সৌমিলি দত্ত
চন্দননগরের আলো উৎসবের রাতটি এক অন্যরকম জাদু উপহার দিচ্ছিল। নদীর ধারে ছড়িয়ে থাকা রঙিন আলো যেন জলরাশিকে আলোকিত স্বপ্নের মতো পরিণত করেছে। প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রাস্তা, এমনকি ছোট্ট সরু গলিগুলোও আলোতে ভেসে ওঠে—লাল, নীল, হলুদ আর সবুজ রঙের ঝলমলে বাতিগুলো এক ধরনের মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ফরাসি স্থাপত্যে ভরা পুরনো ভবনগুলো তাদের ঐতিহাসিক সৌন্দর্য ধরে রেখেছিল, কিন্তু রাতের আলো তাদের আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। সেতার আর ঢোলের সুর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল, যেন প্রতিটি সুর বাতাসে মিলেমিশে নাচছে। লোকেরা উৎসবমুখর, হাসি-আনন্দে ভরা, আর প্রতিটি মানুষের মুখে এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর আনন্দের ছাপ। শহরটি যেন এক জীবন্ত চিত্রকর্ম হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রতিটি কোণ, প্রতিটি দৃশ্যই নিজস্ব গল্প বলছে।
ঋত্বিক, অনন্যা, সৌরভ আর তৃষা—চারজন বন্ধু—এই শহরের রূপ এবং উচ্ছ্বাসের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিল। তারা নদীর ধারে হাঁটছিল, যেখানে জলরাশির প্রতিফলনে বাতিগুলো দ্বিগুণ হয়ে উঠেছিল। ঋত্বিক মুগ্ধ চোখে চারপাশের দৃশ্য দেখছিল, আর অনন্যা নিজের ক্যামেরা দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত ধরে রাখার চেষ্টা করছিল। সৌরভ এবং তৃষা একে অপরের সঙ্গে হাসি-মজার মধ্যে লুকোচুরি খেলছিল, কিন্তু সবসময় চোখের কোণে সেই আলোতে ভরা শহরের সৌন্দর্যকেই ধরে রাখছিল। চারজনই জানত যে, এই শহরের রাত তাদের জীবনের এক বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। তারা শুধু শহরের সৌন্দর্যকেই উপভোগ করছে না, বরং সেই ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করতে চাইছিল। প্রতিটি পাথর, প্রতিটি গলি, প্রতিটি ভবন যেন তাদের আহ্বান জানাচ্ছিল—“আমার গল্প শুনতে চাও?”।
নদীর ধারে বসে তারা কিছুক্ষণ শান্তি উপভোগ করল। বাতাসে হালকা শীতলতার ছোঁয়া, দূর থেকে বাজতে থাকা ঢোল-সেতারের মৃদু সুর, এবং আলোয় ভেসে ওঠা প্রতিফলন—সবকিছুই তাদের মনে এক গভীর প্রশান্তি তৈরি করেছিল। ঋত্বিক ভাবছিল, কেমন আশ্চর্যজনকভাবে শহরটি রাতের আলোয় নতুন জীবন পেয়েছে। অনন্যা ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে সেই মুহূর্তগুলো ধরে রাখছিল, যেন কালো ছবিগুলোও আলোয় ভেসে ওঠে। সৌরভ এবং তৃষা একে অপরের সঙ্গে গল্প করছে, কিন্তু মাঝে মাঝে তারা থেমে দাঁড়িয়ে শহরের আলোর প্রতিফলন দেখছে, যেন কোনো অদৃশ্য জাদু তাদের চোখে ছড়াচ্ছে। চারজনের মনেই এক অভূতপূর্ব আনন্দ, এক ধরনের মায়াবী অনুভূতি তৈরি হয়, যা শুধু চোখে দেখা নয়, পুরো আত্মাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। শহরটির আলো, সুর, ইতিহাস আর মানুষের আনন্দ—সবকিছু মিলিয়ে এক চিরস্মরণীয় রাতের জন্ম দিয়েছিল। সেই রাত ছিল যেমন আনন্দের, তেমনি নতুন আবিষ্কারের, নতুন বন্ধুত্বের এবং নতুন স্মৃতির।
_
উৎসবের ভিড়ে শহরটি যেমন জমজমাট, তেমনি রহস্যময়ও ছিল। ঋত্বিক, অনন্যা, সৌরভ আর তৃষা চারজনই আনন্দের সঙ্গে নানান আলো এবং সাজ-সজ্জার দিকে চোখ রাখছিল। হঠাৎ তারা এক বৃদ্ধকে দেখতে পেল, যার চোখে অদ্ভুত এক চমক ছিল। তিনি কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন, “যদি সত্যিই চন্দননগরের আলো এবং ফরাসি ইতিহাসের আসল সৌন্দর্য দেখতে চাও, তবে তোমাদের অবশ্যই পুরনো ‘দ্য লামার প্রাসাদে’ যেতে হবে। এটি সাধারণ পর্যটকদের জন্য নয়, কিন্তু যারা ইতিহাস এবং গল্পের প্রেমিক, তাদের জন্য এটি এক অমূল্য অভিজ্ঞতা।” তার কণ্ঠস্বর যেন নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ল, এবং চারজনের কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। প্রাসাদের নাম শুনেই মনে হলো—কী রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে, আর কী অচেনা গল্প তাদের অপেক্ষা করছে।
ভিড়ের মধ্য দিয়ে তারা প্রাসাদের দিকে এগোতে থাকল। রাস্তার উভয় পাশে সাজানো আলো এবং উৎসবমুখর মানুষদের ভিড়ে তাদের পা যেন থেমে থেমে এগোচ্ছিল। চারজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “এভাবে কোনও পুরনো প্রাসাদে যাওয়া কি সহজ হবে?” কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর যেন বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে গেল। ধীরে ধীরে প্রাসাদের প্রাচীরগুলো দৃশ্যমান হতে শুরু করল—পুরনো ইট, ফরাসি স্থাপত্যের ছাঁচাকৃতি জানালা, আর ভাঙা সিঁড়ির ধ্বংসাবশেষ। এগুলো দেখে মনে হচ্ছিল প্রাসাদটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। প্রবেশের পথটা তেমন প্রশস্ত নয়, কিন্তু চারজনের মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা জন্ম নিল। তারা জানত, এখানে ভেতরে এক অচেনা জগত তাদের অপেক্ষা করছে, যেখানে ইতিহাস, রহস্য এবং নতুন অভিজ্ঞতা মিলেমিশে তাদের মুগ্ধ করবে।
প্রাসাদের দরজা খুলতেই ভেতরের অদ্ভুত পরিবেশ তাদের ছাপিয়ে গেল। ধুলোময় বাতাসে পুরনো কাঠের গন্ধ, ভাঙা জানালার রঙের ফাটল, আর দেওয়ালে লুকানো নকশা—সবকিছুই যেন তাদেরকে ইতিহাসের মধ্যে প্রবেশ করাচ্ছিল। ঋত্বিক ধীরে ধীরে সামনে এগোচ্ছিল, অনন্যা ক্যামেরা হাতে প্রতিটি কোণ ধরে রাখছিল, আর সৌরভ ও তৃষা একে অপরের হাতে হাত রেখে ভেতরের রহস্য অনুভব করছিল। হঠাৎ ভেতরের অন্ধকার থেকে এক হালকা আলো ফুটতে লাগল, এবং সেই আলো যেন তাদেরকে প্রাসাদের গভীরতম কক্ষে ডেকে নিয়ে যাচ্ছিল। চারজনের মনে এক অদ্ভুত ভয় এবং উত্তেজনার মিশ্র অনুভূতি জন্ম নিল। এই প্রাসাদ শুধু দেখার জন্য নয়, বরং অনুভব করার জন্য ছিল। পুরনো দেয়াল, ভাঙা সিঁড়ি, এবং নিঃশব্দ পরিবেশ—সবকিছু তাদের মনে এক নতুন গল্পের সূচনা করল, যা তাদের জীবনেও এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে বিরাজ করবে।
_
প্রাসাদের বাইরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে চারজন ভ্রমণকারীর চোখে এক অদ্ভুত বিস্ময় ফুটে উঠল। বাইরের অংশটা ভাঙাচোরা, ছাদের কিছু অংশ মাটি খসে পড়েছে, আর প্রাচীরের রঙ ঝাপসা হয়ে গেছে, কিন্তু ভেতরে চোখে পড়া আলো যেন এক রহস্যময় জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ভাঙা জানালা এবং ফাটল ঢাকা দেওয়ালের মধ্যে থেকে হালকা ঝলমল করে আলো ফুটছিল, যা মনে করাচ্ছিল—যে কেউ এখনও এখানে বাস করছে। এই অদ্ভুত দৃষ্টিকোণ তাদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিল। ঋত্বিক দরজার দিকে এগোল, ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে পুরনো লোহার দড়ি এবং কাঠের হ্যান্ডেলটি ধরল। অনন্যা, সৌরভ এবং তৃষা তার পেছনে দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢুকার মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা জানত, একবার দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আর পিছনে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না, কারণ ভেতরের জগৎ পুরোপুরি আলাদা এক রহস্য নিয়ে তাদেরকে ঘিরে ফেলবে।
দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ধুলো আর পুরনো কাঠের গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। বাতাসে মিশে থাকা সেই সুবাস যেন তাদেরকে প্রাচ্যের ইতিহাসের গভীরে নিয়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে ভেতরের অন্ধকারের মধ্যে আলো ফুটতে শুরু করল, যা প্রাচীন চিত্রকর্ম, ভাঙা আসবাবপত্র এবং মৃদু ঝুলন্ত বাতির প্রতিফলনকে জীবন্ত করে তুলছিল। প্রতিটি ধাপের সঙ্গে ভিজে থাকা ধুলোর আভা আর হালকা শব্দ যেন তাদের মনে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ জাগাচ্ছিল। সৌরভ ধীরভাবে বলল, “এভাবে মনে হচ্ছে কেউ সত্যিই এখানে আছে,” আর তৃষা এক ধরনের ভয় এবং উত্তেজনার মিশ্র অনুভূতি নিয়ে মাথা নাড়ল। অনন্যা ক্যামেরা হাতে প্রতিটি আলোয় ভেসে ওঠা কোণ ধরে রাখছিল, যেন ইতিহাসের প্রতিটি ছোঁয়া চিরকাল ধরে রাখা যায়। চারজনই অনুভব করছিল, এই প্রাসাদ শুধু পুরনো কাঠ এবং ইটের তৈরি নয়, বরং এক অদৃশ্য আত্মার আবাসস্থল, যা তাদের কৌতূহলকে আরও জাগিয়ে তুলছে।
তাদের ধাপ এগোবার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের রহস্য আরও স্পষ্ট হতে থাকল। প্রাসাদের করিডোরগুলো সরু এবং টানটান, দেওয়ালের প্রাচীন নকশাগুলো ধুলোমাখা হলেও আলোতে ঝলমল করছে। হঠাৎ একটি হালকা ঝাঁকুনিতে বাতাস বইতে লাগল, যা একটি ভাঙা জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছিল। ধীরে ধীরে চারজন ভ্রমণকারী বুঝতে পারল, যে প্রাসাদের প্রতিটি কক্ষ, প্রতিটি কর্নার তাদেরকে একটি নতুন গল্পের দিকে ডাকছে। তারা শুধু দেখতে আসে নি, বরং সেই ইতিহাস এবং অচেনা অন্দরের গল্পের সাথে সংযুক্ত হতে এসেছে। ভাঙা দরজা, ধুলো, আলো এবং হালকা বাতাস—সবকিছু মিলিয়ে যেন তাদের মনে এক নতুন রহস্যের সূচনা ঘটাচ্ছিল। সেই রাতটি ছিল শুধু একটি ভ্রমণ নয়, বরং এক গভীর অনুসন্ধান, যেখানে তারা প্রাচ্যের ছায়া, রহস্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ অনুভব করল।
_
প্রাসাদের ভেতরের করিডোরে তারা যত এগোচ্ছে, ভীতির অনুভূতিটা তত ঘন হয়ে উঠছিল। দেওয়ালে টাঙানো প্রতিকৃতি আর মোমবাতির আলোয় ঝলমল করা সোনালি আয়না চারপাশকে এক অদ্ভুত, রহস্যময় পরিবেশে রূপান্তরিত করছিল। প্রতিটি প্রতিকৃতি যেন তাদের দিকে সরাসরি চোখ রাখছে, আর প্রতিটি রেখা, রঙ, আর ছায়া যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। অনন্যা ধীরে ধীরে একটি বড় আয়নার দিকে এগোল। আয়নার মধ্যে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে সে লক্ষ্য করল—কিছু অদ্ভুত। আয়নার আভা যেন ধীরে ধীরে সরাসরি চারপাশের আলোকে খেয়ে নিচ্ছিল, আর হঠাৎই সৌরভ চোখে পড়ল আয়নার ভেতরে।
সৌরভ চোখ জোড় করে দেখল, আর তার হৃদস্পন্দন দ্রুত বেড়ে গেল—আয়নার ভেতরে ফরাসি পোশাক পরা সৈন্যদের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। তারা ধীরে ধীরে হাঁটছে, কিন্তু ভেতরের বাতাসের নীরবতা তাদের চলাফেরিকে আরও ভীতিকর করে তুলছে। প্রতিটি সৈন্যের মুখ, তাদের পোশাকের নিখুঁত সেলাই, তলোয়ার ও বন্দুক—সবকিছুই এত বাস্তব যে মনে হচ্ছিল তারা যেকোনো মুহূর্তে প্রাসাদের করিডোরে প্রবেশ করতে পারে। সৈন্যদের পদক্ষেপের শব্দ শোনা গেল না, কিন্তু তাদের উপস্থিতি এতই দৃঢ় যে চারজনের মন অজান্তেই স্থবির হয়ে গেল। ধীরে ধীরে প্রতিচ্ছবিগুলো মিলিয়ে যেতে লাগল, যেন আভাসটা কেবল কিছু মুহূর্তের জন্যই দেখা গেছে, তবে সেই মুহূর্তেই ভয়ে চারজনের শরীরে কাঁপুনি নেমে এলো।
ঋত্বিক, অনন্যা, সৌরভ এবং তৃষা একে অপরের দিকে তাকাল। তাদের চোখে ভয়, বিস্ময় এবং এক ধরনের অবর্ণনীয় উত্তেজনা সব মিশে গিয়েছিল। কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না; শুধু চোখের ভাষায় তারা অনুভব করছিল—এখানে সাধারণ ইতিহাসের চেয়ে গভীর, রহস্যময় এক শক্তি বিরাজ করছে। আয়নার সোনালি আভা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যেতে লাগল, আর দেওয়ালের প্রতিকৃতিগুলো যেন তাদের চোখের সামনে নীরবভাবে শ্বাস ফেলছিল। চারজন ভ্রমণকারী বুঝতে পারল, যে প্রাচ্যের এই প্রাসাদ শুধু প্রাচীন স্থাপত্য নয়, বরং অতীতের স্মৃতি, রহস্য এবং অদৃশ্য শক্তির এক অব্যক্ত কাহিনী ধরে রেখেছে। সেই রাতটি তাদের মনে ভয়ের পাশাপাশি এক ধরনের বিস্ময়কর আবিষ্কার এনে দিল—যেন ইতিহাস এবং বর্তমান মিলেমিশে এক অদ্ভুত আভা তৈরি করছে, যা শুধু চোখে নয়, পুরো আত্মাকে স্পর্শ করছে।
_
প্রাসাদের করিডোরের ধুলো জমা কোণে অনন্যা একটি পুরনো কাঠের বাক্স দেখতে পায়। বাক্সটি এতটাই প্রাচীন যে স্পর্শ করলেই যেন কবে থেকে এখানে রাখা হয়েছিল, তার নিঃশব্দ ইতিহাস প্রকাশ পায়। অনন্যা ধীরে ধীরে বাক্সের ঢাকনা খুলল, আর তার চোখে পড়ল ভিজে, হলদেটে কাগজ। সেই দলিলের ঘ্রাণ, পুরনো কালি আর সময়ের ছাপ—সবকিছুই ইতিহাসের গভীরতার সাক্ষ্য দিচ্ছিল। সে ধীরে ধীরে দলিলটি উল্টে দেখতে লাগল, আর প্রথম লাইনগুলো পড়তে শুরু করল। ধীরে ধীরে চারজনের মন আগ্রহ ও উত্তেজনায় ভরে উঠল, কারণ এই দলিল যেন শুধু একটি গল্প নয়, বরং প্রাসাদের গোপন ইতিহাসের চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
দলিলের পৃষ্ঠাগুলোতে লেখা ছিল, ১৭৫৭ সালের পর একদল ফরাসি সৈন্য এক রাতে হঠাৎই হারিয়ে যায়। তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি, আর স্থানীয় লোকদের বিশ্বাস ছিল, তারা প্রাসাদের ভেতরে আটকে গেছে কোনো অভিশাপে। প্রতিটি শব্দ যেন বাতাসে ভেসে গেল, আর চারজন ভ্রমণকারীর হৃদয় কাঁপতে লাগল। ঋত্বিক ধীরে ধীরে বলল, “এটা কি বাস্তব হতে পারে? আমরা কি সত্যিই এমন কোনো প্রাচীন অভিশাপের মধ্যে ঢুকেছি?” সৌরভ ও তৃষা একে অপরের দিকে তাকাল, চোখে ভয় আর কৌতূহলের মিশ্র অনুভূতি। অনন্যা আরও গভীরে পড়ল, আর লক্ষ্য করল যে দলিলের প্রতিটি বাক্য প্রাসাদের করিডোর, ঘর এবং বাতাসের সঙ্গে এক অদ্ভুত সামঞ্জস্য তৈরি করছে। যেন প্রাসাদ নিজেই সেই অতীত ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও গল্প বলছে।
দলিলের প্রতিটি লাইন তাদের মনে এক ধরনের অদ্ভুত উত্তেজনা এবং ভয় জাগাচ্ছিল। ইতিহাসের নিঃশব্দ নিদর্শন, ধুলো জমা আসবাবপত্র এবং হালকা বাতাস—সবকিছু মিলিয়ে যেন একটি অদৃশ্য শক্তি তাদের চারপাশে ঘিরে ফেলেছিল। তারা বুঝতে পারল, যে প্রাসাদ শুধু পুরনো কাঠ ও ইটের গঠন নয়, বরং অতীতের স্মৃতি, অভিশপ্ত গল্প এবং অদৃশ্য ঘটনার এক সংমিশ্রণ। চারজন ভ্রমণকারী ধীরে ধীরে উপলব্ধি করল, এই প্রাসাদে তাদের যাত্রা এক সাধারণ পর্যটন নয়, বরং ইতিহাস এবং রহস্যের এক গভীর অনুসন্ধান। দলিলটি কেবল একটি তথ্যের উৎস ছিল না; এটি তাদেরকে প্রাচ্যের রহস্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল, যেখানে অতীতের সৈন্যরা আজও এক ধরনের ছায়ার মতো উপস্থিত, এবং তাদের হারিয়ে যাওয়া গল্পের চাবিকাঠি ছিল এই গোপন দলিলে।
_
প্রাসাদের ভেতরের করিডোরগুলোতে ধীরে ধীরে অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসতে শুরু করল। শুরুটা খুব সূক্ষ্ম, এমনকি কেউ হয়তো তা সহজেই উপেক্ষা করতে পারত—এক ধরনের তূরীর শ্বাসের মতো শব্দ, যা দূরের কোণ থেকে আসছে। তারপর সঙ্গে সঙ্গে বুটের ধাক্কা ভেসে আসতে লাগল, যেন কেউ করিডোরের পুরনো পাথর পেরিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। চারজন ভ্রমণকারীর মন আগ্রহ এবং ভয়ের মিশ্র অনুভূতিতে কাঁপতে লাগল। সৌরভ সামান্য পিছনে সরে দাঁড়াল, তৃষা অনন্যার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইছিল, আর অনন্যা ক্যামেরা ধরে আতঙ্কিত চেহারায় সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিল। ঋত্বিক, সাহসের সঙ্গে, করিডোরের দিকে এগোতে লাগল। ধীরে ধীরে তার প্রতিটি পা যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, এবং প্রতিটি পদক্ষেপ তাকে অতীতের সেই ভয়ঙ্কর রাতের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলছিল।
দেওয়ালগুলোতে আচমকা অস্পষ্ট সুর ভেসে আসতে লাগল। ফরাসি ভাষার শব্দগুলো স্পষ্ট নয়, কিন্তু সুরের ছন্দ এতটাই প্রাঞ্জল যে মনে হচ্ছিল—কেউ এখনও লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শব্দগুলো শুধু শোনা যাচ্ছে না, বরং তাদের চারপাশে ঘিরে ফেলছে, যেন প্রাসাদ জীবন্ত। ঋত্বিক ধীরে ধীরে শব্দের উৎস খুঁজতে করিডোরের একটি কর্ণার ঘেঁষে এগোল। আর ঠিক সে মুহূর্তে, মোমবাতির নরম আলোতে তার চোখে কিছু অদ্ভুত প্রতিবিম্ব পড়ল—দেয়ালের প্রতিটি প্রাচীর যেন নীরবভাবে তার পদক্ষেপের সাথে সাড়া দিচ্ছিল, আর প্রতিটি ছায়া যেন অতীতের সৈন্যদের এক অদৃশ্য দল তৈরি করেছিল। সৌরভ, তৃষা এবং অনন্যা, সবাই মিলিতভাবে দেখছিল, এবং বুঝতে পারছিল যে শব্দগুলো কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং প্রাসাদের রক্তমাখা অতীতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রতিটি মুহূর্তে ভয় এবং উত্তেজনা একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। শব্দের লয়, ধাক্কাধাক্কির রূপ, এবং দেওয়ালের অদ্ভুত প্রতিফলন—সবকিছুই চারজনকে এক ধরনের অদ্ভুত আতঙ্কে আবদ্ধ করেছিল। ঋত্বিক সাহস ধরে এগোতে থাকল, আর প্রতিটি পদক্ষেপ তাকে অতীতের সেই রাতের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলল, যেখানে ফরাসি সৈন্যরা তাদের শেষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অনন্যা ক্যামেরার লেন্সের মধ্য দিয়ে সবকিছু রেকর্ড করছিল, কিন্তু প্রতিটি শব্দ যেন তার হৃদয়কেও ছুঁয়ে যাচ্ছিল। সৌরভ এবং তৃষা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে পারছিল না; শুধু চোখের মাধ্যমে ভয়ের আভাস প্রকাশ করছিল। করিডোরের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি প্রতিচ্ছবি, প্রতিটি শব্দ—সবকিছু মিলিয়ে একটি এমন রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করছিল, যেখানে অতীত এবং বর্তমান মিলেমিশে এক অভূতপূর্ব বাস্তবতার জন্ম দিচ্ছিল। তারা বুঝতে পারল, এই প্রাসাদ কেবল পুরনো কাঠ এবং ইটের তৈরি নয়; বরং এটি একটি জীবন্ত ইতিহাস, যেখানে অদৃশ্য সৈন্যরা আজও তাদের অস্তিত্বের ছায়া ফেলে চলেছে, আর প্রতিটি শব্দ তাদের উপস্থিতির সাক্ষ্য দিচ্ছিল।
_
প্রাসাদের অন্ধকার করিডোরে হঠাৎ তৃষার হাতে থাকা লণ্ঠনটি জ্বলে উঠল। তার নরম হলুদ আলো ধীরে ধীরে চারপাশের দেয়াল, ভাঙা আসবাবপত্র, আর পুরনো চিত্রকর্মকে উজ্জ্বল করে তুলল। চারজন ভ্রমণকারী এক মুহূর্তের জন্য স্থবির হয়ে দাঁড়াল, কারণ তাদের চোখের সামনে প্রাচ্যের ইতিহাস যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। লণ্ঠনের আলোয় ফরাসি সৈন্যদের ছায়া প্রতিফলিত হতে লাগল—তাদের পোশাক, তলোয়ার, আর ধীর পদক্ষেপের প্রতিচ্ছবি যেন বাতাসে নাচছে। প্রতিটি ছায়া তাদের দিকে তাকাচ্ছিল, যেন বন্দি হয়ে থেকে মুক্তির অপেক্ষা করছে। ঋত্বিক ধীরে ধীরে এগোল, আর অনুভব করল যে এই আলো শুধু প্রাসাদের ভেতরের বস্তুগুলোকে নয়, বরং অতীতের স্মৃতি এবং ইতিহাসের অদৃশ্য স্তরকেও প্রকাশ করছে। অনন্যা ক্যামেরা ধরে সেই রহস্যময় মুহূর্তগুলো বন্দী করার চেষ্টা করল, কিন্তু প্রতিটি ফ্রেম যেন তাদের চোখের সামনে আরও গভীর রহস্য উদঘাটন করে।
ছায়াগুলো শুধু ভেসে থাকল না, বরং করিডোরের প্রতিটি কোণ, দেয়ালের প্রতিটি ফাটল, এবং ধুলোমাখা কাঠের মধ্যে তারা নিজেদের উপস্থিতি স্পষ্ট করে তুলল। সৌরভ এবং তৃষা একে অপরের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভয়ের অনুভূতি মিশিয়ে উত্তেজনা অনুভব করছিল। প্রতিটি ছায়া যেন তাদের সঙ্গে কথা বলছে, অতীতের এক ভয়ঙ্কর গল্প শোনাচ্ছে। প্রতিটি পদক্ষেপে তারা শুনতে পেলো হালকা ধাক্কা এবং ধ্বনিত তলোয়ারের প্রতিধ্বনি, যা চারপাশের নীরবতাকে আরও রহস্যময় করে তুলছিল। তৃষার হাতের লণ্ঠনের আলো ফ্লিকার করছিল, আর প্রতিটি ঝলক তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে, প্রাসাদে শুধু ইতিহাসই নয়, বরং এক অদৃশ্য শক্তি তাদের চারপাশে ছায়ার আকারে বিরাজ করছে।
হঠাৎই লণ্ঠনের আলো নিভে গেল। মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে নিখাদ অন্ধকার নেমে এলো। ভয় এবং উত্তেজনার সংমিশ্রণ চারজনকে স্থবির করে দিল। অন্ধকারে তারা আর একে অপরকে স্পষ্টভাবে দেখতে পারছিল না, শুধু হালকা শব্দ এবং ছায়ার অবশিষ্ট আভা তাদের মনকে ভয়ঙ্কর ভাবাচ্ছিল। প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি ধাপ যেন আরও বড় রহস্যের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তারা বুঝতে পারল, আলো আর ছায়ার এই খেলা শুধুমাত্র ভ্রমণ বা ইতিহাসের অভিজ্ঞতা নয়; এটি তাদের প্রত্যেককে এক অদৃশ্য বাস্তবতার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিচ্ছিল। চারপাশের অন্ধকারে যেন প্রাসাদের অতীত এবং বর্তমান মিলেমিশে এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে মুক্তি পাওয়া ছায়া, অভিশপ্ত সৈন্য এবং তাদের নিজস্ব ভয়— সব মিলিত হয়ে এক গভীর রহস্যময়তার জন্ম দিচ্ছিল।
_
ভোরের প্রথম কিরণ প্রাসাদের ভেতরে ঢুকে পড়ল, আর ধীরে ধীরে করিডোরগুলোতে হালকা সোনালি আলো ছড়িয়ে গেল। এই আলো যেন রাতের সমস্ত অন্ধকারকে সরিয়ে দিচ্ছিল, কিন্তু সেই সাথে অতীতের ছায়া, সৈন্যদের প্রতিচ্ছবি, এবং রহস্যময় শব্দের স্মৃতি তাদের মনে এখনও জীবন্ত হয়ে ছিল। হঠাৎ প্রাসাদের প্রধান দরজা নিজে থেকে ধীরে ধীরে খুলে গেল, যেন কেউ তাদের জন্য পথ তৈরি করছে। চারজন ভ্রমণকারী—ঋত্বিক, অনন্যা, সৌরভ এবং তৃষা—একসাথে ধীরে ধীরে বাইরে এগোল। ধুলোমাখা করিডোর আর ধ্বংসপ্রাপ্ত আসবাবপত্রের মধ্যে তারা যেন এক অদ্ভুত নীরবতার সাক্ষী হয়ে উঠল। ভোরের আলোয় প্রতিটি ছায়া ক্ষীণ হয়ে গেল, আর প্রাচ্যের সেই অতীত কাহিনী মুহূর্তের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
প্রাসাদের বাইরে এসে তারা নদীর ধারে দাঁড়াল, যেখানে উৎসবের শেষ আলো এখনো ঝলমল করছে। বাতাসে হালকা শীতলতার ছোঁয়া, আর নদীর জলরাশির সঙ্গে মিশে থাকা আলোর প্রতিফলন তাদের মনে এক গভীর প্রশান্তি এবং বিস্ময় সৃষ্টি করল। চারজন ভ্রমণকারী বুঝতে পারল যে, প্রাসাদে তারা যা দেখেছে, তা শুধুই শারীরিক নয়; বরং এক ধরনের অদৃশ্য ইতিহাসের অভিজ্ঞতা, যা কেবল সাহসী চোখের জন্যই প্রকাশ পায়। তারা লক্ষ্য করল—যেমন উৎসবের আলো নদীর জলে প্রতিফলিত হচ্ছে, তেমনি অতীতের ঘটনা, সৈন্যদের ছায়া, এবং ইতিহাসের নিঃশব্দ কাহিনীও যেন প্রাসাদের ভেতরে আজও জীবন্ত। তারা বুঝতে পারল যে চন্দননগরের আলো উৎসব শুধুমাত্র সাজসজ্জা নয়, বরং অতীতের ইতিহাস এবং অদৃশ্য ঘটনার প্রতিধ্বনি, যা যারা খুঁজে বেড়ায়, তাদের জন্য এক অদ্ভুত শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা।
প্রতিটি ভ্রমণকারী তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। ঋত্বিক ভাবছিল, কীভাবে ইতিহাস এবং আধুনিকতার এই মিলন তাদের চোখে এমন রহস্যময় দৃশ্য তুলে ধরল। অনন্যা ক্যামেরার লেন্সে সেই মুহূর্তগুলো ধরলেও বুঝতে পারছিল যে, কিছু জিনিস ছবিতে বন্দী হয় না—যেমন ভয়, বিস্ময়, এবং অতীতের এক অদৃশ্য উপস্থিতি। সৌরভ এবং তৃষা একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হেসে নিল, যেন তারা এক গোপন রহস্যের সাক্ষী হয়ে জীবনভর সেই স্মৃতি বহন করবে। নদীর ধারের আলোকিত রূপ, প্রাসাদের নিঃশব্দ অতীত, আর চারজনের মনে তৈরি সেই অদ্ভুত রহস্য—সবকিছু মিলিয়ে তাদের মনে এক গভীর উপলব্ধি এনে দিল। চন্দননগরের আলো উৎসব শুধু চোখকে আনন্দ দেয় না; বরং এটি অতীত, বর্তমান, এবং অদৃশ্য ইতিহাসের এক অপূর্ব মিলন, যা মন এবং আত্মাকে ছুঁয়ে যায়, এবং তাদের মনে এক অমীমাংসিত রহস্য রেখে যায়—যা হয়তো কখনো পুরোপুরি সমাধান হবে না।
_
ভোরের প্রথম কিরণ প্রাসাদের ভেতরে ঢুকে পড়ল, আর ধীরে ধীরে করিডোরগুলোতে হালকা সোনালি আলো ছড়িয়ে গেল। এই আলো যেন রাতের সমস্ত অন্ধকারকে সরিয়ে দিচ্ছিল, কিন্তু সেই সাথে অতীতের ছায়া, সৈন্যদের প্রতিচ্ছবি, এবং রহস্যময় শব্দের স্মৃতি তাদের মনে এখনও জীবন্ত হয়ে ছিল। হঠাৎ প্রাসাদের প্রধান দরজা নিজে থেকে ধীরে ধীরে খুলে গেল, যেন কেউ তাদের জন্য পথ তৈরি করছে। চারজন ভ্রমণকারী—ঋত্বিক, অনন্যা, সৌরভ এবং তৃষা—একসাথে ধীরে ধীরে বাইরে এগোল। ধুলোমাখা করিডোর আর ধ্বংসপ্রাপ্ত আসবাবপত্রের মধ্যে তারা যেন এক অদ্ভুত নীরবতার সাক্ষী হয়ে উঠল। ভোরের আলোয় প্রতিটি ছায়া ক্ষীণ হয়ে গেল, আর প্রাচ্যের সেই অতীত কাহিনী মুহূর্তের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
প্রাসাদের বাইরে এসে তারা নদীর ধারে দাঁড়াল, যেখানে উৎসবের শেষ আলো এখনো ঝলমল করছে। বাতাসে হালকা শীতলতার ছোঁয়া, আর নদীর জলরাশির সঙ্গে মিশে থাকা আলোর প্রতিফলন তাদের মনে এক গভীর প্রশান্তি এবং বিস্ময় সৃষ্টি করল। চারজন ভ্রমণকারী বুঝতে পারল যে, প্রাসাদে তারা যা দেখেছে, তা শুধুই শারীরিক নয়; বরং এক ধরনের অদৃশ্য ইতিহাসের অভিজ্ঞতা, যা কেবল সাহসী চোখের জন্যই প্রকাশ পায়। তারা লক্ষ্য করল—যেমন উৎসবের আলো নদীর জলে প্রতিফলিত হচ্ছে, তেমনি অতীতের ঘটনা, সৈন্যদের ছায়া, এবং ইতিহাসের নিঃশব্দ কাহিনীও যেন প্রাসাদের ভেতরে আজও জীবন্ত। তারা বুঝতে পারল যে চন্দননগরের আলো উৎসব শুধুমাত্র সাজসজ্জা নয়, বরং অতীতের ইতিহাস এবং অদৃশ্য ঘটনার প্রতিধ্বনি, যা যারা খুঁজে বেড়ায়, তাদের জন্য এক অদ্ভুত শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা।
প্রতিটি ভ্রমণকারী তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। ঋত্বিক ভাবছিল, কীভাবে ইতিহাস এবং আধুনিকতার এই মিলন তাদের চোখে এমন রহস্যময় দৃশ্য তুলে ধরল। অনন্যা ক্যামেরার লেন্সে সেই মুহূর্তগুলো ধরলেও বুঝতে পারছিল যে, কিছু জিনিস ছবিতে বন্দী হয় না—যেমন ভয়, বিস্ময়, এবং অতীতের এক অদৃশ্য উপস্থিতি। সৌরভ এবং তৃষা একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হেসে নিল, যেন তারা এক গোপন রহস্যের সাক্ষী হয়ে জীবনভর সেই স্মৃতি বহন করবে। নদীর ধারের আলোকিত রূপ, প্রাসাদের নিঃশব্দ অতীত, আর চারজনের মনে তৈরি সেই অদ্ভুত রহস্য—সবকিছু মিলিয়ে তাদের মনে এক গভীর উপলব্ধি এনে দিল। চন্দননগরের আলো উৎসব শুধু চোখকে আনন্দ দেয় না; বরং এটি অতীত, বর্তমান, এবং অদৃশ্য ইতিহাসের এক অপূর্ব মিলন, যা মন এবং আত্মাকে ছুঁয়ে যায়, এবং তাদের মনে এক অমীমাংসিত রহস্য রেখে যায়—যা হয়তো কখনো পুরোপুরি সমাধান হবে না।
___