Bangla - প্রেমের গল্প

অন্তরালে আগুন

Spread the love

সায়ন্তনী ধর


পর্ব ১: অচেনা স্পর্শ

কলকাতার ভিজে সন্ধ্যে। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ফ্ল্যাটের বারান্দা যেন একা বসে আছে। রিমঝিম ভেজা আলোয় স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে, হাতে এক কাপ কফি। তিরিশ পেরোনো এই নারী, সংসার আর অফিসের একঘেয়েমি পেরিয়ে আজ হঠাৎ যেন নিজের ভেতরেই অস্থিরতা টের পাচ্ছে। বিয়ের আট বছরের সম্পর্ক—অর্ণব, তার স্বামী, এখন প্রায় যন্ত্রের মতো। অফিস থেকে ফিরে শুধু ক্লান্ত শরীর আর একবিন্দু নিরুত্তাপ আলাপ। শারীরিক সম্পর্কও বহুদিন হয়ে উঠেছে দায়িত্বের মতো—যেন টিক চিহ্ন দিয়ে শেষ হওয়া কর্তব্য।

স্নিগ্ধা আয়নায় তাকায়। চোখের নিচে হালকা কালি, ঠোঁটে এক চাপা অভিমান। অথচ শরীর তার এখনো মায়াবী, নরম চামড়ার নিচে লুকোনো এক অদম্য কামনা যা কেউ ছুঁয়ে দেখেনি বহুদিন। সেই খিদেটাই আজ বৃষ্টির টান বাড়িয়ে দেয়।

এই সময়েই আসে ফোন কল। অপরিচিত নম্বর। কণ্ঠস্বর ভেসে আসে—“ম্যাডাম, আমি সৌরভ। আপনার অফিসের নতুন ক্লায়েন্ট। কালকের প্রেজেন্টেশনের ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাই।”

স্নিগ্ধা প্রথমে বিরক্ত হয়েছিল, এত রাতে এভাবে ফোন! কিন্তু কণ্ঠের ভেতর এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছিল, যেন কেউ তার ক্লান্ত শরীরের ওপর হাত রাখল। কথার ভেতরেই সৌরভের কণ্ঠ ধীরে ধীরে মিশে যায়, একটানা, মসৃণ, পুরুষালি। কথা শেষ হওয়ার পরও স্নিগ্ধা ফোন কানে ধরে থাকে, যেন সেই অচেনা মানুষটির নিঃশ্বাস শোনার জন্য।

পরদিন অফিসে দেখা হয়। সৌরভ বয়সে সামান্য ছোট—বত্রিশ কি তেত্রিশ হবে। গাঢ় নীল শার্ট, হালকা দাঁড়ি, চোখে একরকম চমক। প্রেজেন্টেশনের আড়ালে বারবার তার দৃষ্টি এসে পড়ে স্নিগ্ধার ঠোঁটের কোণে। স্নিগ্ধা গম্ভীর থাকার চেষ্টা করে, অথচ ভেতরে ভেতরে বুকের ভেতর শিরশিরে বিদ্যুৎ খেলে যায়।

লাঞ্চ ব্রেকের সময় ক্যান্টিনে দু’জন পাশাপাশি বসে। সৌরভ হঠাৎ বলে ওঠে—“আপনাকে দেখে মনে হয়, আপনি খুব ভেতরে ভেতরে চাপা আছেন। কিন্তু আপনার চোখে অন্যরকম কিছু কথা লুকিয়ে আছে।”

স্নিগ্ধা চমকে ওঠে। এত দ্রুত কে বুঝতে পারে তাকে? তার শরীরের গোপন ভাষা তো অর্ণব কোনোদিন পড়তে পারেনি। কথাগুলো শুনে ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত কাঁপুনি আসে।

বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টি নামে। অফিস থেকে ফেরার সময় লিফট নষ্ট, দু’জনকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়। ভিজে সিঁড়িঘরে আলো-অন্ধকার খেলছে। হঠাৎ স্নিগ্ধার হিল স্লিপ করে যায়। সে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল, সৌরভ তৎক্ষণাৎ হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে। শক্ত বাহুর মধ্যে সে মুহূর্তে স্নিগ্ধার শরীর কেঁপে ওঠে। বুকের ভেতর ঠাস করে ধাক্কা লাগে। সৌরভের আঙুল শক্ত করে চেপে ধরে তার কোমর। নিঃশ্বাসের মধ্যে ভিজে কফির গন্ধ মিশে আছে।

সেকেন্ড কয়েকের সেই থমকে থাকা সময় যেন সবকিছু গিলে নেয়। স্নিগ্ধা চোখ তুলে দেখে—সৌরভ তার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যা নগ্ন করে দেয় তাকে। যেন তার শাড়ির আঁচল, তার সামাজিক মুখোশ সব খসে পড়ছে।

অবশেষে সৌরভ আস্তে হাসে—“সাবধান, নাহলে ভিজে মাটিতে পড়ে গেলে উঠে দাঁড়ানো মুশকিল।”

স্নিগ্ধা কিছু বলে না। শুধু মনে মনে ভাবে—কেন এই অচেনা স্পর্শে তার শরীরের রক্ত এত তীব্র হয়ে উঠল? কেন সে চায় না এই হাত ছেড়ে দিক?

রাতের বেলা অর্ণব ফিরে আসে যথারীতি ক্লান্ত হয়ে। টেবিলে বসে খাবার খায়, তারপর টিভির সামনে শুয়ে পড়ে। স্নিগ্ধা শোবার ঘরে একা দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজের কাঁধ ছোঁয়। মনে হয়, এখনো যেন সৌরভের আঙুল সেখানে টাটকা আগুনের মতো লেগে আছে। চোখ বুজে ফেলে। মনে মনে ভাবে—“আমি কি তবে ভুল পথে হাঁটছি?”

কিন্তু বুকের ভেতর যে গোপন আগুন, তা এত সহজে নেভে না।

পর্ব ২: গোপন আলোর নিচে

সপ্তাহটা কেটে গেল নীরব টানাপোড়েনে। অফিসে কাজের অজুহাতে বারবার সৌরভ আর স্নিগ্ধা একে অপরের কাছাকাছি আসতে লাগল। চোখের আড়ালে কিন্তু অনুভবের সামনে—দু’জনের মধ্যেকার অদ্ভুত টান যেন প্রতিটি মূহূর্তকে আরও ভারী করে তুলছিল।

স্নিগ্ধা ভেতরে ভেতরে বুঝতে পারছিল, এ আকর্ষণকে সে চাইলেই ঠেকাতে পারবে না। একদিকে সংসার, অর্ণবের নির্লিপ্ততা—অন্যদিকে সৌরভের কণ্ঠে ও দৃষ্টিতে লুকানো একরকম অজানা প্রতিশ্রুতি। সে চুপচাপ খাতায় নোট নিচ্ছিল, অথচ মনে হচ্ছিল সৌরভের দৃষ্টি তার আঙুলের নখে এসে আটকে আছে।

একদিন বিকেলে, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল অফিসে। পুরো ফ্লোর অন্ধকার। জেনারেটর চালু হতে দেরি হচ্ছিল। স্নিগ্ধা ফাইল গোছাতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ তার কানে সৌরভের ফিসফিস—
“অন্ধকারে আপনি আরও সুন্দর লাগছেন জানেন?”

স্নিগ্ধা কেঁপে উঠল। সে বুঝতে পারল, তার পিঠের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে সৌরভ। নিঃশ্বাসের গরম হাওয়া তার কানের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। আলো জ্বলে উঠলেই সবকিছু বদলে যাবে, অথচ অন্ধকারে এই গোপন স্পর্শের ইঙ্গিত যেন নিষিদ্ধ স্বর্গের দরজার মতো।

সে সামান্য ঘুরে তাকাল। সৌরভের মুখ এতটা কাছে যে, হাত বাড়ালেই ঠোঁটে ছুঁয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু দুজনেই থেমে রইল, যেন ভয় পাচ্ছিল সেই সীমানা অতিক্রম করতে।

ঠিক তখনই আলো জ্বলে উঠল। কর্মীরা চিৎকার করে হাসতে লাগল, সবাই স্বাভাবিক কাজে ফিরে গেল। অথচ স্নিগ্ধার বুকের ভেতর আগুনের মতো দাউ দাউ করে উঠছিল অদেখা উত্তাপ।

পরদিন সৌরভ মেসেজ করল—
“আজ সন্ধ্যায় কফি? শুধু কাজের বাইরে একটু সময় চাই।”

স্নিগ্ধা প্রথমে দ্বিধা করল। মনে হল, এটা কি ঠিক হবে? কিন্তু বুকের ভেতরকার শূন্যতা তাকে ঠেলে দিল সেই অপরিচিত আলোয়। সে শুধু লিখল—“কোথায়?”

সন্ধ্যে সাতটায় তারা এল এক শান্ত ক্যাফেতে। কাচের জানলায় বৃষ্টির ছাপ, ভেতরে উষ্ণ আলো, কফির গন্ধে মিশে থাকা গোপন প্রতিশ্রুতি। সৌরভ বলল—“আপনার চোখে সবসময় একটা একাকীত্ব দেখি। আপনার স্বামী কি সেটা বোঝে?”

স্নিগ্ধা চুপ করে রইল। সে জানে, এই প্রশ্নটাই তার ভেতরের সত্যিকে জাগিয়ে তুলছে। সে ধীরে ধীরে বলল—“সবাই সব বোঝে না।”

সৌরভের আঙুল টেবিলের ওপরে এগিয়ে এল। হালকা করে ছুঁয়ে গেল তার আঙুল। সেই ছোট্ট স্পর্শেই স্নিগ্ধার পুরো শরীর কেঁপে উঠল। মনে হল, এতদিনের ঘুমন্ত স্রোত আবার জেগে উঠেছে।

কফি শেষ হওয়ার পর সৌরভ জিজ্ঞেস করল—“আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”
স্নিগ্ধা ঠোঁট চেপে বলল—“ভয় নয়… বরং নিজের ভেতরের আগুনকে স্বীকার করছি।”

ওই রাতটা স্নিগ্ধা ঘুমোতে পারল না। অর্ণব যথারীতি অফিস থেকে ফিরল, চুপচাপ ডিনার করে ঘুমিয়ে গেল। অথচ স্নিগ্ধা শুয়ে শুয়ে বারবার স্মরণ করছিল সৌরভের আঙুলের সেই নরম স্পর্শ। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন তার ভেতরে ঘুমন্ত কামনাকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তুলছে।

তিনদিন পর, সৌরভ আবার মেসেজ করল—“আমার একটা ফ্ল্যাট আছে শহরের বাইরে, শান্ত জায়গা। সেখানে গেলে হয়তো আমরা কথা শেষ করতে পারব।”

স্নিগ্ধা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ স্থির রইল। ভয় ছিল, অপরাধবোধ ছিল, কিন্তু তবুও বুকের ভেতর একটা তীব্র আকর্ষণ যেন ঠেলে দিচ্ছিল। অর্ণবকে বলল অফিসে দেরি হবে, আর নিজের ভেতরের নিষিদ্ধ পথে পা বাড়াল।

ফ্ল্যাটটা ছিল ছোট্ট কিন্তু নিঃশব্দ। বারান্দা থেকে দূরে আলো ঝলমলে শহর দেখা যাচ্ছিল। সৌরভ দরজা খুলে তাকে ভেতরে নিল। টেবিলে রাখা ছিল এক গ্লাস ওয়াইন, নরম আলোয় ভেসে আসছিল সঙ্গীত।

স্নিগ্ধার হাত কাঁপছিল। সে বলল—“আমরা কি ঠিক করছি?”

সৌরভ কাছে এসে ফিসফিস করল—“যা ঠিক নয়, সেটাই তো কখনো কখনো আমাদের সবচেয়ে সত্যি হয়ে ওঠে।”

তারপর সৌরভ ধীরে ধীরে স্নিগ্ধার মুখ ছুঁল। ঠোঁটের কোণে প্রথমে হালকা ছোঁয়া, তারপর গভীর চুম্বন। স্নিগ্ধা প্রথমে নিজেকে সামলাতে চেয়েছিল, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে শরীর আর মনের বাঁধন খুলে গেল। এতদিনের জমে থাকা কামনা, অদেখা শূন্যতা—সব একসাথে ঢেউ হয়ে ভেসে এলো।

তারা দুজনেই ডুবে গেল সেই চুম্বনের ভেতর। স্নিগ্ধার শাড়ির আঁচল পিছলে গেল মেঝেতে। সৌরভের হাত তার পিঠ বেয়ে নেমে গেল কোমর পর্যন্ত। নিঃশ্বাসগুলো একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। ঘর ভরে উঠল সেই চাপা গুঞ্জনে।

রাতের আকাশে চাঁদ মেঘের আড়ালে ঢেকে গেল। অথচ সেই ছোট্ট ঘরে, দুই মানুষের ভেতরে, আলো জ্বলে উঠল এক গোপন আগুনের।

পর্ব ৩: আগুনের ভিতরে

সেদিন রাতের পর থেকে স্নিগ্ধার জীবন যেন উল্টে গেল। অর্ণবের পাশে শুয়ে থাকলেও তার শরীর মনে হচ্ছিল অচেনা; যেন অন্য কারও ছায়া সেখানে এসে বসেছে। সৌরভের গন্ধ, তার স্পর্শ, ঠোঁটের আগুন—সব কিছুই যেন লেগে আছে স্নিগ্ধার চামড়ায়। ঘরে আলো নিভে গেলেও সে বারবার অনুভব করছিল, সৌরভের হাত তার পিঠ বেয়ে নেমে যাচ্ছে, তার নিঃশ্বাস গলাতে জমে আছে।

অর্ণব কিছুই বুঝতে পারছিল না। নিজের ক্লান্ত রুটিনে ডুবে সে আর স্নিগ্ধার দিকে তাকাতও না। তবু স্নিগ্ধা মাঝে মাঝে ভয় পেত—যদি কোনোদিন সত্যি প্রকাশ হয়ে যায়! যদি কারও চোখে ধরা পড়ে যায় সেই গোপন উন্মাদনা? কিন্তু ভয়টা যতই বাড়ছিল, তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল শরীরের তৃষ্ণা।

অফিসে দেখা হলেই তারা চোখে চোখ রাখত। সেখানে কোনো কথা থাকত না, শুধু অদৃশ্য আগুন। একদিন দুপুরে সৌরভ বলল—
“আজ রাতে আবার আসবেন?”

স্নিগ্ধা মুহূর্তে দ্বিধায় পড়ল। কিন্তু বুকের ভেতরের ঢেউ তাকে ঠেলে দিল সেই নিষিদ্ধ জলে। হ্যাঁ বলেই ফেলল।

রাত ন’টার পর স্নিগ্ধা আবার পৌঁছল সৌরভের ফ্ল্যাটে। বাইরে হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছিল। ঘরের ভেতর মৃদু আলো, মোমবাতির শিখায় দুলে উঠছিল ছায়া। সৌরভ দরজা খুলেই তাকে কাছে টেনে নিল। কোনো ভূমিকা নেই, কোনো প্রশ্ন নেই। সোজা ঠোঁটের ওপর দগ্ধ চুম্বন।

স্নিগ্ধার শরীর একেবারে শিথিল হয়ে গেল। তার শাড়ি খুলে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। সৌরভের আঙুল যেন প্রতিটি বাঁক ছুঁয়ে যাচ্ছিল এক আগ্রাসী অথচ মমতাময় স্পর্শে। তাদের দুজনের নিঃশ্বাস মিলেমিশে উঠছিল, বাইরে বৃষ্টির শব্দ যেন সংগীত হয়ে বাজছিল।

স্নিগ্ধা ভেতরে ভেতরে বুঝছিল, এতদিন সে যে শূন্যতার ভেতর দিয়ে চলছিল, তার সবটুকু এক মুহূর্তে ভরে যাচ্ছে। সৌরভের শরীরের উষ্ণতা যেন তার জমে থাকা শিরাগুলোতে আবার জীবন ঢেলে দিচ্ছে। প্রতিটি স্পর্শে, প্রতিটি চুম্বনে, তার আত্মা নতুন করে জন্ম নিচ্ছে।

ক্লান্তির মুহূর্তে তারা পাশাপাশি শুয়ে থাকল। স্নিগ্ধা ফিসফিস করে বলল—
“এটা কি ঠিক? আমি তো অন্য কারও স্ত্রী।”

সৌরভ হাসল, তার আঙুল চুলের মধ্যে বুলিয়ে দিল।
“ঠিক বা ভুল—এসব সমাজের কথা। আমরা যা বাঁচছি, সেটাই সত্যি।”

স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে রইল। সত্যিই, সমাজ, সংসার—সব যেন দূরের এক শব্দমাত্র। শরীরের গোপন ভাষা, কামনার জোয়ার—এই তো তার বর্তমান।

তবে ভোরবেলা ঘরে ফিরে আসার পর আবার সেই অপরাধবোধ তাকে গ্রাস করল। অর্ণব তখনও ঘুমাচ্ছিল। স্নিগ্ধা তাকিয়ে দেখল, স্বামী একেবারে শান্তভাবে শুয়ে আছে। তার ঠোঁটে কোনো উষ্ণতা নেই, তার শরীরে কোনো ডাক নেই। তবু এ মানুষটির সঙ্গেই তো তার এতদিনের জীবন।

এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব শুরু হল স্নিগ্ধার মধ্যে। দিনে সে সংসার চালাচ্ছে, রাতে সে দগ্ধ আগুনে জ্বলছে। মাঝেমাঝে মনে হচ্ছিল, সৌরভকে ছাড়া সে বাঁচবে না। আবার কখনো মনে হচ্ছিল, এই সম্পর্ক একদিন তাকে শেষ করে দেবে।

পরবর্তী দিনগুলোতে সৌরভ আর স্নিগ্ধার গোপন দেখা আরও ঘন হয়ে উঠল। অফিস থেকে বেরোনোর নাম করে তারা চলে যেত শহরের প্রান্তে সেই ছোট্ট ফ্ল্যাটে। সেখানে তারা যেন অন্য মানুষ হয়ে যেত—দুজনের শরীর মিলেমিশে একাকার, সেখানে কোনো দায় নেই, কোনো সম্পর্ক নেই।

এক রাতে, উত্তেজনার চূড়ান্তে পৌঁছে স্নিগ্ধা অনুভব করল, তার শরীরের প্রতিটি স্নায়ু ভেঙে পড়ছে আনন্দে। সে আঙুল দিয়ে আঁকড়ে ধরল সৌরভের কাঁধ। সেই মুহূর্তে যেন তার মনে হচ্ছিল—এটাই তার সত্যিকারের জীবন। সংসারের ঘেরাটোপে সে শুধু একটা ভূমিকা পালন করে, কিন্তু এখানে এসে সে নারী, সে কামনা, সে স্বাধীন আগুন।

কিন্তু আনন্দের পাশাপাশি ভয়ও জমতে শুরু করল। স্নিগ্ধা মাঝে মাঝে নিজের মোবাইলের মেসেজ মুছে ফেলত, যাতে অর্ণব না দেখে ফেলে। কারও চোখে যদি ধরা পড়ে যায়? যদি অফিসে কোনো সহকর্মী টের পায়?

একদিন সৌরভ বলল—“তুমি কি কখনো ভেবেছো, আমরা যদি একসাথে থাকি?”

স্নিগ্ধা চুপ করে গেল। একদিকে তার ভেতরের কামনা তাকে ঠেলে দিচ্ছিল সৌরভের দিকে, অন্যদিকে সংসারের বন্ধন তাকে আঁকড়ে ধরছিল। কিন্তু সে জানত, এ দ্বন্দ্ব বেশিদিন গোপন থাকবে না।

সেদিন রাতে শোবার আগে আয়নায় নিজেকে দেখল স্নিগ্ধা। চোখে ক্লান্তি, ঠোঁটে অদ্ভুত এক লাল আভা। তার শরীর যেন চুপ করে বলছে—“তুমি এখন অন্য এক জগতে পা রেখেছো। সেখান থেকে ফেরার পথ আর সহজ নয়।”

পর্ব ৪: ধরা পড়ার ভয়

সৌরভের ফ্ল্যাটে যাওয়া এখন স্নিগ্ধার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার ঢুকে পড়লে যেন আর বেরোনো যায় না। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ছোঁয়া তাকে উন্মাদ করে তোলে। অথচ সেই উন্মাদনার পরেই আসে অপরাধবোধের ঢেউ।

স্নিগ্ধা চেষ্টা করছিল সবকিছু স্বাভাবিক রাখার। অফিসে সৌরভের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখগুলোতে সে হাসি লুকোতে শিখেছিল। বাড়িতে অর্ণবের সামনে মুখে স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে শিখেছিল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রতিদিন ভয় জমছিল। যদি কোনোদিন অর্ণব তার মোবাইলের মেসেজ দেখে ফেলে? যদি অফিসে কেউ পিছন থেকে ছবি তুলে ফেলে?

একদিন এমনই ঘটল। বিকেলের দিকে সৌরভ হঠাৎ বলল—
“আজ অফিস শেষে ড্রাইভে বেরোবো? শহরের বাইরে একটু ফ্রেশ হাওয়া দরকার।”

স্নিগ্ধা ইতস্তত করল, তবু শেষমেশ রাজি হল। অফিস শেষে দু’জন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। জানলার বাইরে ঝকঝকে সন্ধ্যা, দূরে আলো ঝিলমিল। স্নিগ্ধার মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তটাই হয়তো সত্যি, বাকিটা সব মিথ্যে।

কিন্তু হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল অর্ণবের নাম। স্নিগ্ধা কেঁপে উঠল। সৌরভ স্টিয়ারিং সামলে তাকাল তার দিকে।
“রিসিভ করো, নয়তো সন্দেহ হবে।”

স্নিগ্ধা ফোন কানে ধরল। অর্ণবের কণ্ঠ ঠান্ডা—
“তুমি এখনও অফিসে? আমি শুনলাম তোমাদের ক্লায়েন্ট মিটিং শেষ হয়ে গেছে।”

স্নিগ্ধা হকচকিয়ে গেল। গলার ভেতর শুকিয়ে গেল যেন। সামলে নিয়ে বলল—
“হ্যাঁ, কিন্তু কিছু রিপোর্ট শেষ করতে হচ্ছে… তুমি ডিনার করে নিও।”

অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুধু বলল—“ঠিক আছে।”

ফোন কেটে দেওয়ার পর গাড়ির ভেতরে নিস্তব্ধতা নেমে এল। স্নিগ্ধা জানলার বাইরে তাকাল, অথচ তার বুকের ভেতর ঢাকের মতো বাজছিল আতঙ্ক।

সেদিন ফ্ল্যাটে গিয়েও সে নিজেকে পুরোপুরি ছাড়তে পারল না। সৌরভ বারবার চেষ্টা করছিল তাকে আগের মতো করে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু স্নিগ্ধা যেন টানাটানির মধ্যে আটকে যাচ্ছিল। শেষমেশ সৌরভ বলল—
“ভয় পাচ্ছো?”

স্নিগ্ধা চোখ বুজে মাথা নাড়ল।
“হ্যাঁ… যদি ধরা পড়ে যাই?”

সৌরভ তার মুখ দু’হাত দিয়ে ধরল।
“শোনো, ভয় পেলে হবে না। আমাদের যা আছে, সেটা সত্যি। আর সত্যি জিনিস কখনো লুকোনো যায় না।”

কথাগুলো সুন্দর, কিন্তু স্নিগ্ধা জানত—এই সত্যি সমাজ মেনে নেবে না। তার সংসার ভেঙে যাবে, তার জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।

পরের সপ্তাহে ঘটনা আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠল। অফিসে লাঞ্চের সময় সহকর্মী রিমি হঠাৎ বলল—
“স্নিগ্ধা, তোমাকে গত শুক্রবার কোথাও দেখেছিলাম মনে হয়। একজনের সঙ্গে গাড়িতে… তোমরা কি ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে যাচ্ছিলে?”

স্নিগ্ধা হকচকিয়ে গেল। কপালে ঘাম জমে উঠল। কোনোভাবে হেসে উড়িয়ে দিল—
“আরে, হয়তো ভুল দেখেছো।”

কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে বুঝল, আগুনে খেলা এত সহজ নয়। ছোট্ট একটা ভুল, আর সব ফাঁস হয়ে যাবে।

তবু আশ্চর্য ব্যাপার, ভয় যতই বাড়ছিল, সৌরভের টান ততই তীব্র হচ্ছিল। একদিন রাতে ফ্ল্যাটে তারা দেখা করল। বাইরে বজ্রপাত হচ্ছিল, ভেতরে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে মিশছিল কামনা। সেই মুহূর্তে স্নিগ্ধা সব ভয় ভুলে যাচ্ছিল। তার শরীর আগুনে ভরে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল পৃথিবী যদি এখন ভেঙে পড়ে তাও সে নির্ভীক থাকবে।

কিন্তু পরের দিন সকালে আবার যখন আয়নায় তাকাল, চোখে যেন দোষের ছায়া ফুটে উঠেছিল।

স্নিগ্ধা নিজেকে প্রশ্ন করল—
“আমি কি শুধু শরীরের জন্যই এতদূর চলে যাচ্ছি? নাকি সত্যিই প্রেমে পড়েছি?”

প্রেম আর কামনার সীমানা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। সৌরভের বাহুতে সে যে মুক্তি খুঁজে পাচ্ছিল, সেটা কি প্রেম, নাকি কেবল নিঃশেষিত কামনার তৃষ্ণা?

এই প্রশ্নের উত্তর তখনও সে খুঁজে পায়নি। কিন্তু সে জানত, ধরা পড়ার ভয় একদিন বাস্তব হয়ে উঠবে। আর সেই দিন হয়তো তার সবকিছু ভেঙে দেবে।

পর্ব ৫: প্রেম না কামনা

স্নিগ্ধার দিনগুলো এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে—একটা সংসার, যেখানে সে নিঃশব্দে অর্ণবের জন্য রান্না করে, তার জামা-কাপড় গুছিয়ে দেয়, অফিস থেকে ফিরলে এক কাপ চা হাতে দেয়; আরেকটা পৃথিবী, যেখানে সে সৌরভের বুকে মুখ গুঁজে উন্মাদনার স্রোতে ভেসে যায়। এই দ্বৈত জীবনে সে বুঝতে পারছিল না, সে আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।

অর্ণবের সঙ্গে সম্পর্ক এখন নিছক যান্ত্রিক। অর্ণব হয়তো কোনোদিন টেরও পাবে না, তার স্ত্রী অন্য কারও বাহুতে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ স্নিগ্ধা মাঝে মাঝে নিজেকেই প্রশ্ন করত—এটা কি কেবল শরীরের ক্ষুধা? নাকি তার ভেতরের ভালোবাসার তৃষ্ণা, যা অর্ণব কোনোদিন মেটাতে পারেনি?

একদিন রাতে সৌরভের ফ্ল্যাটে বসে সে বলল—
“তুমি কি ভাবো, আমরা প্রেম করছি? নাকি শুধু কামনার নেশায় ভেসে যাচ্ছি?”

সৌরভ জানলার বাইরে তাকিয়ে ছিল। মৃদু আলোয় তার মুখে ছায়া পড়েছিল।
“প্রেম আর কামনার মধ্যে সীমানা কোথায়? আমি জানি না। আমি শুধু জানি, তোমাকে ছাড়া এখন আমার এক মুহূর্তও চলে না।”

স্নিগ্ধা চুপ করে রইল। সত্যিই তো—প্রেম কি শুধু হাত ধরা আর কবিতা লেখা? নাকি শরীরের গভীরতম টানও প্রেমেরই অংশ?

ওই রাতটা তারা একেবারে ভিন্নভাবে কাটাল। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, কোনো অস্থিরতা নেই। ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে, তারা যেন একে অপরকে নতুন করে আবিষ্কার করল। স্নিগ্ধার মনে হচ্ছিল, সে শুধু শরীর নয়, নিজের অন্তরও উজাড় করে দিচ্ছে সৌরভের কাছে। তার চুলে আঙুল বুলিয়ে সে বলল—
“তুমি যদি কোনোদিন আমাকে ছেড়ে চলে যাও, আমি বাঁচব না।”

সৌরভ তার ঠোঁটে আঙুল রেখে ফিসফিস করল—
“আমি কোথাও যাব না। তুমি এখন আমার রক্তে মিশে গেছো।”

কথাগুলো শুনে স্নিগ্ধার বুক কেঁপে উঠল। কিন্তু পরের দিন সকালে ঘরে ফিরে আবার বাস্তব তাকে আঘাত করল। অর্ণব তখন খবরের কাগজ পড়ছিল। চায়ের কাপটা এগিয়ে দেওয়ার সময় অর্ণব চোখ তুলে তাকাল। সেই দৃষ্টি নির্লিপ্ত, অথচ এক মুহূর্তের জন্য স্নিগ্ধার মনে হল—অর্ণব কি কিছু টের পাচ্ছে?

স্নিগ্ধার ভয় আরও বাড়তে লাগল। অফিসে সহকর্মীরা এখন সৌরভ আর তার একসঙ্গে সময় কাটানো লক্ষ্য করতে শুরু করেছে। রিমি একদিন মজা করে বলল—
“তুমি আর সৌরভ যেন অনেক ভালো টিম হয়ে গেছো, সবসময় একসঙ্গে থাকো!”

স্নিগ্ধা হাসতে চাইল, কিন্তু ঠোঁট কেঁপে উঠল। সে জানত, একদিন এই মজা গুজবে পরিণত হবে, তারপর গুজব থেকে কেলেঙ্কারিতে।

তবুও সে থামতে পারছিল না। প্রতি রাতেই ফোনে সৌরভের কণ্ঠ তাকে টেনে নিত।
“আসবে তো কাল? তোমার শরীর ছাড়া আমার দিন কাটে না।”

স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে শোনে, আর ভেতরে ভেতরে শরীর কেঁপে ওঠে। তার ভয়, তার অপরাধবোধ—সব চাপা পড়ে যায় সেই কামনার বুনো স্রোতে।

এক রবিবার দুপুরে, অর্ণব হঠাৎ বলল—
“চলো না, কোথাও বেড়িয়ে আসি। অনেকদিন আমরা একসঙ্গে সময় কাটাইনি।”

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে গেল। এতদিন পরে অর্ণব এমন প্রস্তাব দিল কেন? মনে হল, হয়তো অর্ণব টের পেয়েছে কিছু। আবার হয়তো সত্যিই অপরাধবোধ থেকে সে স্ত্রীকে সময় দিতে চাইছে।

কিন্তু সেদিনই সৌরভ ফোন করে বলল—
“আজ যদি না আসো, আমি সহ্য করতে পারব না। তোমাকে ছাড়া আমার শ্বাসরোধ হয়ে যাচ্ছে।”

স্নিগ্ধা এক অদ্ভুত টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে গেল। একদিকে স্বামী, যার সঙ্গে সংসার; অন্যদিকে প্রেমিক, যার সঙ্গে শরীর আর আত্মা দুটোই বাঁধা পড়েছে। শেষমেশ সে অর্ণবকে মিথ্যে বলে বেরিয়ে গেল।

সৌরভের ফ্ল্যাটে পৌঁছে সে ভেতরটা ফাঁকা পেল। দরজা বন্ধ হতেই সৌরভ তাকে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরল। তার চোখে জল, ঠোঁটে তীব্রতা।
“তুমি কি কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাবে?”

স্নিগ্ধা চোখ নামিয়ে বলল—
“আমি পারব না, অথচ আমায় হয়তো একদিন যেতে হবে।”

সৌরভ তার চিবুক তুলে ধরে বলল—
“না, আমি তোমাকে ছাড়ব না।”

তাদের ঠোঁট আবার মিলল। শরীরের ভিতর দিয়ে ঢেউ বয়ে গেল। কামনা আর ভালোবাসা মিশে একাকার হয়ে গেল। স্নিগ্ধা অনুভব করল, এই মুহূর্তে সে জীবিত। এই মুহূর্তেই সে সত্যিকারের নারী।

কিন্তু রাতের শেষে, যখন সে ঘরে ফিরল, দরজার সামনে অর্ণব দাঁড়িয়ে ছিল। চোখে কোনো অভিব্যক্তি নেই, ঠোঁটে চাপা রেখা। স্নিগ্ধার বুক কেঁপে উঠল।

অর্ণব শুধু বলল—
“অনেক রাত হয়ে গেল।”

কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো ঝগড়া নেই। অথচ এই নীরবতা স্নিগ্ধাকে আরও আতঙ্কিত করল। সে বুঝল, ধরা পড়ার ভয় এখন আরও কাছাকাছি চলে এসেছে।

পর্ব ৬: সন্দেহের ছায়া

অর্ণবের নীরবতা স্নিগ্ধাকে অস্বস্তিতে ফেলল। সে জানত, অর্ণব সহজে আবেগ প্রকাশ করে না, কিন্তু তার চাহনির ভিতরে যে কুয়াশা জমেছে সেটা উপেক্ষা করা কঠিন। পরদিন সকালে নাশতার টেবিলে বসে অর্ণব হঠাৎই বলল—
“তুমি কি সত্যিই অফিসের কাজেই এত ব্যস্ত? মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি অন্য কোথাও হারিয়ে যাচ্ছ।”

স্নিগ্ধার বুক কেঁপে উঠল। কাঁটা-চামচ থমকে গেল হাতের মধ্যে। সে মিথ্যে হাসি দিয়ে বলল—
“কাজ তো অনেক, অর্ণব। সবসময় টেনশন নিতে হয়।”

অর্ণব কোনো উত্তর দিল না। শুধু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে গেল। এই নীরবতা স্নিগ্ধাকে আরও অস্থির করল।

অফিসে গিয়ে সে সৌরভকে সব বলল। সৌরভ হেসে বলল—
“তুমি অত ভয় পাচ্ছ কেন? সন্দেহ যদি করেও থাকে, প্রমাণ তো নেই।”

স্নিগ্ধা জানত, কথাটা ঠিক। তবু অর্ণবের নিঃশব্দ দৃষ্টি তার মনের ভেতর কাঁটার মতো বিঁধে থাকছিল।

দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল অদ্ভুত এক ভারসাম্যে। দিনে সংসার, রাতে প্রেমিকের ফ্ল্যাট। সৌরভ এখন একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাঝেমাঝে অফিসেই সুযোগ খুঁজে নেয়। মিটিং রুম ফাঁকা থাকলেই দরজা ভেজিয়ে স্নিগ্ধার ঠোঁট খুঁজে নেয়। স্নিগ্ধা প্রথমে ভয়ে কেঁপে উঠলেও, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সব ভুলে শরীর মিশিয়ে দেয়।

কিন্তু একদিন অফিসে অঘটন ঘটল। রিমি হঠাৎ বলল—
“কাল তোমরা কি একসাথে বেরিয়েছিলে? আমি তোমাদের পার্কস্ট্রিটে দেখেছি মনে হলো।”

স্নিগ্ধা রক্তশূন্য হয়ে গেল। সৌরভ দ্রুত হেসে বলল—
“আরে না, কাজের মিটিং ছিল, তাই একসাথে যেতে হয়েছিল।”

রিমি হেসে বলল—“হুঁ, তাই নাকি?”

স্নিগ্ধার মনে হল, চারপাশের দেয়াল সরে আসছে। ধরা পড়ে যাওয়ার আতঙ্ক যেন তাকে গ্রাস করছে। তবুও রাতে সে আবার সৌরভের ফ্ল্যাটে গেল। শরীরের টানে, নিঃশ্বাসের উন্মাদনায় সে সব ভয়কে ভুলে গেল।

সেদিন রাতে তারা দীর্ঘক্ষণ একে অপরকে আঁকড়ে থাকল। বৃষ্টির শব্দ জানলার বাইরে ছুটছিল, ভেতরে স্নিগ্ধার শরীর ভিজে যাচ্ছিল সৌরভের ছোঁয়ায়। প্রতিটি মুহূর্তে তার মনে হচ্ছিল—“আমি জীবন্ত, আমি পূর্ণ।”

কিন্তু আনন্দের মাঝেও ভয় থামছিল না। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে অর্ণবের নাম। স্নিগ্ধা শিউরে উঠল। সৌরভ ফোনটা হাতে নিয়ে বলল—
“এখন রিসিভ কোরো না। পরে বলবে ফোন সাইলেন্টে ছিল।”

স্নিগ্ধা কাঁপা হাতে ফোনটা বন্ধ করে দিল। কিন্তু বুকের ভেতর ভয় জমল।

পরদিন সকালে অর্ণব কিছু বলল না। কিন্তু তার চোখে সেই একই নিঃশব্দ সন্দেহ। স্নিগ্ধা বুঝল, আগুনের খেলা আর বেশিদিন লুকোনো যাবে না।

এক সন্ধ্যায় অর্ণব হঠাৎ বলল—
“শোনো, এই শনিবার তুমি ফ্রি আছো তো? আমি চাই আমরা দু’জন কোথাও বেরোই। শুধু আমরা দু’জন।”

স্নিগ্ধা দ্বিধায় পড়ল। সৌরভ ইতিমধ্যেই সেই সপ্তাহান্তে দেখা করার পরিকল্পনা করেছে। তবু সে মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। হয়তো এটা একটা সুযোগ—অর্ণবকে ফের খুঁজে পাওয়ার।

শনিবার তারা একসাথে সমুদ্রের ধারে গেল। সমুদ্রের ঢেউ তটভূমি ছুঁয়ে যাচ্ছিল, সূর্যাস্তের লাল আলোয় আকাশ ভিজে উঠছিল। অর্ণব চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছিল। স্নিগ্ধা একাধিকবার কথা বলতে চাইছিল, কিন্তু কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছিল না।

হঠাৎ অর্ণব থেমে গিয়ে বলল—
“স্নিগ্ধা, তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাইছো?”

স্নিগ্ধার বুক কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছিল, সব ফাঁস হয়ে যাবে। সে চোখ নামিয়ে বলল—
“না… কিছু না।”

অর্ণব দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর হাঁটতে শুরু করল।

সেদিন রাতে হোটেল রুমে অর্ণব প্রথমবার চেষ্টা করল স্নিগ্ধার কাছে আসতে। স্নিগ্ধা বুঝতে পারছিল, অর্ণব চায় পুরনো সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তার শরীর নিস্তেজ হয়ে রইল। মনে হচ্ছিল, তার সমস্ত ইন্দ্রিয় ইতিমধ্যেই অন্য কারও কাছে সমর্পিত। অর্ণব চেষ্টা করল, কিন্তু স্নিগ্ধা সাড়া দিতে পারল না। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরল তাদের।

ফিরে আসার পর থেকে অর্ণব আরও চুপচাপ হয়ে গেল। স্নিগ্ধা জানত, সম্পর্কের ভেতর ফাটল এতটাই গভীর যে, সেটা আর মেরামত করা যাবে না।

এদিকে সৌরভ এখন একেবারেই অধিকার দাবি করতে শুরু করেছে। সে বলছে—
“তুমি আর কতদিন এভাবে দ্বন্দ্বে থাকবে? একদিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।”

স্নিগ্ধা ভয়ে আর আকর্ষণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল।

এক রাতে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজের শরীরের দিকে তাকাল। কামনার দাগ এখনো গায়ে রয়ে গেছে, ঠোঁট লালচে। সে নিজেকে প্রশ্ন করল—
“আমি কি সত্যিই প্রেম খুঁজছি? নাকি কেবল সেই স্পর্শ যা আমাকে নতুন করে বাঁচায়?”

প্রশ্নের উত্তর তার কাছে তখনো স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু সে জানত, অর্ণবের চোখে এখন আর সবকিছু লুকোনো যাবে না। সন্দেহের ছায়া ঘন হয়ে এসেছে, আর সেই ছায়ার ভেতরে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধার শরীর কাঁপছে।

পর্ব ৭: মুখোশ খুলে যাওয়া

সন্দেহের ছায়া এখন প্রায় প্রতিটি দিন স্নিগ্ধার চারপাশে ঘিরে থাকছে। অর্ণব আর কিছুই সরাসরি বলে না, তবুও তার চাহনিতে এমন এক নিস্তব্ধ জিজ্ঞাসা লেগে থাকে যে স্নিগ্ধা ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে ওঠে।

এক সন্ধ্যায় অর্ণব হঠাৎ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল—
“আজকাল তোমার ফোনটা সবসময় সাইলেন্টে কেন থাকে?”

স্নিগ্ধা শিউরে উঠল। সে তাড়াতাড়ি উত্তর দিল—
“অফিসের চাপ, মেসেজে বিরক্তি… তাই সাইলেন্ট রাখি।”

অর্ণব কিছু বলল না। শুধু তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে। সেই দৃষ্টিতে এমন কিছু ছিল যা স্নিগ্ধাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। মনে হচ্ছিল, মুখোশ আর বেশিদিন টিকবে না।

ওদিকে সৌরভ এখন আরও অধিকার দাবি করছে। প্রতিদিন দেখা করার চাপ, বারবার ফোন, মেসেজ।
“তুমি আমার। আমি তোমাকে কাউকে দেব না,”—তার কণ্ঠে একরকম তীব্রতা।

একদিন অফিস শেষে তারা আবার দেখা করল। সৌরভ স্নিগ্ধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল—
“কবে তুমি সব ভেঙে আমার কাছে আসবে?”

স্নিগ্ধা কেঁপে উঠল।
“সব ভাঙা এত সহজ নয়। আমার একটা সংসার আছে।”

সৌরভ চোখ নামিয়ে বলল—
“সংসার? সংসার কি শুধু নামেই সংসার? তোমার স্বামী কি তোমার ভেতরের আগুন বোঝে? তোমার শরীরের ডাক শোনে?”

স্নিগ্ধা চুপ করে গেল। তার চোখে জল এসে গেল। সত্যিই তো, অর্ণব তাকে কোনোদিন এমনভাবে বুঝতে পারেনি। অথচ এ কথা সে স্বামীর সামনে কখনো বলতে পারেনি।

ফ্ল্যাটের ভেতরে তারা আবার একে অপরের ভেতরে ডুবে গেল। শরীরের দাপাদাপিতে বাইরের পৃথিবী ভুলে গেল তারা। কিন্তু শারীরিক মিলনের পর এক অদ্ভুত শূন্যতা স্নিগ্ধার ভেতর ঢুকে গেল। হঠাৎ মনে হল—সে কি শুধু কামনার খেলায় বন্দি হয়ে যাচ্ছে? প্রেমের আড়ালে কি শরীরের নেশাই আসল চালিকাশক্তি?

রাত গভীরে ঘরে ফেরার সময় হঠাৎ অর্ণব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। স্নিগ্ধা ভড়কে গেল। অর্ণব শান্ত গলায় বলল—
“তুমি এত রাত করে ফিরছো কেন বারবার?”

স্নিগ্ধার গলা শুকিয়ে গেল। কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। শুধু বলল—
“অফিসের কাজ…”

অর্ণব চোখ নামিয়ে বলল—
“আমি চাই না তোমার জীবনে চাপ থাকুক। কিন্তু মনে হচ্ছে চাপটা অন্যরকম।”

সেদিন রাতে অর্ণব তাকে ছুঁয়ে দেখল। স্নিগ্ধার মনে হচ্ছিল, তার শরীরে সৌরভের ছোঁয়া এখনো তাজা। সে কুঁকড়ে গেল, অর্ণবের হাত সরিয়ে নিল। সেই মুহূর্তে অর্ণবের চোখে যে আঘাত ফুটে উঠল, স্নিগ্ধা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল।

দিন কেটে যাচ্ছিল। রিমি আর কিছু সহকর্মী এখনো টুকটাক ইঙ্গিত করছিল। একদিন ক্যান্টিনে বসে রিমি হেসে বলল—
“তোমরা দু’জন কি সিরিয়াসলি ডেট করছ?”

স্নিগ্ধা হাসতে চেষ্টা করল, কিন্তু তার হাতের কাপটা কেঁপে গেল। সৌরভ পাশেই ছিল, সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল। তবু স্নিগ্ধা বুঝল, আর বেশিদিন ঢেকে রাখা যাবে না।

এক রাতে সৌরভ হঠাৎ ফোনে বলল—
“আমি চাই কালই তুমি আমাকে সিদ্ধান্ত জানাও। তুমি আমার হবে কি না।”

স্নিগ্ধা কাঁপা গলায় বলল—
“আমার পক্ষে এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।”

সৌরভ চুপ করে রইল, তারপর হঠাৎ ফোন কেটে দিল। স্নিগ্ধার বুক ধড়ফড় করতে লাগল।

পরের দিন সকালে অর্ণব কোনো কথা না বলে শুধু তার চোখের দিকে তাকাল। সেই দৃষ্টিতে স্নিগ্ধা ভেঙে পড়ল। মনে হচ্ছিল, অর্ণব সব জেনে গেছে।

স্নিগ্ধা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখল। তার শরীর এখনও জ্বলছে কামনার আগুনে, কিন্তু চোখের ভেতর ভরে গেছে আতঙ্ক। সে বুঝতে পারল, প্রেম-পরকীয়ার খেলা এখন শেষ অধ্যায়ের দিকে এগোচ্ছে। মুখোশ আর বেশিদিন টিকবে না।

বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল। জানলার কাচে ফোঁটা গড়িয়ে আসছিল ধীরে ধীরে। স্নিগ্ধা হাত বাড়িয়ে কাচ ছুঁয়ে দিল। মনে হল, এই ফোঁটা গড়িয়ে পড়ার মতোই তার জীবন ভেঙে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

পর্ব ৮: পরিণতির আগুন

স্নিগ্ধার জীবন তখন টানটান দড়ির ওপর ঝুলছে। একদিকে অর্ণবের নীরব সন্দেহ, অন্যদিকে সৌরভের অধিকার দাবি। দু’দিকেই অস্থিরতা, দু’দিকেই আগুন।

এক সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ সৌরভ তাকে টেনে বলল—
“শোনো, আর নয়। আমি চাই তুমি সব ছেড়ে আমার কাছে চলে আসো। নইলে আমি ভেঙে পড়ব।”

স্নিগ্ধা ক্লান্ত গলায় বলল—
“তুমি বুঝতে পারছো না, এটা এত সহজ নয়। একটা সংসার ভাঙা মানে শুধু সম্পর্ক ভাঙা নয়, জীবন ভাঙা।”

সৌরভ উত্তেজিত হয়ে উঠল।
“তাহলে তুমি কি আমাকে শুধু শরীরের জন্য ব্যবহার করছো?”

কথাটা ছুরি হয়ে বিঁধল স্নিগ্ধার হৃদয়ে। সে কোনো উত্তর দিতে পারল না।

সেই রাতেই অর্ণব তাকে প্রশ্ন করল—
“তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না আর?”

স্নিগ্ধা থেমে গেল। ঠোঁট নড়ল, কিন্তু কোনো শব্দ বেরোল না। অর্ণবের চোখে জমে থাকা জল তাকে কাঁপিয়ে দিল। এই মানুষটির সঙ্গে সে এত বছর কাটিয়েছে, সুখ-দুঃখ ভাগ করেছে। অথচ আজ তার চোখে অপরাধী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুদিন পরেই ঘটনাটা ঘটল।

অফিসে হঠাৎ এক সহকর্মী স্নিগ্ধাকে বলল—
“তোমাদের নিয়ে অনেক গুজব উঠেছে। তুমি আর সৌরভ নাকি…”

স্নিগ্ধার কানে যেন বজ্রপাত হল। সে অনুভব করল, পৃথিবী তার চারপাশ থেকে ভেঙে পড়ছে। সেই গুজব অর্ণবের কানে পৌঁছতে কত সময় লাগবে?

রাতের বেলা অর্ণব তাকে ডেকে বলল—
“আমি সব শুনেছি।”

স্নিগ্ধার বুকের ভেতর থমকে গেল।
“সব… মানে?”

অর্ণব ঠান্ডা গলায় বলল—
“তুমি আর সৌরভ। অফিসে লোকজন বলছে।”

স্নিগ্ধা কেঁপে উঠল। সে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু গলা শুকিয়ে গিয়েছিল।

অর্ণব দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থেকে বলল—
“আমি ভেবেছিলাম, তুমি শুধু ব্যস্ত হয়ে পড়েছো। ভেবেছিলাম, একদিন সব স্বাভাবিক হবে। কিন্তু এখন বুঝলাম, আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।”

স্নিগ্ধার চোখে জল নেমে এল। সে হাত বাড়িয়ে অর্ণবের হাত ধরতে চাইছিল, কিন্তু অর্ণব হাত সরিয়ে নিল।
“তুমি যদি যেতে চাও, আমি আটকাব না। শুধু একটাই প্রশ্ন—ওটা কি প্রেম, না শরীর?”

স্নিগ্ধা উত্তর দিতে পারল না। কারণ তার নিজের কাছেও উত্তরটা স্পষ্ট নয়।

পরের দিন সৌরভকে সব জানাল সে। সৌরভ বলল—
“চলো, সব ছেড়ে আমার সঙ্গে চলে যাও।”

স্নিগ্ধা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
“তুমি কি আমাকে আজীবন ভালোবাসবে? নাকি এই আগুন একদিন নিভে যাবে?”

সৌরভ চুপ করে গেল।

সেই মুহূর্তে স্নিগ্ধা বুঝল, প্রেম আর কামনার সীমানা খুবই ভঙ্গুর। কামনা হয়তো তীব্র, কিন্তু সেটা স্থায়ী নয়। আর প্রেম শুধু শরীরের টানে গড়ে ওঠে না।

সেদিন রাতে সে সিদ্ধান্ত নিল।

অর্ণবের কাছে গিয়ে বলল—
“আমি ভুল করেছি। আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তুমি যদি পারো, আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও।”

অর্ণবের চোখে তীব্র কষ্ট। সে কিছু বলল না, শুধু জানালার দিকে তাকাল। বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল।
“বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে জোড়া লাগে না,”—অর্ণব শুধু এতটুকুই বলল।

স্নিগ্ধা জানত, তার সংসার আর আগের মতো থাকবে না। সৌরভের কাছে গেলেও সে শান্তি পাবে না, অর্ণবের কাছে থেকেও অপরাধবোধ তাকে ছাড়বে না।

তার জীবন এখন এক অদৃশ্য শূন্যতার মধ্যে আটকে গেছে।

রাতের আঁধারে শুয়ে সে অনুভব করল, শরীরের আগুন হয়তো ক্ষণিকের। সেই আগুনে সে দগ্ধ হয়েছে, পূর্ণও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেকে গেছে শুধু দাগ।

চোখ বন্ধ করে সে ফিসফিস করে বলল—
“আমার ভেতরে যে আগুন জ্বলছিল, সেটা আসলে আমি নিজেই তৈরি করেছিলাম। আজ বুঝলাম, পরকীয়া শুধু সম্পর্ক নয়, এটা এক অন্তরালের আগুন—যা জ্বলে উঠে সবকিছু ছাই করে দেয়।”

বাইরে তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামছে। ভিজে শহরের বুক জুড়ে ছড়িয়ে আছে নীরবতা। স্নিগ্ধা জানত, সেই নীরবতার ভেতরেই তাকে বাকি জীবন বাঁচতে হবে—অপরাধবোধ, অর্ধেক প্রেম আর নিভে যাওয়া আগুনের ছাই নিয়ে।

সমাপ্তি

WhatsApp-Image-2025-08-20-at-4.15.27-PM.jpeg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *