Bangla - রহস্য গল্প - হাস্যকৌতুক

নতুনপাড়ার ‘নিরুদ্দেশ’

Spread the love

হিমাদ্রি মুখার্জী


দক্ষিণ কলকাতার ‘উজ্জ্বল আলয়’ হাউজিং কমপ্লেক্সের সকালটা ছিল একেবারে সাধারণ। দুধওয়ালা এসে গেটের বাইরে হাঁক দিলো, মুন্না ওয়াচম্যান ঝিমোতে ঝিমোতে ঘাড় তুলে চাবি দিলো, আর বাচ্চারা স্কুলবাস ধরতে দৌড়োতে লাগল। নবদম্পতি তুহিন আর বুবলি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে নিজেদের ইউটিউব ভিডিওর থাম্বনেইল নিয়ে আলোচনা করছিল, ঠিক তখনই বুবলি ফিসফিস করে বলল, “তুমি লক্ষ করেছো, ৪০৩ ফ্ল্যাটের জানালাটা কাল রাত থেকে বন্ধই আছে। আজ সকালেও কেউ বেরোলো না!” তুহিন কপাল কুঁচকে বলল, “অ্যাই, ঠিক বলেছো তো! বিমলবাবু তো রোজ সকাল সাতটায় হাঁটতে বেরোন, আর অঙ্কুর গলা ফাটিয়ে গেম খেলে—আজ একটাও শব্দ নেই!” সন্দেহজনকভাবে তারা দুজনে দোতলায় উঠে গিয়ে দেখল, ফ্ল্যাট ৪০৩-এর দরজায় ভেতর থেকে লক, আলো নিভানো, আর কোনো শব্দ নেই। কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে তারা মিন্টি দিদিকে খবর দিলো—এই আবাসনের অফিশিয়াল গসিপ ম্যাগাজিন। আর তখনই পুরো হাউজিং চত্বরটা যেন ফিসফিসে উত্তেজনার পলকে ঢেকে গেল।

“আবার কিডন্যাপিং? না কি স্বেচ্ছা নির্বাসন?”—বলে উঠলেন মিন্টি দিদি, সিঁড়ি দিয়ে গটগট করে নেমে এসে জানালার পাশে দাঁড়ালেন। সঞ্জীব কাকুও বারান্দা থেকে সিগারেট ফুঁকে বললেন, “কাল রাত তিনটায় কিছু একটা শব্দ হয়েছিল… ঠিক যেন কিছুর ধাক্কা খাওয়ার মতো!” ইতিমধ্যে হাউজিংয়ের গেটে একটা অস্থায়ী সভা বসে গেল। মুন্না ওয়াচম্যান জানান, গত রাতের সিসিটিভি ফুটেজ হঠাৎ ডিলিট হয়ে গেছে! তুহিন উত্তেজিত হয়ে বলল, “এটা তো ষড়যন্ত্র হতে পারে! এরা যদি কাউকে খুন করে পালিয়ে যায়?” মিন্টি দিদির চোখ চকচক করে উঠলো—এবার তো নাটক জমছেই। অল্প সময়েই খবরে জেনারেল সেক্রেটারি মনোতোষ বাবু প্রস্তাব দিলেন, “কেসটা যেন ঠিকঠাকভাবে উঠে আসে, তার জন্য আমাদের এক জনবিশেষের দরকার। আমাদের এলাকায় এমন একজন আছেন… গোয়েন্দা মিঠুনবাবু!” সবাই যেন একসাথে নিঃশ্বাস ফেলল—মিঠুন মুখোপাধ্যায়, যিনি অবসরপ্রাপ্ত ডাক বিভাগের অফিসার, বর্তমানে হাউজিংয়ের অঘোষিত শখের গোয়েন্দা।

বিকেলের আলো পড়ে আসছে। সাইকেল চালিয়ে প্রবেশ করলেন মিঠুনবাবু—বেজ সুয়েড কোট, খয়েরি জামা, মোটা ফ্রেমের চশমা, আর হাতে চানাচুরের ঠোঙা। সকলের চোখে একরকম সম্ভ্রম, একরকম হাসি। তিনি এসে একবার চারপাশ দেখে বললেন, “ঘটনা আজকের না, কাল রাতের। আর কেউ বেরোয়নি, বলছেন? কেউ ঢুকতেও দেখেননি?” মিন্টি দিদি উত্তরে ঝটিতি বললেন, “না গো, আমি তো রাত তিনটা পর্যন্ত জেগেছিলাম। সুনীতাদি জানালা বন্ধ করছিলেন, এরপর আর আলোও জ্বলেনি।” মিঠুনবাবু হালকা হাসলেন। “তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, যদি তারা বেরোয়নি—তাহলে তারা কোথায়? ঘরের ভেতরে তালা, বাইরে নেই—ক্লাসিক কেস অফ ঘরছাড়া ভূত না কি?” সবাই চুপ। মিঠুনবাবু ধীরে ধীরে ৪০৩ ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়ালেন, তালায় আঙুল ছুঁয়ে বললেন, “তাপ নেই, মানে অনেকক্ষণ আগে লক হয়েছে। কিন্তু তালার ঘর্ষণ দেখছি নতুন—মানে কাল রাতে কেউ ভেতর থেকে লক করেছে। কাঁচের জানালাগুলোয় ধুলো জমে আছে, কিন্তু ভেতরে আলোটা নিভে গেছে। কেউ গেছেন, কিন্তু যাননি—এই ধরনের কেস আমি একবার কাটোয়াতেও পেয়েছিলাম। এবার দেখি এই ফ্ল্যাট তার চেয়ে কতটা চালাক।” আর এতক্ষণ ধরে নিঃশব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা বুঝে গেল—নতুনপাড়ায় এবার রহস্য শুরু হয়েছে, কিন্তু শেষটা কেমন হবে, তা শুধু জানেন গোয়েন্দা মিঠুনবাবুই।

পরদিন সকাল সাড়ে আটটা। মিঠুনবাবু পকেট থেকে একটা ছোট খাতা বের করে ব্যালকনির নিচে বসে এক কাপ লেবু চা হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তুহিন আর বুবলি দোতলা থেকে নিচে তাকিয়ে বলে উঠল, “স্যার, আমরাই প্রথম দেখেছিলাম ফ্ল্যাট বন্ধ। ওরা বেরোয়নি—অঙ্কুর তো রোজ গেম খেলে গলা ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু ওই দিন কিছুই শোনা যায়নি।” মিঠুনবাবু একটা দৃষ্টিপাত করলেন তুহিনের দিকে, তারপর বললেন, “তুমি ক’টা বেজে খেয়াল করেছিলে?” বুবলি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, “সকাল ৭:৩০… না, একটু আগেই হবে… আমি তখন গরম দুধ নিয়ে বসেছিলাম।” মিঠুনবাবু আবার খাতায় টুকে নিলেন। তাঁর চোখে ছিল কোনও রকম উচ্ছ্বাসহীন ঠান্ডা বিচার। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি মিন্টি দিদিকে ডাকলেন, “আপনি তো বলছিলেন আপনি মাঝরাতে কিছু আলো দেখেছিলেন?” মিন্টি দিদি চোখে চশমা ঠেলে বললেন, “হ্যাঁ, তিনটার একটু পর… ছাদের দিকের আলোটা হঠাৎ একবার জ্বলে উঠেছিল, তারপর নিভে যায়। আমি ভেবেছিলাম সুনীতাদি হয়তো পোশাক মেলাতে গিয়েছেন।” মিঠুনবাবু খাতায় একটা গোল দাগ দিলেন।

এরপর তিনি সোজা উঠে গেলেন চারতলায়, ফ্ল্যাট ৪০৩-এর সামনে দাঁড়ালেন। তালা আগের মতোই ভেতর থেকে লাগানো, জানালার কাঁচে রোদের ছায়া পড়ে আছে। তিনি হালকা চাপ দিলেন তালায়—না, এখনও শক্তভাবে আটকানো। দরজার নিচে কাগজপত্রও নেই। আশেপাশে অন্য ফ্ল্যাট থেকে কেউ বেরোচ্ছে না—সবাই জানালা দিয়ে তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনই ছাদের দিকে উঠলেন তিনি। ছাদে পৌঁছে প্রথমেই লক্ষ্য করলেন—এক কোণে কাকের পালকের পাশে একটা ছোট চিপসের প্যাকেট উল্টে পড়ে আছে। পাশে একটা প্যাকেটের গোলাপি টুকরো কাগজ—তাতে হালকা গেমিং গ্লাভসের ছাপ। তিনি চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন, যেন বাতাসের শব্দ শুনছেন। তারপর নিজের মোবাইলে একটা ছবি তুলে নিলেন এবং নিচে নেমে এলেন। ততক্ষণে মিন্টি দিদি নিচে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছেন, “ওরা নিশ্চয়ই ছাদ দিয়ে উধাও হয়েছে! হেলিকপ্টার নামিয়েছে মনে হয়!”—এইসব শুনে মিঠুনবাবু একটু মুচকি হাসলেন।

“আপনারা যদি অনুমতি দেন,” মিঠুনবাবু বললেন, “আমি চাই ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকতে। দরজার লক ফেলে দিলে পরে ফেরানো সম্ভব। তবে ভেতরে কোনো ট্যাম্পারিং যেন না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।” মনোতোষ বাবু ঘাড় নাড়লেন। একটি রড এনে তালা ভাঙা হলো। মিঠুনবাবু ভেতরে ঢুকলেন—আর সকলে একসাথে নিশ্বাস বন্ধ করে রইল। বসু পরিবারের ফ্ল্যাটটা ছিল ঝাঁ-চকচকে—সোফার ওপর ভাঁজ করা কম্বল, চায়ের কাপ ধোয়া হয়নি, রান্নাঘরে থালা ভিজে পড়ে আছে। কিন্তু কাউকে কোথাও দেখা গেল না। টেবিলের ওপর কিছু অগোছালো কাগজ, আর অঙ্কুরের ঘরে বড় একটা মনিটরের পাশে খোলা গেমিং কনসোল, যার তারগুলো জট পাকানো। মিঠুনবাবু হালকা ভ্রু কুঁচকে ঘরের দেয়ালে রাখা আয়নার দিকে তাকালেন—আর তখনই তিনি বুঝলেন, এখানেই লুকিয়ে আছে রহস্যের প্রথম ক্লু। আয়নার ওপরে ঘামে জমে থাকা বাষ্পে লেখা একটা উল্টো শব্দ—“F147”। তিনি আয়নাটা নিজের রুমাল দিয়ে মুছে ফেললেন। “এটা কি নম্বর? পাসওয়ার্ড? নাকি কোনো ফ্ল্যাট নম্বর?”—তিনি ধীরে ধীরে নিজের খাতায় লিখে রাখলেন। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তুহিন আর বুবলি একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল—গল্পটা এবার সত্যিই বেশ রহস্যজনক হয়ে উঠছে।

মিঠুনবাবু ছাদ থেকে নেমে এসে তাঁর চিরচেনা ঢংয়ে হাঁটতে হাঁটতে সোজা পৌঁছলেন গেটের পাশের ছোট্ট রুমটায়—ওইখানেই বসে মুন্না, আবাসনের রাত্রিকালীন ওয়াচম্যান। ছেলেটা সদ্য যুবক, চুল এলোমেলো, চোখে ঝিমুনি, আর পাশে পড়ে আছে চা-ফেলার কৌটো। মিঠুনবাবু দরজার ফ্রেমে ঠুকে বললেন, “কী মুন্না, রাতের পাহারা ভালো যাচ্ছিল?” ছেলেটা লাফ দিয়ে উঠল, “আরে মিঠুনদা! আপনি? আমি তো সোজা আছি… মানে… একটু ঘুমিয়েই পড়েছিলাম শুধু।” মিঠুনবাবু হালকা হাসলেন, “ঘুমের মধ্যে তো দেখছি সিসিটিভিও ঘুমিয়ে পড়ে। ওই রাতের ফুটেজ কই?” মুন্না মুখ কুঁচকে বলল, “স্যার, আমি সকালে দেখলাম… ১টা থেকে ৪টা অবধি সব ফুটেজ অটো ডিলিট হয়ে গেছে। হ্যাং করে গেছিল মনে হয়। পেনড্রাইভে ব্যাকআপও ছিল না।” মিঠুনবাবু চোখ সরু করলেন, “তাহলে এমন ‘সুযোগমতো’ সময়ে ঠিক সিস্টেমই ফেল মারল? তুমি নিশ্চয় কিছু শুনেছিলে অন্তত?”

মুন্না কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “একটা আওয়াজ হয়েছিল, স্যার। যেন কিছু ভারী জিনিস মেঝেতে পড়লো। আমি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম, ছাদে আলো জ্বলছে। তারপরেই নিভে গেল। আমি ভেবেছিলাম পাখিরা বা বেড়াল হবে।” মিঠুনবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “ছাদে আলো জ্বললে তুমি ওপরের ফ্লোরে গিয়ে দেখোনি কেন?” মুন্না মাথা চুলকে বলল, “রাত্রে তো উঠতে মানা… আর ওই ফ্ল্যাটে তো ঝামেলা হয় না সাধারণত।” মিঠুনবাবু ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন, সামনে তুহিন আর বুবলি তখনই ক্যামেরা অন করে রেকর্ডিং শুরু করেছে। “স্যার, আপনার কী ধারণা? কেউ কি সত্যিই পালিয়ে গেছে?”—বুবলি প্রশ্ন করল। মিঠুনবাবু একটু হাসলেন, “রেকর্ডিং বন্ধ করো আগে। ক্লু খুঁজতে গেলে উত্তেজনার থেকে নিরবতা বেশি দরকার।”

তিনি আবার উঠে গেলেন চারতলার করিডোরে। এবার তাঁর লক্ষ্য জানালা—ফ্ল্যাট ৪০৩-এর সামনের করিডোরে একটি ছোট জানালা আছে, যেখানে ধুলো জমেছে, কিন্তু তাতে কিছু চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে—যেন কোনো পায়ের ছাপ ধাপে ধাপে বসে আছে। সে ছাপ লম্বা নয়, বরং ছোট ছোট, হতে পারে অঙ্কুরের। হঠাৎ করেই পাশের ফ্ল্যাটের জানালা খুলে গেল, আর সেখান থেকে উঁকি দিল সঞ্জীব কাকু। “মিঠুনবাবু… কাল রাত তিনটার দিকে গলা ফাটিয়ে গান গাইছিলাম, জানেন তো… কিন্তু তখন একটা ফিসফাস শুনলাম, যেন কারো শ্বাস-প্রশ্বাস। আমি ভেবেছিলাম ছায়া, তাই আলো জ্বালাইনি। এখন দেখি বসুবাবুরাই গায়েব!” মিঠুনবাবু বললেন, “আপনি কি জানেন, ছাদে কীভাবে যাওয়া যায় পাশের সিঁড়ি দিয়ে? মানে কেউ যদি লিফট না নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠে, আপনি দেখতে পেতেন তো?” সঞ্জীব কাকু ভ্রু কুঁচকে বললেন, “হ্যাঁ, নিচের ল্যান্ডিং থেকে আলো পড়ে। কিন্তু ওই দিন কিছু দেখিনি। তবে একটা অদ্ভুত কথা মনে পড়ল—ফ্ল্যাট ৪০৩-এর বারান্দার ফার্ন হঠাৎ করেই নিচে পড়ে ছিল পরদিন সকালে।”

মিঠুনবাবু নোট করলেন—অভ্যন্তরীণ পালানোর রাস্তা নিশ্চয়ই ছাদ বা জানালার দিক দিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে তার জন্য দরজা ভেতর থেকে লক করাটাও একটা ‘স্টেজিং’। অর্থাৎ, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটিকে ‘অলৌকিক’ বানাতে চেয়েছে। তুহিন হঠাৎ করে বলে উঠল, “স্যার, আপনি তো ওই আয়নায় কিছু দেখতে পেয়েছিলেন! F147 কি কোনো ফ্ল্যাট নম্বর বা কোড?” মিঠুনবাবু হেসে বললেন, “ধরো যদি কেউ আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের জন্য একটা ক্লু রেখে যায়, তবে সেটা নিছক সিম্বলও হতে পারে। কিংবা উল্টে দিলে কী হয় সেটা দেখো।” সবাই মিলে উল্টে দিলে লেখা হয় ‘741F’। “৭৪১ নম্বর… মানে কি বাইরের কোন রুম নম্বর?” বুবলি ফিসফিস করে বলল, “না… এটা তো ইনস্টাগ্রাম আইডির কোডও হতে পারে!” তুহিন মুচকি হেসে বলল, “অঙ্কুরের প্রোফাইল নাম ছিল akur741F! মানে সে নিজেই ক্লু দিয়ে গেছে!” মিঠুনবাবু চোখ বন্ধ করে বললেন, “তাহলে এবার ওই প্রোফাইলে ঢোকো। উত্তর হয়তো ওখানেই অপেক্ষা করছে।” অদ্ভুত রহস্য এবার ডিজিটাল হয়ে উঠছে—আর তার পেছনে হয়তো হাস্যরসের পর্দার নিচে রয়েছে এক অবাক করা পরিকল্পনা।

অঙ্কুর বসুর ইনস্টাগ্রাম আইডি খুঁজে পেতে সময় লাগল না। তার প্রোফাইলের নাম ছিল ঠিক যেমন বুবলি বলেছিল — akur741F। প্রোফাইলটা প্রাইভেট, তবে বায়োতে লেখা একটা লাইন মিঠুনবাবুর কপালে ভাঁজ ফেলে দিল — “Life is a glitch, vanish with a switch.” যেন কোনো ধাঁধার মতো। প্রোফাইল পিকচারে সে পরনে গেমিং হুডি পরে বসে আছে কালো আলোতে, পাশে গেমিং গ্লাভসের একটা জ্বলন্ত নীল রেখা। মিঠুনবাবু তার ফোনে স্ক্রিনশট তুলে রাখলেন। এরপর আবার ছাদের দিকে ফিরে গেলেন তিনি—সঙ্গে তুহিন আর বুবলি, যারা এখন নিজেদের ‘অফিশিয়াল সাইডকিক’ বলে দাবি করছে।

ছাদের দক্ষিণ কোণে পৌঁছে, যেখানে আগের দিন প্যাকেটটা পাওয়া গেছিল, মিঠুনবাবু এবার জায়গাটা ভালো করে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। সেখানে প্লাস্টিকের গোলাপি প্যাকেটটি এবার কিছুটা বাতাসে ওলট-পালট হয়ে পড়েছিল। তিনি গ্লাভস পরে সেটাকে খুলতেই ভেতর থেকে বের হলো অদ্ভুত একটা জিনিস—গেমিং গ্লাভসের একটা পুরনো জোড়া, যেটা অঙ্কুরের ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়। সেটা দেখে বুবলি ফিসফিস করে বলল, “স্যার, এটা ওর খুব প্রিয় ছিল। কোনোদিন বাইরে রাখত না!” মিঠুনবাবু প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বললেন, “অন্য কেউ এ জিনিস ছাদে ফেলেছে — হয় চিহ্ন রেখে যেতে, নয় ভুলে গিয়ে।” ঠিক পাশেই একটা লোহার জলাধারের ঢাকনা খোলা দেখে তিনি উঁকি দিলেন ভিতরে — ভেতরটা শুষ্ক, কিন্তু একটা মাটির গন্ধ ভাসছে। ঢাকনার কোণায় আবার একটা সাদা ফিতা বাঁধা — হতে পারে ব্যাগ নামানোর ব্যবস্থা!

তখনই পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তুহিন বলে উঠল, “স্যার, যদি এরা ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায়, তাহলে তো কোনো সিঁড়ি লাগবে!” মিঠুনবাবু একটু হাসলেন, “বা, ভালো প্রশ্ন। কিন্তু ছাদের ওই কোণাটা দেখেছো?” সেখানে একটা পুরনো লোহার সিঁড়ি, যেটা মেইনটেন্যান্স লোকেরা ব্যবহার করে পাশের পাঁচতলা বিল্ডিং-এর টাওয়ারে যেতে। সেই সিঁড়ির একপাশে মচমচে করে বাঁকানো দাগ, যেন সদ্য কেউ নামতে গিয়ে জুতোর দাগ রেখে গেছে। বুবলি হঠাৎ ফোন বের করে একটা পুরনো ভিডিও দেখায়—এক সপ্তাহ আগের একটা ফেসবুক রিল যেখানে দেখা যাচ্ছে, বসু পরিবার হাসতে হাসতে বলছে, “নতুন এক্সপেরিমেন্ট আসছে — কোথাও গায়েব হয়ে যাব, আর কেউ টেরও পাবে না!” তুহিন আঁতকে ওঠে, “ওরা কি সব প্ল্যান করেই করেছিল? এটা কি একটা প্র্যাংক?”

ঠিক তখনই গোটা ঘটনা আরও এক মোড় নেয়, যখন মিঠুনবাবু হাউজিংয়ের সিকিউরিটি রুমে ফেরত গিয়ে বলেন, “আমায় ল্যান্ডিং ক্যামেরার মেমোরি কার্ডটা দাও।” মুন্না লাজুকভাবে একটা ছোট কার্ড দিলো—যেটা নাকি পুরোপুরি ফাঁকা ছিল। কিন্তু মিঠুনবাবু নিজের মোবাইলের সাথে সংযোগ দিয়ে পুরনো রিকভার সফটওয়্যার চালান। হঠাৎ করেই উঠে আসে ৩টা ১৭ মিনিটের একটি ব্লার ভিডিও — যেখানে দেখা যায় ছাদের দিকে তিনটি ছায়া যাচ্ছে, এবং একটানা দৌড়ে সেই পুরনো সিঁড়ির পাশে মিলিয়ে যাচ্ছে। তুহিন চিৎকার করে ওঠে, “এরা তো নিজেরাই পালিয়েছে! ওরা এখানে আছে না!”

ঠিক তখনই ফোনে বেজে ওঠে মিন্টি দিদির কল—“মিঠুনবাবু! খবরের মতো খবর পেলাম। আমাদের পাশের ভবনের নিচে একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে সকাল থেকে। গাড়ির চালক বলছে, তিনজন উঠেছিল মধ্যরাতে, কিন্তু ফ্ল্যাট নম্বর বলতে পারেনি কেউ। শুধু একটা ব্যাগ রেখে বেরিয়ে যায়…” মিঠুনবাবু চোখ বন্ধ করে বললেন, “যারা নিখোঁজ হয়, তারা সবসময় লুকোতে চায় না। কখনো কখনো তারা চায় কেউ খুঁজুক—আর ঠিকমতো চিনে নিক, তারা আদৌ নিখোঁজ কি না।”

সেই মুহূর্তেই গোটা রহস্যটা যেন একটা নতুন দিকে বাঁক নেয়। বসু পরিবার গায়েব হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তারা কি কিডন্যাপড? নাকি নিজেরাই এমন কিছু পরিকল্পনা করেছে, যা বাস্তবের ভেতর ঢুকে পড়েছে একটা নাটকের মতো? আর যদি পরিকল্পনা হয়, তাহলে কার জন্য? কেন? আর এর সঙ্গে কি কোনো ডিজিটাল খেলা জড়িত? গোয়েন্দা মিঠুনবাবু এবার নোটবুকে একটা বাক্য লেখেন—“নিজেরা গায়েব হয়ে নিজেরাই দর্শক খুঁজছে।”

সকালের আলোয় ভিজে উঠেছিল নতুনপাড়ার বারান্দা, কিন্তু মিঠুনবাবু বসেছিলেন তাঁর চিরচেনা ঘরের কোণে। এক কাপ চা, কিছু পুরনো মামলার ফাইল, আর টেবিলের কোণে রাখা সাদা কালার নোটপ্যাড—এগুলোই তাঁর অস্ত্রাগার। আজ সকালটা অন্যরকম। কারণ গতকাল সন্ধ্যায় আবাসনের কমিটি থেকে তাঁকে সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া হয়েছে, যা এখনও অবধি কাউকে দেখানো হয়নি। ‘ফ্ল্যাট ৩বি’র বাসিন্দা তিনজনের রাতের শেষ উপস্থিতির ধরা পড়া ভিডিওটাই ছিল তার মূল আকর্ষণ। সাদা-কালো স্ক্রিনে ধরা পড়ে রাত ১টা ৪৩ মিনিটে ফ্ল্যাটের দরজা খুলেছে, এবং একজন পুরুষ—সম্ভবত প্রদীপবাবু—বেরিয়ে এসেছেন। কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল রাধিকা আর গুগ্গুকে—তিনজনেই একসাথে আবাসনের পিছনের দিকের সিঁড়ি দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। কেউই ব্যাগ-বোঝা বা স্যুটকেস নিয়ে যাননি, মুখেও কোনও উৎকণ্ঠা ছিল না। যেন একেবারে পরিকল্পনা মাফিক বেরিয়েছেন, যেমন কেউ চুপচাপ চলে যায় রাতের ট্রেনে উঠে কোনো গোপন ভ্রমণে।

ভিডিওর টাইমস্ট্যাম্প ও তাদের পরনের জামাকাপড় দেখে মিঠুনবাবু নিশ্চিত হলেন—এটা নিছক উধাও হয়ে যাওয়া ঘটনা নয়, বরং কিছু একটা ‘প্ল্যানড’। কিন্তু প্রশ্ন হল—কেন এই পরিকল্পনা? হঠাৎ করে তিনজন সঙ্গীসাথীকে কিছু না জানিয়ে, সবকিছু তালাবদ্ধ রেখে, কোথায় চলে গেলেন তাঁরা? এবার মিঠুনবাবু যান নতুনপাড়ার এক স্বঘোষিত “স্বপ্নদ্রষ্টা”র কাছে—মারাঠি বাড়ির উপরের তলায় থাকেন পিঙ্কি ভৌমিক, যিনি মাঝেমাঝে Tarot card পড়েন, মানুষের কপালে কী আছে বলে দেন, আবার সবার অলক্ষ্যে সিগারেটও টানেন। তিনি বললেন, “আমি আগের দিন স্বপ্নে দেখেছিলাম রাধিকা ম্যাডাম একটা বেগুনি জামা পরে পাহাড়ের দিকে হাঁটছেন, তাঁর পাশে কেউ একজন বাঁশি বাজাচ্ছে।” এই বর্ণনা শুনে মিঠুনবাবু চোখ বন্ধ করলেন। কারণ সেই বেগুনি জামাটিই ভিডিও ফুটেজে রাধিকার গায়ে ছিল, আর বাঁশির কথা? সেটা মজার হলেও পরে কাজে লেগে যাবে—এই আশাতেই তিনি পিঙ্কির কাছ থেকে রাধিকার আর কিছু কথা জানলেন।

পিঙ্কি বললেন, রাধিকার খুব শখ ছিল হঠাৎ হঠাৎ পালিয়ে কোথাও চলে যাওয়ার, জীবনে “এক্সাইটমেন্ট” খুঁজতে। আর প্রদীপবাবু ছিলেন একজন “সাইলেন্ট অ্যাডভেঞ্চারার”—সারাক্ষণ কাজের মানুষ হলেও, রোজ রাতে ইউটিউবে দেখতেন ‘ভ্যান লাইফ’ ভিডিও। তাঁর ইচ্ছে ছিল গুগ্গুকে নিয়ে হিমাচল ঘুরে আসার। আর গুগ্গু? সে তো একটু অদ্ভুত গোছেরই কুকুর—কারও পোষ মানে না, শুধু রাধিকার কন্ঠ শুনলে লেজ নাড়ে। এতগুলো কথার ভেতরে মিঠুনবাবু একটা প্যাটার্ন খুঁজে পেলেন। তিনজন মানুষ, প্রত্যেকে কিছু না কিছু থেকে পালাতে চেয়েছেন, অথচ সব ছেড়ে কোথাও না কোথাও তাঁরা একসাথে গেছেন। কিন্তু কোথায়? মিঠুনবাবুর চোখ এবার পড়ল আবাসনের পিছনের দরজার ওপারে থাকা সেই পুরনো ‘ওলা-উবার’ পার্কিং জায়গায়, যেখানে মাঝে মাঝে ক্যাব দাঁড়িয়ে থাকে। যদি ওদের কেউ কোনও ক্যাব বুক করে থাকে, তবে সেই রেকর্ড থাকতেই পারে! সুতরাং, এবার তিনি হাঁটলেন আরও এক ধাপ সামনে—ড্রাইভারদের খোঁজে।

আবছা বিকেলের আলো ছড়িয়ে পড়েছে নতুনপাড়ার ছাদের উপর। পশ্চিম দিক থেকে গলির মাথা পেরিয়ে আসা মৃদু হাওয়ায় কিছু খবরের কাগজ উড়ে এসে ছাদে জড়ো হয়েছে। গোয়েন্দা মিঠুনবাবু আজ যেন কিছুটা ক্লান্ত। তিনি ছাদের এক কোণে বসে আছেন, পাশে একটি পুরনো প্লাস্টিকের চেয়ার, তার ওপরে রাখা তার খাতাখানা, আর মাথার পাশে ইন্টারকমে শোনা যাচ্ছে অচেনা কণ্ঠস্বর—অবশ্যই কারো ফোনে কথা বলার শব্দ। তিনি ধীরে ধীরে একটা বিড়ি ধরালেন, চোখ রেখে দিলেন আবাসনের পাশের পানবাজারের গলিটার দিকে। আজ সকাল থেকে পাঁচবার নতুন অভিযোগ এসেছে আবাসনের অন্য ফ্ল্যাট থেকে—কেউ বলছে নীচের কমন পাইপলাইন দিয়ে কেউ গন্ধ ছড়াচ্ছে, কেউ বলছে রাত্তিরে ১১টার পর ফ্ল্যাট ৩বি-র ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এদিকে যার তদন্তে নেমেছেন তিনি—মধুসূদন দত্ত, তাঁর স্ত্রী গীতশ্রী, আর তাদের কলেজ পড়ুয়া ছেলে উজান—তিনজনেরই ঘর তখনও তালাবদ্ধ, পুলিশ বলছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বদলায়নি, তালার কাঠামো অক্ষত, এবং ভিতর থেকে কোনো নড়াচড়ার চিহ্ন নেই।

মিঠুনবাবুর এখন খেয়াল হচ্ছে, ছাদই হলো এমন এক জায়গা যেখানে আবাসনের সবচেয়ে অদ্ভুত চরিত্রদের সন্ধান মেলে। এখানে বিকেলে হাঁটেন উমামাসি—যিনি নিয়মিত গুজব ছড়ান, কখনো বলেন ৬তলার সোমেনবাবু সিআইডি, কখনো বলেন পার্লারের মেয়ে নাকি গুপ্তচরের মেয়ে। আবার ছাদেরই এক কোণে ছাতার নিচে চা খেয়ে বসেন যুবক তমাল—যার হঠাৎ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার রেকর্ড আছে। মিঠুনবাবু ধীরে ধীরে ছাদে হাঁটতে হাঁটতে চোখ রাখলেন ছাদঘরের দিকে, যে ঘর সবসময় তালাবদ্ধ থাকে। সে ঘরের মালিক ছিল এক প্রৌঢ় দম্পতি—আজকাল দেখা যায় না তাঁদের। ছাদের সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে তাঁর মনে পড়ল, কয়েকদিন আগে আবাসনের কেয়ারটেকার বলেছিলেন, ওই ছাদঘর থেকে মাঝে মাঝে হালকা ট্যাপ কল খোলার আওয়াজ শোনা যায়। কী আশ্চর্য! সেই সময় তো তালা লেগেই থাকে। তাহলে কি কেউ রাতে লুকিয়ে ব্যবহার করছে ওই ঘরটা? মিঠুনবাবু সিদ্ধান্ত নিলেন, আজ রাতেই তিনি ছাদের দিকটা নজরে রাখবেন।

রাত দশটা বেজে চলেছে। আবাসনের আলো কমে এসেছে, শুধু ছাদের কোনায় টিমটিম করে জ্বলছে সাদা বাতি। মিঠুনবাবু ছাদের নীচেই লুকিয়ে থেকে কানে শুনলেন—টুক করে একটা শব্দ। সেটা ছাদঘরের দিক থেকেই এলো। একটু পরে কারো পায়ের আওয়াজ। ছাদঘরের গেটের সামনে কেউ এসে দাঁড়াল। মিঠুনবাবু হাঁটু ভাঁজ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন নিঃশব্দে, তাঁর হাতে টর্চ। হঠাৎ টর্চ জ্বালিয়ে ফেলতেই তিনি দেখে ফেললেন এক মাঝবয়সি মানুষ, যিনি বোকা বনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন আলোয়। সেই মানুষটির মুখে পরিষ্কার ভয়, কিন্তু অবাক ব্যাপার—তিনি মধুসূদন দত্ত! হ্যাঁ, যিনি ‘নিখোঁজ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে! তিনি মুখ খুললেন—”আমি পালাইনি মশাই, আমি তো ছাদেই ছিলাম এতদিন!” মিঠুনবাবু বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন, আর মধুসূদনবাবু থরথর কণ্ঠে বলতে লাগলেন, “আমাদের পরিবার ফেঁসে গেছি এক আজব গেমে, এক ‘রিয়েলিটি শো’-তে অংশ নেওয়ার ফাঁদে পড়েছি আমরা—যেখানে ‘গায়েব’ হওয়াটা চুক্তির অংশ!” মিঠুনবাবু কিছুক্ষণ স্তব্ধ, তারপর তাঁর চোখে ফুটে উঠল সেই স্বভাবসিদ্ধ কৌতূহলের দীপ্তি—এই রহস্যে এবার নতুন এক মোড় এসেছে, এবং এই ছাদই যেন সমস্ত কিছুর কেন্দ্রবিন্দু।

রাত্রি সাড়ে নটা। আবাসনের কমিউনিটি হলে একজোড়া টিউবলাইটের আলোয় গা গুঁজে বসে আছেন গোয়েন্দা মিঠুনবাবু, পাশে স্টিলের থালায় ভেজা মুড়ি, পেঁয়াজ কুচি, আর এক কাপ চা। ওঁর সামনে মোবাইল নিয়ে গম্ভীর মুখে বসে রয়েছেন তাপসদা—নতুনপাড়ার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ‘অ্যাডমিন’। এই গ্রুপই যেন গোটা আবাসনের এক অলিখিত রাশ। সবার খবর, ঝগড়া, প্রেম, ঠাট্টা—সব এই গোষ্ঠীতেই। “এই গোষ্ঠীটাই সব বলে দেবে,” তাপসদা গম্ভীর মুখে বললেন। মিঠুনবাবু চশমা নামিয়ে বললেন, “দেখুন তো, যে দিন ওরা উধাও হল, তার আগের দিন বা ওই দিন গোষ্ঠীতে কেউ কিছু লিখেছিল?” তাপসদা মোবাইলে স্ক্রল করতে করতে চোখ কুঁচকে বললেন, “সেদিন সন্ধ্যায় স্নিগ্ধা সেন একটা অদ্ভুত মেসেজ পাঠিয়েছিল—‘অপরিচিত শব্দ শুনছি ১৪০৩-এ, কেউ কি জানে ওখানে নতুন কেউ উঠেছে?’” মিঠুনবাবু সঙ্গে সঙ্গে লিখে রাখলেন, “অপরিচিত শব্দ… রাতে…”।

পরদিন সকালে, গোয়েন্দা মিঠুনবাবু ১৪০৩ ফ্ল্যাটে আবার গিয়ে দাঁড়ালেন। তালা আগের মতই লাগানো। কিন্তু জানালার ফাঁকে এবার কেমন যেন একটা খসখসে শব্দ শুনলেন। কানে ঝুঁকে শুনলেন, যেন কাগজ ছেঁড়ার মত শব্দ। তিনি জানালার দিকে গিয়ে বারান্দার প্ল্যান দেখলেন—একটা ছোট্ট স্ক্রিনড বালকনি, এবং সেখানে মাটিতে কিছু ফেলে রাখা আছে—যেন বই, খবরের কাগজের স্তুপ। ঠিক তখনই একফোঁটা গন্ধ পেলেন। পুরনো ভিজে বইয়ের গন্ধ। “মানে এরা ভেতরে কিছু করছিল,” নিজেকেই বললেন মিঠুনবাবু। তিনি তখনই নিচে নেমে আসেন, এবং হাজির হন অঞ্জলি মিত্রর কাছে—যিনি আবাসনের ‘ক্লিনিং’ সেকশনের ইনচার্জ। “তিনজন কোথাও বেরোলে তো নিশ্চয়ই আবর্জনা ফেলার সময় হাউজিং স্টাফের চোখে পড়ার কথা?” অঞ্জলি বললেন, “ওই পরিবারটা খুবই গম্ভীর, কাউকে কথাও বলেনি। তবে তিন দিন আগে রাতে ওদের ডাস্টবিন থেকে আমরা তিনটা প্যাকেট পাই—একটার মধ্যে শুধু ফাঁকা ম্যাজিক কিউবের বাক্স, আর বাকিগুলোয় ছিল ছেঁড়া ম্যাগাজিন।” মিঠুনবাবু এবার বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেন।

সন্ধ্যায় মিঠুনবাবু আবার তাঁর সাইকেল নিয়ে আবাসনের চারপাশ ঘুরে দেখতে বেরোলেন। লক্ষ্য করলেন, আবাসনের লাগোয়া যে পরিত্যক্ত কমার্শিয়াল শেডটা ছিল, সেটার একপাশে ছোট্ট একটা দরজা খোলা। এবং দরজার বাইরে ছেঁড়া কাগজের গুঁড়ো উড়ছে। তিনি সাবধানে ভেতরে ঢুকলেন। প্রায় আধো অন্ধকার, কিন্তু টর্চ ফেলতেই দেখতে পেলেন—একটা খালি জায়গায় ত্রিপল পাতা, তিনটে স্লিপিং ব্যাগ, আর আশেপাশে ছড়ানো ছেঁড়া পত্রিকা, ম্যাজিক কিউব, ইন্সট্যান্ট নুডলসের প্যাকেট, জল ভর্তি বোতল! ঘরের এক কোণে ঝুলছে একটা ছোট চার্জার ফ্যান। মিঠুনবাবুর মুখে হালকা হাসি ফুটল। “তাহলে তারা নিজেরাই কোথাও যায়নি—এখানেই আছে, তবে লুকিয়ে। কিন্তু কেন?” হঠাৎ পেছন থেকে একটা আওয়াজ—“স্যার, প্লিজ কিছু বলবেন না!” ফিরে তাকাতেই তিনটি পরিচিত মুখ, যাদের উধাও বলে ধরা হচ্ছিল, এখন মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। রহস্য তো ফাঁস হয়েই গেল, কিন্তু কেন এই গোপন আশ্রয়—তা জানতে হলে আরও একটু খোঁজ নিতে হবে। মিঠুনবাবুর চোখে তখন শুধুই কৌতূহল আর হালকা হেসে ফেলার মুচকি হাসি।

নতুনপাড়ার আবাসনে এখন অনেকটাই ঝিম ধরা শোরগোল। প্রত্যেকে অপেক্ষা করছে সেই রহস্যের শেষ পৃষ্ঠার জন্য। গোয়েন্দা মিঠুনবাবু যেন এক অদৃশ্য সুতোয় জড়িয়ে ফেলেছেন ঘটনাগুলিকে, কিন্তু শেষ গিঁটটি যেন আটকে রয়েছে। সন্ধ্যাবেলায় অফিস ফেরত শুভাশিসবাবু গেটের দারোয়ানের ঘরে বসে ছিলেন, তখনই মিঠুনবাবু এসে পড়লেন—হাতে একটা মোটা খাতা আর পুরনো ডিভাইস। “দারোয়ান সঞ্জীবদা,” ডাক দিলেন, “আপনার কাছে কি সেদিন রাতের সিসিটিভি ফুটেজটা আছে?” সঞ্জীববাবু বললেন, “ম্যামরি ফুল হয়ে গেছিল স্যার, দুদিন পরেই ডিলিট হয়ে গেছে।” মিঠুনবাবু বললেন, “ভাগ্য ভালো, আগেরদিনই আমি কপি করে নিয়েছিলাম—তোমরা কেউই জানো না।” আবাসনের কমন রুমে সকলকে ডেকে এনে বড় পর্দায় চালানো হল সেই ফুটেজ। রাত ১টা ৩৭ মিনিটে দেখা গেল, ফ্ল্যাট বি-৭-এর বাইরে কিছু ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। হঠাৎ করেই যেন ফ্ল্যাটের দরজা খুলল—তিনটি ছায়ামূর্তি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল ধীরে ধীরে, কারোর মুখ দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার—তারা নিজেরাই বেরিয়েছিল, জোর করে কেউ তুলে নিয়ে যায়নি।

মিঠুনবাবু ভিডিও থামিয়ে বললেন, “এই দেখুন, এখানেই ধোঁয়ার মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে… যেন ধোঁয়া এসে ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকেছিল, আর তারপরে তারাই বেরিয়ে যায়!” দর্শকদের কেউ কেউ হেসে উঠলেন, “স্যার, এ তো ভূতের কেস মনে হচ্ছে!” মিঠুনবাবু ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বললেন, “ভূত নয়, এটা ধোঁয়া—কিন্তু রান্নাঘরের নয়। এটা একটি বিশেষ ধরণের স্লিপিং গ্যাস, যা মানুষের ঘুম টেনে নিয়ে যায় অনেক গভীরে। এখন প্রশ্ন হল—কে এই গ্যাস ছেড়েছিল?” এই কথা শোনার পর ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা একটু চিন্তায় পড়লেন। কেউ কি তাহলে পরিকল্পিতভাবে তাদের ঘুম পাড়িয়ে বাইরে বের করে নিয়ে গেছিল? কিন্তু তারা তো নিজের পায়েই হেঁটে বেরিয়েছিল! আর কারোর মুখে জোরের চিহ্নও নেই! মিঠুনবাবু বললেন, “এই স্লিপিং গ্যাস আসলে ছিল মৃদু, যার ফলে শরীর বশে থাকলেও মন ঘুমে ডুবে থাকে। এটা খুব সাধারণ কৌশল, ট্রান্সপোর্ট বা সিনেমার শুটিংয়ে মাঝে মাঝে ব্যবহার হয়।” এরপর তিনি একটি সাদা কাগজে কিছু লাইন আঁকলেন, যার মধ্যে ছিল ফ্ল্যাটের অবস্থান, জানালা, দরজা এবং এসি-র অবস্থান। “যদি কেউ বাইরের এসি পাইপ দিয়ে গ্যাস ঢোকাতে চায়, তাহলে ঠিক এইভাবে সেটা করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হল—এ কাজটা করল কে? এবং কেন?”

শেষ পর্যন্ত, মিঠুনবাবু জানালেন, “এই ভিডিও ফুটেজের বাইরে আরও একটা সূত্র আমার হাতে আছে—যেটা আমি কাউকে বলিনি। সেদিন রাতে পাশের ফ্ল্যাটের একটি ছোট মেয়ে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। ও বলেছে, ‘একজন জ্যাঠু গ্যাসের মাস্ক পরে এসেছিল, আর দরজার ফাঁক দিয়ে কিছু একটা ঢুকিয়েছিল।’ আমি সেই শিশুটিকে দেখিয়েছিলাম কয়েকটি ছবি—আর ও চিনে ফেলেছে ওই লোকটিকে।” মিঠুনবাবু তার খাতা খুলে একটি ছবি বের করলেন—সঞ্জীব দারোয়ান! উপস্থিত সবাই একসাথে চমকে উঠল। সঞ্জীব হতভম্ব হয়ে বলল, “আমি! না না না, আমি তো…” মিঠুনবাবু তখন হাসতে হাসতেই বলে উঠলেন, “আপনি নন দারোয়ান সঞ্জীব, আপনি তো নির্দোষ। তবে আপনি যে ছোট ভাইপো থাকে আপনার সঙ্গে, সে-ই এই কাজ করেছে—আপনার নাম ভাঙিয়ে।” পর্দায় তখন ভাইপোর ছবিও উঠে এসেছে। মিঠুনবাবু বললেন, “সে নকল আইডি বানিয়ে নতুন এক বিজ্ঞাপনী কোম্পানির কাজ নিচ্ছিল, কিন্তু তার প্ল্যান ফেঁসে যায়। সে মনে করেছিল, ফ্ল্যাট বি-৭-এর বাসিন্দারা তার ষড়যন্ত্রের পথে বাধা হতে পারে। তাই সে এই নাটক করে তিনজনকে দূরে সরিয়ে রাখে, এবং নিজে প্রমাণ লোপাট করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়।” সব শুনে সকলেই হেসে ওঠে, কারণ সত্যি কথা বলতে—এই রহস্য ছিল যতটা জটিল, তার থেকেও বেশি ‘বেড়াল-ছানার’ মতো চমকপ্রদ!

নতুনপাড়ার ঝকঝকে সকালের গায়ে তখনও আগের রাতের অস্থিরতার ধোঁয়া লেগে। গেটের দারোয়ান বিশ্বজিৎবাবু আবারও খবরের কাগজের ওপর চোখ রেখেছেন, যেন লাইনচ্যুত ট্রেনের মত তার নিত্য অভ্যেসটা আবারও ঠিকঠাক ট্র‍্যাকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন। তবে ওই ফ্ল্যাট নম্বর ৩বি—যেখান থেকে একযোগে তিনজন মানুষ বেপাত্তা, সেখানে যেন এখনও আড়ালে ছায়ারা কথা বলছে। গোয়েন্দা মিঠুনবাবু আজ একটু অন্যরকম মুডে ছিলেন—হাতের পাইপটা আজ নেই, বরং ক্যারিকেচার আঁকার খাতাটা নিয়ে চলে এসেছেন। বয়সে ষাট ছুঁইছুঁই হলেও, তাঁর অনুসন্ধানী চোখে আজ বেশ একটা শিশুসুলভ কৌতূহল।

তিনি আবার ঢুকলেন ৩বি ফ্ল্যাটে—আধবোজা জানালায় রোদ এসে পড়েছে, কিন্তু এক কোণে ছায়া আজ কিছুটা ঘন মনে হলো। আলনাতে ঝুলে থাকা একটি পুরোনো জ্যাকেটের পকেটে হঠাৎ করেই হাতে এলো একটি সিনেমার টিকিট—তারিখ গত সপ্তাহের, নাম ‘চান্দনি রাতের ধাঁধা’। মিঠুনবাবুর চোখ চকচক করে উঠল, তিনি মনে মনে বললেন, “সিনেমা দেখছে কিন্তু কেউ বলেনি কিছু?” তিনি বেরিয়ে এলেন, নীচে নেমে প্রথমেই ডাকলেন ৪বি’র ছাত্র সৌরভকে—সে তো বলেছিল সে ওই তিনজনকে মাঝে মাঝে দেখেছে একসঙ্গে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে, কফি খেতে খেতে গপ্পো করতে। সৌরভ একটু হেঁসে বলল, “আসলে তারা একটা থিয়েটার গ্রুপ করত, নিজেরাই প্লে লিখত, অভিনয় করত—পরে শুনেছিলাম একটা শ্যুটিংও নাকি শুরু করেছে!” মিঠুনবাবু এবার বুঝলেন—এ রহস্যে নাটকের ছায়া পড়েছে, হুবহু তাদেরই লেখা প্লটের মতোই ঘটছে ঘটনা।

সন্ধ্যায় মিঠুনবাবু ফের গেলেন নতুনপাড়ার ছাদে, যেখানে হালকা আলো-আঁধারির মধ্যে একটা প্রজেক্টর রেখে ছোটখাটো মুভি নাইট হত। তিনি হঠাৎই ছাদের পেছনের ঘরের তালা খুলে দেখলেন—ভেতরে ক্যামেরা, লাইট, মেকআপের জিনিস, আর তিনজনের ছবি সাজানো সেটের মতো করে। সাথে একটা ডায়েরি, যেখানে লেখা, “অন্তর্ধান নাটকটা বাস্তবে করেই প্রমাণ করতে হবে—লোকজন এখন আর থিয়েটারে আসে না, একবার যদি সত্যিকারের ঘটনা মনে করে মিডিয়া কভারেজ হয়, নাটক হিট হবেই।” মিঠুনবাবুর মুখে হালকা হাসি ফুটল—তিনি বুঝে গেলেন, এই তিন ‘নিরুদ্দেশ’ মানুষ আসলে নিজেরাই নিজেদের গুম করেছে, পুরো আবাসনকে এক বিশাল প্র্যাঙ্কের মঞ্চ বানিয়ে! কিন্তু এরপরেও একটাই প্রশ্ন—তারা এখন কোথায়?

১০

শীতের শেষ সন্ধ্যা, আবাসনের ক্লাবঘরের আলোটা একটু কমই জ্বলে ছিল। অথচ সেই হালকা আলোতেই মুখ গম্ভীর করে বসেছিলেন গোয়েন্দা মিঠুনবাবু, আশেপাশে রঘু কাকু, মিসেস লাহা, ঝুমা, সিকিউরিটি গার্ড মহাদেব, আর সর্বশেষে তিন ‘নিরুদ্দেশ’ মানুষ—রাহুল, রুদ্রাণী আর রতন!

মিঠুনবাবু খোলা জানালার পাশে বসে একটা বিড়ি ধরিয়েই বললেন, “তাহলে এবার সবটা পরিস্কার করি। যে রহস্য এতদিন ধরে আবাসনবাসীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, সেটা আদতে ছিল একেবারে আমাদের চোখের সামনেই। তিনজন হঠাৎ উধাও হয়ে যান, ঘরে তালা, কোনো ক্লু নেই। কিন্তু ঘরটার পেছনের ছোট জানালাটা? ওটা থেকেই তো বেরিয়ে গেছিলেন রাহুল আর রতন—রুদ্রাণী তখনও বেরোননি। তাঁরা কেউ অপহৃত হননি, কেউ পালাননি। তাঁরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন নিজেরাই, চুপিসারে—নাটকীয় কায়দায়।”

রঘু কাকু কপালে হাত দিয়ে বললেন, “কিন্তু কেন, মিঠুনবাবু? কেন হঠাৎ তিনজন এমনভাবে উধাও হলেন?”

মিঠুনবাবু একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন, “একটা সিনেমা বানানোর প্ল্যান ছিল রাহুল আর রতনের। রুদ্রাণী অভিনয় করতেন, রাহুল চিত্রনাট্য লেখেন, রতন পরিচালনা করতেন। ওরা ঠিক করেছিল বাস্তব ‘মিসিং কেস’কে কেন্দ্র করে একটা সাসপেন্স-কমেডি সিনেমা বানাবে। আর এই আবাসনের লোকজন, তাদের রিয়্যাকশন, খোঁজাখুঁজি—সবই হবে ‘ডকু-স্টাইল’ ফুটেজ। লুকানো ক্যামেরা দিয়ে সব রেকর্ড করা হয়েছিল। তাই ঘরে ক্যামেরা, ড্রোন—সব ছিল লুকানোভাবে।”

মিসেস লাহা বিস্ময়ে মুখে হাত চাপা দিয়ে বললেন, “মানে… আমরাই তো সিনেমার চরিত্র হয়ে গেছিলাম!”

ঝুমা হেসে ফেলল, “সিরিয়াসলি? আমাদের দুশ্চিন্তা, কান্নাকাটি সব রেকর্ড করেছিলে?”

রাহুল একটু লজ্জিত মুখে মাথা নিচু করে বলল, “আসলে সিনেমার আইডিয়া ছিল রিয়েল রিঅ্যাকশন নিয়ে। মিঠুনবাবুর মতো আসল গোয়েন্দার তদন্ত তো সিনেমার হাইলাইট হয়ে যাবে—আমরা ভেবেই পাইনি উনি এতটা দূর যাবেন!”

মিঠুনবাবু একটু মুচকি হাসলেন, “আমি দূর না গেলে তো তোমাদের চক্রান্ত ফাঁস হতো না, বুঝলে রাহুলবাবু! তবে, একটা কথা বলতেই হয়, তোমাদের পরিকল্পনা অভিনব। আর আমি মজা পেয়েছি। কিন্তু ভবিষ্যতে কাউকে এমন অন্ধকারে না রেখেই প্ল্যান করতে হবে।”

রতন দাঁড়িয়ে পড়ে হাতজোড় করল, “ভবিষ্যতে আমরা পুরো আবাসনকে ইনভলভ করেই কাজ করব—এই সিনেমার নামই দেব ‘নতুনপাড়ার নিরুদ্দেশ’। আর প্রিমিয়ার হবে এই ক্লাবঘরেই!”

হঠাৎ সবাই হেসে উঠল—রঘু কাকুর হো হো হাসি, মিসেস লাহার ঠোঁট চেপে রাখা নিঃশব্দ আনন্দ, ঝুমার হাসিতে কান্না, মহাদেবের গম্ভীর মুখে হালকা প্রশান্তির ছায়া। মিঠুনবাবু তখন শেষ বিড়িটা ফেলে বলে উঠলেন, “সিনেমা হোক, কিন্তু বাস্তব নিয়ে খেলবেন না আর! আর হ্যাঁ, আমাকে অবশ্যই ক্যামিও দিতে হবে!”

ক্লাবঘরের বাইরে তখন হালকা বৃষ্টি। আর ভেতরে আবাসনের মানুষগুলো যেন হাসতে হাসতে মিলিয়ে গেল একসাথে—রহস্য মিটে গেছে, কিন্তু তার রেশ থেকে যাবে বহুদিন।

সমাপ্ত

1000043996.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *