অধ্যায় ১: মন্দিরের নিস্তব্ধতা
গ্রামের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক ভগ্নপ্রায় পুরনো মন্দির, যেটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে আছে। মানুষজন দূর থেকে দেখলেও এর ভেতরে ঢোকার সাহস করে না কেউ, কারণ এ মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা গুজব, নানা অলৌকিক কাহিনি। কেউ বলে, এখানে দেবতার অভিশাপ আছে, কেউ বলে রাতে অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসে ভেতর থেকে, যেন কেউ অন্ধকারে হাঁটছে। গ্রামবাসীরা তাই মন্দিরকে ভয় পায়, আর দিনের আলো থাকলেও এর কাছাকাছি কেউ যায় না। নায়ক অর্ণব, পেশায় প্রত্নতত্ত্ব গবেষক, এ মন্দিরের নাম শুনে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। শৈশব থেকে তার প্রবল আকর্ষণ ইতিহাস ও পুরনো ধ্বংসাবশেষের প্রতি, আর সে বিশ্বাস করে প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের ভেতর লুকানো থাকে এক একটি অজানা ইতিহাস। সে শহর থেকে আসে এই প্রত্যন্ত গ্রামে, মন্দিরকে নিজ চোখে দেখার জন্য। গ্রামের প্রবীণরা তাকে সতর্ক করে বলে—“ওখানে যেও না, ছেলে! ওই মন্দির অভিশপ্ত। কত মানুষ নিখোঁজ হয়েছে, কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।” কিন্তু অর্ণব তাদের কথায় কান না দিয়ে একরাশ উত্তেজনা নিয়ে পা বাড়ায় মন্দিরের দিকে।
প্রথমবার মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে অর্ণব অনুভব করে এক ধরনের অদ্ভুত শিহরণ। মন্দিরের দেয়ালে সময়ের দাগ, ভাঙা কার্নিশ, শ্যাওলা জমে কালো হয়ে যাওয়া পাথর, আর সর্বত্র নিস্তব্ধতা। এক ফোঁটা বাতাস নেই, চারপাশে যেন সময় থমকে গেছে। ভেতরে ঢুকে অর্ণব টের পায়, জায়গাটা অনেক বড়, তবে ভাঙাচোরা অবস্থায় সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মন্দিরের মূল বেদী ভেঙে পড়েছে, চারদিকে পাথরের স্তূপ। কিন্তু তার চোখ আটকে যায় এক জায়গায়—ভগ্ন বেদীর কোণ ঘেঁষে ফাটল ধরা এক অংশে। সেখান থেকে আসছে অদ্ভুত গুমগুম শব্দ, যেন গভীর কোথাও ফাঁপা শূন্যতা রয়েছে। শব্দটা এতই ক্ষীণ যে সাধারণ মানুষ খেয়ালই করত না, কিন্তু অর্ণবের তীক্ষ্ণ কানে তা ধরা পড়ে যায়। সে অনুভব করে, এ শুধু কোনো প্রাকৃতিক ফাটল নয়, এর পেছনে কিছু একটা আছে। রাত নামতেই সে সিদ্ধান্ত নেয় মন্দিরে একা অবস্থান করার, কারণ তার ধারণা, আসল রহস্য রাতেই ধরা দেবে। মন্দিরের ঠান্ডা মেঝেতে বসে যখন সে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছে, হঠাৎ শোনা যায় মৃদু পদচারণার শব্দ। টিকটিকের শব্দ বা বাতাসের দমকা হাওয়া নয়, বরং একেবারে মানুষের পায়ের শব্দ, ধীর আর ভারী। অর্ণবের বুক ধকধক করতে থাকে, তবুও কৌতূহল তাকে বসে থাকতে দেয় না। সে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকায়, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না।
রাত যত গভীর হয়, শব্দ আরও স্পষ্ট হতে থাকে। কখনো মনে হয় কেউ মন্দিরের বাইরের আঙিনা ঘুরছে, আবার কখনো মনে হয় শব্দটা আসছে বেদীর নিচ থেকে। অর্ণব মশালের আলো বাড়িয়ে ভগ্ন বেদীর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মেঝেতে হাত বোলাতেই ফাঁপা আওয়াজ শুনতে পায়, যা তাকে আরও নিশ্চিত করে তোলে। তার ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব শুরু হয়—একদিকে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে শরীরজুড়ে, অন্যদিকে অজানার আকর্ষণ তাকে টেনে নিচ্ছে গভীরে। হঠাৎ এক মুহূর্তে যেন সে খুব কাছ থেকে আবার সেই পদচারণার শব্দ শোনে, এত কাছে যে মনে হয় মাটির নিচেই কেউ হাঁটছে। অর্ণব টের পায় এই মন্দির শুধু প্রার্থনার স্থান ছিল না, এর ভেতর লুকানো আছে শতাব্দী প্রাচীন কোনো রহস্য, হয়তো অপরাধ। সে প্রতিজ্ঞা করে, এই রহস্য না ভেঙে সে ফিরবে না। কিন্তু সে তখনও জানত না, তার কৌতূহল তাকে এমন এক অন্ধকার জগতে নিয়ে যাবে, যেখান থেকে ফিরে আসা এত সহজ হবে না।
অধ্যায় ২: অজানা পদচারণা
রাতের গভীরতায় মন্দির যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। চারপাশে নিকষ কালো অন্ধকার, শুধু অর্ণবের হাতে ধরা মশালের ক্ষীণ আলোয় ভাঙাচোরা দেয়ালগুলো মাঝে মাঝে স্পষ্ট হয় আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। বাতাসে ভ্যাপসা গন্ধ, সঙ্গে এক অদ্ভুত স্যাঁতসেঁতে ঠান্ডা। অর্ণব সতর্কভাবে হাঁটতে থাকে, মেঝেতে প্রতিটি পদক্ষেপ যেন গম্ভীর প্রতিধ্বনি তৈরি করে। হঠাৎই সে টের পায়, প্রতিধ্বনি শুধু তার নিজের নয়। কোথাও থেকে যেন দ্বিতীয় একটি পায়ের শব্দও মিলেমিশে প্রতিধ্বনি তুলছে। অর্ণব থেমে যায়, মশালের আলো সামনে ধরে রাখে, কিন্তু আশপাশে কেউ নেই। তার বুকের ভেতর হৃদস্পন্দন তীব্র হয়ে ওঠে, ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে যায়, তবু সে ভয়কে দমন করে মনকে শান্ত করতে চেষ্টা করে। সে ভাবে, হয়তো তার কল্পনা, অন্ধকারের খেলা। কিন্তু মুহূর্তেই আবার স্পষ্ট শব্দ—কারো ভারী পদক্ষেপ, যেন পাথরের সিঁড়ি বেয়ে কেউ নিচে নামছে। অর্ণব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে ভগ্ন বেদীর কোণার ফাটলের দিকে, কারণ শব্দ ঠিক সেখান থেকেই আসছে।
সে সাহস সঞ্চয় করে বেদীর ফাঁক পরীক্ষা করতে শুরু করে। হাতের মশালটি একপাশে রেখে দেয়ালের গায়ে ঠেকিয়ে দেখে কোথায় আলগা পাথর আছে। কয়েকবার চেষ্টা করার পর একটি ছোটো অংশ নড়ে ওঠে। মেঝে ও দেয়ালের মাঝামাঝি জায়গায় এক ফাঁপা অংশ পাওয়া যায়, যেটা খুঁচিয়ে সরাতেই ভেতর থেকে ধুলো মাটি ঝরে পড়ে। ধুলোয় ভরে যায় চারপাশ, অর্ণব কাশতে থাকে, কিন্তু তার উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সে বুঝতে পারে, এই মন্দিরে লুকানো আছে কোনো গোপন পথ। সে টর্চলাইট চালু করে ফাটলের ভেতর আলো ফেলে, কিন্তু কেবল অন্ধকারই চোখে পড়ে। নিচের দিকে নেমে গেছে এক দীর্ঘ ফাঁপা সুড়ঙ্গ, কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে বোঝা যায় না। সেই অন্ধকারের ভেতর থেকেই ভেসে আসছে সেই পদচারণার শব্দ—এবার আরও স্পষ্ট, যেন কেউ ধীরপায়ে হাঁটছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে না কিছুই। অর্ণবের মনের ভেতর ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলও প্রবল হয়ে ওঠে। সে ভাবে, হয়তো কোনো ঐতিহাসিক আবিষ্কার লুকানো আছে এই সুড়ঙ্গে, যেটা এতদিন কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি। কিন্তু একই সঙ্গে তার মনে হয়, অদ্ভুত কিছু যেন অপেক্ষা করছে ভেতরে, যা তাকে সহজে ছেড়ে দেবে না।
অর্ণব মশাল শক্ত করে ধরে, ফাটলটা আরও বড় করতে শুরু করে। একসময় সে এতটুকু জায়গা বানাতে সক্ষম হয় যাতে নিচে নামা সম্ভব। চারদিকে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা, যেন মন্দির হঠাৎ নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে। সে গভীর নিশ্বাস নিয়ে অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভেতরে পা রাখে। মাটির নিচের স্যাঁতসেঁতে বাতাস তার গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। মশালের আলোয় দেখা যায় শ্যাওলায় ভরা স্যাঁতসেঁতে দেয়াল, কোথাও কোথাও পাথরের গায়ে অচেনা আঁকিবুকি খোদাই করা। প্রতিটি পদক্ষেপে সে শুনতে পায় শুকনো পাতার মতো কচমচ শব্দ, যদিও সেখানে কোনো পাতাই নেই। সে যতই এগোয়, পায়ের শব্দ যেন তার আগে এগিয়ে চলে। যেন কেউ তাকে পথ দেখাচ্ছে, আবার একইসঙ্গে ভয়ও দেখাচ্ছে। মুহূর্তে অর্ণবের মনে হয়, এ সুড়ঙ্গ শুধু প্রাচীন গোপন পথ নয়, বরং এক মৃত্যুফাঁদ, যেখানে একবার ঢুকলে আর বেরোনো যায় না। কিন্তু সে পিছু হটে না, কারণ জানে সত্য উদঘাটন করাই তার লক্ষ্য। তার চোখে তখন কেবল রহস্য ভাঙার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, আর ভেতরে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার তাকে গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যায় ৩: গোপন পথের সন্ধান
অর্ণব ধীরে ধীরে সুড়ঙ্গপথে নেমে যেতে থাকে। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন তাকে এক অজানা দুনিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেয়ালে হাত রাখতেই শীতল ভিজে পাথরের স্পর্শে শিরদাঁড়া দিয়ে কেঁপে ওঠে সে। মশালের আলোয় সামনে এগোলেও অন্ধকারের গভীরতা যেন কখনোই শেষ হয় না। বাতাসে অদ্ভুত এক গন্ধ—আধা পচা মাটির গন্ধ, তার সঙ্গে মিশে আছে পুরনো রক্তের ধাতব গন্ধের মতো কিছু। এ গন্ধ তাকে বিচলিত করে তোলে, কিন্তু তার কৌতূহল আরও প্রবল হয়ে ওঠে। সুড়ঙ্গটি ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হতে হতে আবার হঠাৎ প্রশস্ত হয়ে যায়, যেন কোনো ভেতরের ঘরে পৌঁছেছে। অর্ণব এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে। ভেতরে ঢুকে পড়ে এক অচেনা নীরবতায়, এত নিস্তব্ধতা যে নিজের হৃদস্পন্দনও কানে বাজতে থাকে। হঠাৎ মশালের আলোয় দেখতে পায় মাটিতে ছড়িয়ে আছে ভাঙা অস্থি আর কিছু মরচেধরা লোহার অস্ত্র। মনে হয় বহু শতাব্দী আগে এখানে কোনো ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী ছিল এই জায়গা। অর্ণবের মনের ভেতর শঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়, কিন্তু একইসঙ্গে নিশ্চিত হয় যে সে এক অসাধারণ আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।
সে হাঁটতে হাঁটতে দেয়ালে কিছু অচেনা খোদাই লক্ষ্য করে। প্রাচীন লিপির মতো, যেগুলো আংশিক ক্ষয়ে গেছে, তবে কিছু অংশে মানুষের আকার, হাত উঁচু করা ভঙ্গি আর আগুনের মতো চিহ্ন স্পষ্ট। এগুলো দেখে অর্ণব বুঝতে পারে, এখানে একসময়ে হয়তো কোনো আচার অনুষ্ঠান হতো। কিন্তু খোদাইয়ের ভেতরে একটি দৃশ্য তাকে শিহরিত করে তোলে—কয়েকজন মানুষকে বাঁধা অবস্থায় দেখানো হয়েছে, আর তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অস্ত্রধারী কিছু লোক। দৃশ্যটা যেন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিচ্ছবি। অর্ণব হঠাৎই আঁচ করে ফেলে, এই সুড়ঙ্গ শুধুই গোপন পথ নয়, বরং এটি ব্যবহার করা হতো কোনো অমানবিক কাজের জন্য। হয়তো এখানে শত শত বছর আগে রাজবংশের অন্ধকার অপরাধ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তার পিঠ বেয়ে ঠান্ডা ঘাম গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সে থামে না। পাথরের দেয়ালে হাত বুলিয়ে এগোতে থাকলে এক জায়গায় হাত কেঁপে ওঠে—মনে হয় ভেতরে ফাঁপা। ধাক্কা দিতে সে টের পায়, একটা অংশ সরানো যায়। জোরে চাপ দিতেই গম্ভীর শব্দ তুলে পাথর নড়ে যায়, আর সামনে খুলে যায় আরও অন্ধকার এক পথ।
অর্ণব মশাল সামনে ধরে নতুন পথের ভেতর এগোয়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই বাতাস আরও ভারী হয়ে আসে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গন্ধটা এখন আরও প্রবল, যেন অনেকগুলো অচেনা কণ্ঠস্বর একসঙ্গে ফিসফিস করে যাচ্ছে অন্ধকারে। পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় যেন ছায়ারা নড়ছে দেয়ালের উপর, কিন্তু আসলে সেখানে কিছুই নেই। তার মনে হয়, সে একা নয়। কোনো অদৃশ্য উপস্থিতি যেন প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে অনুসরণ করছে। সিঁড়ির শেষে এসে পৌঁছে যায় এক গহ্বরের ধারে। নিচে অস্পষ্ট আলো, মনে হয় মশালের প্রতিফলনেই তা তৈরি হচ্ছে। চারপাশে দেয়ালের ফাটল দিয়ে ঝরে পড়ছে পানির ফোঁটা, আর তার শব্দ গম্ভীর প্রতিধ্বনি তুলছে। নিচে তাকাতেই তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে—মাটিতে ছড়িয়ে আছে কঙ্কাল, অগণিত মানুষের কঙ্কাল, যাদের মাথার খুলি যেন এখনো শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুহূর্তে অর্ণবের ভেতর ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সে একই সঙ্গে বুঝতে পারে সে সত্যিই এমন এক রহস্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, যেটা শতাব্দীর পর শতাব্দী ঢাকা ছিল। সে গভীর শ্বাস নেয়, আর প্রতিজ্ঞা করে, যতো ভয়ই আসুক, এ রহস্য সে ভেদ করবেই।
অর্ণব ধীরে ধীরে গহ্বরের গভীরে নামতে থাকে, মশালের ক্ষীণ আলো অন্ধকারকে খুব সামান্যই ভেদ করতে পারে। নিচে নামতেই চারপাশের গুমোট বাতাস আরও ভারী হয়ে ওঠে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বাতাসে ভেসে আসা দুর্গন্ধ এবার স্পষ্ট বোঝা যায়—এটা পচনশীল মৃতদেহের গন্ধ, যা শতাব্দী ধরে জমাট বেঁধে আছে। মশালের আলোয় সামনে যতটুকু দেখা যায়, মাটিতে ছড়িয়ে আছে অগণিত হাড়গোড়, যাদের ওপর ধুলো জমে সাদা হয়ে গেছে। কঙ্কালগুলো বিভিন্ন ভঙ্গিতে পড়ে আছে—কেউ হাত বাঁধা অবস্থায়, কেউ মুখ হা করে আছে মৃত্যুর শেষ আর্তনাদে। দৃশ্যটা এতটাই ভয়ঙ্কর যে অর্ণবের গা শিউরে ওঠে, বুকের ভেতর চাপা আতঙ্ক তৈরি হয়। তবুও সে পিছু হটে না, বরং গভীর কৌতূহল তাকে সামনে টেনে নেয়। সে ভাবতে থাকে, কী এমন ঘটেছিল এখানে? কেন এত মানুষকে এমনভাবে মেরে ফেলা হলো? তার ভেতর জেগে ওঠে ইতিহাস উন্মোচনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা, আর তার সঙ্গে মিশে থাকে এক ভয়ানক অস্বস্তি—যেন মৃতদের আত্মা আজও এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সে হাঁটতে হাঁটতে আরও ভেতরে এগোয়। সুড়ঙ্গের দেয়ালে শ্যাওলা আর লতাপাতার মতো কিছু জমে আছে, যেগুলো ছুঁলেই ভিজে সেঁটে যায় আঙুলে। জায়গায় জায়গায় মাটিতে পুরু ধুলো জমে আছে, তার ওপর পড়ছে অর্ণবের পায়ের ছাপ। হঠাৎ সে টের পায়, তার নিজের ছাপের ওপরে আরেকটা ছাপ আছে—কারো ভারী পায়ের দাগ, যা একেবারেই নতুন। তার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। মানে তাহলে সে একা নয় এখানে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলেও অর্ণব এবার মশাল উঁচু করে সামনে এগোয়। মশালের আলোয় হঠাৎ চোখে পড়ে এক ছায়া, যেন কেউ দ্রুত সরে গেল। অর্ণব তৎক্ষণাৎ পিছু নেয়, কিন্তু কয়েক কদমের মধ্যেই ছায়াটা মিলিয়ে যায়। সে বোঝে না এটা তার কল্পনা নাকি সত্যিই কেউ আছে ভেতরে। বাতাসের মধ্যে যেন ফিসফিস শব্দ ভেসে আসে—অচেনা ভাষার মতো, আবার শোকের আর্তনাদের মতো। অর্ণবের মনে হয়, এই সুড়ঙ্গের প্রতিটি ইঞ্চি যেন মৃত্যুর স্মৃতি আর প্রতিশোধের আহাজারিতে ভরে আছে।
এভাবে অগ্নিপরীক্ষার মতো এগোতে এগোতে অর্ণব হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। সামনে দেখা যায় একটা বিশাল পাথরের দরজা, যার ওপর খোদাই করা রয়েছে ভৌতিক চিত্র। দরজার দুই পাশে দুই ভয়ঙ্কর মুখাবয়ব খোদাই করা, যাদের চোখগুলোতে মশালের আলো পড়তেই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। দরজার ঠিক মাঝখানে খোদাই করা আছে একটি প্রতীক—এক অদ্ভুত চক্রচিহ্ন, যেটা দেখে অর্ণবের মনে হয় কোনো প্রাচীন ধর্মীয় আচার বা গোপন সংঘের প্রতীক। দরজার নিচে মাটিতে শুকনো রক্তের দাগ জমে আছে, যদিও তা কত পুরনো বোঝা মুশকিল। অর্ণব ধীরে ধীরে দরজার কাছে গিয়ে হাত রাখে, আর মুহূর্তেই দরজাটা হালকা গর্জনের মতো শব্দ তুলে নড়ে ওঠে। ধুলো আর পাথরের গুঁড়ো ঝরে পড়ে চারপাশে। দরজা খুলতেই ভেতর থেকে এক অদ্ভুত ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে আসে, যেন শতাব্দীর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেল কোনো অজানা শক্তি। মশালের আলোয় দেখা যায় ভেতরে আরও বড় এক সুড়ঙ্গ, যা অজানার গভীরে নিয়ে যাচ্ছে। অর্ণব টের পায়, এখন থেকে তার প্রতিটি পদক্ষেপ শুধু ইতিহাস নয়, মৃত্যুর সঙ্গেও খেলা। আর ঠিক সেই মুহূর্তে, তার কানে স্পষ্ট শোনা যায় কারো ভারী নিঃশ্বাস—খুব কাছেই, যেন অন্ধকারের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে কেউ।
অর্ণব দরজার ওপাশে পা রাখতেই যেন এক অদ্ভুত দমবন্ধ পরিবেশ ঘিরে ধরে তাকে। দেয়ালগুলো আরও অন্ধকার, আরও স্যাঁতসেঁতে, আর মশালের আলোয় দেখা যায় ঝুলন্ত বাদুড় উড়ে যাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে। তার প্রতিটি পদক্ষেপে চারপাশে প্রতিধ্বনি হয়ে উঠছে, কিন্তু সেই প্রতিধ্বনি কেবল তার নিজের নয়। অর্ণব বারবার অনুভব করছে, তার পেছনে কারো উপস্থিতি আছে—অদৃশ্য অথচ স্পষ্ট। হঠাৎ মশালের আলোয় দেয়ালের কোণে দেখা যায় একটি অস্পষ্ট ছায়া, যেন কোনো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব তৎক্ষণাৎ আলো সেই দিকে ফেলতেই ছায়াটা মিলিয়ে যায়। তার বুক ধকধক করতে থাকে, মনের ভেতরে ভয় জমে ওঠে, তবুও সে এগোতে থাকে। কিছুদূর যেতেই আবার দেখা যায় ছায়াটা, এবার সামনের মোড়ে। মশালের আলোয় স্পষ্ট হয় এক মানুষের অবয়ব, তবে মুখ দেখা যায় না। অবয়বটা এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর দ্রুত অন্ধকারে হারিয়ে যায়। অর্ণব দৌড়ে গিয়ে দেখতে চায় কে সে, কিন্তু পাথরের দেয়ালের ফাঁক ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। তার মনে হয়, কেউ যেন ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে পথ দেখাচ্ছে, আবার একই সঙ্গে ভয়ও দেখাচ্ছে।
সে ধীরে ধীরে পথ ধরে এগোতে থাকে। দেয়ালের গায়ে খোদাই করা প্রতীকগুলো এখন আরও স্পষ্ট হতে শুরু করে—অগ্নিবলয়, শিকল বাঁধা মানুষ, আর শিকারির মতো দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিকদের ছবি। প্রতিটি খোদাই যেন মৃত্যুর এক একটি দৃশ্য ফুটিয়ে তুলছে। এ দৃশ্য দেখে অর্ণবের মাথায় ভেসে ওঠে গ্রামের প্রবীণদের সতর্কবাণী—“ওই মন্দির অভিশপ্ত।” হঠাৎ মনে হয় সেই অভিশাপই হয়তো এই সুড়ঙ্গের ভেতর বন্দি হয়ে আছে। ঠিক তখনই সে স্পষ্ট শুনতে পায় পায়ের শব্দ, একেবারে তার সামনে থেকে। এবার আর পিছন নয়, অন্ধকার সুড়ঙ্গের গভীর থেকে আসছে ভারী পদক্ষেপ, সঙ্গে কর্কশ নিঃশ্বাসের শব্দ। অর্ণব মশাল উঁচু করে দাঁড়ায়, গলা শুকিয়ে আসে তার, আর চোখের সামনে ধীরে ধীরে গাঢ় অন্ধকার থেকে ভেসে ওঠে একটি ছায়ামূর্তি। মানুষের মতো হলেও অদ্ভুত বিকৃত শরীর, মুখ ঢাকা অন্ধকারে। মুহূর্তের মধ্যে অর্ণবের শরীর শীতল হয়ে ওঠে, হাতের মশাল কাঁপতে থাকে। কিন্তু মূর্তিটা হঠাৎই আবার মিলিয়ে যায়, যেন কখনো ছিলই না। চারপাশের নিস্তব্ধতা আরও গাঢ় হয়ে ওঠে, আর অর্ণব বুঝতে পারে, সে এমন এক সত্তার মুখোমুখি, যা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
অর্ণব কিছুটা ভীত হলেও তার কৌতূহল ভাঙে না। সে এবার দেয়ালের ওপর খোদাইগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এক জায়গায় সে খেয়াল করে, কয়েকজন বন্দি মানুষকে সুড়ঙ্গের ভেতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আর সেই সঙ্গে রাজচিহ্ন আঁকা এক পতাকা দেখা যাচ্ছে। অর্ণবের কাছে পরিষ্কার হয়—এ শুধু কোনো প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ নয়, বরং রাজবংশের গোপন কারাগার বা মৃত্যুকূপ। যেখানে অপরাধী নয়, বরং নিরীহ মানুষদেরও আটকে রাখা হতো। সে তখনই বুঝতে পারে, যে ছায়ামূর্তি বারবার সামনে আসছে, হয়তো সেই সব নিহত মানুষের আত্মার প্রতীক, যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক অদ্ভুত ভয়ে আচ্ছন্ন হলেও অর্ণব প্রতিজ্ঞা করে, এই রহস্য সে উদঘাটন করবেই। সে গভীর শ্বাস নেয়, মশাল শক্ত করে ধরে সামনে এগোয়, কারণ এখন সে জানে, ছায়ার পেছনে আছে আরও গভীর কোনো সত্য, আর সেই সত্যই তার যাত্রার আসল গন্তব্য।
অধ্যায় ৬: শতাব্দীর অপরাধ
অর্ণবের মশালের আলো যখন অন্ধকার সুড়ঙ্গকে ভেদ করে এগিয়ে যায়, তখন দেয়ালের খোদাই যেন ধীরে ধীরে স্পষ্ট ইতিহাসের চিত্র হয়ে ওঠে। সে দেখে, এক বিশাল প্রাঙ্গণে রাজসভার মতো এক দৃশ্য আঁকা রয়েছে—সিংহাসনে বসে আছেন এক রাজা, চারপাশে সজ্জিত সৈন্যরা। কিন্তু দৃশ্যের কেন্দ্রে আছে অদ্ভুত কিছু—কয়েকজন গ্রামবাসীকে টেনে আনা হচ্ছে, যাদের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। রাজাকে ঘিরে থাকা লেখার ভেতর থেকে অর্ণব বুঝতে পারে, এটা কোনো বিচারসভা নয়, বরং রক্তের খেলা। রাজা আদেশ দিচ্ছেন মানুষদের ধরে এনে গোপন সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে দিতে, আর সৈন্যরা সেই আদেশ পালন করছে। দৃশ্যগুলো যেন একেকটা ভয়ঙ্কর স্মৃতি—মানুষকে শিকলে বেঁধে ঠেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্ধকারে, নারীদের আর্তনাদ খোদাই হয়ে আছে দেয়ালে। অর্ণবের মনে শিউরে ওঠে, ইতিহাসের এই অংশ হয়তো কোনো রাজবংশ ইচ্ছাকৃতভাবে মুছে দিয়েছিল। যে কারণে এ মন্দিরকে অভিশপ্ত বলে প্রচার করা হয়, যাতে কেউ এখানে না আসে আর সত্যিটা জানতেই না পারে।
সে আরও ভেতরে এগোতে এগোতে একটি শিলালিপি খুঁজে পায়, যেখানে প্রাচীন ভাষায় লেখা কিছু শব্দ অক্ষত রয়েছে। অর্ণব তার টর্চ আর নোটবুক বের করে মনোযোগ দিয়ে খোদাই পড়তে চেষ্টা করে। কিছুটা অনুবাদ করে সে বোঝে, এই মন্দির আসলে ছিল রাজপরিবারের গোপন শাস্তিক্ষেত্র। প্রজাদের বিদ্রোহ বা সামান্য অপরাধও ক্ষমার অযোগ্য ধরা হতো। সেই অপরাধীদের প্রকাশ্যে হত্যা না করে, মন্দিরের আড়ালে তৈরি করা হয়েছিল এক ভূগর্ভস্থ মৃত্যুকূপ। এখানেই শত শত মানুষকে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো, না খাইয়ে মেরে ফেলা হতো, কিংবা একে অপরের ওপর নির্ভর করতে করতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হতো। এই নির্মম ইতিহাস পড়তে পড়তেই অর্ণবের চোখে অশ্রু চলে আসে। সে ভাবে, কত নিরীহ প্রাণের আত্মাহুতি লুকানো আছে এই মাটির নিচে, অথচ উপরের জগতে এ ইতিহাস মুছে গেছে। তার মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক তীব্র ক্ষোভ, একই সঙ্গে এক অদ্ভুত ভয়—যেন সেই মানুষগুলোর আত্মা আজও এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে ন্যায়বিচারের খোঁজে।
ঠিক তখনই চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। অর্ণব স্পষ্ট টের পায়, সে একা নেই। কানে ভেসে আসে অসংখ্য ফিসফিসানি, যেন শত মানুষের কান্না আর আর্তনাদ একসঙ্গে মিশে গেছে। মশালের আগুন কেঁপে ওঠে, আলো নিভে যাবার মতো হয়ে যায়। অর্ণব দ্রুত মশাল শক্ত করে ধরে রাখে, কিন্তু হঠাৎই দেয়ালের ওপর নাচতে থাকা ছায়াগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। সে দেখে, কঙ্কাল থেকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে মানুষদের অবয়ব—মুখে আতঙ্ক, চোখে ভয়। তারা যেন হাত বাড়িয়ে কিছু চাইছে, হয়তো মুক্তি, হয়তো প্রতিশোধ। অর্ণবের বুক ধড়ফড় করে ওঠে, তার হাঁটু কেঁপে ওঠে ভয় আর বিস্ময়ে। কিন্তু সে বুঝতে পারে, তার সামনে এখন যে ছায়ামূর্তিগুলো ভেসে উঠছে, তারা আসলে সেই শতাব্দী প্রাচীন অপরাধের নীরব সাক্ষী। তাদের আর্তনাদ চেপে রাখা হয়েছিল শত বছর ধরে, আর আজ সেই ইতিহাস আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে। অর্ণব নিজের মনে প্রতিজ্ঞা করে, যত ভয়ই আসুক না কেন, সে এ রহস্যকে চাপা থাকতে দেবে না। সে সত্যকে আলোয় আনবেই, যদিও সেই পথে তাকে মৃত্যুর সঙ্গেও লড়তে হয়।
অধ্যায় ৭: অদৃশ্য রক্ষক
অর্ণব যখন বুঝতে পারে এই সুড়ঙ্গ আসলে এক মৃত্যুকূপ, তখন তার ভেতরে ইতিহাসের সত্য উন্মোচনের দৃঢ়তা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু সেই সঙ্গে ছায়ামূর্তির উপস্থিতিও তীব্র হতে থাকে। প্রতিটি পদক্ষেপে অদ্ভুত হাহাকার ভেসে আসে, যেন কারো চিৎকার, কারো আহাজারি, আবার কারো প্রতিশোধের শপথ। হঠাৎই তার মশালের আলোয় দেখা দেয় এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য—দেয়ালের ফাঁক থেকে যেন এক মানবাকৃতি বেরিয়ে আসছে। অন্ধকারে ঢাকা সেই মূর্তি ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে দাঁড়ায়, তার শরীর অস্পষ্ট, যেন ধোঁয়ার মতো তৈরি। কিন্তু চোখ দুটো জ্বলছে অগ্নিশিখার মতো। অর্ণব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়, হাতের মশাল কাঁপতে থাকে। মূর্তিটি কোনো কথা বলে না, কিন্তু তার উপস্থিতিই অর্ণবকে বোঝাতে যথেষ্ট—এটাই সেই অদৃশ্য রক্ষক, যে শতাব্দীর অপরাধকে পাহারা দিচ্ছে। মূর্তিটি ধীরে ধীরে অর্ণবের দিকে এগোতে থাকে, আর তার প্রতিটি পদক্ষেপে মাটির নিচে গম্ভীর শব্দ ওঠে। অর্ণব অনুভব করে, তার শরীর অসাড় হয়ে আসছে, তবুও সে চেষ্টা করে স্থির থাকতে।
সে মশাল উঁচু করে মূর্তির দিকে তাকায়। মূর্তির ছায়ার ভেতর সে যেন বহু মানুষের অবয়ব দেখতে পায়—নারী, শিশু, বৃদ্ধ—সবাই একসঙ্গে মিশে আছে সেই ছায়ার ভেতরে। তাদের চোখে শুধু কান্না আর ক্ষোভ। অর্ণব বুঝতে পারে, এই রক্ষক আসলে কোনো একক আত্মা নয়, বরং শত মানুষের অভিশপ্ত আত্মার সম্মিলিত রূপ, যারা চিরকাল এখানে বন্দি হয়ে আছে। মূর্তিটি যেন এক মুহূর্তে অর্ণবের ভেতর ঢুকে পড়ে, তার বুকের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। অর্ণব হাঁপাতে থাকে, মনে হয় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ সে খেয়াল করে, তার হাতে ধরা নোটবুক আর কলম যেন অদ্ভুতভাবে আলো ছড়াচ্ছে। হয়তো সত্যকে লিপিবদ্ধ করার শক্তিই তাকে রক্ষা করছে। সেই আলোয় ছায়ামূর্তিটা কেঁপে ওঠে, তারপর ধীরে ধীরে পিছু হটে দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে যায়। চারপাশের নিস্তব্ধতা ফিরে আসে, কিন্তু অর্ণব বুঝতে পারে—এই অদৃশ্য রক্ষক এখনো এখানেই আছে, সে কেবল সতর্ক করে দিয়েছে। যদি অর্ণব সত্যকে আড়াল করে, তবে এই শক্তি তাকে কখনো ছেড়ে দেবে না।
অর্ণব ভেতরে ভেতরে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব অনুভব করে। তার মনে হয়, রক্ষক তাকে হয়তো মেরে ফেলত, কিন্তু সে টিকে গেছে কারণ সে ইতিহাসের সত্য লিখে রাখছে। মানে আত্মাগুলো চায় তাদের কষ্ট মানুষের সামনে প্রকাশ পাক, চায় মুক্তি। কিন্তু একই সঙ্গে সে ভয়ও পায়—যদি তার লেখা প্রকাশ পায়, তবে রাজপরিবারের নাম কলঙ্কিত হবে, হয়তো বর্তমান গ্রামও অভিশপ্ত বলে চিহ্নিত হবে। এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই সে সামনে এগোয়, কারণ জানে পথ এখনো শেষ হয়নি। সুড়ঙ্গের আরও গভীর থেকে ঠান্ডা বাতাস এসে লাগছে তার মুখে, আর সঙ্গে আসছে শৃঙ্খল ঝনঝন করার মতো শব্দ। অর্ণব প্রতিজ্ঞা করে, যতোই ভয়ঙ্কর ছায়া সামনে আসুক না কেন, সে থামবে না। সে এই অভিশপ্ত আত্মাদের ইতিহাসকে আলোয় আনবেই। আর ঠিক তখনই তার কানে আবার শোনা যায় ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ, খুব কাছে, এতটাই কাছে যে মনে হয় কেউ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে তার কানে ফিসফিস করছে। সে ঘুরে তাকাতেই মশালের আলো নিভে যায়, আর চারপাশ ভরে ওঠে এক গাঢ় অন্ধকারে।
অধ্যায় ৮: ধনভাণ্ডারের অভিশাপ
অন্ধকার যখন অর্ণবকে পুরোপুরি গ্রাস করে নেয়, তখন সে টের পায় তার ভেতরে ভয় আর সাহস একসঙ্গে লড়ছে। কিছুক্ষণ হাতড়ে সে আবার মশালে আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়, আর তার আলোয় সামনে ধরা পড়ে এক নতুন দৃশ্য। সুড়ঙ্গের দেয়ালগুলো আগের মতো আর সাদামাটা নয়, বরং ঝলমলে রত্নখচিত খোদাইয়ে ভরা। লাল, নীল, সবুজ পাথরের টুকরো মশালের আলোয় ঝিকমিক করছে। অর্ণব যতই এগোয়, দেয়ালগুলো যেন ততই সমৃদ্ধ হতে থাকে, আর শেষমেশ সে পৌঁছায় এক বিশাল লোহার দরজার সামনে। দরজায় খোদাই করা আছে এক শিলালিপি—“এই সম্পদ রাজপরিবারের, অযোগ্যদের জন্য মৃত্যু।” অর্ণবের বুক ধড়ফড় করতে থাকে। এতক্ষণে সে নিশ্চিত হয়, গুজব সত্যি ছিল। এই সুড়ঙ্গের ভেতর শুধু মৃত্যুর ইতিহাসই নয়, লুকানো আছে বিপুল ধনভাণ্ডারও। কিন্তু সেই সঙ্গে এই দরজার ভয়ঙ্কর সতর্কবাণী তাকে দ্বিধায় ফেলে।
অর্ণব হাত দিয়ে দরজা ঠেলতে গেলে সেটি গম্ভীর শব্দে খুলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করতেই তার চোখ ঝলসে ওঠে। অন্ধকার ঘরে মশালের ক্ষীণ আলোতেই বোঝা যায়, চারপাশে সোনার স্তূপ, হীরে-মুক্তোর গয়না, রত্নখচিত মুকুট, প্রাচীন অস্ত্র আর অসংখ্য ভাণ্ডার সাজানো আছে। ঘরের মাঝখানে একটি পাথরের আসনে রাখা আছে বিশাল সোনার বাক্স, যার ওপর রাজচিহ্ন খোদাই করা। অর্ণব অবাক হয়ে যায়, এই সম্পদের পরিমাণ কল্পনারও বাইরে। মুহূর্তের জন্য তার মনে হয়, হয়তো এই ধন-সম্পদের লোভেই শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, আর সুড়ঙ্গের ভেতর তাদের লাশ গোপন করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক তখনই সে খেয়াল করে, ঘরের ভেতর বাতাস অস্বাভাবিক ঠান্ডা হয়ে উঠেছে। সোনার স্তূপের ফাঁক থেকে হঠাৎ উঠে আসে এক অদ্ভুত গন্ধ, যেন পোড়া মাংস আর পচা রক্তের মিশ্রণ। অর্ণব শিউরে ওঠে, তার হাত কেঁপে ওঠে মশাল ধরে রাখতে।
হঠাৎ চারপাশে সোনার স্তূপগুলো যেন কেঁপে ওঠে। বাক্সের চারপাশ থেকে কালো ছায়া উঠে এসে বাতাসে ঘুরতে থাকে। অর্ণব স্পষ্ট দেখতে পায়, সেই ছায়ার ভেতর থেকে হাত বেরিয়ে আসছে, যেন কেউ লোভের শাস্তি চাইছে। দেয়ালের খোদাই করা চোখগুলোও যেন জ্বলজ্বল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণব বুঝতে পারে, এই ধনভাণ্ডার আসলে আশীর্বাদ নয়, বরং অভিশাপ। যে-ই লোভে পড়ে এটাকে ছুঁতে চাইবে, তার পরিণতিও হবে সেই শত বন্দি মানুষের মতোই ভয়ঙ্কর। তার বুক কেঁপে ওঠে ভয়ে, তবুও সে শান্ত থাকার চেষ্টা করে। মশাল উঁচিয়ে সে নিজেকে বোঝায়—সে লোভী নয়, তার উদ্দেশ্য কেবল সত্যকে প্রকাশ করা। কিন্তু তবুও ছায়াগুলো তাকে ঘিরে ধরতে থাকে, চারদিক থেকে অজানা ফিসফিসানি ভেসে আসে—“কেউ যেন জানে না, কেউ যেন দেখে না।” অর্ণব মনে মনে শপথ করে, এই ইতিহাস সে চাপা দেবে না, অভিশাপ যতোই ভয়ঙ্কর হোক না কেন। আর সেই মুহূর্তে সোনার বাক্সটা হালকা শব্দ করে খুলে যায়, আর ভেতর থেকে অদ্ভুত আলো ছড়িয়ে পুরো ঘরটাকে ভরে তোলে। অর্ণব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তার ভেতরে আতঙ্ক আরও বাড়তে থাকে—কারণ আলো মানেই মুক্তি নয়, আলো হয়তো কোনো নতুন ভয়ঙ্কর রহস্যের সূচনা।
অধ্যায় ৯: বাক্সের ভেতরের রহস্য
সোনার বাক্স থেকে আলো ছড়িয়ে পড়তেই অর্ণবের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রাখে, কিন্তু আলো ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়ে এলে দেখা যায় ভেতরে কোনো সোনা বা রত্ন নেই। তার বদলে রয়েছে একখানা মোটা চামড়ার তৈরি প্রাচীন গ্রন্থ, যার পৃষ্ঠাগুলো অদ্ভুত কালো রঙে দাগ পড়া। বাক্সের চারপাশে যেন হালকা ধোঁয়া ঘুরছে, আর সেই গ্রন্থ থেকে নির্গত হচ্ছে তীব্র শীতলতা। অর্ণব হাত বাড়িয়ে গ্রন্থটা স্পর্শ করতেই তার শরীরে কাঁপুনি ধরে যায়। বুকের ভেতর যেন কেউ শ্বাস আটকে দিয়েছে, আবার একই সঙ্গে এক অজানা শক্তি তাকে বাধ্য করছে গ্রন্থটা খুলতে। সে মশালের আলো কাছে এনে বই খুলতেই ভেতরে দেখা যায় রক্ত দিয়ে লেখা অক্ষর, আর পাশে আঁকা ভয়ঙ্কর সব প্রতীক। লেখা পড়তে গিয়ে অর্ণবের শরীর ঠান্ডা হয়ে ওঠে—এখানে লিপিবদ্ধ আছে রাজপরিবারের নিষ্ঠুর ইতিহাস, কীভাবে সাধারণ মানুষকে বন্দি করে সুড়ঙ্গে নামানো হতো, আর তাদের প্রাণের আর্তনাদ দিয়েই এই ধনভাণ্ডারের শক্তি রক্ষা করা হতো।
অর্ণব যতই পড়তে থাকে, ততই ভয়ঙ্কর সত্য বেরিয়ে আসে। বইয়ের পাতায় লেখা আছে, এই ধনভাণ্ডারকে সুরক্ষিত রাখতে এক অদ্ভুত কালো মন্ত্র প্রয়োগ করা হয়েছিল। শত মানুষের আত্মা বন্দি করে তাদের যন্ত্রণাকে রূপ দেওয়া হয়েছিল এক অভিশাপে। যতক্ষণ এই ধন অক্ষত থাকবে, ততক্ষণ সেই আত্মারা মুক্তি পাবে না, আর কেউ যদি ধন লুট করতে আসে, তবে তারা তাকে গ্রাস করবে। অর্ণবের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারে, এই অদৃশ্য রক্ষক আসলে সেই মন্ত্রেরই ফল—এক অভিশপ্ত শক্তি, যে ধনের পাহারায় চিরকাল দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু বইয়ের শেষ দিকের পাতায় আরেকটা সত্য লুকানো আছে। সেখানে লেখা—“যদি কেউ সাহস করে এই ইতিহাস প্রকাশ করে, তবে অভিশাপ ভেঙে যাবে, আর আত্মারা মুক্তি পাবে। কিন্তু বিনিময়ে সেই ইতিহাসবাহক কখনো মুক্তি পাবে না, তাকে চিরকাল হতে হবে অভিশপ্তদের সঙ্গী।” এই লাইনটা পড়তে পড়তেই অর্ণবের হাত কেঁপে ওঠে। তার চোখ অন্ধকারে ঘোলা হয়ে যায়, বুকের ভেতর ভয় আর দ্বন্দ্ব একসঙ্গে চেপে বসে।
ঠিক তখনই চারপাশে প্রচণ্ড শব্দে ধনভাণ্ডারের সোনা-রত্ন নড়ে ওঠে। দেয়াল থেকে অসংখ্য ছায়া ঝাঁপিয়ে পড়ে অর্ণবকে ঘিরে ধরে। তাদের ফিসফিসানি এবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে—“সত্য প্রকাশ করো… আমাদের মুক্ত করো…” অর্ণব বুঝতে পারে, এরা তাকে খেয়ে ফেলতে আসেনি, বরং তার কাছে প্রার্থনা করছে। কিন্তু সে জানে, যদি সে সত্য প্রকাশ করে তবে তার নিজের জীবন চিরতরে অন্ধকারে আটকে যাবে। সে বুক শক্ত করে দাঁড়ায়, আর মশাল উঁচু করে ধরে বলে ওঠে, “আমি লিখব, সব লিখব।” তার কণ্ঠস্বর সুড়ঙ্গের ভেতর প্রতিধ্বনিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে এক অদ্ভুত কম্পন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে, বাতাস কেঁপে ওঠে, সোনার বাক্স ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, আর গ্রন্থটা থেকে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অর্ণব শেষবারের মতো চোখ বন্ধ করে টের পায়, শত শত আত্মা যেন হাহাকার করে মুক্তি পাচ্ছে, তাদের কান্না ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে অদ্ভুত প্রশান্তিতে। কিন্তু একই সঙ্গে সে অনুভব করে, তার শরীর ভারী হয়ে আসছে, তার শ্বাস ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে—যেন অভিশাপের শিকল তাকে নিজের সঙ্গে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যায় ১০: অভিশাপের উত্তরাধিকার
অর্ণব যখন শেষ লাইনটা পড়ল, তখন চারপাশে যে আলো-অন্ধকারের খেলা চলছিল, তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠল। মশালের শিখা হঠাৎ লম্বা হয়ে গিয়ে ছিঁড়ে গেলো, পুরো ঘরটা ভরে গেল শীতল কালো ধোঁয়ায়। অর্ণবের বুক ভারী হয়ে আসতে থাকল, সে হাঁপাতে লাগল, যেন শ্বাসরোধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে তার কানে এক অদ্ভুত শব্দ পৌঁছাল—এটা আর্তনাদ নয়, হাসি নয়, বরং মুক্তির দীর্ঘশ্বাস। শত শত আত্মা যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই সুড়ঙ্গে বন্দি ছিল, তারা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগল। অর্ণব নিজের চোখে দেখতে পেল দেয়ালের খোদাই থেকে শুরু করে ছায়ামূর্তিগুলো পর্যন্ত সব যেন ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের যাওয়ার আগে চোখের গভীরে অর্ণবের জন্য কৃতজ্ঞতার এক অদ্ভুত ঝিলিক রয়ে গেল। অর্ণব তখনই বুঝল, তার কাজ শেষ হয়েছে—সে ইতিহাস উন্মোচন করেছে, আর আত্মাদের মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু পরের মুহূর্তে বুকের ভেতর যেন কেউ শিকল বেঁধে টেনে ধরল। তার হাত-পা অসাড় হয়ে গেল, চোখে আঁধার নামতে শুরু করল।
কিছুক্ষণ পর অর্ণব নিজেকে খুঁজে পেল এক ভিন্ন অন্ধকারে। এবার আর এটা কোনো সুড়ঙ্গ নয়, বরং এক অসীম শূন্যতা। সেখানে আলো নেই, শব্দ নেই, শুধু ঠান্ডা আর গভীর নিস্তব্ধতা। হঠাৎ সে দেখতে পেল নিজের চারপাশে অসংখ্য অস্পষ্ট অবয়ব ভেসে বেড়াচ্ছে—তারাই সেই আত্মারা, যাদের সে মুক্ত করেছে। তারা তাকে ঘিরে দাঁড়াল, কিন্তু এবার তাদের মুখে আতঙ্ক নেই, বরং এক প্রশান্ত শান্তি। একজন বৃদ্ধার ছায়া এগিয়ে এসে তার কপালে হাত রাখল, এক শিশুর অবয়ব তার হাত ধরে হাসল। অর্ণবের চোখ ভিজে গেল। সে বুঝল, তারা আর অভিশপ্ত নয়, তারা মুক্ত। কিন্তু একই সঙ্গে সে উপলব্ধি করল, তার নিজের মুক্তি নেই। ধীরে ধীরে তার চারপাশ অদৃশ্য হতে হতে এক কণ্ঠ তার কানে বাজল—“তুমি আমাদের মুক্ত করেছো, তাই তুমি এখন আমাদের অংশ। তুমি আর আলোয় ফিরবে না।” এই কথাগুলো শুনে অর্ণবের বুক কেঁপে উঠল, কিন্তু তার মনে কোনো ভয় ছিল না, বরং এক অদ্ভুত শান্তি এসে ভর করল।
উপরে, মন্দিরের ধ্বংসস্তূপের পাশে, গ্রামের মানুষজন হঠাৎ ভূগর্ভ থেকে এক প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পেল। মাটি যেন কেঁপে উঠল, তারপর সবকিছু থেমে গেল। ভয়ে তারা কেউ ভেতরে নামল না, শুধু দূর থেকে তাকিয়ে রইল। কয়েকদিন পর কিছু সাহসী লোক সুড়ঙ্গে নামলেও দেখল, ভেতরটা ফাঁকা, কোনো ধনভাণ্ডার নেই, নেই কোনো শিলালিপি, নেই কোনো প্রমাণ। শুধু এক জায়গায় পড়ে আছে অর্ণবের নোটবুক, যেটা ভিজে গেলেও তার লেখা অক্ষত রয়ে গেছে। গ্রামের এক বৃদ্ধ সেটা হাতে নিয়ে পড়তে গিয়ে অবাক হয়ে গেল—প্রত্যেকটি পাতায় অর্ণব নিখুঁতভাবে লিখে রেখেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী লুকোনো সেই অপরাধ, মানুষের আর্তনাদ আর অভিশাপের কাহিনি। বইটা গ্রামের মানুষের হাতে হাতে ঘুরতে লাগল, তারা জানল ইতিহাসের সত্য। কিন্তু তারা জানত না, সেই সত্যের লেখক কোথায় হারিয়ে গেছে। কেবল মন্দিরের ধ্বংসস্তূপের নিচে মাঝরাতে যারা সাহস করে আসত, তারা অদ্ভুত এক ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসা ফিসফিসানি শুনত—এক তরুণ কণ্ঠস্বর বলছে, “আমি লিখব, সব লিখব।” আর তখনই বোঝা যেত, অর্ণব আজও অন্ধকারের ভেতর থেকে সত্য পাহারা দিচ্ছে, অভিশাপের উত্তরাধিকার হয়ে চিরকাল।
শেষ