অর্কপ্রভ মুখার্জী
ঘন বর্ষার রাতে, দক্ষিণ কলকাতার বেহালার উপকণ্ঠে নিজের ব্যক্তিগত ল্যাবরেটরির এক কোণে বসে ড. অনিরুদ্ধ সেন চুপচাপ তাকিয়ে ছিল ছেলের শেষ ব্যবহৃত খেলনা ট্রেনটার দিকে। ট্রেনটা থেমে আছে ট্র্যাকের মাঝখানে, ব্যাটারির অভাবে নয়, বরং সময়ের অভাবে। সেই ট্রেনটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার ভিতরে এক ছায়া যেন থিতু হয়ে গেছে—সেই ছায়া, যেটা সে এক বছর ধরে প্রতিদিন বয়ে বেড়াচ্ছে নিজের হৃদয়ের গভীরে। তার একমাত্র ছেলে ঋদ্ধি সেন, মাত্র বারো বছর বয়সে মারা গেছে এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায়। স্কুল থেকে ফেরার পথে এক মিনি ট্রাক তাকে পিষে দেয়, এবং সে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। অথচ সেই দিনটি ছিল অনিরুদ্ধর জন্মদিন—ছেলেটা সেদিন বাবার জন্য চমক আনতে চেয়েছিল, তাই রুট বদলেছিল। সেই রুট বদলটাই আজ অনিরুদ্ধর জীবনের মূল রক্তক্ষরণ। শোক, অনুশোচনা এবং বিজ্ঞান মিলে সে এক অদ্ভুত মানসিক গহ্বরে ডুবে গিয়েছে। অন্য কেউ হলে হয়তো মানসিক ভারসাম্য হারাতো, কিন্তু অনিরুদ্ধ—তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, টাইম ডায়নামিক্সে বিশেষজ্ঞ—সে সিদ্ধান্ত নেয় সময়কে বদলে দেবে। সময়, যেটাকে সে এত বছর ধরে আপেক্ষিক বলেই জানত, আজ তার কাছে একটা শত্রু, যার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।
ইরা, অনিরুদ্ধর স্ত্রী, ছেলের মৃত্যু পরপরই ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু তার ভিতরে এক ধরনের শান্ত আবরণ ছিল—সে বেছে নিয়েছিল বেঁচে থাকার সহজতর পথ: স্মৃতি থেকে পালিয়ে গিয়ে জীবনের নতুন রুটিন গড়ে তোলা। কিন্তু অনিরুদ্ধ পারল না। সে নিজের গবেষণাগারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কাটিয়ে দেয় একটি যন্ত্র তৈরি করতে—“ChronoFixer” নামে এক ধরনের কোয়ান্টাম টাইম মডিউল যা স্থানিক-কালিক বিকৃতি ঘটিয়ে অতীতে ফিরে যেতে পারবে। সে জানে সময় একদম সরলরেখা নয়—বরং তার ভাঁজ আছে, তার মধ্যেই অনিরুদ্ধ চেষ্টা করে একটি ‘কাঁচ’ তৈরি করতে, যার মধ্যে দিয়ে সময়ের একটি অংশে পৌঁছানো যাবে। ইরার আপত্তি বাড়তে থাকে, সে বলে, “অনিরুদ্ধ, তুমি ছেলেকে হারিয়েছো, আমিও হারিয়েছি, কিন্তু তুমি যা করছো, সেটা নিজের হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করে বিজ্ঞান দিয়ে জোড়া লাগানোর মতো।” অনিরুদ্ধ তার দিকে তাকায় না, তার চোখ শুধু মনিটরের স্ক্রিনে—সেখানে সবে শেষ হয়েছে কোডিংয়ের ৩৫তম সংস্করণ, যেখানে সময়ের বিন্দুগুলিকে গাণিতিকভাবে ম্যাপ করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমায় প্রবেশ করার গেটওয়ে বানানো হয়েছে। যত ইরা বিরত করে, অনিরুদ্ধ আরও গভীরে ডুবে যায়। তার নিজের ঘুম নেই, ক্ষুধা নেই, কেবল একটা ভাবনা—“ঋদ্ধিকে ফেরাতে হবে, যেকোনো মূল্যে।”
ছেলের ঘরের দরজাটা বন্ধই থাকে এখন, কিন্তু অনিরুদ্ধ প্রায়শই সেখানে ঢুকে বসে থাকে, কোনো শব্দ না করে। ঋদ্ধির ব্যবহৃত বিছানার চাদর, দেয়ালে আঁকা শিশুসুলভ পোস্টার, এবং বিছানার পাশের ডেস্কে রাখা সেই পুরনো রোবট খেলনাগুলো যেন এখন সময়ের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে সময় কোনো আবেগ বোঝে না, সময়ের কোনো সহানুভূতি নেই। কিন্তু সে এটাও জানে, বিজ্ঞান মানুষকে ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে—অন্তত তার কাছাকাছি গিয়ে নিয়তি বদলানোর ক্ষমতা দিতে পারে। এক ঝড়ের রাতে, যখন শহরের আলো নিভে যায় বজ্রপাতের ধাক্কায়, অনিরুদ্ধ নিজের যন্ত্রের প্রথম পরীক্ষামূলক সেশন চালু করে। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ৩টা ১৭। তার টাইম মডিউল কিছুটা গরম হয়ে উঠলেও সংকেত দিতে শুরু করে—“Time Vortex Stable for 00:42:30 minutes.” সে চোখ বন্ধ করে ছেলের মুখ কল্পনা করে, তারপর ধীরে ধীরে সময়ের সেই গহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করে। পিছনে পড়ে থাকে অন্ধকার ল্যাব, বাদলের শব্দ, আর সেই ট্রেনটা—যা এতদিন চুপ করে ছিল, এবার যেন হঠাৎ আওয়াজ করে উঠলো, এক মুহূর্তের জন্য। যেন সময় নিজেই বলল, “তুমি প্রস্তুত তো?”
–
নরম আলোয় ভেসে ওঠা চিত্রটি প্রথমে ধোঁয়াটে ছিল। চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা, যেন কেউ ক্যামেরার লেন্সে নিঃশ্বাস ফেলেছে। অনিরুদ্ধর মনে হচ্ছিল সে ভাসছে—না শূন্যে, না মাটিতে, এক রকম স্বচ্ছ অথচ ভারী সময়-স্তরের মধ্যে দিয়ে। হঠাৎ করেই চারপাশ ঝাঁকুনি দিয়ে পরিষ্কার হয়ে উঠল। সে এখন নিজের ফ্ল্যাটের বাইরে, পুরনো ফাঁকা রাস্তায়, যেদিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল—ঠিক সেই দিন সকাল আটটা চল্লিশ। মানুষের গলার আওয়াজ, দূরের বাসের হর্ন, এবং সামনের দোকানের রেডিওতে বাজছে পুরনো রবীন্দ্রসঙ্গীত—সব এক অদ্ভুত ঘোরের মতো স্পষ্ট। অনিরুদ্ধ বুঝতে পারল সে ফিরে এসেছে। হাতে বাঁধা ChronoFixer ডিভাইস ঝকঝক করছে, তাতে সময় গুনছে—মাত্র ৪২ মিনিট সময় আছে তার হাতে, সব কিছু ঠিক করার। ভয় আর উত্তেজনায় তার মুখে ঘাম জমেছে, কিন্তু সে দ্বিধা করে না।
ঋদ্ধি তখন স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওর স্কুলব্যাগটা মা গোছাচ্ছে, আর সে খাচ্ছে ব্রেড আর কলা। অনিরুদ্ধ দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিল, ভিতরটা কেঁপে উঠছিল। এতদিন পরে ছেলেকে আবার এত জীবন্ত দেখে তার চোখ জলে ভরে গেল। কিন্তু সে জানে এখন আবেগ দেখানোর সময় নয়। সে দ্রুত ভিতরে ঢুকে বলে, “আজ আমি ঋদ্ধিকে স্কুলে নিয়ে যাবো।” ইরা একটু অবাক হয়, “তুমি তো আজ ল্যাবে যাওয়ার কথা বলেছিলে। কী ব্যাপার?” অনিরুদ্ধ হেসে বলে, “আজ একটু অফিস ফাঁকি। ঋদ্ধির সঙ্গে একটু সময় কাটাতে চাই।” ইরা কিছু না বলে সম্মতি জানায়, কিন্তু তার চোখে একটা সন্দেহের রেখা ছিল। ঋদ্ধি খুশি হয়ে বলে, “তুমি কি আমার জন্য আইসক্রিম কিনে দেবে ফেরার পথে?” অনিরুদ্ধ মাথা নেড়ে বলে, “তুমি আজ শুধু বেঁচে থাকো, বাবা। আমি তোমাকে সব দিয়ে দেবো।” সে জানে, দুর্ঘটনা হয় যে মোড়টায়, সেটি এড়িয়ে যেতে হবে। সে রিকশা নিয়ে চলে যাওয়ার বদলে হাঁটতে চায়, বিকল্প পথ বেছে নেয়। সময় যেন পাল্টে গেছে—ঋদ্ধি নিরাপদে স্কুলে পৌঁছায়। অনিরুদ্ধের হৃদয়ে দীর্ঘদিন পর যেন একটুখানি আলো ফুটে ওঠে।
যখন সে টাইম মডিউলের সময় শেষ হওয়ার আগেই নিজের টাইম-পোর্টাল খুলে আবার বর্তমানের ল্যাবে ফিরে আসে, তখন তার মুখে বিজয়ের হাসি। ল্যাবের চারপাশে কিছুই পাল্টায়নি, কিন্তু তার কাছে সব পাল্টে গেছে। সে ছেলেকে ফিরিয়ে এনেছে—অন্তত সে তাই ভাবে। কয়েক ঘণ্টা পর সে ইরাকে ফোন করে জানতে চায় ঋদ্ধি কেমন আছে। ইরা বলে, “ও তো দুপুরে ফিরেছে, একটু ঘুমাচ্ছে। তুমি কেন এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করছ?” অনিরুদ্ধ হালকা হেসে ফোনটা রেখে দেয়, আরাম পায়। কিন্তু রাতের দিকে হঠাৎ এক তীব্র শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়—একটা ফোন আসছে, নম্বরটা অপরিচিত। ওপাশে ইরার কণ্ঠ কাঁপছে, “অনিরুদ্ধ, ঋদ্ধি… ঋদ্ধি নেই!” কীভাবে? কী হলো? ইরা জানায়, সে ঘুম থেকে উঠে দেখেছে ঋদ্ধি মেঝেতে পড়ে আছে—মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পরে জানা যায়, ওর খেলার টেবিলের ওপর রাখা এক ইলেকট্রনিক খেলনা ট্রেন হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটায়। ট্রেনটা? সেটাই তো সেই খেলনা যা সে দুর্ঘটনার দিনে আনেনি, কারণ রুট বদল করেছিল। অর্থাৎ সময় বাঁচানো গেলেও ভবিষ্যতের ফলাফলের পথ পাল্টেছে, কিন্তু পরিণতি একই রয়ে গেছে—ঋদ্ধি মারা গেছে, অন্যভাবে। অনিরুদ্ধ প্রথমবার উপলব্ধি করে, সময় এক সোজাসাপটা দড়ি নয়, সময় জট পাকায়। সে একবার ঠিক করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। বরং প্রতিবার সে যা ঠিক করতে চাইছে, তা-ই নতুনভাবে বিপর্যয় ডেকে আনছে। তার মনে প্রশ্ন ওঠে—তবে কি ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব নয়? নাকি, সে শুধুই সময়ের সঙ্গে এক অসম যুদ্ধ শুরু করে ফেলেছে?
–
একটা সময় ছিল, যখন অনিরুদ্ধ সময়কে কেবল সংখ্যায় মাপা একক বলে জানত। মিনিট, ঘণ্টা, দিন, বছর—সবকিছু ছিল এক গোছানো রেখার মতো, যেখানে A থেকে B তে যাওয়াটা স্থির নিয়মে বাঁধা। কিন্তু এখন সে জানে সময় হলো এক বিচিত্র গোলকধাঁধা, এক জীবন্ত সত্তা, যা মানুষকে নিয়ে খেলে। দ্বিতীয়বার সময়ভ্রমণে যাওয়ার সময় তার ভিতরে সেই প্রথম উত্তেজনা ছিল না, বরং ভয় আর সন্দেহ ছিল বেশি। সে জানত, কোনো এক অনুলিপিতে সে সফল হবে না। তাই সে এবার শুধু দুর্ঘটনা এড়ানো নয়, ঋদ্ধির চারপাশের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সে ফিরে যায় এক সপ্তাহ আগে, যেদিন ঋদ্ধি প্রথমবার রিমোট কন্ট্রোল ট্রেন নিয়ে খেলা করছিল। সে সাবধানে ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দেয়, কিছু ছোটো ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করে দেয়, এবং ইরার মোবাইলেও একটি সফটওয়্যার ঢুকিয়ে দেয় যাতে সে ভবিষ্যৎ বিপদের সংকেত আগে পায়। ফিরে এসে সে মনিটরে দেখতে থাকে সব কিছু—ঋদ্ধি খেলছে, হাসছে, ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তিনদিন পরে হঠাৎ সে দেখতে পায়, ঋদ্ধি স্কুল থেকে ফিরেই মাটিতে বসে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে—একদম নিঃশব্দ।
সেই চাহনি অনিরুদ্ধর গায়ে কাঁটা ধরিয়ে দেয়। তার মধ্যে কোনো সাড়া নেই—না দুঃখ, না আনন্দ, কেবল একটা শূন্যতা। পরের দিন সে স্কুলে গিয়ে দেখে, শিক্ষকরা বলছে ঋদ্ধি এখন খুব অদ্ভুত আচরণ করছে—একটা কথাও বলে না, হঠাৎ মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে, কাগজে আঁকে অসম্পূর্ণ গাণিতিক চিহ্ন। অনিরুদ্ধ বাড়ি ফিরে তাকে জিজ্ঞেস করে, “বাবা, তুমি ঠিক আছো তো?” ঋদ্ধি তাকায় না, শুধু ফিসফিস করে বলে, “তুমি তো আসবে, তাই না? তুমি তো আবার আসবে, সেই অন্য বাবা…” কথাটা শুনে অনিরুদ্ধর বুক ধ্বসে পড়ে। কীভাবে ঋদ্ধি জানল? তার মন বলে, হয়তো টাইম ভ্রমণের কোনো ছাপ থেকে গেছে ছেলের মস্তিষ্কে। অথবা… ঋদ্ধি এখন সেই ছেলেটি নয়, যাকে সে চিনত। তখনি রাত দশটার সময় দরজায় কড়া নাড়ে পুলিশ। তারা জানায়, এই বিল্ডিংয়েরই অন্য একটি ফ্ল্যাটে এক বাচ্চা ছেলেকে পাওয়া গেছে, যার সঙ্গে অনিরুদ্ধর ছেলের চেহারা হুবহু মেলে। সে বলছে তার নামও ঋদ্ধি, এবং তার বাবার নামও অনিরুদ্ধ সেন।
অনিরুদ্ধ ছুটে যায় সেই ফ্ল্যাটে, যেখানে সে দেখতে পায়, একটি অচেনা পরিবার বসে আছে যার ছেলেটির চেহারা, উচ্চতা, মুখাবয়ব সবই ঋদ্ধির মতো। ছেলেটি তাকে দেখে বলে, “তুমি সেই অন্য বাবা, না?” অনিরুদ্ধ স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মাথায় ঘুরতে থাকে একটাই কথা—সে প্রতিবার টাইম ট্রাভেল করে শুধুই একটা টাইমলাইন পাল্টাচ্ছে না, সে বাস্তবতা ভাগ করে দিয়ে একাধিক টাইমব্রাঞ্চ তৈরি করে ফেলেছে। প্রতিটি ছোট পরিবর্তন একটি নতুন “সংস্করণ” তৈরি করছে তার ছেলের—আর তারা এখন একে অপরের অস্তিত্বের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। সময়ের জট খুলতে গিয়ে সে সময়ের জালে নিজেই আটকে গেছে। পরদিন সকালে সে যখন নিজের ঘরের খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, দেখে—অন্য একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরও একটি ঋদ্ধি, যাকে সে কখনো দেখেনি। মাথা নিচু, চোখে কৌতূহল। তার মনে হয়, যেন তারা সবাই জানে, কে তাদের তৈরি করেছে। সেই মুহূর্তে অনিরুদ্ধর মাথায় প্রথমবার একটা ভয়ানক প্রশ্ন জন্ম নেয়—এই সমস্ত ঋদ্ধিদের মধ্যে আসল কে? সে কি আদৌ কোনোটিকে বাঁচাতে পেরেছে? নাকি এদের প্রতিটি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শুরু করেছে আরেকটি বাস্তবতার খরচে? তার মনে হয়, এবার সে যা করছে, সেটা আর কোনো বিজ্ঞান নয়—এটা ঈশ্বরের খেলায় হাত দেওয়া। আর ঈশ্বর কি এত সহজে ছেড়ে দেয়?
–
অনিরুদ্ধর ল্যাবরেটরিতে আলো নিভে গেছে অনেকক্ষণ, কিন্তু তার মনিটর স্ক্রিনে সময়ের ঘূর্ণি থেমে নেই। টানা কয়েক রাত না ঘুমিয়ে, না খেয়ে, সে কাজ করে চলেছে আরও নিখুঁত টাইম-মডেল গঠনের জন্য—যেন নিজেই তার তৈরি কাঁচের ভেতর ঢুকে বাস্তবতাকে নতুন করে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু এই সময়েই দরজায় বেজে ওঠে এক পরিচিত আওয়াজ—ড. অরিত্র ঘোষাল, তার পুরনো সহকর্মী এবং কোয়ান্টাম সময়তত্ত্বের অন্যতম বিশারদ। অনেকদিন পর দেখা, কিন্তু অরিত্রর চোখে স্পষ্ট উদ্বেগ। তিনি দরজা পেরোতেই চারদিক তাকিয়ে বলেন, “তুমি তো পুরোটাই ঘোলাটে করে ফেলেছ, অনি। আমি যতটা ভয় পাচ্ছিলাম, অবস্থা তার থেকেও খারাপ।” অনিরুদ্ধ প্রথমে মুখ না তুললেও, কয়েক মুহূর্ত পর বলল, “আমি ছেলেকে ফেরাতে চাই। তুমি কি সেটা বোঝো না?” অরিত্র চুপ করে যায়, কিন্তু তার দৃষ্টি স্থির থাকে স্ক্রিনে, যেখানে এখন কয়েকটি টাইমলুপ একসঙ্গে চলতে দেখা যাচ্ছে—ঋদ্ধির একাধিক রূপ, একাধিক মুহূর্তে। সে ধীরে বলল, “আমি জানি তুমি কি হারিয়েছো। কিন্তু তুমি যেটা তৈরি করছো, সেটা একটা টাইমাল্যান্চ। সময় নিজেই এখন তার ভার সহ্য করতে পারছে না। তুমি যতবার এই টাইম স্ট্রিমে ঢুকছো, একেকটা নতুন বাস্তবতা খুলে যাচ্ছে, এবং সেগুলো একে অপরকে ধাক্কা মারছে।”
অনিরুদ্ধ হঠাৎ বলে ওঠে, “তাহলে কী করবো আমি? হাত গুটিয়ে বসে থাকবো? ঋদ্ধি বারবার আমার চোখের সামনে মরে যাবে আর আমি কিছু করবো না?” অরিত্র গভীরভাবে বলে, “তুমি যা করছো সেটা বিজ্ঞান নয়, সেটা প্রতিশোধ। কিন্তু প্রতিশোধ কিসের? নিয়তির বিরুদ্ধে? সময়ের বিরুদ্ধে? এসব জেতা যায় না। বরং যত লড়বে, তত বেশি ধ্বংস হবে।” সে জানায়, ইতিমধ্যেই পৃথিবীর একাধিক কোয়ান্টাম গবেষণাগারে অদ্ভুত সংকেত ধরা পড়ছে—সময়ের স্তরগুলিতে অনিয়ম, ঘড়ির সময় হঠাৎ এগিয়ে যাওয়া বা পিছিয়ে যাওয়া, এমনকি কিছু শহরে একই সময়ের মধ্যে দুইটি সূর্যোদয়ের রেকর্ডও আছে। অরিত্র বলে, “এইসব তুমি বুঝতে পারবে, কারণ তুমি একমাত্র ব্যক্তি যে সময়কে থিওরি থেকে বাস্তবতায় নামিয়ে এনেছো। কিন্তু তুমি যা বানিয়েছো, সেটার বোঝা মহাবিশ্ব বহন করতে পারছে না।” অনিরুদ্ধ চুপ করে থাকে, কিন্তু তার চোখে তীব্র জেদ। সে ফিসফিস করে বলে, “যদি একটা টাইমলাইনেই সব ঠিকঠাক হয়, তাহলে তো সমস্যাই থাকতো না। আমি শুধু সেই সঠিক লুপটা খুঁজে চলেছি।” অরিত্র রেগে উঠে বলে, “এটাই তোমার ভুল! ‘সঠিক লুপ’ বলে কিছু নেই। সময় এমন এক নদী, যার স্রোতের সঙ্গে খেললে নদী নিজের গতিপথ বদলে দেয়—আর খুব বেশি বাধা দিলে সেই নদী নিজেই সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।”
সেই রাতের আলোচনা যেন দুই বন্ধুর মাঝের শেষ অবশিষ্ট সেতুও ভেঙে দিল। অরিত্র জানিয়ে যায়—“তুমি যদি না থামো, তবে আমাকেই তোমার এই ChronoFixer ধ্বংস করতে হবে। কারণ তুমি শুধু তোমার ছেলে নয়, আমাকেও, এই পৃথিবীকেও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছো।” অনিরুদ্ধ কিছু না বলে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়, তার চোখ আবার স্ক্রিনে আটকে পড়ে—যেখানে এক ঘূর্ণির মধ্যে আটকে থাকা ঋদ্ধি হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে, যেন সে জানে তাকে আবারও কেউ আসছে বাঁচাতে। অরিত্র দরজা বন্ধ করে চলে যায়, কিন্তু যাওয়ার আগে রেখে যায় এক বাক্য: “প্রকৃত শোক হচ্ছে গ্রহণ করতে শেখা। আর তুমি শেখোনি। তুমি বিজ্ঞানী হয়েছো, কিন্তু বাবা হতে ব্যর্থ হয়েছো।” সেই শব্দগুলো অনিরুদ্ধের ভিতরে জমে থাকে, যেমন জমে থাকে ঝড়ের আগে নিঃশব্দ বাতাস। বাইরে মেঘ গর্জায়, ভেতরে সময়ের কুয়াশা ঘনীভূত হয়। সে জানে, সে এবার থামবে না। কারণ ঋদ্ধি তাকে আবার ডেকেছে—তিনটি, চারটি, অথবা তারও বেশি ঋদ্ধি এখন অপেক্ষা করছে—বাঁচার জন্য, এক হওয়ার জন্য, অথবা… তাকে শেষবারের মতো হারানোর জন্য।
–
নিঃশব্দে ভেসে চলেছে যন্ত্রটি—সময় মেরামতির তৃতীয় সংস্করণ। ডঃ ঈশান মুখার্জি এবার কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি। আগের দু’বার অতীতে গিয়ে ঋষভকে বাঁচাতে গিয়ে এমনসব ফল তৈরি হয়েছে, যা তাঁর ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেছে। একবার তো ঋষভ বেঁচে গেলেও ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছে, আরেকবার বিশ্ব বেঁচে গেলেও ঋষভ এক নিষ্ঠুর খুনিতে পরিণত হয়েছে। এবার ঈশান একদম নিঃসঙ্গভাবে, কোনও সহায়তা ছাড়াই নতুন পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন—এইবার তিনি ঋষভকে অতীতে নিয়ে যাবেন না, বরং ছেলের মৃত্যুর মুহূর্তের ঠিক আগে সময়ে প্রবেশ করে দুর্ঘটনাকে একটি ছোট্ট বিচ্যুতিতে বদলে দেবেন। তিনি এখন জানেন, বড় পরিবর্তন মানেই বড় প্যারাডক্স। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সময় কি এতটা সহজভাবে বদলানো যায়?
এইবার তিনি ২০৩৩ সালের সেই দুপুরে পৌঁছলেন, যেদিন এক ট্রাক ঋষভের বাইকটিকে ধাক্কা দিয়ে তার জীবন কেড়ে নিয়েছিল। ঈশান আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে, ক্যাফের পাশের সেই পুরোনো বারান্দায়, যেখানে বসে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছেলেকে স্কুল থেকে ফেরার অপেক্ষায় থাকতেন। আজ সময়ের বুকে দাঁড়িয়ে তিনি ঠিক দেখছেন ছেলেটি আসছে, হেডফোন কানে, ব্যাকপ্যাক কাঁধে ঝুলছে, একটুও না তাকিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। ঈশান সময় যন্ত্রের মাধ্যমে রাস্তার ট্রাফিক লাইটে সামান্য পরিবর্তন ঘটালেন—লাল আলো একটু আগেই জ্বলে উঠল, আর ট্রাকটি কিছুটা ধীর হয়ে গেল। বিপদ এড়িয়ে গেল, এবং ঋষভ নির্ঝঞ্ঝাটভাবে রাস্তা পার হয়ে গেল। মুহূর্তেই ঈশান অনুভব করলেন সময় যেন গুমরে উঠল, চারপাশ কেঁপে উঠল হালকাভাবে, আর তিনি নিজে চোখের নিমেষে ফেরত এলেন বর্তমান—তবে এবার ঘরে ফিরে এসে যা দেখলেন, তা তাঁর হৃদয় বিদীর্ণ করে দিল।
ঋষভ ঠিকই আছে, তবে সে যেন আর তাঁর ঋষভ নয়। এই ছেলেটি একই মুখ, একই গলা, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা। ঈশান যখন তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন, সে চমকে উঠল। সেই চেনা হাসি নেই, নেই বাবার প্রতি ভালবাসার আবেগ। ঈশান আতঙ্কিত হয়ে দেখলেন, তার ছেলে এখন এক বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার ‘মনোটোন অ্যাসাইনমেন্ট’-এর অধীনে কাজ করে—একটি প্রতিষ্ঠানের টাইম-ফিক্সিং শাখায়! তার ছেলেকে, অজান্তে, সময় নিয়ে খেলা করার ফলেই এক গোপন সংস্থা চিহ্নিত করেছে এবং তাকে ব্যবহার করছে ভবিষ্যতের টাইম-পারফেকশন এক্সপেরিমেন্টে। এখন সে এক সময়-স্নাইপার, যার কাজ—যে কেউ অতীতে বদল ঘটানোর চেষ্টা করে, তাকে শনাক্ত করে নির্মূল করা। ঈশান বোঝেন, নিজেই ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়ে ছেলেকে সময়ের এক অন্ধকার বন্দরে ঠেলে দিয়েছেন। সময় শুধরে গেলেও, ভবিষ্যত তাকে ছেড়ে দেয় না—ঈশান বুঝলেন, এবার তাঁকেই হয়তো ছেলেকে তার এই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে আবার একবার অতীতে নামতে হবে—আর এই যাত্রা হতে পারে তাঁর শেষ।
–
নতুন টাইম-ডেটা অনুযায়ী রুদ্র ফিরে গেল ৫ দিন আগের সেই সন্ধ্যায়, যেদিন অভির মৃত্যু ঘটে রাস্তায়। কিন্তু এবার সে পরিকল্পনা করেছিল আরও নিখুঁতভাবে সবকিছু বদলানোর। টাইম-পোর্টাল থেকে বেরিয়ে এইবার সে প্রথমেই অভিকে তার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বাইরে যেতে নিষেধ করল—ভয় দেখাল, যেন ভবিষ্যৎ থেকে এসেছে এবং কিছুই যেন ভালো হবে না। অভি, যদিও বাবার কথায় দ্বিধায় ছিল, শেষমেশ থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রুদ্র আশ্বস্ত হয় কিছুটা, কিন্তু তখনই সমস্যা শুরু হয় নতুনভাবে। সে জানে কোনো কিছু বদলালেই ভবিষ্যৎ রচনার পথও পাল্টে যায়, কিন্তু সে প্রস্তুত ছিল না এই মাত্রার বদল দেখতে। অভি বাইরে না যাওয়ায় তার বন্ধু অভিষেক একা যায়, এবং এইবার অ্যাক্সিডেন্ট হয় তার। আর সেই অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায় না অভিষেক—মারা যায় একজন পথচারী শিশু, যার মৃত্যু শহরের গোটা গণমাধ্যম নাড়িয়ে দেয়, এবং পুলিশি তদন্ত এসে পড়ে রুদ্রের পুরোনো কোম্পানির উপর, যেখানকার একজন কর্মী ছিল গাড়ির ড্রাইভার। রুদ্র বুঝতে পারে, ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে সে অন্য কারো জীবন নষ্ট করছে—এবং এবার ফলাফল আরো জটিল।
ভবিষ্যতের টাইম-লোকেশনে ফিরে গিয়ে সে দেখে সময় অনেকটাই বদলে গেছে। তার গবেষণাগারে পৌঁছে দেখে একটি সরকারি টাস্কফোর্স টাইম-মেশিন বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে, কারণ একাধিক টাইম-ডিস্টরশন ধরা পড়েছে গত কয়েক মাসে। এবং তাদের সন্দেহ পড়ে রুদ্রর উপরেই, কারণ তার এক্স-কলিগ রিমা এবার একটি মিডিয়া এক্সপোজেতে দাবি করেছে, “ডক্টর রুদ্র বসু একটি ব্যক্তিগত টাইম-চেম্বার তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি সময় বদলের চেষ্টা করছেন, যাতে নিজের ব্যক্তিগত ক্ষত মেটাতে পারেন।” রিমার এই পদক্ষেপ বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছু নয় রুদ্রর চোখে, কারণ এক সময় এই রিমা-ই ছিল তার সবচেয়ে কাছের সহকর্মী, এবং—অপ্রকাশ্যভাবে—বন্ধু। রুদ্র বুঝে যায়, সে যতবার অতীতে যায়, ভবিষ্যৎ ততটাই ধসে পড়ে, এবং এই টাইম-প্যারাডক্সকে থামাতে না পারলে একদিন হয়তো সময় নিজেই তার অস্তিত্ব হারাবে। কিন্তু তার ছেলের মুখ ভেসে ওঠে বারবার, সেই নিষ্পাপ হাসি—আরেকবার সুযোগ পেলেই সে কিছু ঠিক করতে পারত… হয়তো…
এইবার রুদ্র নতুন করে একটি বড়সড় পরিকল্পনা তৈরি করে—যেখানে সে শুধু অতীতে গিয়ে ঘটনার পরিবর্তন করবে না, বরং টাইম-ফ্রেমের বাইরের একটি মুহূর্ত খুঁজে পাবে, এমন একটি “ডেড টাইম জোন” যেখানে সে অন্য কোনো মানুষের জীবনে না ঢুকে শুধু নিজে নিজেকে ভবিষ্যতের তথ্য দিতে পারবে। এই সময়ের মধ্যে সে নিজেকে “টাইম শ্যাডো” নামে নামকরণ করে, যার উদ্দেশ্য অতীতের নিজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, কিন্তু প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ না করে, শুধু উপদেশ দেওয়া। কিন্তু সমস্যা হয়, যখন সে দেখতে পায় অতীতের তার সেই ভার্সন একেবারে সহজ নয়—সে চরমভাবে যুক্তিবাদী, সন্দেহপ্রবণ এবং ভবিষ্যতের রুদ্রর কথা মানতে নারাজ। দুই রুদ্রর মানসিক দ্বন্দ্বে তৈরি হয় একটি অসমাপ্ত মানসিক যুদ্ধ, যেখানে যুক্তি, আবেগ, এবং অপরাধবোধ মিলেমিশে যায়। এই সংঘাতে একটি চূড়ান্ত প্রশ্ন জন্ম নেয়: “কে বেশি ঠিক—যে ভবিষ্যতের জন্য লড়ে, না যে অতীতের মূল্যবোধ ধরে রাখতে চায়?” উত্তর যদিও মিলল না সেদিন, তবে রুদ্র বুঝে গেল, সে আর ফিরতে পারবে না সাধারণ জীবনে। কারণ তার নিজের ছায়ার মধ্যেও লুকিয়ে আছে এমন এক ছায়া, যার নাম—সময়সংক্রান্তি।
–
গভীর রাতে সময়মন্ত্রের কাচঘেরা গবেষণাগারে দাঁড়িয়ে আছেন ডাক্তার রুদ্রসেন। চারিদিকে নিস্তব্ধতা, কেবল যন্ত্রপাতির হালকা ঘুরঘুর আওয়াজ। গত তিনটি টাইম জাম্পের ফলাফল ভয়াবহ ছিল—প্রতিবার অতীতে ফিরে গিয়ে অনির্বাণকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ভবিষ্যতের বাস্তবতা আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। একবার সে ফিরে গিয়ে ছেলেকে গাড়ি দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচায়, কিন্তু ভবিষ্যতে দেখা যায় যে পৃথিবীতে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, কারণ তার সেই কাজের ফলে একটি প্রভাবশালী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়নি। দ্বিতীয়বার সে অনির্বাণকে স্কুলে পাঠায় না, যেদিন সেই গুলি চলেছিল, কিন্তু ভবিষ্যতে দেখা যায়, স্কুলে আরও অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, কারণ অনির্বাণ না থাকায় সে একজন আত্মঘাতী বন্ধুকে সেদিন আটকাতে পারেনি। তৃতীয়বার রুদ্র অতীতে ফিরে গিয়ে অনির্বাণের মাকে জোর করে বিদেশ পাঠায়, যাতে অনির্বাণের জন্মই না হয়। কিন্তু বাস্তবে ফিরে এসে দেখে যে তার নিজের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে—সময়ের বুননে ফাটল ধরেছে। এইসব ভয়ানক ফলাফল তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে, কিন্তু থামায়নি। কারণ, সময় তার জন্য শুধুমাত্র একক ধারা নয়, এটা একটা ক্যানভাস—যার উপরে সে বারবার নতুনভাবে ছবি আঁকতে চায়, যতক্ষণ না সে সেই আদর্শ চিত্রটি আঁকতে পারে, যেখানে অনির্বাণ বেঁচে থাকবে। কিন্তু সময় যেন প্রতিবার তার এই প্রচেষ্টাকে বিদ্রুপ করে উত্তর দেয়—‘তুমি পারবে না।’
এই অধ্যায়ে সময় নিয়ে রুদ্রের এক গভীর অভিজ্ঞতা ঘটে। টাইম মেশিনে বসে সময়জাল কাটাতে কাটাতে সে হঠাৎ করে অনুভব করে যেন কেউ তাকে দেখছে—সময়-মাত্রার মধ্যেই কেউ, কেউ এক অদৃশ্য সত্তা। প্রথমে সে ভাবে এটা তার ক্লান্ত মস্তিষ্কের কল্পনা, কিন্তু পরে জানতে পারে, প্রতিটি টাইম জাম্পের সময় তার উপর নজর রাখছে এমন কিছু অস্তিত্ব রয়েছে—সময়সত্তা, যারা চায় না কেউ অতীতে হস্তক্ষেপ করুক। এক রাতে, সময়ের মধ্যবর্তী এক শূন্য ঘরে আটকে যায় রুদ্র। সেখানে সে দেখে নিজের কয়েকটি ছায়া-সত্তাকে—অর্থাৎ তার অতীত এবং ভবিষ্যতের কিছু সম্ভাব্য রূপ, যারা প্রত্যেকে অনির্বাণকে বাঁচানোর আলাদা চেষ্টা করেছে। কেউ সফল, কেউ ব্যর্থ, কেউ পাগল হয়ে গেছে। এই দৃশ্য তাকে স্তম্ভিত করে। এক ছায়া-রুদ্র বলে, “যতবার তুমি সময় বদলাও, ততবার তুমি নিজেকেই খণ্ডিত করো। তুমি এখন একটা নয়, অসংখ্য মানুষ—তোমার অস্তিত্ব সময়ের আয়নায় ভেঙে গেছে।” রুদ্র বুঝতে পারে যে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি জাম্প একটা নতুন শাখা সৃষ্টি করছে, এবং সেখানেই আটকে আছে তার ছেলে—প্রতিটি জগতে অনির্বাণের ভাগ্য আলাদা, এবং সে একটি সময়েও স্থায়ী নয়। সময় মানে সরল রেখা নয়, একটি গুচ্ছ, যার প্রতিটি শাখায় আছে নতুন বিপদ।
এই অধ্যায়ের শেষে রুদ্র ফেরে তার বর্তমান-বাস্তবে, যেখানে তার টাইম মেশিনটি এখন অদ্ভুতভাবে বিকৃত। সময়সত্তারা তার যন্ত্রে হস্তক্ষেপ করেছে। সে দেখতে পায়, যন্ত্রের কোডগুলো বদলে গেছে, আর কিছু অজানা ভাষায় লেখা হচ্ছে “STOP, YOU’VE GONE TOO FAR.” এবার তার মনে প্রশ্ন জাগে—সে কি এক বিজ্ঞানী, না এক বিপর্যয়ের কারিগর? সময়কে নিজের ইচ্ছেমতো বাঁকাতে গিয়ে সে কি মানবতার বড়ো কোনো বিপদ ডেকে আনছে? অনির্বাণকে সে আবারও হারিয়েছে, কিন্তু এবার সে যেন আরও অনেক কিছু হারাতে বসেছে—নিজের আত্মা, নিজের যুক্তিবোধ, এমনকি সময়ের মধ্যে নিজের জায়গাটাও। ছেলেকে বাঁচানোর নামে সে একটি সময়-দানবের জন্ম দিয়েছে কি? সময়ের ছায়ারা তাকে বারবার সাবধান করছে, কিন্তু তার পিতৃস্নেহ তাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের গভীরে। সে এবার সিদ্ধান্ত নেয়—শেষ একবার, আর একবারই চেষ্টা করবে। কিন্তু এবার শুধুমাত্র ছেলেকে বাঁচানোর জন্য নয়, বরং সময়ের ফাটল মেরামত করার জন্য—যা সে নিজেই তৈরি করেছে।
–
ডঃ বিভূতি ঘোষের চারপাশে নেমে আসে নিস্তব্ধ এক অন্ধকার। সময়মেরামতি যন্ত্রের নবতম সংস্করণটি চালু হওয়ার পর হঠাৎ যেন সময় নিজেই এক বন্ধ গলিতে প্রবেশ করেছে। রোহনের মৃত্যুর বহু বিকল্প সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে এক এক করে চলতে চলতে অবশেষে সে এসে পৌঁছেছে এমন এক টাইমলাইনে, যেখানে রোহন বেঁচে আছে, কিন্তু বিভূতি নিজেই নেই। এখনকার পৃথিবীতে বিভূতি ঘোষ একসময়কার খ্যাতনামা বিজ্ঞানী হলেও, একটি ‘সফল’ পরীক্ষার পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান, এমনকি কেউ কেউ বিশ্বাস করে, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। এই টাইমলাইনে এসে বিভূতি বুঝতে পারে, সময় নিজেই তার অস্তিত্বকে বাদ দিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে—যেন এক বিকল্প বিনিময়। বিভূতি এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চাইলেও, রোহনের স্মৃতিতে তার কোনও অস্তিত্বই নেই। ছেলের চোখে সে একজন অপরিচিত মধ্যবয়সী মানুষ, যে হঠাৎই তার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে।
বিভূতির মন ভরে ওঠে এক ব্যর্থতার তীব্র অনুভবে। এতগুলো যাত্রা, এতগুলো বিকল্প ভবিষ্যৎ—সবই যেন বিফলে গেল। তিনি রোহনের সান্নিধ্যে থেকে চেষ্টা করেন তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে, তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিরবে দেখে যেতে, এমনভাবে যেন রোহন বুঝতেই না পারে এই অচেনা মানুষটা আদতে তার নিজের পিতা। কিন্তু একদিন, একটি দুর্ঘটনার পর রোহনের হাতে উঠে আসে বিভূতির পুরোনো টাইম-মডিউল। কৌতূহলী রোহন সেটি খুলে ফেলে, আর দেখে—মাঝে মাঝে সেটির পর্দায় ভেসে উঠছে একটি লোকের মুখ—তারই চেহারার সঙ্গে আশ্চর্য মিল। এবং তার নাম: বিভূতি ঘোষ। সময়ের কৌতূহল রোহনের মনে প্রশ্ন তোলে—এই মানুষটি কে? কেন সে তার চারপাশে উপস্থিত? বিভূতির নাম সে কোথায় শুনেছে? একদিন সাহস করে সে বিভূতির মুখোমুখি হয়, এবং সোজাসুজি প্রশ্ন করে বসে—“আপনি কি আমার বাবা?” বিভূতির দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। এতগুলো যাত্রার শেষে, এই একটি প্রশ্ন যেন তার কাছে চূড়ান্ত উত্তর হয়ে দাঁড়ায়।
এই মুহূর্তেই সময় মেরামতি যন্ত্র তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যায় বিভূতিকে। তার সামনে এখন দুটি রাস্তা—এক: এই টাইমলাইনে থেকেই ছেলের পাশে একজন অজানা রক্ষক হয়ে জীবন কাটানো, কিংবা দুই: শেষবারের মতো ফিরে গিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে রোহনের অস্তিত্ব স্থায়ী করে দেওয়া। যন্ত্রের শেষবারের মতো ব্যবহারের আগে বিভূতি একটি ভিডিও রেকর্ড করে যায় ভবিষ্যতের জন্য, যাতে সে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের বলে যেতে পারে—সময় নিয়ন্ত্রণের খেলা মানেই নিয়তি নিয়ে টানাটানি। এবং এই খেলার সবচেয়ে বড় পরিণতি—পরিচয়ের বিলুপ্তি। বিভূতি নিজের অস্তিত্বকে মোছার জন্য যন্ত্রের চূড়ান্ত লুপে প্রবেশ করে। টাইম সার্কিট তাকে নিয়ে যায় সেই মুহূর্তে, যখন প্রথমবার সে যন্ত্রটি চালু করেছিল। কিন্তু এবার, সে নিজেই তার নিজের হাতে যন্ত্রটিকে ধ্বংস করে দেয়—চিরতরে বন্ধ করে দেয় সময় ঘাঁটাঘাঁটির দরজা। রোহন বেঁচে থাকে, ভালো থাকে, এক সাধারণ জীবনে। কিন্তু এই পৃথিবীতে বিভূতি ঘোষ নামে কোনও বিজ্ঞানীর নাম কেউ আর মনে রাখে না—তিনি হারিয়ে যান ইতিহাসের ধুলোয়। তবুও, কোনো এক অচেনা মুহূর্তে, সময়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, একটা আবছা চেহারা হয়তো ঘোরে, ছায়ার মতন—একজন বাবা, যিনি সময়ের পারাবারে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়েছিলেন নিজের সন্তানের জন্য।
–
রাত ৩টা বেজে ৩৩ মিনিট। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা ঘিরে রয়েছে একাডেমির নীচতলার সেই গোপন গবেষণাগারকে, যেখানে ড. অর্ক মুখার্জী শেষবারের মতো তার “Temporal Correction Engine”-এ বসে আছেন। এবার আর দুশ্চিন্তার কোনো চিহ্ন নেই তার চোখে। অর্ক যেন বুঝে গেছেন, এর শেষ কোথায়। গত আটবার তিনি সময়ে ফিরে গেছেন, আটটি বিকল্প ভবিষ্যতের দিকে, যার প্রতিটিতেই ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটেছে—কখনো মানবসভ্যতা ধ্বংস, কখনো এক মহাযুদ্ধে পৃথিবীর পতন, কখনোবা নিজেরই হাতে ছেলের মৃত্যু। প্রতিবারই তিনি নতুন সূত্র আবিষ্কার করেছেন, গাণিতিক পরিমার্জন করেছেন, কিন্তু সময় যেন ঠাট্টা করেছে তার ভালোবাসা নিয়ে। এবার তার হাতে আছে একমাত্র পথ—স্বীকার করা যে কোনো এক ভবিষ্যতের মৃত্যু অপরিহার্য, কিন্তু বেছে নিতে হবে এমন একটা পরিণতি, যেখানে মৃত্যুর অর্থ হয়তো শেষ নয়, বরং এক রকম মুক্তি।
এইবার অর্ক কোনো অতীতে ফিরে যাননি। বরং তার নতুন ধারণা অনুযায়ী, তিনি তৈরি করেছেন “Mirror Loop”—এক প্রকার সময়ের প্রতিচ্ছবি যা নিজেই একটি লুপে চলে, যেখানে কোনও পরিবর্তন ভবিষ্যতের দিকে গিয়ে আবার নিজেকে সঠিক করে ফেলে। এই পদ্ধতিতে তিনি তৈরি করেছেন এক ধরণের “Paradox Box”—একটি ক্যাপসুল, যেখানে অনির্দিষ্ট সংখ্যক সম্ভাব্য ভবিষ্যতকে একত্রে স্থির করে রাখা যায়, যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি নির্ধারিত বাস্তবতা নিজের পথ খুঁজে বের করে। তিনি বেছে নিয়েছেন একটি সময়—৭ই মে, রাত ১০টা ১৭ মিনিট—যেদিন তার ছেলে অয়ন মারা গিয়েছিল। সেই মুহূর্তে তার ছেলের মৃত্যুর কারণ ছিল এক ট্র্যাফিক দুর্ঘটনা, এবং অর্ক এই বারবারের ব্যর্থ চেষ্টাগুলোর মাঝে সেই মূল দুর্ঘটনাটিকে ঘিরে রেখেছেন এক ধরণের টাইম-ফোল্ডিং ভেতরে। এবার তিনি কেবল বসে থাকেন এবং দেখেন—না কোনও হস্তক্ষেপ, না কোনও পরিবর্তন। শুধু দেখেন, কী হয় যখন একজন পিতা সময়কে মুঠোয় ধরে না রেখে, তাকে নিজের পথে চলতে দেন।
ঘড়িতে রাত ঠিক ১০টা ১৭ মিনিট বাজতেই অর্কের চোখ বন্ধ হয়ে আসে। চোখের পাতা ফাঁক করে দেখতে পান, বাইরে বৃষ্টির মতোই অশ্রুবিন্দু ঝরছে আকাশ থেকে। কিন্তু আশ্চর্যভাবে, একটি গাড়িও রাস্তা দিয়ে যায় না। কোনও দুর্ঘটনা ঘটে না। অয়ন রাস্তা পার হয়ে বাবার ল্যাবের দিকে এগিয়ে আসে। ভবিষ্যৎ যেন এই এক মুহূর্তে তার পথে ফিরে এসেছে, যেখানে অর্কের ছেলে বেঁচে যায়, কোনও টাইম ট্র্যাভেল ছাড়াই। অর্ক জানেন না, কোন বাস্তবতাটি স্থায়ী, কিংবা এটা তার মৃত্যুর আগের মায়াবী মুহূর্ত কি না। কিন্তু এতেই তার শান্তি। তিনি জানেন, তিনি শেষ লুপে প্রবেশ করেছেন, যেখান থেকে আর ফেরার ইচ্ছা নেই তার। টাইম মেশিন নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে আসে। তার শেষ হাসিটুকু থেমে যায় টাইম-ক্যাপসুলের আলো নিভে যাওয়ার আগে—যেখানে সময়ের অসীম দোলাচলে একজন পিতা তার সন্তানের মুখ আবার দেখেছেন।
–
অতীত আর ভবিষ্যতের অসীম সীমানায় দাঁড়িয়ে, ডঃ অনিরুদ্ধ ঘোষ বুঝতে পারলেন, তিনি আর সময়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন না—তিনি যুদ্ধ করছেন নিজের অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে। মুম্বইয়ের গ্যাস দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে পৌঁছে তিনি আবার সেই দৃশ্য দেখলেন—আভি তার মা রোহিণীকে বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছে, আর এক ধরণের ঠান্ডা অসহায়ত্ব তার মনের ভেতরে জমে উঠছে। আগেরবারের মতো এবারও তিনি তাকে আটকাতে চাইলেন, কিন্তু হঠাৎ এক অস্পষ্ট উপলব্ধি তাঁর মধ্যে জাগে—হয়তো এই মুহূর্তই সময়ের প্রকৃত “নোড”, একে বদলাতে গেলে সত্যিই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তিনি যন্ত্র বন্ধ করলেন, শুধু একজন দর্শকের মতো দেখলেন, কীভাবে সময় নিজের নিয়মে এগিয়ে যায়, মানুষ বাঁচে, মরে, আবার অন্যভাবে জন্ম নেয়। আভি মারা গেল, কিন্তু রোহিণী বেঁচে গেল। ঘটনাটি অচল সত্যের মতো স্থির হয়ে গেল তাঁর সামনে।
ফিরে এসে অনিরুদ্ধ দেখলেন যে তাঁর তৈরি করা টাইম রিফ্র্যাকশন ল্যাব এবং সেই যন্ত্রটি অদৃশ্য হয়ে গেছে—যেন কোনো উচ্চতর নিয়ম সেটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেই জায়গাটিতে তিনি আবিষ্কার করলেন একটি ছোট ডিভাইস, যেটি একধরনের মেমোরি কোড ধারণ করে রেখেছে। ডিভাইসটি চালু করতেই ভেসে উঠল নানা ভবিষ্যতের ছবি—আভির একাধিক সম্ভাব্য জীবন, তার বিভিন্ন রূপে বেড়ে ওঠা, প্রেমে পড়া, একজন চিকিৎসক হওয়া, এক শিশুকে বাঁচানো… প্রতিটা রূপে আভি যেন তাঁকে একটাই কথা বলছে—“তুমি আমার জীবন বদলাতে চেয়েছিলে, কিন্তু তোমার চেষ্টার মধ্যেই আমি থেকে গেছি, বাবা।” এইবার ডঃ ঘোষ বুঝতে পারলেন, সময় কখনোই একমাত্রিক নয়, এবং প্রতিটি জীবন তার নিজের পথে বহমান। তাঁর ভালোবাসা কখনো অপচয় হয়নি, বরং সেই ভালোবাসাই সময়ের জাল বুনে দিয়েছে।
শেষ দৃশ্যে আমরা দেখি, ডঃ ঘোষ একটি নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করছেন বিজ্ঞানমনস্ক শিশুদের জন্য—নাম রেখেছেন “Project Avik”—যেখানে সময়, পদার্থবিদ্যা, আর জীবনবোধের পাঠ দেওয়া হবে একসঙ্গে। যন্ত্রটি নেই, টাইম ট্র্যাভেল অসম্ভব, কিন্তু স্মৃতির ভেতর সময় অমর। ক্লাসরুমে একটি পোস্টার টানানো আছে: “We cannot fix the past, but we can build futures.” আর সেই পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ডঃ অনিরুদ্ধ ঘোষ, যার চোখে এখন শুধু বিজ্ঞানের আলো নয়—একজন পিতার হৃদয়ের আলো। গল্পটি এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু হয় এক নতুন যুগে, যেখানে সময় শুধুমাত্র একটি প্রবাহ নয়, একটি প্রতিস্মৃতি।
—–