মনতোষ প্রামাণিক
আলোর চেয়ে দ্রুত
মহাশূন্যের নীল-কালো আঁধারে যেন জ্বলে উঠল একটা নক্ষত্র। কিন্তু সেটা আসলে নক্ষত্র নয়, ছিল পৃথিবীর প্রথম লাইট-স্পিড স্পেসক্র্যাফট—Excelsior। তার তেজস্ক্রিয় ইঞ্জিন হাইপারপুশে সজোরে ঝাঁকি খাচ্ছে, যেন মহাবিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
ক্যাডেট আর্যন মিত্র, বয়স মাত্র ২২, দাঁড়িয়ে আছে কন্ট্রোল ডেকের সামনে। চকচকে সাদা ইউনিফর্মে, চোখে অপার কৌতূহল। এটাই তার প্রথম ইন্টার-গ্যালাকটিক মিশন। তবে এই মিশনটা সাধারণ নয়।
“আপনার কাজ হচ্ছে বন্দিকে নজরদারি করা, ক্যাডেট মিত্র,” বলে উঠলেন কমান্ডার হেলেন ডি’সুজা। “Zuraq অত্যন্ত বিপজ্জনক। ওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নয়, শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ।”
Zuraq—একটা এলিয়েন প্রজাতির সদস্য, যার দেহ কুয়াশার মতো অর্ধ-পারদর্শী। মাথায় তিনটি চোখ, মুখে কোন ঠোঁট নেই, কিন্তু… মনের ভাষায় কথা বলে। ওকে ধরা হয়েছিল মঙ্গল গ্রহের এক গোপন গবেষণাগারে, অভিযুক্ত পৃথিবী আক্রমণের ষড়যন্ত্রে।
আর্যন ধীরে ধীরে Zuraq-এর কাচের কনটেইনারের দিকে এগোল। তার মনে অজানা ভয়।
হঠাৎ, কন্ট্রোল রুমের আলো ঝাপসা হয়ে এল। ইন্টারফেস স্ক্রিনে ভেসে উঠল এক অদ্ভুত বার্তা—
“He remembers.”
“এটা কি কোনো হ্যাক?” চেঁচিয়ে উঠলেন পাইলট ওকাফর।
“AI সিস্টেমে কিছু গোলমাল হচ্ছে,” বললেন হেলেন। “রিবুট করো!”
কিন্তু আর্যনের চোখ তখন আটকে Zuraq-এর দিকে। Zuraq তাকিয়ে আছে সরাসরি তার চোখে। আর পরমুহূর্তে—
“তোমার বাবাকে আমি চিনি…”
আর্যনের হৃদয় থমকে গেল।
সে যে কথা শুনল সেটা কি সত্যিই এলিয়েনের মুখে… বাংলা?
দুঃস্বপ্নের সূচনা
আর্যন যেন ঘোরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। Zuraq-এর মুখে বাংলাটা কীভাবে এল? তার কণ্ঠ নেই, তবু মনের ভেতর স্পষ্ট একটা আওয়াজ—
“তোমার বাবাকে আমি চিনি…”
“কী বললে?” ফিসফিস করে প্রশ্ন করল আর্যন।
Zuraq কোনো উত্তর দিল না। তার চোখ তিনটি যেন এখন নিঃসঙ্গ গ্রহের মতো, দুঃখে নিমজ্জিত।
আর্যন এক পা পিছিয়ে এল। মাথায় ঘুরছে হাজার প্রশ্ন। তার বাবা, ডঃ ঋষি মিত্র, বিখ্যাত স্পেসবায়োলোজিস্ট, ৭ বছর আগে মঙ্গল মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। সরকারি রিপোর্ট বলেছিল—”প্রেসার কেবিন ফেইলিওর, মৃতদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।”
কিন্তু… এখন এই অচেনা এলিয়েন কীভাবে জানে তার নাম?
“তুমি কি আমার বাবার সঙ্গে ছিলে?” ধীরে ধীরে বলে উঠল আর্যন, যেন নিজেকেই প্রশ্ন করছে।
ঠিক তখনই Excelsior-এর কন্ট্রোল প্যানেলে আবার ঝলকানি। আলো নিভে যাচ্ছে, ইন্টারকম সিস্টেম বিচ্ছিন্ন। বেজে উঠল বিপদের সংকেত।
“Engineering Bay offline!”
“Auto-navigation reset হয়ে গেছে!”
“AI behaving erratic!”
কম্যান্ডার হেলেন দৌড়ে এলেন ডেকে। “Status report!”
আর্যন বলল, “আমরা কেউই AI-কে কন্ট্রোল করতে পারছি না। কিছু একটার ভেতরে ফিড হয়েছে।”
ঠিক সেই সময়, আবার সেই বার্তা স্ক্রিনে ভেসে উঠল—
“He remembers. He returns.”
কেউ একজন চাপা গলায় বলে উঠল, “এই তো সেই ভয়ঙ্কর কোড যার কথা রিউমার ছিল। AI হয়ত infected।”
Zuraq তখনো চুপচাপ বসে। চোখের দৃষ্টি বদলায়নি।
আর্যন মনে মনে ভাবল, এটা কি নিছক দুর্ঘটনা? নাকি কেউ ইচ্ছা করে এই নৌকাটিকে উলটো পথে টানছে? হাইপারস্পেসে ঢোকার কথা ছিল ২ ঘণ্টা পরে, অথচ সময় এগিয়ে এনে ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রি-ক্যালিব্রেট করেছে।
হঠাৎই Zuraq মুখ তুলল। এবার স্পষ্ট ভাবে বলল—
“তোমার বাবাকে শেষবার আমি দেখেছিলাম মঙ্গল গ্রহের লাল গুহায়। তিনি আমাকে রক্ষা করেছিলেন।”
আর্যনের কাঁধে কাঁটা।
সে বুঝল—এই মিশনটা শুধুই এক এলিয়েন ট্রান্সপোর্ট নয়। এটা তার নিজের অতীতের দিকে ফেরা।
মহাকাশের বন্দি
Excelsior তখন প্লুটো বেল্টের দিকে ধেয়ে চলেছে। গতিবেগ প্রায় আলোর কাছাকাছি। চারদিকে নক্ষত্রের ফসফসে আলো, কিন্তু জাহাজের ভেতরে নিঃশব্দ আতঙ্ক।
আর্যন মিত্র কেবিনে বসে নিজের বাবার পুরোনো রেকর্ডিং চালিয়ে দেখছিল। গলায় সেই পরিচিত স্নেহময় স্বর—
“তুমি একদিন আলোকে ছুঁবে, আর্যন। মহাকাশ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।”
তার চোখে জল জমে উঠল। কিন্তু সে জানে, এখন আবেগের সময় নয়। Zuraq-কে বিশ্বাস করবে? নাকি কম্যান্ডারদের মত করে শুধু বন্দি হিসেবেই দেখবে?
এমন সময়, জাহাজটা কেঁপে উঠল।
“Impact detected! Gravitational field anomaly!” – চিৎকার করে উঠল জাহাজের AI।
Asteroid belt.
কিন্তু কিছু একটা ঠিক নেই। পাথরগুলো ঘূর্ণায়মান নয়, স্থির। যেন সময়ের মধ্যেই আটকে গেছে।
“এইখানে সময় বাঁক নেয়,” Zuraq বলে উঠল হঠাৎ।
“তুমি কী বলছো?” আর্যনের গলা শুকিয়ে গেল।
Zuraq কাচের ঘরের ভেতর বসেই বলল, “এই স্থান—মহাবিশ্বের ভুলে যাওয়া একটা কোণা। যেখানে তোমার বাবাকে আমি শেষবার দেখেছিলাম। সেখানে সময় প্রবাহিত হয় না, অনুভব হয়।”
আর্যন তর্ক করল, “বিজ্ঞানের বাইরে এসব ভাবা যায় না।”
Zuraq তীক্ষ্ণভাবে তাকাল, “তোমার বিজ্ঞানও তো একদিন ছিল কল্পনা। আমি তাকে চিনতাম—ডঃ ঋষি মিত্র। তিনি আমাকে বন্দি করেননি। তিনি আমাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।”
ঠিক সেই মুহূর্তে, জাহাজের এক ক্রু, লেফটেন্যান্ট সোফিয়া, অদৃশ্য হয়ে গেল। তার হ্যাজমেট স্যুট মিলল ভাসমান, কিন্তু ভিতরে কেউ নেই।
কমান্ডার হেলেন চিৎকার করলেন, “Emergency lockdown!”
আর্যনের ভেতরে কিছু একটা ভেঙে পড়ছিল।
তার মনে পড়ল ছোটবেলার একটা ছবি—তার বাবা এক অজানা ভাষায় স্ক্রোল লিখছেন, যার প্রতিটি চিহ্ন হুবহু Zuraq-এর চোখের পাশে আঁকা রহস্যময় সিম্বলের মতো।
Zuraq ফিসফিস করে বলল, “তোমার রক্তেই সেই ভাষা বয়ে চলে। তুমি শুধু শুনতে শিখো।”
আর্যনের মনে হতে লাগল, এই বন্দী শুধু এলিয়েন নয়—সে হয়ত তার অতীতের সঙ্গে একটি সেতু, একটা ইঙ্গিত—তার বাবার, তার ভবিষ্যতের।
ডার্ক কোয়াড্রান্টের দ্বারপ্রান্তে
Excelsior প্রবেশ করল টাইটান-এর কক্ষপথে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন এক বিরাট ছায়া গ্রহের গায়ে জড়িয়ে আছে একটা মৃত সঙ্গীত—শান্ত, অথচ ভয়াবহ। এখানেই অবস্থিত “ডার্ক কোয়াড্রান্ট”—একটি গ্যালাকটিক স্তরের হাই-সিকিউরিটি জেল যেখানে কেবল মহাকাশের সবচেয়ে বিপজ্জনক বন্দিদের রাখা হয়।
AI-র কণ্ঠে একটা অদ্ভুত কম্পন ভেসে এল—
“Warning: Subspace frequencies interfering. Source unknown.”
কম্যান্ডার হেলেন দ্রুত নির্দেশ দিলেন, “Shields at maximum. Prepare to transfer the prisoner.”
আর্যন তখনো চুপ। কিন্তু তার চোখে স্পষ্ট দ্বিধা। Zuraq, যে তার বাবার কথা জানে, যে তাকে এমন কিছু জানায় যা পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে নেই, সে কি সত্যিই একটা দানব?
ঠিক তখনই জাহাজের মনিটরে ভেসে উঠল এক অদ্ভুত তরঙ্গচিত্র। এমন নয় যেন শব্দ হচ্ছে, বরং যেন শব্দ অনুভব করাচ্ছে।
“ভেতরে যেয়ো না…”
একটি ফিসফিসানি যেন চারপাশের বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল।
আর্যন নিজের কানে শুনতে পেল না, কিন্তু মনের গভীরে কিছু একটা কেঁপে উঠল।
“তোমার বাবার কণ্ঠ…?” সে ফিসফিস করে।
Zuraq এবার দাঁড়িয়ে পড়ল কাচের ভিতর। চোখ তিনটি উজ্জ্বল হয়ে উঠছে নীল আলোয়।
“তুমি বুঝেছো শেষমেশ,” সে বলল, “এই জেলখানাটা কেবল আমার জন্য নয়। এটা তৈরি করা হয়েছিল তোমার বাবাদের জন্য—যারা আলো থেকে তৈরি।”
আর্যনের বুক কেঁপে উঠল। “আলো থেকে?”
Zuraq বলল, “তোমার বাবা একবার নিজের দেহ বিসর্জন দিয়েছিলেন এই গ্রহের মানুষের জন্য। তাকে রাখা হয়েছে এই জেলের ভেতর, শক্তি উৎপন্ন করার যন্ত্র হিসেবে। ওরা জানে না, এই শক্তিই একদিন জেগে উঠবে।”
“কে জাগবে?” আর্যনের কণ্ঠ কাঁপছিল।
“তুমি,” Zuraq বলল। “তুমি আমার মতো নও। তুমি তার মতো।”
কম্যান্ডার তখন এসে হাজির, “Time to hand him over.”
আর্যন থমকে দাঁড়াল।
তার সামনে দুটি পথ—কমান্ডারদের নির্দেশে চলা, অথবা Zuraq-এর কথা মেনে নেওয়া, যার সত্যতা মিশে আছে নিজের শৈশব, বাবার গল্প আর আজকের এই অভিজ্ঞতার ভেতর।
আর্যনের চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হলো। ভেতরে একটাই কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হলো—
“তুমি আলোর সন্তান, আর্যন। তোমার কাজ শুরু মাত্র।”
অপারেশন ব্যর্থতা
ডার্ক কোয়াড্রান্টের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে Excelsior থমকে গেল। জেলের দরজা খুলতে হলে ফিজিক্যাল অথেন্টিকেশন দরকার। কমান্ডার হেলেন আর দু’জন নিরাপত্তারক্ষী Zuraq-কে নিয়ে এগিয়ে গেলেন।
আর্যন তখন কনসোলে বসে, একটানা তার বাবার শেষ মিশনের ভিডিওর অডিও এনালাইসিস করছিল। একটি অংশে তার বাবার গলা পাওয়া গেল—
“তারা যা বলছে, আমি তা করি না। আমি Zuraq-কে রক্ষা করেছি, কারণ ও একজন যুদ্ধাহত, অপরাধী নয়।”
আর্যনের চোখে বিস্ময়।
তার বাবা যদি Zuraq-কে রক্ষা করতে চায়, তবে এই জেল আসলে কী?
ঠিক তখনই কমান্ডার হেলেনের ভয়েস কমে এল—
“Excelsior to base, prisoner is ready for transfer.”
কিন্তু কিছু একটা ঠিক নেই।
Zuraq হঠাৎ চিৎকার করল না, পালানোর চেষ্টা করল না—বরং চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল। তার কণ্ঠে একমাত্রিক প্রতিধ্বনি—
“The Vault is not a prison. It’s a power station.”
আর্যন দৌড়ে এল। “অপারেশন থামান! এটা কোনো বন্দীর ঘর নয়, এটা একটা ফাঁদ!”
“তুমি পাগল?” হেলেন রেগে গেলেন। “তুমি ডিউটি ভঙ্গ করছো।”
“না, আমি একটা জীবন বাঁচাতে চাই—আর হয়তো আমাদের নিজেদেরও,” আর্যনের কণ্ঠ শক্ত।
হেলেন সিগন্যাল দিলেন জেলের দরজা খোলার। দরজার পিছনে গা-ছমছমে এক গোলকধাঁধা—কাচের মতো স্বচ্ছ দেয়াল, আর তার ভেতর ভাসছে অস্পষ্ট আলো।
হঠাৎ… চারপাশ কেঁপে উঠল। দরজা খুলতেই একটা প্রবল কম্পন শুরু হল। ভিতর থেকে এক ভয়ঙ্কর চিৎকার যেন পুরো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ল।
AI চেঁচিয়ে উঠল—
“Warning! Unknown energy signature escaping!”
Zuraq গম্ভীর গলায় বলল, “এটাই ওদের আসল উদ্দেশ্য ছিল—আমাকে ফেলে দিয়ে সেই শক্তিকে জাগানো। ওরা জানে না, সেটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়।”
আর্যন বুঝতে পারল—তাকে আর দেরি করলে চলবে না।
সে Zuraq-কে কাচের ঘর থেকে বের করল, নিজের override code দিয়ে। হেলেন বন্দুক তাক করলেন, “Don’t move!”
আর্যন বলল, “আমার বাবার প্রাণ এই জায়গায় আটকে আছে। তোমরা যা করছো, সেটা মানবতার বিরুদ্ধে।”
Zuraq আর্যনের দিকে তাকিয়ে হাসল।
“তুমি তৈরি, আলোয় ফিরতে?”
আর্যন মাথা নোয়াল। “চলো।”
আর্যন এবং Zuraq দৌড়ে এল Excelsior-এর হাইপার-ক্যাপসুলে। ঠিক পিছনে জেলের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসছে এক অজানা শক্তির বিস্ফোরণ।
Operation Excelsior—ব্যর্থ হলো।
কিন্তু একটা নতুন অভিযানের জন্ম হল।
মহাশূন্যে সিদ্ধান্ত
আর্যন ও Zuraq ছোট হাইপার-ক্যাপসুলে বসে দাঁত চেপে বসে আছে। বাইরে ডার্ক কোয়াড্রান্ট থেকে লালচে আলো বিস্ফোরণের মতো ছুটে আসছে। Excelsior পেছনে পড়ে গেল—দেহে নড়াচড়ার অনুভবটুকুও হারিয়ে ফেলেছে তারা।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?” আর্যনের প্রশ্ন।
Zuraq বলল, “একটা পুরনো চাঁদ। সেখানে তোমার বাবার শেষ চিহ্ন রয়ে গেছে।”
হাইপারজাম্প শেষ হতেই ক্যাপসুল এসে থামল এক নির্জন, বরফে মোড়া ছোট চাঁদে। নাম—Arius-17। কোন মানচিত্রেও নেই।
মাটি ছুঁয়ে আর্যনের মনে হল, এটাই পৃথিবীর বাইরে তার প্রথম নিজস্ব পদচিহ্ন।
Zuraq এগিয়ে গেল এক গুহার দিকে। ভিতরে একটি নীল স্ফটিকের মত গঠন, যা আলতো ভাবে স্পন্দন করছে।
“এটাই তোমার বাবার রূপান্তরিত রূপ,” Zuraq বলল।
আর্যন কেঁপে উঠল, “তুমি বলছো… তিনি জীবিত?”
“তিনি শরীর হারিয়েছেন। কিন্তু শক্তি হিসেবে বেঁচে আছেন। আমাদের মতো প্রাণীরা শরীর ছেড়ে আলোয় মিশে যেতে পারে। তোমার বাবাই প্রথম মানব যিনি সেটা পেরেছিলেন।”
আর্যন এগিয়ে এসে ছুঁয়ে দিল স্ফটিকটিকে।
এক মুহূর্তে সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেল।
চারপাশে এক আভা, যেখানে এক কণ্ঠ বলে উঠল—
“আর্যন, তুমি শেষ অবধি এসেছো। সময় এসেছে নতুন যাত্রার।”
“তুমি কোথায়, বাবা?” আর্যনের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
“আমি তোমার মাঝেই। তুমি যা অনুভব করো, আমি তা–ই। Zuraq তোমাকে আমার কাছে এনেছে, কারণ এখন তোমার পালা। পৃথিবীর জন্য এক নতুন আলো চাই।”
Zuraq মাথা নিচু করে বলল, “আমি শুধু পথ দেখিয়েছি।”
আর্যনের শরীর যেন হালকা হয়ে উঠল। একটা অদ্ভুত শান্তি তাকে ঘিরে ধরল।
সে ধীরে ধীরে বলল, “আমি বুঝেছি। বন্দী আমি ছিলাম, তোমরা না। আমি মুক্ত হতে এসেছি।”
এক বছর পরে—
পৃথিবীর নতুন মহাশূন্য ইউনিয়নের এক গোপন রিপোর্ট—
“Agent Aryan Mitra now leads the ‘Luminous Core Project’—to establish peaceful contact with energy-based lifeforms. Operation Excelsior classified as False Flag.”
মানুষ জানল না সে রাতে কী ঘটেছিল টাইটানে। জানল না কে বাঁচল, কে হারাল।
কিন্তু মহাশূন্যে কোথাও,
এক নতুন জ্যোতির পথ তৈরি হল।