সুদীপ্ত নাথ
১
গ্রামের সকালের সূর্যটি কেবল ঢেউ খেলছিল ধানক্ষেতের ওপর, যখন গ্রামের মঞ্চে একটি অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করল। সবাই জানত, আজ কিছু অস্বাভাবিক ঘটতে চলেছে। ঠিক তখনই, হঠাৎই মঞ্চের মাঝখান থেকে একটি গভীর, ঝাঁঝালো কণ্ঠে ঘোষণা হল—“আমার জন্যে পাত্রী চাই!” শব্দগুলো যেন চারপাশের সব কিছুকে থামিয়ে দিয়ে অদ্ভুত এক স্থিরতা তৈরি করল। গ্রামের লোকেরা প্রথমে হতবাক হয়ে যায়, কেউ খালি চোখে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকে, কেউ আবার ধীরে ধীরে পেছনে সরে আসে। কৌতূহল আর ভয়ের মিশ্রণে সব চোখ মঞ্চে। কেউ হাসি থামাতে পারছিল না, আবার কেউ ভয়ে কাঁপছে। বুড়ো মজুমদার, যিনি গ্রামের খবরাখবরের দায়িত্বে ছিলেন, প্রথমে অবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে, তারপর ঢাক-ঢোলের সঙ্গে খবরটি সবখানেই ছড়িয়ে দিল। গ্রামের প্রতিটি গলিপথ, বাড়ি, দোকান—সব জায়গায় লোকজন আলোচনা শুরু করল। কেউ বলল, “ভূতরাজ কি সত্যিই বিয়ে করতে চায়?” আবার কেউ ব্যঙ্গ করে বলল, “অবশ্যই, এখন ভূতরাও সময়ে সময়ে নিঃসঙ্গ নয়।”
ভয়ের সঙ্গে মিশে গ্রামের লোকেরা নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখাল। কেউ কেউ ভয়কে হাসিতে রূপান্তর করতে চাইল। ছোট ছোট ছেলেরা মঞ্চের চারপাশে ছুটে ঘুরতে লাগল, যেন কেউ তাদেরকে লক্ষ্য করে। মেয়েরা একে অপরের কাঁধে হাত রাখে, চোখে কৌতূহল আর একটু ভয় লুকিয়ে। বুড়ো মজুমদারের নেতৃত্বে গ্রামের সবাই মিলে মঞ্চ সাজাতে লাগল, ঢাক-ঢোল নিয়ে কৌতুকপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হল। গ্রামের মানুষজনের মনে শুরু হল নানা ধরনের কল্পনা—ভূতের পাত্রী কেমন হতে পারে? সে কি মানুষের মতো দেখতে হবে নাকি সে ভূতের মতোই অদৃশ্য? এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে হাসি, বিস্ময়, এবং অল্প ভয়ের মিশ্রণ যেন পুরো গ্রামকে এক অদ্ভুত উত্তেজনায় ভরে দিল। বৃদ্ধরা গল্প বলছিলেন, “এই গ্রামে আগে কখনো এমন ঘোষণা শোনা যায়নি।” তাদের কথায় এমনই মনে হচ্ছিল যেন অতীতের সব ভুতুড়ে গল্প এখন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
গ্রামের প্রতিটি মানুষ এই ঘোষণা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প শেয়ার করতে লাগল। কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করল, আবার কেউ কৌতূহল নিয়ে ভবিষ্যৎ কল্পনা করল। বুড়ো মজুমদারের সঙ্গে কয়েকজন তরুণ মঞ্চে চড়ে ওঠার সাহস পেল এবং তারা ভূতের বক্তব্যকে আরও নাটকীয় করে তুলল। ঢাকের তাল মিলিয়ে পুরো গ্রাম যেন এক উত্সবমুখর পরিবেশে ভরে গেল, যেখানে ভয় আর হাসি একইসাথে চলছিল। মঞ্চের ভেতরে এবং বাইরে যে আবহ সৃষ্টি হল, তা ছিল এক অদ্ভুত মিশ্রণ—ভূতের আকস্মিক উপস্থিতি গ্রামের সাধারণ জীবনে এক নতুন রঙ যুক্ত করল। প্রতিটি দৃশ্যে লোকেরা যেন মঞ্চের সঙ্গে জীবনের মিল খুঁজে পেল। শিশুদের কৌতূহল, বৃদ্ধদের অভিজ্ঞতার গল্প, যুবকদের চটুল মন্তব্য—সব মিলিয়ে মঞ্চটি হয়ে গেল গ্রামের হৃদয়ের কেন্দ্রবিন্দু। দিন শেষের দিকে, সমস্ত গ্রামের মানুষ এই একমাত্র ঘটনার দিকে তাকিয়ে থাকল, হাসি, ভয় এবং আগ্রহের এক অদ্ভুত মিশ্রণে, যে ঘটনা তাদের জীবনে অমলিন ছাপ রেখে যাবে।
২
অ্যাখস্মিক ভূতের ঘোষণা পরবর্তী দিনগুলোতে পুরো গ্রামে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। প্রতিটি গলিপথ, দিকপাল, বাড়ির আঙিনা, চাষের জমি—সবখানে এখন শুধু ভূতের বিয়ে নিয়ে আলোচনা। সকালের আলো ফুটতেই মানুষজন জমায়েত হতে শুরু করল। কেউ বলতে থাকে, “ভূতের বউ হলে কি রাত জাগা লাগবে? রাতের অন্ধকারে ভূতের সঙ্গে কেমন চলাফেরা হবে?” হাসি-ঠাট্টার মধ্যে কিছু বাচ্চা নিজেদের অদ্ভুত কল্পনায় মাতাল হয়ে যায়, কেউ বলল, “হয়তো ভূত রাতে ঘুমোয় না, তাহলে বউকেও রাত্রি জাগাতে হবে।” অন্যদিকে, বৃদ্ধরা শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করলেন, কেউ বলল, “যদি সত্যিই একটি ভূতের বিয়ে হয়, তবে তার প্রাকৃতিক শক্তি আর অদৃশ্যতা বিবেচনা করা উচিত। বউকে সাহসী হতে হবে, ভয়কে জয় করতে হবে।” গ্রামের মেয়েরা নিজেদের মধ্যে গল্প গড়ে তুলল—কেন ভূত শুধুই একা থাকে, তার জীবনে কী অভাব আছে, এবং পাত্রী আসলে তার সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবে। কেউ আরও কৌতুক করতে গিয়ে বলল, “হয়তো ভূতের সঙ্গে বিয়ে করলে রোজ সকালে স্বপ্নের মধ্যে চিঠি পেতে হবে।” এই সমস্ত কথাবার্তায় গ্রামের মানুষজন হাসি আর কৌতুকের মধ্যে নিজেদের আবেশ হারাচ্ছে, আর কেউ কেউ ভয়ে একটু পিছিয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গ্রামের তরুণরা এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে মজার চোখে দেখছিল। তারা মঞ্চে ছোট নাটক করতে লাগল, যেখানে ভূত এবং তার পাত্রীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কৌতুকপূর্ণ দৃশ্য নির্মিত হলো। কেউ বলল, “পাত্রীকে ভূতের সঙ্গে বসে চা খেতে হবে, আর তার চায়ের কাপ যদি উড়ে যায়, ভূত হয়তো রাগ করবে।” হাসি আর চমকে ওঠার মধ্যে গ্রামের সবাই নিজেদের অভিজ্ঞতা ও কল্পনায় মিশিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিসর তৈরি করছিল। কিছু মানুষ শর্তও স্থাপন করল—পাত্রীকে অবশ্যই সাহসী হতে হবে, ভয়ের সঙ্গে খেলতে হবে, আর ভূতের অদ্ভুত শক্তি মান্য করতে হবে। কেউ বলল, “পাত্রী যদি খুব ভয় পায়, ভূত হয়তো তার সঙ্গে আর বাঁচবে না।” এই সমস্ত কথাবার্তায় কৌতুক, ভয়, কৌতূহল—সবই মিশে এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করল, যা গ্রামের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি। বুড়ো মজুমদার এই সমস্ত কৌতুক শুনে নিজে হেসে ফেললেন, আবার ভাবলেন, কীভাবে এই ঘটনাকে গ্রামের মজার এবং শিক্ষণীয় মুহূর্তে রূপ দেওয়া যায়।
অবশেষে, গ্রামের প্রতিটি মানুষ নিজেদের মতামত প্রকাশ করার মাধ্যমে ভূতের বিয়ের এই অদ্ভুত পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিতে শুরু করল। ছোট ছেলেরা ভূতের সঙ্গে বিয়ে করার কল্পনা করে খেলাধুলা করছিল, মেয়েরা নিজেদের সাহস যাচাই করতে লাগল, বৃদ্ধরা গল্প বলছিলেন, আর যুবকরা নাটক করে গ্রামের মনোরঞ্জন নিশ্চিত করছিল। কেউ বলল, “ভূতের বউ যদি সাহসী হয়, তবে পুরো গ্রাম তার গল্প মনে রাখবে।” আরেকজন যোগ করল, “আর যদি না হয়, তবে ভূতের আকর্ষণ কমবে না, বরং আরও কৌতুকপূর্ণ হবে।” এই সমস্ত আলাপচারিতায় গ্রামবাসী বুঝতে পারল, যে এই অদ্ভুত ঘোষণা শুধুই ভয় নয়, বরং এক অদ্ভুত আনন্দ, কৌতুক এবং সাহসের পরীক্ষা। মঞ্চের চারপাশে মানুষের চিত্তাকর্ষক উত্তেজনা, হাসি আর ভয়ের সংমিশ্রণ এক নতুন সংস্কৃতির সূচনা করল—যেখানে ভূতের বিয়ে কেবল গল্প নয়, বরং গ্রামের জীবনের অংশ হয়ে উঠল। এই অধ্যায়ের শেষে, গ্রামের সবাই এক কথায় মনে করল, যে এই ঘটনা তাদের জীবনে দীর্ঘ সময়ের জন্য হাসি, কৌতুক, আর এক অদ্ভুত আশঙ্কা নিয়ে থাকবে।
৩
ভূতের আকস্মিক ঘোষণার পর গ্রামের মানুষের মধ্যে কৌতুক এবং উত্তেজনার মিশ্রণ আরও ঘন হয়ে উঠল। মঞ্চে বুড়ো মজুমদারের নেতৃত্বে এখন শুরু হল ভূতের জন্য পাত্রী খোঁজার আনুষ্ঠানিকতা। গ্রামের নারীরা একে কৌতুকপূর্ণ উদ্দীপনা হিসেবে নিল, কেউ কেউ আসলেই মজা করতে মঞ্চে আসল, আবার কেউ বলল, “দেখা যাক, ভূতের সঙ্গে বিয়ে মানে কী কাণ্ড।” তাদের চোখে ছিল এক অদ্ভুত ঝিলিক—ভয় আর কৌতুকের এক অনন্য মিশ্রণ। গ্রামের ছোট ছোট মেয়েরা নিজেদের বোল-চাল, সাজ-সজ্জা এবং অভিনয় দক্ষতা দেখাতে চাইল। কেউ বলল, “আমি ভূতের সঙ্গে রাতে গল্প করতে পারি,” আবার কেউ বলল, “ভূত যদি অদৃশ্য থাকে, তবে আমি কীভাবে তার সঙ্গে নাচবো?” এই সমস্ত মজার কথাবার্তায় মঞ্চ এবং মঞ্চের বাইরে গ্রামের সবাই হাসি আর উত্তেজনার মধ্যে ডুবে গেল। বুড়ো মজুমদারও মঞ্চে উপস্থিত নারীদের আবেদনের দিকে মনোযোগ দিলেন, মাঝে মাঝে হাসি থামাতে না পেরে ঢাক-ঢোলের তাল মিলিয়ে আরও নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করলেন।
এদিকে, কিছু নারীরা আসলেই কৌতুকের ছলে ভূতের পাত্রী হতে আগ্রহী হল। তারা মঞ্চে এসে অভিনয় শুরু করল—ভয়কে অভিনয়ে রূপান্তর করা, অদ্ভুত ভঙ্গিমা গ্রহণ করা এবং ভূতের সঙ্গে কল্পনায় কথোপকথন চালানো। এই পুরো প্রক্রিয়ায় গ্রামের মানুষজন তাদের প্রতিটি দৃশ্য দেখছিল, কেউ হেসে উঠল, কেউ অবাক হয়ে দেখছিল। এদিকে গ্রামের কিছু ডাইনিও এই খোঁজে আগ্রহী হয়ে উঠল। তারা মনে করল, ভূতের মতো অদৃশ্য শক্তি এবং রহস্যময় চরিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়তো তাদের জন্যও আকর্ষণীয়। ডাইনিরা তাদের কৌশল, ছদ্মবেশ এবং ছোট ছোট যাদুকরী প্রতিভা প্রদর্শন করতে লাগল। তারা নিজেদের উপস্থিতি এমনভাবে প্রকাশ করল যেন মঞ্চটি এক রহস্যময় নৃত্যশালা হয়ে উঠেছে, যেখানে ভূতের সঙ্গে বিয়ে শুধুমাত্র কৌতুক নয়, বরং এক রহস্যময় খেলা।
গ্রামের সমস্ত মানুষ এই খোঁজ এবং আবেদনের পুরো প্রক্রিয়ায় মিশে গেল। কেউ নিজেদের আবেদনের কৌশল নিয়ে ভাবল, কেউ গল্পের মাধ্যমে নিজেদের সাহস দেখাল, কেউ আবার নাটকীয় উপায়ে ভূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করল। মঞ্চে আবেদনের পাশাপাশি গ্রামের মানুষজন তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়ে পরিবেশকে আরও রঙিন করল—কেউ বলে, “পাত্রীকে অবশ্যই সাহসী হতে হবে, ভয়কে জয় করতে হবে,” আবার কেউ বলল, “যদি সে খুব ভয় পায়, তবে কৌতুক আরও বেশি হবে।” এই সমস্ত আলাপচারিতার মধ্যে গ্রামের যুবকরা নাটকীয় দৃশ্য উপস্থাপন করে পুরো প্রক্রিয়াকে মজার করে তুলল। বুড়ো মজুমদার এবং অন্যান্য প্রবীণরা হাসি আর বিস্ময়ের সঙ্গে এই অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করলেন। দিনের শেষে, গ্রামের সবাই একমত হল যে ভূতের পাত্রী খোঁজার এই ঘটনা শুধু মজার নয়, বরং গ্রামের মানুষকে এক অদ্ভুত আনন্দ, উত্তেজনা এবং কৌতুকের এক নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে। মঞ্চ এবং গ্রামের আঙিনা এখন শুধু গল্পের অংশ নয়, বরং এক প্রাণবন্ত সামাজিক মঞ্চ হয়ে উঠেছে, যেখানে ভয়, কৌতুক, সাহস এবং রহস্য একসাথে মিলিত হয়েছে।
৪
ভূতের প্রার্থীদের খোঁজার পর মঞ্চে অবশেষে সেই দিন এলো, যখন ভূতরাজ প্রথম কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হলো। গ্রামের সবাই উত্তেজনার সঙ্গে মঞ্চের চারপাশে জমায়েত হয়েছে। সূর্যের আলো মৃদু হেলে আসছিল, আর মঞ্চে ভয় আর কৌতুকের এক অদ্ভুত মিশ্রণ বিরাজ করছিল। প্রথম প্রার্থী ধীরে ধীরে মঞ্চের দিকে এগিয়ে এল, চোখে ভয় আর কৌতূহলের একসাথে ঝিলিক। ভূতরাজ ধীর ও রহস্যময় ভঙ্গিতে তাদের অভ্যর্থনা জানাল, কিন্তু তার অদৃশ্যতায় এবং অদ্ভুত উপস্থিতিতে প্রার্থী দ্রুত পিছু হটে গেল। তারপর আরেকজন প্রার্থী চেষ্টা করল, কিন্তু সে-ও কিছুক্ষণ দেখা করার পর কেঁপে উঠে পালিয়ে গেল। প্রতিটি প্রার্থীর পালানোর দৃশ্য গ্রামের মানুষদের মধ্যে কৌতুকের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। বুড়ো মজুমদার হেসে বললেন, “দেখা যায়, সত্যিই সাহসী কেউ থাকল না।” গ্রামের লোকেরা আনন্দে কণ্ঠস্বর মিলিয়ে হেসে উঠল, আবার কেউ বলল, “ভূতের বউ খুঁজে পাওয়া সত্যিই সহজ হবে না।”
প্রথম কয়েক প্রার্থীর পালানোর পর গ্রামের কৌতুক আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তারা মঞ্চের চারপাশে দাঁড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগল। কেউ বলল, “যদি কেউ সাহসী না হয়, হয়তো ডাইনিই হবে তোমার বউ!” এই মন্তব্যে পুরো গ্রামে চিৎকার আর হাসির ঝড় উঠল। মঞ্চে থাকা ডাইনিরাও এই কথায় উৎসাহিত হল। তারা মনে করল, ভূতের মতো অদ্ভুত চরিত্রের সঙ্গে তাদের কৌশল, ছদ্মবেশ এবং জাদুকরী ক্ষমতা প্রয়োগ করার এক অনন্য সুযোগ এসেছে। ডাইনিরা মঞ্চে নিজেরা ধীরে ধীরে এগিয়ে এল, তাদের উপস্থিতি এমনভাবে প্রকাশ করল যেন মঞ্চটি এখন এক রহস্যময় নৃত্যশালা হয়ে গেছে, যেখানে কৌতুক, ভয় এবং সাহস একসাথে মিলিত হয়েছে। গ্রামের তরুণ-তরুণীরা ডাইনির এই দৃশ্যটি দেখে হেসে উঠল, কেউ কেউ নিজেরাই সাহস পরীক্ষা করতে চাইল। মঞ্চে উপস্থিত প্রতিটি মানুষ একটি অদ্ভুত উত্তেজনায় ভরে গেল, যেখানে ভয়, কৌতুক, এবং রহস্য একসাথে মিলিত হয়েছে।
শেষে, ভূতরাজ এবং ডাইনির প্রথম সাক্ষাত সম্পন্ন হল। যদিও প্রাথমিক প্রার্থীরা সবাই ভয়ে পালিয়েছে, এই ঘটনার মাধ্যমে পুরো গ্রাম এক নতুন ধরণের আনন্দ ও উত্তেজনার অভিজ্ঞতা পেল। বুড়ো মজুমদার এবং অন্যান্য প্রবীণরা এই সমস্ত দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করলেন, মাঝে মাঝে হেসে ফেললেন, আবার কখনও কিছু চিন্তাশীল মন্তব্য করলেন। গ্রামের মানুষজন বুঝতে লাগল যে ভূতের বিয়ের এই খোঁজ শুধু মজার নয়, বরং সাহস, কৌতুক এবং রহস্যের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। মঞ্চ এখন শুধু একটি স্থানের নাম নয়; এটি হয়ে উঠেছে গ্রামের জীবনের প্রাণবন্ত কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে প্রতিটি দৃশ্য মানুষের কৌতুক, ভয় এবং কল্পনার এক চমকপ্রদ মিশ্রণ তৈরি করছে। দিনশেষে, পুরো গ্রাম একসাথে বসে এই নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করল, হাসি আর অদ্ভুত উত্তেজনায় মিশে। ডাইনির আগমনের সম্ভাবনা, প্রার্থীদের সাহস পরীক্ষা, এবং ভূতের রহস্যময় উপস্থিতি—সব মিলিয়ে গ্রামবাসীর মনে এক অদ্ভুত আনন্দ এবং উত্তেজনার ছাপ রেখে গেল।
৫
গ্রামের মঞ্চে সেই দিনটি আসে, যখন ডাইনির আসল পরিচয় ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। পুরো গ্রাম উত্তেজনায় ভরে উঠল, কারণ মঞ্চের ওপর শুধুমাত্র ভূতের উপস্থিতিই নয়, বরং ডাইনির রহস্যময় চরিত্রও কেন্দ্রবিন্দুতে। ডাইনিটি ধীরে ধীরে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসে, তার সাজ-সজ্জা এবং মেকআপ ছিল একেবারে অদ্ভুত, কিন্তু চোখে ঝিলিক ছিল সাহসের। গ্রামের লোকেরা চমকে তাকিয়ে থাকে—এতো সাহসী একজন নারী কীভাবে এত সহজে মঞ্চের সামনে দাঁড়াতে পারছে! তারা বুঝতে পারল যে, এই ডাইনিটি শুধুমাত্র কৌতুকপূর্ণ নয়, বরং এক শক্তিশালী চরিত্রও। মেকআপ-প্রেমী হওয়া সত্ত্বেও তার ভয় প্রকাশ এতোটাই স্বাভাবিক এবং মানুষের মত, যে কেউ তাকে ভয় দেখাতে পারবে না। সে শুধু নিজের সাহসকে মঞ্চের আলোকে ঝকঝক করে তুলে ধরল। ভূতরাজ প্রথমে বিস্মিত হয়—কেন এমন একজন মানবী এত সহজভাবে তার সামনে দাঁড়িয়েছে। তার অদ্ভুত শক্তি, অদৃশ্যতায় মানুষের ভয় সৃষ্টি করার ক্ষমতা—সবকিছু যেন ব্যর্থ হয়ে গেল। কিন্তু তারপর তিনি ধীরে ধীরে হেসে উঠল, কারণ ডাইনির সাহস, মজা এবং কৌতুক মিশ্রিত উপস্থিতি তাকে অভূতপূর্ব আনন্দ দিল।
ডাইনির উপস্থিতি পুরো মঞ্চ এবং গ্রামের পরিবেশকেই নতুন রঙে রাঙিয়ে দিল। তার সাহস, অভিনয়, এবং ভয়ের মধ্যে ভয় দেখানোর অক্ষমতা—সব মিলিয়ে গ্রামের লোকেরা এক অদ্ভুত আনন্দের মধ্যে নিমগ্ন হল। কেউ বলল, “এমন সাহসী মেয়ে, যে ভূতকেও হাসি এনে দিতে পারে!” আরেকজন যোগ করল, “ডাইনিই হবে সেই পাত্রী, যার সঙ্গে ভূতরাজ সত্যিই আনন্দ পাবে।” ডাইনির মেকআপ এবং অদ্ভুত সাজ-সজ্জা শুধু তার সাহসকে দেখায়নি, বরং মঞ্চে উপস্থিত সমস্ত মানুষের কৌতুকের মনোবলও বাড়িয়েছে। গ্রামের যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা—সবাই মিশ্র অনুভূতিতে উপস্থিত, কেউ ভয়কে কৌতুকে রূপান্তর করতে চেষ্টা করছে, কেউ তার উপস্থিতিতে মুগ্ধ। ডাইনির অদ্ভুত নাচ, হাসি এবং মজার কৌশল ভূতের সাথে প্রথম সাক্ষাতকে এক অসাধারণ, হাস্যকর, এবং রহস্যময় অভিজ্ঞতায় পরিণত করল।
শেষমেশ, ডাইনির পরিচয় প্রকাশ পেয়ে এবং তার সাহস, মজা এবং মানবিক উপস্থিতি ভূতরাজকে মুগ্ধ করল। ভূতরাজ বুঝল যে এই মেয়েটি শুধু একটি পাত্রী নয়, বরং তার নতুন মজার, আনন্দদায়ক, এবং কৌতুকপূর্ণ যাত্রার অংশ। পুরো গ্রাম এই ঘটনার সাক্ষী হল—ভয়, সাহস, কৌতুক এবং মানবিক মাধুর্যের এক মিশ্রণ। বুড়ো মজুমদার মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে হেসে বললেন, “দেখতে পাচ্ছো, ডাইনিই হচ্ছে সেই পাত্রী, যাকে নিয়ে ভূতরাজ সত্যিই আনন্দ পাবে।” গ্রামের মানুষজনও এই মুহূর্তে হেসে উঠল, কারণ তারা বুঝতে পারল, যে শুধুমাত্র ভয় নয়, বরং সাহস, কৌতুক এবং মজাই হল সেই শক্তি, যা সত্যিকারের সম্পর্ককে স্থিতিশীল করে। মঞ্চ এবং গ্রামের আঙিনা এখন শুধু কৌতুকপূর্ণ ভয়ের কেন্দ্র নয়, বরং এক আনন্দময় এবং সাহসী অভিজ্ঞতার মঞ্চ হয়ে উঠেছে, যা প্রতিটি চরিত্রকে নতুন রঙে আলোকিত করেছে।
৬
ডাইনির পরিচয় প্রকাশের পর পুরো গ্রাম এখন বিয়ের প্রস্তুতিতে মেতে উঠল। গ্রামের মঞ্চ, গলিপথ এবং আঙিনা—জায়গায় এক অদ্ভুত আনন্দ ও উত্সবের পরিবেশ বিরাজ করল। বুড়ো মজুমদার নেতৃত্বে গ্রামবাসী ঢাক-ঢোল বের করল, আলো ঝলমলে সাজানো হল, রঙ-বেরঙের পতাকা এবং ফুল দিয়ে পুরো মঞ্চকে আলোকিত করা হল। প্রতিটি ঘরে, আঙিনায়, রাস্তার ধার ধরে মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়ল—কেউ ফুলের মালা তৈরি করল, কেউ আলোর ঝলক সাজাল, কেউ মঞ্চের পাশের ছোট ছোট গাছপালা ও বটবৃক্ষকে রঙিন কাপড় দিয়ে মোড়ানো শুরু করল। গ্রামের শিশুদের চিৎকার, বৃদ্ধদের হাসি, যুবক-যুবতীদের চঞ্চলতা সব মিলিয়ে এক অনন্য উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করল। বাতাসে কৌতুক, উত্তেজনা এবং আনন্দের এক অদ্ভুত মিশ্রণ ছিল, যা প্রতিটি মানুষকে প্রেরণা দিচ্ছিল। মঞ্চে উপস্থিত ভূতরাজ ও ডাইনিও এই আনন্দময় পরিবেশের অংশ হয়ে গেল, তাদের চারপাশের আলো-সাজ, গ্রামের মানুষের উৎসাহ এবং প্রতিটি ছোট ছোট প্রস্তুতি—সবই তাদের অনুভূতিকে আরও জীবন্ত করে তুলল।
প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ভূতরাজ এবং ডাইনির মধ্যে প্রথম স্পর্শকাতর সম্পর্কের সূচনা হল। তারা ধীরে ধীরে একে অপরকে বুঝতে চেষ্টা করল। ভূতরাজ, যিনি সাধারণত রহস্যময় ও অদৃশ্য থাকতেন, এই প্রথমবার তার হাসি দিয়ে ডাইনির সাহস এবং আত্মবিশ্বাসকে মূল্যায়ন করল। ডাইনির চোখে ধরা পড়ল কৌতুক, মজা, এবং মানবিক সৌন্দর্য—যা ভূতরাজকে প্রথমবার সত্যিই আনন্দ দিচ্ছিল। তারা কথার মাধ্যমে নয়, বরং ছোট ছোট অঙ্গভঙ্গি, হাসি, এবং একে অপরের দৃষ্টি দিয়ে সংযোগ স্থাপন করল। ডাইনির আত্মবিশ্বাস ভূতরাজকে মুগ্ধ করল, আর ভূতের হাসি ডাইনির সাহসকে আরও উজ্জ্বল করে তুলল। মঞ্চে তৈরি আবহটা এমন এক আনন্দময় এবং সমন্বিত অনুভূতি সৃষ্টি করল, যেখানে ভয় আর সাহস, কৌতুক এবং আন্তরিকতা একসাথে মিলিত হলো।
গ্রামের প্রতিটি মানুষ এই বিয়ের প্রস্তুতি দেখে আনন্দিত এবং মুগ্ধ। কেউ বলল, “দেখতে পাচ্ছো, ভূতরাজ আর ডাইনির সংযোগ কতো সুন্দরভাবে গড়ে উঠছে।” আরেকজন যোগ করল, “হাসি এবং সাহসের মিলনেই আসল আনন্দ।” বুড়ো মজুমদার মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে হেসে বললেন, “এভাবেই বিয়ে হওয়া উচিত—শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, আনন্দ, সাহস, এবং একে অপরকে বোঝার মধ্য দিয়ে।” গ্রামের যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, ছোট বাচ্চারা—সবাই এই মুহূর্তে নিজেদের অংশীদার মনে করল। ভূতরাজের রহস্যময়তা এবং ডাইনির সাহস একে অপরকে পুরোপুরি পরিপূরক করল। মঞ্চের চারপাশে বাজছে ঢাক-ঢোল, ঝলমলে আলো, এবং মানুষের কৌতুকময় হাসি—সব মিলিয়ে তৈরি হল এক চমৎকার, প্রাণবন্ত, এবং আনন্দময় আবহ। এই অধ্যায়ে শুধুমাত্র বিয়ে নয়, বরং সম্পর্কের সূচনা, সাহসের প্রকাশ, এবং গ্রামের মানুষের আনন্দময় অংশগ্রহণের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত ফুটে উঠল।
৭
বিয়ের প্রস্তুতির আনন্দের মাঝে গ্রামের রাত নামে এক অদ্ভুত উত্তেজনার সঙ্গে। মঞ্চে ঝলমলে আলো এবং ঢাক-ঢোলের সুর থমকে যাওয়া সকাল শেষ হয়ে, এখন রাতের নীরবতা যেন প্রত্যেককে শূন্যে ভাসাচ্ছিল। হঠাৎ, গ্রামের এক কোণে থাকা মোরগটি অতর্কিতভাবে ডাক দিল—“কুকু-রে কুকু-রে!” তার কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত ভয় এবং চাঞ্চল্য, যা গ্রামের মানুষের কৌতুকময় মনোবৃত্তিকে আরও উস্কে দিল। হঠাৎই ভূতরাজ, যিনি সাধারণত অদৃশ্যতার মাধ্যমে চুপচাপ চলাফেরা করতেন, লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করল। তার অদ্ভুত লাফ, অচেনা ভঙ্গি এবং আতঙ্কিত অবস্থা গ্রামের মানুষদের একসাথে হেসে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করল। মঞ্চের চারপাশে উপস্থিত সবাই হতবাক, আবার কেউ কেউ হাসির সঙ্গে তাদের চমকপ্রদ কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য করতে লাগল, “ভূত নিজেই ভয় পেয়েছে, এবার দেখো, ডাইনি তাকে শান্ত করতে পারবে কি না।”
ডাইনি, যিনি সাহসী এবং কৌতুকপূর্ণ উপস্থিতির জন্য পরিচিত, দ্রুত ঘটনাস্থলে এগিয়ে এল। সে বুঝল, ভূতরাজের অদ্ভুত লাফ এবং আতঙ্ক মূলত তার মজার আচরণের অংশ, কিন্তু এই পরিস্থিতি প্রয়োজনীয় শান্তি এবং সংযোগ আনতে পারে। ডাইনির কৌশল এবং উপস্থিতি এমনভাবে ছিল, যেন সে একদিকে যেমন ভূতের আতঙ্ক কমাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামের মানুষদের কৌতুকপূর্ণ আনন্দকে আরও বাড়াচ্ছে। সে ধীরে ধীরে ভূতরাজের দিকে এগিয়ে গেল, তার শান্ত এবং আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি ভূতরাজকে কিছুটা স্বস্তি দিল। ধীরে ধীরে ভূতরাজ বুঝল, এই মজার বাধা আসলে তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় এবং আনন্দময় করে তুলবে। ডাইনির সাহস, হাসি এবং কৌতুকপূর্ণ উপস্থাপনা—সব মিলিয়ে রাতের অদ্ভুত পরিস্থিতিকে এক চমৎকার এবং আনন্দদায়ক মুহূর্তে রূপান্তরিত করল।
গ্রামের মানুষজন এই অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হয়ে আনন্দ এবং বিস্ময়ে মুগ্ধ হল। কেউ বলল, “দেখো, ডাইনিই আছে, যার কারণে ভূতরাজও শান্ত হচ্ছে।” আরেকজন যোগ করল, “এই মজার বাধাই তো তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করছে।” বুড়ো মজুমদার হেসে বললেন, “হাসি, সাহস, এবং কৌতুক—এই তিনটি মিলিত হলে যে কোন পরিস্থিতিই আনন্দময় হয়ে ওঠে।” রাতের নীরবতা, মোরগের ডাক, ভূতরাজের অদ্ভুত লাফ, এবং ডাইনির সাহস— সব মিলিয়ে পুরো গ্রামে এক অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি করল। মঞ্চ, গ্রামের আঙিনা, এবং প্রতিটি গলিপথ এখন শুধু বিয়ের কেন্দ্র নয়; বরং ভয়, কৌতুক, এবং সাহসের এক প্রাণবন্ত মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই অধ্যায়ে, রাতের মজার বাধার মধ্য দিয়ে ভূতরাজ ও ডাইনির সম্পর্কের আরও গভীরতা ফুটে উঠল, এবং গ্রামের মানুষজন এই মুহূর্তের আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।
৮
বিয়ের দিন পুরো গ্রাম উৎসবমুখর হয়ে উঠল। মঞ্চ এবং গ্রামজুড়ে ঝলমলে আলো, রঙিন পতাকা, ফুল আর ঢাক-ঢোলের শব্দ মিলিয়ে এক অদ্ভুত আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করল। গ্রামের প্রতিটি মানুষ আগেভাগে জমায়েত হল, কেউ সাজসজ্জায় মেতে উঠল, কেউ বসে গল্প করতে লাগল, আবার কিছু ছেলে-মেয়ে মঞ্চের চারপাশে ছুটে ঘুরল। গ্রামের মানুষজনের কৌতুক, হাসি, এবং চমকপ্রদ মন্তব্য পুরো পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলল। কেউ বলল, “ডাইনির মেকআপ দেখেছো, পুরো মঞ্চে ঝলমল করছে!” আরেকজন হেসে যোগ করল, “ভূতের নাচ দেখ, এমন অদ্ভুত ভঙ্গি আগে কেউ দেখেনি।” গ্রামের প্রতিটি কোণ থেকে হেসে ওঠার আওয়াজ এবং আনন্দের কণ্ঠস্বর মিশে গেল—এ যেন এক বিশাল হুমরাহ, যেখানে ভয়, কৌতুক, এবং আনন্দ একসাথে মিলিত হয়েছে। বুড়ো মজুমদারও এই হাসি আর কৌতুকের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেললেন, মাঝে মাঝে ঢাক-ঢোলের তাল মিলিয়ে পুরো মঞ্চের পরিবেশকে আরও রঙিন করে তুললেন।
মঞ্চে উপস্থিত ভূতরাজ এবং ডাইনিও এই হুমরাহর অংশ হয়ে উঠল। ডাইনির মেকআপ, সাজসজ্জা, এবং সাহসিকতা গ্রামের মানুষদের মুগ্ধ করল। সে ধীরে ধীরে ভূতরাজের সঙ্গে নাচল, হাসল, আর তার সাহসিকতা দেখাল। ভূতরাজের অদ্ভুত নাচ, রহস্যময় হাসি, এবং ডাইনির আত্মবিশ্বাস—সব মিলিয়ে এক চমৎকার এবং মজার পরিবেশ সৃষ্টি করল। গ্রামের লোকেরা তাদের আচরণ দেখেও হেসে উঠল, কেউ বলল, “ভূত নিজেই আনন্দে মাতাল, আর ডাইনিও তার সঙ্গে মিশে গেছে।” আরেকজন যোগ করল, “দেখতে পাচ্ছো, মজা আর সাহস একসাথে মিললে কী চমৎকার আবহ তৈরি হয়।” মঞ্চে প্রতিটি দৃষ্টান্ত, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি, প্রতিটি হাসি—সবই গ্রামের মানুষের কৌতুকময় মনকে আরও উজ্জ্বল করে তুলল।
গ্রামের সমস্ত মানুষ এই বিয়ের হুমরাহর মধ্য দিয়ে আনন্দ এবং হাসির এক উচ্ছ্বাস অনুভব করল। কেউ ডাইনির মেকআপের রঙিন ছায়া নিয়ে হাসি পেল, কেউ ভূতের অদ্ভুত নাচের ভঙ্গিতে মজা পেয়েছে। বুড়ো মজুমদার হাসিমুখে বললেন, “এই হলো আসল আনন্দ—কৌতুক, সাহস, এবং ভয় একসাথে মিলিত হলে!” গ্রামের যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, শিশুরা—সবাই একসাথে এই মুহূর্তের আনন্দে মেতে উঠল। মঞ্চ এবং গ্রামের আঙিনা এখন শুধু বিয়ের স্থান নয়; বরং একটি প্রাণবন্ত এবং হাস্যরসপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি দৃশ্য মানুষের আনন্দ, কৌতুক, সাহস এবং ভয়ের এক চমৎকার মিশ্রণ তৈরি করছে। এই অধ্যায়ে, গ্রামের হুমরাহ শুধু বিয়ের আনন্দ নয়, বরং সমাজের একত্রিত শক্তি, কৌতুক এবং সাহসের উদযাপনও হয়ে উঠল।
৯
অপূর্ব আভায় মঞ্চ এবং পুরো গ্রামের আঙিনা সাজানো হয়েছিল—রঙিন বাতাসে ঝলমল, ফুলে-ফোলে মোড়ানো, আর ঢাক-ঢোলের শব্দ যেন প্রতিটি হৃদয়কে উত্তেজনায় ভরে দিচ্ছিল। গ্রামের মানুষজন ভিড় জমিয়েছিল, সবাই মুখে হাসি, চোখে কৌতুকের ঝিলিক নিয়ে। বুড়ো মজুমদার সঙ্গীতের তাল মিলিয়ে ঘোষণা করলেন, “আজ আমরা সাক্ষী হব ভূতের বিয়ে—এক অদ্ভুত, আনন্দময় এবং হাস্যরসপূর্ণ ঘটনার।” ঢাক-ঢোলের গর্জন, মানুষের চিৎকার, আর বাতাসে ফুলের সুবাস এক অদ্ভুত আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করল। মঞ্চের কেন্দ্রে দাঁড়ানো ভূতরাজ ও ডাইনি—দুজনের মধ্যকার অদ্ভুত মিলন, ভয় এবং সাহসের মিশ্রণ—পুরো পরিবেশকে জীবন্ত করে তুলল। গ্রামের সবাই কৌতুকের মাধ্যমে মঞ্চের চারপাশে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করল; কেউ বলল, “দেখো, ভূত নিজেই আনন্দে মাতাল, আর ডাইনিও তার সঙ্গে মিলেছে।” হাসি আর চমকে ওঠার মধ্যে পুরো মঞ্চ যেন এক উচ্ছ্বাসময় যাত্রাপথে পরিণত হয়েছে।
ভূতরাজ এবং ডাইনির প্রথম হাত ধরার মুহূর্তটি এক অদ্ভুত মিশ্রণ সৃষ্টি করল—ভয় আর কৌতুক, সাহস এবং আনন্দ একসাথে মিলিত হল। ডাইনির সাহস এবং ভূতরাজের রহস্যময় হাসি পুরো অনুষ্ঠানে জীবন্ততা আনল। তারা ধীরে ধীরে একে অপরের হাতে হাত দিল, চোখে চোখ রেখে, আর মঞ্চের আলো-ঝলমল এবং ঢাক-ঢোলের তাল মিলিয়ে তাদের আবহ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। গ্রামের মানুষজন তাদের প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি, হাসি, এবং সংলাপ দেখে আনন্দে মাতাল হল। কেউ বলল, “দেখো, এই মজার বিয়েটা কত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে!” আরেকজন যোগ করল, “ভূতরাজের হাসি এবং ডাইনির আত্মবিশ্বাস—এ মিলন যে এক চমৎকার দৃশ্য তৈরি করছে।” এই মুহূর্তে, শুধু বিয়ে নয়, বরং সাহস, কৌতুক, এবং সম্পর্কের মাধুর্য পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। মঞ্চে উপস্থিত প্রতিটি ছোট ছোট কৌতুকপূর্ণ মুহূর্ত—ভূতের অদ্ভুত ভঙ্গি, ডাইনির হাস্যরস—সব মিলিয়ে এক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করল।
শেষে, মজারভাবে বিয়ে সম্পন্ন হল। ঢাক-ঢোল বাজতে থাকল, গ্রামের মানুষজন আনন্দে মেতে উঠল, হাসি আর চিৎকারে পুরো আঙিনা ভরে গেল। বুড়ো মজুমদার হেসে বললেন, “দেখলেই বোঝা যায়, কৌতুক, সাহস এবং আনন্দের মিশ্রণে যে কোনো অনুষ্ঠান অসাধারণ হয়ে ওঠে।” গ্রামের যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, শিশুরা—সবাই এই মুহূর্তের আনন্দে অংশ নিল। ভূতরাজ আর ডাইনি একে অপরের সঙ্গে মিশে এক চমৎকার মিলন সৃষ্টি করল, যা শুধু মঞ্চের নয়, পুরো গ্রামের হৃদয়কে আনন্দিত করল। মানুষের কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য, হাসি, সাহস, এবং ভয়ের একসাথে মিলন—সব মিলিয়ে বিয়ের মূল অনুষ্ঠানকে একটি অমলিন আনন্দময় স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখল। রাতের শেষ আলো ঝলমল করতে থাকল, ঢাক-ঢোলের সুর এখনও বাজছিল, আর গ্রামের মানুষজনের আনন্দময় উচ্ছ্বাস এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল—যেখানে মজা, সাহস, ভয় এবং আনন্দ একসাথে মিলিত হয়েছে, এবং মঞ্চ ও গ্রাম দুই-ই হয়ে উঠল প্রাণবন্ত এবং হাস্যরসপূর্ণ।
১০
বিয়ের আনন্দময় মুহূর্ত শেষ হতেই গ্রামে শুরু হল নতুন জীবনের অদ্ভুত অধ্যায়। ভূতরাজ আর ডাইনি এখন একে অপরের সঙ্গে শুধু মিলিত নয়, বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে আনন্দ এবং কৌতুকের মাধ্যমে উদযাপন করতে লাগল। গ্রামের রাতগুলোতে তারা একসাথে ছোট ছোট দুষ্টুমি করত—মঞ্চের চারপাশে অদ্ভুত ছায়া তৈরি করা, বাতাসে ফুল উড়িয়ে দেওয়া, বা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গিয়ে গ্রামের মানুষকে চমকে দেওয়া। ডাইনির সাহস এবং ভূতরাজের অদ্ভুত উপস্থিতি মিলিয়ে পুরো গ্রামের আঙিনা যেন একটি হাস্যরসপূর্ণ এবং ভৌতিক মঞ্চে পরিণত হয়। গ্রামবাসী প্রাথমিকভাবে কিছুটা ভয় পেলেও দ্রুত হাসি আর আনন্দে ভরে যায়, কারণ প্রতিটি ঘটনা ছিল মজার এবং কৌতুকপূর্ণ। কেউ বলল, “দেখছো, ভূতরাজ আর ডাইনির দুষ্টুমি কতো আনন্দদায়ক!” আরেকজন যোগ করল, “হাসি আর ভয়ের এমন মিশ্রণ আগে কখনো দেখিনি।” এই মুহূর্তে গ্রামবাসীর আনন্দ, কৌতুক এবং উত্তেজনা মিলে এক অদ্ভুত ও চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করল, যা গ্রামের প্রতিটি মানুষের মনে স্মৃতিময় হয়ে উঠল।
ভূতরাজ আর ডাইনি কেবল দুষ্টুমি করতই না, তারা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝত। ভূতরাজের রহস্যময় হাসি এবং অদ্ভুত শক্তি, ডাইনির সাহস এবং মজা—সব মিলিয়ে তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় এবং আনন্দময় হয়ে উঠল। তারা একে অপরের সঙ্গে ছোট ছোট খেলার মাধ্যমে মজার চ্যালেঞ্জ তৈরি করত, যেমন হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গিয়ে একে অপরকে খুঁজে বের করা, বা মঞ্চে অদ্ভুত নাচ দেখানো। ডাইনির মেকআপ, সাজসজ্জা এবং সাহসিকতা ভূতরাজের হাসি আরও উজ্জ্বল করে তুলত। গ্রামের মানুষজন এই সব দেখেও হেসে উঠত, কেউ কেউ ভাবত, “দেখতে পাচ্ছি, এই মজার দুষ্টুমিই তাদের নতুন জীবনের আনন্দ।” এই সময়ে গ্রাম একটি প্রাণবন্ত মঞ্চে পরিণত হয়, যেখানে ভয়, সাহস, কৌতুক এবং আনন্দ একসাথে মিলিত হয়েছে, এবং প্রতিটি রাতকে বিশেষ করে তুলেছে।
শেষমেশ, ভূতরাজ আর ডাইনি মিলে গ্রামে এক নতুন ধরণের জীবন শুরু করল—হালকা ভৌতিক, হাস্যরসপূর্ণ এবং আনন্দময়। গ্রামের মানুষজন এখন শুধু তাদের কৌতুকপূর্ণ দুষ্টুমির সাক্ষী নয়, বরং প্রতিদিনের আনন্দ এবং সাহসের অংশ হয়ে উঠল। বুড়ো মজুমদার হেসে বললেন, “দেখেছো, ভূতের বিয়ে সত্যিই এক হাসির অধ্যায়।” রাতের বাতাসে হেসে ওঠা মানুষের কণ্ঠস্বর, ঢাক-ঢোলের মৃদু প্রতিধ্বনি, ভূতরাজ এবং ডাইনির দুষ্টুমি—সব মিলিয়ে গ্রাম এবং মঞ্চ দুই-ই হয়ে উঠল এক চমৎকার, প্রাণবন্ত এবং আনন্দময় জায়গায়। এই অধ্যায় শুধু একটি গল্পের সমাপ্তি নয়; বরং সাহস, কৌতুক, ভয় এবং আনন্দের এক নতুন যাত্রার সূচনা, যা গ্রামবাসীর মনে দীর্ঘ সময়ের জন্য হাসি এবং আনন্দের স্মৃতি রেখে যাবে।
শেষ
				
	

	


