Bangla - প্রেমের গল্প

স্বপ্নের দরজা

Spread the love

অহনা বসু


অধ্যায় ১ : স্বপ্নের ছায়া

প্রথমবারের মতো সেই স্বপ্নটা নন্দিতাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু পরের দিনগুলোতে এটি যেন তার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়াল। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নন্দিতা সারাদিনের ক্লাস, লাইব্রেরির নীরবতা, আর সন্ধ্যার ভিড়ভাট্টার মাঝেও নিজের মনকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করত, কিন্তু রাত নামলেই যেন অদৃশ্য এক পর্দা সরতে শুরু করত। ঘুমের কোলে ঢলে পড়ার মুহূর্তেই সে যেন প্রবেশ করত এক অচেনা জগতে—একটা অদ্ভুত, কুয়াশায় মোড়া রাস্তা, যেখানে বাতাসে অচেনা গন্ধ আর অদৃশ্য শব্দের প্রতিধ্বনি। রাস্তার দুই পাশে ছায়ার মতো কিছু গাছ দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের পাতাগুলো কাঁপলেও শব্দ হয় না। সেই নিস্তব্ধতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে একটি পুরনো ধাতব লণ্ঠন, যার আলো ম্লান হলেও চারপাশের কুয়াশাকে আলাদা করে চিনতে সাহায্য করে। আর সেই লণ্ঠনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক অচেনা ছেলেটি—নন্দিতার স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু। ছেলেটির চোখে যেন এক অদ্ভুত গভীরতা, মুখের অভিব্যক্তিতে একরকম অব্যক্ত ডাক। সে বারবার ঠোঁট নড়ায়, যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু কোনো শব্দ নন্দিতার কানে পৌঁছায় না। প্রতি রাতের মতোই নন্দিতা হাত বাড়িয়ে কিছুটা কাছে যেতে চাইলেও রাস্তার দূরত্ব কখনও কমে না, ছেলেটির ঠোঁটের নড়াচড়া কেবল কুয়াশার ভেতর মিলিয়ে যায়।

দিনের বেলা নন্দিতা যতই স্বাভাবিক থাকার ভান করুক, স্বপ্নের সেই ছেলেটির মুখ তার মনে এক অদ্ভুত ছাপ রেখে যায়। কলেজের লেকচারের মাঝখানে হঠাৎ মনে হয়, পেছনের বেঞ্চে কেউ যেন চুপচাপ তাকিয়ে আছে, যদিও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলে সেখানে কেবল পরিচিত মুখগুলোই থাকে। বন্ধুরা যখন ক্যান্টিনে আড্ডা দেয়, নন্দিতার চোখ অনিচ্ছা সত্ত্বেও জানলার বাইরের গাছের পাতার ফাঁকে লুকোনো কুয়াশার মতো আলোর দিকে চলে যায়, যেন সেই লণ্ঠনের আলো আজও কোথাও জ্বলছে। তার ডায়েরির পাতাগুলোতে ধীরে ধীরে আঁকিবুঁকি হয়ে ফুটে ওঠে কুয়াশা ঢাকা রাস্তার রেখাচিত্র, এক অচেনা ছেলের মুখের আবছা ছায়া, আর কয়েকটা অসমাপ্ত বাক্য। নন্দিতা প্রথমে এটাকে নিছক অদ্ভুত স্বপ্ন ভেবেছিল, হয়তো কলেজের পড়াশোনা, নতুন বন্ধু, নতুন শহরের ক্লান্তি থেকে আসা মানসিক ক্লান্তির ফল। কিন্তু রাত যত গড়াতে লাগল, স্বপ্নটা যেন ততই স্পষ্ট হতে লাগল—প্রতিটি ডিটেইল, প্রতিটি আলোর কম্পন, এমনকি ছেলেটির চোখের সেই অচেনা গভীরতাও। স্বপ্ন ভেঙে গেলে নন্দিতা বারবার চেষ্টা করত মুখটা ভুলে যাওয়ার, কিন্তু যতই সে নিজেকে বোঝাত, ততই সেই মুখ তার মনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেন বাস্তবের কোনো মানুষের মতো জীবন্ত। কখনো মনে হয়, সে যেন স্বপ্ন নয়, কোনো অজানা সময় থেকে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থাকা এক বাস্তব সত্তা।

ধীরে ধীরে এই স্বপ্ন নন্দিতার জীবনের ভেতর এক রহস্যের মতো ছড়িয়ে পড়ল। রাতে ঘুমোনোর আগে সে নিজের ঘরের প্রতিটি কোণ দেখে নেয়, জানালা বন্ধ করে, লাইট অফ করে, তবু মনে হয় যেন ঘরের ভেতর সেই কুয়াশার শ্বাস ফেলে যাওয়া গন্ধ লুকিয়ে আছে। কলেজ থেকে ফেরার পথে অচেনা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয়, পেছনে লণ্ঠনের মৃদু আলো দপদপ করছে। এমনকি মেট্রোর ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ কোনো অচেনা ছেলের চোখের সঙ্গে চোখ মেলালে তার বুক কেঁপে ওঠে—কেন যেন মনে হয়, এই চোখগুলো সে আগে কোথাও দেখেছে। নন্দিতা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে, “সবই মনের খেলা, নিছক স্বপ্ন।” কিন্তু মনের গভীরে কোথাও একটা তীব্র টান তাকে বিশ্বাস করাতে থাকে যে ছেলেটি সত্যিই আছে, হয়তো অন্য কোনো শহরে, অন্য কোনো সময়ে, বা এমন কোনো বাস্তবে যেখানে স্বপ্ন আর জাগরণের সীমানা মিলেমিশে গেছে। নন্দিতার অজান্তেই এই স্বপ্ন যেন এক অদৃশ্য ছায়ার মতো তার প্রতিদিনের জীবনে ঢুকে পড়ছে, তাকে অজানা কোনো নিয়তির দিকে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে—এক নিয়তি, যার সূত্রপাত হয়তো সেই লণ্ঠনের আলোয় ঢাকা কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তাতেই।

অধ্যায় ২ : মনের ডায়েরি

নন্দিতার ডায়েরি যেন ধীরে ধীরে তার জীবনের এক গোপন মানচিত্র হয়ে উঠছিল। প্রতি রাতে যে অদ্ভুত স্বপ্নগুলো সে দেখত, সেগুলো আর শুধু স্মৃতির খেয়ালিপনা নয়, যেন কোনো অজানা সূত্র ধরে এগোতে থাকা এক রহস্যের ইঙ্গিত। সে প্রথমে ভেবেছিল, এই স্বপ্নগুলো কেবল কুয়াশায় ঢাকা রাস্তার পুনরাবৃত্তি হবে, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই স্বপ্নের দৃশ্যগুলো বদলাতে শুরু করল। এক রাতে সে দেখল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি—হালকা বাতাসে নদীর জল থইথই করছে, তীরে ভাঙা ঘাটের পাশে পুরনো কাঠের বেঞ্চ। ছেলেটির হাতে এখনও সেই পুরনো লণ্ঠন, কিন্তু তার চোখে যেন কোনো গভীর অপেক্ষা। আরেক রাতে সে নিজেকে দেখতে পেল এক পুরনো রেলস্টেশনে, যেখানে প্ল্যাটফর্মে ছড়ানো আছে ঝরে পড়া শুকনো পাতা, ভাঙা লাইটপোস্টের নিচে ছেলেটি একাই দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি স্বপ্ন যেন আগেরটার সঙ্গে অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা, আর সেই সুতোগুলো নন্দিতাকে আরও গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কলেজ থেকে ফিরে সে আর নিজের মনের ভেতর এই ছবিগুলোকে আটকে রাখতে পারত না। নিজের ডেস্কের ল্যাম্পের নিচে বসে সে ডায়েরির সাদা পাতাগুলোতে লিখে ফেলতে লাগল সবকিছু—রাস্তার রঙ, বাতাসের গন্ধ, লণ্ঠনের আলো, এমনকি ছেলেটির চোখের অচেনা দৃষ্টিও। কালো কালিতে লেখা সেই শব্দগুলো যেন কাগজে ফুটে উঠতেই তার বুকের ভেতরের চাপা অস্থিরতাকে সামলে দিচ্ছিল, যেন এই লেখা না হলে স্বপ্নগুলো মনের ভেতর বিস্ফোরণ ঘটাবে।

এই গোপন ডায়েরি নন্দিতার কাছে কেবল একটি খাতাই নয়, যেন এক অদৃশ্য আশ্রয়স্থল। প্রতিটি শব্দে সে নিজের ভিতরের ভয়, বিস্ময় আর অদ্ভুত এক আকর্ষণকে লুকিয়ে রাখত। পরিবারের কেউ এই ডায়েরির কথা জানে না—মা যখন রাতের খাওয়ার পর নন্দিতার ঘরের দরজা পেরিয়ে তাকায়, তখন সে কেবল একটি বই নিয়ে পড়ছে বলে মনে হয়। আসলে তখন তার চোখ আটকে থাকে অজানা পৃথিবীর ছায়ায়। বন্ধুরাও যদি এই স্বপ্নের কথা শুনত, তারা হয়তো হাসত, হয়তো বলত সে অতিরিক্ত গল্প পড়ছে বা সিনেমা দেখছে। এই ভয়ে নন্দিতা কাউকে কিছু বলেনি। ডায়েরির পাতায় সে যত লিখতে লাগল, স্বপ্নগুলো তত স্পষ্ট হতে লাগল, যেন সেই লেখাই তাদের আরও জীবন্ত করে তুলছে। কখনো কখনো সে অনুভব করত, লেখার সময় যেন ডায়েরির পাতা থেকে মৃদু আলো বেরিয়ে আসছে, যেন শব্দগুলো নিজেরাই কোনো অর্থ খুঁজছে। প্ল্যাটফর্মের ভাঙা ঘড়ির সময়ের মতো, নদীর জলে ভাসমান কুয়াশার মতো সবকিছু যেন এক রহস্যময় গাণিতিক নিয়মে সাজানো, যা সে বোঝার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত কেবল অনুভব করতেই পারত। ডায়েরির পাতাগুলো ভরে উঠতে লাগল অজানা ছেলেটির মুখের নানান খুঁটিনাটি, স্বপ্নে দেখা পথের সঠিক মোড়, এমনকি বাতাসে ভেসে আসা অচেনা শব্দগুলোর অস্পষ্ট রূপ। যেন এই লেখা শুধু নন্দিতার নয়, ছেলেটিরও কোনো অদৃশ্য বার্তা।

কিন্তু যতই সে লিখতে লাগল, ততই মনের গভীরে একটা অস্বস্তি বাসা বাঁধতে লাগল। প্রতিটি স্বপ্নের পরের দিন সকালে ডায়েরির পাতা খুলে পড়তে গিয়ে সে খেয়াল করল, কিছু শব্দ যেন তার নিজের হাতের লেখা নয়—কিছু লাইন সে লিখেছে বলে মনে পড়ে না, অথচ কাগজে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে। একদিন সে দেখল, পাতার কোণে ছোট করে আঁকা একটি লণ্ঠনের ছবি, যার পাশে লেখা মাত্র একটি শব্দ—“অপেক্ষা।” এই শব্দ নন্দিতা লেখেনি, তবু যেন ছেলেটির চোখের ভেতরের সেই নিঃশব্দ ডাকের প্রতিধ্বনি হয়ে এসেছে। তার বুকের ভেতর অদ্ভুত শীতলতা ছড়িয়ে পড়ল। কলেজের লেকচারে বসে থাকা অবস্থাতেও সে ভাবতে লাগল, কে লিখল সেই শব্দগুলো? তার স্বপ্নের ছেলেটি কি কোনোভাবে এই ডায়েরির সঙ্গে যুক্ত? রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে ডায়েরিটাকে বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখত, তবু মনে হত যেন ছেলেটির লণ্ঠনের আলো সেই পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকে আসছে। পরিবারের হাসি, বন্ধুদের আড্ডা, ক্লাসের কোলাহল—সবকিছুর মাঝেও নন্দিতা ধীরে ধীরে নিজের এক গোপন জগতে ডুবে যাচ্ছিল। সেই জগৎ যেখানে কেবল কুয়াশা, নদীর স্রোত, স্টেশনের নিস্তব্ধতা, আর লণ্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক অচেনা ছেলেই তার সঙ্গী। ডায়েরির প্রতিটি শব্দ যেন তাকে অচিন্তনীয় কোনো নিয়তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে বাস্তব আর স্বপ্নের সীমানা ক্রমশ মুছে যাচ্ছে, আর নন্দিতা অজান্তেই হয়ে উঠছে এই রহস্যের একমাত্র নায়ক-নায়িকা।

অধ্যায় ৩ : হঠাৎ সাক্ষাৎ

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় নন্দিতা কলেজ থেকে ফেরার পথে শহরের এক ছোট আর শান্ত বইয়ের দোকানের দিকে পা বাড়াল। ঢাকনির ওপরে ঝরে পড়া ফোঁটা আর রাস্তার কঙ্কালের ওপর পড়ে থাকা জলছাপের শব্দ তার মনকে অচেনা এক শীতল উত্তেজনায় ভরিয়ে দিল। সে দোকানের ভেতরে ঢুকে ভিজে যাওয়া কণ্ঠস্বর আর বইয়ের ভিড়ে যেন অদৃশ্যভাবে নিজেকে হারাতে চাইল। বুকশেলফের ফাঁক দিয়ে সে নানান পুরনো বইয়ের খুঁটিনাটি দেখে অবাক হচ্ছিল, তখনই একটি হালকা শব্দের সঙ্গে হঠাৎ শেলফের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে এক যুবক। মুহূর্তেই নন্দিতার চোখে বিস্ময় আর অদ্ভুত উচ্ছ্বাসের মিশ্রণ দেখা দিল—কারণ সে যুবকটি দেখতে ঠিক তার স্বপ্নের ছেলেটির মতো, যার মুখ তাকে রাতের অন্ধকার ও কুয়াশা ভরা স্বপ্নে বারবার দেখা দিয়েছে। তার চোখ, চুলের বাঁক, মুখের রেখা—সবই এত স্পষ্ট যে নন্দিতা এক মুহূর্তে নিজের নিঃশ্বাস থামিয়ে ফেলল। অরণব—যেমনটি সে পরে জানল তার নাম, যুবকটির চেহারায় বিস্ময়ের বদলে ছিল এক অদ্ভুত পরিচিতির ছাপ, যেন সে নন্দিতাকে আগে থেকেই চেনে। তার দৃষ্টি যেন মৃদু হেসে বলছে, “আমি জানি তুমি কে।” বইয়ের ধুলো মিশ্রিত বাতাসে এই অচেনা পরিচিতি নন্দিতার মনকে অচেনা ঢেউয়ের মতো আঘাত করল, এমনকি বৃষ্টির শব্দও যেন অচেনা এক সুরের সঙ্গে মিলিত হয়ে তার হৃদয়ে কম্পন ছড়ালো।

নন্দিতার হাতটা বইয়ের ধারে আটকে গেল, চোখ কেবল অর্ণবের দিকে আটকে থাকা। যুবকটি ধীরে ধীরে এগোল, যেন কোনো শত্রু বা ভিড় তাকে ভয় দেখাতে পারবে না। তার ধীরে ধীরে হাসি, চোখের কোণে নরম রেখা, এমনকি কানের কাছে ন্যূনতম স্পর্শ—সবই নন্দিতার মনের ভেতর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল। অর্ণব তার পরিচয় দিল, কিন্তু তার স্বর ছিল এমন—নন্দিতা যেন শোনার আগে জানে এটি তার স্বপ্নের ছেলেটির কণ্ঠ। কথোপকথন শুরু হওয়ার আগে নন্দিতার মনে হল, এই সাক্ষাৎ কোনো দৈব সংকেত নয়; এটি ছিল সেই স্বপ্নের সূত্রের বাস্তব রূপ। অর্ণবের চোখে সেই পরিচিতি এতটাই স্পষ্ট যে নন্দিতার মনে হল, সে রাতের স্বপ্নগুলো শুধু তার কল্পনা নয়, বরং কোনো অদৃশ্য পৃথিবীর আভাস। বৃষ্টির ভেজা দোকানের ভেতরে তাদের মধ্যকার নিরবতা ছিলো অদ্ভুত শান্ত, যেন এই মুহূর্তে সময় নিজেই থেমে গেছে। নন্দিতার মনের ভেতর প্রশ্নের ঢেউ উঠল—কেন সে স্বপ্নে দেখেছে অর্ণবকে, কেন তার চোখে দেখা পরিচিতি এত গভীর? অথচ অর্ণব কোনো উত্তর না দিয়েই কেবল হালকা হেসে বলল, “স্বপ্ন সবসময়ই বাস্তবের পথে ইঙ্গিত দেয়।”

দোকানের বাইরে বৃষ্টি তীব্র হয়ে উঠল, জানালার কাঁচে ফোঁটা ঝরে পড়ছে, আর ভেতরে বইয়ের সুগন্ধ আর অর্ণবের উপস্থিতি এক অদ্ভুত জাদু সৃষ্টি করল। নন্দিতা হঠাৎ অনুভব করল, তার স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে সীমানা যেন মুছে যাচ্ছে। অর্ণবকে দেখতে পেয়ে, তার মুখের এক মুহূর্তের স্বীকৃতি আর নিঃশব্দ বার্তাগুলো যেন নন্দিতার মনের ভেতর থেকে ডায়েরির পাতাগুলোর দিকে ছুঁয়ে গেল। তিনি অচেনা হলেও পরিচিত, অদ্ভুত হলেও স্বাভাবিক—এই দ্বৈততার অনুভূতি নন্দিতাকে অস্থির করল। তারা দোকানের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ নিরবভাবে দাঁড়িয়ে রইল, আর বৃষ্টি, বইয়ের পাতা, ধুলো, সবকিছু যেন একটি একক মুহূর্তে মিলিত হয়ে এক অদ্ভুত বাস্তবের দরজা খুলে দিল। নন্দিতার মনে হল, স্বপ্নের যে অচেনা ছেলেটি প্রতিটি রাতে তাকে দেখত, এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, শুধু চোখের দৃষ্টিতে না, বরং বাস্তবের পুরো অস্তিত্বে। সে বুঝতে পারল, এই সাক্ষাৎ তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করল—যেখানে স্বপ্ন, বাস্তব, রহস্য, আর অর্ণবের পরিচিতি একে অপরের সঙ্গে অদৃশ্যভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে।

অধ্যায় ৪ : অদৃশ্য টান

নন্দিতার মনে এখনও অর্ণবের সেই প্রথম মুখোমুখি মুহূর্তের উচ্ছ্বাস ও ভয়ের মিশ্রণ তাজা ছিল। বইয়ের দোকানের অন্ধকার কোণ থেকে বেরিয়ে আসা সেই যুবক, যার চোখে অদ্ভুত গভীরতা, কেবল দেখলেই নন্দিতার মনে যেন এক অদৃশ্য টান সৃষ্টি হল। প্রথম আলাপেই অর্ণবের আচরণ নন্দিতাকে হতবাক করে দিল—তার কথা, হাসি, চোখের দৃষ্টি, সবকিছু যেন তার মনের গভীরে আগে থেকেই লেখা ছিল। নন্দিতা যতই চেষ্টা করুক নিজের ভাব চাপতে, সে পারল না; তার চোখের কোণ, ঠোঁটের হালকা স্পর্শ, এমনকি কথার মাঝে সামান্য তামসিকতা—সবকিছুই তাকে এক অদ্ভুত উত্তেজনায় ভরে দিল। অর্ণব হঠাৎ এমন কিছু বলে গেল যা নন্দিতার হৃদয়ের ভিতর ঝড় তুলল—তার প্রিয় বইয়ের নাম, পছন্দের রঙ, এমনকি ছোটবেলার এক ঘটনা, যা সে কেবল নিজের ডায়েরিতে লুকিয়ে রেখেছে, কেউ জানে না। নন্দিতার চোখ বড় হয়ে গেল, বুক কেঁপে উঠল, মনে হল যেন কোনো অদৃশ্য হাত তার মনের গভীরে ঢুকে সমস্ত তথ্য তুলে এনেছে। সে অল্পস্বরে বলল, “তুমি কি সেটা আগে বলেছিলে?” অর্ণব কেবল হেসে বলল, “হয়তো আগের কোনো দিনে তোমাকে চিনতাম।” সেই অল্প কথাতেই নন্দিতার মনে হল, স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে যে ফাঁক, তা ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে।

অর্ণবের উপস্থিতি নন্দিতার মনকে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে ফেলল। এক দিকে ভয়, কারণ সে বুঝতে পারছিল, এই যুবক শুধু পরিচিত নয়—কিন্তু তার জানার গভীরতা, স্বপ্নের সঙ্গে মিল, এমনকি নন্দিতার ভেতরের ক্ষুদ্রতম তথ্যও জানার ক্ষমতা তাকে অদ্ভুত আতঙ্কে ফেলে দিচ্ছিল। অন্যদিকে কৌতূহল, কারণ তার স্বপ্নে যে অচেনা ছেলেটি বারবার উপস্থিত হতো, সেই ছেলেটি এখন বাস্তবে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নন্দিতার চোখ অর্ণবের দিকে আটকে ছিল, সে প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি, চোখের দৃষ্টি, হাসি—সবকিছু নিজে মনে রাখার চেষ্টা করছিল। অর্ণবের কথায়, “তুমি কখনও কল্পনা করেছ কি, হয়তো আমাদের দেখা হওয়ার এই মুহূর্তগুলো বহু আগে থেকে নির্ধারিত ছিল?” নন্দিতা হঠাৎ অনুভব করল, অদৃশ্য কোনো টান তাকে অর্ণবের দিকে টেনে নিয়ে এসেছে, যেটি কেবল শারীরিক আকর্ষণ নয়, বরং মনের গভীর থেকে আসা এক রহস্যময় সিগন্যাল। সে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল, এটি কেবল এক অদ্ভুত মিল—কিন্তু হৃদয় তার ভাষা শুনে না, বরং ধীরে ধীরে অর্ণবের উপস্থিতিকে স্বীকার করতে শুরু করল।

বৃষ্টির ঝরঝরে শব্দ বাইরে বাজলেও দোকানের ভেতরে সময় যেন থমকে গেছে। নন্দিতা এবং অর্ণব এক অদৃশ্য সম্পর্কের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে—যেখানে শব্দের প্রয়োজন নেই, যেখানে চোখের ভাষা এবং নীরবতা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে রহস্যের নতুন অধ্যায় খুলে দেয়। অর্ণবের হাসি, তার নিঃশব্দ বার্তা, এবং সেই অদ্ভুত পরিচিতি নন্দিতার হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলল। সে বুঝতে পারল, এই টান কেবল আকর্ষণ নয়, এটি তার জীবনের অদৃশ্য নিয়তির প্রতিফলন। প্রতিটি মুহূর্তে নন্দিতা অনুভব করল, এই অদৃশ্য টান তাকে স্বপ্নের অতীত এবং বাস্তবের বর্তমানের সঙ্গে যুক্ত করে রাখছে—একটি সম্পর্কের সূচনা যা অচেনা হলেও অত্যন্ত প্রাকৃতিক, অদ্ভুত হলেও অতি পরিচিত। তার হৃদয় কেঁপে ওঠে, মনের গভীরে অচেনা ভয় ও কৌতূহলের স্রোত বয়ে যায়, আর সে বুঝতে পারে, এই অদৃশ্য টান তার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিতে চলেছে, যেখানে স্বপ্ন, বাস্তব এবং অর্ণব—তিনটি এক অদ্ভুত সুরে মিলিত হয়ে তার দৈনন্দিন জগৎকে নতুন রূপ দিচ্ছে।

অধ্যায় ৫ : স্বপ্নের খেলা

নন্দিতার রাতগুলো ক্রমশ এক অদ্ভুত তীর্থযাত্রার মতো হয়ে উঠল, যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমানা ক্রমশ মিলেমিশে যাচ্ছে। প্রতিদিনের স্বপ্নগুলো আর আগের মতো পুনরাবৃত্তি নয়; এবার নন্দিতার ঘুমের ভেতরে এক নতুন অধ্যায় খুলল। সে দেখল, কুয়াশা ঢাকা রাস্তার পরিবর্তে এবার এক বিশাল, পুরনো প্রাসাদ। প্রাসাদের দেয়ালগুলো সোনালি আলোয় আলোকিত, কিন্তু একই সঙ্গে যেন অজানা কোন নিঃশব্দ দমবন্ধ করা শীতলতা ঘিরে রেখেছে। তার পায়ের নিচে কাঁপা পাথর, ভাঙা কলসের ভেতর ঝরে পড়া জল—সবই এক অদ্ভুত বাস্তবতার ছাপ দেয়। প্রাসাদের মধ্যদিয়ে এগোতে গিয়ে সে লক্ষ্য করল অর্ণব তার দিকে অপেক্ষার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এবার তার চোখে শুধু পরিচিতি নয়, অজানা এক বেদনার ছাপ। নিঃশব্দ ভাবেই সে হাত বাড়িয়ে নন্দিতাকে ডাকছে, যেন বলছে—“এসো, আমি তোমাকে দেখাতে চাই।” নন্দিতা প্রথমে দ্বিধা বোধ করলেও স্বপ্নের অদ্ভুত টান তাকে ধীরে ধীরে অর্ণবের দিকে টেনে নিল। প্রাসাদের প্রতিটি কর্ণারে যেন ইতিহাসের ছায়া জমে আছে; ভাঙা জানালা, ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাদের কাঠামো, এবং গাছপালার আড়ালে লুকোনো আলো—সবকিছু একসাথে মিলেমিশে এক রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করছে, যেখানে বাস্তব আর কল্পনার সীমানা মিলেমিশে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

স্বপ্নের ভেতরে অর্ণব নন্দিতার হাত ধীরে ধীরে ধরে এগোতে লাগল, আর তার চোখের গভীরতা যেন নন্দিতার মনের ভেতরে ঢুকে পড়ল। নন্দিতার মনে হল, সে কেবল অর্ণবকে অনুসরণ করছে না—বরং তার নিজের ভিতরের ভীত, আকাঙ্ক্ষা, কৌতূহল এবং অজানা আবেগও এই প্রাসাদের সঙ্গে মিলেমিশে এগোচ্ছে। প্রাসাদের প্রান্তরে একটি পুরনো লাইব্রেরি আছে, যেখানে ধুলোমাখা বই, ভাঙা চেয়ার এবং অচেনা সূর্যরশ্মি মিলেমিশে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা সৃষ্টি করেছে। অর্ণবের চোখে সেই অজানা বেদনা নন্দিতার মনের ভেতর প্রবেশ করল; সে বুঝতে পারল, স্বপ্নে এই বেদনা শুধু অর্ণবের নয়—কোনো অতীত, কোনো স্মৃতি, কিংবা এমনকি কোনো নিয়তির প্রতিফলন। নিঃশব্দ বাতাসে বইয়ের পাতাগুলো কাঁপছে, আর নন্দিতা অনুভব করল যেন এই নিঃশব্দ কম্পন তার হৃদয়ের সঙ্গে মিলছে। হঠাৎ অর্ণব তার কাছে একটি ছোট্ট নোটবুক এগিয়ে দেয়, নিঃশব্দে হাতের মধ্যে স্থাপন করে। নন্দিতা অবাক হয়ে দেখল, এটি একেবারেই বাস্তব—নোটবুকটি তার বালিশের পাশে আছে, যদিও সে কখনো স্বপ্নের বাইরে এটি হাতে নেয়নি। নোটবুকের পাতাগুলো খোলার সঙ্গে সঙ্গে সে দেখল, প্রতিটি পাতায় অর্ণবের লেখা ছোট ছোট শব্দ, যা যেন স্বপ্নের সেই নিঃশব্দ বার্তার সঙ্গে মিলিত।

নন্দিতা ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠে নিজের হাতে নোটবুকটি ধরে তাকিয়ে রইল। মনে হলো, স্বপ্ন কেবল কল্পনা নয়—এটি তার জীবনের এক অদৃশ্য খেলা, যেখানে সে আর শুধু দর্শক নয়, অংশগ্রহণকারী। নোটবুকের প্রতিটি শব্দ, অর্ণবের চোখে থাকা অজানা বেদনা, প্রাসাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত সৌন্দর্য—সবকিছু মিলেমিশে তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনা ও আতঙ্কের মিশ্রণ তৈরি করল। সে বুঝতে পারল, অর্ণবের উপস্থিতি কেবল স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বাস্তবের সঙ্গে তার সংযোগ গভীর, আর এই নোটবুক সেই সংযোগের প্রথম চিহ্ন। তার মন কৌতূহলে ভরে গেল—এই স্বপ্ন কি শুধুই পুনরাবৃত্তি, নাকি কোনো বৃহত্তর রহস্যের সূচনা? দিনের আলোয় নোটবুকের পাতাগুলো স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে নন্দিতা অনুভব করল, তার জীবন আর আগের মতো থাকবে না; স্বপ্ন, বাস্তব, এবং অর্ণব—তিনটি এক অদ্ভুত খেলা খেলছে, যার নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই, অথচ সে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সেই খেলায় নিজেকে ছুঁড়ে দিচ্ছে।

অধ্যায় ৬ : অতীতের দরজা

নন্দিতার মনের ভেতর এক অদ্ভুত অবসাদ জন্ম নিল, যখন অর্ণব একদিন তার সামনে বসে অচেনা অথচ পরিচিত সুরে বলল, “আমি আজও সেই দিনের উত্তর খুঁজছি।” রৌদ্রোজ্জ্বল কলেজের দিনে, একান্ত চুপচাপ কফি শপের একটি কোণ, বৃষ্টির খোঁচা লাগানো জানালার পাশে অর্ণবের চোখে অজানা বেদনা ঝলমল করছিল। সে বলল, শৈশবে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনার কথা—একটি ঘটনা, যা তার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় হয়ে আছে। সেই দিনে একটি মেয়ে হঠাৎ করে হারিয়ে গিয়েছিল, কেউ জানত না কোথায় গিয়েছে। অর্ণব সেই মেয়েটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোথাও কোনো চিহ্ন ছিল না। নন্দিতার হৃদয় হঠাৎ দ্রুত কেঁপে উঠল। সে নিজেও বুঝতে পারল, স্বপ্নে যে অচেনা ছেলেটি বারবার তাকে ডাকছিল, বাস্তবের এই অর্ণবের চোখের গভীর বেদনার সঙ্গে সেই স্বপ্নের সংযোগ ঘনঘন হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্নটি নন্দিতার মনকে ঝাপসা করে তুলল—এই মেয়ে কি সে নিজেই? স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমারেখা যেন ম্লান হয়ে আসছে, আর নন্দিতার ভেতরে এক অজানা উত্তেজনা ও ভয় একই সঙ্গে জাগতে লাগল।

অর্ণবের কথা শুনে নন্দিতা অনায়াসেই অতীতের এক ঝাপসা আভাসে প্রবেশ করল। সে দেখল, কিভাবে অর্ণব সেই হারানো মেয়েটির স্মৃতিতে আটকে ছিল—ছোট্ট হাত, উজ্জ্বল চোখ, হাসি, সবই এখনো তার মনে গেঁথে আছে। অর্ণবের কণ্ঠের নীরবতা আর চোখের দৃষ্টি যেন নন্দিতাকে ধীরে ধীরে অতীতের ভেতর টেনে নিচ্ছিল। সে নিজেকে বাঁচাতে চেয়েও পারল না; প্রশ্নগুলো বারবার মনের ভেতর ঘুরছে—কেন অর্ণব তাকে দেখে অদ্ভুত পরিচিত লাগে? কেন তার স্বপ্নের ছায়া এই ঘটনার সঙ্গে মিলছে? নন্দিতার মনে হল, এই অতীতের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের জীবনও যেন অজানা এক চক্রে প্রবেশ করছে। স্বপ্নের লণ্ঠন, প্রাসাদের কুয়াশা, অর্ণবের নিঃশব্দ বার্তা—সবকিছু যেন একসাথে মিলেমিশে অতীতের এই দুর্ঘটনার সঙ্গে তার জীবনের অদৃশ্য সুতো বোনাচ্ছে। সে বুঝতে পারল, বাস্তবের এই অর্ণব কেবল একজন পরিচিত মুখ নয়; তার চোখ, তার কণ্ঠ, এমনকি তার নিঃশব্দ ভাব—সবকিছুই অতীতের সেই হারানো মেয়ের খোঁজের সঙ্গে যুক্ত।

নন্দিতা রাতের অন্ধকারে ঘুমোতে বসে স্বপ্নের ভেতরে আবার সেই প্রাসাদ ও কুয়াশা ভরা রাস্তায় প্রবেশ করল। সে দেখল, অর্ণব হাত বাড়িয়ে ডাকছে, কিন্তু এবার তার চোখের গভীরে শুধুই বেদনা নয়, কিছুটা আশার আলোও। নন্দিতা নিজের ভেতরের সমস্ত দ্বিধা ও আতঙ্ককে সামলে এগোচ্ছে, কারণ এখন সে বুঝতে পারছে, স্বপ্ন কেবল কল্পনা নয়—এটি একটি গোপন পথে নেওয়া ডাক, যেখানে অতীতের খোঁজ তাকে বাস্তবের সঙ্গে যুক্ত করছে। নোটবুকের ছোট ছোট শব্দ, লণ্ঠনের আলো, প্রাসাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত সৌন্দর্য—সবকিছু মিলেমিশে তাকে একটি নতুন জগতে টেনে নিচ্ছে, যেখানে সে নিজেকে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বের মধ্যে আবিষ্কার করছে। একদিকে ভয়, কারণ হয়তো সে সেই হারানো মেয়েটিই, আর অন্যদিকে কৌতূহল, কারণ এই সত্য খুঁজে বের করা তার জন্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা। স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমারেখা ঝাপসা হয়ে গেছে, এবং নন্দিতা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে, এই অদৃশ্য টান তাকে শুধুই স্বপ্নের মধ্যে আটকে রাখছে না, বরং অতীতের ধুলোবাতাসে ঘেরা এক রহস্যময় যাত্রার দরজা খুলে দিচ্ছে, যেখানে অর্ণবের বেদনা, তার নিজের আত্ম-অনুসন্ধান, এবং হারানো সত্য—সবই একসাথে মিলেমিশে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে।

অধ্যায় ৭ : অদ্ভুত মিল

নন্দিতার মন এখন এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর ভয়ের মিশ্রণে কেঁপে উঠছিল। ঘরের এক কোণে বসে সে তার গোপন ডায়েরি উল্টে দেখছিল, প্রতি পাতায় লেখা স্বপ্নের শব্দ, প্রাসাদের কুয়াশা, লণ্ঠনের আলো, এবং অর্ণবের ছোট ছোট বার্তাগুলো তার চোখের সামনে পুনরায় জাগছিল। হঠাৎ সে নিজের ছোটবেলার স্মৃতিগুলোর দিকে ফিরে গেল। সে মনে পড়ল, একদিন শিশু অবস্থায় একটি দুর্ঘটনায় তার মাথায় আঘাত লেগেছিল, এবং কয়েকদিনের স্মৃতি পুরোপুরি হারিয়ে গিয়েছিল। সে তখনকার অভিজ্ঞতা, খেলাধুলার মৃদু আনন্দ, পরিবার ও বন্ধুর সঙ্গে কাটানো সময়—সবকিছু যেন মুছে গিয়েছিল। ডায়েরির পাতাগুলো উল্টে উল্টে নন্দিতা দেখল, তার স্বপ্নে দেখা অর্ণবের বর্ণনা, প্রাসাদের ভেতরের নিঃশব্দ বার্তা, এমনকি নিঃশব্দ বেদনা—সবকিছু যেন তার হারানো স্মৃতির সঙ্গে মিলছে। বুকের ভেতর হঠাৎ এক অদ্ভুত উত্তেজনা জেগে উঠল; সে বুঝতে পারল, স্বপ্নের এই ছেলেটি কেবল কল্পনা নয়—তার জীবনের হারানো অধ্যায়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

নন্দিতা তখন অর্ণবের দিকে চোখ রাখল, এবং দুজনেই এক অদ্ভুত চুপচাপ বোঝাপড়ায় আবদ্ধ হয়ে গেল। অর্ণবও তার নিজের গল্প খুলল—শৈশবে হারানো মেয়েটির খোঁজ, নিঃশব্দ বেদনা, প্রাসাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত সৌন্দর্য এবং কুয়াশার মধ্যকার নিঃশব্দ ডাক—সবকিছু নন্দিতার স্মৃতির সাথে যেন মিলেমিশে গেছে। নন্দিতা বুঝতে পারল, যে স্বপ্নগুলো সে বারবার দেখছে, সেগুলো কোনো সাধারণ কল্পনা নয়; বরং একটি অদৃশ্য বন্ধনের প্রতিফলন। তারা দুজনেই অনুভব করল, তাদের জীবন, অতীত এবং স্বপ্নগুলো এমন এক জটিল তন্তুর মতো মিলেমিশে আছে, যা কেবল তারা দুজনেই বুঝতে পারছে। ঘরের ভেতরে, ডায়েরি ও নোটবুকের আলোয়, নন্দিতা এক অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করল—এই মিল শুধুমাত্র ঘটনা বা স্মৃতির মিল নয়, বরং একটি অতৃপ্ত অথচ সুস্পষ্ট সম্পর্কের সূচনা।

স্বপ্ন, ডায়েরি, এবং অর্ণবের বাস্তব উপস্থিতি মিলেমিশে নন্দিতাকে এক অদ্ভুত বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করালো। সে বুঝতে পারল, তার হারানো স্মৃতি এবং অর্ণবের অতীত কেবল অনুরূপ নয়; তারা একে অপরের মধ্যে অদৃশ্যভাবে সংযুক্ত। নোটবুকের ছোট ছোট শব্দ, প্রাসাদের কুয়াশা, নদীর ধারে দেখা নিঃশব্দ দৃশ্য—সবকিছু যেন এক অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা। নন্দিতা আর অর্ণব একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল, এই অদ্ভুত মিল কেবল সুখের নয়, বরং তাদের জীবনের নিয়তি, অতীতের ক্ষত, এবং স্বপ্নের গভীরতার এক অদৃশ্য সংযোগ। স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমারেখা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে গেছে, আর নন্দিতা বুঝতে পারল, এই অদ্ভুত বন্ধন তাকে শুধু অতীতের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতের রহস্যময় অধ্যায়েও তাকে প্রস্তুত করছে।

অধ্যায় ৮ : হারানো সময়ের রহস্য

নন্দিতা আর অর্ণব একদিন সকালে শহরের বাইরে অর্ণবের শৈশবের পুরনো বাড়ির দিকে রওনা হলো। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখা অনাবিল সবুজের মাঝ দিয়ে বৃষ্টি শুকনো কাঁচের মতো ঝলমল করছে। নন্দিতার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা ও দ্বিধার মিশ্রণ ছিল—স্বপ্ন আর বাস্তবের মিল এত গভীর যে সে নিজেকে অচেনা এক ভেতরের জগতে আবিষ্কার করছিল। অর্ণবও চুপচাপ ছিলেন, চোখে কিছুটা অস্থিরতা, কিছুটা আশার ঝিলিক। তারা পৌঁছালেন সেই পুরনো বাড়িতে, যেখানে অর্ণবের শৈশবের সমস্ত স্মৃতি ভেসে ওঠে—ধুলো মাখা আসবাব, ভাঙা জানালা, আর পেছনের উঠোন, যেখানে একসময় শিশুর মতো দৌড়াধুড়ি হত। নন্দিতা ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে ঢুকল, আর চোখ পড়ল দেয়ালে লুকানো কিছু অদ্ভুত চিত্রে—ছোটবেলার আঁকা ছবি, শিশুসুলভ রঙের দাগ, যা সে নিজেও ভুলে গিয়েছিল। প্রতিটি ছবি যেন তার মনের অতীতকে পুনরায় জীবন্ত করে তুলল। সে অবাক হয়ে দেখল, এই ছবিগুলো কেবল তার স্মৃতির নয়, বরং সেই সময়ের বৃত্তান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন, যা অর্ণবের দীর্ঘদিনের খোঁজকে শেষ করে দিতে পারে।

অর্ণব যখন ছবিগুলো দেখল, তখন তার চোখে মিলেমিশে বিস্ময়, আনন্দ এবং দীর্ঘদিনের খোঁজের তৃষ্ণা স্পষ্ট হয়ে উঠল। সে অবাক হয়ে বলল, “এই রঙগুলো… এই আঁকা… তুমি কি সত্যিই সেই?” নন্দিতার হৃদয় দ্রুত কেঁপে উঠল। সে বুঝতে পারল, স্বপ্নের ছেলেটি, যে অদৃশ্যভাবে তার জীবনে প্রবেশ করেছিল, বাস্তবেও তার পাশে আছে। অর্ণবের হাত নন্দিতার কাঁধে হালকা ছোঁয়া দিলে সে আরও নিশ্চিত হলো—সে সেই হারানো মেয়ে, যার খোঁজ অর্ণব বছরের পর বছর ধরে খুঁজছিল। বাড়ির ভেতরের নীরবতা, দেয়ালে লুকানো আঁকা ছবি, ধুলোমাখা আসবাব—সবকিছু মিলেমিশে এক রহস্যময় আবহ সৃষ্টি করল, যেখানে অতীতের হারানো সময় এখন সামনে এসে দাঁড়িয়ে। নন্দিতা বুঝতে পারল, তার হারানো স্মৃতি শুধু ব্যক্তিগত কোনো ঘটনা নয়; এটি অর্ণবের জীবনের এক গভীর ক্ষতও, যা তার চোখে অচেনা বেদনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

নন্দিতা আর অর্ণব দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, যেন শুধু সময়কেই সেই মুহূর্তে থামিয়ে রাখতে চায়। অর্ণব তার হাত ধরে বলল, “তুমি খুঁজে পেয়েছো, আর আমি শেষ অবধি পেয়েছি।” নন্দিতা তার চোখের দিকে তাকিয়ে জানল, এই চুপচাপ মুহূর্তে কোনো শব্দের প্রয়োজন নেই—স্রেফ উপস্থিতি যথেষ্ট। হারানো সময়ের রহস্যের সব স্তর ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে লাগল। স্বপ্ন, নোটবুক, প্রাসাদের কুয়াশা—সবই এখন বাস্তবের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। নন্দিতা বুঝতে পারল, তার জীবন আর আগের মতো থাকবে না; এই আবিষ্কার, এই মিল, এবং এই অদ্ভুত সম্পর্ক তাকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের রহস্যময় পথে টেনে নেবে। তারা দুজনেই জানত, এবার থেকে স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে যে অদৃশ্য টান ছিল, তা কেবল বন্ধন নয়—এটি তাদের জীবনের একটি গভীর সত্য, যা হারানো সময়ের রহস্যকে চিরতরে উদ্ভাসিত করছে।

অধ্যায় ৯ : স্বপ্নের সত্য

নন্দিতা এবং অর্ণব যখন পুরনো বাড়ির ধুলো-মাখা উঠোনে বসে কথা বলছিল, অর্ণব হঠাৎ গভীরভাবে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি জানো কি, সেই রাতে যা হয়েছিল, তা কেবল দুর্ঘটনা নয়।” তার কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত মৃদু কম্পন, যা নন্দিতার হৃদয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলল। অর্ণব বর্ণনা করতে লাগল, দুর্ঘটনার রাতের ঘটনা—কেন তারা দুজনই অচেতন হয়ে পড়েছিল, কেমন করে সময়ের মধ্যে সব থেমে গিয়েছিল, আর মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার অদ্ভুত অনুভূতি। নন্দিতা ধীরে ধীরে তার কথা বুঝতে লাগল। সে অনুভব করল, স্বপ্নে প্রতিনিয়ত যে অর্ণবের মুখ দেখা যাচ্ছিল, যে নিঃশব্দ বার্তা এবং কুয়াশার মধ্যকার ডাক তাকে টানে, তা কেবল মনের কল্পনা নয়। বরং এটি দুই জীবনের গভীর বন্ধনের প্রতিফলন, যা সেই দুর্ঘটনার রাত থেকে অদৃশ্যভাবে তাদের মধ্যে গেঁথে আছে। নন্দিতার মন অবাক হয়ে উঠল, সে কখনো ভাবতেই পারত না, স্বপ্নের প্রতিটি অচেনা দৃশ্য এত গভীর সত্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

অর্ণবের চোখে তখন যে বেদনা আর স্বীকৃতির মিশ্রণ, তা নন্দিতার হৃদয়কে কেঁপে তুলল। সে বলল, “আমরা যখন মৃত্যুর কাছে ছিলাম, তখন কোনো শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারেনি। আমাদের আত্মা একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে। প্রতিটি স্বপ্ন, প্রতিটি নিঃশব্দ বার্তা, প্রতিটি অচেনা রাস্তার দৃশ্য—সবই সেই সংযোগের প্রকাশ।” নন্দিতার মনে সেই অনুভূতি প্রবাহিত হল, যখন সে বুঝতে পারল যে স্বপ্ন কেবল পুনরাবৃত্তি নয়; বরং এটি একটি ধীরে ধীরে প্রকাশিত সত্য। তাদের মধ্যে যে অদ্ভুত টান অনুভূত হত, তা শুধু আকর্ষণ বা কৌতূহল নয়, বরং আত্মার মধ্যে এক গভীর বন্ধন। সে বুঝতে পারল, কেন স্বপ্নে অর্ণবের চোখে এমন পরিচিতি ছিল, কেন নিঃশব্দ বার্তাগুলো তার হৃদয়কে স্পর্শ করত—কারণ এটি বাস্তবের গভীর সত্যের আভাস।

ঘুম থেকে জাগার পরও নন্দিতা সেই অনুভূতি ভুলতে পারল না। অর্ণবের কথাগুলো তার মনকে অদ্ভুত শান্তি আর উত্তেজনার মধ্যে ফেলে দিল। সে বুঝতে পারল, স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমারেখা এবার শুধু ঝাপসা নয়, বরং একেবারেই ভেঙে গেছে। প্রতিটি রাতের স্বপ্ন, লণ্ঠনের আলো, প্রাসাদের কুয়াশা, নোটবুকের ছোট ছোট বার্তা—সবই তাদের জীবনের এক গভীর সত্যকে প্রকাশ করছে। নন্দিতা এবং অর্ণব একে অপরের দিকে তাকিয়ে অনুভব করল, তাদের জীবনের সেই হারানো মুহূর্ত, স্মৃতির ফাঁক, এবং দুর্ঘটনার রাত—সবই তাদেরকে একে অপরের সঙ্গে অদৃশ্যভাবে জুড়ে দিয়েছে। স্বপ্নের সত্য এই মুহূর্তে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে, শুধু অতীতের রহস্য উদঘাটন করছে না, বরং ভবিষ্যতের জন্যও তাদের এক নতুন অধ্যায়ের পথ খুলে দিচ্ছে।

অধ্যায় ১০ : নতুন ভোরের শুরু

নন্দিতা আর অর্ণব ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, স্বপ্নের রহস্য যতই গভীর বা অদ্ভুত হোক, বাস্তবের পৃথিবীতে তাদের সম্পর্কের সূচনা আরও গুরুত্বপূর্ণ। রাতের স্বপ্ন, প্রাসাদের কুয়াশা, লণ্ঠনের আলো, নোটবুকের অক্ষর—সবকিছু মিলেমিশে তাদের অতীতকে পুনরায় জীবন্ত করেছে। কিন্তু এখন তারা জানল, এই সম্পর্ক শুধুমাত্র স্বপ্নে সীমাবদ্ধ নয়; এটি বাস্তব জীবনের মধ্যে ক্রমশ বেড়ে উঠতে চায়। পুরনো বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে, তারা দুজনই অনুভব করল, স্বপ্নের যাত্রা শেষ হলেও হৃদয়ের ভেতরের টান, আত্মার বন্ধন, এবং একে অপরের প্রতি আকর্ষণ স্থায়ী। নন্দিতার চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি ফুটল—ভয় ও দ্বিধা মিশ্রিত সেই অনুভূতি ধীরে ধীরে নিশ্চয়তায় পরিণত হল। তারা দুজন বুঝতে পারল, তাদের পরিচয়, হারানো স্মৃতি, এবং স্বপ্নের গল্প কেবল একটি অধ্যায়; আসল অধ্যায় শুরু হচ্ছে বাস্তবের পৃথিবীতে।

ভোরের আলো ধীরে ধীরে জানালার বাইরে ছড়িয়ে পড়ল। রোদ্দুরের নরম ছোঁয়া বাড়ির দেওয়ালে, মেঝেতে, এবং তাদের হাতে—সবকিছুই এক অদ্ভুত শান্তি ও নতুন সূচনার বার্তা নিয়ে এসেছে। নন্দিতা ও অর্ণব হাতে হাত রেখে হাঁটতে লাগল, যেন তারা স্বপ্নের ভেতরের সেই অচেনা পথ পেরিয়ে বাস্তবের জগতে প্রবেশ করছে। বাতাসে ভেজা মাটির গন্ধ, দূরের পাখির কণ্ঠ, আর সূর্যের উষ্ণ আলো—সবকিছু তাদের জীবনকে নতুন করে স্বাদ দিচ্ছিল। তারা প্রতিটি পদক্ষেপে অনুভব করল, একসময় যে সীমারেখা স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে ঝাপসা ছিল, তা এখন সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। দুজনের চোখে একইরকম বিশ্বাস ও আশা—যে সম্পর্কটি তারা স্বপ্নে দেখেছে, তা এখন বাস্তবের আলোয় নতুন রূপে ফুটে উঠছে। নন্দিতা বুঝতে পারল, যে অনুভূতি এতদিন স্বপ্নের আবরণের মধ্যে লুকানো ছিল, তা এখন স্বাধীনভাবে বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে।

হাতের তালুতে তালু রেখে, তারা ধীরে ধীরে শহরের পথ ধরে এগোচ্ছে। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন নতুন সম্ভাবনার সূচনা, নতুন অধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি। নন্দিতা অনুভব করল, অর্ণবের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেবল ভালোবাসা নয়; এটি আত্মার একটি বন্ধন, যা স্বপ্নের সীমানা পেরিয়ে বাস্তবের দৃঢ় সত্যে পৌঁছেছে। তারা জানে, এবার তাদের যাত্রা শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং সেই হারানো সময়, স্বপ্নের খোঁজ, এবং অতীতের রহস্যকে সঠিকভাবে সমাধান করার জন্যও। রোদ্দুরের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে নন্দিতা মনে মনে হেসে উঠল—সব রহস্য, সব অজানা স্বপ্ন, সব ভেতরের দ্বিধা এবং ভয়—সবকিছু মিলেমিশে আজ একটি নতুন ভোরের সূচনা করেছে। তারা জানে, এই নতুন ভোর শুধু দিনের আলো নয়; এটি তাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়, যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে বিভাজন শেষ, এবং হাতের তালুতে তালু রেখে তারা এগোচ্ছে এক অচেনা, কিন্তু চিরন্তন বাস্তবের দিকে।

____

 

1000069242.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *