Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

মেঘমল্লার

Spread the love

মেরিলিনা মিত্র


রেশমি সেনগুপ্ত আজকাল খুব ভোরে উঠে পড়েন। দুধের পাত্র বসিয়ে দেন চুলায়, চায়ের পাতা মেপে রাখেন একটা ছোট্ট কৌটোয়, আর বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ, যেন কোনো অদৃশ্য সুরকে কান পেতে শুনছেন। শহরটা জেগে ওঠে অজস্র শব্দে—ট্রাফিক, রিকশার ঘণ্টা, খবরের কাগজ ছুঁড়ে ফেলার আওয়াজে—কিন্তু রেশমির মনে হয়, এসব শব্দের ভিতর কোথাও যেন হারিয়ে আছে সেই সুর, যে সুর একদিন তাঁর গলা দিয়ে বেরোত, মেঘমল্লার বা ভৈরবী হয়ে। একসময় সারা কলকাতা চিনত রেশমির নাম—‘তালতলা মহোৎসবে যাঁর আলাপ শুনলে পাখিরাও স্তব্ধ হয়ে যেত।’ তারপর? সংসার। দুই সন্তানের মা, অরিন্দমের স্ত্রী, মাসে দু’বার পায়েস রান্না করা এক গৃহবধূ। রান্নাঘরের জানলা দিয়ে ভেসে আসে নুনের গন্ধ, চাল ধোয়ার শব্দ, আর সঙ্গে সঙ্গে কোনো এক পুরোনো দিনের খাটিয়া মেঝেতে টেনে নেওয়ার মতো অদৃশ্য একটা টান। সেই টানটাই তাকে ভোরে উঠিয়ে দেয়, সেই টানটাই বারবার মনে করিয়ে দেয়—সে একদিন গাইত।

সেইদিন সকালটা অস্বাভাবিক ছিল না, শুধু খবরের কাগজের ভিতর একটা ইনসার্ট পড়ে তাঁর চোখ থমকে যায়। বড় বড় অক্ষরে ছাপা—“অমিতাভ রায়চৌধুরি ফেরালেন কলকাতায়, নতুন ছবির রাগাশ্রয়ী সাউন্ডস্কোর নিয়ে।” তিনি হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে গেলেন। হাত থেকে কাপটা পড়ে গিয়ে ভেঙে গেল না সেটা রীতিমতো বিস্ময়ের ব্যাপার। অমিতাভ। সেই নামটা যেন বহু বছর পর কেউ তাঁর কানের পাশে ফিসফিস করে বলল। কলেজে ওরা একসঙ্গে গান শিখত, দু’জনে ঘন্টার পর ঘন্টা রেওয়াজ করত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর এক ছায়াঘেরা বাড়ির ছাদে। তারপর একদিন সে জানল, অমিতাভ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্যারিসের একটা কনজারভেটরিতে স্কলারশিপ পেয়েছে। যাওয়ার আগে দুজনের এক বিকেলে দেখা হয়েছিল, গঙ্গার ঘাটে। অমিতাভ বলেছিল, “তুই থেমে যাবি না, প্রতিদিন গাইবি। আমার হয়ে। একদিন তোর গান আমি সবার কানে পৌঁছে দেব।” সেই কথা তখন খুব আপন মনে হয়েছিল, পরেও বহুদিন সেই কথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিল রেশমি। কিন্তু বাস্তব বড় নিষ্ঠুর। অমিতাভের কোনো চিঠি আর আসে না, সে নিজেও ধীরে ধীরে গান ছেড়ে দেয়। রেওয়াজের হারমোনিয়াম ধুলোয় ঢেকে যায়, কণ্ঠে আর সুর ভেসে ওঠে না, শুধু একটানা বেঁচে থাকা হয়। আর আজ, এত বছর পরে, হঠাৎ করে সেই নাম! অরিন্দম খবরের কাগজটা টেনে নিয়ে বলে, “ওই ছেলেটা তো তোর কলেজের কেউ ছিল না? ফ্রেঞ্চ মিউজিকে খুব নাম করেছে মনে হয়!” রেশমি জবাব দেয় না, শুধু হালকা করে হাসে। কিন্তু হাসির ভিতর লুকিয়ে থাকে অসংখ্য অনুচ্চারিত সুর, যাদের গলা থেকে আজও ঝরে পড়ে বৃষ্টির মতো।

বিকেলে রেশমি একা হাঁটতে বেরোন। আজ তার পা আপনিই ঘুরে যায় সেই পুরোনো সঙ্গীত বিদ্যালয়ের দিকে, যেখানে একদিন সে গান শিখত। বাড়িটা এখনও আছে, তবে এখন সেখানে চলছে একটি আধুনিক মিউজিক একাডেমি। গেটের পাশে দাঁড়িয়ে সে তাকিয়ে থাকে, যেমন করে কেউ পুরোনো প্রেমিকের বিয়ের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে—আড়াল থেকে, স্নেহ মিশ্রিত অভিমানে। হঠাৎ পেছন থেকে এক কণ্ঠ ভেসে আসে, “তুমি কি রেশমি?” সে ঘুরে দাঁড়ায়। গলার নিচে ধুকপুকিয়ে ওঠা সেই পুরোনো স্পন্দন যেন মুহূর্তে জীবন্ত হয়। সামনে দাঁড়িয়ে অমিতাভ। পরিপূর্ণ, পরিণত এক মানুষ, চোখে সেই পুরোনো দীপ্তি। তারা দুজনেই প্রথমে কিছু বলে না। শুধু চেয়ে থাকে। তারপর অমিতাভ বলে, “আমি জানতাম তুমি এখানেই কোথাও থাকবে… তুমিই তো বলেছিলে, গান কখনও মানুষকে ছেড়ে যায় না।” রেশমি হেসে ফেলে, সেই হাসি কান্নার কাছাকাছি, যেন অনেকদিন পর মন খুলে বৃষ্টি নামে কোনো নিষ্প্রাণ মাঠে। “তুমি জানো অমিত, আমি আর গাই না,” বলে সে। অমিতাভ মাথা নেড়ে বলে, “আমিও বিশ্বাস করি না।” রেশমি চুপ করে থাকে। তার গলা শুকিয়ে আসে। কিন্তু ভেতরে কোথাও, অদৃশ্য এক হারমোনিয়াম ধীরে ধীরে সুর তুলতে শুরু করে… হয়তো এটাই নতুন আলাপের শুরু—নতুন জীবনের, না হয় শেষবারের মতো একবার অন্তরালের সুর শুনে নেওয়ার।

রেশমি সেদিন রাতে ঘুমোতে পারেনি। বিছানায় শুয়ে অন্ধকারে চেয়ে থাকল অনেকক্ষণ। অমিতাভের মুখ, তার কথার ধরণ, চোখের গভীরতা—সব মিলিয়ে যেন একটি প্রাচীন রাগ ভেসে আসছে কোথা থেকে, পরিচিত অথচ দূরবর্তী। এত বছর পর তার জীবনে হঠাৎ করে এমন একটি মানুষ ফিরে আসা, যাকে একসময় ভালোবেসেছিল অথচ কোনদিন স্পষ্ট করে বলা হয়নি—এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। অরিন্দম পাশেই ঘুমাচ্ছে, তার নিঃশ্বাসের গতি স্থির, যেন এক ধ্রুবপদ। কিন্তু সেই নিঃশ্বাসের ভেতরও এখন রেশমির কানে ভেসে আসে এক ছায়াসঙ্গীত, এক আচ্ছন্নতা। অমিতাভ আজ যখন বলল—”তুমি জানো, আমি তো জানতাম তুমি একদিন থেমে যাবে না,”—তখন যেন তার হৃদয়ের গহীন থেকে একটি চিরকালীন অভিমান গলে বেরিয়ে এলো। গানের জন্য, নিজের জন্য, হারিয়ে যাওয়া সময়ের জন্য। পরদিন সকালবেলা সে উঠে হঠাৎ করেই হারমোনিয়ামটা নামিয়ে আনল বারান্দায়। ধুলো ঝেড়ে, কীবোর্ডে হাত রাখতেই গলা শুকিয়ে গেল। সেই পুরোনো স্পন্দন, সেই সুর-তোলার আত্মবিশ্বাস কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। তার মেয়ে রিয়া অবাক হয়ে জানলা দিয়ে তাকিয়ে ছিল। মা-কে কখনও এভাবে বসতে দেখেনি—কোনো নির্জন সাধিকার মতো, চুপচাপ, গভীর, কাঁপতে থাকা আঙুলে নিজেকে খুঁজতে থাকা এক নারীর মতো।

অমিতাভের মেসেজ এল দুপুরে, খুব সহজ করে—“আজ একটু দেখা হবে? যদি সময় পাও।” রেশমি প্রথমে জবাব দিতে চাইল না। কিন্তু নিজের অজান্তেই উত্তর টাইপ করল—“হ্যাঁ, সন্ধের দিকে পারবো। পুরোনো সঙ্গীত বিদ্যালয়ের সামনের কফিশপে।” কফিশপটা আগে ছিল না, এখন হয়েছে। আধুনিক, মোডার্ন ছাঁদে বাঁধানো কাঠের ছাউনিতে বসে যখন সে অমিতাভের মুখের দিকে তাকাল, তখন মনে হল কিছুই বদলায়নি—এই পুরুষটি এখনও আগের মতোই গভীর, উপলব্ধিসম্পন্ন, আর সবচেয়ে আশ্চর্যের, সে এখনও তার চোখের ভাষা পড়ে নিতে পারে। অমিতাভ জানাল, সে এখন একটি ফিচার ফিল্ম বানাচ্ছে যেখানে পুরো স্কোরটাই হবে রাগাশ্রয়ী। “এই শহরে আমি যত শিল্পী খুঁজেছি, সব পেয়েছি, কিন্তু ‘মেঘমল্লার’ রাগটা গাইবার মতো কণ্ঠ পাচ্ছিলাম না। তখন হঠাৎ তোমার কথা মনে পড়ল। রেশমি, তোমার কণ্ঠে যে বৃষ্টির গন্ধ ছিল, সেটা আমি কোনওদিন ভুলিনি।” রেশমি চুপ করে রইল। বলতে পারল না, এই কণ্ঠে এখন শুধু বাজারের তালিকা, পরীক্ষার ফর্ম ফিল-আপ, আর হাসপাতালের ওষুধের নাম গেয়ে ওঠে। কিন্তু একই সঙ্গে কোথাও এক অদ্ভুত আলোড়নও হল, যেন তার ভিতরের সঙ্গীতপ্রেমী মেয়েটি একটু মাথা তুলে তাকাল, বলল—”আমি এখনও আছি।”

সেদিন রাতেই রেশমি চুপিচুপি উঠল, দরজা বন্ধ করে হারমোনিয়ামের কাছে বসল। ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে, অরিন্দমও। বাতাসে নিস্তব্ধতা। সে ধীরে ধীরে সা-রে-গা-মা… তুলল। প্রথমে কণ্ঠ কেঁপে গেল। বহুদিন পর আবার গলা খুলছে। তারপর একটু একটু করে গলা স্থির হল, চোখ বুজে তার ভেতরের সেই পুরোনো নদীটার মুখ দেখতে পেল—যেখানে সে গান গাইত আর গান তার দিকে ফিরে তাকাত। ধীরে ধীরে তার গলা দিয়ে বেরিয়ে এল মেঘমল্লারের আলাপ, সেই পুরোনো আলাপ যা সে একসময় অমিতাভের জন্য গাইত। যেন মেঘলা আকাশের নিচে একটি একাকী নারী বসে সঙ্গীত দিয়ে নিজের অতীতের সঙ্গে কথোপকথন করছে। গান থামতেই, তার চোখের কোণে জমে থাকা জল গড়িয়ে পড়ল। সে জানত না, ঠিক সেই মুহূর্তে অরিন্দম দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে—কিছু না বলে, নিঃশব্দে। আর তার কন্যা রিয়া, পাশের ঘরে খাটের তলায় শুয়ে, কাঁথা মুখে চেপে শুনছে, মুগ্ধ হয়ে। হয়তো সুরেরা ফিরে আসছে, অথবা রেশমি নিজেই ফিরে আসছে সেই রেশমিতে—যার কণ্ঠে একসময় মেঘ নামত, আর বৃষ্টির রঙ গায়ে মাখত সময়।

রেশমি স্টুডিওতে পা রাখার মুহূর্তে একটা অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল তার সারা শরীরে। কাঠের নিঃশব্দ দরজা, দেয়ালে মাউন্ট করা সাউন্ডপ্রুফ প্যানেল, এবং কাচের ওপাশে বসে থাকা রেকর্ডিং টেকনিশিয়ান—সব মিলিয়ে যেন কোনো পবিত্র মন্দিরে প্রবেশ করেছে সে, যেখানে সুরই ঈশ্বর, এবং কণ্ঠ তার একমাত্র উপাসনা। অমিতাভ তাকে স্টুডিও ঘরে নিয়ে গিয়ে হাত ধরে বলল, “তুমি শুধু নিজের মতো করে গাও। কোনও চাপ নেই। আমি শুধু চাই তোমার ‘আলাপ’টা ফিরে আসুক।” রেশমি জানত, এই জায়গাটা তার কাছে নতুন নয়, বরং চিরচেনা। এতদিন সে নিজেকে যেভাবে ভুলে থেকেছে, ভুলতে বাধ্য হয়েছে, আজ সেই নিজেকেই সে নতুন করে ছুঁতে চায়। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতেই হেডফোনের ভিতর বাজতে শুরু করল তানপুরার টান, সঙ্গে হালকা রিদমের প্যাড। সে চোখ বন্ধ করল, এবং গলা দিয়ে ধীরে ধীরে গড়িয়ে এল—“সা… রে… গা…”। প্রথমে একটু দ্বিধা, তারপর এক নির্ভুল প্রবাহ। পুরো রুমটা চুপ, কাচের ওপাশের অমিতাভ তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে—ঠিক যেভাবে কেউ পুরনো চেনা নদীর ধারে এসে আবার তার ছায়া দেখতে পায়।

রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর অমিতাভ কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “তুমি জানো, এই সুরটা আমার মনে পড়ে সেই দিনের কথা, গঙ্গার ঘাটে বসে তুমি যখন বলেছিলে—‘আমি মেঘ ভালোবাসি, কারণ তারা কখনও এক জায়গায় থামে না।’ আজ বুঝতে পারছি, তুমি নিজেও থামোনি রেশমি, শুধু আড়ালে চলে গিয়েছিলে।” রেশমি কিছু বলল না, কেবল জানলার বাইরে তাকিয়ে রইল। তার চোখে কোনো আবেগ প্রকাশ ছিল না, কিন্তু ভিতরে এক প্রবল ঢেউ উঠছিল। অমিতাভ তাকে বলল, “এই গানটা যদি আমি ছবিতে ব্যবহার করি, তাহলে তোমাকে গানটা প্রকাশ্যেও গাইতে হবে। হয়তো লাইভ রেকর্ডিং, হয়তো একটি অনুষ্ঠানে। পারবে?” রেশমি একটু চুপ করে থেকে বলল, “আমি পারি, কিন্তু আমার নিজের একটা শর্ত আছে।” অমিতাভ একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। রেশমি বলল, “আমার পরিচয় যেন শুধু আমার কণ্ঠ হয়, আমার অতীত নয়। কেউ যেন না জানে আমি কে, কোথা থেকে এলাম।” তার গলায় ছিল একধরনের আত্মরক্ষা, যেন অনেকদিনের আড়াল সে ভাঙতে চায়, কিন্তু পুরোনো ভয় এখনো হাত ধরে আছে।

সন্ধ্যেবেলায় সে যখন বাড়ি ফিরল, তখন আকাশে ছিল একটানা মেঘ, রিয়াকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে মনে হল যেন মেয়েটি কিছু আঁচ করছে। অরিন্দম খাবার টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল, কিন্তু রেশমিকে দেখে তার চোখ একটু বেশিক্ষণ আটকে রইল। “আজকে কোথায় গিয়েছিলে?”—স্বাভাবিক প্রশ্ন, কিন্তু তাতে এক ধরনের অস্বস্তি লুকিয়ে ছিল। রেশমি শান্তভাবে বলল, “একটা স্টুডিওতে। গান গাইতে।” অরিন্দম কিছু বলল না, কাগজটা ভাঁজ করে রাখল। তারপর একটু থেমে বলল, “এত বছর পর? হঠাৎ?” রেশমি বলল, “হঠাৎ নয়। অনেকটা সময় পার হয়েছে। আমি আবার ফিরে যেতে চাই—যে জায়গাটা আমি ফেলে এসেছিলাম।” অরিন্দম চুপ করে রইল। তার মুখে কোনো বিরোধিতা ছিল না, কিন্তু একটা নীরব অনিচ্ছাও স্পষ্ট ছিল। রিয়া পাশ থেকে বলল, “মা, তুমি কি সত্যি গান গাইলে আজ?” রেশমি তাকিয়ে হেসে বলল, “হ্যাঁ, রেকর্ডিং করলাম। তুই চাইলে একদিন তোকে শোনাব।” মেয়েটি মায়ের চোখে কিছু একটায় খুঁজে পেল—হয়তো সেই আলো, যেটা বহুদিন নিভে গিয়েছিল। রেশমি জানত, সব কিছু সহজ হবে না। কিন্তু গান যখন ফিরে আসে, সে আর কাউকে জবাবদিহি করে না—সে শুধু বয়ে চলে, মেঘমল্লারের মতোই, নিজের গতি আর গম্ভীরতায়।

কলকাতার এক ছোট্ট অথচ রুচিশীল মিউজিক হল, ‘সুরজ্যোৎস্না’, যেখানে আজ সন্ধেয় হবে রাগাশ্রয়ী আধুনিক ছবিটির প্রথম লাইভ রেন্ডিশন—শুধু মিউজিক, কোনো দৃশ্য, কোনো নাম নয়। আয়োজনটা ইন্টিমেট, শ্রোতারা মূলত সঙ্গীতপ্রেমী, অমিতাভ ইচ্ছা করেই রেশমিকে কোনো পরিচয় ছাড়াই মঞ্চে তুলে দেবেন। তার নাম শুধু ‘R’ হিসেবে উল্লেখ থাকবে প্রোগ্রাম বুকে, যেন একটা সুরের প্রতীক হয়ে ওঠে সে, ব্যক্তি নয়। রেশমি এখন সবুজ কাঁচের কাজ করা শাড়িতে বসে আছেন গ্রিনরুমে। মুখে হালকা মেকআপ, কিন্তু চোখে এক আশ্চর্য শান্তি, যেটা বহু বছর পর ফিরেছে। বাইরে হালকা বাজছে পাখাওয়ালা ফ্যান, ঢুকে আসছে মঞ্চের আবহ, আর বারবার মাইকে অমিতাভের কণ্ঠ—“লাইটস চেক… সাউন্ড ঠিক আছে তো?” এই ব্যস্ততার ভেতরও রেশমি যেন নিঃসঙ্গ কোনও নদী, যে নিজের গতিকে চেনে। রিয়া আর অরিন্দম চুপচাপ অডিয়েন্সের ভেতরে এসে বসেছে, অরিন্দম এখনও জানেন না পারফর্মার রেশমি—তাঁর স্ত্রী। রিয়া শুধু বলেছিল, “চলো বাবা, আজ একটা ‘রাগ সংগীত’ শোনাবে তোমায়। হয়তো তোমার ভালোই লাগবে।” অরিন্দম মুখে কিছু বলেনি, কিন্তু তার অভ্যন্তরে যেন কিছু একটা ধীরে ধীরে গলে যেতে শুরু করেছে।

অন্ধকার মঞ্চে আলো পড়ল একটিমাত্র গলার ওপরে। কোনো নাম ঘোষণা করা হয়নি। শুধু মৃদু তানপুরার শব্দ বাজছে। তারপর শোনাল সেই আলাপ—নিচু সা দিয়ে শুরু, ধীরে ধীরে উঠে আসা রে-গা-মা-পা… এবং সঙ্গে সঙ্গে হল যেন নিঃশব্দে জমে গেল। এমন স্পষ্ট, এমন গভীর, এমন রসসিক্ত কণ্ঠ বহুদিন কেউ শোনেনি। শ্রোতারা নিঃশব্দে গিলে নিচ্ছিল প্রতিটি মুরকি, প্রতিটি কামতান, যেন তারা কেউ জানেই না গানের ভাষা, শুধু অনুভব করে। রেশমি চোখ বুজে গাইছিলেন, কোথাও যেন তাঁর গলার সঙ্গে তাঁর আত্মা কথা বলছিল। মেঘমল্লার রাগটা ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছিল শ্রোতাদের হৃদয়ের গভীরে। সে জানে না, সামনের সারিতে বসে থাকা অরিন্দমের মুখ কেমন—হতবুদ্ধি না নিঃশব্দ বিস্ময়ে পূর্ণ। রিয়া পাশে বসে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে, যেন তার মায়ের এই নতুন রূপ তাকে নতুন আলোয় দেখাচ্ছে। কণ্ঠ স্তব্ধ হতেই, কয়েক মুহূর্ত কেউ কিছু বলতে পারেনি, তারপর হাততালির ঢেউ উঠল—শুধু শব্দ নয়, যেন কোনও অনুশোচনা, কোনও প্রশংসা, কোনও দেরিতে ফেরা সম্মান।

পারফরমেন্স শেষ করে রেশমি যখন গ্রিনরুমে ফিরলেন, অমিতাভ তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আজ শুধু গান গাওনি, তুমি ফিরে এসেছো।” রেশমি ক্লান্ত হাসলেন, বললেন, “তুমি জানো, এটা আমার জন্য প্রথম নয়, আবার শেষও নয়।” ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ে। রিয়া ঢুকল, মুখে উজ্জ্বল আলো, চোখে জল। “মা,” সে শুধু এটুকুই বলল, তারপর জড়িয়ে ধরল মাকে—একটা নিঃশব্দ স্বীকৃতি, একটা মুকুল ফোটা সম্পর্কের প্রথম ছোঁয়া। অরিন্দম তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে, গ্রিনরুমে ঢোকার সাহস তার হয় না। তাঁর স্ত্রীকে এতদিন যেভাবে চিনেছিলেন, আজ তার বাইরেও কিছু একটা খুলে গেছে—যেটা হয়তো সে কখনও জানতই না। তার চোখে জল নেই, কিন্তু ভেতরে কোনও পুরনো দেওয়াল ভেঙে পড়েছে, শব্দ না করেই। রেশমি জানেন, তাঁর গান হয়তো সমাজ বদলাবে না, সম্পর্কের হিসেবও নয়। কিন্তু আজ এই একটি সন্ধেয়, তিনি নিজেকে ফিরিয়ে পেয়েছেন, এবং সেটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে সত্য সুর।

পরের দিন সকাল থেকেই কলকাতার সোশ্যাল মিডিয়া, মিউজিক ফোরাম আর ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে একটাই আলোচনার বিষয়—“কে এই R?” রেশমির গাওয়া ‘মেঘমল্লার’-এর আলাপ একটি অনলাইন ম্যাগাজিনে শেয়ার হতেই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওর নিচে হাজার হাজার মন্তব্য, কেউ লিখেছে “আজ বহু বছর পর রাগ গানে মন ভরে গেল”, কেউ আবার জিজ্ঞেস করছে “কণ্ঠটা চেনা চেনা, কে এই শিল্পী?” অমিতাভ, নিজের অভ্যস্ত মিডিয়া মোকাবিলার ভঙ্গিমায় কিছুই বলেন না, শুধু একটি ছোট বিবৃতি দেন—“R prefers to remain anonymous. Let her voice speak, not her name.” কিন্তু সেই গলায় যে আবেগ, যে অভিমান, যে ইতিহাস, তা তো চাপা থাকে না। মিউজিক জার্নালিস্টদের চোখেও পড়ে, তারা খুঁজতে শুরু করে শিল্পীর পরিচয়। রেশমি নিজে এই সব কিছু থেকে অনেকটা দূরে থাকলেও, নিজের ভেতরে প্রতিদিন টের পান, তাঁর গান যেন নতুন করে তাঁকে সৃষ্ট করছে। একসময় যেসব নারী তাঁর চারপাশে সংসার আর দায়িত্বের দেয়ালে বন্দী ছিল, তারা এখন তাকে মেসেজ করছে—“আপনার গান শুনে মনে হল, আমরাও আবার শুরু করতে পারি কি না।”

তবে একমাত্র যে মানুষটি এই সাফল্যে নিশ্চুপ, তিনি হলেন অরিন্দম। কিছু বলেন না, প্রশংসাও করেন না, বিরোধিতাও নয়। কেবল একটা স্বচ্ছ অব্যক্ত দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। রেশমি তা বোঝেন। হয়তো জানেন, অরিন্দমের ভিতরটায় কোথাও একটি পুরনো অবিচার জেগে উঠেছে—যে স্ত্রীর তিনি পরিচিত রূপ জানতেন, তিনি তো শুধুমাত্র অর্ধেক ছিল। বাকিটুকু আজ এক প্রকাশ্যে সুর হয়ে বেরিয়ে এসেছে, যেখানে তাঁর জায়গা নেই। রিয়া অবশ্য সম্পূর্ণ বিপরীত। সে মায়ের গান বারবার শুনছে, বন্ধুদের শেয়ার করছে, এমনকি নিজের স্কুলের ফাংশনে একটি রাগাশ্রয়ী গান গাওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে মাকে শেখানোর জন্য। “তুমি বুঝতে পারো মা,” একদিন সে বলল, “তোমার কণ্ঠে যেন আমার শিকড়ের গন্ধ পাই।” রেশমি শুনে অবাক হয়, মেয়ে এত গভীরভাবে তাকে অনুভব করে ভাবতেই পারেনি। কিন্তু ঠিক সেই সময়েই, অন্যপ্রান্তে, অমিতাভের আচরণও একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে। তার প্রতিটি ফোনকল এখন একটু দীর্ঘ হয়, বারবার শোনায়—“তুমি জানো তো, শুধু গান না, তোমার চোখের ভাষাও সুরের মতো।” কিংবা “তোমার কণ্ঠে আমার হারিয়ে যাওয়া দিন ফিরে আসে, রেশমি।” এই কথাগুলো প্রথমে শ্রোতার প্রশংসা মনে হলেও, রেশমি ধীরে ধীরে টের পান, অমিতাভের আকর্ষণ যেন সুরের বাইরে গিয়ে অন্য কোথাও পৌঁছাচ্ছে।

একদিন সন্ধ্যায়, স্টুডিওতে নতুন একটি কম্পোজিশনের প্র্যাকটিস চলছিল। অমিতাভ হঠাৎ তার খুব কাছে এসে দাঁড়ায়, বলে, “তুমি জানো তো, আমি কোনওদিন এত গভীরভাবে আর কাউকে উপলব্ধি করিনি। তুমি আমার অনুপ্রেরণা। কিন্তু বলো রেশমি, তুমি কি ফিরে এসেছো শুধুই সুরের জন্য, নাকি…”—সে থেমে যায়। রেশমি উঠে দাঁড়ান, চোখের গভীর থেকে তাকিয়ে বলেন, “অমিত, সুরের মধ্যে আমি আছি, কিন্তু তুমি আমার ভেতরের নির্জনতা বোঝো না। আমি কাউকে ভালোবাসার জন্য ফিরে আসিনি, আমি নিজেকে ফিরে পেতে এসেছি।” তারপর ধীরে ধীরে স্টুডিও থেকে বেরিয়ে আসেন, মাথা উঁচু করে, যেন এক দীর্ঘ রাতের পরে কোনো গানের উজ্জ্বল ভোর তাঁর মধ্যে চুপচাপ খেলা করছে। বাইরে তখন বৃষ্টি পড়ছে। মেঘমল্লারের মতো সুরে সুরে নেমে আসছে আত্মসম্মান, অভিমান আর স্বাধীনতার রাগ—যেটা আর কেউ থামাতে পারবে না।

রেশমি বাড়ি ফিরতেই ঘরের বাতাসে অদ্ভুত এক ভারী নিঃস্তব্ধতা অনুভব করলেন। রান্নাঘরের হালকা আলো জ্বলছে, ছেলেমেয়েরা পড়ায় বসেছে, কিন্তু অরিন্দম বসে আছেন ডাইনিং টেবিলে, সামনে রাখা তাঁর প্রিয় চায়ের কাপ, অথচ ঠোঁটে লাগাননি। রেশমি চুপচাপ সালোয়ার পাল্টে এসে বসতেই অরিন্দম প্রশ্ন করলেন, গলা একেবারে নির্লিপ্ত, “তুমি কি অমিতাভকে ভালোবাসো?” প্রশ্নটা যে এত সরাসরি আসবে, রেশমি প্রস্তুত ছিলেন না। একটু থেমে বললেন, “না, আমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি এখন। তাতে যদি তুমি অমিতাভকে দেখো, সেটা তোমার চোখের দৃষ্টিভঙ্গি।” অরিন্দম কণ্ঠ নিচু করে বললেন, “তুমি কি বুঝতে পারো না, এখন সবাই জানে তুমি কে? সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ঘুরছে, ট্যাগ করছে—‘অরিন্দম সেনগুপ্তের স্ত্রীই সেই R!’ আমার অফিসেও আলোচনা শুরু হয়েছে। তুমি কী চাও? আমি তোমার পরিচয় নিয়ে লড়াই করবো?” রেশমি শান্ত গলায় উত্তর দিলেন, “আমি চাই তুমি নিজেকে নিয়ে লড়াই করো। যেই মানুষটা আমাকে ভালোবেসে সংসার শুরু করেছিল, সেই মানুষটা কি সত্যিই চায় তার স্ত্রী গান গাইলে লজ্জা হোক? আমি তো তোমাকে কখনো আমার গান নিয়ে ছোট করিনি।”

অরিন্দম হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন, তাঁর কণ্ঠে জমে থাকা বহু বছরের অভিমান যেন ফেটে পড়ল, “তুমি বুঝো না রেশমি, আমাদের সমাজে একজন পুরুষ সফল হলে সে গর্বের বিষয় হয়, কিন্তু একজন নারী সফল হলে সে সন্দেহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়! তুমি আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাতে তুমি আমার স্ত্রীর পরিচয়ের বাইরে গেছো—তুমি ‘নিজের’ হয়ে উঠেছো। সেটাই আমার ভয়।” রেশমি এবার তাঁর দিকে তাকালেন দীর্ঘক্ষণ, তারপর বললেন, “আমার গান কি কখনও তোমার ভালোবাসার থেকে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে? নাকি তুমি চেয়েছিলে আমি শুধু তোমার নামের ছায়ায় থাকি? আমি তো কাউকে ছাড়িনি, বরং এখন নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। তুমি যদি তাতে ভয় পাও, তবে সেটা আমার দায় নয়।” অরিন্দম আর কিছু বললেন না, কেবল ঘরের দরজা খুলে বাইরে চলে গেলেন। জানলা দিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় নিঃশব্দে হেঁটে যাচ্ছেন, মাথা নিচু, কাঁধ ভারী। রেশমি জানেন, আজ তাঁর জীবনের এক নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি—যেখানে ভালোবাসা আর স্বাধীনতা পরস্পরকে মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এবং এবার তিনি কাঁদলেন না, শুধু বুকের ভেতর কিছুটা ভারমুক্তি অনুভব করলেন, যেটা অনেক বছর ধরে জমে ছিল।

রাতে রিয়া এসে চুপচাপ তাঁর পাশে বসে বলল, “তুমি ঠিক করেছো মা। আমি জানি, তুমি কাউকে কষ্ট দিতে চাওনি। কিন্তু তুমি যদি গান না গাও, তবে আমি কোনওদিন বিশ্বাস করতে পারবো না যে একজন নারী সংসার আর নিজের স্বপ্ন—দুটোকে একসাথে নিয়ে চলতে পারে।” সেই কথাটা যেন রেশমির হৃদয়ে গভীরভাবে বসে গেল। পরদিন সকালেই সে অমিতাভকে ফোন করে বলল, “আমি গান গাইব, নতুন প্রজেক্টে অংশ নেব, তবে আমার নিজস্ব শর্তে। আমি কোনো প্রেমের গল্পে ফিরছি না, আমি ফিরছি সুরে, আমার ছায়ায়।” অমিতাভ কিছুক্ষণের নীরবতার পর বলল, “ঠিক আছে, রেশমি। আমি শুধু চাই তুমি যেভাবে চাও, সেভাবেই গাও। তোমার সুরই যথেষ্ট।” সেই মুহূর্তে রেশমি জানলেন, তিনি এবার সত্যি নিজের পথ খুঁজে পেয়েছেন—যেটা সমাজ নয়, প্রেম নয়, বরং তাঁর নিজের আত্মা তৈরি করেছে। এবং সেই পথে একটানা বাজছে মেঘমল্লার—ধীর, শান্ত, অথচ অপরাজেয়।

ক’দিনের মধ্যে রেশমির ঘর যেন বদলে গেল। যেখানে আগে সন্ধ্যেবেলা টিভি চালিয়ে রান্নার গন্ধে ভেসে আসত খবরের চিৎকার, এখন সেই ঘরে বসে রিয়া হারমোনিয়ামের সামনে সা-রে-গা গাইছে। রেশমি তাকে কখনও তাড়া দেন না, কখনও বাধ্য করেন না—শুধু বলেন, “তোর গলার ভিতর নিজের কথা খুঁজে পাবি। অন্যের মতো হবার দরকার নেই।” রিয়ার চোখে-মুখে যে গভীর মনোযোগ ফুটে ওঠে, সেটা দেখে রেশমির নিজের কৈশোরের কথা মনে পড়ে, যখন সে নিজেও মালবিকাদি’র কাছে বসে এভাবেই গান শিখত। আজ মালবিকা নিজেই ফোন করে বললেন, “তুই তো আবার নতুন মেয়েদের মধ্যে আলো জ্বালালি রেশমি। শুনলাম তিনটে ক্লাসে তোর লাইভ সেশন যাচ্ছে। অনেক মেয়ে নাকি আবার সঙ্গীত স্কুলে ভর্তি হচ্ছে।” রেশমি এক গাল হেসে উত্তর দিলেন, “আমি কিছু করিনি। গান নিজে পথ খুঁজে নেয়।” তখনই তাঁর মাথায় আসে একটা ভাবনা—এই যে নতুন প্রজন্ম, যারা ভয় পায়, লজ্জা পায়, কিংবা নিজের স্বপ্নকে ভয়ানক বিলাসিতা বলে মনে করে, তাদের জন্য একটা খোলা জায়গা দরকার, একটা নির্ভরতার আশ্রয় যেখানে তারা ভুল করেও আবার গাইতে পারবে।

এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় ‘সুরআলো’—রেশমির নিজস্ব ছোট্ট একটি গানের আঙিনা। একটা পুরোনো গ্যারেজ ঘর ভাড়া নিয়ে, খাটিয়া ফেলে, হারমোনিয়াম, তানপুরা আর এক কাপ গরম লেবু-চায়ের সঙ্গে শুরু হয় সেই ক্লাস। প্রথম দিন পাঁচজন আসে—তিনজন গৃহবধূ, একজন কলেজের মেয়ে আর একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। তারা কেউই পেশাদার শিল্পী হতে চায় না, শুধু নিজেদের গলা খুঁজতে চায়। রেশমি প্রত্যেককেই আলাদাভাবে সময় দেন, গল্প করেন, ভয় কাটান। দ্বিতীয় সপ্তাহে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দশে দাঁড়ায়। সবচেয়ে অদ্ভুত ছিল একটি মেয়ের উপস্থিতি—নাম স্নেহা, বয়স তেইশ, এক কাস্টিং ডিরেক্টরের অ্যাসিস্ট্যান্ট। সে একদিন ক্লাসের শেষে বলল, “আমি জানতাম না আমার গলাতেও সুর আছে। শুধু জানতাম, আমি ভালোবাসি গান শুনতে, কিন্তু কোনওদিন গাইতে পারবো—এটা ভাবিনি।” রেশমি ওর মাথায় হাত রেখে বললেন, “তুই শুধু বিশ্বাস রাখ। গান কখনও কাউকে অস্বীকার করে না।” এইসব ছোট ছোট গল্প, হাসি, ভুল, সংশোধনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠতে থাকে ‘সুরআলো’—যেটা ধীরে ধীরে শুধু গান শেখার জায়গা নয়, হয়ে ওঠে আত্মা জাগানোর ঠিকানা।

একদিন ক্লাস শেষে রিয়া এসে জিজ্ঞেস করল, “মা, তুমি কি কোনোদিনও ভাবতে পেরেছিলে তুমি আবার এমন করে গান শিখাবে, মানুষ বদলে দেবে?” রেশমি একটু ভেবে বলল, “আমি শুধু নিজের হারিয়ে যাওয়া সময়টাকে ফেরত আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই সময় হয়তো অন্যদের সময় হয়ে উঠেছে।” এই কথাটা বলতে বলতে তার চোখ চলে গেল জানলার ওপারে—বৃষ্টির ফোঁটা টিনের চালের ওপর শব্দ করছে, ঠিক যেন মেঘমল্লার রাগের গমক। সেই সুর, যা একসময় তাকে হারিয়ে ফেলেছিল, আজ নতুন করে অন্যদের খুঁজে নিতে সাহায্য করছে। সেই সন্ধ্যায় অমিতাভ একটি মেসেজ পাঠাল—“তোমার গান শুধু তোমাকে নয়, আমাকেও পাল্টে দিয়েছে। আমি এখন প্যারিসে, কিন্তু তোমার কণ্ঠ এখনও আমার কাজের মধ্যে বেজে চলে। এবার যদি নতুন একটি আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে তোমার গান ব্যবহার করি, তোমার অনুমতি চাই।” রেশমি একটুও দ্বিধা না করে জবাব দিলেন, “গান আমার। তুমি তার বাহক। পথ সে নিজেই খুঁজে নেবে।” এবার তার কণ্ঠে একটুও অভিমান নেই, শুধু সুরের প্রতি আস্থা আর নিজস্বতার দৃঢ়তা। আর এই দৃঢ়তাই, এই আত্মবিশ্বাসই তার আসল পরিচয়—একজন নারী, যিনি নিজের ইচ্ছেকে দুঃসাহস নয়, স্বরূপ মনে করেন।

‘সুরআলো’-র খ্যাতি এখন চুপিচুপি ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ কলকাতার অলিগলি ছাড়িয়ে শহরতলীর নির্জন গৃহস্থালীতেও। সপ্তাহান্তে আয়োজিত ‘সন্ধ্যা সুর’ নামের খোলা ক্লাসে এখন আসছেন এমন সব নারী, যাঁরা নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন সন্তান, সংসার কিংবা চাকরির একঘেয়ে ভিড়ে। কেউ অষ্টপ্রহরের গৃহবধূ, কেউ পঁচিশ বছর পর হঠাৎ নিজের গলা খুঁজে পেয়েছেন। রেশমির সেই হারমোনিয়ামের পাশে প্রতিদিন বসে এক নতুন নারী জন্ম নেয়—আত্মবিশ্বাসী, শান্ত, আর নিজস্ব। মিডিয়ার নজরে পড়তে দেরি হল না। একটি নামী অনলাইন ম্যাগাজিন ‘নগরনির্বাণ’ রেশমির জীবনের ওপর একটি ফিচার করতে চাইল। রেশমি প্রথমে না বলেছিলেন, কিন্তু রিয়া বুঝিয়ে বলল, “তোমার গল্পটা এখন আর শুধু তোমার নয়, বহু নারীর, যারা তোমার ভিতর নিজেদের খোঁজ পায়।” অবশেষে একদিন বিকেলে ক্যামেরা-লাইট-সেটআপ নিয়ে সাংবাদিক এসেছিল ‘সুরআলো’-তে। রেশমি সহজ ভাবে কথা বলছিলেন, নিজের অতীত, সঙ্গীত ছাড়ার কষ্ট, আবার ফিরে আসার সাহস—সবই বলছিলেন। কিন্তু একটি প্রশ্ন তাঁর ভেতরকে নাড়া দিল।

সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার গান এখন শুধু সংগীত নয়, নারীর আত্মস্বরের মতো হয়ে উঠেছে। আপনি কি নিজেকে ‘নারী স্বাধীনতার প্রতীক’ ভাবেন?” প্রশ্নটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন রেশমি। তারপর ধীরে, কিন্তু নিশ্চিত গলায় বলেন, “আমি কোনো প্রতীক নই। আমি শুধু একজন মানুষ, যে হারিয়ে গিয়ে আবার নিজের সুরে ফিরে এসেছে। যদি অন্য কোনো নারী সেই পথে সাহস পায়, তবে সেটা আমার নয়, তার নিজের জয়ের গল্প। আমি শুধু একটা জানলা খুলে রেখেছি। সবাইকে বলে দিয়েছি—আলো ঢুকতে দিলে ভিতরের অন্ধকারও গান গাইতে শেখে।” তার এই উত্তর, সাংবাদিকের চোখে জল এনে দেয় না ঠিক, কিন্তু ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্টার্ন মেয়েটি ফিসফিস করে বলে, “আমি আজই গানের ক্লাসে ভর্তি হব।” সে রাতে সেই ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে, ইউটিউবে শুধু একটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে—“আমরা নিজেদের মতো বাঁচতে পারি না কেন?” আর তার সঙ্গে বাজতে থাকে রেশমির গাওয়া ‘মেঘমল্লার’-এর একটি টুকরো—তানপুরার টান, আর গভীর এক নারী কণ্ঠ, যেটা কাঁদে না, কাঁপেও না, শুধু নিজের কথা বলে।

পরদিন সকালে রেশমি চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, “বুঝলি, গানটা কেবল গলার না, আত্মারও হয়। আমি যখন সুর ছাড়ি, তখন আমার আত্মাটাও চুপ করে গিয়েছিল।” রিয়া হেসে বলল, “তুমি এখন আবার কথা বলছো, মা। এবং তোমার কথায় অন্য অনেকের কণ্ঠও খুঁজে পাচ্ছে নিজের ভাষা।” রেশমি মাথা নেড়ে মৃদু হাসলেন। বাইরে তখন ধুলো জমা আকাশে নেমেছে হালকা বৃষ্টি, টিনের চালায় ঝমঝম শব্দে যেন মেঘমল্লারের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সেই বিকেলে একটি ডাক এল—একটি অল ইন্ডিয়া ক্লাসিক্যাল ফেস্টিভ্যালে রেশমিকে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধনী গায়কী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দীর্ঘ দশ বছর পর, তিনি জাতীয় মঞ্চে। রেশমি প্রথমে চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন। ভেতরে কোথাও গেয়ে উঠল এক পুরনো উচ্চারণ—“আমি রেশমি। আমি নারী, আমি সুর। আমি হারিয়েছিলাম নিজেকে। আজ সেই সুরেই ফিরে এসেছি, ধীরে ধীরে, কিন্তু স্থিরতায়। আর এইবার আমি থামবো না।”

মঞ্চে ওঠার আগের মুহূর্তে রেশমির মনে হচ্ছিল, যেন সময় নিজে উল্টো দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দশ বছর আগে যেখান থেকে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল, সেই জায়গায় আজ সে আবার উপস্থিত, কিন্তু এবার আর কেবল শিল্পী নয়—এক জীবন্ত প্রতিফলন, এক যাপন, এক বার্তা। অল ইন্ডিয়া ক্লাসিক্যাল ফেস্টিভ্যালে দেশের নামজাদা সব শিল্পীদের মাঝে রেশমি আজকের উদ্বোধনী পরিবেশনার মুখ, যাঁর পরিচয় এখন শুধু কণ্ঠে নয়—একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে, একটি নতুন ভাষায়। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে সে যখন গ্রিনরুমে আলপনা আঁকা সাদা-লাল শাড়ি পরে হারমোনিয়ামের সামনে বসে গলা খুলছিল, তখন হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল। রিয়া ঢুকল হাতে একগুচ্ছ ছোট্ট লিলি ফুল, আর সঙ্গে তার ‘সুরআলো’র ছোট ছাত্রীরা—পাঁচটি বাচ্চা মেয়ে, সবার হাতে রঙিন খামে ছোট ছোট চিঠি। একটিতে লেখা, “তুমি গান গাও, আমি চোখ বন্ধ করি, নিজের মা-কে কল্পনা করি।” আরেকটায়, “আমি জানি না রাগ কী, কিন্তু তোমার গলায় আমার বুক কেঁপে ওঠে।” রেশমি চুপ করে থাকলেন, শুধু মাথা নিচু করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন—ভেতরের সমস্ত ভয়, কুণ্ঠা, অনিশ্চয়তা যেন সেই নিঃশ্বাসে গলে গেল।

মঞ্চের আলো তখনও নিভে আছে। একে একে ঘোষিত হচ্ছিল নাম, পরিচয়, রেকগনিশন—সবাইকে দীর্ঘ করতালিতে স্বাগত জানানো হচ্ছিল। কিন্তু রেশমির নাম ঘোষিত হল না। অমিতাভ, যিনি এই অনুষ্ঠানের মিউজিক কনসালট্যান্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নিজে মাইকে এসে বললেন, “আজকের উদ্বোধনী পরিবেশনার শিল্পীর নাম আমি বলব না। শুধু বলব, যিনি আসছেন, তিনি গান দিয়ে নিজের অতীতকে সঞ্জীবনী দিয়েছেন, এবং অনেকের ভবিষ্যতেরও দিশা খুলেছেন।” অডিটোরিয়ামে নিস্তব্ধতা নেমে এল। তখনই আলো জ্বলে উঠল মঞ্চে—রেশমি একাই বসে আছেন, হারমোনিয়াম নিয়ে। তানপুরার প্রি-রেকর্ডেড টান ভেসে উঠল, আর সঙ্গে সঙ্গে রেশমি গলা খুললেন, প্রথম সা-রেগা-মা…—না, এটা কেবল রাগ মেঘমল্লার নয়, এটা যেন এক নারীর যাত্রা, হারিয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে ফিরে পাওয়ার এক প্রতিধ্বনি। প্রতিটি কমল স্বর যেন কোনও দুঃখ থেকে উঠে আসা সাহস, প্রতিটি গমক যেন জীবনের বাঁক।

গান শেষ হতেই অডিটোরিয়ামে যেন কেউ নিঃশ্বাস ছাড়তে ভুলে গিয়েছিল এতক্ষণ। তারপর একসাথে উঠল করতালির ঝড়—কেউ দাঁড়িয়ে পড়ল, কেউ চোখ মুছল, কেউ বা ফোন বের করে মুহূর্ত ধরে রাখল। রেশমি চোখ বুজে বসে রইলেন কিছুক্ষণ—তাঁর শরীর স্থির, কণ্ঠ নিঃশব্দ, কিন্তু ভেতরে এক উথাল-পাথাল নদী বয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তাঁর কণ্ঠের গুণ নয়, তাঁর সাহসকেই শ্রোতারা অনুভব করল। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করলেন, কোনও কথা বললেন না—শুধু একবার চোখ তুলে অডিটোরিয়ামের শেষ সারিতে তাকালেন, যেখানে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিলেন অরিন্দম, নিশ্চুপ, কিন্তু দু’চোখ ভরা এক অসম্পর্কিত অহংকার নিয়ে। রেশমি বুঝলেন, আজ তাঁর গান, তাঁর সুর, তাঁর নির্ভরতা—সবকিছুর মধ্যেই মিশে গেছে তাঁর নিজস্বতা, যা তিনি কাউকে দিয়ে নয়, নিজে অর্জন করেছেন। এবার আর এই সুর থামবে না, কারণ এই সুর এখন কেবল সংগীত নয়—এই সুর এখন নারীর আত্মার উচ্চারণ।

এক সপ্তাহ কেটে গেছে জাতীয় মঞ্চে রেশমির পারফর্মেন্সের পর। তবু এখনও প্রতিদিন কেউ না কেউ ‘সুরআলো’র দরজায় এসে দাঁড়ায়—কেউ জানতে চায় ক্লাস কবে, কেউ শুধু বলে, “আপনার গান শুনে মনে হয়েছিল আমি আবার শুরু করতে পারি।” রেশমি জানেন, তাঁর জীবনের গল্প এখন তাঁর কণ্ঠ ছাড়িয়ে অনেকের ভেতর ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এই প্রশংসা, এই বিস্ময়ের ভিড়েও তাঁর ভিতরে একটা নির্জনতা থেকে গেছে—যেটা কোনওদিন তাঁকে একা ছেড়ে যায়নি। হয়তো সেই একাকীত্বই তাঁর গানকে এমন গভীর করেছে, হয়তো সেই অভাবটাই তাঁকে নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংলাপে বাধ্য করেছে। এক দুপুরে, যখন ক্লাস শেষ হয়ে গেছে, রেশমি জানলার ধারে বসে একটা সাদা কাগজে লিখতে শুরু করলেন—একটি চিঠি, কোনও ঠিকানাহীন প্রাপককে উদ্দেশ করে। তাঁর কণ্ঠে তখন তানপুরার নীরব ধ্বনি, তাঁর পাশে রাখা হারমোনিয়ামে আর চাপ নেই, কেবল লেখা—“আমার প্রিয়, জানো তো, আমি সুরে ফিরে এসেছি। তুমি হয়তো ভাবো, গান আবার কী ফিরিয়ে দিতে পারে? কিন্তু গান শুধু কণ্ঠ নয়, এটা আত্মার একটা চিৎকার, যা কেউ শুনে ফেলে যখন তার নিজের ভিতরেও একই ব্যথা বাজে। আমি সেই ব্যথা দিয়েই আজ নিজেকে সাজিয়েছি।”

চিঠিটা অনেকটা সময় ধরে লেখেন রেশমি। কখনও লেখেন, “তুমি যদি আমাকে সেই প্রথম দিন না বলতে, ‘তোমার কণ্ঠে যেন গোধূলি বাজে’, আমি হয়তো নিজেকে সেভাবে কখনও ভাবতেই পারতাম না।” আবার লেখেন, “আমি জানি, আমি শুধু একজন গৃহবধূ হয়ে থাকলেও কেউ প্রশ্ন করত না। কিন্তু আমি গান গাই, তাই প্রশ্ন ওঠে—কে আমি? কীসের জন্য?” চিঠির শেষ দিকে তিনি লিখলেন, “আজ আমার কণ্ঠে যে মেঘমল্লার বাজে, তার প্রতিটি স্বর যেন আমার অতীত, আমার প্রেম, আমার ভয়, আমার হারানোর গল্প… আর তার মাঝেই আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। হয়তো তুমি আজও জানো না, আমি আসলে তোমাকেই লিখছি। অথবা নিজেকেই। বা হয়তো সেই নারীদের, যারা এখনো চুপ করে আকাশ দেখে—গান না গেয়ে।”

সন্ধ্যে নামে। রেশমি জানলার ধারে দাঁড়িয়ে থাকেন। রিয়া পাশ থেকে বলে, “তুমি আবার মঞ্চে গাইবে তো, মা?” রেশমি একটু হাসেন, তারপর উত্তর দেন, “আমি এখন যেখানেই দাঁড়াই, সেটাই আমার মঞ্চ। আমি এখন শুধু গান গাই না, আমি নিজের মতো বাঁচি।” সেই রাতে তিনি আবার হারমোনিয়াম খুলে বসেন। রিয়া জানালার ধারে বসে। অরিন্দম ড্রইংরুমে আসেন, শব্দ না করে পাশে বসেন। এবং প্রথমবার, খুব আস্তে বলেন, “তোমার গান… আমার চুপ থাকা ভেঙে দিয়েছে।” রেশমি কিছু বলেন না, তাঁর গলা দিয়ে ধীরে গড়িয়ে আসে এক নতুন আলাপ—রাগ না, ধ্রুপদ না, আধুনিকও নয়—এটা রেশমির নিজের সৃষ্টি, এক জীবনসঙ্গীত। যেটা কোনও পাঠ্যক্রমে শেখা যায় না, কোনও স্কেলের মধ্যে বাঁধা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়—একটা নারী যখন নিজের ভয় পেরিয়ে গলা তোলে, তখন সেই কণ্ঠে গোটা পৃথিবীর কান পেতে শোনার মতো কিছু থেকে যায়। আর সেটাই হয়ে ওঠে চিরন্তন… এক মেঘমল্লার।

শেষ

 

1000033708.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *