Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

ভূতের বউ আর ব্রহ্মচারী বটগাছ

Spread the love

বিমলেশ বাগচী


পর্ব ১: বটগাছের ব্রত ও ভবেশের বুদ্ধি

ধলেশ্বরীপুর নামটা শুনলেই হাসি পায় অনেকের। কারণ এই গ্রামে আছে এমন এক বটগাছ, যেটা নাকি ব্রহ্মচারী। গ্রামের সব গুঞ্জন আর গপ্পে এই বটগাছ নিয়ে—কে নাকি এর ছায়ায় বসে প্রেম করল, আর কে নাকি ভয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে পালাল।

এই বটগাছকে কেন্দ্র করেই গল্পের শুরু।

এই গাছটা গ্রামের উত্তর প্রান্তে, কাঁঠালতলা মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে। বিশাল, পুরনো, আর তার গায়ে মাটির সিন্দুর আর মাটি-গোলাপ দিয়ে সাজানো একটা ছোট্ট বেদি। সবাই জানে, এখানে প্রেম করা মানে কেলেঙ্কারি নিশ্চিত!

গাঁয়ের ছেলেরা বলে, “এই গাছের নিচে বসে প্রেম করতে গেলেই ল্যাংটো ছাগল পেছনে ধাওয়া করে!” কেউ কেউ বলে, “চটি হারিয়ে যায়, অথচ মানুষ জায়গা ছেড়ে উঠতে পারেনা!”

এমনই কীর্তির জন্য গাছটা বিখ্যাত—এবং কুখ্যাত।

আর এই গাঁয়ের সবচেয়ে কৌতূহলী মানুষ? ভবেশ হালদার। বয়স তিরিশের ঘরে, কিন্তু বিয়ে করতে পারেননি। বলেন, “আমি স্বাধীন, প্রেম করলে ব্যবসা যাবে বন্ধ!”

তবে ভিতরে ভিতরে তিনি প্রেমের ভক্ত—চুপি চুপি প্রেমের গান শোনেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতও শোনেন “ও তুই প্রেম করিস না!” শুনে হঠাৎ রুম ঝাঁকান।

একদিন হঠাৎ করেই গাঁয়ের হাইস্কুলের মাস্টারমশাই বিভূতি বাবু ধরা পড়ে গেলেন—একটা প্রেমপত্র হাতে নিয়ে বটগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে! কেউ একজন দেখে ফেলল আর সেই খবর নিমিষে ছড়িয়ে গেল সারা গ্রামে।

“ভবেশদা! শুনেছেন? বিভূতি বাবু প্রেমপত্র পড়ছেন গাছতলায়! সেই যে বটগাছ!”

ভবেশ বললেন, “এ তো মস্ত ব্যাপার! আমি তো বলি, ওখানে ভূতের আসর বসে রোজ সন্ধ্যেবেলা। এইবার চোখে না দেখে শান্তি পাবো না।”

তিনি ঠিক করলেন, নিজেই যাবেন সেই গাছের কাছে, দেখে আসবেন ভূত আছে কিনা। সঙ্গে নিয়ে গেলেন এক বালতি চা আর ছয়টা নারকেল নাড়ু।

আর ঠিক তখনই, সেই পুরনো বটগাছের ছায়ায়, শুরু হতে চলেছে এমন এক কাহিনি—যা প্রেম, ভূত আর হাসির এমন জট পাকাবে, যে ধলেশ্বরীপুরের মানুষ কবে শেষ হেসেছে, ভুলেই যাবে।

পর্ব ২: শাশ্বতীর আগমন ও চিঠিচুরির ঘটনা

বটগাছের ছায়ায় বসে বিভূতি বাবু প্রেমপত্র পড়ছিলেন। কেউ জানে না, সেই সময় গাছের ওপরে কে ছিল।

আসলে, এই গাছে থাকেন শাশ্বতী দেবী—একদা নাট্যদলে “রাধা” সেজে বিখ্যাত হওয়া এক আত্মা। রঙ্গমঞ্চের প্রেম আর দর্শকের করতালি আজ নেই, কিন্তু নাটুকে স্বভাব একটুও কমেনি!

শাশ্বতী এখন পুরোপুরি গাছবাসী। আর প্রেম দেখলেই তার মনে হয়—“আবার কেউ সাহস পেল! এই বটগাছকে অপবিত্র করবে? একটুও চলবে না!”

তাই বিভূতির প্রেমপত্র পড়ার দৃশ্য দেখে তিনি আর থাকতে পারলেন না। হঠাৎ ঝিরঝিরে বাতাস বইতে লাগল, পাতারা কাঁপতে লাগল অদ্ভুত ছন্দে। বিভূতি ভাবলেন, হাওয়া হয়ত, কিন্তু ঠিক তখনই পকেট থেকে কিছু একটা ছুটে বেরিয়ে গেল।

চোখ মেলে দেখলেন—চিঠিটা বাতাসে ভাসছে! ভাসতে ভাসতে সোজা চলে গেল গাছের শাখার দিকে। বিভূতি চিৎকার করে উঠলেন, “ও মা! ভূ—ভূ—ভূত!”

গাছের ভেতর থেকে নাটকীয় কণ্ঠে শোনা গেল, “প্রেমচোর বিভূতি! আমার ব্রহ্মচর্য নষ্ট করছো কেন?”

বিভূতি তখন সটান দৌড়। চটি পড়েননি, এমনকি মাথার টুপি ওড়ে গিয়ে একটা কাক নিয়ে উড়ে গেল। শাশ্বতী দেবী হেসে কুটি কুটি—“আহা, এদের এই ভয়টাই আমার সবচেয়ে প্রিয়!”

এরপরই ঘটল আসল কাণ্ড। পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গেল খবর—বটগাছে ভূতের বউ থাকে, আর সে প্রেম বিরোধী!

সবার মুখে মুখে একটাই কথা, “ভূতের বউ প্রেম সহ্য করতে পারে না!”

গ্রামের গোপাল বলল, “আগেই বলছিলাম, ওই গাছটা প্যাঁচালো! আমি একবার লিপস্টিক খাইয়ে প্রেম করতে গেছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইল হটচিপসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল!”

কেউ বলল, “ভবেশদা গেলে দেখবেন, উনি ভূতের সঙ্গে প্রেম না করে কি করেন!”

ভবেশ হালদার খুবই খুশি। তিনি তো এমন কিছুই চান—একটু রহস্য, একটু ভূত, আর একটু গুঞ্জন। দোকানে বিক্রি কমলেও, উত্তেজনা বাড়ছে।

তাই ঠিক করলেন, “এই সপ্তাহেই এক রাত কাটাবো বটগাছের নিচে। ভূত থাকলে আসবে, না থাকলে ঘুমোতে পারবো। দু’দিকই লাভ।”

শাশ্বতী দেবী অবশ্য সব শুনছেন। ভাবছেন—“এবার এক নতুন চরিত্র আসছে নাটকে! এই ভবেশ—মজাদার লাগছে ওকে। দেখি না, মঞ্চে তুললে কেমন করে।”

এইভাবেই ধীরে ধীরে ভবেশ আর শাশ্বতীর অদ্ভুত পরিচয় শুরু হবে—যা একসাথে হাসাবে, আবার ভাবিয়েও দেবে—ভূত মানেই কি শুধু ভয়?

পর্ব ৩: চা, নাড়ু আর ভূতের প্রথম প্রেম

রাত ঠিক দশটা। ধলেশ্বরীপুর ঘুমিয়ে পড়েছে, কেবল ভবেশ জেগে। দোকান বন্ধ, চা তৈরি। সঙ্গে নারকেল নাড়ু আর এক পুরনো পেতলের বাটি।

বটগাছের নিচে এসে তিনি বললেন, “ভূত থাকলে সামনে আয়। আমি ভয় পাই না, বরং কথা বলতে এসেছি।”

মাঝরাতের বাতাস থেমে গেল যেন। হঠাৎ পাতার ঝিরঝির শব্দ। আর তারপরেই মাটির একটু ওপরে ধোঁয়াটে আলোয় আবছা একটা চেহারা।

— “তুমি আমাকে ডাকছো?”

ভবেশ চমকে না গিয়ে বলল, “তুমি ভূত?”

— “ভূত, কিন্তু ভদ্র। নাম শাশ্বতী। আগে মঞ্চে অভিনয় করতাম—‘মেঘে ঢাকা তারা’তে আমি ছিলাম তারা নিজেই!”

ভবেশ হেসে বললেন, “তাহলে তো তুমি সেলিব্রিটি ভূত! চা খাবে?”

শাশ্বতী প্রথমে হেসে বললেন, “ভূতের মুখে চা যায় না, কিন্তু গন্ধ নিতে পারি। খুব মিষ্টি।”

তারপর দু’জন বসে গল্প শুরু করল। ভবেশ বলল, “তুমি প্রেমের এত বিরোধিতা করো কেন?”

শাশ্বতী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “জীবনে কেউ প্রেমে ফেলেনি। মঞ্চ ভালোবাসতো, দর্শক ভালোবাসতো, কিন্তু কেউ কোনোদিন আমায় প্রেমিকের চোখে দেখেনি।”

ভবেশ চুপ করে রইল। তারপর বলল, “তাহলে তুমি এখন প্রেমে ঈর্ষান্বিত ভূত!”

শাশ্বতী হেসে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমি ঈর্ষান্বিত, কিন্তু মনটা খালি।”

ভবেশ নাড়ুর বাটি বাড়িয়ে বলল, “নাও, এই প্রথম কেউ তোমায় কিছু দিল। গন্ধই হোক, কিছু তো পেলেই ভালো।”

তখন আকাশে হালকা চাঁদ উঠেছে। গাছের ছায়ায় এক জীবিত, আর এক মৃত মানুষ—কিন্তু গল্পে তারা সমান।

শাশ্বতী বলল, “তুমি ভয় পাও না?”

ভবেশ বলল, “না। তুমি যতটা ভূত, তার চেয়ে বেশি মানুষ।”

সে রাতে ধলেশ্বরীপুরে কেউ জানল না—এক অদ্ভুত সম্পর্কের বীজ পুঁতল ভবেশ আর শাশ্বতী।

ভূতের সঙ্গে প্রেম? না ঠিক প্রেম নয়, এক ধরনের বন্ধুত্ব, যেখানে ভয় নেই, আছে কৌতূহল আর আন্তরিকতা।

সেই রাতের পর থেকে ভবেশ প্রায় প্রতিদিন যায় গাছের নিচে। আর শাশ্বতী? তিনি অপেক্ষায় থাকেন। গন্ধে, আলোয়, বাতাসে—একজন তাকে ডাকবে বলে।

পর্ব ৪: গাঁয়ের গুঞ্জন আর ভূতবিয়ের গুজব

পরের কয়েক সপ্তাহ ধরে ভবেশের দোকানে সন্ধের পর চা পাওয়া দুষ্কর। কারণ চা, নাড়ু আর বিস্কুট সবই চলে যায় গোপনে বটগাছের নিচে।
ভবেশ বলতেন, “চা খেতে খেতেই জীবনের আসল গল্পগুলো বেরোয়।”
আর শাশ্বতী ভূত? তিনি রোজ রোজ নতুন নতুন অভিনয় করেন—একদিন সীতার ভুমিকা, আরেকদিন দেবদাসের পার্বতী!

একদিন গাঁয়ের গোপাল, যে ভবেশের দোকানে নজর রাখত, কান পেতে শোনে—

—“ভবেশ, যদি আমি আজকের নাটকটা ভালো করি, তবে একটা উপহার চাই।”
—“কি উপহার?”
—“ভবিষ্যৎ একদিন, যেখানে আমায় ভূত বলে কেউ ভয় পাবে না, বরং পছন্দ করবে।”

গোপাল আর থাকতে পারল না! সে দৌড়ে ছুটে গেল গাঁয়ে।

“ওরে ওরে! ভবেশ ভূতের প্রেমে পড়েছে! বিয়ে হবে বলে কথা দিচ্ছে!”

গ্রাম জুড়ে হৈচৈ পড়ে গেল। কালীপুজো এসে গেলেও প্যান্ডেলে আলো কম, সবাই ব্যস্ত বটগাছের ভূতের খবর নিয়ে।

বেলাগোঁসাই, গাঁয়ের গোঁসাই ঠাকুর, বললেন, “ভূতের সঙ্গে মানুষের বিয়ে মানেই অমঙ্গল! গাঁয়ে অভিশাপ আসবে। আমাদের যজ্ঞ করতে হবে!”

দশজন মিলে সিদ্ধান্ত নিল, যজ্ঞ হবে, বটগাছ শুদ্ধ হবে, আর ভবেশকে শোধরানো হবে। কেউ কেউ তো বলল, “ভবেশ এবার ‘ভূতদা’ নামে পরিচিত হবে!”

এইদিকে ভবেশ কিছুই জানেন না। তিনি আর শাশ্বতী ভূত বসে “চোখের বালি”র সংলাপ বলাবলি করছেন।

ভবেশ বলল, “তুমি যদি মানুষ হতে, আমি তোমায় বিয়ে করতাম।”
শাশ্বতী বলল, “তুমি যদি ভূত হতে, আমি তোমায় মঞ্চে নায়ক করতাম!”

এমন কথার মাঝেই গাঁয়ের লোকজন এসে হাজির। ধূপ, প্রদীপ, যজ্ঞের সামগ্রী হাতে।
বেলাগোঁসাই চিৎকার করে উঠলেন, “এই বটগাছে এখনো প্রেমের গন্ধ! এটা শুদ্ধ না করলে গরু দুধ দেবে না, বিয়ে হবে না, আর মোবাইলে নেটওয়ার্কও আসবে না!”

ভবেশ দাঁড়িয়ে বলল, “আপনারা যজ্ঞ করুন, কিন্তু একটুকু সত্য জানুন—ভূতও একা থাকে। প্রেম না হোক, একটু কথা, একটু খেয়াল… সেটা কি অন্যায়?”

শাশ্বতী আড়ালে দাঁড়িয়ে হাসলেন, “এই প্রথম কেউ আমার হয়ে কথা বলছে।”

এই পর্বে গাঁয়ের মানুষ হাসে, অবাক হয়, আবার একটু একটু ভাবেও—ভূতের বউ যদি সত্যিই থেকে যায় ভবেশের পাশে, তবে মন্দ কী?

পর্ব ৫: ভূতের বিয়ে আর ব্রহ্মচর্যর ভাঙন

যজ্ঞের ধোঁয়া এখনো বাতাসে। গাঁয়ের মানুষজন ধোঁয়া খেয়ে ফিরে গেলেও ভবেশ রয়ে গেল বটগাছের ছায়ায়। তার হাতে এক কাপ চা, অন্য হাতে ছোট্ট একটা ফুল।

শাশ্বতী বলল, “তুমি তো বেশ সাহসী। গাঁয়ের সামনে আমার হয়ে কথা বললে!”

ভবেশ হাসল, “তোমার জন্য না বললে, এই বুড়ো গাছের নিচে চা খাওয়ার আর কোনো মানে থাকত না।”

শাশ্বতী একটু চুপ করে বলল, “তুমি সত্যিই চাও আমি থাকি?”

ভবেশ মাথা নাড়ল। “হ্যাঁ, ভূত না হোক, তুমি তো আমার কথা শোনো। আজকাল মানুষও কই শোনে?”

সেই রাতেই শাশ্বতী বলল, “একটা পাগলামি করব ভেবেছি।”

ভবেশ জিজ্ঞেস করল, “কি?”

— “আমরা বিয়েটা সেরে ফেলি।”

ভবেশ প্রায় চায়ে হোঁচট খেল, “বিয়ে? কিন্তু তুমি তো…”

— “ভূত, জানি। কিন্তু মনটা তো এখনও মঞ্চের তারা! যদি অভিনয় হিসেবে নিই? যদি এক রাতের জন্য আমি বউ, আর তুমি বর হও?”

ভবেশ একটু চুপ করে থেকে বলল, “তাহলে নাটক হোক, কিন্তু সত্যি আবেগ নিয়ে। আমি রাজি।”

পরদিন বটগাছের নিচে সাজ সাজ রব।

গাঁয়ের কিছু ছেলে-মেয়ে গোপনে লাইট টাঙিয়েছে, শালপাতার মালা বানিয়েছে। গোপাল, যিনি প্রথম খবর ছড়িয়েছিলেন, এখন ক্যামেরাম্যান!

ভবেশ সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে হাজির, আর শাশ্বতী একটুকরো জবা-ফুলের গন্ধ নিয়ে আবছা আভায় ভাসছে।

বেলাগোঁসাই সেই দৃশ্য দেখে মাথায় হাত!

“এইবার সব গেল! বটগাছের ব্রহ্মচর্য শেষ! এবার গাঁয়ে ভূত ছড়াবে!”

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে বটগাছ থেকে হালকা বাতাস এলো। পাতার ফাঁকে চাঁদের আলো এসে পড়ল ভবেশ আর শাশ্বতীর উপর।

গাঁয়ের লোকজন হাঁ করে দেখল—এক জীবিত, এক অদৃশ্য প্রাণ, কিন্তু এমন শান্তি, এমন হাসি তারা আগে দেখেনি।

ভবেশ বলল, “এটা যদি ভুল হয়, তবে আমি সারাজীবন এই ভুল করে যেতে চাই।”

গাঁয়ের কিছু বুড়ো বলল, “ভূতের সঙ্গে যদি প্রেম হয়, তবে সে প্রেম অবশ্যই খাঁটি।”

শাশ্বতী মুচকি হেসে বলল, “আজকের নাটক শেষ, কিন্তু গল্পটা তো এখনো বাকি।”

পর্ব ৬: ভূতের সংসার আর ধলেশ্বরীপুরের নতুন নিয়ম

বিয়ের নাটক শেষ হয়েছে, কিন্তু ধলেশ্বরীপুর যেন বদলে গেছে। গাঁয়ের লোকজন যারা আগে ভয়ে বটগাছের দিকে তাকাত না, এখন সেখানে রোজ কেউ না কেউ ফুল দিয়ে আসে। কেউ বলে, “ভবেশদা-শাশ্বতী বৌদির আশীর্বাদ নিই।” কেউ আবার রীতিমতো পুজো দেন—“ভূতের বউ পূর্ণিমার রাতে দোষ কাটান!”

ভবেশের দোকানে আবার ভিড় জমে—তবে চা খেতে নয়, প্রেমের পরামর্শ নিতে।

“ভবেশদা, আমার প্রেমিকা রাগ করেছে, ভূতের বউ কিছু বলেছে আপনাকে?”

ভবেশ হাসেন। বলেন, “শাশ্বতী বলে, ভালোবাসলে অন্তর থেকে বোলো, বাহিরের নাটক চলবে আপনাতেই।”

আর শাশ্বতী? তিনি আগের মতোই গাছেই থাকেন। মাঝে মাঝে পাতার ফাঁকে তার ধোঁয়াটে চেহারা দেখা যায়, মাঝে মাঝে শুধু গানের সুর—“পথের শেষ কোথায়, কে জানে?”

গাঁয়ের গোঁসাই বেলাগোঁসাই এখন বলতেই পারেন না কিছু। বরং তিনিই একদিন রাতের বেলা গিয়ে ভবেশকে বললেন, “ওই ভূতের বউকে বলো তো, আমি একটু হাঁপাচ্ছি, কিছু ওষুধ আছে?”

ভবেশ বললেন, “শাশ্বতী বলেছে—তোমার হাঁপানির আসল ওষুধ, একটু দয়া, একটু হাসি।”

এভাবেই এক অদ্ভুত রীতি তৈরি হলো—ভূতের সঙ্গে কথা বলে মানুষ সমস্যার সমাধান খোঁজে। ভবেশ এখন “ভবেশ দা, প্রেম-পরামর্শদাতা”। কেউ কেউ তো বলে, “ভবেশদা হলেন ধলেশ্বরীপুরের ভূতস্বামী!”

আর বটগাছ? সে এখন ‘প্রেমের গাছ’ নামেই পরিচিত। কেউ কেউ সেখানে প্রথম প্রেমের কবিতা রেখে যায়, কেউ আবার বিয়ের কার্ড।

একদিন এক সাংবাদিক এলেন শহর থেকে, ভবেশকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার বউ তো ভূত, আপনাদের সংসার কেমন?”

ভবেশ মুচকি হেসে বললেন, “সাধারণ বউ তো আমার স্নান করতে বলত, ও বলে—আজ নাটক আছে, চল চুপ করে বসে থাকি।”

সাংবাদিক হেসে বললেন, “অসাধারণ প্রেম!”

ভবেশ বললেন, “হ্যাঁ, প্রেম একটু অদ্ভুত হলে ভালোই লাগে। অন্তত, কেউ ভূত হয়ে গেলেও সঙ্গ দেয় তো!”

শেষে বলা যায়, ধলেশ্বরীপুর এখন আর শুধু ভূতের জন্য বিখ্যাত নয়—এখন এখানেই মানুষ শিখেছে, ভালবাসা যদি সত্যি হয়, তবে সে জীবিত বা মৃত নয়, শুধু অনুভব।

আর বটগাছ? সে আর ব্রহ্মচারী নয়—সে এখন একজন বর, এক ভূতের জন্য, আর একটা গোটা গ্রামের হাসির কারণ।

শেষ

Lipighor_1749722015436.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *