Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - সামাজিক গল্প

অপরিচিতা মোহিনী

Spread the love

সৃজা দত্ত


কলকাতার গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই গোলাপি দরজাটার পেছনে একটা দুনিয়া লুকিয়ে আছে, যেটা বাইরের চোখে শুধু একটা বিউটি পার্লার, কিন্তু ভেতরে জমে আছে আত্মত্যাগ, লড়াই আর পুনর্জন্মের ইতিহাস। ‘মোহর’ নামের সেই পার্লারটা খুব বড় নয়—দুটো চেয়ার, একটা আয়না আর একটা স্টিমার মেশিন—তবু এই ছোট্ট ঘরটাই মোহিনী সেনের জীবনের মূলমঞ্চ। সকালে কাঁচের জানালায় সূর্যের আলো পড়ে, আর সেটা যখন পার্লারের পুরনো দেয়ালে আঁকা রাধা-কৃষ্ণের ছবিতে পড়ে, তখন যেন গোটা ঘরটা একটা শান্তি আর সৌন্দর্যের আশ্রয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এই শান্ত দৃশ্যের আড়ালে ছিলো মোহিনীর শৈশবের তীব্র অন্ধকার, বর্ধমানে জন্ম, সমাজের সঙ্গে প্রথম বিরোধ, মায়ের চোখের জল আর বাবার ধমক—“ছেলেমানুষি করিস না!” সেই ‘ছেলেমানুষি’ শব্দটাই ছিল ওর লিঙ্গপরিচয়ের বিরুদ্ধে প্রথম সামাজিক রায়। পরিবারের কাছে অশ্রদ্ধেয়, পাড়ার কাছে হাসির পাত্র, স্কুলে ঠাট্টার বিষয়—তবুও কোথাও না কোথাও একটা নিজের মতো করে বাঁচার স্বপ্ন ও লালন করত।

রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চাদরের মধ্যে শীত কাটিয়ে, ভিখারিদের ভিড়ে দাঁত মাজা করে, দিনে দিনে নিজের চারপাশে একটা অদৃশ্য ঢাল বানিয়েছিল মোহিনী—যেটা অপমান, অবহেলা, এমনকি নিঃসঙ্গতা থেকেও ওকে রক্ষা করত। সেই প্ল্যাটফর্মেই একদিন দেখা হয়েছিল ‘আঁচল’ নামের একটি এনজিও কর্মীর সঙ্গে, যিনি ওকে বলেছিলেন—“তুই যা, তাতেই সৌন্দর্য আছে। শুধু সেই সৌন্দর্যকে কৌশলে তুলে ধরতে শেখ।” তখন থেকে শুরু হয়েছিল ওর বিউটি ট্রেনিং-এর যাত্রা। ট্রেনিং চলাকালীন ও মুখে রঙ তোলা শিখল, কিন্তু ভিতরের দুঃখ ঢেকে রাখার কৌশল আরও ভালোভাবে আয়ত্ত করল। কেউ ওর নাম জানতে চাইলে বলত, “আমি মোহিনী। এটা আমার পছন্দ করা নাম।” সার্টিফিকেটে পুরুষনাম লেখা থাকলেও ও নিজের পরিচয় গড়ে তোলে নিজেই—সাহসের এক নতুন ভাষায়। কয়েক বছর পরে ও একটি ছোট জায়গা ভাড়া নেয় শহরতলির একটি পাড়ায়, যেখানে গলির শেষে ঘন করে ঝুলতে থাকা তার আর রঙচটা দালানগুলো সমাজের উদাসীনতার প্রতীক। মোহিনী জানত, এই পাড়ার মানুষ ওকে প্রথমে গ্রহণ করবে না, কিন্তু ওর দরকার ছিল একটুখানি জায়গা—যেখানে নিজের মতো করে নিঃশ্বাস নিতে পারবে।

দু’একজন গ্রাহক আসত—সাধারণত বাইরের পাড়ার—কেউ কেউ নির্দিষ্ট পরিচয় জানার পর আর ফিরে আসত না। স্থানীয় মহিলারা কৌতূহলী চোখে দোকানটা দেখে চলে যেত, আর পাশের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে লোকজন বলত, “এইসব লোকেরা সমাজ নষ্ট করে দিচ্ছে।” মোহিনী সব শুনেও মুচকি হাসত। ওর অভ্যস্ত কান অনেক আগেই রুক্ষ শব্দের ক্ষত পেরিয়ে গিয়েছে। তবে এমন এক দিনও ছিল, যখন মন টলমল করত, দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করত—“তুই ঠিক করছিস তো?” আর সেই আয়নায় চোখ পড়লে ও একটা নারীকে দেখত—অবিচল, অভিমানী, কিন্তু নিজের অস্তিত্বে অবিচল। সেই নারীই ছিল মোহিনী—অবশেষে নিজের নাম, রূপ, এবং সত্তাকে একত্র করে সমাজের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস অর্জন করা একজন মানুষ। তার জীবনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি নীরবতা ছিল একেকটা অধ্যায়, যা এক দিন বদলে দিত সেই দরজার ওপারের দৃষ্টিভঙ্গি। এখনো জানত না কীভাবে—কিন্তু ওর বিশ্বাস ছিল, একদিন কেউ না কেউ সেই দরজায় দাঁড়িয়ে বলবে, “তুমি তো আমাদের মতোই। শুধু সাহসী।”

একটা ঝিরঝিরে দুপুর, মেঘের আড়ালে রোদ খেলছে—তেমন এক সময় মোহিনী খেয়াল করল, তার পার্লারের দরজায় দাঁড়িয়ে এক ছোট্ট মেয়ে, চোখে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে ভেতরের দিকে। মেয়েটির গায়ে ছেঁড়া স্কুলের ফ্রক, হাতে একটা ছোট ব্যাগ আর চোখে সেই প্রশ্নবোধক চাহনি, যা বয়সের চাইতেও অনেক বেশি বোঝে। “এসো,” হেসে বলেছিল মোহিনী, একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মেয়েটি ঢুকে পড়ে ঘরে, আর যেন ঘরটা খানিকটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মেয়েটি চারপাশের ছবি, আয়না, লিপস্টিক দেখে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। মোহিনী জানতে চায় নাম—সে জানায়, “আমার নাম রূপা। আমি ও পাশের পাড়ায় থাকি। মা দোকানে কাজ করে। আমি একা থাকি দুপুরে।” সেই দিন থেকে রূপা রোজ দুপুরে একটু একটু করে পার্লারের কোণে বসে থাকতে শুরু করল, কখনও গল্প শুনে, কখনও গায়ে হালকা রঙের ছোঁয়া লাগিয়ে—একটা নিষ্পাপ সম্পর্ক জন্ম নেয়, যেখানে কোনো পরিচয়ের বেড়ি নেই, শুধু আছে এক নির্মল ভালোবাসার বন্ধন।

তবে সমাজ তো নির্দয় চিত্রকর—সে সব দৃশ্য আঁকে নিজেদের রঙে। রূপার মা শান্তা প্রথমে টের পায়নি মেয়ের যাতায়াতের জায়গা কোথায়। একদিন হঠাৎই এসে পড়ে পার্লারে, রূপাকে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে টানতে টানতে নিয়ে যেতে চায়। মোহিনী মাথা নিচু করে বলে, “ওকে কিছু করিনি আমি। শুধু একটু গল্প করত, আমি শুনতাম।” শান্তা উত্তরে চোখে বিদ্বেষ নিয়ে বলে, “আপনার মতো মানুষের কাছ থেকে আমার মেয়ে দূরে থাকুক, এইটাই চাই।” সেই দৃষ্টিতে ঘৃণা ছিল, ভয় ছিল, আর সবচেয়ে বড় ছিল সমাজের গলায় বসে থাকা অহঙ্কার। মোহিনী জানত, ও কাউকে জোর করে আটকে রাখেনি। রূপার মতো একটা নিষ্পাপ মন শুধুই স্নেহ খুঁজে পেয়েছিল তার কাছে। তবু শান্তা চলে যাওয়ার পরে পার্লারের বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে। মোহিনী জানত, এই সমাজে সে কতটা ‘বিচিত্র’, কতটা ‘অসামাজিক’ বলেই মনে করা হয় তাকে, কিন্তু এতদিনে ওর হৃদয়ে জমে থাকা সাহস সেই দৃষ্টিকে কাঁপিয়ে দেয় না।

রূপা পরদিনও আসে, ছুটে এসে বলে, “আমি দিদির সঙ্গে বসব। মা রাগ করেছে, কিন্তু আমি তো জানি তুমি ভালো।” সেই সময় মোহিনী বুঝতে পারে, কোনো একটা দৃষ্টিভঙ্গি যদি বদলায়, সেটা শিশুর চোখ দিয়ে সম্ভব। রূপা শুধু একটা শিশু নয়—সে সেই প্রতীক, যে জানে না সমাজ কাকে ‘পুরুষ’ আর কাকে ‘নারী’ বলছে। সে দেখে ভালোবাসা, নিরাপত্তা আর গল্পের মিষ্টতা। আর মোহিনী নিজের অজান্তেই হয়ে উঠেছে রূপার বন্ধু, শিক্ষিকা, এমনকি অভিভাবকস্বরূপ। সেই দিন থেকে প্রতিদিন দুপুরের ছোট্ট একঘণ্টা যেন মোহিনীর জীবনের এক অমূল্য প্রাপ্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই সম্পর্কটা জানিয়ে দিল, ভালোবাসা কখনও পরিচয়ের মুখ চায় না, শুধু হৃদয়ের ভাষা বোঝে। আর এই সম্পর্কই অদূর ভবিষ্যতে সেই সমাজের চোখে নামিয়ে আনবে প্রশ্ন—কাকে বলে ‘অপরিচিতা’, আর কে-ই বা সত্যিকারের আপন?

রূপার দৈনিক যাতায়াত ধীরে ধীরে নজরে আসে পাড়ার লোকজনের। মোহিনীর পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু পুরুষ তামাশার ভঙ্গিতে বলতে থাকে, “ওই যে আবার শুরু হলো… এখন নাকি বাচ্চাদেরও কাছে টানছে।” চায়ের দোকানের মালিক জাহিদ প্রতিদিন বিকেলে গামছা কাঁধে ফিসফিস করে বলে ওঠে, “এই সব লোক থাকলে তো সমাজ শেষ হয়ে যাবে রে ভাই।” মোহিনী কানে না তুললেও ভিতরে ভিতরে টের পায়—চোখের আড়ালে সমাজ যেন তার বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দিয়েছে। একদিন সন্ধ্যাবেলা কিছু মহিলা মিলে পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে আলোচনা করে, “শান্তার মেয়ে তো রোজ ঢুকে পড়ে সেখানে, একবার ভালোভাবে বোঝানো দরকার। এইরকম পরিবেশে একটা মেয়ে মানুষ কীভাবে বড় হবে?” এইসব কথাগুলো হাওয়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে, আর শান্তার কানে পৌঁছতে সময় লাগে না। সেই রাতে ঘরে ফিরে রূপাকে ধমক দেয় সে, “তুই বলেছিলি সে তো মেয়েদের মত, কিন্তু তুই জানিস ও আদতে কে? এমন মানুষের কাছে যাওয়া ঠিক নয়।” রূপা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “ও তো শুধু আমার দিদি… সে কখনও খারাপ কিছু করেনি!” শান্তার মনে একধরনের দ্বন্দ্ব জন্ম নেয়—একদিকে সমাজের চোখে নিজেকে রক্ষা করার তাগিদ, অন্যদিকে মেয়ের সোজাসাপটা নির্ভরতার ভাষা।

পরদিন সকালে শান্তা দোকানে যাওয়ার আগে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে পার্লারের সামনে দাঁড়ায়। মোহিনী তখন চুল সেট করছিল এক গৃহবধূর, চোখ পড়ে দরজার কাচে—শান্তা দাঁড়িয়ে। সে বাইরে এসে শান্তার দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনি যদি চান, রূপা আর এখানে আসবে না। আমি জোর করে কিছু করিনি।” শান্তা একটু থেমে বলে, “আপনি ওর হোমওয়ার্কে সাহায্য করেন?” মোহিনী একটু অবাক হয়, তারপর মাথা নেড়ে বলে, “করে থাকি… ও খুব বুদ্ধিমতী। অনেক কিছু জানে, শুধু একটু ভালোবাসা পেলে আরও উজ্জ্বল হতে পারবে।” শান্তার মুখ নরম হয়ে আসে। হয়তো সে জীবনে বহুবার অপমান সয়ে গিয়েছে, কিন্তু আজ যে মানুষটা তার মেয়েকে স্নেহের বন্ধনে বেঁধেছে, তাকে অপমান করতে মন চায় না। তবু মুখের ভিতর সমাজের ভয়, চেনা মানুষদের কটূক্তির ছায়া ওকে চুপ করিয়ে রাখে। সেইদিন সে কিছু না বলে ফিরে যায়, কিন্তু তার চোখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে—একটা দ্বিধান্বিত সম্মানবোধ, যা সমাজের কথার চেয়ে সত্যের সামনে দাঁড়াতে শেখার প্রথম ধাপ।

এরপর কয়েকটা দিন রূপা আর আসেনি। মোহিনী প্রথমদিকে বুঝেও কিছু বলে না। পার্লারের কাজের মাঝে মনটা যেন খালি হয়ে থাকে। সেই সময়গুলোতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুপ করে থাকে, যেন প্রতিফলনে নিজেকে প্রশ্ন করে, “আমি কি সত্যিই সমাজের পক্ষে ‘বিপদজনক’?” কিন্তু নিজের ভিতরের শক্তি তাকে জানায়, “তুই কারও মা হবি না, কিন্তু কারও আদর্শ হতে পারিস।” সপ্তাহখানেক পরে এক সন্ধ্যায়, মোহিনী বাইরে থেকে দোকান বন্ধ করে ফিরছে, হঠাৎ দেখতে পায় রূপা দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে। চোখে জল, মুখে হাসি। “মা বলেছে… আমি যদি চাই, তোমার কাছে আসতে পারি।” মোহিনী কিছু বলে না, শুধু বুকে টেনে নেয় মেয়েটাকে। সেই মুহূর্তে চারপাশের শব্দ থেমে যায়, থেমে যায় সমাজের অভিযোগ, কারণ একটিই সত্যি—ভালোবাসা ও বিশ্বাস কখনও সমাজের অনুমতি নিয়ে আসে না, সে নিজের রাস্তা নিজেই খুঁজে নেয়।

বৃষ্টির ধোঁয়া আর ঠান্ডা বাতাসে ভেজা এক বিকেলে রূপা স্কুল থেকে ফিরে পার্কে খেলছিল—পিঠে ছোট ব্যাগ, পায়ে মাটি লেগে থাকা পুরোনো স্যান্ডেল, আর মুখে চিরচেনা হাসি। মোহিনী তখন পার্লারে ব্যস্ত, এক ক্লায়েন্টের চুল বাঁধছিল। হঠাৎ চায়ের দোকানদার জাহিদ ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “ওই যে ছোট্ট মেয়ে… রূপা, পার্কে পড়ে গেছে। কিছু বোঝা যাচ্ছে না।” মোহিনী এক মুহূর্তও দেরি না করে বেরিয়ে পড়ে, খালি পায়ে দৌড়ে যায় পাশের পার্কে। রূপার নিথর দেহটা পড়ে আছে দোলনার পাশে, চারপাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে—কেউ কেউ মোবাইল বার করে ছবি তুলছে, কেউ আবার চুপ করে তাকিয়ে আছে, কেউই এগিয়ে আসছে না। মোহিনী কাঁপতে থাকা হাতে রূপাকে কোলে তোলে, ঠোঁটের ফাঁকে বলে, “রূপা, চোখ খোল মা, আমি এসেছি।” পাশের রিকশাওয়ালাকে চিৎকার করে ডাকে, “ভাই, পেছনে বসাও, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে!” কেউ কিছু না বললেও সেই দৃশ্য দেখে অবশেষে এক যুবক এগিয়ে এসে রিকশা ঠেলে ধরতে সাহায্য করে।

হাসপাতালে পৌঁছতেই জরুরি বিভাগে রূপাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা তার রক্তচাপ মাপতে মাপতে বলে, “টাইমলি না আনলে ব্রেন হাইপোক্সিয়া হতে পারত, মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাত না।” মোহিনী চুপচাপ হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকে—চোখে জল নেই, কিন্তু বুকের ভিতর ঘূর্ণিপাক চলছে। কিছুক্ষণ পর শান্তা ছুটে আসে, খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমার মেয়ে কোথায়? কোথায় আমার রূপা?” নার্স তাকে ভিতরে নিয়ে যায়, আর মোহিনী জানে—সে যে দায়িত্ব নিয়েছে, তার সীমা ছিল না, কিন্তু ভালোবাসা তো সীমার মধ্যে আটকে থাকে না। এক ডাক্তার এসে জানতে চায়, “আপনি মা নন, তবে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন কেন?” মোহিনী শান্ত গলায় বলে, “আমি ওর কিছু নই, কিন্তু ওর জন্য সবকিছু।” সেই শব্দগুলোর মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত শক্তি, যেটা শুনে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা নার্স আর কিছু বলে না। ডাক্তারদের কেউ কেউ সম্মানের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, যেন বুঝে নেয়—এই মানুষটাকে ‘অন্যরকম’ ভাবা ভুল ছিল।

রাত গভীর হলে রূপার জ্ঞান ফিরে আসে, মুখে প্রথম ডাক, “মোহিনী দিদি… তুমি এসেছো তো?” শান্তার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ে, সে মোহিনীর দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনি না থাকলে হয়তো আমি আমার মেয়েকে হারাতাম।” মোহিনী শুধু মাথা ঝাঁকায়, কিছু বলে না। হাসপাতালের করিডোরটা যেন এক নতুন আলোর আভায় ধুয়ে যায়—ভালোবাসার, কৃতজ্ঞতার, আর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ওঠার আলোর। সেই রাতেই শান্তা মোহিনীর পাশে বসে বলে, “আমি ভুল করেছি। আমি বুঝিনি আপনি কতটা আপন হয়ে উঠেছেন।” সেই শব্দগুলো শুধু মোহিনীর জন্য ছিল না, ছিল গোটা সমাজের জন্য—যারা নাম, লিঙ্গ বা পোশাক দেখে মানুষকে বিচার করে। সেই রাতের পর থেকে মোহিনী শুধু একটা ট্রান্সজেন্ডার মহিলা নয়, একজন জীবনরক্ষাকারী, একজন আত্মার আত্মীয়। সমাজের মুখে লেগে থাকা সেই পুরনো ঘৃণার রঙ একটু একটু করে মুছে যেতে শুরু করল।

রূপার হাসপাতাল থেকে ফেরার দিন সকালবেলায় মোহিনী চুপ করে তার পার্লারে বসে ছিল, জানালার ফাঁক দিয়ে রোদের আভা এসে তার মুখে পড়ছিল। চায়ের কাপটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তার মন গরম হয়ে ছিল এক আশ্চর্য অনুভূতিতে—ভয়, কৃতজ্ঞতা আর একটা অদ্ভুত উত্তেজনার মিশেলে। সেই দিনেই দুপুরের দিকে শান্তা প্রথমবার ওর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, “এইটুকু কিছু নয়, শুধু আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলাম।” প্যাকেটের ভিতর ছিলো একজোড়া কাচের চুড়ি আর একটা ছোট্ট চিরকুট—‘আপনি আমার মেয়ে বাঁচিয়েছেন, আমি আপনাকে বিচার করতে পারি না, কেবল শ্রদ্ধা করতে পারি।’ মোহিনী জানে, এই একটি ছোট্ট কথার ওজন সমাজের শত অপমানের থেকেও অনেক বেশি। ওর জীবনে যতজন ‘চোখ রাঙিয়ে’ গিয়েছে, আজ প্রথম কেউ চুপ করে তার হাত ধরে পাশে দাঁড়িয়েছে। শান্তার এই ছোট্ট সান্নিধ্য যেন সমাজের অনেক বছরের জমে থাকা মিথ ভেঙে ফেলার এক নতুন শুরু।

সেই ঘটনার পরে ধীরে ধীরে পাড়ার মানুষজনের দৃষ্টিভঙ্গিও একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল। প্রথমে এসেছিল পাশের বাসার চুমকি বৌদি—যিনি আগে একবার বলে ফেলেছিলেন, “ওর কাছে যাবে না, পাপ লাগবে।” এবার নিজেই এসে পার্লারে বললেন, “চুল কাটাতে চাচ্ছি, আপনি ভালো কাটেন বলে শুনেছি।” মোহিনী চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি তো বলতেন…” চুমকি হেসে বলে, “ভুল করেছিলাম। মানুষ চেনা সবসময় মুখ দেখে হয় না।” এরপর একে একে আরও কয়েকজন মহিলারা আসতে শুরু করে, কেউ হাতে মেহেদি দিতে চায়, কেউ চুল সেট করতে। জাহিদও চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে, “আপনার জন্য এক কাপ ফ্রি—কেননা আপনি রূপাকে ফেরত এনেছেন আমাদের মাঝে।” মোহিনী কিছু বলেনা, শুধু হাসে। সমাজের সেই মুখগুলো, যেগুলো আগে ছিল কাঁটাগাছের মতো ধারালো, এবার যেন ফুলের মতো একটু একটু করে নরম হয়ে আসে।

এই স্বীকৃতির মাঝে একদিন পাড়ায় একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান হয়—স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে প্রথমবার মোহিনীকে ডাকা হয় অতিথি হিসেবে—তাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানায় শান্তা আর রূপা মিলে। রূপা স্টেজে উঠে বলে, “আমার মোহিনী দিদি শুধু চুল কাটে না, জীবন সাজায়।” উপস্থিত সবাই হাততালি দেয়, অনেকের চোখে জল এসে যায়। মোহিনী মাইক্রোফোনে দাঁড়িয়ে বলে, “আমার পরিচয় কি, তা নিয়ে অনেকের সংশয় ছিল। আমি শুধু মানুষ হতে চেয়েছি। আপনাদের চোখে যদি আজ একটু জায়গা পেয়ে থাকি, তবে জানবেন—মানুষ চিনতে সময় লাগে, কিন্তু যদি মন খোলা রাখেন, তা সম্ভব।” তার এই সংক্ষিপ্ত কথার মাঝে ছিল শতাব্দীর অভিমান, লড়াই, ভালোবাসা আর ক্ষমার মিশেল। সেই সন্ধ্যার পরে আর কেউ তাকে ‘অপরিচিতা’ বলেনি। তাকে ডাকা শুরু হয় ‘মোহিনীদি’ বলে। পার্লারের দরজায় যে রঙিন পর্দা আগে বাতাসে দুলত, তা যেন এখন সমাজের পতাকা হয়ে ওঠে—ভিন্নতা নয়, হৃদয়ের উষ্ণতায় গড়া গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক।

অলস দুপুরবেলায় মোহিনীর পার্লারের দরজার ঘণ্টা বেজে উঠলো, সেই একটানা ‘টিং টিং’ আওয়াজ। মোহিনী তখন জানলার ধারে বসে কাঁচের গ্লাসে চা খাচ্ছিলেন, গায়ে হালকা চাদর জড়ানো। ঘরের মধ্যে হালকা নারকেল তেলের গন্ধ আর রঙিন নখ পালিশের গন্ধ ভাসছে। দরজা দিয়ে ঢুকলো এক মধ্যবয়সী মহিলা—কালো সুতির শাড়ি, মুখে ক্লান্তির ছাপ, কাঁধে একটা ব্যাগ। চোখে ছিল দ্বিধা, মুখে চাপা অস্বস্তি। মোহিনী উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বললো, “এসুন, কী করতে চান বলুন।” মহিলা কাঁপা গলায় বললেন, “মেয়ের বিয়ে… একটু সাজিয়ে দেবেন? আমি অনেক জায়গা ঘুরেছি… সবাই হাসে।” তখন পার্লারের কোণে বসে থাকা একটি তরুণী, যাকে সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। মোহিনী নির্লিপ্তভাবে বললো, “আমি কিচ্ছু হাসি না, খালি মানুষকে সাজিয়ে তুলি। কবে বিয়ে?” মহিলা বললেন, “পরশু।” মোহিনী একটু চুপ করে থেকে বললো, “তাহলে আজকেই কাজ শুরু করা যাক।” সেদিনের পর থেকে সেই মা রোজ বিকেলে মেয়েকে নিয়ে আসতেন। মেয়েটির ঠোঁটের কোণে একটা অজানা কষ্ট, সমাজের দৃষ্টি তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে—তা বোঝা যেত চোখ দেখে।

মোহিনী মেয়েটিকে শুধু রূপচর্চা শেখাননি, আত্মবিশ্বাস কীভাবে পরিধান করতে হয় তাও শিখিয়েছেন। সে বুঝিয়েছে, ঠোঁটে লিপস্টিক থাকলেও মুখে যদি আত্মসম্মান না থাকে, তবে রূপ অর্থহীন। মেয়েটি প্রথমে চুপচাপ থাকতো, কথাও বলতো না, আয়নার সামনে দাঁড়াতে কুণ্ঠা বোধ করতো। মোহিনী আয়না ধরে বলতেন, “এই তুমি, তোমার চেহারা নয়, তোমার জেদটাই আসল রূপ।” ধীরে ধীরে মেয়েটি আয়নার সামনে দাঁড়াতে শুরু করলো, চুলে রোলার, চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপগ্লস—আর মনের মধ্যে সাহস। মোহিনীর পার্লার যেন একটা নতুন জগৎ হয়ে উঠলো, যেখানে সমাজের নখদাঁতের আওতা নেই। একজন ট্রান্সজেন্ডার মহিলার স্পর্শে, ভালোবাসায় আর শ্রদ্ধায়, একজন সমাজের উপহাস হওয়া তরুণী হয়ে উঠলো এক আত্মবিশ্বাসী কনেযাত্রী। পার্লারের অন্য ক্রেতারা একদিন অবাক হয়ে দেখলো, সেই মেয়েটি, যে প্রথমদিন চোখ নামিয়ে বসেছিল, আজ আয়নার সামনে নিজের চেহারার প্রশংসা করছে।

দুইদিন পরের সকালে, মোহিনী জানালার ধারে বসে কফি খাচ্ছিলেন। রাস্তায় বিয়ের গাড়ি, বাজনা, আর রঙিন শাড়ির ভিড়। আচমকা পার্লারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গেল সেই মেয়ে, একেবারে লাল বেনারসি, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে টিপ, ঠোঁটে লাল রঙ—আর চোখে জল। মা সঙ্গে ছিলেন, গালে হালকা হাসি। মেয়েটি মোহিনীর দিকে এগিয়ে এসে বলল, “আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।” মোহিনীর চোখ ভিজে উঠলো, কিন্তু তিনি হেসে বললেন, “আমি কিছু করিনি মা, তুমি নিজেকেই খুঁজে পেয়েছো।” সেই মুহূর্তে, জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এক বয়স্ক লোক বললেন, “আপনি তো শুধু মেয়েদের সাজান না, মনও সাজিয়ে দেন।” মোহিনী সেই কথা শুনে চুপ করে থাকলেন, তার চোখের কোণে তখন সূর্যের আলো আর বৃষ্টির ফোঁটার মত ঝিকমিক করছিলো। এমন ভালোবাসা, এমন সম্মান তার জীবনে খুব কম এসেছিল—তবু এই মুহূর্তে সে নিজেকে খুব সুন্দর, খুব স্বীকৃত, আর খুব নিজের বলে মনে করলো।

বৈশাখের শুরুতেই শহরের বড় থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয়েছিল একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের—নাম রাখা হয়েছিল ‘রঙের গল্প’। সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষজন, যাদের জীবন রঙে রঙিন না হয়েও গল্পে পূর্ণ, তাদের নিয়ে এই আয়োজন। মোহিনীকে এই অনুষ্ঠানের অন্যতম মুখ করে ডাকা হয়েছিল। প্রথমে সে একেবারেই যেতে চায়নি। এই ধরনের মঞ্চে পা রাখার তো সাহস ছিল না তার। জীবনের এত অপমান, এত হীনদৃষ্টির মধ্যে থেকেও সে নিজের মতো করে ভালো থাকার পথ খুঁজে নিয়েছিল—এখন আবার এই ধরনের উন্মুক্ত আলোয় গিয়ে পুরোনো ঘা-গুলো ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে তার ছিল না। কিন্তু বাপ্পা, রেশমি, আর পল্লবীর অনুরোধে, ভালোবাসায় সে ধীরে ধীরে রাজি হয়ে যায়। ওরা বলেছিল, “তুমি যদি না যাও, তাহলে ওই মঞ্চে কখনো কারো গল্পই লেখা হবে না।”

অনুষ্ঠানের দিন মোহিনী শাড়ি পরে আসেনি—বরং পরেছিল ঘন নীল রঙের একটি কুর্তা, চোখে হালকা কাজল, ঠোঁটে একফোঁটা গাঢ় লিপস্টিক। তার চোখে ছিল মেঘের মতো গভীরতা, আর হেঁয়ালির মতো হাসি। থিয়েটার হল ভর্তি লোক। উপস্থাপক যখন তার নাম ঘোষণা করল, তখন হঠাৎ নিস্তব্ধতা নেমে এলো। মোহিনী মঞ্চে উঠে দাঁড়াল, চারপাশের আলো তার মুখে এসে পড়ল। প্রথমে তার গলা কেঁপে উঠেছিল, কিন্তু তারপর যেন পল্লবীর ছোট্ট হাতটা সে অনুভব করল নিজের আঙুলে। শুরু করল সে—তার জীবনের কথা, ছোটবেলা, মায়ের মুখ, বাবার ভয়, পার্লার খোলার দিন, সমাজের হাসি—আর সেই দিনটির কথা, যেদিন সে পল্লবীকে বাঁচিয়েছিল। হল নিঃশব্দ, কেউ একটুও নড়েনি। মোহিনী যখন বলল, “আমি নারী, কারণ আমি ভালোবাসতে পারি”—তখন যেন আস্ত সভা উঠে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল মনের মধ্যে।

অনুষ্ঠান শেষে বহু মানুষ এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। কয়েকজন বলল, তারা কখনো ভাবতেই পারেনি এমন একজন মানুষ এত আলো ছড়াতে পারে। কেউ বলল, তারা নিজের ভুল চোখকে আজ সংশোধন করতে চাইছে। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলরের স্ত্রীও এসে বললেন, “আপনি সমাজকে আজ আরেকটা আয়না দেখালেন।” মোহিনী হাসল—সেই নিঃশব্দ, শান্ত হাসি। কিন্তু সবচেয়ে অবাক হয়েছিল যখন একজন বৃদ্ধা এসে বললেন, “তুমি আমার মেয়ের মতো, তুমি যেভাবে দাঁড়ালে, আমার মনে হয়, মেয়েদের আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” সেদিন রাতের আকাশে কোনো তারা ছিল না, কিন্তু মোহিনীর চোখে ছিল একরাশ তারা—যেগুলো সে নিজেই সৃষ্টি করেছিল ভালোবাসা, সাহস আর গ্রহণযোগ্যতার আলোয়।

বৈশাখের শুরুতেই শহরের বড় থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয়েছিল একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের—নাম রাখা হয়েছিল ‘রঙের গল্প’। সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষজন, যাদের জীবন রঙে রঙিন না হয়েও গল্পে পূর্ণ, তাদের নিয়ে এই আয়োজন। মোহিনীকে এই অনুষ্ঠানের অন্যতম মুখ করে ডাকা হয়েছিল। প্রথমে সে একেবারেই যেতে চায়নি। এই ধরনের মঞ্চে পা রাখার তো সাহস ছিল না তার। জীবনের এত অপমান, এত হীনদৃষ্টির মধ্যে থেকেও সে নিজের মতো করে ভালো থাকার পথ খুঁজে নিয়েছিল—এখন আবার এই ধরনের উন্মুক্ত আলোয় গিয়ে পুরোনো ঘা-গুলো ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে তার ছিল না। কিন্তু বাপ্পা, রেশমি, আর পল্লবীর অনুরোধে, ভালোবাসায় সে ধীরে ধীরে রাজি হয়ে যায়। ওরা বলেছিল, “তুমি যদি না যাও, তাহলে ওই মঞ্চে কখনো কারো গল্পই লেখা হবে না।”

অনুষ্ঠানের দিন মোহিনী শাড়ি পরে আসেনি—বরং পরেছিল ঘন নীল রঙের একটি কুর্তা, চোখে হালকা কাজল, ঠোঁটে একফোঁটা গাঢ় লিপস্টিক। তার চোখে ছিল মেঘের মতো গভীরতা, আর হেঁয়ালির মতো হাসি। থিয়েটার হল ভর্তি লোক। উপস্থাপক যখন তার নাম ঘোষণা করল, তখন হঠাৎ নিস্তব্ধতা নেমে এলো। মোহিনী মঞ্চে উঠে দাঁড়াল, চারপাশের আলো তার মুখে এসে পড়ল। প্রথমে তার গলা কেঁপে উঠেছিল, কিন্তু তারপর যেন পল্লবীর ছোট্ট হাতটা সে অনুভব করল নিজের আঙুলে। শুরু করল সে—তার জীবনের কথা, ছোটবেলা, মায়ের মুখ, বাবার ভয়, পার্লার খোলার দিন, সমাজের হাসি—আর সেই দিনটির কথা, যেদিন সে পল্লবীকে বাঁচিয়েছিল। হল নিঃশব্দ, কেউ একটুও নড়েনি। মোহিনী যখন বলল, “আমি নারী, কারণ আমি ভালোবাসতে পারি”—তখন যেন আস্ত সভা উঠে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল মনের মধ্যে।

অনুষ্ঠান শেষে বহু মানুষ এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। কয়েকজন বলল, তারা কখনো ভাবতেই পারেনি এমন একজন মানুষ এত আলো ছড়াতে পারে। কেউ বলল, তারা নিজের ভুল চোখকে আজ সংশোধন করতে চাইছে। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলরের স্ত্রীও এসে বললেন, “আপনি সমাজকে আজ আরেকটা আয়না দেখালেন।” মোহিনী হাসল—সেই নিঃশব্দ, শান্ত হাসি। কিন্তু সবচেয়ে অবাক হয়েছিল যখন একজন বৃদ্ধা এসে বললেন, “তুমি আমার মেয়ের মতো, তুমি যেভাবে দাঁড়ালে, আমার মনে হয়, মেয়েদের আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” সেদিন রাতের আকাশে কোনো তারা ছিল না, কিন্তু মোহিনীর চোখে ছিল একরাশ তারা—যেগুলো সে নিজেই সৃষ্টি করেছিল ভালোবাসা, সাহস আর গ্রহণযোগ্যতার আলোয়।

সমাপ্ত

 

1000045439.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *