Bangla - প্রেমের গল্প

রঙের পথে প্রেম

Spread the love

শর্মিষ্ঠা বসু


অধ্যায় ১: ট্রেনে দেখা

রাত ৯টা ৪৫। হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ৮ যেন শহরের শব্দশূন্য এক দ্বীপ। মেঘলা বিকেলের পর রাতটাও কেমন ঝিমিয়ে পড়েছে, শুধু কখনো কখনো হুইসেল বাজে আর প্ল্যাটফর্মের গায়ে এসে ধাক্কা খায় হালকা বাতাস। ট্রেনটা ধীরে ধীরে এসে দাঁড়াল—উদয়পুর সিটি এক্সপ্রেস।

অনিরুদ্ধ ব্যাগটা টানতে টানতে এসি ২-টায় উঠে বসল। সিট নম্বর ছিল ৪২, জানালার পাশে। তার পাশে ছিল ৪১ নম্বর সিট, এখনো ফাঁকা। সে ব্যাগ থেকে বই বার করল, “The Little Prince”, তার প্রিয় ভ্রমণের সঙ্গী। প্ল্যাটফর্মে হালকা কুয়াশা, আলো আর ছায়ার মিশেলে যেন একটা চলচ্চিত্র চলছে।

দশ মিনিট পর যখন ট্রেন ছেড়ে দেয়ার শেষ হুইসেল বাজল, তখন সে প্রথম দেখল মেয়েটিকে—মায়া।

গাঢ় নীল সালোয়ার-কামিজ, বড় একটা ব্যাকপ্যাক, হাতে বইয়ের মত কিছু। সে এসে বসলো ৪১ নম্বর সিটে। ওর চুলগুলো খোলা, কিছুটা এলোমেলো, কপালে একটা ছোট্ট টিপ, কিন্তু চোখজোড়া আশ্চর্যরকম স্থির—যেন একসঙ্গে হাজারটা প্রশ্ন ও উত্তরের ভার বইছে।

“এই ট্রেনটা কি সত্যিই উদয়পুর যায়?” — মায়া প্রথম প্রশ্নটা করল।

“হ্যাঁ। যদি মাঝপথে কিছু না হয়,” অনিরুদ্ধ হেসে উত্তর দিল।

দুজনেই হেসে ফেলল। একটু চুপচাপ কাটল পরের কয়েকটা মিনিট। ট্রেন চলতে শুরু করল। শহর ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে লাগল—আলো, শব্দ, বিলবোর্ড—সব পিছিয়ে গেল। একটা নতুন যাত্রা শুরু হল।

অনিরুদ্ধ জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

“উদয়পুর। নিজের জন্য।”

“মানে?”

“মানে, আমি কাউকে বলিনি। বাড়িতেও না। হঠাৎ করেই ভাবলাম, একা ঘুরতে বেরোই। এমনকি টিকিট কাটার সময়ই ঠিক করলাম রাজস্থান যাব। প্ল্যান ছিল না।”

অনিরুদ্ধ খানিকটা অবাক। “বাহ! এমন সাহসী সিদ্ধান্ত তো সবাই নিতে পারে না। তোমার নাম কী?”

“মায়া। আর তোমার?”

“অনিরুদ্ধ। তুমি কি কলকাতায় থাকো?”

“হ্যাঁ। টালিগঞ্জের দিকে। তুমি?”

“আমি বালিগঞ্জ। বেশ কাছেই হতো তাহলে!”

মায়ার মুখে হাসি ফুটে উঠল। হঠাৎ যেন তাদের মধ্যে এক ধরনের অদৃশ্য সেতু তৈরি হয়ে গেল—ভবঘুরে মন, একাকীত্ব, কিছু হারানো স্বপ্ন আর কিছু লুকোনো গল্প।

ট্রেনের ভিতরের আলো একটু কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। সবাই ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ছিল। কিন্তু তারা দুজন ছিল জেগে, নিজের নিজের গল্প নিয়ে।

অনিরুদ্ধ জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল, “জানো, আমার খুব শখ ছিল একটা মেয়ের সঙ্গে ট্রেনে আলাপ হবে, গল্প হবে, পরে আমরা একসঙ্গে ঘুরতে যাবো—কিন্তু সেটা রোম্যান্সের চেয়ে যেন একটা সিনেমার মত!”

মায়া হেসে বলল, “তাহলে তো তুমি এখন সিনেমার মধ্যেই আছো।”

“আর তুমি সিনেমার নায়িকা।”

মায়া মুখ ফিরিয়ে তাকাল তার দিকে। চুপচাপ কিছুক্ষণ। তারপর বলল, “তুমি জানো না আমি কে। আমার পেছনে কিছু আছে, যা হয়ত এই সিনেমাকে দুঃস্বপ্নও বানাতে পারে।”

অনিরুদ্ধ বলল, “আমরা সবাই তো একটা করে ব্যাগ নিয়ে ঘুরি, যার ভিতর গল্প থাকে। তোমারটা জানতে চাই, তবে সময় হলে।”

ট্রেন হাওড়ার গা ছেড়ে বাঁক নিল পুরুলিয়ার দিকে। রাত গভীর হতে থাকল।

মায়া বলল, “আমি ছোটবেলায় একবার চিত্রকূটে গেছিলাম। সেই প্রথম ট্রেনে উঠি। সেইদিন থেকে ট্রেন আমার কাছে একটা মুক্তির প্রতীক হয়ে গেছে। যেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায়। নতুন মানুষ, নতুন শহর, নতুন আমি।”

অনিরুদ্ধ বলল, “তুমি কি সত্যিই পালিয়ে এসেছো?”

মায়া মুখ নামিয়ে ফেলল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস। তারপর ধীরে বলল, “হ্যাঁ। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর। আমি জানতাম না মানুষটাকে। ভালোবাসা তো দূর, তার গলা পর্যন্ত শুনিনি। আমার সিদ্ধান্তে কেউ খুশি নয়। কিন্তু আমি জানতাম—এখন না পালালে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলব।”

অনিরুদ্ধ চুপ করে রইল। কিছুই বলল না। শুধু তার চোখ দুটো গভীর হয়ে উঠল। সে জানে পালানো কাকে বলে। তিন বছর আগেই তো তার প্রেমিকা চলে গেছিল বিয়ের আগের রাতে—ছোট্ট একটা চিরকুট রেখে।

ট্রেন ঝাঁকি দিয়ে একটু ধাক্কা খেল। আলো কমে এল। কামরার অনেকেই তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। অনিরুদ্ধ আর মায়া নিজেদের ব্যাগ থেকে চাদর টেনে নিল। কিন্তু কেউ ঘুমাতে পারল না। চোখ বন্ধ, কিন্তু মন জেগে।

রাত ২টার দিকে একটা ছোট স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াল। নাম জানা যায়নি। অনিরুদ্ধ জানালা খুলে চা কিনল। মায়ার জন্যও এক কাপ।

“তোমার এইটুকু সাহস আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে, জানো?” সে বলল।

মায়া মাথা নেড়ে বলল, “ভয় করে। কিন্তু মনে হচ্ছে সঠিক কিছু করছি।”

চা-এর কাপটা হাতে নিয়ে অনিরুদ্ধ বলল, “তবে এক কাজ করি। রাজস্থান ঘুরে বেড়াই একসঙ্গে। শুধু বন্ধু হিসেবে। না প্রেম, না প্রতিশ্রুতি। কেমন?”

মায়া একটু চমকে তাকাল। “তুমি তো আমাকে চেনোই না।”

“ঠিক, কিন্তু কোনো মানুষকে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো—ভ্রমণ।”

একটা দীর্ঘ মুহূর্ত—চুপচাপ, কেবল ট্রেনের আওয়াজ, আর দুজনের চোখে ভেসে উঠল রঙিন রাজস্থান, মরুভূমি, দুর্গ, গানের উৎসব, সন্ধ্যার বাতাস। আর এক অজানা গল্পের শুরু।

মায়া কাপটা অনিরুদ্ধের দিকে বাড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে, মিস্টার সিনেমা। রাজস্থান দেখা যাক—জীবনের মতোই জটিল, সুন্দর আর অজানা।”

 

অধ্যায় ২: রঙ, রাস্তা, সম্পর্ক

উদয়পুর স্টেশনে যখন ট্রেন থামে, তখন সকাল ৭টা বেজে গেছে। ঠান্ডা হাওয়ায় মায়ার চুলগুলো উড়ছে, আর অনিরুদ্ধ সেই দৃশ্যের মোহে এক মুহূর্ত থেমে যায়। উদয়পুর—ঝিলের শহর, ইতিহাসের গায়ে জলের ছোঁয়া, সাদা প্রাসাদের ছাদে ছায়া ফেলে উড়তে থাকা কবুতরের মতো শান্ত।

হোটেলটা ছিল হানুমান ঘাটের পাশে, একটা পুরনো হেরিটেজ হাভেলি, ভেতরে কাঠের খোদাই, ছাদের ওপরে কফি আর ঝিল দেখা যায় এমন ছাদঘর। অনিরুদ্ধ আগে থেকেই বুক করেছিল—দুটি আলাদা ঘর।

প্রথমদিনের সূর্য ধীরে ধীরে উদয়পুরের সিটি প্যালেসে আলো ফেলতে থাকে। ওরা হেঁটে বেরোয়। গাইড নেয় না। নিজেদের মতোই ঘোরে—পেছনের বারান্দা, রাজবাড়ির আয়না ঘর, মার্বেলের ফ্লোরে হেঁটে চলা মায়া যেন নিজেই রাজকন্যা।

“তুমি কি আগে কখনো এখানে এসেছো?” মায়া জিজ্ঞেস করে।

“না। কিন্তু মনে হচ্ছে বহু জন্মের পরিচিত।” অনিরুদ্ধ বলে।

“তুমি সবকিছু এত সিনেমার মত ভাবো কেন?”

“কারণ আমার জীবনটা কখনো বাস্তব ছিল না। সবকিছু যেন একটা সিনেমার কাট-টু-কাট দৃশ্য।”

মায়া হেসে ফেলে। এই হাসিটা অনিরুদ্ধের কাছে গান হয়ে বাজে।

দ্বিতীয় দিন তারা যায় পুষ্কর।

ছোট ট্রিপ—দুপুরে পৌঁছায়, সন্ধ্যায় আরতি। পুষ্করের গলি ভরা ঘুংরু, ধূপ, আর মালা। সেখানে, সেই পবিত্র সরোবরের পাশে, সন্ধ্যার আলো আর আরতির শঙ্খধ্বনির মাঝে, প্রথমবার মায়া অনিরুদ্ধর হাত ধরেছিল। কাঁপা হাতে, নির্দ্বিধায়।

“তুমি জানো, আমি চাই না প্রেম হোক এখন,” মায়া বলেছিল।

“জানি,” অনিরুদ্ধ বলেছিল, “তবে এই মুহূর্তটা ভালোবাসা না হলেও ভালো লাগা তো হতে পারে, তাই না?”

মায়া চুপ করেছিল। তবে হাত ছাড়েনি।

তারা চলে যায় জয়সলমের।

সোনার দুর্গের শহর। মরুভূমির কাছে রাত কাটায় তাঁবুতে। উটের পিঠে চড়ে দূরে একটা টিলায় যায় সূর্যাস্ত দেখতে।

মায়া বলেছিল, “এই জায়গাটা কি একটু মায়াবী নয়? যেন কেউ ডাকে দূর থেকে?”

অনিরুদ্ধ বলেছিল, “হয়তো আমাদের পুরোনো কোনো জন্ম এই মরুভূমিতে ছিল। তুমি তখন ঘুংরু পরা রাজকন্যা, আর আমি তুমার সেনাপতি—তোমায় পাহারা দিচ্ছি।”

মায়া আবার সেই মিষ্টি হাসি। তারপর হঠাৎ চুপ।

“তুমি জানো না আমি কে, অনিরুদ্ধ।”

“আমি জানি তুমি এই মুহূর্তে আমার পাশে। আর এইটুকুই যথেষ্ট।”

তাঁবুর সেই রাতে তারা শুয়েছিল একে অন্যের পাশে—not in passion, but in peace. দুজনেই জানত—এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী নয়।

তারা পৌঁছায় জোধপুর।

নীল শহর, মেহরানগড় দুর্গে ইতিহাসের দীর্ঘ ছায়া। সেই ছায়ার ভেতরেই ধরা পড়ে বাস্তব।

মায়ার ফোনে কল আসে। সে ধরে না। কল আসে বারবার।

অনিরুদ্ধ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কে?”

“বাড়ির লোক। আমার বাবা, বিয়ের লোকজন… সবাই জানে না আমি কোথায়।”

“তুমি কি ফিরে যাবে?”

মায়া কিছু বলে না। তার চোখে জল।

অনিরুদ্ধ ধীরে কাছে এসে বলে, “তুমি যদি চাও, আমরা এখানেই থাকি। কাউকে কিছু না বলে।”

“তা কি সম্ভব, অনিরুদ্ধ? জীবন কি সত্যিই সিনেমা?”

“আমরা যদি গল্পের নায়ক-নায়িকা হই, তাহলে হ্যাঁ।”

মায়া বলে, “আমার একটা গোপন কথা বলি?”

“বলো।”

“আমার বাবা একটা রাজনৈতিক পরিবারের সঙ্গে জড়িত। এই বিয়েটা শুধু পারিবারিক না—একটা ‘চুক্তি’। আমি শুধু কারো মেয়ে না, আমি এক ‘সম্পত্তি’। আমার পালানো মানে বড়সড় বিপদ।”

অনিরুদ্ধ স্তব্ধ। সে বুঝতে পারে, এ প্রেম তাদের দুজনকেই ক্ষতবিক্ষত করতে পারে।

শেষ রাত তারা কাটায় মেহরানগড়ের পেছনের পাথরের সিঁড়িতে বসে। শহরের আলো নিচে, তারা উপরে।

“তুমি কী করবে এবার?” অনিরুদ্ধ জিজ্ঞেস করে।

“যা করতে হবে, তাই। কিন্তু এই সফর, এই ক’টা দিন… এ আমার মুক্তি ছিল।”

“আমরা কি আর কোনোদিন দেখবো একে অপরকে?”

মায়া মৃদু হেসে বলে, “তুই যদি কোনোদিন রাজস্থানে ফিরে আসিস, আমি তোর অপেক্ষায় থাকব—ঠিক সেই উটের ছায়ার নিচে।”

অনিরুদ্ধ তাকিয়ে থাকে। চোখে জল, কিন্তু মুখে হাসি।

তারা আলাদা হয় জয়পুরে।

মায়া চলে যায় গাড়িতে। অনিরুদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকে, সেই শেষ চোখে চোখ রাখার মুহূর্তে শুধু একটুকরো চিঠি পায়—তার হাতে রাখা মায়ার ডায়রি।

 

ডায়রির শেষ পৃষ্ঠায় লেখা

“এই প্রেম সিনেমার ছিল না। ছিল এক্সপ্রেশন, ছিল মুক্তি। তুই আমায় প্রেম শিখিয়েছিস, আর আমি তোকে ছেড়ে যেতে শিখেছি। তুই যদি কোনোদিন ফিরে আসিস, আমি থাকবএক ঝাঁক রঙিন ঘুড়ির পাশে দাঁড়িয়ে, ঠিক যেভাবে প্রথম দেখেছিলি ট্রেনে।

 

অধ্যায় ৩: বিদায়ের রং

তিন বছর পর।

জয়পুর বিমানবন্দর।

সন্ধ্যার আকাশে ছায়া পড়ছে আম্বার ফোর্টের চূড়ায়। ট্রলি টেনে বেরিয়ে আসে অনিরুদ্ধ। কপালে হালকা ঘাম, চোখে খানিক ক্লান্তি, কিন্তু মন ভরে আছে এক অপূর্ণতা পূরণের আশায়।

সে একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করে এখন, লন্ডন থেকে ফিরছে ছুটিতে। এই সফরের নাম সে দিয়েছে — “শেষ দেখা।”

হাতে একটি পুরনো ডায়রি। ধূসর হয়ে যাওয়া মায়ার হাতের লেখা, শেষ পাতায় সেই চিরকথা—”আমি থাকব, ঠিক সেই উটের ছায়ার নিচে”।

অনিরুদ্ধ এই তিন বছরে কারো প্রেমে পড়েনি। বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই ফিরে গেছে সেই মরুভূমির দিকে, যেখানে এক মেয়ের চোখে সে দেখেছিল নিজের ভবিষ্যৎ—যদিও সেটি অতীত হয়ে গিয়েছিল।

সে প্রথমে যায় পুষ্করে।

সরোবরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখে আরতি। মনে পড়ে, সেই প্রথম হাত ধরা মুহূর্ত। সেই নির্ভরতা। সেই ভয়।

এরপর যায় জয়সলমের।

টিলার ওপরে চড়ে সূর্যাস্ত দেখে। এবার সে একা। উট নেই, মায়া নেই। শুধু ছায়া। তখনই এক ছোট্ট মেয়ে এসে বলে, “আপনি কি অনিরুদ্ধ দা?”

সে থমকে যায়।

“আমার মায়ের নাম মায়া,” মেয়েটি বলে।

অনিরুদ্ধের গলা শুকিয়ে যায়। সে হাঁটু গেড়ে বসে, মেয়েটির মুখে মায়ার চেহারার ছায়া দেখে।

“তোমার মা কোথায়?”

“জোধপুরে। ‘তিন রাস্তার মোড়’-এর কাছে এক পেইন্টিং স্টুডিও চালান। আপনাকে অনেকবার খুঁজেছেন। বলেছেন, যদি কোনোদিন কেউ আসে, তার হাতে এই চিঠি দিতে।”

মেয়েটি পকেট থেকে ছোট্ট খাম বের করে দেয়।

কম্পিত হাতে অনিরুদ্ধ খুলে পড়ে—

“তুই এসেছিস? তাহলে তোর আমার শেষ রঙ বাকি আছে।

আমি ফিরে যাইনি। আমি থাকি এখানে। আমার বিয়ে হয়নি। আমি কাউকে ভালোবাসিনি। আমি আঁকায় ফিরে গিয়েছি—তোর স্মৃতিকে ছবিতে বাঁচিয়ে রাখি।

যদি এখনও সাহস থাকে তোর, তবে তোর জন্য আমি রয়ে গেছি—এক ফ্রেমে, এক চিত্রে, এক জীবনে।”

জোধপুর।

‘তিন রাস্তার মোড়’-এর সেই স্টুডিওর নাম — “ছায়ার ঘর”।

অনিরুদ্ধ ভেতরে ঢোকে। দেয়ালে ঝুলছে রাজস্থানের নানা দৃশ্য—কিন্তু প্রতিটিতেই কোথাও একটা মিল আছে—এক চুলের এলোমেলোতা, এক চায়ের কাপ, এক জানালার পাশে বসা নারী, আর এক পুরুষ যার মুখ প্রায় অস্পষ্ট—যেন স্মৃতির রঙে আঁকা।

পেছন থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে—“তুই এসেছিস?”

অনিরুদ্ধ ঘুরে দাঁড়ায়।

মায়া।

একটু পরিণত, চোখে শান্তি। কিন্তু সেই চাহনি—ঠিক আগের মতোই গভীর।

কিছু সময় তারা কিছু বলে না। শুধু তাকিয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে কাছে আসে।

“তুমি বিয়ে করোনি?” অনিরুদ্ধ প্রশ্ন করে।

“তুই করেছিলি?” মায়ার জবাব।

“না। কারো চোখে আর তোকে খুঁজে পাইনি।”

মায়া এগিয়ে এসে বলে, “তাহলে আজ তুই চাইলে আমি তোর হবো। কোনো পালানো নয়। কোনো সিনেমা নয়। শুধু আমরা—বাস্তবের মতো অসম্পূর্ণ হলেও।”

অনিরুদ্ধ চোখ বন্ধ করে মায়ার কপালে চুমু খায়।

“এই সফর শেষ হল,” সে বলে।

“না, এই তো শুরু।”মায়া জবাব দেয়।

শেষ দৃশ্য:

সন্ধ্যার মরুভূমি।

একটা উটের ছায়া। পাশে দাঁড়িয়ে অনিরুদ্ধ ও মায়া।

মেয়েটি—তাদের মেয়ের নাম ‘রঙা’,সাদা ঘুড়ি ওড়ে আকাশে।

 

আর তাদের ডায়রির নতুন পৃষ্ঠায় লেখা হয়

“ভালোবাসা কোনো গন্তব্য নয়। ভালোবাসা এক ভ্রমণট্রেনের কামরায় শুরু হওয়া, রাজস্থানের পথে পথে বাঁধা পড়ে যাওয়া, আর একদিন ফিরে আসাএকজনের জন্য, যিনি অপেক্ষা করে রঙ ছড়াতে জানেন।

 

সমাপ্ত

WhatsApp-Image-2025-06-06-at-12.39.13-PM.jpeg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *