তাহলে পুরো স্কুল ধ্বংস হতে পারে। প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি শব্দ—সবই যেন ছায়ার জন্য তীব্র সংকেত। পাঠশালার প্রতিটি প্রান্তে অশুভ শক্তি বিস্তার লাভ করছিল, আর অর্ণবের হৃদয় ধীরে ধীরে বোঝছিল, এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো পুঁথির গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করা, যা এতদিন লুকানো ছিল নিষিদ্ধ কক্ষে।
অধ্যায় ৮ – মন্ত্রের অভিশাপ
পাঠশালার ভেতরে আতঙ্ক ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। অর্ণব, যে প্রথম কৌতূহল থেকে নিষিদ্ধ কক্ষে ঢুকে মন্ত্রটি উচ্চারণ করেছিল, এবার সে নিজের দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হল। ক্লাসরুমের ভেতরে দাঁড়িয়ে সে সবার দিকে তাকিয়ে কণ্ঠে কাঁপন নিয়ে বলল, “আমি… আমি মন্ত্রটি পড়েছিলাম। সবকিছুর জন্য আমি দায়ী।” এই স্বীকারোক্তি সবাইকে এক ধরণের বিস্ময় এবং ভয়ে ভরিয়ে দিল। বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষক—সবাই প্রথমে বিশ্বাস করতে পারল না, কিন্তু অর্ণবের চোখে ভয়ের যে গভীর ছাপ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় ছিল না। তার স্বীকারোক্তি একটি অদৃশ্য চাপের মতো স্কুলের বাতাসে ছড়িয়ে গেল। ছাত্রছাত্রীরা কাঁপতে লাগল, কেউ হঠাৎ করেই বলল, “তাহলে সব ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু তুমি?” আর অর্ণব শুধু মাথা নাড়ল, আর কোনো শব্দ বেরোলো না। বাইরে থেকে চিৎকার, কোলাহল বা পাখির ডাক—সবই যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। পুরো পাঠশালা যেন একটি বিশাল নীরব কক্ষে পরিণত হয়েছে, যেখানে অদৃশ্য শত্রু তাদের প্রত্যেকের উপর চোখ রেখেছে।
ততক্ষণে গ্রামের লোকেরা স্কুলে এসে পরিস্থিতি দেখল। তারা প্রথমে মনে করেছিল, বিষয়গুলো নিছক দুর্ভাগ্য, কিন্তু অর্ণবের স্বীকারোক্তির পর বোঝা গেল—মন্ত্রের প্রভাব বাস্তব, এবং এটি ভয়ঙ্কর। তখনই গ্রামের একজন পুরনো ওঝা, যিনি বহুদিন ধরে অন্ধকার শক্তির সঙ্গে লড়াই করে আসছেন, উপস্থিত হলেন। তিনি ধীরে ধীরে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যে মন্ত্রটি তুমি পড়েছ, তার অর্থ, তুমি এক অন্ধকার শক্তিকে জাগিয়ে তুলেছ। এটা কোনো সাধারণ মন্ত্র নয়। একবার উচ্চারণ হয়ে গেলে, যতক্ষণ না মন্ত্রের সাধনা সম্পূর্ণ হয়, সেই ছায়া মুক্তি পাবে না। এই শক্তি একটি পূর্ণ না হওয়া ক্রিয়া অপেক্ষা করে—যা সম্পূর্ণ না হলে, সে অবধারিতভাবে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে।” অর্ণব চমকে উঠল। তার গলার শব্দ আটকে গেল। ছায়া—যা স্কুলের করিডর, ক্লাসরুম, মাঠের প্রতিটি কোণে ঘুরছে—তখনও মুক্ত নয়। ওঝার কথাগুলো স্পষ্ট করল, মন্ত্রটি কেবল শব্দ নয়, এটি একটি চূড়ান্ত অভিশাপ, যার শেষ না হলে কোনো উপায় নেই।
পুরনো ওঝা আরও বললেন, “তুমি যদি সাহসী হও, এবং সেই পুঁথির প্রতিটি মন্ত্র যথাযথভাবে পূর্ণ করতে চাও, তাহলে শক্তি বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু ভয় বা অবহেলার কারণে যদি স্থগিত থাকে, তবে এটি প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি পদক্ষেপে তোমাদের জীবনকে হুমকিতে ফেলবে। এটাই এই অভিশাপের প্রকৃতি—সর্বদা কাজ করছে, এবং ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে। তাই তোমাদের উচিত একত্রিত হওয়া, সাহসী থাকা, আর মন্ত্রটি সম্পূর্ণ করার জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। নইলে, যারা এর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে, তাদের মৃত্যু নিশ্চিত। অর্ণব এবং তার বন্ধুরা ভয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। ছায়া ক্রমে আরও ঘন হয়ে উঠছিল, যেন তাদের শ্বাসরোধ করছে, যেন তাদের প্রত্যেকটি আন্দোলন অনুভব করছে। অন্ধকার শক্তি, যেটি এতদিন লুকিয়ে ছিল, এখন তাদের সামনে উন্মুক্ত এবং মারাত্মক রূপ নিয়েছে। অর্ণব বুঝল, এই অভিশাপ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হলো ধৈর্য, সাহস, এবং মন্ত্রপাঠ সম্পূর্ণ করা। আর যদি সেই কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তবে মৃত্যু, ছায়া এবং ভয়ের অব্যবহিত চক্র তাদের জীবন সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করে ফেলবে।
অধ্যায় ৯ – চূড়ান্ত রাত্রি
পূর্ণিমার রাত আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো শহর যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। বাতাসে ঠান্ডা নেমে এসেছে, আর অচেনা নিঃশ্বাসের মতো শব্দ ঘরের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। পাঠশালার ভেতরের বাতি একে একে নিভে যাচ্ছে, জানালার কাঁচে অদ্ভুত ছায়া নাচছে, এবং ঘরের কোণগুলো থেকে অদ্ভুত শব্দ শোনা যাচ্ছে—মৃদু ফিসফিসানি, হঠাৎ হাওয়া-ঝাপটা, আর ধ্বংসের হুমকির মতো এক ভারী চাপ। ছাত্ররা ভয়ে একে অপরের পাশে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেউ চিৎকার করার চেষ্টা করলেও কণ্ঠে শীতলতা। অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রস্থলে, হাতে পুঁথি, আর চোখে অজানা আতঙ্ক। তার হৃদস্পন্দন দ্রুত বেড়ে গেছে, কাঁপতে কাঁপতে সে ভাবছে—এই রাতের শেষে কি তারা বাঁচবে? প্রতিটি শব্দের সঙ্গে মনে হচ্ছে যেন মৃত্যুর ঠান্ডা হাত স্পর্শ করছে। বন্ধুরা কেঁপে কেঁপে তাকিয়ে আছে, কেউ আবার চোখ বুজে ভীতির সঙ্গে লড়ছে। সে জানে, শেষ মন্ত্রপাঠ ছাড়া ছায়া কখনো মুক্তি পাবে না, আর সেই ছায়া ইতিমধ্যেই তাদের চারপাশে ঘূর্ণিঝড় হয়ে ঘুরছে।
অর্ণব কণ্ঠ খুলল, পৃষ্ঠার প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করতে লাগল। প্রথম শব্দগুলো যেমনই বের হলো, ঘরের ভেতরে বাতাস ভারী হয়ে উঠল। প্রতিটি ধ্বনি যেন একটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো ছায়ার দিকে প্রবাহিত হচ্ছে, আর সেই ছায়া ক্রমশ কাছে আসছে। ছাত্রদের মনে হলো, ঘরের প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি কোণ, এমনকি তাদের নিজের ছায়া—সবই কেবল ছায়ার শক্তিকে ধারণ করছে। বাতি অদ্ভুতভাবে নাচছে, প্রতিটি কণার সঙ্গে ছায়ার স্পর্শ যেন শীতল তীর ছুঁড়ে দিচ্ছে। অর্ণবের কণ্ঠস্বর ক্রমে শক্তিশালী, কিন্তু তার শরীর কাঁপছে—প্রতিটি শব্দের সঙ্গে যেন মৃত্যুর ভীতিকর ঘ্রাণ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। বন্ধুরা হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কেউ চিৎকার করার সাহস পাচ্ছে না, কারও বুক কেঁপে উঠছে, কেউ আবার নীরব হয়ে চোখ মেলে শোনার চেষ্টা করছে। সেই রাতে পাঠশালার করিডর, ক্লাসরুম, বারান্দা—সবই যেন এক অন্ধকার শক্তির মধ্যে ডুবে আছে, আর ছায়া ক্রমশ তাদের দিকে এগোচ্ছে।
শেষ শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অর্ণবের চোখের সামনে দৃশ্য পরিবর্তিত হলো। ছায়া এতটাই ঘন হয়ে গেছে যে সে কেবল একটি অন্ধকারভূমি মনে হচ্ছিল, আর সেই অন্ধকার থেকে বেরোচ্ছে আগুনের মতো জ্বলজ্বল চোখ। কণ্ঠস্বর যেন কানে ধ্বনিত হয়ে কণ্ঠভাঙা শব্দের মতো আঘাত হাচ্ছে, ঘরের প্রতিটি কোণে মৃত্যুর শীতল ছোঁয়া স্পর্শ করছে। অর্ণব এবং বন্ধুরা অনুভব করল, এই মুহূর্তে জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে সীমারেখা কেবল একটি সূক্ষ্ম পর্দার মতো—একটি ভুল উচ্চারণেই সব শেষ হয়ে যেতে পারে। তারপরও অর্ণব থেমে থাকল না; প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে সে অনুভব করল, শক্তি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসে, আর ছায়া যেন প্রতিটি শব্দের সঙ্গে ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে। বাতাসে হঠাৎ একটি গভীর নীরবতা নেমে আসে, আর ছাত্রছাত্রীরা কাঁপতে কাঁপতে সেই নীরবতা অনুভব করে—ছায়ার ভয় এখন সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু রাত এখনও চলছিল। অর্ণব বুঝল, এই চূড়ান্ত রাত্রির মধ্যে তাদের জীবন, সাহস এবং প্রাচীন শক্তির সঙ্গে লড়াই এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, আর এই অভিজ্ঞতা তাদের চিরকাল স্মরণে থাকবে।
অধ্যায় ১০ – মুক্তি নাকি অন্ধকার?
শেষ মন্ত্রের শব্দগুলি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে পাঠশালার ভেতরে হঠাৎ এক অদ্ভুত আলো ছড়িয়ে পড়ল। কেবল বাতি বা জানালার আলো নয়, বরং একটি অভূতপূর্ব উজ্জ্বলতা যা চারপাশকে সোনালী রূপে ভাসিয়ে দিচ্ছিল। বাতাস হঠাৎ শান্ত হয়ে গেল, ঘরের ভেতরের অন্ধকার ক্রমে মিলিয়ে যেতে লাগল, আর ছায়া—যা এতদিন স্কুলের প্রতিটি কোণ, করিডর, বারান্দা ও মাঠে আতঙ্কের ঝড় তুলেছিল—চিৎকার করে অদৃশ্য হয়ে গেল। ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারল না। তাদের মনে ভীষণ স্বস্তি, আনন্দ আর এক ধরনের বিস্ময় জন্মালো। তারা অনুভব করল, সমস্ত অশুভ শক্তি, যা স্কুলের ওপর চাপিয়ে ছিল, যেন ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গেছে। অর্ণব শ্বাস ফেলে বিশ্রাম নিল, হাত কম্পমান, আর মনে মনে নিজেকে ধন্য মনে করল যে সে সাহস দেখিয়ে মন্ত্রপাঠ শেষ করেছে। প্রাচীন কাহিনির সমস্ত ভয়, সব মৃত্যুর ভয়, সব অদ্ভুততা—এখন এক মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে গেছে, আর স্কুলের প্রতিটি কোণ যেন শান্তি ফিরে পেয়েছে।
শিক্ষক, ছাত্র, এবং গ্রামের লোকেরা সবাই একসাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে শান্তির নিশ্বাস নিল। তারা মনে মনে ভাবল, অবশেষে অভিশাপ কেটে গেছে। প্রতিটি দৃষ্টিতে স্বস্তি এবং কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠল। কিন্তু অর্ণব জানল, এই শান্তি কেবল সাময়িক। সে ধীরে ধীরে পুঁথির দিকে চোখ দিল। পুঁথি যে ঘরে পড়েছিল, তার একটি কোণায় অদ্ভুত আলোকস্পর্শ ফুটে উঠেছিল। অক্ষরগুলো জ্বলজ্বল করছে—পৃথিবীর কোন আলোতেই এভাবে দেখা যায় না। অর্ণব বুঝতে পারল, এই পুঁথির শক্তি কখনো সম্পূর্ণ নিঃশব্দ নয়। ছায়া হয়তো অদৃশ্য হয়ে গেছে, কিন্তু তার অবশিষ্ট শক্তি এখনও সক্রিয় আছে, তার কিছু অংশ এখনও সজীব, অপেক্ষা করছে পরবর্তী আহ্বানের জন্য। মনে হলো, অন্ধকার কখনো পুরোপুরি হারায় না, এটি কেবল পরবর্তী সুযোগের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর মন্ত্রটি সেই অপেক্ষার চাবিকাঠি।
শেষ দৃশ্যে পাঠশালার পরিবেশ এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির সঙ্গে পূর্ণ—নিঃশব্দ শান্তি, শীতল বাতাস, সোনালী আলো, আর পুঁথির অক্ষরের ঝিকমিক। ছাত্রছাত্রীরা ঘরে ফিরে যায়, সবাইকে ভয়ের চিহ্ন, শ্বাসরোধের অভিজ্ঞতা এবং সাহসিকতার স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু অর্ণব একা বসে থাকে, চোখে উদ্বেগ, হৃদয়ে বোঝাপড়া—যে ছায়া তারা ভাবেছিল শেষ হয়ে গেছে, তা আসলে অপেক্ষা করছে, তার শক্তি এখনও স্থির হয়নি। এই মুহূর্তে সে উপলব্ধি করল যে মুক্তি কেবল ছায়ার অস্থায়ী দূরত্ব, আর অন্ধকার সত্যিকার অর্থে কখনো হেরে যায় না। ছায়ার অব্যক্ত উপস্থিতি, পুঁথির অক্ষরের ঝিকমিক, এবং দূরের বাতাসের ফিসফিসানি—সবই মনে করিয়ে দিচ্ছে, কালরাত্রি একদিন আবার ফিরে আসবে, পরবর্তী আহ্বানের জন্য অপেক্ষা করে, এবং সেই দিন অর্ণব এবং যারা তার সঙ্গে ছিল তাদের সাহস আবারও পরীক্ষা করবে।
সমাপ্ত