Child Fiction - English

হগওয়ার্টসের হারানো কক্ষ

Spread the love

তৃষা চ্যাটার্জী


পর্ব ১

হগওয়ার্টসের আকাশ আজ একটু বেশিই নীরব। অক্টোবরের শেষপ্রান্তে এসে হাওয়া ঠান্ডা হলেও, রাতটা যেন অস্বাভাবিক। চাঁদের আলো ছায়া ফেলেছে প্রাচীন প্রাসাদের পাথরের দেয়ালে। ঠিক তখনই, এক ছায়াময় মূর্তি লাইব্রেরির পেছনের করিডোর দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। তার হাতে একটা পুরনো বই, কাপড়ের মোড়কে বাঁধা। মেয়েটির নাম—এলোরা ফিনিক্স, হাফলপাফ হাউসের পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী। মাথায় ছড়ানো বাদামী চুল, চোখ দুটো সবুজ কিন্তু গভীর, যেন কিছু লুকিয়ে রাখে।

কিছুদিন আগে লাইব্রেরির নিষিদ্ধ বিভাগের এক পুরোনো তাক ঘাঁটতে গিয়ে সে পেয়েছিল বইটা—“The Hidden Rooms of Hogwarts”। বইটার পৃষ্ঠা ছুঁয়ে দেওয়ার মুহূর্তেই তার তালুর মধ্যে ফুটে উঠেছিল একটি লালচে দাগ—জ্বলন্ত পাখির মতো দেখতে। প্রথমে সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কদিন পর, সে টের পায় দাগটা ধীরে ধীরে হালকা আলো ছড়াচ্ছে, বিশেষ করে যখন সে ওই বইটা পড়ে।

এই রাতটা এলোরার কাছে আর পাঁচটা রাতের মত ছিল না। আজ সে ঠিক করেছে, বইয়ের নির্দেশমতো অনুসন্ধান শুরু করবে। সে জানে, এটা বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু ভেতরে কোথাও যেন একটা কণ্ঠ বলছে—“তোমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।”

লাইব্রেরির পেছনের দেয়ালে লেখা কিছু শব্দ ছিল বইতে। “Where the phoenix burns, the fire shall guide.” এলোরার চিহ্ন ঠিক তখনই গরম হয়ে ওঠে, যখন সে ওই লাইনের সামনে দাঁড়ায়। সে ফিসফিস করে বলে, “লুমোস।” আর বাতাসের মতো কিছু একটা দুলে উঠে দেয়ালের এক প্রান্তে একটি রুন ফুটে ওঠে।

“আবার!” এলোরা বলল, উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে। রুনটা আবার অদৃশ্য হয়ে যায়।

হঠাৎ পেছন থেকে ভেসে আসে এক চেনা কণ্ঠ—
“তুমি কি জানো, লাইব্রেরির পেছনে রাতে ঘোরাঘুরি নিষিদ্ধ?”

এলোরা চমকে ফিরে দেখে—আলবাস সেভারাস পটার, গ্রিফিনডরের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র, হ্যারি পটারের ছেলে। চোখে তার বিস্ময় আর সন্দেহ। আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা হলো স্করপিয়াস মালফয়, স্লিথারিনের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদের একজন, ড্র্যাকো মালফয়ের ছেলে।

“তোমরা কী করছো এখানে?” এলোরা জিজ্ঞেস করে।
“তোমাকেই তো সেটা বলা উচিত,” আলবাস হেসে বলে। “আমরা পেটুনিয়া ম্যাডামের পাঠানো কাজে বের হয়েছিলাম। ওর নতুন রুন পাথরের খোঁজ করতে এসেছিলাম। কিন্তু দেখি তুমি একা একা…”

এলোরা একটু ইতস্তত করে, তারপর বলে, “তোমাদের একটা জিনিস দেখাতে হবে। তবে প্রতিজ্ঞা করো, কাউকে বলবে না।”

তারা তিনজন এক কোনায় বসে। এলোরা বের করে বইটা, আর খুলে দেখায় সেই চিহ্ন। তখনো আলো ছড়াচ্ছে তার তালু থেকে। স্করপিয়াস অবাক হয়ে বলে, “এইটা তো… ফিনিক্স সিল। আমি বাবার পুরনো বইতে দেখেছিলাম। এটা নাকি একটা প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণির অংশ। কেউ কেউ বলে, হগওয়ার্টসে এখনও এমন এক কক্ষ লুকানো আছে, যেটা কেবল সিলধারীই খুঁজে পেতে পারে।”

“তাহলে এটা একটা কাকতালীয় ঘটনা নয়,” বলে আলবাস। “এটা কিছু বড় কিছুর শুরু হতে চলেছে।”

তিনজন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। বাইরে হাওয়ার দমকা আওয়াজ, ভিতরে বুক ধড়ফড় করা উত্তেজনা।

এলোরা বলে, “বইটায় লেখা আছে—‘Only the bearer of the Mark shall light the flame of truth.’ আমি জানি না কেন, কিন্তু মনে হচ্ছে এটা আমাকে কিছু বলছে… আমাকে খুঁজতে বলছে।”

আলবাস বলে, “তবে চল, খুঁজেই দেখি। একসাথে।”

স্করপিয়াস হালকা হেসে বলে, “হ্যাঁ, শুধু আমাদের ওপর অভিশাপ না পড়ে তাহলেই হলো।”

এলোরা মনে মনে হাসে, কিন্তু জানে—ওরা যা শুরু করেছে, তা হগওয়ার্টসের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করতে চলেছে।

আর ঠিক তখনই, তাদের সামনে আবার সেই রুনটা জ্বলে ওঠে—কিন্তু এবার মাটিতে! তিনজন তাকিয়ে থাকে বিস্ময়ে। রুনটা যেন দুলে উঠছে, আর নিচ থেকে আসছে এক গর্জনের মত আওয়াজ…

গল্পের খাতা খুলে গেছে। হগওয়ার্টস তার হারানো কক্ষের দরজা আবার খুলতে চলেছে।

পর্ব ২

হগওয়ার্টসের গোপন করিডোরে ফুটে ওঠা রুনটা আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড জ্বলল। তারপর আলোটা নিভে গেল, কিন্তু তিনজনের চোখে সেই আলো যেন স্থায়ীভাবে লেগে রইল।

এলোরা প্রথমে ভয় পেয়েছিল। কিন্তু আলবাস আর স্করপিয়াস দু’পাশে দাঁড়ানো, তাতে সাহস ফিরে পেল। রুনটার নিচে মাটিতে হাত রাখতেই তার তালুর ফিনিক্স চিহ্নটা আবার জ্বলে উঠল। তখনই একটা নকশা ফুটে উঠল মাটির উপর—এক মানচিত্র। হগওয়ার্টসের অংশবিশেষ, কিন্তু খুব অদ্ভুত।

“এটা স্কুলের সাধারণ ম্যাপ না,” বলে স্করপিয়াস। “দেখো, এখানে তৃতীয় তলার পাশে একটা রুম দেখাচ্ছে, কিন্তু সেটা তো আমাদের জানা মানচিত্রে নেই।”

“এবং এই রুমটার নাম লেখা—‘Ignis Veritas’, অর্থাৎ সত্যের আগুন,” যোগ করে আলবাস।

এলোরা তখনও ম্যাপের দিকে তাকিয়ে। ম্যাপটা হঠাৎ এক লালচে ছোপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। সেই ছোপটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে ম্যাপের কিছু অংশে, যেন আগুনের রেখা। আর সেই রেখা গিয়ে থামে হগওয়ার্টসের পুরনো উত্তর টাওয়ারের এক শূন্য কক্ষের সামনে।

“আমাদের সেখানে যেতে হবে,” বলে এলোরা।

পরদিন সকালে তিনজন যথারীতি নিজেদের ক্লাসে যায়। কিন্তু চিন্তাটা মাথা থেকে যায় না। সকালে ট্রান্সফিগারেশন ক্লাসে মিনার্ভা ম্যাকগোনাগল ক্লাস নেন। এখন হেডমিস্ট্রেস, কিন্তু মাঝে মাঝে ক্লাস নেন বিশেষ ক্লাস হিসেবে।

তিনি এলোরার দিকে একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকান। “Miss Phoenix, are you feeling well today?”

এলোরা হকচকিয়ে উত্তর দেয়, “Yes, Professor. Just didn’t sleep well.”

ম্যাকগোনাগল চোখ সরিয়ে বলেন, “Very well. Focus on your lesson then.”

ক্লাস শেষে, তিনজন আবার এক জায়গায় দেখা করে। গ্রেট হলে বসে তারা কাঁধ মেলায়, যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারে।

“আজ রাতেই চল,” বলে আলবাস। “আর দেরি করা যাবে না। আমি একটা ইনভিজিবিলিটি ক্লোক নিয়ে আসব। বাবার পুরনো জিনিস এখনও আমাদের ট্রাঙ্কে আছে।”

“আমি ‘Alohomora’ আর ‘Lumos Maxima’ প্র্যাকটিস করেছি,” বলে স্করপিয়াস। “হয়তো দরজা খোলার কাজে আসবে।”

এলোরা মাথা নাড়ে, “ঠিক আছে। কিন্তু সাবধান, যেই কক্ষটা ম্যাপে দেখাচ্ছে, সেটা যদি সত্যিই গোপন কক্ষ হয়, তাহলে রক্ষা কবচ থাকা উচিত।”

সেই রাত, সবার ঘুমানোর পর, তিনজন চুপিচুপি হাউস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। আলবাস ইনভিজিবিলিটি ক্লোক ছড়িয়ে ধরে। হগওয়ার্টসের করিডোরগুলো যেন আরও বেশি নিঃশব্দ আর রহস্যময়।

তারা উঠে যায় উত্তর টাওয়ারের দিকে। করিডোরের শেষ মাথায় একটা সিল করা দরজা। কিন্তু সেই দরজার ওপরেও সেই ফিনিক্স রুন খোদাই করা।

এলোরা দরজায় হাত রাখতেই চিহ্নটা গরম হয়ে ওঠে। দরজা ধীরে ধীরে শব্দ না করেই খুলে যায়।

ভিতরে তারা যা দেখে, তাতে তিনজনই হতবাক।

একটা গোলাকৃতির ঘর, যার চারপাশে বইয়ের তাক, পুরনো জাদুকরদের চিত্রকর্ম, এবং এক বিশাল পাথরের টেবিল। ঘরের মাঝখানে এক ঘূর্ণায়মান আগুন, কিন্তু সেই আগুন ছুঁয়ে ফেলছে না—বায়ুর মতো ভাসছে।

আলবাস বলে, “এটা… এটা একটা এনচ্যান্টেড ঘর। আমার বাবা বলতেন, Hogwarts has secrets even Dumbledore didn’t know.”

হঠাৎ ঘরের দেয়ালে ফুটে ওঠে একটি লেখা—

“Three who seek the truth must pass three tests. The Marked shall lead, but only together can they succeed.”

স্করপিয়াস বলে, “তাহলে আমাদের তিনটে পরীক্ষা দিতে হবে? এটা তো বেশ জটিল ব্যাপার।”

এলোরা বলে, “আমি নিশ্চিত, এই পরীক্ষাগুলো শুধু জাদুর না—আমাদের মনেরও পরীক্ষা হবে।”

ঘরের একপাশে ছোট একটি বাক্স দেখা যায়। তারা সেটি খুলে দেখে ভিতরে একটা নতুন মানচিত্র আর একটি চাবি।

এই মানচিত্রে আরও নতুন জায়গা দেখানো হয়েছে—একটা বনভূমি, একটা রহস্যময় সিঁড়ি, আর এক দুলতে থাকা বৃত্তাকারে ঘোরে এমন কক্ষ।

চাবিটাতে খোদাই করা: “Test I – Shadow of Doubt”

এলোরা তিনজনের দিকে তাকায়, তারপর বলে, “আমাদের যাত্রা এখন সত্যিই শুরু হল।”

পর্ব ৩

হগওয়ার্টসের সেই গোপন কক্ষ থেকে চাবি আর মানচিত্র পাওয়ার পর, এলোরা, আলবাস, আর স্করপিয়াস বুঝতে পারে—এটা কেবল খেলা নয়, এক ভয়ানক যাত্রার সূচনা। মানচিত্রে প্রথম পরীক্ষার স্থান দেখানো—“Shadow Vault”। সেটা কোথায়? স্কুলের কোন পরিচিত অংশেই নেই, কিন্তু ম্যাপে সেটা সোজা নিয়ে যায় একটি গোপন সিঁড়ির কাছে, যেটা পড়ে হগওয়ার্টসের নিচের স্তরে—পুরনো জাদুব্যবস্থার গুদামঘরের নিচে।

রাত ১১টা। আবার ইনভিজিবিলিটি ক্লোক পরে তিনজন বেরিয়ে পড়ে। স্কুল এখন গভীর ঘুমে। ট্রল আর ঘোস্ট ছাড়া যেন আর কেউই নড়ে না। এলোরা হাতে চাবিটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। তার তালুর ফিনিক্স চিহ্নটা আবার জ্বলে উঠছে ধীরে ধীরে।

“তুমি ভয় পাচ্ছো?” ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে স্করপিয়াস।

“হ্যাঁ,” স্বীকার করে এলোরা। “কিন্তু আগেও বলেছি—মনে হচ্ছে এটা আমারই দায়িত্ব।”

আলবাস সামনে এগিয়ে দেয়ালে হাত রাখে। মানচিত্র অনুযায়ী, একটুখানি ইটের গায়ে চাপ দিলে খুলে যায় এক গোপন দরজা। নিচে নেমে যায় একটি সরু সিঁড়ি—ঘন অন্ধকারে ঢাকা।

“Lumos,” বলে আলবাস। তিনটে জাদুদণ্ডে আলো জ্বলে ওঠে।

তারা ধীরে ধীরে নামতে থাকে নিচের দিকে। শব্দ নেই, শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ। হঠাৎ সামনে খোলা জায়গা—একটা বড় ঘর, যার দেয়াল ঘিরে কালো ছায়া। মাঝখানে পাথরের তৈরি একটা বৃত্ত। চাবিটা সামনে ধরে রাখতেই বৃত্তের মাঝখানে একটা দরজা খুলে যায়।

তাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে ছায়া ঘন হতে থাকে। ঘরের মাঝখানে ভেসে ওঠে এক অদ্ভুত কুয়াশার শরীর। তাতে মুখ নেই, চোখ নেই—শুধু কণ্ঠস্বর।

“Welcome, Bearers of Curiosity. Here lies your first test: Shadow of Doubt. Step into the circle, and face what you fear most—yourself.”

তিনজনের দেহ হঠাৎ এক ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে। চারদিক অন্ধকার। তারা বুঝতেই পারে না কে কোথায়।

এলোরা – নিজের ছায়ার মুখোমুখি

এলোরা একা একটা ঘরে। চারদিকে কালো কুয়াশা। সামনে একটা আয়না। সে যখন আয়নার দিকে তাকায়, নিজের চেহারা দেখে না—দেখে এক আলাদা এলোরা, যার চোখ ঠান্ডা, ঠোঁটে বিদ্রুপ।

“তুমি ভেবেছো তুমি বেছে নেওয়া? তুমি কিছু না। মা চলে গেছে, বাবা তোমাকে ছেড়ে গেছে, আর হগওয়ার্টসেও কেউ তোমাকে চেনে না।”

এলোরা কাঁপতে কাঁপতে বলে, “তুমি আমার ছায়া। আমি জানি আমার ভয় কী, কিন্তু সেটা আমাকেই থামাতে পারবে না।”

ছায়া বলে, “তাহলে প্রমাণ করো।”

আলবাস – বাবার ছায়ার নিচে

আলবাস হঠাৎ নিজেকে দেখে এক বড় মঞ্চে। চারপাশে অন্ধকার, কিন্তু একটা আলো পড়ে তার মাথায়। সামনে দাঁড়িয়ে হ্যারি পটার—তার বিখ্যাত বাবা। ভিড়ের মধ্য থেকে আওয়াজ আসে, “তুমি তো ওর মতো কিছুই না। শুধু নামটা পেয়েছো, ক্ষমতা না।”

আলবাস চিৎকার করে বলে, “আমি আমার পথ নিজে তৈরি করব! আমি হ্যারি পটার না, আমি আলবাস! আমি নিজের জন্য লড়ব!”

ছায়া হেসে বলে, “তোমার কথা মনে রাখব আমরা… যদি তুমি বাঁচতে পারো।”

স্করপিয়াস – পারিবারিক অভিশাপ

স্করপিয়াস দাঁড়িয়ে আছে এক পুরনো বৈঠকখানায়। দেয়ালে টাঙানো ডার্ক উইজার্ডদের ছবি। সামনে দাঁড়িয়ে তার বাবা, ড্র্যাকো মালফয়।

“তুমি জানো, আমাদের রক্তে অন্ধকার আছে, স্করপিয়াস। তুমি পালাতে পারবে না।”

স্করপিয়াস বলে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, বাবা। কিন্তু তোমার ভুল আমি করব না। আমি অন্য রাস্তা বেছে নেব।”

ছায়া রূপ বদলে ভয়ংকর রূপ নেয়, আর বলে, “দেখা যাক তুমি পারো কিনা।”

এক মুহূর্ত পর, তীব্র আলোয় তিনজন একসাথে পড়ে যায় মাটিতে। তারা একসাথে আবার সেই বৃত্তে ফিরে আসে। ছায়া ভেঙে পড়ছে, ঘরের ভেতরে আলো জ্বলে উঠছে।

কণ্ঠস্বর আবার ভেসে আসে—
“You have passed the first test. The Mark glows brighter. But beware—the path ahead is darker still.”

ঘরের এক পাশে খুলে যায় আরেকটা দরজা। তার সামনে ছোট একটি মেটাল বাক্স। এলোরা সেটি খোলে—ভিতরে আরেকটি চাবি, আর একটি বাক্য লেখা:

“Test II: The Forest of Forgotten Echoes.”

তারা একে অপরের দিকে তাকায়। ভয় আছে, সন্দেহ আছে, কিন্তু সাহসও আছে।

স্করপিয়াস বলে, “তাহলে এবার জঙ্গলের পালা।”

পর্ব ৪

হগওয়ার্টসের পেছনের দিকে, ‘ফরবিডেন ফরেস্ট’ ছাড়িয়ে উত্তর-পশ্চিম কোণে এক বিস্মৃত জঙ্গল ছড়িয়ে আছে—নাম Echowood, যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, “প্রতিধ্বনির জঙ্গল”। বহু বছর আগে এই বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, কারণ এখানে নাকি সময় আর স্মৃতির ঘনঘোর ধোঁয়ায় পথভ্রষ্ট হয় মন। যারা একবার ঢোকে, তারা আর আগের মতো থাকে না।

এলোরা, আলবাস আর স্করপিয়াস এবার সেখানেই রওনা দেয়। তাদের হাতে দ্বিতীয় চাবি আর মানচিত্রের গোপন নির্দেশ। ইনভিজিবিলিটি ক্লোক পরে তারা জঙ্গলের কিনারায় পৌঁছে।

আকাশ ঘন মেঘে ঢাকা। শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, পাতা কাঁপছে যেন নিঃশব্দে কারও পদধ্বনি হচ্ছে।

স্করপিয়াস হালকা ভয় পেয়ে বলে, “এই জায়গাটা বড্ড… নীরব। কিন্তু এমন নীরবতা যেন চেঁচিয়ে কিছু বলছে।”

এলোরা বলে, “বইতে লেখা ছিল, এই জঙ্গল তোমার স্মৃতি খুঁজে পায়, আর ফিরিয়ে দেয় তার ছায়া।”

আলবাস সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “তাহলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারানো চলবে না। আমরা একসাথে থাকব, আর কিছু শুনলেও বিশ্বাস করব না… যতক্ষণ না সে আমাদের নয়।”

তিনজন একসাথে জঙ্গলে প্রবেশ করে।

বনভূমির বিভ্রম

জঙ্গলের গাছগুলো যেন চলমান। হঠাৎ করে জায়গা বদলে যায়, মাটি নড়ে, পাতা ফিসফিস করে ওঠে। এলোরা খেয়াল করে, একদম নিঃশব্দে, তার পেছনে কে যেন ছায়ার মত হাঁটছে।

“মা?” এলোরা থেমে যায়। এক কণ্ঠ ভেসে আসে, খুব চেনা কণ্ঠ—তার মায়ের। সেই মা, যিনি ছোটবেলায় তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

“এলোরা, আমায় ক্ষমা করো। আমি তোমায় ফেলে চলে যেতে চাইনি…”

সে চোখ মেলে চায়। পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তার মা—একদম যেমনটা শেষবার দেখে ছিল, লাল শাড়ি, শান্ত মুখ।

আলবাস ধরে ফেলে তাকে, “এলোরা! চোখ বন্ধ করো! এটা তুমি তৈরি করোনি—এটা জঙ্গল করেছে!”

এলোরা ধাক্কা দিয়ে নিজের মায়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। ছায়া মিলিয়ে যায়। ঠিক তখনই স্করপিয়াস বলে ওঠে, “তোমরা দেখছো না? আমার মা-বাবা… তারা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। বলছে আমি কখনো ভালো ছেলে হতে পারিনি!”

আলবাস আবার চিৎকার করে, “চোখ বন্ধ করো স্করপিয়াস! ওরা আসল না!”

তারা তিনজন মাটিতে বসে পড়ে, একে অপরের হাত ধরে রাখে। এলোরা বলে, “মনে করো সত্যি কথা, মনে করো কে আমরা। মনে করো কেন আমরা এখানে এসেছি।”

তখন হঠাৎ করেই চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। এক পাতার মতো হালকা, ছোট্ট রুন সামনে ভেসে ওঠে, ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে। এলোরা উঠে গিয়ে সেটা স্পর্শ করে। সঙ্গে সঙ্গে বাতাস স্থির হয়ে যায়। গাছগুলো কাঁপা থামে।

তিনজন তখন একটি ফাঁকা জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, যেখানে মাটি যেন কাঁচের মত স্বচ্ছ। নিচে দেখা যাচ্ছে তাদের নিজেদের ছায়া—কিন্তু ছায়া সরছে না তাদের মতো করে।

হঠাৎ এক কণ্ঠস্বর ভেসে আসে—

“Echowood shows not just memory, but possibility. What you fear, what you love, what you regret—lives here. To move forward, you must leave something behind.”

মাটি ফেটে বের হয় তিনটি পাথর। প্রতিটির গায়ে একটি বাক্য লেখা।

এলোরারটিতে লেখা:
“Let go of the guilt.”

আলবাসেরটিতে:
“You are not your father.”

স্করপিয়াসেরটিতে:
“You are not your bloodline.”

তিনজন একসাথে পাথরে হাত রাখে। চোখ বন্ধ করে তারা শপথ নেয়।

“আমি আমার অতীতকে ভয় করব না,” বলে এলোরা।

“আমি নিজের পথ বেছে নেব,” বলে আলবাস।

“আমি নিজের সিদ্ধান্তে দাঁড়াব,” বলে স্করপিয়াস।

অন্ধকার ছিন্ন হয়ে যায়। একটা দরজা ধীরে ধীরে খুলে যায় গাছের মধ্যে। তারা পেরিয়ে যায় এক আলোয় ভরা পথে।

দরজার পেছনে আবার একটি বাক্স। খুলতেই তৃতীয় চাবি, আর একটি লেখা:

“Test III: The Mirror of Many Faces.”

তারা হাঁপাতে হাঁপাতে একে অপরের দিকে তাকায়। এলোরা বলে, “আমরা এখন যেটা পার করলাম… সেটা কেবল স্মৃতি নয়, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া।”

আলবাস কাঁধে হাত রাখে স্করপিয়াসের, “আমরা একসাথে থাকলে, সবকিছু পার করা সম্ভব।”

তাদের সামনে হগওয়ার্টসের এক পুরনো পথ খুলে যায়—নতুন পরীক্ষা, নতুন রহস্য, আর অজানা ভবিষ্যতের দিকে।

পর্ব ৫

তৃতীয় চাবি হাতে পাওয়ার পর এলোরা, আলবাস আর স্করপিয়াসকে মানচিত্র একটি নতুন পথে নিয়ে যায়—এক পুরনো শস্যভাণ্ডার দিয়ে, যেটা বহু বছর ধরে বন্ধ। হগওয়ার্টসের ইতিহাস অনুযায়ী, এই ভাণ্ডার একসময় ছিল ‘পরীক্ষা কক্ষ’—যেখানে প্রাচীন শিক্ষকরা ছাত্রদের মানসিক শক্তি ও সত্যতার পরীক্ষা নিতেন।

দরজাটি খোলার জন্য এলোরা তৃতীয় চাবিটা এগিয়ে দেয়। মুহূর্তেই দরজার গায়ে খোদাই হয়ে থাকা রুনগুলো জ্বলে ওঠে—আর এক ধাক্কায় দরজা খুলে যায়।

তারা প্রবেশ করে এক আয়নার ঘরে।

ঘরের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক আয়না—The Mirror of Many Faces।

এটা কোনও সাধারণ আয়না নয়। এই আয়না এমন এক যাদুতে মোড়া যা প্রতিটা মানুষকে তার ‘বিকল্প আত্ম’ দেখায়—যদি তার অন্য রাস্তায় জীবন যেত, যদি ভুল করত, যদি স্বার্থপর হতো, যদি অন্ধকার বেছে নিত।

ঘরের দেয়ালে লেখা—

“To pass, you must face the worst version of yourself. Defeat it, or become it.”

এলোরা এক ধাপ এগিয়ে যায়।

এলোরার মুখোশ

আয়নায় তার চেহারা বদলে যায়। চুল উড়ছে, চোখ লালচে। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ‘অন্য এলোরা’ ভয়ংকর। তার হাতে ডার্ক আর্টের শক্তি, গলায় একটা ছায়ার হার।

“তুমি যদি ক্ষমতা চাইতে, আমি হতে, তাহলে কেউ তোমায় আর ফেলে যেতে পারত না,” বলে সে।

এলোরা জবাব দেয়, “তুমি এমন একজন যার ভয় হয়—ভালোবাসা হারানোর। আমি সেটা হতে চাই না।”

অন্য এলোরা বলে, “তাহলে দাঁড়াও আমার সামনে, নিজেকে হারিয়ে ফেলো।”

দুজনের মধ্যে যাদুযুদ্ধ শুরু হয়। এলোরা নিজের Wand দিয়ে প্রতিরোধ করে, কিন্তু অন্ধকার শক্তি অনেক বেশি তীব্র। হঠাৎ সে নিজের বুকের ফিনিক্স মার্কে হাত রাখে, আর বলে—

“Lumos Maxima!”

তার Wand থেকে তীব্র আলো বেরিয়ে এসে ছায়া এলোরাকে গলিয়ে দেয়। আয়না আবার স্বচ্ছ হয়ে যায়।

আলবাসের মুখোশ

আলবাস এগিয়ে আসে। আয়নায় দেখা যায় এক সম্পূর্ণ অন্য রূপ—সে এক ডার্ক অরর, যিনি যাদু মন্ত্রণালয়ে ক্ষমতার আসনে। চোখে ঠান্ডা আত্মবিশ্বাস, মুখে বিদ্রুপ।

“তুমি চাও সবাই তোমার নাম জানুক? তাহলে ভালো হওয়া বাদ দাও। আমি সেই আলবাস, যে মন্ত্রণালয় নিজের হাতে নিয়েছে।”

আলবাস কাঁপতে কাঁপতে বলে, “আমার বাবা হ্যারি পটার ছিলেন কারণ তিনি সাহসী ছিলেন, নিষ্ঠাবান ছিলেন। আমি তেমনই হব।”

তার ছায়া বলে, “সাহস দিয়ে কেউ টিকে থাকে না, শক্তি লাগে।”

আলবাস হাত তুলে ‘Expelliarmus’ ছোঁড়ে। কিন্তু ছায়া আলবাস সেটা প্রতিরোধ করে। দুই দণ্ডের আলো একে অপরকে ঠেলে দেয়। ঠিক তখন আলবাস তার Wand নিচু করে বলে—

“তুমি যেমন হও, আমি হতে চাই না। আমি আমার মতো থাকব, ভুল করব, শিখব। তবে অন্ধকারের জন্য নয়।”

এই স্বীকারোক্তির সঙ্গে আয়না আলবাসের ছায়া চূর্ণ করে দেয়।

স্করপিয়াসের মুখোশ

স্করপিয়াসের সামনে দাঁড়ায় তার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ—এক পুরুষ যার দেহে ডেথ ইটারদের চিহ্ন, ঠোঁটে হিংসা।

“আমি সেই স্করপিয়াস, যে তার রক্তের গর্ব করে, বন্ধুবান্ধব ছুড়ে ফেলে দিয়ে ডার্ক লর্ডের নাম আবার জাগিয়ে তুলেছে।”

স্করপিয়াস থতমত খায়। সে ফিসফিসিয়ে বলে, “আমি তো ভুল করতেই পারি… আমি কি সত্যিই ভালো?”

ছায়া বলে, “তুমি শুধু মুখোশ পরা একজন। যখন মুখোশ খুলে যাবে, আমিই থাকবে ভেতরে।”

তখন আলবাস আর এলোরা তার পাশে দাঁড়ায়।

এলোরা বলে, “তুমি ভালো, স্করপিয়াস। তুমি প্রমাণ করেছো।”

স্করপিয়াস চোখ বন্ধ করে ডার্ক স্করপিয়াসের দিকে Wand তোলে, আর বলে—

“Finite Incantatem!”

ছায়ার রূপ টুকরো হয়ে ভেঙে যায়।

দরজা খুলে গেল

আয়না থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ে। ঘরের একদিকের দেয়াল খুলে যায়। সেখানে আরেকটি ছোট বাক্সে চতুর্থ চাবি রাখা—এবং তার পাশে আরও একটি বাক্য:

“Test IV: The Time That Was Never.”

তিনজন ঘামতে ঘামতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। এলোরা ধীরে বলে, “আমরা এখন শুধু নিজেদের নয়, এক নতুন যুদ্ধের দিকেও এগোচ্ছি।”

আলবাস বলে, “এটা শুরু হয়েছে, শেষ এখনও অনেক দূরে।”

স্করপিয়াস বাক্সটা হাতে নিয়ে বলে, “আমরা এখন পেছনে ফিরতে পারি না।”

তাদের সামনে ভবিষ্যতের দরজা খুলছে—সময়, ইতিহাস, ও ভাগ্যকে নিয়ে নতুন এক বিপদ অপেক্ষা করছে।

পর্ব ৬

চতুর্থ চাবির বাক্সে একটা মানচিত্র ছিল, যেটা সাধারণ হগওয়ার্টস মানচিত্র নয়। এটা ছিল একটা “Time-Locked Scroll”, যেটা শুধু নির্দিষ্ট মুহূর্তে খুলে যায়—যখন নির্ধারিত সময় চক্র পূর্ণ হয়।

এলোরা কাগজটা উল্টে-পাল্টে দেখে বলল, “এটা টাইম টার্নার-সংশ্লিষ্ট যাদুতে মোড়া। মানে এটা এমন একটা জায়গা দেখাবে, যা সময়ের ধারা থেকে হারিয়ে গেছে।”

আলবাস চিন্তিত মুখে বলে, “বাবা বলতেন, সময় নিয়ে খেলা করাটা সব সময় ভয়ংকর। একবার টাইমলাইন বদলে গেলে, সবকিছু ধ্বংস হতে পারে।”

স্করপিয়াস ফিসফিস করে, “আমরা এমন একটা ভবিষ্যৎ দেখব, যা কখনো ঘটেনি। কিন্তু হয়তো ঘটতে পারত।”

টাইম-চেম্বার

মানচিত্র অনুযায়ী, তারা নামে হগওয়ার্টসের তলদেশে, এক পরিত্যক্ত ভূগর্ভস্থ কক্ষে। সিলিং থেকে সময়ঘড়ির মত যন্ত্র ঝুলছে, প্রতিটির কাটায় ছোট ছোট রুন লেখা।

দেয়ালে খোদাই করা আছে:

“To walk through the path of never, you must give up a moment of always.”

এলোরা বলল, “এটা মানে—আমাদের সবার একটি প্রিয় স্মৃতি দিতে হবে, যেটা আর ফিরবে না।”

তিনজন মন্ত্রোচ্চারণ করে এক একটি ঘর খোলে। প্রত্যেকে একটি স্মৃতি জমা দেয়।

এলোরা দেয় তার ছেলেবেলার স্মৃতি—যেখানে সে তার বাবার কোলে বসে গল্প শুনছে।

আলবাস দেয় সেই মুহূর্ত, যখন সে বাবার সঙ্গে প্রথম ঝগড়া মিটিয়ে গেছিল।

স্করপিয়াস দেয় তার মায়ের মুখে হাসি, যেটা সে মৃত্যুর আগে শেষবার দেখেছিল।

ঘর আলোয় ভরে ওঠে। তখন এক দরজা খুলে যায়। তারা প্রবেশ করে।

বিকৃত ভবিষ্যৎ

হঠাৎ তারা দেখে নিজেদেরই—তবে অন্যরকম রূপে।

হগওয়ার্টস সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ধূসর পোড়া প্রাসাদ, ছাত্রদের মুখে ভয়, শিকল বাধা গেট।

মন্ত্রণালয় এক ডার্ক অথরিটির অধীনে। হ্যারি পটারকে রাষ্ট্রদ্রোহী ঘোষণা করা হয়েছে।

এলোরার রূপ—ডার্ক উইচ, যিনি Hogwarts Headmistress; তার হাতে ফায়ার-জাদু, চোখে শূন্যতা।

স্করপিয়াস এখন ডেথ ইটারদের নেতা।

আর আলবাস—প্রতিবাদী আন্দোলনের গোপন নেতা, যার দলকে সব সময় ধরা হচ্ছে।

তারা এক গোপন করিডোর দিয়ে হাঁটছে, যখন হঠাৎ সামনে হাজির হয় সেই বিকৃত স্করপিয়াস।

সে বলে, “তোমরা আবার ফিরে এসেছো? এই সময়ের ধারণা ভুলে যাও। এইটাই সত্য।”

এলোরা শিস দিয়ে ড্যাম্বলের পুরনো চেম্বার খুঁজে বের করে। সেখানে আছে একটি যন্ত্র—The Chrono Prism।

ক্রোনো প্রিজমের পরীক্ষা

এই যন্ত্র সব বিকল্প সময়ের দরজা খোলে। কিন্তু একটাই দরজা সত্য।

তবে দরজাগুলো এক এক করে খুললে টাইম-টানেল ভেঙে যেতে পারে।

তাদের সামনে ছয়টি দরজা—প্রতিটিই এক একটি সময়চক্রের উপস্থাপনা।

তারা একত্রে সিদ্ধান্ত নেয়—নিজেদের সত্যিকারের চিন্তা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা দিয়ে প্রিজমকে নির্দেশ দেবে।

এলোরা বলে, “আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসা আর আলো জয়ী হয় অন্ধকারের উপর।”

আলবাস বলে, “আমি বিশ্বাস করি, পিতার পথ অনুসরণ করেও নিজস্ব পরিচয় গড়া যায়।”

স্করপিয়াস বলে, “আমি বিশ্বাস করি, আমার অতীত আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু সংজ্ঞায়িত নয়।”

এই মন্ত্রে প্রিজম জ্বলে ওঠে। একমাত্র সোনালি দরজা খুলে যায়—সঠিক ভবিষ্যতের পথে।

প্রত্যাবর্তন

তারা ফিরে আসে বর্তমান হগওয়ার্টসে। সবকিছু স্বাভাবিক, আবার প্রাণবন্ত।

তবে কিছু যেন বদলে গেছে। এলোরার চোখে দৃঢ়তা, স্করপিয়াস একটু শান্ত, আর আলবাস যেন সত্যিই বড় হয়ে গেছে।

দেয়ালে একটি লেখা ভেসে ওঠে:

“Time has tested you, and you have not only endured—but chosen rightly.”

চতুর্থ চাবি তাদের হাতে এখন এক গ্লো করে ওঠে। এখন তারা তিনটে পরীক্ষা পেরিয়ে এসেছে।

এলোরা নিচু স্বরে বলে, “আমরা যদি ভুল ভবিষ্যতে আটকে যেতাম…”

আলবাস বলে, “তবে সব শেষ হতো।”

স্করপিয়াস হালকা হেসে বলে, “কিন্তু আমরা ফিরেছি, কারণ আমরা জানতাম—আমরা কী হতে চাই।”

পর্ব ৭

চতুর্থ চাবি সংগ্রহের পর এলোরা, আলবাস আর স্করপিয়াস যখন ফিরে এলেন হগওয়ার্টসের গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে, তখনই তাদের চোখে পড়ে জানালার পাশে রাখা একটি কালো বাক্স। কেউ সেটা রেখে গেছে।

বাক্সের গায়ে একটা নোট—

“Sleep not, or turn to stone.”
—The Fifth Key Awaits.”

এলোরা ধীরে বাক্সটা খুলে দেখে, ভিতরে আছে একটা ছোট পাথরের চোখ, আর একটা মানচিত্রের টুকরো। সেটি Hogwarts এর নিচে লুকানো একটি চেম্বার দেখায়—নাম লেখা আছে: The Silent Vault।

নিঃশব্দ ভল্ট

তারা তিনজন রওনা দেয়, আর যায় হগওয়ার্টসের সবচেয়ে গোপন সিঁড়ি বেয়ে। চেম্বারে ঢোকার আগে তারা দেখে দরজার সামনে বসে আছে এক শীতল পাথরের মূর্তি। মুখে যন্ত্রণা, চোখ বুজে।

এলোরা নিচু গলায় বলে, “ও ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাই পাথর হয়ে গেছে।”

দরজায় লেখা আছে:

“The Vault does not forgive dreams. To pass, you must stay awake, and walk in silence.”

তারা ভিতরে প্রবেশ করে।

চেম্বারের অভ্যন্তরে

চেম্বারটা অন্ধকার, কুয়াশায় ঢাকা। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য পাথরের মূর্তি—ছাত্র, শিক্ষক, অজানা মুখ—all frozen mid-motion, যেন কেউ ঘুমিয়েই গিয়েছিল।

আলবাস ফিসফিস করে বলে, “এইটা মনে হচ্ছে একটা ঘুমের অভিশাপ। কেউ একবার চোখ বন্ধ করলেই আর জেগে উঠতে পারবে না।”

স্করপিয়াস Wand উঁচিয়ে “Lumos Silencio” মন্ত্র ছোঁড়ে। Wand-এর আলো আলো দেয়, কিন্তু কোনো শব্দ না করে।

চেম্বারের ভিতরে বিশাল এক গোল ঘর। কেন্দ্রে একটি ঘূর্ণায়মান কাচের পাথর, যার চারদিকে উড়ছে শত শত সোনালি ধুলোর মতো কিছু—যেগুলো আসলে ‘স্বপ্ন’।

এলোরা বলে, “এখানেই পঞ্চম চাবি। কিন্তু পেতে গেলে এই ঘর পেরোতে হবে—ঘুম না করেই।”

ঘুমের ছায়া

পথে হাঁটতে হাঁটতে তারা বুঝতে পারে, ঘরটা নিঃশব্দ হলেও তাদের মনে মনে ভয়ঙ্কর স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

এলোরা দেখে তার বাবা-মা তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
আলবাস দেখে হ্যারি আবার তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
স্করপিয়াস দেখে সে আবার স্লিদারিন টাওয়ারে একা বসে আছে, সবাই তাকে ঘৃণা করছে।

এক সময় স্করপিয়াস প্রায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।

এলোরা চিৎকার করে না, বরং তার হাত চেপে ধরে। চোখে চোখ রেখে বলে, “তুমি একা না। মনে করো—আমরা এখন এখানে আছি।”

আলবাস দ্রুত একটা মন্ত্র পাঠ করে—“Vigilamus!”—এটা এক প্রাচীন রক্ষাকবচ, যা মনকে জাগিয়ে রাখে।

তারা ধীরে ধীরে ঘরের কেন্দ্রে পৌঁছায়।

পঞ্চম চাবি ও এক প্রাচীন আত্মা

কাচের পাথরের গায়ে খোদাই করা—

“Dreams undone, and fears revealed—take this key with a heart that healed.”

চাবিটা তুলতে গেলে এক ছায়ামূর্তি জন্ম নেয় ধুলো থেকে। মুখে কিছু নেই, চোখে শুধু নিঃশব্দতা। এটা হচ্ছে ঘুমের অভিশাপের রক্ষক।

ছায়া এলোরার দিকে এগিয়ে আসে। ঠিক তখনই সে তার বুক থেকে বের করে দেয় বাবার একটি পুরনো পেন—যেটা সে সবসময় নিজের সঙ্গে রাখত।

সে বলে, “এই স্বপ্ন নয়, এই স্মৃতি—আমার শক্তি।”

ছায়ামূর্তি থেমে যায়। তারপর ম্লান হয়ে মিলিয়ে যায়।

চাবিটি এখন তার হাতে।

মুক্তি

চাবি নিতেই পুরো চেম্বারে আলো ছড়িয়ে পড়ে। মেঝেতে থাকা কিছু পাথরের মূর্তি ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করে। এক বৃদ্ধ অজানা যাদুকর চোখ খুলে বলে—

“Finally… you have broken the sleep that binds.”

সে জানায়, এই চেম্বার এক প্রাচীন যাদু-পরীক্ষার অংশ ছিল, যেটা মেরলিন নিজে তৈরি করেছিলেন—ভবিষ্যতের যাদুকরদের মূল্যায়ন করার জন্য। যারা নিঃস্বার্থ, সাহসী এবং মানসিকভাবে জাগ্রত, তাদের হাতেই হগওয়ার্টসের ভবিষ্যৎ থাকবে।

ফিরে দেখা

তারা ফিরে আসে উপরের প্রাঙ্গণে। পঞ্চম চাবি এখন ম্যাপের শেষ অংশের পথ দেখায়—হগওয়ার্টসেরই একটা নিষিদ্ধ টাওয়ারের দিকে।

এলোরা নিচু গলায় বলে, “প্রতিটি চাবি আমাদের একটা করে ভয়কে টেস্ট করল।”

আলবাস বলে, “এবার সামনে আছে আমাদের শেষ লড়াই।”

স্করপিয়াস কাঁধে হাত রেখে বলে, “আর আমরা একা নই—আমরা একসঙ্গে।”

পর্ব ৮

পঞ্চম চাবি পাওয়ার পর রাত গভীর হয়ে এসেছে। হগওয়ার্টসের আকাশে পূর্ণচাঁদ, অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা চারদিক ঘিরে আছে। এলোরা, আলবাস, আর স্করপিয়াস এখন দাঁড়িয়ে আছে সেই পুরনো নিষিদ্ধ টাওয়ারের সামনে—”The Tower of Echoes”।

এই টাওয়ার এক সময় ছিল গডরিক গ্রিফিন্ডরের গবেষণাগার, যেটা বহু বছর আগে যাদু-সময়ে গায়েব হয়ে যায়। চাবিগুলোর সমন্বয়ে আজ আবার তার দরজা খুলছে।

ছয়টি চাবি, এক রহস্য

চাবিগুলোর সম্মিলিত মন্ত্র পড়তেই টাওয়ারের গায়ে আঁকা প্রতীকগুলো জ্বলে ওঠে। দরজা খোলে—ধীরে, ধীরে, যেন শতাব্দীর ঘুম থেকে জেগে ওঠা কোনো দৈত্যের চোখ।

ভিতরে ঢুকতেই তারা দেখতে পায় এক বিশাল হলঘর—মাঝে একটি বৃত্তাকারে নির্মিত যন্ত্র। যেটি দেখতে অনেকটা “Mirror of Erised”-এর মত, কিন্তু দ্বিমুখী।

তার নাম লেখা আছে—“The Veil of the First Choice.”

প্রথম পছন্দের আয়না

একটি কাচের পর্দার মতো ঘূর্ণায়মান বস্তুর মাঝে উঠে আসে তিনটি প্রতিচ্ছবি—এলোরা, আলবাস, আর স্করপিয়াস—তাদের ভবিষ্যৎ রূপ, যেমন তারা হতে পারত।

এলোরা—হগওয়ার্টসের প্রথম ডার্ক হেডমিস্ট্রেস, শক্তিশালী কিন্তু একা।

আলবাস—একটি পরিত্যক্ত উপত্যকার রক্ষাকর্তা, আত্মপরিত্যাগী ও নিঃসঙ্গ।

স্করপিয়াস—ডেথ ইটারদের নতুন নেতা, ভয়ংকর ও নির্দয়।

তাদের বলা হয়, “To receive the final key, you must let go of your shadowed self.”

তিনজনকে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে নিজের সত্ত্বার একটি অন্ধকার অংশ মেনে নিতে হয় এবং তারপর সেটা মুক্ত করতে হয়।

মুক্তি ও চূড়ান্ত পরীক্ষা

এলোরা বলে, “আমি ক্ষমতাকে ভয় পাই, কারণ আমি জানি তা কতটা নষ্ট করতে পারে। কিন্তু আজ আমি আলো বেছে নিই।”

আলবাস: “আমি বাবার ছায়া ছিলাম। আজ আমি নিজের আলোতে দাঁড়াতে চাই।”

স্করপিয়াস: “আমি ভুল করেছিলাম। কিন্তু আমি আর সেই ভুল হতে চাই না।”

তিনজনের এই স্বীকারোক্তির পর, আয়নার মাঝখানে থেকে এক কণামাত্র সোনালি আলো বেরিয়ে আসে। সেটাই শেষ চাবি—The Heart Key।

এই চাবি দিয়ে তারা খুলে দেয় টাওয়ারের শেষ কক্ষ—Griffindor’s Vault।

গ্রিফিন্ডরের সত্য

শেষ ঘরে তারা দেখতে পায় একটি সিংহাকৃতি পাথরের প্রতিমা, চোখ বন্ধ। সামনে রাখা আছে একটি ছোট বক্স, যার গায়ে লেখা:

“To the ones who chose the path not of power, but of purpose.”

বক্স খুলতেই তার ভেতরে পাওয়া যায়:

এক প্রাচীন রোল—The Legacy Scroll—যেখানে লেখা আছে ভবিষ্যতের রক্ষকদের নাম।

একটি বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ ধাতব চিহ্ন—নতুন প্রজন্মের জন্য তৈরি একটি যাদু-আঁকড়া, যেটা সবার মাঝে বন্ধন গড়ে তুলবে।

একটানা ঘন্টার আওয়াজে হগওয়ার্টসের পুরো টাওয়ার আলোয় ভরে ওঠে। এক বয়স্ক কণ্ঠ যেন বলে ওঠে—
“The heirs have chosen wisely.”

পরবর্তী সকাল

পরদিন সকাল, হগওয়ার্টসের লেকের ধারে তিন বন্ধু বসে।

আলবাস হেসে বলে, “দেখলে? বাবার ছেলেরাও বাঁচতে পারে। নিজের মতো করে।”

এলোরা বলল, “আমরা শুধু এক রহস্য খুলি নাই—আমরা নিজেদেরও চিনেছি।”

স্করপিয়াস হালকা গলায় বলে, “আর হগওয়ার্টস জানল, পরের প্রজন্মও প্রস্তুত।”

হঠাৎই ডাম্বলডোরের পেইন্টিং দেখা দেয় আকাশে ভেসে, সে মুচকি হেসে বলে—

“Perhaps… it is our choices, far more than our abilities, that show who we truly are.”

তাদের যাত্রা শেষ নয়। এটা তো একটা শুরু।

হগওয়ার্টস আবার শান্ত। তবে গোপনে টাওয়ারে লুকানো রয়েছে সেই যন্ত্র, সেই ইতিহাস, আর নতুন চাবির আশায় পরবর্তী প্রজন্ম।

এলোরা, আলবাস, স্করপিয়াস—তাদের নাম থাকবে না ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু তারা এক নতুন পথ খুলে দিয়েছে, যেখানে ভয় নয়, বিশ্বাসের জাদুই প্রধান।

 শেষ

Lipighor_1749536262593.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *