অরিন্দম পাত্র
প্রতিদিনের মতো সেই একঘেয়ে সকাল, অফিসে পৌঁছনোর আগে ট্রেনের দোল, ট্রামের ঘণ্টা, রাস্তায় অসংখ্য মানুষের ভিড় আর অসহনীয় শব্দে ভরা একটা শহর—কলকাতা। অফিসের কাজ, ক্লায়েন্টের ফোন, মিটিংয়ের চাপ সব মিলে তার দিন যেন একই ছকে বাঁধা। জানলার বাইরে উঁচু বিল্ডিং আর ধুলোভরা রাস্তাই তার প্রতিদিনের দৃশ্য। কিন্তু আজ যেন ক্লান্তি একটু বেশি, কপালের ভাঁজ একটু গভীর, আর বুকের ভেতর এক অদ্ভুত অস্থিরতা। ঘড়ির কাঁটা অফিস ছুটির সময় ছুঁতেই সে ব্যাগটা কাঁধে তোলে, কিন্তু হঠাৎই মন বলে দেয়—না, আজ সোজা বাড়ি ফেরা হবে না। প্রতিদিনের সেই রুটিনে হাঁটতে হাঁটতে তার ভেতরে জমা হচ্ছে একটা অজানা শূন্যতা, আর আজ সেই শূন্যতাকে নাড়িয়ে দিল শহরের অতিরিক্ত কোলাহল। ঠিক করল, আজ একটু দূরে যাবে—অচেনা কোথাও, যেখানে শব্দ নেই, ধোঁয়া নেই, শুধু হাওয়া আর নিস্তব্ধতা আছে। তার মনে হলো, শহরের বুকেই লুকিয়ে আছে এমন এক জায়গা, যা তাকে ডাকছে।
হাওড়ার দিকে রওনা দিল সে। ট্রাফিকের লাল-সবুজ আলো, রাস্তায় হর্নের শব্দ, গরম বাতাসে উড়ে আসা ধুলোর ঝাপটা—সবকিছুর ভেতরেও তার মনে হচ্ছিল, এভাবে চলতে চলতে হয়তো কোনো একসময় তার নিঃশ্বাস থেমে যাবে। কিন্তু আজকের দিনে অদ্ভুত এক মুক্তির স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। যেন নিজের ভেতরের কোনো অদৃশ্য হাত বলছে, “চলো, পালিয়ে চলো শহরের হাত থেকে।” হাওড়া ব্রিজ পেরোনোর সময় নদীর বুকের হাওয়া এসে তার গাল ছুঁয়ে গেল, যেন এক মুহূর্তের জন্যই সে ফিরে পেল হারানো শান্তি। নদীর জলে আলো ঝিকমিক করছে, কিন্তু তার চোখে ফুটে উঠছে এক অদ্ভুত দৃশ্য—শৈশবের নদী, মামাবাড়ির ঘাট, বন্ধুদের সঙ্গে খেলার ছবি। ঠিক সেই সময়েই মনে হলো, আজকের যাত্রা আর শুধু ক্লান্তি মুছে ফেলার নয়, বরং অনেক গভীর কিছু খুঁজে পাওয়ার। হয়তো একটা হারানো দিন, হয়তো একটা ভুলে যাওয়া মুখ, অথবা হয়তো নিজের ভেতরের একদম অন্য মানুষ।
রিকশা আর ট্যাক্সির ভিড় ঠেলে সে এগিয়ে চলল বোটানিক্যাল গার্ডেনের পথে। রাস্তার পাশে দোকানদাররা হাঁক দিচ্ছে, চায়ের দোকানে বসে লোকজন তর্ক করছে রাজনীতি নিয়ে, কোথাও হঠাৎ বাজছে পুরনো বাংলা গান। শহরের এইসব অচেনা অথচ চেনা দৃশ্য তার প্রতিদিনের জীবনের অংশ, তবু আজ এগুলো অচেনা লাগছে। সে যেন বুঝতে পারছে, এই শহর যতই আপন হোক, তাকে গিলে খাচ্ছে ধীরে ধীরে। এক সময় ক্লান্ত শরীরটা যেন হাঁটতেই চাইছিল না, তবু মনে হচ্ছিল—আজকের ভ্রমণটা একান্ত প্রয়োজন। কারণ আজকের এই পালানো শুধু রাস্তা বদলানো নয়, বরং নিজের ভেতরের চাপা পড়ে থাকা এক টুকরো শ্বাসকে খুঁজে বের করা। অফিসের ধুলো-ধোঁয়া মাখা দিনের শেষে এই অচেনা ডাকে সাড়া দিয়ে সে জানে—এ যাত্রা তাকে কোথাও অন্য জগতে নিয়ে যাবে, যেখানে কোলাহল থেমে গিয়ে শুরু হবে এক অন্য সন্ধ্যা।
–
ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে যখন সে প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনের নামফলকটিকে লক্ষ্য করল, তখনই বুকের ভেতর একটা শিহরণ জেগে উঠল। শহরের এত ভিড়, শব্দ আর ক্লান্তির ভেতর দিয়ে আসার পর হঠাৎ করে এই প্রাচীন বাগানের গম্ভীর অথচ শান্ত দরজা যেন তাকে ভিন্ন এক জগতে টেনে নিল। ফটকের রঙচটা লোহার গায়ে শতাব্দীর চিহ্ন মিশে আছে—কোথাও মরচে ধরা অংশ, কোথাও আবার পুরনো কড়ার খোঁচা, কিন্তু এই জীর্ণতাই যেন বলে দিচ্ছে সময়ের দীর্ঘ ইতিহাস। তার মনে হলো, এই ফটকটা কোনো সাধারণ দরজা নয়, বরং সময়ের এক সীমানা; একবার পেরোলেই সে চলে যাবে অন্য এক পৃথিবীতে। ভেতরে ঢোকার আগেই সে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ, যেন মনকে তৈরি করছে সামনে আসা নতুন অভিজ্ঞতার জন্য। তারপর আস্তে পা বাড়াল ভেতরের দিকে, আর মুহূর্তেই তার চারপাশ পাল্টে গেল। বাইরের ধোঁয়া, গাড়ির হর্ন, মানুষের ভিড় সব যেন মুছে গেল এক নিমেষে। সেখানে কেবল ছিল সবুজের সমুদ্র, অজস্র গাছের ছায়া আর হালকা বাতাসের ফিসফিস।
গার্ডেনের ভেতরে প্রবেশ করতেই তার কানে ভেসে এল নানা পাখির ডাক। কোথাও অচেনা ডানার ঝাপট, কোথাও শালিকের কিচিরমিচির, আবার কোথাও যেন কোনো কাঠঠোকরা গাছের গায়ে থপথপ করছে। এ সব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছিল এক অচেনা অথচ মায়াময় সুর, যা শহরের যান্ত্রিক শব্দের ঠিক বিপরীত। মাথার ওপর দিয়ে গাছের ডালপালা একে অপরের সঙ্গে মিশে গিয়ে তৈরি করেছে এক অদ্ভুত ছাউনি, যার ফাঁক দিয়ে আলোর রেখা এসে পড়ছে মাটির ওপর। সেই আলোয় মাটির ধূসরতা, ঘাসের সবুজ আর ঝরে পড়া শুকনো পাতার হলুদ মিলেমিশে তৈরি করেছে রঙের এক সিম্ফনি। মানুষটি হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করল—সে যেন সত্যিই আর শহরে নেই। প্রতিটি শ্বাসে যে গন্ধ তার নাকে আসছে তা কেবলমাত্র মাটির, গাছের, আর ভেজা পাতার। শহরের ধুলো বা ধোঁয়ার ভারী বাতাসের সঙ্গে এর কোনো তুলনাই চলে না। তার মনে হলো, এই গন্ধের ভেতরেই আছে শৈশবের সেই খেলাঘর, যেখানে স্কুল পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সে দৌড়াত সবুজ মাঠে।
গভীর নিস্তব্ধতার ভেতর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে হলো, চারপাশে যেন অদৃশ্য কোনো সুর বাজছে। বাতাস পাতার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়ার শব্দ, ডালের দুলুনি, দূরের পুকুর থেকে আসা ব্যাঙের ডাক—সবকিছু মিলিয়ে যেন প্রকৃতি নিজেই এক গান গাইছে। মানুষটি থেমে গেল পথের মাঝখানে, চারপাশে তাকাল। চোখে তার পড়ল প্রাচীন গাছগুলোর বাঁকানো গুঁড়ি, যেগুলো দাঁড়িয়ে আছে শত শত বছর ধরে। কত মানুষ এসেছে গেছে, কত ইতিহাস পেরিয়ে গেছে, কিন্তু গাছগুলো থেকে গেছে একইরকম অটল। হঠাৎ তার মনে হলো, প্রকৃতির কাছে সময় থেমে থাকে, কেবল মানুষের ভেতরেই ছুটে চলে অবিরাম। তার মনে হলো এই বাগানের ফটক পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই সে যেন কেবল জায়গা নয়, সময়ও বদলেছে। বাইরের শহরটা মিলিয়ে গেছে কোথাও দূরে, আর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এক সম্পূর্ণ নতুন জগত, যেখানে শান্তিই প্রধান সুর। এই মুহূর্তে সে বুঝতে পারল—আজকের ভ্রমণ কেবল ক্লান্তি কাটানোর জন্য নয়, বরং জীবনের গভীরে কিছু খুঁজে পাওয়ার জন্য।
–
প্রশস্ত পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মানুষটির মনে হচ্ছিল, সে যেন কোনো গোপন জাদুঘরে প্রবেশ করেছে—যেখানে কাঁচের ভেতরে নয়, প্রকৃতির বুকে সাজানো আছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের অমূল্য সংগ্রহ। একদিকে দাঁড়িয়ে আছে আফ্রিকার অজানা গাছ, যাদের পাতার আকার অদ্ভুত; অন্যদিকে কোনো দক্ষিণ আমেরিকান উদ্ভিদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যেন সূর্যের দিকে হাত বাড়িয়েছে। সে জানে না এই গাছগুলোর নাম, জানে না তাদের ইতিহাস, তবু মনে হলো গাছগুলো তাকে একেবারেই অচেনা নয়। যেন কোথাও কোনো গভীর স্তরে তারা তাকে চিনে নিয়েছে, আর সে নিজেও চিনে নিয়েছে তাদের। ধুলো-ধোঁয়ার শহরে প্রতিদিন শুধু মানুষের মুখ আর যান্ত্রিক স্থাপত্য দেখতে দেখতে যে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, আজ সেই চোখের সামনে খুলে গেছে অন্য দিগন্ত। মাটির গন্ধ, ভেজা ঘাসের নরম স্পর্শ আর পাতার ভেতর দিয়ে আলো ফিল্টার হয়ে আসার দৃশ্য তার শরীরকে ধীরে ধীরে এক অন্য শান্তিতে ভরে তুলছিল। এই পথের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন তার কাঁধ থেকে ঝরে ফেলছিল দিনের পর দিন জমে থাকা অদৃশ্য ক্লান্তি।
তার পায়ের তলায় শুকনো পাতার খসখস শব্দ হচ্ছিল, আর মাথার ওপর থেকে ডালপালা দুলে এসে তৈরি করছিল ছায়ার খেলাঘর। হাঁটতে হাঁটতে তার মনে পড়ল শৈশবের সেই গ্রীষ্ম দুপুরের কথা, যখন পরীক্ষার পরের অবসর সময়গুলোতে সে বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামের মাঠে দৌড়াত, গাছের ছায়ায় বসে গল্প করত, আর কখনো কখনো নিঃশব্দে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত। সেই দুপুরগুলোতে হাওয়ার গন্ধ ছিল অন্যরকম—গরম হলেও যেন তার ভেতরে মিশে থাকত কাঁচা আমের টক গন্ধ, দূরের কোনো বাগানের ফুলের মিষ্টি গন্ধ, আর খেলার ক্লান্তিতে ভিজে যাওয়া শরীরের ঘ্রাণ। আজ বাগানের এই নিরিবিলি ছায়াতলায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সেই হারানো দিনের গন্ধ যেন আবার ফিরে এল। হাওয়ার সঙ্গে ভেসে আসছিল এক অদৃশ্য সুর, যা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল অনেক বছর আগের স্মৃতিতে। সে টের পেল, এই গাছগুলো কেবল প্রকৃতির নিস্তব্ধ প্রহরী নয়, বরং স্মৃতির গোপন দ্বারও খুলে দেয়।
সে যতই এগোচ্ছিল, ততই তার মনে হচ্ছিল, এই বাগানের প্রতিটি গাছ যেন আলাদা আলাদা ভাষায় কথা বলছে তার সঙ্গে। কোনো গাছের ছায়া তাকে শীতল আশ্রয় দিচ্ছে, যেন বলছে—“এখানে বসো, ক্লান্তি ঝরাও।” আবার কোনো গাছের উঁচু মাথা তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে—“সময়ের স্রোত যতই বয়ে যাক, দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দৃঢ় হয়ে।” এইসব কথোপকথন ছিল নিঃশব্দ, তবু যেন গভীর। সে বুঝল, অচেনার ভেতরেও আত্মীয়তা থাকে—যেন গাছগুলো তাকে বহুদিন ধরে চেনে, তার জীবনের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে তারা। তার বুকের ভেতর জমে থাকা হাহাকার ধীরে ধীরে গলে গিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি তৈরি করল। শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে পালিয়ে আসা মানুষটি আজ খুঁজে পাচ্ছে তার নিজের ভেতরের গোপন আশ্রয়কে, আর সেই আশ্রয় তৈরি করছে এই সবুজ ছায়াতলা, যেখানে প্রতিটি হাওয়া, প্রতিটি গন্ধ আর প্রতিটি আলো তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে শৈশবের হারানো দুপুরের কাছে।
–
বাগানের পথ ধরে এগোতে এগোতে হঠাৎই তার চোখে পড়ল সেই বিখ্যাত বিশাল বটগাছ। দূর থেকেই যেন মনে হচ্ছিল, এ কোনো সাধারণ গাছ নয়, বরং এক বিশাল সাম্রাজ্য, যার ডালপালা মাটিতে নেমে এসে আবার গাছ হয়ে উঠেছে। যতই সে কাছে যাচ্ছিল, ততই বিস্ময় তার বুক ভরে যাচ্ছিল। শহরের অগণিত বিল্ডিং, সেতু কিংবা মানুষের কোলাহলের ভিড়ে এমন দৃশ্য সে কোনোদিন দেখেনি। গাছটার শিকড়গুলো মাটিতে নেমে এসে যেন নতুন নতুন জীবনের জন্ম দিয়েছে—একটা গাছ থেকে বহু গাছ, অথচ সব একসঙ্গে মিশে আছে একই প্রাণে। ছড়িয়ে থাকা ডালগুলো মাথার ওপর বিশাল এক ছাউনি তৈরি করেছে, যেখানে সূর্যের আলো কেবল ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে পড়ছে। সেই আলো-ছায়ার খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, সে যেন এক অদ্ভুত অরণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে প্রতিটি শ্বাসে ইতিহাসের উপস্থিতি অনুভূত হচ্ছে। তার পা আর এগোলো না; সে দাঁড়িয়ে পড়ল, নিঃশব্দে চেয়ে রইল সেই বিশাল বিস্ময়ের দিকে।
বটগাছের সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ তার মনে হলো, সময়ের এক অদ্ভুত রহস্য এখানে লুকিয়ে আছে। কত শত বছর ধরে এই গাছ দাঁড়িয়ে আছে, কত প্রজন্ম কেটে গেছে, কত মানুষ এসেছে-গেছে, অথচ গাছটি অটল থেকেছে। শহরের রাজনীতি পাল্টেছে, যুদ্ধ হয়েছে, সেতু তৈরি হয়েছে, মানুষ বদলেছে, কিন্তু এই গাছ থেকে গেছে এক অনড় সাক্ষী হয়ে। সে ভাবল, হয়তো একদিন তার দাদামশায়ও এই গাছের ছায়ায় বসেছিলেন, কিংবা কোনো যুগে কোনো প্রেমিক যুগল এখানে মিলিত হয়েছিল। প্রতিটি ঝুরি, প্রতিটি শিকড় যেন বহন করে চলেছে হাজার বছরের গল্প, যেগুলো সে চোখে দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু অনুভব করতে পারছে গভীরভাবে। গাছটার ডাল থেকে ঝরে পড়া পাতার শব্দ যেন সেই অতীতের কথা বলে চলেছে—কখনো রাজাদের যাত্রা, কখনো ব্রিটিশ সাহেবদের আগমন, কখনো আবার সাধারণ মানুষের আনন্দ কিংবা দুঃখের গল্প। সে বুঝতে পারল, কিছু কিছু প্রাণী—যেমন এই গাছ—সময়কে অতিক্রম করে দাঁড়িয়ে থাকে যুগের সাক্ষী হয়ে।
বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে সে অনুভব করল এক অদ্ভুত শান্তি ও ক্ষুদ্রতা। এতদিন সে ভেবেছিল, মানুষই সব থেকে বড়, মানুষই গড়ে তোলে সভ্যতা, মানুষই জয় করে পৃথিবী। কিন্তু এই গাছের সামনে এসে মনে হলো, আসল শক্তি মানুষের হাতে নয়, বরং প্রকৃতির ভেতরে। মানুষের জীবন ক্ষণিকের, কিন্তু প্রকৃতির এই বিস্ময় যুগের পর যুগ ধরে টিকে থাকে। তার বুকের ভেতর এক অদ্ভুত বিনয় তৈরি হলো। মনে হলো, এই গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে তার নিজের দুঃখ-অভিমানগুলো কত তুচ্ছ! এই গাছ একদিকে তাকে অবাক করছে, অন্যদিকে শিখিয়ে দিচ্ছে স্থায়িত্বের পাঠ। জীবনে যত ঝড়-ঝাপটা আসুক, যদি সে এই বটগাছের মতো দৃঢ় হয়ে দাঁড়াতে পারে, তবে কোনো দুঃখই তাকে ভেঙে দিতে পারবে না। ধীরে ধীরে সে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করল, আর মনে হলো—সে যেন এই মুহূর্তে নিজের ভেতরে এক নতুন শক্তি খুঁজে পেয়েছে, যা তাকে জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি দেবে।
–
বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে পৌঁছে গেল এক পদ্মপুকুরের ধারে। চোখে পড়ল জলে ভাসছে অসংখ্য সবুজ পাতা, যার ফাঁকে ফাঁকে ফোঁটা ফোঁটা গোলাপি আর সাদা পদ্ম ফুটে আছে। চারদিকের নীরবতার মাঝখানে পুকুরটা যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছে। জলে মাঝে মাঝে বাতাসের ঢেউ লেগে হালকা দোলা উঠছে, আবার কোথাও মাছের ঝাপটায় ভেসে উঠছে তরঙ্গ। সে চুপচাপ পুকুরের ধারে বসে পড়ল, কেবল শুনতে লাগল জলের মৃদু শব্দ। সেই শব্দে যেন এক অদ্ভুত সুর আছে—না কোনো বাঁশির, না কোনো তবলার, কেবলমাত্র প্রকৃতির নিঃশ্বাস। দূরে একঝাঁক বক ভেসে উঠল আকাশে, সাদা ডানার ঝলক যেন পুকুরের জলে আলো হয়ে প্রতিফলিত হলো। তার মনে হলো, সে যেন সত্যিই অন্য এক পৃথিবীতে এসে পড়েছে, যেখানে শব্দের নেই কোনো জোরালো দাপট, কেবল নিস্তব্ধতার ভেতর লুকোনো সংগীত।
এই দৃশ্য দেখে হঠাৎ তার মনে পড়ল ছোটবেলার সেই গ্রাম্য পুকুরের কথা, মামাবাড়ির উঠোনের পাশে যার বিস্তৃত জলাশয় ছিল তার শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। স্কুল পালিয়ে দুপুরবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ঝাঁপ দেওয়া, কার আগে কে সাঁতার কাটবে সেই প্রতিযোগিতা, কিংবা জলের তল থেকে কচুরিপানা তুলে আনার খেলা—সব যেন আজও অক্ষত থেকে গেছে স্মৃতির ভেতর। গ্রীষ্মের দুপুরে যখন রোদ মাথার ওপর তপ্ত হয়ে উঠত, তখন সেই পুকুরই হয়ে উঠত আশ্রয়। সে চোখ বন্ধ করল, আর স্পষ্ট দেখতে পেল শৈশবের সেই দৃশ্য—হাসি-খুশি মুখ, ছলছলে জল, আর কোথাও দূরে গ্রামের কোনো অচেনা গলার গান ভেসে আসছে। সেই গান হয়তো ছিল কোনো কৃষাণীর সুরেলা আওয়াজ, হয়তো ছিল নদীর ধারে বসে বাউলের কণ্ঠ। কিন্তু আজ এই পদ্মপুকুরের ধারে বসে সেই গান যেন আবার ভেসে উঠল তার কানে। যেন সময় পেরিয়ে, দূরত্ব মুছে গিয়ে শৈশব ফিরে এসেছে বর্তমানের ভেতর।
পুকুরের শান্ত জল তাকে এক অন্যরকম উপলব্ধি দিল। এতদিন শহরের ভিড়ে, গাড়ির হর্ন আর অফিসের কাগজের স্তূপে ডুবে থেকে সে ভুলেই গিয়েছিল প্রকৃতির এই সহজ সৌন্দর্য। কিন্তু আজ, পদ্মপুকুরের ধারে বসে সে বুঝতে পারল, জীবনের আসল সম্পদ হয়তো এই প্রশান্তির ভেতরেই লুকিয়ে থাকে। পদ্মের পাপড়ির ভেতর যেন সে খুঁজে পেল পবিত্রতার এক প্রতীক, যেটা কাদামাটির ভেতর থেকেও ফুটে ওঠে নির্ভেজাল সৌন্দর্যে। তার মনে হলো, মানুষের জীবনও হয়তো এমনই—ঝড়, দুঃখ, কষ্টের কাদা মাড়িয়েও যদি ভেতরের সৌন্দর্যটুকু জাগিয়ে রাখা যায়, তবে সত্যিই জীবন হবে পদ্মের মতো উজ্জ্বল। নিঃশব্দে বসে থাকতে থাকতে সে টের পেল নিজের ভেতরে জমে থাকা অশান্তি ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে। যেন পদ্মপুকুরের জলে তার ক্লান্তি ধুয়ে যাচ্ছে, আর হৃদয় ভরে উঠছে নতুন শান্তি আর আশ্বাসে। এই মুহূর্তে সে জানল, তার আজকের এই ভ্রমণ কেবল একদিনের বেড়ানো নয়, বরং এক নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করার যাত্রা।
–
বাগানের নীরব পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার মনে হলো, সে একা হাঁটছে না। চারপাশে এত গাছপালা, পাখির ডাক, হাওয়ার ঝিরঝির শব্দের ভেতরেও যেন অদৃশ্য কারও পদক্ষেপ শোনা যাচ্ছে। প্রথমে সে ভেবেছিল হয়তো অন্য কোনো পথচারী এসেছে তার পিছনে, কিন্তু ঘুরে তাকাতেই ফাঁকা পথ আর ছায়া ছাড়া কিছু নেই। তবুও, বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল—যেন তার ছোটবেলার বন্ধুদের কেউ হঠাৎ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সে যেন দেখতে পাচ্ছিল সেই বন্ধুটিকে, যে সবসময় স্কুল পালিয়ে মাঠে তাকে নিয়ে যেত ক্রিকেট খেলতে, কিংবা সেই ছোট্ট মেয়েটিকে, যে প্রতিবেশী বাড়িতে থাকত আর প্রায়ই তাকে নতুন খেলার কৌশল শেখাত। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া সেই মুখগুলো, যাদের সঙ্গে একদিন বিকেল কাটানো ছিল রোজকার অভ্যাস, আজ এই বাগানের পথেই আবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠল।
কিছুদূর এগোতেই সূর্যের আলো পাতা ভেদ করে নেমে আসছিল গায়ে, আর সেই আলোকরেখার ভেতরে সে হঠাৎ বাবার মুখটাও যেন দেখতে পেল। ছোটবেলার সেই কঠোর অথচ কোমল চেহারা, যে সবসময় তাকে শাসন করত পড়াশোনার জন্য, আবার রাতে গল্প শোনাতে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। তার মনে পড়তে লাগল সেইসব দিন, যখন স্কুল থেকে ফিরে মাঠে ছুটে যাওয়া, আর তারপর সন্ধ্যায় বাবার ডাক শুনে অনিচ্ছায় ঘরে ফেরা। বাবার মৃত্যুর পর কত বছর কেটে গেছে, কিন্তু সেই ছায়া যেন আজ আবার জীবন্ত হয়ে উঠল। তার মনে হলো, হয়তো এই বাগানের গাছেরা যুগের পর যুগ ধরে এত গল্প জমিয়ে রেখেছে যে, সে যখনই হাঁটে, তাদের পাতার সরসর শব্দে শৈশবের দিনগুলো ফিরে আসে, মানুষগুলো আবার কাছে এসে দাঁড়ায়।
গাছের ফাঁক দিয়ে যখন বাতাস নেমে আসছিল, তার চোখ দুটো ভিজে উঠছিল অজান্তে। মনে হচ্ছিল, জীবনের সব ব্যস্ততা, দায়িত্ব আর ক্লান্তির মাঝেও এই মুহূর্তে সে আবার সেই নিরুদ্বেগ শিশুটি হয়ে গেছে। বন্ধুর হাসি, বাবার স্নেহ, মায়ের ডাকা—সব মিলে যেন বাগানটা এক অদৃশ্য থিয়েটার হয়ে উঠল, যেখানে অতীতের সব চরিত্র আবার অভিনয় করছে তার সামনে। সে বুঝল, হয়তো মানুষ আসলে কখনো একা থাকে না। স্মৃতি আর ভালোবাসা, যারা একদিন আমাদের জীবনে ছিল, তারা গাছেদের পাতার মতোই আমাদের সঙ্গে থেকে যায়—ঝরে পড়ে, আবার নতুন কুঁড়ি হয়ে ফোটে। আর এই বাগান যেন সেই অমর স্মৃতির মঞ্চ, যেখানে তার শৈশব আজও বেঁচে আছে।
–
সন্ধ্যা নেমে আসার ঠিক আগের সেই অপূর্ব সময়টা, যখন আকাশের রং ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে, তখনই সে বাগানের ভেতর থমকে দাঁড়াল। পশ্চিম দিকের আকাশে রঙ ছড়াতে শুরু করেছে অস্তগামী সূর্য, আর তার লালচে আলো পাতার ফাঁক দিয়ে এসে পড়ছে চারপাশে। বিশাল গাছগুলোর গায়ে সেই আলো পড়তেই তারা যেন একেকটা সোনার মূর্তিতে রূপ নিল—ঝলমল করছে, কিন্তু এক শান্ত, সংযত আলোয়। বাতাসও যেন ধীর হয়ে এল, গাছের ডালগুলো আর সরসর করছে না, যেন প্রকৃতিও এই দৃশ্যের সামনে থেমে দাঁড়িয়েছে। মানুষটি বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। তার মনে হলো, এই বাগানের গাছেরা সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে এখন যেন সূর্যের শেষ বিদায়ী আলোর সঙ্গে মিলেমিশে যাচ্ছে। সেই মুহূর্তে শহরের সমস্ত শব্দ, ভিড়, যন্ত্রণা মিলিয়ে গিয়ে কেবল এই সোনালি আবহটাই বাকি থাকল। তার বুকের ভেতরেও এক অদ্ভুত প্রশান্তি নেমে এলো, যেন বহুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া শান্তি অবশেষে তার নাগালে এসেছে।
সে বুঝতে পারছিল, এই ভ্রমণ শুধু প্রকৃতির রূপ দেখার জন্য নয়। দিনের পর দিন অফিসের চাপ, সংসারের দায়, আর সমাজের কোলাহলের ভেতর সে নিজের ভেতরের মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আজ এই অস্তগামী সূর্যের আলো, এই সোনালি রঙের ভেতরে দাঁড়িয়ে সে যেন নিজের সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটির মুখোমুখি হলো। ছোটবেলার যে নির্ভার ছেলেটি স্বপ্নে ভরা চোখ নিয়ে প্রতিদিন নতুন কিছু খুঁজে পেতে চাইত, কিশোর বয়সে যে কবিতা লিখত, গান গাইত, আর বন্ধুদের সঙ্গে রাত জেগে গল্প করত—সেই মানুষটি আজ আবার সামনে এসে দাঁড়াল। সূর্যের আলোয় গাছের ছায়ারা যেন তার ভেতরের সেই মানুষটির রূপ নিয়েছে। মানুষের শরীর হয়তো বয়সের ভারে ক্লান্ত, কিন্তু তার ভেতরে এখনো সেই ছেলেটি বেঁচে আছে, হাসছে, তাকিয়ে আছে ভবিষ্যতের দিকে। এই উপলব্ধি তার মনকে ভরে দিল এমন এক তৃপ্তিতে, যা সে এতদিন শহরের ভিড়ে খুঁজে পায়নি।
সন্ধ্যা নামতে নামতে আকাশে রঙ বদলাতে লাগল—লাল থেকে কমলা, তারপর ধীরে ধীরে বেগুনি। গাছেদের ফাঁক দিয়ে সেই আলো ছড়িয়ে পড়ছিল জল, পাতা, ঘাসের ওপর। মানুষটি ধীরে ধীরে হাঁটছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল সে যেন এক অন্য জগতে প্রবেশ করেছে। তার চারপাশে শুধু প্রকৃতির সোনালি আভা নয়, বরং জীবনের গভীর সত্যগুলোও ভেসে আসছিল। সে বুঝতে পারল, মানুষ যতই বাইরে দৌড়াক, যতই ভিড়ে হারিয়ে যাক, প্রকৃতি সবসময় এক ডাকনেওয়া জায়গা হয়ে থেকে যায়—যেখানে ফিরে এসে আবার নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। অস্তগামী সূর্যের আলোয় ভেজা বাগান তাকে মনে করিয়ে দিল, জীবনের সব ক্লান্তি, দুঃখ, শূন্যতা পেরিয়েও আলো আছে—শুধু চোখ খুলে তাকাতে হয়। আজকের এই সন্ধ্যা, এই সোনালি আভা তার কাছে শুধু একটা ভ্রমণের স্মৃতি নয়, বরং নিজের আত্মাকে পুনরায় আবিষ্কারের মুহূর্ত। সে জানল, এই সন্ধ্যা তার ভেতরে সারাজীবন জ্বলজ্বল করবে—ঠিক গাছের পাতায় ধরা শেষ আলো যেমন রাত নামলেও থেকে যায় স্মৃতির মতো।
–
বাগানের ফটক পার হয়ে যখন সে শহরের পথে পা রাখল, তখনই অনুভব করল এক অদ্ভুত রূপান্তর। সেই সকালের ক্লান্ত মানুষটি, অফিসের কাগজপত্র আর ট্রাফিকের যন্ত্রণায় ভেঙেচুরে যাওয়া এক সাধারণ দেহমাত্র—সে যেন আর নেই। তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এক নতুন মানুষ, যার চোখে এখনো লেগে আছে অস্তগামী সূর্যের সোনালি আলো, কানে বাজছে পাতার সরসর শব্দ, আর বুক ভরা আছে শান্তির নিঃশ্বাসে। বাইরে এখনো একই কলকাতা—গাড়ির হর্ন, ভিড়, ধোঁয়া, কোলাহল—কিন্তু তার ভেতরের কলকাতাটা বদলে গেছে। আগে সে ভিড়ের অংশ হয়ে যেত, তাতে ডুবে গিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। আজ সেই ভিড়ও যেন দূরের কোনো দৃশ্য—সে যেন নিজের চারপাশে এক অদৃশ্য পর্দা টেনে নিয়েছে, যার ভেতরে আছে শুধু সবুজ, জল, আলো আর স্মৃতি। এই অদৃশ্য বাগানকে সে নিজের ভেতরে গড়ে তুলেছে, আর জানে—এবার শহর যতই ক্লান্ত করুক, এই বাগান তাকে সবসময় আশ্রয় দেবে।
রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকান, পানের গন্ধ, মানুষের তাড়াহুড়ো—সবকিছু তার চোখে এক নতুনভাবে ধরা দিল। আগে এগুলো তাকে বিরক্ত করত, মনে হতো ব্যস্ত শহর যেন তার সমস্ত প্রাণশক্তি শুষে নিচ্ছে। কিন্তু আজ মনে হলো, এই কোলাহলের ভেতরেও বেঁচে থাকার এক ছন্দ আছে। তার মনে পড়ল বাগানের ভেতরকার পদ্মপুকুরের নীরবতা, বিশাল বটগাছের অচল সময়, আর সেই শৈশবের মুখগুলো যাদের সে হারিয়ে ভেবেছিল। আজ শহরের এই চেনা দৃশ্যগুলোও যেন নতুন রঙে ভরে উঠেছে, কারণ সে জানে—প্রকৃতি আর স্মৃতির মিশ্রণে যে অভিজ্ঞতা সে অর্জন করেছে, তা তাকে অন্য মানুষ করে তুলেছে। তার ভেতরে এক শান্ত শক্তি তৈরি হয়েছে, যা তাকে জীবনের প্রতিদিনের টানাপোড়েনের মধ্যেও ধরে রাখবে। সে অনুভব করল, আগে সে যে শুধু বেঁচে থাকত, আজ সে সত্যিই জীবনের স্বাদ নিতে শুরু করেছে।
বাসে উঠে জানালার পাশে বসে যখন সে বাইরে তাকাল, তখন রাত নামতে শুরু করেছে। শহরের আলো জ্বলে উঠেছে, ট্রাফিকের লাল-সবুজ সংকেত ঝলমল করছে, কিন্তু তার চোখে ভেসে উঠছিল বাগানের আলোর খেলা। এই শহরই তার ঘর, এ শহরই তার জীবন, কিন্তু আজ থেকে তার ভেতরে আরেকটা শহর তৈরি হয়েছে—একটা শহর, যেখানে কোলাহলের সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটে নীরবতা, যেখানে ইট-কাঠ-পাথরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় সবুজ ছায়া, যেখানে প্রতিদিনের ক্লান্তিকে ধুয়ে মুছে দেয় শৈশবের হাসি। সে জানে, মানুষ হিসেবে সে এখনও সেই একই—একজন অফিস করা, সংসার টানা, দায়িত্বের ভার কাঁধে বয়ে চলা সাধারণ মানুষ। কিন্তু আজ সে অন্য মানুষ হয়ে গেছে এই অর্থে যে, তার ভেতরে এখন এক গোপন বাগান আছে। সেই বাগানে সে যে কোনো সময় ফিরে যেতে পারবে—কাজের ফাঁকে, ক্লান্তির রাতে, কিংবা নিঃসঙ্গতার ভোরে। শহরের ভিড়ের মধ্যেই সে এবার থেকে শান্তির একটি ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে, যা তার সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।
***