সুশ্রী ব্যানার্জী
প্রথম পর্ব: চণ্ডীপাঠের রাতে
রাত তখন ঠিক পৌনে বারোটা। বীরভূমের কান্দিরবাঁধ গ্রামে সেই রাতে চাঁদের আলো নেই। আকাশে কেবল মেঘ আর মাঝে মাঝে বিদ্যুতের চমক। গ্রামের শেষ মাথার জঙ্গলঘেরা পুরনো ঠাকুরদালানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঋজু—কলকাতা থেকে আসা নৃতত্ত্ব বিভাগের গবেষক। তার গবেষণার বিষয়: “বাংলার অন্তর্হিত তান্ত্রিক সম্প্রদায় ও তাদের আধুনিক ছায়া।”
গ্রামে ঢোকার পর থেকেই একটা অদ্ভুত গন্ধ টের পাচ্ছে সে। ধূপ আর পোড়া মাটির মিশ্র গন্ধ। বাড়ির বৃদ্ধ জমিদারপুত্র হরিপদবাবু বলেছিলেন, “পৌষ মাসে, চণ্ডীপাঠের রাতে কেউ ওই পুরনো ঠাকুরদালানের পাশে ঘেঁষে না। শুনেছি, এক সময় ওখানে এক তান্ত্রিকের তপস্যা হত। তাকে সবাই ডাকত ‘রক্তনাথ।’ কে জানে, সে কি সত্যিই মানুষ ছিল।”
ঋজুর দিদিমা বীরভূমের এই গ্রামেই জন্মেছিলেন। ছোটবেলায় গল্পে বলতেন—“রক্তনাথের চোখে নাকি কেউ তাকাতে পারত না। তার ঘর থেকে গানের মতো তন্ত্রমন্ত্রের ধ্বনি ভেসে আসত। কেউ কেউ বলত, সে একদিন মৃতদের ফেরাতে পারবে।”
এইসব গল্প শুনেই ঋজুর তৃষ্ণা বেড়েছে। আজ সে এসেছে এই চণ্ডীপাঠের রাতে, কারণ স্থানীয় বিশ্বাস, এই এক রাতেই কিছু “পুরনো ছায়া” ফিরে আসে।
ঠাকুরদালানের ভাঙা দরজার গায়ে হাত রাখতেই যেন একটা শীতলতা চুইয়ে এল মেরুদণ্ড বেয়ে। দরজা খুলতেই ভেতরে ধূপের ধোঁয়া আর একরাশ আঁধার। মেঝেতে ছড়িয়ে কাঁচের টুকরো, এক কোণে ভাঙা প্রদীপ, আর একজোড়া কালি মাখানো পায়ের ছাপ… যেন কেউ কিছুক্ষণ আগেই এখানে ছিল।
ঋজু টর্চ জ্বালাতে গিয়েই থমকে গেল। তার মোবাইলে নোটিফিকেশন ভেসে উঠল—“Do not disturb the path of the Red Moon.” সে তো কোনো নোটিফিকেশন অন করেনি। ভয় না পেয়ে সে ভেতরে ঢুকে পড়ে, হাতে ক্যামেরা আর গলা অবধি কৌতূহল।
হঠাৎ পেছন থেকে শোনা গেল গলা খাঁকারির মতো শব্দ—গভীর, ক্ষীণ কিন্তু স্পষ্ট। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পেল এক বৃদ্ধ, গায়ে গেরুয়া রঙের কাপড়, কাঁধে কাঠের লাঠি, চোখে কাঁচের মতো স্বচ্ছ চোখ।
“তুমি ঋজু?”—জিজ্ঞেস করল লোকটা।
“হ্যাঁ… আপনি কে?”
“আমার নাম বলা নিষেধ। কিন্তু আমিই জানি রক্তনাথ কে ছিল। যদি সত্যিই জানতে চাও, তবে আমার সঙ্গে এসো। কিন্তু মনে রেখো, তন্ত্র কখনও ক্ষমা করে না। আর যে অতীতকে জাগাতে চায়, তার জীবন আর তার নিজের থাকে না।”
ঋজু কিছু না ভেবেই হেঁটে চলল বৃদ্ধের পিছু পিছু। দেহে যেন কিছু একটার টান অনুভব করছিল—মুগ্ধতা না কি মরণভয়, ঠিক ঠাহর হচ্ছিল না।
বৃদ্ধ তাকে নিয়ে গেল পুরনো অশ্বত্থ গাছের নিচে, যেটিকে ঘিরে মাটি পুড়ে গেছে বলে মনে হয়। গাছের গায়ে গাঢ় লাল রঙে আঁকা এক অদ্ভুত চিহ্ন—ত্রিভুজের মধ্যে চোখ। গাছের নিচে একটা কালো কৌটো, যার মুখ বন্ধ মোম দিয়ে।
বৃদ্ধ বলল, “রক্তনাথের সাধনার শেষ সন্ধ্যে ছিল আজকের রাত। সে বলেছিল, ‘আমি ফিরে আসব, যখন কোনো বহিরাগত আমার ধ্বনি শুনতে আসবে।’ তুমি সেই বহিরাগত।”
ঋজু হেসে বলল, “আপনি কি বলতে চাইছেন আমি—রক্তনাথকে ফিরিয়ে আনব?”
বৃদ্ধ কিছু বলল না। কৌটোটা তার হাতে তুলে দিল। “এটা খুলো না। অন্তত এখনই না।”
আর সেই মুহূর্তেই ঝড় শুরু হল। আকাশে বিজলি, মাটিতে কম্পন। কৌটোটা যেন নিজে নিজেই কাঁপতে লাগল ঋজুর হাতে। সে চিৎকার করে উঠল—“এটা কি?”
বৃদ্ধ গম্ভীর গলায় বলল, “এই তো শুরু। পরবর্তী রাত্রিগুলি আরও গাঢ় হবে। তুমি এখনো ফিরতে পারো। কিন্তু যদি চলতে চাও, তবে এই তন্ত্রের ছায়াপথে ঢুকতেই হবে। মনে রেখো, অন্ধকার তোমার চোখ নয়, আত্মা দেখতে চায়।”
ঋজুর চোখে তখন অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই।
দ্বিতীয় পর্ব: রক্তনাথের ছায়া
ঝড়ের গর্জনের মধ্যে দাঁড়িয়ে, ঋজু কৌটোটা শক্ত করে ধরে রেখেছিল। বৃদ্ধটি তখন আর সামনে ছিল না। যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে। গাছের নিচে শুধু রয়ে গেছে ছায়ার মতো কিছু—a faint silhouette that dissolved into the dark soil.
ঋজু কাঁপা হাতে কৌটোটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। ফিরে এল নিজের থাকার ঘরে—হরিপদবাবুর পুরনো দোতলা বাড়িতে। বাড়ির ঘড়িতে তখন রাত ১টা। অথচ তার মনে হচ্ছিল অনেক বেশি সময় কেটে গেছে।
সে ডায়েরি খুলে লিখতে শুরু করল:
“পৌষের পূর্ণিমার রাতে, চণ্ডীপাঠের সময়, এক অশ্বত্থতলায় দেখা মিলল এক অচেনা বৃদ্ধের, যিনি নিজেকে রক্তনাথের বিষয়ে জানে বলে দাবি করলেন। তিনি আমাকে একটি মোহরবন্ধ কৌটো দিলেন, যেটির সঙ্গে অস্বাভাবিক কিছু শক্তির যোগাযোগ আছে বলে ধারণা হচ্ছে। কৌটোটি কাঁপছিল—আমি স্পষ্টভাবে অনুভব করেছি।”
লিখতে লিখতে হঠাৎ একটা শব্দ কানে এল। যেন কেউ নামঘরের দিকে ধাপে ধাপে হাঁটছে। ঋজু টর্চ হাতে নিচে নামল। ঘরের দরজা খোলা, বাইরে ভিজে উঠোনে একটা কালো ছায়া দেখা গেল। সে ডাকল, “কে?”
কেউ উত্তর দিল না। কিন্তু হাওয়ার ভেতর একটা হ্রস্ব মন্ত্রের সুর ভেসে এল—
“রক্তং দেহি… রক্তং নাথ…”
মন্ত্রের ধ্বনি হাওয়ার সঙ্গে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
সকালে গ্রামের মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতকে সবটা বলল ঋজু। পুরোহিত মুখ গম্ভীর করে বললেন, “এ গাঁয়ে এমন কাহিনি অনেক পুরনো। রক্তনাথ নামে এক তান্ত্রিক ছিল এখানে, যিনি বলতেন, মৃত্যুর পরেও তার সাধনা থেমে থাকবে না। তিনি নাকি ‘রক্তচিহ্ন’ রেখে গিয়েছেন, যার ভিতর আবদ্ধ তার অজানা শক্তি।”
ঋজু জিজ্ঞেস করল, “এই রক্তচিহ্ন কী রকম?”
পুরোহিত বললেন, “তোমার যেটা আছে, সেই কৌটো—তা যদি সত্যিই রক্তচিহ্ন হয়, তবে সাবধানে থাকো। ওটা শুধু বস্তু নয়, একটা প্রবেশপথ।”
ঋজুর মনে তখন হাজারটা প্রশ্ন। সে ঠিক করল, এবার সে গ্রামের বাইরে যাবে—একজন অধ্যাপককে খুঁজতে, যিনি তন্ত্রসাধনার উপর কাজ করেন। নাম, প্রণব দত্ত—শান্তিনিকেতনে থাকেন, ওঁর লেখা অনেক রেফারেন্সে আছে।
পরদিন সকালে সে সাইকেলে করে রওনা দিল শান্তিনিকেতনের দিকে। রাস্তা শুনশান। কাঁথালবাড়ি পেরোতেই এক বুড়ি ভিখারিনী থামিয়ে বলল,
“তুই কি রক্তনাথের পথ ধরি ছেলেটা?”
ঋজু চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কীভাবে জানলেন?”
বুড়ি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “ওর কৌটো খুললে শরীর না, আত্মা নেবে। যতদিন কৌটো বন্ধ, ততদিন রক্ষা। কিন্তু মনে রেখো—ওর ছায়া তোর পেছনে লাগছে এখন। ঘাড়ে নিশ্বাস পড়ছে, টের পাচ্ছিস না?”
ঋজু আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেল।
শান্তিনিকেতনে পৌঁছে অধ্যাপক দত্তর সঙ্গে দেখা করল। তাঁর ঘর ভর্তি পুরনো বই, কালি মাখা চিত্র, মুদ্রা, নকশা। ঋজু যখন কৌটোটা তাঁর সামনে রাখল, প্রণব দত্ত একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষণ।
তারপর বললেন, “এটা কেবল কৌটো নয়। এটা হলো রক্তনাথের তপস্যার স্ফুলিঙ্গ। কেউ যদি এটা খুলে দেয়, তবে তার শরীর একটা ‘ধারণপাত্র’ হয়ে ওঠে। রক্তনাথ চাইত শরীর নয়, আত্মা ছুঁয়ে ফেলতে। এই কৌটো সেই চুক্তির রূপ।”
“তাহলে আমি কী করব এখন?”—ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে ঋজুর।
প্রণব দত্ত বললেন, “তুমি যদি সত্যিই পথ শেষ করতে চাও, তবে তোমাকে পুরনো ধ্বংসাবশেষের কাছে যেতে হবে—যেখানে শেষবার রক্তনাথের জপবন্ধ ঘটেছিল। সেখানে গিয়ে কৌটোটি স্থাপন করো। কিন্তু মনে রেখো, যদি একটুও সন্দেহ থাকে তোমার মনে—যেও না।”
ঋজু সিদ্ধান্ত নিল—সে যাবে।
রাত্রি তখন আরেকবার চণ্ডীপাঠের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ঋজু ব্যাগে কৌটো নিয়ে ফের চলল সেই পুরনো অশ্বত্থ গাছের দিকে। গাছে টাঙানো চিহ্ন আজ যেন আরও গাঢ়, আরও রক্তলাল।
আর ঠিক তখনই, কৌটো নিজে নিজেই খুলে গেল।
এক ফালি লাল ধোঁয়া উঠে এলো তার ভিতর থেকে, এবং সেই ধোঁয়ার মধ্যে ভেসে উঠল এক চোখ, এক মুখ, আর এক কর্কশ কণ্ঠস্বর—
“তুই ফিরলি, অধার সন্তান।”
ঋজুর শরীর কেঁপে উঠল। ছায়া তখন তার দিকে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে।
তৃতীয় পর্ব: ধারণপাত্র
আকাশের বুক চিরে বজ্রপাত পড়ল এক ঝলক। সেই আলোর ঝলকে মুহূর্তের জন্য ঋজু দেখতে পেল—গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছায়ামূর্তিটিকে। মুখ দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু চোখদুটো… যেন আগুনের ভিতর লাল হয়ে ফুটে উঠেছে।
কৌটোটা তখন মাটিতে পড়ে গেছে, কিন্তু তাতে কিছুই নেই—না কোনো বস্তু, না কোনো ধোঁয়া। কিন্তু যে কণ্ঠস্বরটা সে শুনল, সেটা যেন তার মাথার ভিতরেই ধ্বনিত হচ্ছে।
“তুই ফিরলি, অধার সন্তান…”
“তোর শরীর এখন শূন্য, আমি আসি…”
ঋজু হাঁটু গেড়ে পড়ে গেল। মনে হচ্ছিল কোনো অদৃশ্য হাত তার বুকটা চেপে ধরেছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। তার শরীরের শিরা উপশিরা দিয়ে যেন কিছু হিমশীতল ও অন্ধকার প্রবাহ বয়ে চলেছে। সে কিছু একটা দেখতে পাচ্ছিল না, কিন্তু অনুভব করছিল—কিছু একটাকে তার ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা গলা ভেসে এল—
“মনঃসংযম করো! ওকে ঘরে আসতে দিও না!”
প্রণব দত্ত। না জানি কীভাবে তিনি পৌঁছে গেছেন। হাতে একটা তামার পাত্র, তাতে ঘি মেশানো আগরু ও রক্তচন্দনের ধূপ জ্বলছে। তিনি মন্ত্রপাঠ করতে করতে সেই ধোঁয়া ঋজুর চারদিকে ছড়াতে থাকেন।
“অগ্নিঃ রক্ষতু, তেজঃ শুদ্ধয়तु, আত্মা শুদ্ধঃ ভবতু।”
ধোঁয়ার ধাক্কায় যেন বাতাস ঘূর্ণি পাকিয়ে উঠল। গাছের নিচে সেই ছায়া একটু একটু করে ক্ষয় হতে লাগল। মাটিতে কাঁপন, এবং অদ্ভুত গন্ধ—দগ্ধ কিছু অদেখা উপকরণের মতো। ঋজু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগল।
দত্ত বললেন, “তুমি তান্ত্রিক চিহ্নের পথ বেছে নিয়েছ, ঋজু। এখন থেকে তুমি শুধু মানুষ নও, তুমি এক ‘ধারণপাত্র’। রক্তনাথের শক্তি তোমার গায়ে ছায়া ফেলেছে। সে চায় ফিরে আসতে, আর তার জন্য সে তোমাকেই বেছে নিয়েছে।”
ঋজু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “আমি তো কেবল গবেষণা করতে এসেছিলাম। আমি তান্ত্রিক হতে আসিনি!”
দত্ত বললেন, “কিন্তু তন্ত্র কাউকে শুধু গবেষণার সুযোগ দেয় না। যদি তুমি খোঁজ করতে এসো, তবে ও তোমাকেই শোষণ করবে। জ্ঞান ও শক্তির বিনিময় চায় সে—এটা একটা চুক্তি।”
ঋজু কৌটোটা হাতে তুলে নিল। এখন আর ওটাতে কোনো মোম নেই। মুখ খোলা, ভেতরে খালি। কিন্তু ছুঁতেই সে আবার একটা ঝাঁকুনি অনুভব করল। সে জানে, কিছু একটা এখনও তার সঙ্গেই আছে।
সে জিজ্ঞেস করল, “আমি কি এখন থেকে চিরদিন এর ভিতর আটকে থাকব?”
প্রণব দত্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “না, যদি তুমি নিজের ভিতরের শক্তিকে চিনে ফেলো। রক্তনাথ যে শক্তির চর্চা করত, তা ছিল ‘প্রাচীন ধ্যানযোগ তন্ত্র’। সেটা কেবল ধ্বংস নয়, নির্মাণও করতে পারে—যদি তার নিয়ন্ত্রণ তোমার হাতে থাকে।”
“তবে?”—ঋজুর কণ্ঠে ধ্বনি কাঁপছে—“আমি কী করব এখন?”
“তুমি এখন থেকে রক্তনাথের শেষ সাধনার স্থান খুঁজে বের করবে। যেখানে সে নিজের দেহ ত্যাগ করেছিল। কারণ সেখানে লুকানো আছে তার আসল চিহ্ন—যেটা এখনো কেউ খুঁজে পায়নি। সেটাই তাকে শেষবারের মতো রোধ করতে পারে।”
প্রণব দত্ত ঋজুর হাতে একটা নকশা দিলেন—পুরনো তালপাতার মানচিত্র, তার উপর তামার কালি দিয়ে আঁকা একটি বৃত্তাকার চক্র, যার কেন্দ্র বরাবর লেখা—“অর্থমন্ডল।”
“এটাই সেই স্থান,” দত্ত বললেন, “কিন্তু সেখানে পৌঁছানো সহজ নয়। চারদিক ঘিরে রেখেছে ‘অতিচেতনার স্তর’। যেখানে সময় ও দৃষ্টি বিভ্রম করে।”
ঋজু তাকিয়ে রইল মানচিত্রের দিকে। সে জানে, তার জার্নি এবার সত্যি শুরু হচ্ছে।
আর দূরে, গাছের নিচে, ভিজে মাটিতে… একটা ছায়া আবার গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
চলবে…
চতুর্থ পর্ব: অর্থমণ্ডলের খোঁজ
ঋজু তালপাতার সেই মানচিত্র নিয়ে ফিরেছিল নিজের ঘরে। রাত তখন গভীর, কিন্তু ঘুম আসেনি। দরজার ফাঁক দিয়ে হালকা বাতাস ঢুকছে, আর কৌটোটা টেবিলের ওপর শান্ত। তবু তার ভিতর থেকে যেন নিঃশব্দ কিছু ডাকছে। চোখ বন্ধ করলেই সে দেখতে পাচ্ছে আগুনের মতো জ্বলন্ত একটা গোল চক্র, যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একজন—শরীর নেই, কেবল চোখদুটো।
ভোর হওয়ার আগেই সে বেরিয়ে পড়ল। মানচিত্রে যে পথ আঁকা, সেটা বয়ে গেছে গ্রামের প্রাচীন খাল পেরিয়ে পুবদিকের শালবনের ভেতর দিয়ে। সেই শালবন বহু বছর কেউ ঢোকেনি। মানুষ বলে—ওইখানে নাকি এক সময় কোনো রাজার তান্ত্রিক গুরু সাধনা করতেন, আর হঠাৎ একদিন অদৃশ্য হয়ে যান।
চাষিরা এখনো বলে, গরমে ওই বনের ভেতর দিয়ে গেলে পা জ্বলে ওঠে, কাঁধ ভারী হয়ে যায়, বুক ধড়ফড় করে।
ঋজু হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছাল সেই শালবনের প্রান্তে। রোদ উঠেছে, কিন্তু বনটা অস্বাভাবিকভাবে অন্ধকার। যেন আলো ঢুকতে ভয় পায়। পাখি নেই, গাছের পাতাও নাড়ছে না।
সে ভেতরে ঢুকতেই একটা শব্দ কানে এল—হিসহিস শব্দ, যেন পাতার ফাঁকে কেউ কথা বলছে।
“অর্থমণ্ডল… অর্থমণ্ডল…”
হঠাৎ ঝোপের ভেতর থেকে একটা ছোট মেয়ে বেরিয়ে এল। বয়স দশ কি বারো। চোখ কালি দিয়ে আঁকা, কপালে সিঁদুরের দাগ। সে বলল, “তুমি কী খুঁজছো ওখানে?”
ঋজু থমকে গেল। “আমি একটা জায়গা খুঁজছি। মানচিত্র বলছে অর্থমণ্ডল এখানেই।”
মেয়েটি একটু হেসে বলল, “ওটা কোনো জায়গা না। ওটা একটা স্তর। তুমি যদি ভিতরে যেতে চাও, তোমার শরীর থাকবে, কিন্তু মন হারিয়ে যাবে।”
“তুমি কে?”—ঋজু জিজ্ঞেস করল।
“আমি রক্তনাথের রাখাল।” বলেই সে ছুটে অদৃশ্য হয়ে গেল ঝোপের মধ্যে।
ঋজু ভয় পেলেও থামল না। মানচিত্রের নির্দেশ অনুযায়ী সে হাঁটতে লাগল গভীর দিকে। হঠাৎ সে দেখে গাছেরা আর সোজা নয়—তারা বেঁকে গিয়েছে একটা বৃত্ত গঠন করে। গাছের ছায়া একভাবে পড়েছে, যেন কোন সুনির্দিষ্ট রেখা টেনে রেখেছে কেউ।
আর সেখানে পৌঁছেই সে বুঝল—এটাই অর্থমণ্ডল।
একটা প্রকাণ্ড মাটির বৃত্ত, যার চারপাশে খোদাই করা আছে তান্ত্রিক মুদ্রা। মাঝখানে একটা বেদি, তাতে আগুনের পোড়া দাগ। মনে হয়, বহু বছর আগে এখানে কেউ শেষ সাধনা করেছিল।
ঋজু বেদির সামনে বসে পড়ল। ব্যাগ থেকে কৌটোটা বার করে রাখল সামনে। হঠাৎ করেই হাওয়া থেমে গেল। পাখির ডাক থেমে গেল। চারদিক স্তব্ধ।
আর ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা চাপা গর্জন।
সে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পেল—একটা মূর্তি ধীরে ধীরে গড়া হচ্ছে বেদির অন্য পাশে। সেই মুখ, সেই চোখ—যা সে আগেও দেখেছিল স্বপ্নে, গাছের নিচে, কৌটো খুলে যাওয়ার মুহূর্তে।
রক্তনাথ।
কিন্তু তার মুখে কথা নেই। বরং দুই চোখ থেকে বেরোচ্ছে এক অদ্ভুত আলো। সে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে ঋজুর দিকে।
আর তখনই কৌটোটা নিজে নিজে মাটি থেকে ভাসতে শুরু করল। কৌটোর ভেতর থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ল সেই বৃত্তের চারপাশে, আর প্রতিটি খোদাই যেন জ্বলে উঠল এক লালাভ জ্যোতিতে।
রক্তনাথ থেমে গেল। তার গলা থেকে বের হল একটা গম্ভীর, অস্পষ্ট শব্দ—
“সময় আসেনি। আধার তৈরি হয়নি। কিন্তু সে আসবে।”
ঋজু দিশেহারা হয়ে গেল। কাকে বলছে সে? কার আসার অপেক্ষায় আছে?
রক্তনাথ মিশে গেল আলোয়। অর্থমণ্ডল আবার নিঃসাড়।
ঋজু বুঝতে পারল, তার ভিতরে কিছু একটা বদলে গেছে। শরীর ভারী, মনে হচ্ছে অনেক কিছু মনে থাকছে না—কোথা থেকে এসেছে, কে, কেন।
এটা কি অর্থমণ্ডলের বিভ্রম?
না কি, রক্তনাথ তার স্মৃতিতেই ছায়া ফেলেছে?
পঞ্চম পর্ব: বিভ্রম ও বর্জন
শালবনের গা-ছমছমে নির্জনতায় দাঁড়িয়ে ঋজু হঠাৎ অনুভব করল—সে ভুলে যাচ্ছে। মানচিত্র কোথায় রেখেছে, মনে পড়ছে না। গতকাল কী খেয়েছিল, কার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কিছুই মনে পড়ছে না। মাথার ভেতর যেন কেউ চুপিচুপি মুছে দিচ্ছে তার স্মৃতির পাতা।
সে জোর করে নিজের নাম মনে করতে চাইলো। মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে চাইল “ঋজু”… কিন্তু গলায় শব্দ আটকে যাচ্ছে। কণ্ঠ শুকিয়ে কাঠ। হাত কাঁপছে। বুকের বাঁ দিকে এক অজানা চাপ। মনে হচ্ছিল, কে যেন তার ভিতরে আস্তে আস্তে ঘর বানিয়ে নিচ্ছে।
তখনই বাতাসের ভিতর ভেসে এলো পুরনো এক ছায়া-মন্ত্র—
“বর্জয়ামি বুদ্ধিনাশম্… বিভ্রমং প্রত্যাহর।”
এটা সে কোথাও শুনেছে। কোথায়? মাথার মধ্যে কে যেন বলল—“দত্ত, শান্তিনিকেতন।”
হ্যাঁ, প্রণব দত্ত! সে-ই একমাত্র, যে জানে এই বিভ্রম থেকে মুক্তির উপায়। ঋজু কাঁপতে কাঁপতে পা বাড়াল বন থেকে বেরোনোর পথে। কিন্তু গাছেরা যেন অন্যরকম হয়ে উঠেছে। তারা নড়ে না, শব্দ করে না, কিন্তু প্রতি পাঁচ কদমে পথ পাল্টে যাচ্ছে।
একই গাছ, একই শিকড়, আবার সামনে।
ঋজু বুঝতে পারল, সে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই বনের ভিতর কোনো যুক্তি নেই, সময় নেই, কেবলই বিভ্রান্তি। এ এক মানসিক ফাঁদ—একবার ঢুকলে সহজে বেরোনো যায় না।
তখনই দূরে দেখতে পেল ছায়ার মতো এক নারীকে। বয়স বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু পরনে সাদা কাপড়, মুখ ঢাকা।
ঋজু ডাকল, “আপনি কে?”
নারী বলল না কিছুই। কেবল হাত তুলে দেখাল এক দিক—বামদিকে, যেখানে পাতাঝরা একটা পথ মিশে গেছে আলো-ছায়ার এক বিন্দুতে।
ঋজু সেই পথেই পা বাড়াল। খানিকটা এগোতেই হঠাৎ চারদিক খোলা হয়ে গেল—একটা শুকনো পুকুর, তার পাশে একটা ভাঙা মন্দির, আর তার ভিতর বসে আছে প্রণব দত্ত!
“তুমি এসেছো,” দত্ত বললেন, “এটাই ছিল পরীক্ষার প্রথম স্তর—তোমার স্মৃতিকে কেড়ে নেওয়ার। রক্তনাথ চায়, তুমি তোমাকে ভুলে যাও। কারণ তবেই সে তোমার ভিতরে আসতে পারবে।”
“আমি আর পারছি না… আমার শরীর আমার নয়,” ঋজু বলে উঠল।
দত্ত বললেন, “তোমার এখনও সময় আছে। তন্ত্র বলে, যতক্ষণ না তুমি নিজে হাল ছাড়ো, ততক্ষণ কেউ তোমার ভিতর ঢুকতে পারে না।”
তিনি একটা পাত্র এগিয়ে দিলেন—তার মধ্যে লালচে একটি তেল, আর একটা সূক্ষ্ম তাম্রচক্র।
“এটা গায়ে মাখো, আর এই চক্রটা গলায় পরো। এটা হল বর্জনচক্র, যা বিভ্রম ঠেকায়। যতক্ষণ এটা থাকবে, ততক্ষণ তুমি নিজের মনে থাকবে।”
ঋজু সব করল। একটু পরেই তার স্মৃতি ধীরে ধীরে ফিরতে লাগল। মনে পড়ল দিদিমার মুখ, পড়ার টেবিল, তার বন্ধুদের হাসি। বুকটা ধড়ফড় করতে লাগল—এতক্ষণ সে কোথায় ছিল?
প্রণব দত্ত বললেন, “এখন তুমি তৈরি। কিন্তু মনে রেখো, পরবর্তী স্তরে রক্তনাথ শুধু তোমার মন নয়, তোমার ইচ্ছেকে পরখ করবে। ও জানে, মানুষ যতই শক্ত হোক, তার দুর্বলতা কোথায় সেটা ধরতে পারলে জয় নিশ্চিত।”
“তাহলে এখন কোথায় যেতে হবে?”—ঋজু জানতে চাইল।
দত্ত মানচিত্রে আঙুল রাখলেন। “এবার যেতে হবে ‘বিষ্ণুচক্র সঙ্গমে’—যেখানে তিনটি নদী মিলেছে। সেখানেই রক্তনাথ তার প্রথম তপস্যা শুরু করেছিল, এবং প্রথম আত্মা দখল করেছিল।”
ঋজু মানচিত্রে তাকাল। জায়গাটা কোথায় যেন দেখেছে সে… হ্যাঁ! দিদিমার গল্পে সেই নদীর কথা ছিল।
আর তখনই তার মোবাইলে আবার সেই পুরনো শব্দ—
“Do not disturb the path of the Red Moon.”
চোখ তুলে দেখে, দূরে দাঁড়িয়ে এক ছায়ামূর্তি। মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এবার তার মাথায় একটা মুকুটের মতো ছায়া, আর হাতের তালু লাল।
রক্তনাথ। আবার ফিরে এসেছে।
চলবে…
ষষ্ঠ পর্ব: রক্তজন্ম
ঋজু আবারও ফিরে এসেছিল পথে—এইবার তার গলায় ঝুলছিল বর্জনচক্র, আর মনের মধ্যে ছিল এক শুদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ আগুন। সে জানত, তার সামনে যে পথ, তা কেবল ভূগোল নয়—মানসিক ও আত্মিক স্তরের লড়াইও বটে।
দিদিমার গল্পে শোনা সেই নদীর নাম ছিল—বিষ্ণুচক্র সঙ্গম। গ্রাম থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে, যেখানে তিনটি ছোট নদী—কুণ্ডা, মালতি আর হরিণী—মিলেছে এক অদ্ভুত বৃত্তাকারে। স্থানীয়রা বলে, ওই জায়গায় জল উল্টো দিকে ঘোরে। শোনা যায়, একসময় নদীর বুকে বসে রক্তনাথ এক বিশেষ সাধনা করতেন, যার নাম ছিল—রক্তজন্ম সিধি।
সেই সাধনার মূল কথা ছিল, কোনো জৈব আত্মাকে খোঁজে টেনে আনা এবং তাকে একটি আধারে স্থাপন করা। উদ্দেশ্য? মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণ। তবে এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজন হত তিনটি উৎস: মৃতের রক্ত, চন্দ্রপাটের মুহূর্ত, ও এক “ইচ্ছাপূর্ণ আধার”—মানে এমন কেউ, যে নিজের জীবন দিয়েও জানতে চায় পরপারের কথা।
ঋজু ভাবল—সে কি সেই আধার হতে চলেছে?
বিকেলের শেষ আলোয় সে পৌঁছল সঙ্গমে। জল এক আশ্চর্য লালচে আভা নিচ্ছে। মনে হল যেন সূর্য নয়, ভিতর থেকে আলো দিচ্ছে জল নিজেই। পাড়ে দাঁড়িয়ে তিনটি কৃষ্ণবর্ণ পাথরের মূর্তি—তিন জনা নারী, যাদের চোখ বাঁধা। কৌতূহলী হয়ে ঋজু পাথরের ভিত্তিতে খোদাই পড়ল—“তিন উৎস, এক পথ, এক আত্মা।”
বসে পড়ল বেদির সামনে। ঠিক তখনই বর্জনচক্র গরম হয়ে উঠল। বুকের ওপর গন্ধ লাগল ধূপের, যা সে কোথাও জ্বালায়নি।
আচমকা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক দৃশ্য—
তিন নদীর মাঝখানে বসে আছে এক তান্ত্রিক, গায়ের গামছা খুলে রেখে, চুল খোলা, কপালে রক্ত। তার সামনে একটা পাত্র, তার ভেতর থেকে ধোঁয়ার মত বেরিয়ে আসছে মুখহীন কিছু মূর্তি। তারা হাত বাড়াচ্ছে… আর হঠাৎই সেই দৃশ্য ভেঙে গেল।
ঋজু বুঝতে পারল—সে শুধু স্মৃতি দেখেনি, তার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। রক্তনাথ তাকে ওই সময়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
গলা শুকিয়ে এল। আরেকবার চক্র স্পন্দিত হল, আর এক ছায়ামূর্তি উঠল তার সামনে। এবার পরিষ্কার দেখা গেল রক্তনাথের মুখ। তার চোখে ছিল আগুন, আর ঠোঁটে হাসি।
“তুই এসেছিস, ঠিক যেমন আমি ভেবেছিলাম। সময় এসেছে। এইবার তোর ভিতর দিয়েই আমার পুনর্জন্ম হবে।”
“তুমি মরে গেছ,” ঋজু বলল, “তুমি কেবল একটা বিভ্রম।”
“আমি কখনো মরিনি। আমি এক আত্মা, যে আধারের অপেক্ষায় ছিল। তুই নিজেই দরজা খুলেছিস, ঋজু। মনে নেই, কবে প্রথম আমার নাম পড়েছিলি, কবে কৌতূহল জেগেছিল? ওটাই ছিল আমন্ত্রণ।”
ঋজু চোখ বন্ধ করে বর্জনচক্রে মন দিল। মনে মনে দত্তের শেখানো মন্ত্র আওড়াল—
“আত্মন রক্ষ, বিভ্রম নাশ, শক্তি তেজে শুদ্ধয়তু।”
মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথে রক্তনাথ ছটফট করতে লাগল। চারপাশের বাতাস ঘূর্ণি পাকিয়ে উঠল, নদীর জল ভয়াবহভাবে ফেনাতে লাগল।
কিন্তু ঠিক তখনই, পেছন থেকে কে যেন বলল, “তুমি যদি সত্যিই শেষ করতে চাও, তবে রক্তজন্মের পরবর্তী অধ্যায়েও ঢুকতে হবে। ভয় পেলে নয়, ত্যাগ করলে নয়—স্বেচ্ছায়। আত্মাকে আগুনে ফেলে, তারপর শক্তিকে আয়ত্ত করতে হয়।”
ঋজু ঘুরে দাঁড়াল। সেই মেয়েটি—যাকে সে শালবনে দেখেছিল, আবার এসেছে। এইবার তার মুখ খোলা, চোখ স্বাভাবিক, কপালে রক্তচিহ্ন।
“তুমি কে?”
“আমি রক্তনাথের মন্ত্রপুত্রী। জন্মেছিলাম তন্ত্র থেকে, আবার হারিয়ে গেছি তন্ত্রেই। কিন্তু আজ তুমি ডাকায় আমি ফিরে এসেছি। কারণ এবার সত্যিই একজন আধার এসেছে, যে প্রশ্ন করে, ভয় পায়, কিন্তু পেছনে হাঁটে না।”
সে ঋজুর হাতে একটা ছোট কপর্দি দিল।
“এটা নাও। এটা রক্তবন্ধন ছিন্ন করার প্রতীক। যখন বুঝবে রক্তনাথ তোমার উপর আধিপত্য স্থাপন করতে চলেছে, এটা ভেঙে ফেলো। কিন্তু তার আগে শেষ অধ্যায়ের জন্য তৈরি হও। পরবর্তী স্তর—শরীর নয়, আত্মার ভিতর দিয়ে চলবে।”
ঋজু মাথা ঝাঁকাল।
দূরে বজ্রপাত হল।
চলবে…
সপ্তম পর্ব: অন্তরযাত্রা
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। বিষ্ণুচক্র সঙ্গমের ওপরে অদ্ভুত একটা নিস্তব্ধতা। বাতাস নেই, পাখির ডাক নেই, এমনকি নিজের নিঃশ্বাসের শব্দও কেমন যেন বেমানান লাগছে।
ঋজু কপর্দিটা মুঠো করে ধরে বসে আছে। মনে হচ্ছিল, এইটুকু জিনিসটাই তাকে রক্ষা করছে—একটা ক্ষীণ দড়ির মতো, যা তাকে বাস্তবের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে।
আর তখনই মেয়েটি, সেই “মন্ত্রপুত্রী”, তার সামনে এসে দাঁড়াল। চোখদুটি গভীর, যেন কোনো প্রাচীন শ্মশান থেকে উঠে এসেছে।
সে বলল, “তুমি যা খুঁজছো, তা আর বাইরে নেই, ঋজু। এখন তোমার ভিতরেই রক্তনাথ নিজেকে জাগাতে চাইছে। তোমাকে ঢুকতে হবে নিজের আত্মার গভীরে, যেখানে সে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।”
“কিন্তু কীভাবে?”—ঋজুর গলা কেঁপে উঠল।
“এই চক্রে বসে চোখ বন্ধ করো। আমি মন্ত্রপাঠ করব। তুমি নিজের স্মৃতির অলিগলি ধরে হেঁটে যাবে, যতক্ষণ না তুমি এক গাঢ় অন্ধকার কুঠুরি দেখতে পাও। ওখানেই সে অপেক্ষা করছে।”
ঋজু চক্রের ঠিক মাঝখানে বসে পড়ল। চারদিকের খোদাই হওয়া পাথর যেন নিজেই হালকা আলো ছড়াচ্ছে।
মেয়েটি মন্ত্রপাঠ শুরু করল—
“আত্মস্থং তন্ত্রং, নাভিনিকেতনং, জাগ্রতং বিভ্রান্তমস্মি।”
ঋজুর শরীর কেঁপে উঠল। চোখ বন্ধ করতেই সে যেন আর নিজেকে অনুভব করতে পারল না। হঠাৎ সে একটা জায়গায় এসে পড়ল—একটা সরু সিঁড়ি, নিচে নেমে যাচ্ছে অন্তহীনভাবে।
সে ধীরে ধীরে নামতে লাগল।
সিঁড়ির পাশ দিয়ে কেটে যাচ্ছে তার জীবনের চিত্র—ছোটবেলার খেলা, দিদিমার কোলে ঘুম, প্রথম প্রেম, একাকীত্ব, গবেষণার তীব্র আকাঙ্ক্ষা… সব মিলেমিশে এক অদ্ভুত ছায়া তৈরি করছে। তারপর এক সময় এসে সে পৌঁছাল সেই কুঠুরি।
দরজা লাল, পাথরের তৈরি। তার ওপর খোদাই:
“রক্তং নাথঃ। ইহ নাস্তি ত্যাগ, ইহা জন্ম ভবিষ্যৎ।”
ঋজু হাত রাখতেই দরজাটা খুলে গেল।
ভেতরে নিঃশব্দ, কিন্তু তাপ। একটা মাটির গোলঘর, যার মাঝখানে আগুন জ্বলছে। আর সেই আগুনের ঠিক সামনে বসে আছে রক্তনাথ। কপালে রক্ত, গায়ে লাল কাপড়, চোখে অসহ্য এক দৃষ্টি।
“তুই শেষ পর্যন্ত এলি,” সে বলল, “আমি এতদিন ধরে তোর ভিতরেই ছিলাম। এখন শুধু দরজা খুললেই হবে।”
“তুমি কি আমার সমস্ত কিছু দখল করে নিতে চাও?”—ঋজু প্রশ্ন করল।
“আমি যা চাই তা তুই নিজেই চাস। তোর ভিতরেই ছিল তন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। যে জ্ঞান ছুঁতে চায়, তাকে তো আগুনে নামতেই হয়। আমি কেবল তোর ইচ্ছার এক রূপ। আমাকে স্বীকার কর বা বর্জন কর—তুইই ঠিক কর।”
ঋজুর মাথা চক্কর দিতে লাগল। এটা কি তার নিজের মন? নিজের আত্মা? না কি কেউ সত্যিই ভিতরে এসে বসে পড়েছে?
ঠিক তখন, তার গলায় ঝোলানো বর্জনচক্রটা হালকা জ্বলজ্বল করতে শুরু করল। আর তার মুঠোর কপর্দি, সেটার ভিতর থেকে একটা শব্দ এল—একটা নারীকণ্ঠ—
“স্মরণ করো, তুমি কে।”
ঋজু হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। রক্তনাথ এগিয়ে এলো তার দিকে। ঠিক তখনই সে কপর্দিটা মাটিতে ছুড়ে ফেলল।
এক বিকট শব্দে কপর্দি ভেঙে গেল। চারপাশ আলোয় ভরে উঠল।
রক্তনাথ ছায়ায় পরিণত হয়ে গেল, ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে যেতে লাগল।
কিন্তু যাওয়ার আগে বলল,
“এই যাত্রা শেষ নয়, ঋজু। এক আধার গেলেই আরেক আধার জন্মায়। তুই এখন তন্ত্রের সন্তান।”
চোখ খুলতেই ঋজু নিজেকে আবার চক্রের মাঝখানে আবিষ্কার করল। ভোর হয়েছে। বাতাসে ধূপের গন্ধ নেই। মেয়েটিও নেই।
শুধু তার বুকের মাঝে একটা দাগ—ত্রিকোণ চিহ্ন, লালচে, ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
চলবে…
অষ্টম পর্ব: দ্বৈতজন্ম
ঋজুর শরীর এখনও কাঁপছে। ভোরের আলো ফোটার পরেও চোখে অন্ধকার ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষ্ণুচক্র সঙ্গম এখন শান্ত, অথচ তার ভেতরটা যেন ঢেউ খেলছে। কিছু একটা পাল্টে গেছে—সে তা জানে।
সে হাত দিয়ে নিজের বুকে হাত রাখল—যেখানে সেই ত্রিকোণ চিহ্নটা ছিল। এখন সেটা মুছে গেলেও চামড়ার নিচে একটা চাপা জ্বালা থেকে গেছে। যেন সেখানে কিছু লেখা আছে, অদৃশ্য কালি দিয়ে, যেটা কেবল সময় বুঝতে পারবে।
সে চক্র থেকে উঠে দাঁড়াল। কিন্তু হাঁটতেই বুঝল, শরীর ভারী লাগছে। পায়ের নড়াচড়া ঠিক, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন কেউ তার শরীর ভেতর থেকে ঠেলে দিচ্ছে—একটা দ্বিতীয় সত্তা।
পেছনে তাকাতেই সে দেখল তার ছায়া… আরেকটা ছায়ার সঙ্গে মিশে আছে। যেন দুটো মানুষ পাশাপাশি হাঁটছে, অথচ বাস্তবে সে একা।
তার মাথায় ঘুরছিল একটা প্রশ্ন—রক্তনাথ কি মরে গেছে, না ঋজুর ভিতরে থেকে গেছে?
সে গ্রামে ফিরে এল, হরিপদবাবুর বাড়িতে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কেউ আর তাকে চিনতে পারছে না। বাড়ির কেয়ারটেকার দরজা খুলে বলল, “কে আপনি? এই নামের কেউ তো এখানে থাকেন না।”
“আমি ঋজু! আমি তিনদিন আগে এসেছিলাম। আমার ঘরে জিনিসপত্র… আমার ব্যাগ…”
লোকটা মাথা নাড়ল, “দেখুন বাবু, আপনি যদি ঠাট্টা করতে আসেন তো আলাদা কথা। এখানে কেউ আসেনি এই ক’দিনে।”
ঋজু বুঝতে পারল—কিছু একটা সত্যিই বদলে গেছে।
সে প্রণব দত্তর কাছে পৌঁছল। কিন্তু শান্তিনিকেতনে পৌঁছে দেখল, তাঁর বাড়ি তালাবন্ধ। প্রতিবেশী বলল, “প্রণববাবু তো মাসখানেক আগে মারা গেছেন। আপনি ওঁকে কোথায় দেখলেন?”
ঋজুর মাথা চক্কর দিতে লাগল। সে নিজে জানে প্রণব দত্তের সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁর দেওয়া বর্জনচক্র পরেছে, তাঁরই মন্ত্রে আত্মার ভিতর নেমেছে।
তবে কি… সে নিজেই অন্য এক স্তরে চলে গিয়েছিল? একটা সমান্তরাল সময়, সমান্তরাল বাস্তব?
সে চুপচাপ নিজের শহরে ফিরে গেল। কিন্তু সেখানে পৌঁছে বুঝল, নিজের ঘরেও কেউ তাকে চেনে না। প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কাকে খুঁজছেন?”
সে নিজের ইউনিভার্সিটিতে গেল—নামোল্লেখ নেই, রিসার্চ গাইড তাকে চিনছেন না।
সে মুঠোফোন বার করল, কিন্তু ফোন আনলকই হচ্ছে না। স্ক্রিনে ভেসে উঠল সেই পুরনো লাইন—
“Do not disturb the path of the Red Moon.”
ঋজু হেসে উঠল—একটা দুর্বল, পরাজিত হাসি। কিন্তু তার চোখে তখন ছিল অন্য আলো।
সে বুঝতে পারল—সে আর সেই ঋজু নেই। হয়তো সে এখন এমন এক সত্তা, যার ভিতরে রক্তনাথের ছায়া থেকে গেছে। হয়তো এই পরিবর্তনই তন্ত্রের আসল রূপ—নতুন শরীরে নতুন আত্মার জন্ম।
হঠাৎ সে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আয়নায় দেখা গেল তার চোখ—আর সেই চোখের ভিতর ঘুরছিল এক অদ্ভুত লাল ঘূর্ণি।
তার মুখে তখন মৃদু এক মন্ত্রের ধ্বনি—
“তন্ত্রং জাগ্রতঃ। আধারং প্রস্তুতঃ।”
নবম পর্ব: নতুন রক্তনাথ
রাত গভীর। শহরের সমস্ত আলো নিভে এসেছে। একমাত্র উজ্জ্বলতা—ঋজুর চোখ। সেখানে একটা আলো জ্বলে উঠেছে যা আগের ঋজুর নয়, কিন্তু তার দৃষ্টির ভিতরেই বাসা বেঁধেছে।
সে একা বসে আছে নিজের ঘরে—অথবা যেটা ছিল তার ঘর, এখন শুধুই একটা ঠাঁই, একটা কল্পনার ছায়া। দেওয়ালে টাঙানো আয়নার সামনে বসে সে নিজের মুখে তাকিয়ে আছে। আর প্রতিবার দেখছে, তার মুখের একপাশ একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে—চোয়ালটা বেশি তীক্ষ্ণ, চোখের চারপাশ কালোছায়া, কপালে অল্প অল্প একটা ত্রিকোণ ফুটে উঠছে যেন।
ঋজু জানে—এটা রক্তনাথের ছায়া। এখন আর কেবল বাহ্যিক ছায়া নয়, এটা তার মনের ভেতর তৈরি হওয়া এক নতুন ব্যক্তি, এক নতুন “ঈশ্বরসত্তা”—নির্মাতা ও ধ্বংসকারী।
হঠাৎ তার ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল—
“আমার যাত্রা তোকে দিয়ে শুরু হয়েছে। তুই আমার আধার। কিন্তু তুই যদি সত্যিই চাইিস, তবে তুইও হতে পারিস আমার ঊর্ধ্বে।”
ঋজু উত্তর দিল না। সে জানত, সিদ্ধান্ত এখন তার হাতে।
সে বেরিয়ে পড়ল। প্রথম গন্তব্য: দিদিমার পুরনো বাড়ি—যেখানে সে প্রথম রক্তনাথের নাম শুনেছিল। পথটা বদলে গেছে। মনে হচ্ছে শহরটা তার কাছে অপরিচিত, অথচ অদ্ভুতভাবে আশ্রয়দাতা।
দিদিমার পুরনো বাড়ি পৌঁছেই থমকে গেল। দরজাটা খোলা। আর ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে কিছু পুরনো পুঁথি, যেগুলোতে অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা—ত্রিভুজ, চক্র, চোখ। এক কোনে বসে আছেন এক বৃদ্ধা—কিন্তু তিনি দিদিমা নন। চেহারা অপরিচিত, কিন্তু চোখে রয়েছে সেই একই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
“তুই ফিরলি,” তিনি বললেন, “আমি জানতাম তুই আসবি। তুই এখন দ্বৈতসত্তা—মানব ও তান্ত্রিক।”
“আপনি কে?”—ঋজু জিজ্ঞেস করল।
“আমি সেই এক, যাকে রক্তনাথ প্রথম বার ডেকেছিল। কিন্তু আমি তা হতে পারিনি। আমিই একসময় বলেছিলাম, ‘তন্ত্র কাউকে ছেড়ে যায় না।’ আজ আমি তোকে শুধু একটা জিনিস দিতে এসেছি—তোর মুক্তির পথ।”
তিনি একটা ছোট সিন্দুক এগিয়ে দিলেন। তার ভিতরে ছিল একটা তাম্রনির্মিত আয়না। সেই আয়নায় দেখল ঋজু—নিজেকে, আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তনাথের অবয়ব। মুখে একই ছাপ, চোখে একই ছায়া। তারা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে।
“এই আয়না শেষ পরীক্ষার দার,” বৃদ্ধা বললেন। “যদি আয়নায় নিজেকে আলাদা করে দেখতে পারিস, তবে তুই এখনো তোর নিজের। যদি না পারিস, তবে তুই ওর—নতুন রক্তনাথ।”
ঋজু চোখ বন্ধ করল। মনে করল তার পুরোনো স্মৃতিগুলো—কলেজের ল্যাব, গবেষণার ক্লান্তি, ছোটবেলার বারান্দা, রৌদ্রজলভেজা দুপুরে দিদিমার কোলে বসে শোনানো রক্তনাথের গল্প…
চোখ খুলে আয়নার দিকে তাকাল।
আয়নায় এখন সে একাই। পাশে কেউ নেই। ছায়া নেই। শুধু ঋজু।
আর তখনই সে বুঝল—সে এখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। তার ভিতরে তান্ত্রিক জন্ম নিচ্ছে বটে, কিন্তু সে চাইলেই নিজের ইচ্ছায় পথ বেছে নিতে পারে।
সে সিন্দুকটা বন্ধ করল। বৃদ্ধাকে প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে এল।
রাস্তায় পা রাখতেই আবার সেই কণ্ঠস্বর—
“তোকে ছাড়ছি, কারণ তুই নিজেকে ছাড়িসনি। কিন্তু মনে রাখিস, একদিন তোর রক্ত নিজেই ডাক দেবে আমাকে।”
ঋজু আকাশের দিকে তাকাল।
একটা লালচে অর্ধচন্দ্র উঠেছে।
দশম পর্ব: রক্তপথ
রাতের আকাশে উঠেছে এক অস্বাভাবিক লালচে অর্ধচন্দ্র। শহরের মাথার উপর দিয়ে যেন ধীরে ধীরে গড়িয়ে যাচ্ছে এক ছায়া, অদৃশ্য কিন্তু অনুভবযোগ্য।
ঋজু তখন হেঁটে চলেছে ধীরে ধীরে, নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে। আজ তার ছায়াটা আর বিভক্ত নয়। মিশে গেছে একাকার হয়ে। অন্তত আপাতত। কিন্তু সে জানে, এই মিলন শুধু বাহ্যিক—ভেতরে এখনও যুদ্ধ চলছে।
সে ফিরল নিজের ঘরে, বা যেটা এখন থেকে তার ‘নতুন ঘর’। বিছানার পাশের ডেস্কে খুলে ফেলল সেই পুরনো ডায়েরিটা, যেখানে রিসার্চের সব কিছু লিখে রেখেছিল। পাতার পর পাতা—তন্ত্র, সাধনা, রক্তনাথ, পুরনো গ্রাম, বিষ্ণুচক্র সঙ্গম, বর্জনচক্র…
সে লিখল আজকের দিনটির তারিখ দিয়ে:
“শেষ নয়, সূচনা।”
তারপরে সে লিখল—
“তন্ত্র আমাকে শুধু ভয় দেয়নি, আমাকে প্রশ্ন করেছে। আমি যদি সে প্রশ্নের উত্তর হতে পারি, তবে হয়তো রক্তনাথকে ছাড়িয়ে যেতে পারি। নাহলে একদিন হয়তো আমিই হব পরবর্তী ছায়া, এক নতুন রক্তপথের জন্মদাতা।”
এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা হাতে নিয়ে সে তাকাল জানালার বাইরে। রাস্তা ফাঁকা। কিন্তু দূরে একটা লোক দাঁড়িয়ে—লম্বা, গায়ে গেরুয়া, চোখে কালো চশমা। চেনা নয়, তবু অচেনা নয়।
ঋজু তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। লোকটা দাঁড়িয়ে রইল।
তারপর ধীরে ধীরে চলে গেল রাস্তার শেষ প্রান্তে, একটা ধোঁয়ামাখা কুয়াশার ভেতর হারিয়ে।
ঋজুর মুখে এবার এক অন্যরকম হাসি।
সে জানে, সে আর আগের ঋজু নেই। কিন্তু সে এখনো রক্তনাথও হয়ে ওঠেনি।
সে দাঁড়িয়ে আছে মাঝের রাস্তায়—
রক্তপথে।
আর ঠিক তখনই মোবাইলটা টুং করে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল একটা নতুন মেসেজ—
“তুইই হবে পরবর্তী পাঠক। তৈরি হ?”
চোখেমুখে অদ্ভুত আলো নিয়ে ঋজু লিখল—
“হ্যাঁ। এবার আমি নিজেই লিখব। রক্ত দিয়ে। আত্মা দিয়ে। তন্ত্র দিয়ে।”
শেষ