Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

অপরাধীর মুখ

Spread the love

মৌমিতা ঘোষ


অধ্যায় ১: প্রথম সংকট

অঞ্জলী রায় সকালে অফিসে পৌঁছাতেই এক তরুণ পুলিশ অফিসার তার সামনে এসে দাঁড়াল। তার হাতে একটি ফাইল, আর চোখে তীব্র উদ্বেগ। “স্যার, ডিএসপি ম্যাম, আপনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কেস এসেছে।” অঞ্জলী দ্রুত ফাইলটি খুললেন। ফাইলের মধ্যে ছিল এক নারীর মৃতদেহের ছবি, এবং সাথে কয়েকটি প্রতিবেদন। ছবিতে ওই নারীর চোখ বন্ধ, মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই, এবং শরীরের চারপাশে অসংখ্য রক্তের দাগ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নারীর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে তার মৃত্যু সন্দেহজনক। এই কেসের পেছনে কোনো অপরাধী রয়েছে কিনা, তা জানার জন্য তদন্ত শুরু করতে হবে। অঞ্জলী একটি গভীর শ্বাস নেন। এই ধরনের হত্যাকাণ্ডগুলো যখন সমাজের মারাত্মক সমস্যা হিসেবে হাজির হয়, তখন তা শুধুমাত্র একটি অপরাধ হিসেবে দেখা উচিত নয়। এর পেছনে রয়েছে সমাজের গভীর দাগ। নারীরা এখনও সমাজের নীচুস্তরে, শোষিত অবস্থায়, এবং সেসম্পর্কে সঠিকভাবে কোনো তদন্ত না করা হলে তা আরও বাড়তে পারে। তার মনে সেই পুরনো প্রশ্নটি আবার ভেসে ওঠে—নারীর জীবন কি সত্যিই মূল্যবান?

অঞ্জলী দ্রুত তার সহকর্মী, বিপ্লব দাসকে ডেকে পাঠান। বিপ্লব তার পুরনো বন্ধু এবং শ্রদ্ধেয় সহকর্মী। তারা একসাথে কাজ করেন এবং প্রায়ই একে অপরের শক্তি হয়ে ওঠে। বিপ্লব যখন অফিসে পৌঁছাল, অঞ্জলী তাকে কেসের বিস্তারিত জানিয়ে দিলেন। “রিপোর্ট অনুযায়ী, এই নারী কোনো ধরনের শারীরিক আঘাত পায়নি, তবে তার মৃত্যু পেছনে কিছু গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে,” অঞ্জলী বলেন। বিপ্লব কাঁধ ঝাঁকালেন, তার চোখে এক ধরনের চিন্তা ছিল। “এটি সাধারণ হত্যাকাণ্ডের মতো নয়, অঞ্জলী। এর পেছনে কিছু গোপন কারণ রয়েছে। হয়তো তা সমাজের কোথাও লুকানো। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শুরু করতে পারি।” অঞ্জলী তার সহকর্মীর দিকে তাকিয়ে, গভীরভাবে একমত হন। তবে তিনি জানেন, এই কেস শুধুমাত্র পুলিশের জন্য নয়, এটি আরো বড় কিছু—পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একটা চিত্র তুলে ধরবে। একা একা এই কাজ করা অসম্ভব, তাই তারা একসাথে সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা সমাজের এই অবিচার এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে কাজ করবেন। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, যদি অপরাধী সত্যিই সমাজের প্রভাবশালী স্তরের কেউ হয়, তাহলে তাদের কাছে সঠিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা কতটা কঠিন হবে?

অঞ্জলী তদন্ত শুরু করেন। তিনি নারীর পরিচয় জানলেন, তার নাম ছিল শর্মী দাস, একজন যুবতী ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। এই ধরনের কর্মজীবী নারীরা সমাজে সাধারণত এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন। শর্মী একাই থাকতেন, তার পরিবার ছিল অনেক দূরে, এবং তার সহকর্মীরা তাকে কখনো কখনো বেশ অবহেলা করত। অঞ্জলী আরও জানতে পারলেন যে, শর্মী কিছুদিন আগে একটি বড় সমস্যা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন। এক পুরুষ সহকর্মী তাকে একাধিকবার যৌন হয়রানি করেছিল এবং শর্মী তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে একটি মামলা করেছিলেন। তবে সেই মামলা চলাকালীন, তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এবং শর্মী নিজে ভীষণভাবে একাকী হয়ে পড়েছিলেন। এসব কথা জানার পর অঞ্জলী পুরোপুরি নিশ্চিত হন যে, শর্মীর হত্যাকাণ্ডটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একধরনের সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অঞ্জলী যখন তদন্তের গতি বাড়ান, তখন তার সামনে এমন একটি প্রশ্ন আসে—এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে একজন অপরাধী কি শুধু শর্মীকে লক্ষ্য করেছিল, নাকি এটি সমাজের এক বৃহত্তর সমস্যা? তবে সে জানে, এই কেসে তার যাত্রা সহজ হবে না। যত দ্রুত সম্ভব সত্য উন্মোচন করতে হবে, কারণ তার সামনে এক ভয়ঙ্কর সংঘাত অপেক্ষা করছে, যেখানে অপরাধী কোনো সাধারণ ব্যক্তি নয়, বরং সমাজের একটি বড় শক্তি হতে পারে।

অধ্যায় ২: ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে

অঞ্জলী রায়ের মস্তিষ্কে শর্মী দাসের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এক অস্থির চাপে পরিণত হয়েছিল। সমাজের গভীরে লুকানো অসংগতি, পুরুষতান্ত্রিক শোষণ এবং নারীর প্রতি অবিচারের তীব্রতা তাকে অস্থির করে তুলছিল। শর্মীর মৃত্যুর পেছনে যে অপরাধী, তাকে খুঁজে বের করার চেয়ে বড় কাজ ছিল এই বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া যে, এই ধরনের অপরাধ সমাজের এক গভীর সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অঞ্জলী বুঝতে পারলেন, কেবল হত্যাকারীকে খুঁজে বের করলেই সমস্যা শেষ হবে না—বরং সমাজের সাধারণ মানুষের মনোভাব ও সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। হত্যাকারী হয়তো এক, কিন্তু তার পেছনে যে সামাজিক কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে, সেটি অনেক বড় এবং আরও ভয়ংকর।

তদন্ত শুরু করার পর, অঞ্জলী শর্মী দাসের প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। শর্মী যখন জীবিত ছিলেন, তখন তার জীবন ছিল একাকী এবং অবহেলিত। তার প্রতিবেশীরা জানালেন, শর্মী বেশ কিছুদিন ধরে দুর্বল ও আতঙ্কিত ছিলেন। প্রায়ই তিনি কোনো কিছু থেকে ভীত হয়ে বাড়ি ফিরতেন। কেউ বলতে পারল না, ঠিক কী কারণে সে এত উদ্বিগ্ন ছিল, কিন্তু শর্মী তার কাজের জায়গায় অনেক সমস্যায় পড়েছিল, এবং একদিন, সে এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিল। অভিযোগের পর, পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেননি এবং শর্মীকে একা পেতে দেওয়া হয়। অনেকে জানালেন, যে পুলিশ অফিসারটি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল, সে একজন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি এবং তার বিরুদ্ধে কিছু বলার কোনো সাহস ছিল না।

অঞ্জলী এসব তথ্য পেয়ে আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন। তিনি সেই পুলিশ অফিসারের নাম জানতে পারেন—পুলিশ ইন্সপেক্টর রাকেশ মল্লিক, যিনি জেলার প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। অঞ্জলী জানতেন, রাকেশ মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে তার বিরুদ্ধে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে তাতে তার মনোবল কমেনি। এটি ছিল তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত—অপরাধীকে ধরা সহজ নয়, তবে সে যদি চুপ করে থাকে, তাহলে সমাজের অন্ধকার দিক আরও গভীর হয়ে যাবে।

অঞ্জলী তার সহকর্মী বিপ্লব দাসকে ডেকে আনেন। বিপ্লব, যিনি সাধারণত অঞ্জলীর লড়াইয়ের পাশে দাঁড়ান, এবারও তাকে সাহস ও সমর্থন প্রদান করেন। “অঞ্জলী, তুমি যদি সত্যিকারের ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চাও, তাহলে শুধু অপরাধীকে আটকানোই যথেষ্ট নয়। আমাদের সমাজের সেই সব নেতিবাচক মানসিকতাকেও ভাঙতে হবে, যেগুলি নারীদের প্রতি এই ধরনের আচরণকে বৈধ মনে করে। আর আমরা যদি রাকেশ মল্লিকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করি, তাহলে অনেক বড় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু যদি আমরা একসাথে থাকি, তবে আমাদের পক্ষে জয়ী হওয়া সম্ভব।” বিপ্লবের কথা শুনে অঞ্জলী আরও দৃঢ় মনোভাবে জানান, “আমরা একসাথে থাকব, বিপ্লব। আর আমরা কোনো বাধা গ্রাহ্য করব না। যতই কঠিন হোক না কেন, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”

অঞ্জলী ও বিপ্লব মিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। তারা রাকেশ মল্লিকের অতীতের সকল তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তার কাজকর্মের প্রতি নজর রাখতে থাকেন। তদন্তের পথ যত কঠিন হতে থাকে, ততই অঞ্জলীর মনে একটি প্রশ্ন ফুটে ওঠে—এই একক কেস কি সমাজের বৃহত্তর সমস্যাকে তুলে ধরতে সক্ষম হবে? তার মনে একটি ক্ষুদ্র আশঙ্কাও ছিল—যদি সমাজ তার এই সংগ্রামকে গুরুত্ব না দেয়, তবে সে কীভাবে সেই কাঠামো ভাঙতে পারবে? তবে সে জানতো, এ যাত্রা তাকে একাই করতে হবে, তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।

এদিকে, অঞ্জলীর পদক্ষেপের কারণে রাকেশ মল্লিক কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি সোজাসুজি অঞ্জলীর কাছে আসেন এবং তাকে সতর্ক করেন। “তুমি কি মনে করো, আমি একদিন তোমার মতো একটা ছোট পুলিশ অফিসারের কাছে হেরে যাব? আমার ওপর নজর রাখতে থাকলে, আমি তোমাকে কঠিন সময়ে ফেলব,” রাকেশ মল্লিক বলেন। অঞ্জলী কোনো উত্তর না দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় তার কাজ চালিয়ে যান। তার মনে ছিল একটি বিশ্বাস—যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার পথটি কখনো বন্ধ হবে না।

অঞ্জলীর সেই দৃঢ় মনোভাব এবং বিপ্লবের সহযোগিতায় তদন্ত অব্যাহত থাকে। প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন তথ্য বের হয়ে আসে। তারা বুঝতে পারে, কেবল অপরাধীকে ধরা নয়, বরং সমাজের একটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করা জরুরি। তাদের সামনে এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতা, অনেক বাধা ছিল, কিন্তু তারা জানত, শেষ পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম সাফল্য পাবে। নারীর প্রতি অবিচার আর সহ্য করা যাবে না, এবং অঞ্জলী তার জীবনকে সেই সংগ্রামে উৎসর্গ করেছেন।

অধ্যায় ৩: এক্সপোজিং দ্য সিস্টেম

অঞ্জলী রায় ও তার সহকর্মী বিপ্লব দাস রাকেশ মল্লিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছিল। রাকেশ মল্লিক, যিনি এক সময় পুলিশ বিভাগে অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী ছিলেন, তাকে ধরতে গেলে অনেক বড় বিপদ অপেক্ষা করছিল। তবে অঞ্জলী জানতেন, একমাত্র এই শক্তিশালী পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত না করলে, শর্মী দাসের মৃত্যুর পেছনে থাকা বৃহত্তর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা কখনোই উন্মোচিত হবে না। তাকে ধরা শুধু একটি ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নয়, বরং সমাজের নারীদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ।

তদন্তের তৃতীয় দিনে, অঞ্জলী এবং বিপ্লব একটি নতুন দিক আবিষ্কার করেন। রাকেশ মল্লিকের বিরুদ্ধে কিছু পুরনো অভিযোগ এবং সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, যা তার অত্যাচারের বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দেয়। অঞ্জলী বুঝতে পারেন, রাকেশ শুধু শর্মী দাসের জীবনই ধ্বংস করেনি, বরং বহু নারীর জীবনে বিপর্যয় এনে দিয়েছে। একের পর এক মামলা গোপন করা হয়েছিল, সাক্ষীকে ভয় দেখানো হয়েছিল, আর সঠিক সময়ে বিচার না পেয়ে অনেক নারী ন্যায়প্রাপ্তির আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। অঞ্জলী জানতেন, তার সামনে এখন শুধু একটি কেস নয়, এটি এক বৃহত্তর আন্দোলন হয়ে দাঁড়াচ্ছে—নারীর অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াই।

তবে এই পথ মোটেই সহজ ছিল না। রাকেশ মল্লিকের ক্ষমতা এমন ছিল যে, কোনো সাধারণ পুলিশ অফিসার তার বিরুদ্ধে কাজ করতে গেলে সে প্রায় নিশ্চিতভাবে হেরে যাবে। অঞ্জলী যতই দৃঢ় মনোভাব নিয়ে কাজ করছিলেন, ততই তার চারপাশে এক অদৃশ্য প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছিল। একদিন সকালে, অঞ্জলী যখন অফিসে পৌঁছান, তিনি দেখতে পান যে তার ডেস্কে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন এসেছে। ফোনটি করার পর, তিনি কেবল একটি মেসেজ পান—”তুমি যদি এই কেসটি চালিয়ে যাও, তোমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।” এর পরই অঞ্জলী বুঝতে পারেন, রাকেশ মল্লিকের সশস্ত্র গোপন শক্তি শুধু তাকে বিরক্ত করছে না, বরং তার ক্যারিয়ারের দিকে বড় আঘাত হানার চেষ্টা করছে।

তবে অঞ্জলীর একটাই উত্তর ছিল—”এটা আমাকে থামাবে না।” সে জানত, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে কখনোই ভয় পেলে চলবে না। বিপ্লব তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সাহস দেন। “আমরা একসাথে আছি, অঞ্জলী। তুমি একা নও। আমরা নিশ্চিত, সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। তোমার পাশে আমরা সবসময় রয়েছি।” বিপ্লবের কথা অঞ্জলীর মনে এক ধরনের শক্তি জোগায়। তার সামনে ছিল একটি অপ্রতিরোধ্য উদ্দেশ্য—নারীদের প্রতি অবিচার, সহিংসতা এবং শোষণের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধ চালানো।

অঞ্জলী এবার সিদ্ধান্ত নেন, তাকে এবং বিপ্লবকে আরও গোপনে এবং সাবধানে কাজ করতে হবে। তারা রাকেশ মল্লিকের অতীত জীবন সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। শর্মী দাসের মৃত্যুর পর যে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছিল, তা ছিল রাকেশের অত্যাচার ও প্রভাবশালী অবস্থান। যদিও শর্মী তার উপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন, তবে তার অভিযোগ কখনোই সত্য প্রমাণিত হয়নি—কারণ রাকেশ মল্লিকের ক্ষমতা তাকে সবসময় সুরক্ষা দিয়েছে। এবার অঞ্জলী তার নিজের জীবন এবং ক্যারিয়ারকে বাজি রেখে, শর্মীর মতো আরো অনেক নারীর পক্ষে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।

তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিদিন নতুন তথ্য বের হয়ে আসতে থাকে। অঞ্জলী এবং বিপ্লব ধাপে ধাপে রাকেশের অপরাধের জাল খুলে ফেলতে থাকেন। তারা জানতে পারেন, রাকেশ অনেক নারীকে তার শিকার করেছে এবং তার পেছনে যে সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক শক্তি রয়েছে, তা কোনো সাধারণ পুলিশের পক্ষে একা একা ভাঙা অসম্ভব। তবে অঞ্জলী দৃঢ়তার সঙ্গে তার পদক্ষেপ অব্যাহত রাখেন, কারণ তিনি জানতেন, এই এক কেস নয়—এটি এক বৃহত্তর লড়াই, যেখানে সমাজের পুরনো, অবিচারপূর্ণ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা হবে।

তবে অঞ্জলী যে রাকেশ মল্লিকের বিরুদ্ধে একে একে সমস্ত প্রমাণ জমা করে চলেছেন, তাতে তার উপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। একদিন সকালে অঞ্জলী যখন অফিসে ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান যে তার ডেস্কে আরেকটি নতুন চ্যালেঞ্জ তার জন্য অপেক্ষা করছে—এইবার পুলিশ হেডকোয়াটারের একটি মেমো, যেখানে তার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ আনা হয়েছে। মেমোতে বলা হয়েছিল, “অঞ্জলী রায় এক ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে কাজ করছেন এবং পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন।” এটা ছিল এক ধরনের সরাসরি আক্রমণ, যেন তাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে অঞ্জলী কোনোভাবেই বিচলিত হননি। বরং তার দৃঢ়তা আরো বেড়ে গেল।

অঞ্জলী জানতেন, তার সামনে এখন একটি কঠিন পথ, তবে এর মাঝে একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল—”এটা শুধু শর্মী দাসের জন্য নয়, এটা সকল নারীর জন্য।” সে শপথ নিয়েছিল, যতই বিপদ আসুক না কেন, সে তার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে। তার শক্তি ছিল সেই অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসে, যে একদিন এই সমাজ তার ন্যায়ের মূল্য দেবে।

WhatsApp-Image-2025-07-08-at-1.02.01-PM.jpeg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *