Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

অন্তর্লীন

Spread the love

চৈতালি মুখার্জি


সকালের আলো জানালার পর্দা ছুঁয়ে বিছানার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে। তৃষা সেন ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন দেয়ালের দিকে। একটা থমথমে নিঃশব্দতা, যেন প্রতিটি দিন একই ভাবে নিজের ভারে এগিয়ে আসে তার জীবনে। পাশের ঘর থেকে কাবেরী সেন—তার মা—চায়ের কাপ রাখার আওয়াজে ব্যস্ততার সূচনা জানিয়ে দেয়। “চা ঠান্ডা হয়ে যাবে,”—এটাই তৃষার প্রতিদিনের প্রথম শোনা সংলাপ। সে কিছু না বলে উঠে পড়ে, মুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে। কাবেরী চায়ের কাপে চিনি কম দেখেই মুখ বাঁকান, “আজকাল এসব মিষ্টিহীন জীবনটাই কি খুব ফ্যাশনেবল?” তৃষা হেসে বলে, “না রে মা, আজকে গলায় একটু সমস্যা, তাই মিষ্টি কম। ক্লাসে তো সারাদিন কথা বলতেই হয়।” এইরকম ছোট ছোট যুক্তিতে সে মাকে সন্তুষ্ট রাখে। নিজের অভ্যস্ত মুখোশ পরে সে বাইরের জগতে বেরিয়ে পড়ে—একজন হাসিখুশি স্কুলশিক্ষিকার সাজে। দোয়াতুলিতে চুল গুঁজে রাখা, হালকা কাজের শাড়ি, চোখে একটু কাজল, কপালে একটি টিপ—সব মিলিয়ে সে যেন এক প্রতিদিনের নিখুঁত পরিপাটি রূপ।

ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে, বাসের জানালা দিয়ে বাইরের শহরটাকে দেখে সে—যার প্রতিটি মোড় সে চেনে, তবু কোথাও একটা অচেনা ভাব থাকে। স্কুলের গেট পেরোতেই ছাত্রছাত্রীরা দৌড়ে আসে—“ম্যাম, আজকে ডিকটেশন আছে?”, “আপনি কাল খুব সুন্দর গল্প বলেছিলেন”—তৃষার মুখে হাসি আসে, সেই নির্ভরশীলতা তাকে কোথাও একটু জাগিয়ে তোলে। সহকর্মীদের সঙ্গে টিচার্স রুমে ঢুকলে মেঘলা বলে ওঠে, “আজকের শাড়িটা একদম তোমার মতো, শান্ত কিন্তু নজরকাড়া।” তৃষা হেসে বলে, “তুইও কম কিউট না।” তারপর ক্লাসে ঢুকে পড়লে, সে যেন এক অন্য জগতে প্রবেশ করে—যেখানে শব্দের রাজত্ব, বোর্ডের ওপরে লেখা ইংরেজি কবিতার লাইন, ছাত্রীদের খুশি মুখ—সব মিলিয়ে যেন এক সংগীতের মতো চলে প্রতিটি ঘন্টা। কিন্তু এই নিরবচ্ছিন্ন ছন্দের ভিতরেই কোথাও কোথাও ফাঁক তৈরি হয়—যখন কোনও নির্দিষ্ট শব্দ, কোনও ছাত্রীর প্রশ্ন অথবা দেওয়ালের ঘড়ির কাঁটার টিকটিক তাকে হঠাৎ যেন টেনে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে—একটা অভ্যন্তরীণ কোলাহলের মধ্যে।

ছুটি শেষ হলে তৃষা বাসে ফিরে আসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে, কিন্তু মুখে এখনও সেই পরিচিত শান্ত ভাব। বাড়িতে ঢুকেই সে মায়ের প্রশ্নের মুখোমুখি—“অরিত্র আজকাল ফোন করে না?” তৃষা গা ছাড়া ভাবে বলে, “ওর বউ আছে মা, কাজকর্ম আছে, সময় কই!” কাবেরী একরকম হতাশ হয়ে বলেন, “তুই তো এমন মেয়ে না, তোর মতো মেয়ের তো বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা…”—এই কথাগুলো তার কাছে এখন কাঁটার মতো নয়, বরং অভ্যস্ত একটা যন্ত্রণা। রাতে খাওয়ার পর নিজের ঘরে ফিরে, তৃষা বইয়ের তাকে রাখা পুরনো ডায়েরি খুলে বসে। একটা পুরনো ছবি হাতে নেয়—একটা কলেজ ফেস্ট, তার পাশে দাঁড়িয়ে দীপন। হঠাৎই একটা স্মৃতি এসে মনের গায়ে ধাক্কা দেয়—যেদিন দীপন হালকা গলায় বলেছিল, “তুই কি জানিস তোর চোখে কেমন গভীর অন্ধকার আছে? আমি তাতে ডুবে যেতে ভয় পাই।” সেই ভয় তৃষারও ছিল, আজও আছে—নিজের ভিতরের সেই অন্ধকারই তাকে সবচেয়ে বেশি তাড়িয়ে বেড়ায়। বাইরে থেকে সে যতটা হাসে, ভিতরে তার ততটাই নিঃশব্দ কান্না। আজ রাতেও, নিভু আলোয় সে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে—যেখানে শহরের আলো জ্বলে, কিন্তু তার ভিতরে জ্বলতে চায় না কিছুই। “আমি ঠিক আছি”—এই বাক্যটা সে নিজেকেই বলে আবার চুপ করে যায়, কারণ এই ‘ঠিক থাকা’ আসলে প্রতিদিন নিজের সঙ্গে এক নতুন নাটক, যেখানে সে নিজেই অভিনেত্রী, পরিচালক এবং দর্শক—একান্ত একা।

পুরনো জামাকাপড় গুছোতে গিয়েই তৃষা খুঁজে পেল সেই খামে মোড়া চিঠিটা—হলুদ হয়ে যাওয়া কাগজ, দীপনের হাতের লেখা, একেবারে নিচে লেখা তার নামটা: “তৃষা, শুধু তোকে…”। এই চিঠিটা সে কখনো খোলেনি, কখনো পড়ার সাহসও পায়নি। আজ হঠাৎ যেন শ্বাসরোধ করা কোনো ক্ষণ তাকে চেপে ধরল। বিছানায় বসে ধীরে ধীরে খাম খুলে পত্রটা বের করল। প্রথম কয়েকটি শব্দ পড়ে চমকে উঠল—“আমার সব কথা তোকে বলা হয়নি, আর বলাও হবে না। কারণ তুই হয়তো শুনতে চাস না, কিংবা তোর শুনলে আরও জট পাকাবে।” চিঠিতে দীপন তার অনুভবের কথা লিখেছে—তৃষার প্রতি এক অদ্ভুত টান, যা কখনো প্রেম হয়ে ওঠেনি, কখনো বন্ধুত্বেও বাঁধা যায়নি। দীপন লেখে, “তুই এমন এক রহস্য, যাকে বোঝার আগেই ভয় পেয়ে যাই। তোর চোখে একটা না বলা সত্য আছে, তুই বলিস না, আমিও শুনতে সাহস করি না।” এই লাইনগুলোর মধ্যে দিয়েই যেন তৃষার নিজের মনের কথাগুলো ছিটকে বেরিয়ে আসে—তার না বলা আকাঙ্ক্ষা, ভয়ের ভেতর লুকিয়ে থাকা আলগা অনুভব। সে পড়ে চলে, চোখ ভিজে আসে, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরোয় না—শুধু নিঃশ্বাসের ভার।

চিঠির শেষে দীপন লিখেছে, “তুই যেভাবে আমার দিকে তাকাতি, আমি বুঝতাম তোর ভিতরে একটা প্রশ্ন জ্বলছে, কিন্তু তুই নিজেও জানিস না তার উত্তর কী। আমি হয়তো তোর সেই প্রশ্নের উত্তর হতে পারিনি, হতে চাইওনি। তোর সেই অদৃশ্য দ্বিধার পাশে আমি দাঁড়াতে পারিনি।” তৃষার মনজুড়ে কেবল একটাই শব্দ বাজে—‘প্রশ্ন’। এতদিন সে নিজেকেই প্রশ্ন করে এসেছে—সে কেন কারো সঙ্গে থাকতে পারে না? কেন তার প্রেম কোনো পুরুষের সঙ্গেই পূর্ণতা পায়নি? কলেজে দীপনের সঙ্গে যতটুকু ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল দূরত্ব। দীপন হয়তো তার চোখে কিছু বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু সে নিজেই তো তখন কিছু বোঝেনি। এই প্রশ্নটাই তাকে তাড়া করে আজও—সে কি আদৌ কাউকে ভালোবাসতে জানে? নাকি তার ভালোবাসার সংজ্ঞাই আলাদা? তার নিজের শরীর, মন, টান—সব যেন নিজের কাছেই এক অস্পষ্ট ছবি, যা ঘোলা জলের মতোই, স্পষ্ট হতে চায় না। দীপনের চিঠির ভাষা যেন তার নিজের ভিতরের ভাষার প্রতিধ্বনি—অনুচ্চারিত, কিন্তু তীব্র।

চিঠিটা শেষ করে তৃষা জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ায়। শহরের আলো জ্বলছে, গাছের পাতায় বাতাসের দোল। কিন্তু তার ভিতরের আলো নিভে যেতে যেতে এক গাঢ় অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। সে জানে, তার প্রশ্নের উত্তর এখনো আসেনি, কিন্তু এই চিঠি যেন তাকে সাহস দিল, নিজের দিকে তাকানোর। হয়তো দীপন ভুল বলেনি—তৃষার চোখে সত্যি কিছু ছিল, যা সে নিজেও বোঝেনি। আজ সেই সত্য ধীরে ধীরে মাথা তোলে—এক অস্বস্তিকর স্বীকারোক্তি, এক পরিস্কার না হওয়া মানচিত্র, যেখানে তৃষা নিজেই পথ খোঁজে, আবার পথ হারায়। নিজের শরীর ও সত্তার মধ্যে তফাৎ খুঁজতে খুঁজতে সে বুঝতে পারে, অনেক কথা আছে যা মুখে বলা যায় না, শুধু অনুভবে রয়ে যায়—অনুচ্চারিত থেকে যায়।

সকালটা ছিল একটু ধূসর, আকাশে মেঘ জমেছে। স্কুলে ঢুকেই তৃষা অনুভব করে মেঘলা আজ একটু অন্যরকম—চুপচাপ, চোখে কিছুটা ক্লান্তি। টিচার্স রুমে বসে সে ধীরে ধীরে বলে, “কাল রাতে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখলাম…সবাই থাকলেও যেন কেউ ছিল না। আমি একা হাঁটছি একটা গলির ভিতর দিয়ে।” তৃষা মুচকি হেসে জবাব দেয়, “তুই তো সবসময় স্বপ্নে নাটকীয়তা খুঁজে পাস!” মেঘলা বলে, “হ্যাঁ, কিন্তু কালকেরটা খুব কেমন যেন। জানিস তৃষা, মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা চারপাশে এত মানুষ রেখেও একা থেকে যাই। নিজেদের সব কথা তো বলা যায় না, তাই না?” তৃষার বুক কেঁপে ওঠে। সেই এক অজানা কথার মুখোমুখি আবারও—এই যে মেঘলার সামনে বসে আছে, সে কি বলতে পারবে কিছু? কিছু না বলা অনুভব, যেটা দিনের পর দিন জমে যাচ্ছে তার ভিতরে? সে কি পারবে এই জানলার ওপারে তাকিয়ে বলতে, “আমি ঠিক সেরকম নই”?

তৃষা ও মেঘলা সেদিন স্কুল ছুটির পর একসঙ্গে বেরোয়, কলেজ স্ট্রিটে কিছু বই কিনতে যাবে বলে। ট্রামে করে যাওয়ার সময় দু’জনেই চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ মেঘলা বলে, “তুই কি কখনো কাউকে খুব ভালোবেসেছিস?” প্রশ্নটা সহজ হলেও তৃষার বুকের ভেতর যেন একটা ঘূর্ণি শুরু হয়। সে মৃদু হেসে বলে, “ভালোবাসা মানে তো শুধু কারো হাত ধরা নয়। ভালোবাসা মানে কাউকে গভীরভাবে অনুভব করা—যেটা হয়তো বলা যায় না।” মেঘলা একটু অবাক হয়ে তাকায়, “তুই বরাবরই এত তলিয়ে ভাবিস রে…কখনো কখনো ভাবি, তোকে কেউ আদৌ পুরোটা চিনেছে কি না।” সেই মুহূর্তে তৃষার মনে হয়, জানালার কাচের ওপারেই সে নিজেকে দেখতে পাচ্ছে—এক অর্ধেক প্রতিচ্ছবি, যেটা কেবল বোঝাতে চায়, প্রকাশ পেতে চায়, কিন্তু দেয়ালের মতোন সমাজ তাকে আটকে রেখেছে।

বই কেনার পর দুই বন্ধু কলেজের পুরনো ক্যান্টিনে বসে, যেখানে একসময় আড্ডা দিত। মেঘলা হঠাৎ বলে, “তুই জানিস, আমি তোকে খুব কাছের মনে করি। তোর ভেতরটা জানার ইচ্ছে হয়…তুই এত চুপচাপ কেন?” তৃষা একটু থেমে বলে, “কারণ আমার কিছু কথা এখনও ঠিক শব্দ খুঁজে পায়নি। আমি জানি না, বলা ঠিক হবে কিনা।” মেঘলা তৃষার হাত ছুঁয়ে বলে, “সব কথা তো বলা যায় না তৃষা, কিন্তু কেউ কেউ শুনতে চায়।” সেই স্পর্শে, সেই কথায় তৃষার ভিতরের বন্ধ জানলাটা যেন একটু ফাঁক হয়ে যায়। সে মনে মনে ভাবে, যদি কখনো বলতে পারত…নিজের যৌনতা নিয়ে প্রশ্ন, দীপনের অস্পষ্ট টান, রূপার সাহস, সমাজের ভয়—সব একসাথে গুলিয়ে ফেলে দেয় তাকে। কিন্তু আজকের এই বিকেল যেন তাকে জানিয়ে দেয়, কেউ কেউ সত্যিই শুনতে চায়। জানলা খোলা যায়, শুধু দেওয়াল ভাঙার সাহস দরকার।

সেদিন স্কুলের মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে তৃষা একা বসে ছিল ক্লাসরুমের এক কোণে, ছাত্রছাত্রীরা নিচে গিয়েছে ক্যান্টিনে। হঠাৎ পেছনের দরজা দিয়ে একজন প্রবেশ করল—চোখে চশমা, পরনে ছিমছাম সালোয়ার-কামিজ, চুল খাটো করে কাটা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তৃষা চিনতে পারেনি। তারপর মেয়েটা নিজের পরিচয় দেয়, “ম্যাম, আমি রূপা। আপনার ছাত্রী ছিলাম তিন বছর আগে, এখন ‘মানুষ’ নামে একটা NGO-তে কাজ করি। আজ স্কুলে আমাদের পোস্টার দেখলাম, তাই ভাবলাম দেখা করি।” তৃষা বিস্ময় ও আনন্দে বলে, “তুই কত বড় হয়ে গেছিস রে! কী করিস বল দেখি?” রূপার চোখে একরকম দীপ্তি, যা তৃষাকে একটু থমকে দেয়। সে বলে, “আমি এখন কমিউনিটি আউটরিচ করি—যারা নিজেদের যৌন পরিচয়, মানসিক স্বাস্থ্য, অথবা সমাজের চাপে নিজেদের লুকিয়ে রাখে, তাদের নিয়ে কাজ করি।” তৃষার মুখের হাসি হালকা ঝাপসা হয়, সে বলে, “ভালো কাজ তো! কেমন লাগে?” রূপা একটু থেমে বলে, “ম্যাম, খুব ভালো লাগে। আগে নিজেকে নিয়ে খুব দ্বন্দ্বে ভুগতাম। এখন নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করি। আমি একজন সমকামী নারী, আর আমি এটা লুকোই না।”

এই কথা শুনে তৃষার ভিতরে একটা ঝড় ওঠে, মুখে সে কিছুই প্রকাশ করে না, কিন্তু বুকের ভেতর এক শূন্যতা তৈরী হয়। সে নিজেকেই প্রশ্ন করে—এই কথা যদি আমি বলতাম? যদি আমি নিজের ভিতরের সত্য এত সাহসে উচ্চারণ করতে পারতাম? রূপা যেন সেই ছায়া, যেটা তৃষার মাথার ওপর দিয়ে হেঁটে যায়—আলো-অন্ধকারে কাঁপতে থাকা নিজের এক সম্ভাব্য রূপ। রূপা বলতে থাকে, “আমার পরিবার মেনে নিতে পারেনি শুরুতে, সমাজ তো অনেক কটুক্তি করেছিল, কিন্তু আমি জানি আমি কে। এখন আমি কাউকে ভয় পাই না।” তৃষা যেন চুপ করে থাকা শব্দগুলো শুনতে পায়, নিজের মনের ভিতর জমে থাকা অভিমানের আওয়াজ—একটা স্তব্ধ, চাপা যন্ত্রণার শব্দ। সে জানে, তার ভিতরে যা আছে, সেটা কখনোই উচ্চারণ পায়নি। আজ রূপার সামনে বসে, সে প্রথমবার অনুভব করে, তার স্তব্ধতা হয়তো ভয় নয়, বরং অভ্যাস।

রূপা চলে যাওয়ার পর তৃষা স্কুলের বাগানে কিছুক্ষণ একা বসে থাকে। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্য মাটিতে পড়ছে। সে নিজের হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে ভাবে—এই শরীরটাই কি তার? এই সমাজ, এই নাম, এই ভূমিকাগুলো তার জীবনের মানে? সে কি কখনো বলতে পারবে—সে কী চায়, কী চায় না? তার জীবনের সবচেয়ে সত্য কথা কি শুধু তার ডায়েরির পাতাতেই লেখা থাকবে? মেঘলার মুখ মনে পড়ে যায়, সেই ক্যান্টিনের বিকেল, জানলার ওপারে দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্ন—“তুই এত চুপচাপ কেন?” তৃষা এবার বুঝতে পারে, তার স্তব্ধতা কোনো সৌন্দর্য নয়, সেটা এক অভ্যন্তরীণ ক্ষত, যার রক্ত ঝরে নীরবে। সে কি আর চুপ থাকতে পারবে? নাকি একদিন এই স্তব্ধ শব্দরাই উচ্চারণ হয়ে উঠবে?

রাতের খাবার টেবিলে কাবেরী সেন আজ যেন একটু বেশি উদ্দীপ্ত, মেয়ে চুপচাপ খাচ্ছে দেখে বলতে শুরু করলেন, “তুই একটু চেষ্টা কর না তৃষা! অরিত্র তোকে আগেও পছন্দ করত, এখন ওর স্ত্রী চাকরি নিয়ে বাইরে আছে, সময়ও হয়তো পাচ্ছে। আমি ভাবি, যদি তুই একটু যোগাযোগ রাখিস, হয়তো নতুন করে কিছু ভাবা যায়।” তৃষা খাওয়া থামিয়ে চুপ করে থাকে। মা আবার বলে ওঠেন, “তুই তো এমন ভালো মেয়ে, শিক্ষিতা, চাকরি করিস, এত দায়িত্ববান! তোর জন্য কারোর একটু ভালোবাসা থাকা কি অস্বাভাবিক? তোর মতো মেয়ের তো সংসার সাজানোর কথা ছিল এতদিনে।” তৃষা এবার চুপ করে থাকতে পারে না, কাঁপা গলায় বলে, “মা, সব জীবন একরকম হয় না। সব মেয়ের গল্প একইভাবে শেষ হয় না।” কাবেরী কিছু না বুঝেই গলার স্বর চড়িয়ে বলেন, “তাহলে কীরকম? তুই কি চাস না কেউ তোর পাশে থাকুক? তুই কি আদৌ জানিস তোর জীবনে কী চাস?” এই প্রশ্নটা যেন ছুরি হয়ে বিঁধে যায় তৃষার বুকে—কারণ এই প্রশ্নটা তো সে নিজেকেই রোজ করে।

রাতের বৃষ্টি তখন জানালায় শব্দ তুলছে। তৃষা নিজের ঘরে এসে আলমারির তাকে রাখা পুরনো ডায়েরিটা টেনে বের করে। একটা খোলা পাতায় জলের দাগ লেগে ছিল—একদিনের চোখের জল হয়তো। সে কলম তুলে নেয়, কিন্তু লিখতে পারে না কিছুতেই। হাত কাঁপে, চোখ কাঁপে। সে ভাবতে থাকে—যদি সত্যিই আজ বলে দিত, “আমি নারী হয়েও নারীকে অনুভব করি, আমি এমন মানুষ যাকে এই সমাজ সংজ্ঞায় ফেলে দিতে জানে না।” সে জানে, মা কখনো বুঝবে না, স্কুল বুঝবে না, সমাজ তো একেবারেই না। কিন্তু নিজের ভিতরে তো আর নিজেকে লুকিয়ে রাখা যায় না, সেই চাপ একদিন ভেঙে দেয় দেয়াল। তার আজ মনে হয়, আত্মপরিচয়ের বোঝাটা আসলে সবচেয়ে ভারী। সেটা বোঝানোর মতো ভাষা নেই, পরিচিত মুখগুলোর সামনে মুখ খোলার সাহস নেই। এ যেন কোনো রোগ নয়, কোনো পাপ নয়, তবু একটা অপরাধবোধ কাজ করে প্রতিটি পদক্ষেপে।

তৃষা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, নিজের চোখে তাকায়। সেদিনের রূপা—সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “আমি যা, আমি তাই”—এই বাক্যটা ঘুরে ফিরে আসে মাথায়। সে ভাবে, যদি একদিন তারও সেই শক্তি আসত! আয়নার মধ্যে সে দেখতে পায়, তার ভেতরের সেই চুপচাপ মেয়ে—যে হাসে, পড়ায়, বাঁচে—কিন্তু যার অন্তরে প্রতিদিন একটু একটু করে জমে থাকে আত্মপরিচয়ের গোপন আঘাত। সেই মেয়ে কখনো রূপার মতো হতে চেয়েছে, কখনো দীপনের মতো পালাতে চেয়েছে, কখনো মেঘলার চোখে একটু গ্রহণযোগ্যতার ইশারা খুঁজেছে। কিন্তু আজ, এই রাতে, নিজের বুকের ভেতরে একটা ফাটল স্পষ্ট শোনায়—এটা কেবল দুঃখ নয়, এটা নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার দীর্ঘদিনের অভ্যেস, যার শাস্তি একা তৃষাকেই পেতে হয়। তার মনে হয়, হয়তো সময় এসেছে কিছু শব্দ মুখে আনার, কিছু সত্য উচ্চারণ করার, কারণ নিরবতা আর তাকে রক্ষা করছে না—বরং গ্রাস করছে।

তৃষা সেই রাতের পর থেকে যেন প্রতিদিন একটু করে পাল্টাতে থাকে—চোখে একরকম নরম ক্লান্তি, আচরণে একটু বেশি নিরবতা, আর নিজের মনে কথাবলার প্রবণতা আরও ঘনীভূত। স্কুলে পড়ানো, খাতা দেখা, ছাত্রছাত্রীদের হাসি—সব যেন নিজের চলমান নিয়মে চলতে থাকে, কিন্তু তৃষা যেন সেই নিয়মের বাইরেই এক অন্তর্গত যুদ্ধে লিপ্ত। একদিন সে নিজের ঘরে বসে পুরনো ডায়েরির একটি সাদা পাতা খুলে লেখে, “আমি তৃষা সেন। সমাজ আমাকে বলেছে আমি নারী। আমাকে বলা হয়েছে, আমি যেন একজন পুরুষকে ভালোবাসি, বিয়ে করি, সংসার পাতি। কিন্তু আমি জানি, আমি যা, সেটা ওই সংজ্ঞার বাইরে। আমি কেবল প্রেম করতে চেয়েছি, সত্যিকারের প্রেম—যেটা শরীরের নয়, যেটা চোখে, কথায়, মনের গভীর উত্তাপে টের পাওয়া যায়। আমি এক মেয়েকে অনুভব করেছি, তার মুখের হাসি, তার হাতে ছুঁয়ে থাকা সাহস আমাকে না বলা প্রেমে ভাসিয়েছে। আমি এটাকে লুকিয়েছি, কারণ আমি জানি, সমাজ আমাকে সহজে নেবে না। আমি নিজের কাছেও সত্যটা বলতে পারিনি। কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে আমি স্বীকার করছি—আমি নিজেকে নিয়ে আর লুকোতে পারি না।” ডায়েরির সেই পাতায় অশ্রু পড়ে, কিন্তু সেই অশ্রু ভার নয়, যেন এক স্বস্তির মুক্তি।

সেদিন বিকেলে মেঘলা হঠাৎ ফোন করে বলে, “তুই কি আজ একটু দেখা করতে পারিস?” তারা কলেজের পুরনো লনে গিয়ে বসে। সাদা বেনারসি গাছে ফুল ফুটেছে, আলো-ছায়ায় খেলা করছে স্মৃতির। মেঘলা বলে, “তুই আজকাল একটু চুপচাপ। সব ঠিক আছে তো?” তৃষা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর বলে, “সব কিছু ঠিক আছে বললে ভুল হবে। আমি একটু কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি…নিজেকে নিয়ে।” মেঘলা কৌতূহলী চোখে চেয়ে থাকে, কিছু বলে না। তৃষা ধীরে ধীরে বলে, “আমার জীবনের অনেকটাই অন্যরকম। আমি নিজের সত্তাকে যতবার চাপা দিতে চেয়েছি, ততবারই মনে হয়েছে, আমি নিজেকে হত্যা করছি। আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই অনেকদিন ধরে। আমি জানি না তুই কেমনভাবে নেবি।” এরপর থেমে গিয়ে সে বলে, “আমি নিজেকে অন্যরকমভাবে খুঁজে পেয়েছি। আমি সেই সংজ্ঞার মানুষ নই যেটা সবাই ধরে নেয়। আমি এমন কাউকে অনুভব করেছি… যে একজন মেয়ে।” মেঘলা স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে, কিছুক্ষণ পরে ধীরে বলে, “তুই অনেক সাহসী তৃষা। সবাই নিজের সত্য এভাবে বলতে পারে না।” তারপর সে তৃষার হাতটা নিঃশব্দে ধরে। এই নিঃশব্দ স্পর্শে তৃষা প্রথমবার অনুভব করে—তার ভিতরের ছায়াগুলো হয়তো আলো ছুঁতে পারবে।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তৃষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে—একটা অন্যরকম শান্তি তার চোখেমুখে। তার মনে হয়, বহুদিন পর নিজের একটা সত্য আজ উচ্চারণ করতে পেরেছে, আর সেই সত্য অন্য কাউকে বলার পর এতটুকু মুক্তি এনে দিতে পারে—এটা আগে জানত না। সে জানে, তার পথ সহজ নয়, কিন্তু প্রথমবার সে অনুভব করে, সেই পথটা এবার সে নিজের মতো করেই হাঁটতে পারবে। সে ভাবে, আজ রূপা তাকে দেখলে গর্ব করত, দীপন বুঝে যেত তার চোখের সেই “অজ্ঞাত অন্ধকার” আর অজ্ঞাত নেই, আর মেঘলার সেই নিরব শ্রবণ হয়ে উঠেছে তার যন্ত্রণার প্রথম শ্রোতা। ছায়া থেকে আলোয় আসার এই পথ হয়তো সহজ নয়, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে নিজের—এই বোধই তাকে আজ নতুন করে বাঁচতে শেখায়।

তৃষা আজ স্কুলে ঢুকে প্রথমেই প্রিন্সিপালের কক্ষে যায়। তার মুখে একরকম কঠিন শান্তি, চোখে দৃঢ়তা। “ম্যাডাম,” সে বলে, “আমি একটা ওয়ার্কশপ করাতে চাই—আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মপরিচয়, ও সামাজিক সংবেদনশীলতা নিয়ে। রূপা, আমার প্রাক্তন ছাত্রী, ও এখন একটি NGO-তে কাজ করে। ওরাই সেশনটা পরিচালনা করবে।” প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ভ্রু কুঁচকে বলেন, “আত্মপরিচয় মানে? আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন?” তৃষা ঠান্ডা গলায় বলেন, “নিজেকে জানা, নিজের সত্তাকে বুঝতে শেখা—যা আমাদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও দরকার। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের নিয়ে হাজার প্রশ্নের মুখোমুখি।” প্রিন্সিপাল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, “তা হলে একটা প্রস্তাবনা লিখে জমা দিন।” কথা শেষ করে তৃষা বেরিয়ে আসে—এই প্রথম সে নিজের বিশ্বাস নিয়ে কারও সামনে দাঁড়িয়েছে, ভয় না পেয়ে।

স্কুলের করিডোরে সহকর্মীরা খচখচিয়ে গুজব ছড়াতে থাকে—“তৃষা ম্যাম নাকি ওরকম কিছু নিয়ে ওয়ার্কশপ করতে চাইছে?”, “এইসব আবার স্কুলে শেখানোর দরকার কী?” কেউ কেউ মুখ টিপে হাসে, কেউ চোখে ঘৃণার ছায়া নিয়ে পাশ কাটিয়ে যায়। কিন্তু আজ তৃষার গায়ে লাগে না এসব। সে জানে, যা করছে, সেটা শুধু নিজের জন্য নয়—তার মতো আরও যারা আড়ালে বাঁচে, যাদের কণ্ঠরুদ্ধ আত্মপরিচয় কখনো প্রকাশ পায় না, তাদের জন্যও। বিকেলে সে রূপাকে ফোন করে সব জানায়। রূপা উত্তেজিত গলায় বলে, “ম্যাম, আপনি তো আমাদের শক্তি হয়ে উঠলেন। আমি আপনাকে দেখে সাহস পেয়েছিলাম, আজ আপনি অন্যদের সাহস দিচ্ছেন।” তৃষা ফোন কানে রেখে আকাশের দিকে তাকায়—একটা পাখি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে। যেন তাকেই আকাশের দিকে ডাকছে।

সন্ধ্যায় মেঘলা আসে, সঙ্গে কেক আর কফি। “তুই আজকাল একটু বদলে গেছিস, জানিস?”—সে বলে। তৃষা হেসে বলে, “আমি আসলে আগেও এরকমই ছিলাম, এখন শুধু আর লুকোচ্ছি না।” মেঘলা মৃদু হেসে বলে, “ভালো লাগছে তোকে দেখে। যেভাবে নিজেকে গ্রহণ করেছিস, সেটা আমাদের প্রত্যেকের শেখা উচিত।” তারা জানালার ধারে বসে গল্প করে, আর এই প্রথম তৃষা বুঝতে পারে—একলা হাঁটা মানেই নিঃসঙ্গতা নয়। নিজের বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে থাকা, নিজের সত্যে অটল থাকা—এই একলাতা একধরনের শক্তি। সমাজ, কটূক্তি, ফিসফাস—সবকিছুর ওপরে উঠে গিয়ে সে বুঝে, যে পথটা সে বেছে নিয়েছে, সেটা সহজ নয়, কিন্তু মুক্তির।

রবিবার সকালে তৃষা রূপাদের NGO-র আয়োজিত এক খোলা আলোচনায় যোগ দিতে যায়—বিষয়: “নিজেকে চেনা, নিজেকে বলা।” লেকটাউনের একটি ছোট কমিউনিটি হলে বসেছে সেই সভা। দেয়ালে রঙিন কাগজে লেখা কিছু কথা: “ভয় নয়, পরিচয়।” একদিকে বসে আছে কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা, একদিকে গৃহিণী, কেউ এসেছে একা, কেউ বা বন্ধু নিয়ে। তৃষা নিজের নামের পাশে ব্যাজ পরেন—“তৃষা সেন | শিক্ষক | অন্বেষণরত”। এই শেষ শব্দটাই আজকের দিনের সারমর্ম। রূপা সঞ্চালনা করছে, একজন ট্রান্সজেন্ডার কবি নিজের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন, এক অটোনোমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বলছেন কিভাবে আত্মপরিচয়ের দমন মানসিক অসুখের জন্ম দেয়। তৃষা শুনে চলেছেন—প্রত্যেক কথায় যেন নিজেকে আবিষ্কার করছেন একটু একটু করে। এক সময় রূপা মঞ্চ থেকে তাকে ডাকে, “আমার একজন প্রিয় শিক্ষক আজ আমাদের সঙ্গে আছেন। আমি চাই, উনি তাঁর কথা আমাদের শোনান।” তৃষার বুক ধুকধুক করে, হাত কাঁপে। তবু সে উঠে দাঁড়ায়।

মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে তৃষা প্রথমে থেমে যান। তারপর বলেন, “আমি একজন স্কুলশিক্ষিকা। বাইরে থেকে হয়তো মনে হয় আমি সবকিছু ঠিকঠাক করি। কিন্তু আমি জানি, আমি অনেক বছর ধরে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি। আমি ভাবতাম, আমার অনুভব ভুল; আমার আকর্ষণ, আমার চাওয়া, আমার ভালোলাগা—সবটাই সমাজের চোখে ‘অস্বাভাবিক’। আমি ভেবেছিলাম, আমি একা। আজ বুঝছি, আমি একা নই। আমি নারী হয়ে নারীকে ভালোবেসেছি, নিজেকে নিয়ে দ্বন্দ্ব করেছি, নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই অস্বীকার করেছি। কিন্তু আজ আমি দাঁড়িয়ে আছি নিজের নাম নিয়ে, নিজের সত্য নিয়ে।” হলে নিস্তব্ধতা। কিছুক্ষণ পরে হাততালি। কারো চোখে জল, কারো মুখে সাহস। তৃষা আবার বসে পড়েন, বুকটা হালকা হয়ে আসে।

সন্ধ্যা নামার আগে তৃষা বাড়ি ফেরে। মা তখন বারান্দায় তুলসী গাছে জল দিচ্ছেন। তৃষা মৃদু গলায় বলেন, “মা, আজ আমি তোকে একটা কথা বলব। শুনবি?” কাবেরী একটু বিস্ময়ে তাকান। তৃষা ধীরে ধীরে বলে, “আমি তোকে সবসময় বলেছি, আমি ঠিক আছি। কিন্তু আমি ঠিক ছিলাম না। আমি নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম—তুই যাতে দুঃখ না পাওস, তাই। কিন্তু তুই যদি সত্যিকারের ভালোবাসিস, তাহলে শুনবি আমার কথা, জানবি আমি কে। আমি মেয়েদের ভালোবাসি, মা। আমি অন্য কারো মতো নই। আমি তোদের ছাঁচে ফেলতে পারিনি নিজেকে। আমি তবুও তোর মেয়ে, তুই চাইলে আমি আগের মতোই থাকব—তবে এবার সত্যি হয়ে।” কাবেরী কিছু বলেন না প্রথমে। শুধু একটু কেঁপে যান। তারপর ধীরে এসে তৃষার পাশে বসে বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না, কিন্তু তুই যদি খুশি থাকিস, আমি জানব—তুই ঠিক আছিস।” এই স্বীকারোক্তি আর গ্রহণ—তৃষার চোখ দিয়ে তখন কেবল জল গড়িয়ে পড়ে, কোনো শব্দ নেই, শুধু যেন এক জলের নিচের আলো, যেটা এতদিন ডুবে ছিল, আজ মুখ তুলে বলছে—“আমি আছি।”

—–

1000041339.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *