Bangla - প্রেমের গল্প

বৃষ্টির সুর

Spread the love

অরুণাভ দাশগুপ্ত


পর্ব ১

বৃষ্টি পড়ছিল ভোর থেকে। দক্ষিণ কলকাতার রাস্তা যেন একটা সজল চিত্রকল্প—ভিজে ছাতা, বৃষ্টির জলে আলো ঝলকানো রিকশার ছাদ, চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানো ক্লান্ত মানুষজন। ঠিক সেই সময়, যাদবপুর মোড়ের একপাশে ফুটপাথে বসে ছিল এক ছেলেটা, হাতে একটা পুরনো গিটার। তার নাম তপন। বয়স পঁচিশের কোঠায়। চোখে ক্লান্তি, তবু আঙুলে সুর।

সে গিটার বাজাচ্ছিল, মাথার ওপরে একটা ছেঁড়া তিরপলের ছায়া, চারপাশে ভিজে কাগজ, পাশের দোকানদার হাঁক দিচ্ছিল—”আরে ভিজে যাবে সব, গুটিয়ে নে গিটারটা!” কিন্তু তপন বাজাতেই থাকল। তার চোখ বন্ধ, মনে যেন এক অজানা সুর গুনগুন করে চলছে।

ঠিক সেই সময়েই, একটা রিকশা এসে দাঁড়াল তার সামনে। মেঘলা নামের একটি মেয়ে নামল রিকশা থেকে। হালকা হলুদ রঙের কুর্তি, কানে ছোট ঝুমকা, হাতে ছাতা। কিন্তু হাওয়া এমন ছুটে এল, ছাতাটা তার হাত ছেড়ে উড়ে গিয়ে পড়ল ঠিক তপনের পায়ের কাছে।

তপন ছাতা তুলতে গিয়েই চোখ তুলে তাকাল। মেঘলা তখন ছুটে এসে বলল, “সরি! আমার ছাতাটা…”
তপন হেসে বলল, “এই নেন। গানটা পছন্দ হল?”
মেঘলা একটু থমকে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ। খুব সুন্দর বাজাচ্ছেন। আপনি কি কোথাও পারফর্ম করেন?”
তপন মাথা নাড়ল, “না, সময় হয়নি। সংসার আর গানের মধ্যে লড়াইয়ে, গানটাই হেরে যায়।”

মেঘলা একটু চুপ করে রইল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “আমি গান গাইতাম… মানে গাইতাম। এখন পারি না।”
“কেন?”
“স্টেজে ভয় পেয়েছিলাম একবার। ভুল করেছিলাম। সেই থেকে গলা বন্ধ। শুধু বৃষ্টির দিনে মনে পড়ে গান।”

তপন একটু চুপ করে থেকে বলল, “তাহলে আজ একটা গান হোক, শুধুই বৃষ্টির জন্য।”

দু’জনে ফুটপাথের এক কোণে বসে পড়ল। তপন আবার গিটার তুলে নিল। আঙুলে চলল ঝরনার মত টুংটাং সুর, আর মেঘলা খুব ধীরে গুনগুন করে উঠল—একটা পুরনো রবীন্দ্রসঙ্গীত। পাশের দোকানদার আর রিকশাওয়ালারাও থমকে দাঁড়াল।

সেই দিনের পর থেকে তারা প্রায় প্রতিদিন দেখা করতে লাগল। তপনের গিটার, মেঘলার কণ্ঠ—আর তাদের আশেপাশে কলকাতার ভেজা বিকেল।

একদিন তপনের এক বন্ধু, যার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে, এসে বলল, “তোমাদের ভিডিও তুলবো? একটা গান রেকর্ড করি?”

তারা জানত না, সেই গান—যার নাম রাখা হল “বৃষ্টির সুর”—একদিন হাজার মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে।

কিন্তু সাফল্য সবসময় সুখ নিয়ে আসে না।
আর গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।

পর্ব ২

তপনের চোখে যেন নতুন আলো জ্বলে উঠেছে। আগে সে শুধু বাজাত, নিজের মধ্যে ডুবে থেকে। কিন্তু মেঘলা আসার পর সুর যেন কথা বলে, গান যেন ছুঁয়ে যায়। তারা এখন রোজই দেখা করে—যাদবপুর মোড়ের ওই পুরনো তিরপলের নিচে। কফির কাপে ভাগ করে খাওয়া, মাঝেমাঝে একসাথে একটাই ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা—সব কিছুতেই এক নতুন অনুভব জমে উঠছে।

মেঘলা প্রথমদিকে শুধু শুনত। মাঝে মাঝে গুনগুন করে উঠত। একদিন তপন হঠাৎ বলল, “তুমি ভয় পাও না তো? এত ভিড়ের মাঝে গান গাইতে?”
মেঘলা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “তোমার সুরে ভয়টা কেমন যেন হালকা হয়ে যায়। মনে হয় আমি পারি।”
তপন বলল, “তবে আজ একটা গান গাও, আমি শুধু বাজাবো।”

সেই দিন তারা দু’জন প্রথম একসাথে রেকর্ড করল মোবাইল ফোনে। হালকা বৃষ্টির শব্দ, গিটারের নরম চলন, আর মেঘলার সেই স্বচ্ছ কণ্ঠ… গানটা শেষ হতেই দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল। তপনের বন্ধু সৌমিক তখন বলল, “দাদা, এইটা আমি ইউটিউবে দেব?”
তপন একটু থমকাল। “এইভাবে দেব?”
“দেখ দাদা, গানটা মন ছুঁয়েছে আমার। আর তোদের গল্পটাও আছে—তুই ফুটপাথে বসে বাজাস, ও মেয়ে ভয় পেয়েছিল, এখন আবার গাইছে… এটা মানুষ শুনবে। জানবি, কত লোক তোদের মত গান খুঁজছে।”

একদিন, হঠাৎ করে ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যায়। ইউটিউবের কমেন্টে মানুষজন লিখছে—
“I don’t understand Bengali but this voice heals.”
“Who are they? Why aren’t they famous yet?”
“The sound of Kolkata’s rain and a broken heart. Beautiful.”

তপন প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। মেঘলা ফোনটা হাতে নিয়ে থতমত খেয়ে বলল, “আমার ভয় হচ্ছিল সবার সামনে আবার গাইতে। কিন্তু এরা তো আমাকে ভয় পেতে দিচ্ছে না…”
তপন হেসে বলল, “কারণ তোর ভয়টাই গান হয়ে গেছে।”

কিছু দিন পর এক মিউজিক প্রোডাকশন হাউস থেকে ফোন আসে। তারা বলে, তারা তপন ও মেঘলাকে একটা অরিজিনাল গান রেকর্ড করতে চায়। সব খরচ তারাই দেবে, রেকর্ডিং স্টুডিও, প্রোমোশন, সবকিছু।
তপনের গলা শুকিয়ে আসে। এতদিন যে ছেলে স্রেফ ফুটপাথে বসে গিটার বাজাত, সে এখন রেকর্ডিং স্টুডিওতে যাবে?

মেঘলা বলল, “তুই যাবে?”
তপন একটু চুপ থেকে বলল, “তুই যাবি?”
মেঘলা জবাব দিল, “যদি তুই সঙ্গে থাকিস।”

রেকর্ডিং-এর দিন তারা দুজনে একসঙ্গে স্টুডিওতে ঢুকল। ভিতরে ঢুকে তারা প্রথমবার বুঝল, গানের পেছনের পেশাদার জগৎ কেমন। মাইক্রোফোন, হেডফোন, শব্দ পরীক্ষা, প্রোডিউসার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার—সবকিছু যেন ঘড়ির কাঁটার মতো চলছে।
তারা যে গান গাইল, সেটার নামই রাখা হল “রিমঝিম কথারা”।

প্রোডিউসার বলল, “তোমাদের মধ্যে কেমিস্ট্রি আছে। কিন্তু একটুআধটু পালিশ লাগবে। ভয়েস ট্রেনিং করলে আরও ভালো হবে। আগামী সপ্তাহে আমরা তোমাদের একটা ছোট গিগে পরফর্ম করাব।”

গিগ মানে? লাইভ শো। লোকের সামনে গান। মেঘলার হাত কেঁপে উঠল। “আমি পারব না। স্টেজে গেলে আমি আবার… আবার…”
তপন তার হাত চেপে ধরল। “তুই পারবি। মনে কর, এটা বৃষ্টি… আমি আছি পাশে।”

দিনগুলো পেরিয়ে গেল প্রস্তুতির মধ্যে। তারা স্টুডিওতে গেল, ভয়েস ট্রেনিং নিল, গানের খুঁটিনাটি শিখল। তপনের জীবনে এত গুছিয়ে কখনও কিছু হয়নি। সে অভ্যস্ত ছিল হঠাৎ করে ওঠা ঝড়ের মত জীবনে। এখন সবকিছু গানের মতো মেপে চলতে হচ্ছে।

গিগের দিন এসে গেল। মঞ্চের পিছনে দাঁড়িয়ে মেঘলা চোখ বন্ধ করে বলল, “তপন, যদি আমি ভুল করি?”
তপন হেসে বলল, “ভুল করলে মানুষ বুঝবে, আমরা এখনো মানুষ আছি। গাও।”

মেঘলা গাইল। শুরুটা একটু কাঁপা গলায়, তারপর নিজের কণ্ঠের ওপর ভরসা ফিরে এল। স্টেজের আলো, ক্যামেরা, দর্শকের হাততালি—সব কিছুর মধ্যে সে একবার চোখ রাখল তপনের দিকে। সে গিটার বাজিয়ে হাসছিল। সেই হাসিটা ছিল আশ্বাসের।

শো শেষ হতে না হতেই আবার মানুষের ভালবাসা—কমেন্ট, মেসেজ, অফার। এবার তারা বড় হয়ে যাচ্ছে, অন্তত গান নিয়ে। কিন্তু ঠিক এই সময়েই গল্পে এল মোচড়।
মেঘলার বাড়ি থেকে ফোন এল। তার বাবা গুরুতর অসুস্থ। তাকে ফিরতেই হবে।

তপন বলল, “যা, আমি আছি।”
মেঘলা বলল, “তুই গাইবি?”
তপন বলল, “তুই ছাড়া গানটা তো পূর্ণ হয় না।”

মেঘলা ফিরে গেল, অজানা সময়ের জন্য।

কলকাতায় তখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
তপন পুরনো সেই ফুটপাথে আবার গিটার নিয়ে বসেছে।
এইবার সে একা গাইছে।
কিন্তু প্রতিটি সুরে কোথাও যেন একটা কণ্ঠ ফিরে আসে—
বৃষ্টির সুরে মেঘলার কণ্ঠ এখনো বাজে।

পর্ব ৩

তপনের গিটারের সুরে এখন এক ধরনের শূন্যতা মিশে গেছে। মেঘলা নেই, অথচ তার ছায়া যেন গিটারের প্রতিটি কর্ডে লেগে থাকে। বৃষ্টির দিনে শহরটা যত ভিজে ওঠে, ততই মেঘলার মুখটা স্পষ্ট হয় তপনের মনে—সেই চোখে ভয়, আবার সাহস, সেই গলার কাঁপুনি, আবার প্রশান্তি।

সে এখন রোজই গায়, কিন্তু একা। আর মানুষজন এখন তাকে চেনে—”ওই যে বৃষ্টির সুর-এর গায়ক, তপনদা!”
কিন্তু তপনের মনে হয়, পুরো গানটা তো ওর ছিল না। গানটা ছিল “তাদের”, তপন আর মেঘলার। এখন তো অর্ধেক সুর নেই।

সেই ফাঁকা গলার ভিতর দিয়েই সে গায়, “বৃষ্টিতে ভিজে যা মন, কথা বলে না কেন এখন…”
রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধা শুনছিল। শেষ হলে হাততালি দিয়ে বলল, “তোমার গলায় কান্না বাজে রে ছেলে। তাই ভালো লাগে।”
তপন হাসল, কিন্তু চোখে জল লুকিয়ে ফেলল গিটারের পেছনে।

মাঝে মাঝে সৌমিক আসে, বলে—”চল, আরও রেকর্ড করি। তোর ফলোয়ার বেড়েই চলেছে!”
তপন মাথা নাড়ায়। “আমার গান এখনো খুঁজছে তার কণ্ঠ।”

একদিন সকালে একটা কুরিয়ার আসে। ছোট একটা প্যাকেট। ভেতরে একটা পেনড্রাইভ, আর একটা চিঠি—মেঘলার হাতের লেখা।

“তপন,
বাড়িতে এসে সব বদলে গেছে। বাবা হাসপাতালে, মা ভেঙে পড়েছে। আমি এখনো বুঝতে পারছি না ঠিক কী করবো। কিন্তু তুই প্রতিদিন গান করিস, আমি শুনি। ইউটিউবে তোর লাইভ শুনি রাতে। জানিস, তোর গিটারে আমার ভয়গুলো পাথরের মতো গলে যায়।

এই পেনড্রাইভে আমি একটা নতুন গানের স্কেচ পাঠালাম। এটা লিখেছি তোকে মনে করে।
তুই যদি চাস, এটাকে একটা গান বানিয়ে দিস।
তোর সঙ্গে গাইতে পারলে ভালো লাগত।
আশা করি, একদিন আবার গাইব।
—মেঘলা”

তপনের হাত কাঁপছিল। সে পেনড্রাইভ খুলে গানটা শুনল—মেঘলা শুধু হাম করছে। কোন কথা নেই, শুধু সুর। গলার নীচে কোথাও হালকা কাঁপুনি, কিন্তু সেই কাঁপুনিতে যে এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছিল।

তপন সেটা নিয়েই বসল। সারারাত গিটার বাজিয়ে একটা কম্পোজিশন তৈরি করল। পরদিন সৌমিককে ফোন করল—“স্টুডিও চাই। আজ। আমি রেকর্ড করব।”

সৌমিক প্রথমে অবাক, তারপর খুশি। “তুই আবার ফিরে এলি, দাদা!”

স্টুডিওতে গিয়ে তপন প্রথমে মেঘলার হামের সুরটা প্লে করল, তারপর তার গিটার নিয়ে সেটা ঘিরে নতুন এক গঠন করল—যেন একটা অদৃশ্য কথোপকথন গড়ে উঠছে।
মিউজিক প্রোডিউসার পর্যন্ত চুপ করে শুনে বলল, “এই গানটা অন্যরকম। কার লেখা?”
তপন হেসে বলল, “একজন যে গান গাইতে ভয় পায়। কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর সুরটা তারই আসে।”

গানটা রিলিজ হল—”শূন্যরেখার গান”।
তপন ও মেঘলার যৌথ সৃষ্টি—যদিও বাস্তবে তখন তারা দুই শহরে, দুই আলাদা জীবনে।
গানটা ভাইরাল হল না প্রথমে। কিন্তু যাঁরা শুনলেন, তাঁরা বারবার শুনলেন। কেউ লিখল, “এই গানটা কানে নয়, আত্মায় বাজে।”
আর মেঘলা? সে কি শুনল?

তপনের মোবাইলে একদিন একটা মেসেজ এল—
“তুই আমার ভয়টাকে সুর বানিয়ে দিলি। আমি আবার গাইতে চাই।”
তপন জানে, সে যা খুঁজছিল, তা ফিরে আসছে ধীরে ধীরে।

সেই রাতে তপন আবার ফুটপাথে বসে গিটার বাজাল। বৃষ্টি পড়ছিল হালকা করে।
একটা ছোট মেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিল। গান শেষ হতেই বলল, “ভাইয়া, আপনি কার জন্য এত মন খারাপ করে গান করেন?”
তপন মাথা নিচু করে বলল, “যার গলা আমার সুর চুরি করে নিয়েছে।”
মেয়েটা হেসে বলল, “ও কি জানে?”
তপন বলল, “ও জানে। শুধু মনে করিয়ে দেওয়া বাকি।”

এবার সে ঠিক করল—মেঘলার কাছে যাবে। সামনে কোনও কনসার্ট নয়, রেকর্ডিং নয়—শুধু একজোড়া চোখের সামনে গিটার বাজিয়ে, আবার বলবে—“তুই পারবি। আমি আছি।”

পর্ব ৪

ট্রেনটা যখন হাওড়া স্টেশন ছাড়ল, তপনের কাঁধে একটা গিটার ব্যাগ। কিন্তু আজ তার মধ্যে শুধু বাদ্যযন্ত্র নেই—ভেতরে রয়েছে কয়েকটা চিঠি, একটা মিক্স করা গান, আর অনেক না-বলা কথা। গত তিন মাসে তপনের জীবনে অনেক কিছু বদলেছে—লোক চিনেছে তাকে, ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার বেড়েছে, গানের অফার এসেছে—but সে জানে, এই সবের শুরু হয়েছিল যেদিন মেঘলার ছাতা তার পায়ে এসে পড়ে।

সে যাচ্ছিল মেঘলার শহরে—চন্দননগর। ছোট শহর, নদীর ধারে, আর তাতে জড়িয়ে থাকা অতীতের গন্ধ। মেঘলা এখন সেখানেই, বাবার চিকিৎসা আর মায়ের দেখভালে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়, কিন্তু দেখা হয়নি বহুদিন।

ট্রেন থেকে নেমে একটা অটো ধরে তপন পৌঁছাল গলির ভিতরের পুরনো একতলা বাড়িটার সামনে। জানালার ধারে বসে ছিল মেঘলা, চোখে চশমা, কোলে একটা খাতা। খাতায় সুরের রেখা, পাতায় আঁকা নদীর ঢেউ, আর পেন্সিলে লেখা কিছু অর্ধেক গানের লাইন।

তপন গেট খুলে ঢুকতেই মেঘলা চমকে উঠল। “তুই? একা চলে এলি?”
তপন হেসে বলল, “তুই একা গাইতে শিখলি, আমি একা আসতে শিখলাম।”

মেঘলা উঠে দাঁড়াল। মুখে বিস্ময় আর চোখে অজস্র প্রশ্ন। কিন্তু কোনও কথা না বলে তপন গিটারটা খুলল, বারান্দার চেয়ারটায় বসে বলল, “গানটা মনে আছে তো?”
মেঘলা বলল, “শূন্যরেখার গান?”
তপন বলল, “না… তার আগেরটা। সেই ফুটপাথের দিনগুলোতে গাওয়া গানটা।”

মেঘলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর আস্তে করে গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করল। শুরুতে একটু দ্বিধা ছিল, কিন্তু তপনের সুর শুনেই সেই ভয় কেটে গেল। তার কণ্ঠ আবার ভেসে উঠল বাতাসে—নরম, ভেজা, সাহসী।

মেঘলার মা তখন বারান্দার পর্দা সরিয়ে দেখছিলেন। কিছু না বলে তিনি মুচকি হাসলেন। যেন বুঝতে পারলেন—এই ছেলেটা কেবল গান গাইতে আসেনি, সে এসেছিল মেয়ের ভয়টাকে আবার সাহসে রূপ দিতে।

দিন তিনেক চন্দননগরে কাটাল তপন। তারা একসঙ্গে হাঁটল নদীর ধারে, গাইল টেম্পো রেকর্ডারে গান, খাতা ভর্তি করল নতুন কথায়। একটা কাগজে মেঘলা লিখল:
“বৃষ্টি তো পড়ে, কিন্তু তুই আসলে সেই বৃষ্টি যা ভিজিয়ে দেয় ভিতরটা।”

তপনের মনটা ভার হয়ে উঠল। সে ভাবল, এই সম্পর্কের কোনো নাম নেই, অথচ একেবারে স্পষ্ট। একে প্রেম বললে কি কম হয়ে যাবে? নাকি আরও বেশি?

ফেরার সময় তপন বলল, “তুই কি ফিরবি কলকাতায়?”
মেঘলা বলল, “আপাতত না। কিন্তু আমি এখন ভয় পাই না।”
তপন জিজ্ঞেস করল, “তবে কি আমি অপেক্ষা করব?”
মেঘলা হেসে বলল, “তুই গান করিস। আমি শুনব। গানটাই আমাদের দেখা করার ঠিকানা।”

ফিরে এসে তপন নতুন করে গাইতে শুরু করল। এবার সে শুধুই নিজের জন্য গায় না—তার প্রতিটি সুর যেন মেঘলার কান পর্যন্ত পৌঁছাতে চায়। প্রতিটি লাইভে, প্রতিটি নতুন গানে এক অদৃশ্য কণ্ঠ যুক্ত থাকে। মানুষ ভাবে এটা তার কল্পনা। কিন্তু তপন জানে—মেঘলা শুনছে।

এক সন্ধ্যায়, এক রেডিও শো থেকে ফোন এল। তারা “বৃষ্টির সুর” এর পেছনের মানুষ দু’জনকে নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান করতে চায়। তপন প্রথমে রাজি হতে চায়নি, তারপর বলল—“আমি আসব যদি ও আসতে চায়।”

মেঘলাকে ফোন করল সে। বলল, “তুই আসবি?”
ওপাশে একটু নীরবতা। তারপর উত্তর এল, “তুই সঙ্গে থাকলে ভয় পাই না।”

অনুষ্ঠানের দিন এলো। বড় রেডিও স্টেশন, কলকাতার মাঝখানে। মেঘলা এল ছায়ার মতো নিঃশব্দে।
তারা দুজন একসঙ্গে মাইক হাতে নিল, হেডফোন পরল, আর ঘোষক জিজ্ঞেস করল, “এই যে গান—বৃষ্টির সুর—এর পেছনের আসল গল্পটা কী?”

তপন বলল, “একটা উড়ে আসা ছাতা, একটা ভাঙা ভয়, আর একটা অসম্পূর্ণ সুর—এই তিনেই তৈরি এই গান।”

ঘোষক বললেন, “তাহলে এখন একটা লাইভ পারফরম্যান্স?”
তারা দুজন তাকাল একে অপরের দিকে। তারপর মেঘলা বলল, “হ্যাঁ। এইবার আমরা ভয় পাই না।”

রেডিওর তরঙ্গজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল সেই পুরনো সুর—
বৃষ্টির শব্দ, গিটারের কর্ড, আর মেঘলার কণ্ঠ।
এইবার কেউ একা ছিল না।
এইবার বৃষ্টি কেবল ভেজায়নি—সে জুড়ে দিল দুইটি ভাঙা হৃদয়।

পর্ব ৫

রেডিও স্টেশনের ছোট্ট ঘরটা যেন এক আশ্চর্য আলোর ঘূর্ণি হয়ে উঠেছিল। বাইরে তখনও বৃষ্টি পড়ছিল হালকা করে, আর ভিতরে তপন আর মেঘলা একসাথে গান গাইছিল—ভয়হীন, দ্বিধাহীন, বুক ভরা সুর নিয়ে। অনুষ্ঠান শেষে শ্রোতারা যেভাবে রিয়্যাক্ট করল, তাতে স্টুডিওর কর্মীরাও অভিভূত।

ঘোষক বললেন, “তোমাদের দুজনের মধ্যে এমন কিছু আছে, যা শুধু গানে ধরা পড়ে না। তোমরা একে অপরের সাহস।”
মেঘলা মৃদু হেসে বলল, “আসলে সুরটা ছিল সবসময় তপনের মধ্যে। আমি শুধু আমার ভয়টা তার গিটারকে দিয়েছিলাম।”
তপন যুক্ত করল, “আর সে ভয়টাই আমার সুরকে আসল রূপ দিয়েছে।”

স্টুডিওর করিডোর ধরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের দুজনের চোখাচোখি হল। মেঘলা বলল, “জানিস, আমি ভেবেছিলাম কখনো আর গাইতে পারব না। কিন্তু তুই তো সুরের মধ্যে আমায় ফিরিয়ে আনলি।”
তপন একটু চুপ করে বলল, “তুই ছিলি বলেই আমার গানটা গান হয়ে উঠল। নইলে সেটা তো স্রেফ কর্ডের কাটা ফ্রেম।”

সেই রাতেই সৌমিক ফোন করল, উত্তেজিত গলায়—“তোমাদের রেডিও লাইভের রেকর্ডিং তো ভাইরাল হয়ে গেছে! ইনস্টাগ্রামে রিল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে! ম্যাগাজিনে ফিচার করতে চাইছে!”
তপন বলল, “আস্তে বল, মাথাটা ঘুরছে।”
সৌমিক হেসে বলল, “তুই আর মেঘলা তো এখন ‘Rain Duo’ নামে পরিচিত! সবাই চাইছে তোমরা একসাথে আরেকটা অ্যালবাম করো।”

মেঘলা তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। বাইরে ছুঁয়ে আসা বাতাসে তার চুল এলোমেলো। তপন বলল, “এই ঝড়টা সামলাতে পারবি তো?”
মেঘলা বলল, “যদি তুই পাশে থাকিস, আমি সব পারি।”

তারা দুজন এখন নিয়মিত অনুশীলন শুরু করল। নতুন গানের জন্য কথাও লিখছিল। তপন বলল, “এইবার আমরা শহরের বাইরে যাব। রেকর্ডিং নয়, প্রকৃতির মধ্যে গান খুঁজতে।”
তারা প্ল্যান করল শান্তিনিকেতন যাবে—কোনও বড় হোটেলে নয়, এক ছোট্ট হোমস্টেতে থাকবে, তালগাছ, কাদা মাখা পথ আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভোরবেলা—সবকিছু যেন এক ছাপা কবিতার মত।

রওনা হওয়ার আগের রাতে, মেঘলা একটা চিঠি তপনের ব্যাগে গুঁজে দিল। সে কিছু বলল না, শুধু চোখ মেলে তাকাল।
তপন বুঝল, চিঠিটা গান নয়, কিন্তু তার থেকেও ব্যক্তিগত কিছু।

শান্তিনিকেতনের দিনগুলো যেন একেবারে অন্যরকম কেটেছে। সকালে তারা মাঠে বসে অনুশীলন করত, বিকেলে হেঁটে যেত কাঁকুড়গাছের তলায়, আর রাতে কুপিবাতির আলোয় বসত কথার আসরে। মেঘলা বলত, “গান তো শহরে শেখা যায়, কিন্তু সুর তৈরি হয় এই সব জায়গায়।”

এক সন্ধ্যায়, ঝড় ওঠার আগে, মেঘলা বলল, “তুই জানিস, কখনো কখনো ভয় থেকে পালিয়ে যাওয়াটাও একরকম সাহস?”
তপন প্রশ্ন করল, “তুই আবার পালাতে চাস?”
মেঘলা চুপ করে রইল। তারপর বলল, “না। আমি শুধু চাই, যদি আমি হঠাৎ হারিয়ে যাই, তুই আমার গলা চিনে ফেলিস।”

তপন বলল, “তোর গলা আমি বন্ধ চোখেও চিনে ফেলতে পারি। তুই যদি হারাস, আমি সুর ধরে তোকে খুঁজে নেব।”

সেই রাতে হঠাৎ করে কালবৈশাখী এল। বিদ্যুৎ নেই, কেবল মোমবাতির আলো আর বৃষ্টির শব্দ। তপন বারান্দায় দাঁড়িয়ে গিটার বাজাচ্ছিল, আর মেঘলা গুনগুন করছিল পাশে বসে। হঠাৎ মেঘলা বলল, “তুই কি জানিস, আমি তোকে ভালোবাসি?”
তপন থমকে গেল। গিটারের কর্ড থেমে গেল। মেঘলা হেসে বলল, “এই প্রথম বললাম তোকে মুখে মুখে।”

তপন বলল না কিছু। শুধু চোখে জল নিয়ে তার গিটারটা আবার তুলল।
গান শুরু করল—কোনো কথা নেই, শুধু মিউজিক।
সেই গানটাই তাদের প্রথম অফিশিয়াল লাভ সং হয়ে গেল।

পরদিন সকালে মেঘলা খুব তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। বাইরে হালকা রোদ, বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ।
তপন তখনও ঘুমাচ্ছিল। বিছানার পাশে একটা খোলা খাতা পড়ে ছিল। তাতে লেখা ছিল—
“যদি ভালোবাসা বৃষ্টির মতো হয়, তাহলে তো আমরা সারাক্ষণ ভিজেই থাকি।”

পর্ব ৬

কলকাতায় ফিরে আসার সময় মেঘলা একবারও পিছনে তাকায়নি। শান্তিনিকেতনের সেই কুয়াশা ঢাকা সকালটা যেন এখনো তার চুলের ভেতর গেঁথে আছে। রিকশার ঝাঁকুনিতে তার চিঠির খাতা কাঁপছিল, অথচ চোখে ছিল একরাশ শান্তি।

তপন ট্রেনের জানালার পাশে বসে ছিল, তার গিটার কোলের ওপরে। একটা অদ্ভুত অভ্যস্ততা তৈরি হয়ে গেছে মেঘলার সঙ্গে চলতে চলতে। এখন মেঘলা কথা না বললেও সে বুঝতে পারে কী ভাবছে। গানের বাইরেও যেন একটা নিঃশব্দ সংলাপ গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে—যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাসের মানে আছে।

ফিরে এসে তারা একসাথে আবার স্টুডিওতে গেল। এবার তারা তৈরি করছিল একটা পূর্ণ অ্যালবাম—“Monsoon Sketches”। আটটা মৌলিক গান, যার প্রতিটিতে থাকবে বৃষ্টি, স্মৃতি আর সম্পর্কের স্তর।

তাদের প্রোডিউসার বলল, “এই অ্যালবামের প্রথম গানটাই ভাইরাল হবে। তোমাদের রসায়ন তো আগেই সবাই দেখে ফেলেছে। এবার তোদের গল্পটাই ছড়িয়ে পড়বে।”

তারা গানের নাম রাখল—“আঁধারে তুমি”। গানটা ছিল গভীর রাতের কথোপকথনের মতো—যেখানে শব্দ কম, কিন্তু অনুভব তীব্র।

রেকর্ডিং-এর সময় তপন মেঘলার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে সেই একই ভয় ছিল, যেটা সে প্রথম দেখেছিল যাদবপুরের ফুটপাথে, কিন্তু এবার সেই ভয় ভয় ছিল না, বরং এক ধরনের স্নিগ্ধতা।

মেঘলা গান শুরু করল—“তুমি কি জানো, আঁধারে আমি শুধু তোমাকেই দেখি?”
তপনের গিটার কাঁপছিল মৃদু করে। মেঘলার গলার ভিতর দিয়ে বয়ে চলছিল এক অসমাপ্ত প্রেমের নদী। গানটা শেষ হতেই স্টুডিও যেন নিঃশব্দ হয়ে গেল। কেউ কিছু বলল না, কেউ হাততালি দিল না—শুধু এক গভীর স্তব্ধতা যেন মেঘলার কণ্ঠে নত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

গানটা যখন রিলিজ হল, প্রথমদিনেই এক লাখ ভিউ পার করল।
কমেন্টে কেউ লিখল, “This is not a song, it’s a feeling wrapped in silence.”
আর কেউ লিখল, “If I ever fall in love, I want it to sound like this.”

তপন আর মেঘলা প্রথমবার বুঝতে পারল, গান শুধু মিউজিক নয়—এটা একটা স্পেস, যেখানে দুজন মানুষ একে অপরকে আরেকবার খুঁজে পায়।

কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে আসতে লাগল প্রস্তাব—বড়ো স্টেজ, টেলিভিশন চ্যানেল, রিয়েলিটি শো-এর অফার। প্রোডিউসার বলল, “এই মুহূর্তে মিডিয়া তোমাদের খুঁজছে। তোমাদের প্রাক্তন, ভবিষ্যৎ, প্রেম, গানের সব কিছু নিয়ে কনটেন্ট বানাবে। ভাবো, যদি একটা লাভ স্টোরি রিলিজ করি ভিডিও আকারে?”

তপন একটু চুপ করে ছিল। মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই ঠিক আছিস তো?”
মেঘলা বলল, “আমি চাই না আমাদের ভালোবাসা একটা কনটেন্ট হয়ে যাক। গান তো গাইছি—তাতে তো প্রেম আছে। সেটা আবার আলাদা করে দেখানোর কি দরকার?”

তারা দুজন মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে এল। মেঘলা বলল, “তুই কি কখনো ভাবিস, আমরা কি সত্যি প্রেমে পড়েছি, নাকি গানেই সবটা রয়েছে?”
তপন হেসে বলল, “প্রেম আর গান তো একই নদীর দুই পাড়, মাঝখানে আমরা হাঁটছি।”

সেদিন রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল না। কিন্তু তপন গিটার নিয়ে ছাদে বসে ছিল। মাথার ওপরে আকাশের তারাগুলো মেঘহীন, তবু তার মনের ভেতর বৃষ্টির শব্দ বাজছিল। সে একটা নতুন সুর বোনার চেষ্টা করছিল, কিন্তু কর্ডে কিছু মিলছিল না। মেঘলা এসে পাশে বসে বলল, “তোর সুর শুকিয়ে গেছে?”
তপন বলল, “তুই নেই বলে।”
মেঘলা ঠোঁট কাঁপিয়ে বলল, “আমি তো পাশেই বসে আছি।”

তপন বলল, “তুই কাছে থাকলেই তো আমি গান ভুলে যাই। শুধু তোকে দেখতে থাকি।”
মেঘলা বলল, “তাহলে আমাদের অ্যালবাম শেষ হবে কীভাবে?”
তপন বলল, “তোর চুমু যদি কর্ড হত, তাহলে সেই দিয়েই শেষ হত।”

মেঘলা হাসল না। মাথা নিচু করে শুধু বলল, “তুই এমন বললে আমার ভয় করে। এত কিছু তো পেয়েছি এই গল্পে, যদি হারিয়ে ফেলি তোকে?”

তপন বলল, “হারালে আমিও গান হারাব। কিন্তু তার আগেই একটা শেষ গান লিখি। যদি হারিয়ে যাই, সেটার মধ্যে যেন আমাদের ছায়া থেকে যায়।”

পর্ব ৭

বৃষ্টি সেই রাতেও পড়েনি, অথচ তপনের ঘরে জানালা খুললেই যেন ভিজে যায় মন। মেঘলার চলে যাওয়ার ভয়টা একটু একটু করে ঢুকে পড়ছিল তার সুরের মধ্যে। অ্যালবাম শেষ হতে চলেছে—তারা এখন ষষ্ঠ গানটার কাজ করছে—কিন্তু প্রতিটা রেকর্ডিংয়ের শেষে তপনের মনে হয়, যেন কিছু ফুরিয়ে যাচ্ছে।

মেঘলা এখন আর আগের মতো খোলা হাসে না। কখনো কখনো অন্যমনস্ক থাকে, নোটবুকে লেখে, আবার মুছে দেয়।
তপন জিজ্ঞেস করে, “কী লিখছিস?”
মেঘলা বলে, “তুই যেটা গাইতে পারিস না, আমি সেটা লিখছি।”
তপন বোঝে, মেঘলা কিছু লুকোচ্ছে।

একদিন সকালে সে মেঘলার ব্যাগে একটা হাসপাতালের রিপোর্ট দেখতে পেল। চোখে পড়ল কিছু মেডিক্যাল শব্দ—“vocal cord stress,” “recurring strain,” “voice rest recommended.”
তপনের গলা শুকিয়ে এলো। সে কিছু না বলে ব্যাগটা ঠিকঠাক রেখে দিল। বিকেলে রিহার্সাল শুরুর আগেই মেঘলার সামনে রিপোর্টটা রেখে দিল।

মেঘলা প্রথমে চুপ, তারপর ধীরে বলল, “তুই দেখেছিস?”
তপন মাথা নেড়ে বলল, “তুই বলিসনি কেন?”
মেঘলা বলল, “কারণ তোর গিটার আমার গলা চায়। আমি জানি, এটা যদি বলতাম, তুই গান বন্ধ করে দিতি। আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে তুই গানটাই ছাড়ত।”

তপন বলল, “তুই আমার কণ্ঠ না থাকলে, আমি কাকে নিয়ে গান গাই?”
মেঘলা বলল, “তুই আমাকে নিয়ে গান গাস না। তুই তোর ভয় নিয়ে গান গাস। আর সেই ভয় যদি এখন আমি হই, তবে তুই আমার চেয়ে বড় সুর।”

তপন চুপ করে রইল। সে জানে, এই কথা মেঘলা শুধু একজন শিল্পীর মতো বলছে না—একজন প্রেমিকাও বলছে, যে নিজের হারিয়ে যাওয়া স্বরটাকেও ভালোবাসার মাঝখানে রাখতে ভয় পাচ্ছে।

তারা কিছুদিন গান বন্ধ রাখল। স্টুডিওতে যাওয়া বন্ধ। মেঘলা চলে গেল এক হিমালয়ের ছোট শহরে—ডাক্তারের পরামর্শে সম্পূর্ণ বিশ্রামের জন্য।
তপন আবার ফুটপাথে ফিরে এল। সে গিটার বাজায়, কিন্তু গায় না।

লোকজন জিজ্ঞেস করে, “আপনার সেই সঙ্গী কোথায়?”
তপন হাসে। উত্তর দেয় না।

রাতের দিকে সে একা একা গান লেখে। গানগুলোর নাম রাখে — “হাওয়া নেই,” “শব্দহীন দাগ,” “তুমি থাকো না থেকেও।”
একদিন সৌমিক এসে বলল, “দাদা, মেঘলাদির খবর কিছু জানেন?”
তপন মাথা নাড়ল, “সে এখন নিজের সুর খুঁজছে।”

তবে হঠাৎ এক রাতে, একটা প্যাকেট এল তপনের ঠিকানায়। ভেতরে একটা পেনড্রাইভ, আর একটা চিঠি।
চিঠিতে লেখা ছিল—

**“তপন,
আমি এখনো গাইতে পারি না। কিন্তু তোর প্রতিটা গান শুনি। বিশ্বাস কর, আমি যখন গান থামিয়ে দিলাম, তখনই তোর গলার সুর আরও গভীর হয়ে গেল।

এই পেনড্রাইভে একটা পিয়ানো ট্র্যাক আছে, আমি লিখেছি… না, বাজিয়েছি। গলা নেই, কিন্তু ছায়া আছে।
তুই চাইলে এটায় তোর গলা বসাতে পারিস।
এইটা যদি আমাদের শেষ গান হয়, তাহলে সেটা হোক নিরবতার গায়ে লেখা সুর।”
– মেঘলা”

তপন পেনড্রাইভ চালু করল। পিয়ানো বাজছে—ধীরে ধীরে, জল পড়ার শব্দের মতো, ভাঙা চুপিচুপি স্বপ্নের মতো।
সে বুঝল, এই গানটা কোনও অনুষ্ঠানের জন্য নয়। এই গানটা চিৎকার করে কিছু বলে না—এই গানটা শুনে মনে হয় কেউ পাশের চেয়ারে বসে হাত ধরে আছে।

তপন নিজের গলা বসাল। কোনও শব্দ ছাড়া, শুধু একটানা হাম। মেঘলার পিয়ানো আর তপনের হাম—একসাথে মিশে গেল। গানটা শেষ হল নিঃশব্দে।
তার নাম দিল—“বৃষ্টির নিচে শব্দ নেই”।

তপন জানত না, মেঘলা শুনবে কি না। শুধু জানত, সে শুনুক আর না-ই শুনুক, গানটা তোলা আছে। যেমন ভালোবাসা থাকে চিঠিতে—পাঠানো হোক বা না হোক, তবু লেখা হয়।

পর্ব ৮

বৃষ্টিটা সেই রাতে নেমেছিল নীরব শব্দে। জানালার কাচে বিন্দু বিন্দু জল জমছিল, আর তপন বসে ছিল এক মগ গরম কফি আর মোবাইলের স্ক্রিন নিয়ে—তাতে ইউটিউবের নতুন গান “বৃষ্টির নিচে শব্দ নেই” আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে।

কেউ কমেন্ট করেছে—
“Didn’t expect to cry at 2am. This isn’t a song. This is something else.”
আরেকজন লিখেছে—
“Feels like someone who once loved me is still whispering my name.”

তপন জানে, এই গানটায় মেঘলার গলা নেই। কিন্তু সে উপস্থিত। পিয়ানোর প্রতিটি ছোঁয়ায়, প্রতিটি বিরতিতে, কোথাও যেন তার নিঃশ্বাস শোনা যায়।

সেই গভীর রাতে হঠাৎ মোবাইলে একটি অডিও মেসেজ এলো। নাম নেই, শুধু ভয়েস।
“তুই গানটা তোর গলার মতোই সুন্দর করেছিস। আমি শুনেছি। আমি কেঁদেছি। আমি জানি না আবার গাইতে পারব কি না, কিন্তু গানটা গলার নয়, বুকের—তুই আমায় বুক দিয়ে শুনেছিস। আমি ঠিক ফিরব। আর একদিন গাইব, তোর পাশে দাঁড়িয়ে।”

তপন ফোনটা কানে চেপে ধরে ছিল অনেকক্ষণ। শব্দ থেমে গেছে, কিন্তু তার ভেতরে যেন সেই কণ্ঠ এখনও বাজছে।

দিন পেরোয়। অ্যালবামের কাজ থেমে যায়। সবাই ধরে নিয়েছে, এই জুটি বুঝি আর নেই। প্রোডিউসার অন্য গায়িকা খুঁজছে, সৌমিক ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল চালু রেখে পুরনো গান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপলোড করছে।

তপন এখন আর কিছু গায় না। সে লেখে, বাজায়, কিন্তু প্লে বাটন চাপেনা। বন্ধ জানালার ওপারে সে মেঘলা দেখে।
কখনো ধুলো জমে যাওয়া নোটবুকে চোখ রাখে, কখনো কানে লাগায় রেকর্ডেড গান, আর মাঝে মাঝে ফোনটা খুলে দেখে, “Seen” লেখা আছে, কিন্তু উত্তর নেই।

একদিন বিকেলে ঝড় উঠল কলকাতায়। হাওয়ার দমকে রাস্তার গাছ হেলে পড়ল, কাগজ উড়ল, আর সেই সাথে উড়ে এল এক পুরনো ছাতা—কালো রঙের, ভাঙা হ্যান্ডেলে।
ঠিক যেমন সেদিন মেঘলার ছাতা উড়ে এসে পড়েছিল তার পায়ে।

তপন ছাতাটা তুলে নিল। আর কিছু না ভেবে বেরিয়ে পড়ল। গন্তব্য ঠিক নয়। কেবল ছাতার নিচে হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হচ্ছিল—কিছু একটা আসছে।

যাদবপুর মোড়ে সে দাঁড়াল। ছাতাটা একপাশে রেখে নিজের পুরনো জায়গায় বসে পড়ল। গিটার খুলল। বৃষ্টি বাড়ছে, রাস্তায় লোক কম, অথচ এক ধরনের চেনা গন্ধ চারপাশে ছড়াচ্ছে।

সে বাজানো শুরু করল—তাৎক্ষণিক, নির্ধারিত নয়, যেন পুরনো কোনও কথোপকথন আবার ফিরে আসছে কর্ডে কর্ডে।
এবং ঠিক তখনই, তার চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে এল এক ছায়া—একটা সাদা শাল গায়ে, চোখে চশমা, আর কাঁধে ছোট পিয়ানোর ব্যাগ।

তপনের গলা শুকিয়ে এল। সে কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলল,
“তুই অপেক্ষা করছিলি তো?”
তপন শুধু মাথা নাড়ল না, বলল, “তুই জানিস না, আমি কবে থেকে এখানেই আছি।”

মেঘলা বসে পড়ল। পিয়ানোটা খুলে রাখল পাশে। হালকা সুরে আঙুল বুলিয়ে বলল, “গলা এখনও কাঁপে। কিন্তু ভয় পাই না।”
তপন বলল, “ভয় পেতে হলে তুই ফিরতিস না।”

তারা দুজন কিছু না বলে বাজাতে লাগল। শহরের বুকে আবার একজোড়া সুর জাগল—একটু ভেজা, একটু মলিন, কিন্তু নিঃসন্দেহ।
এবার তারা গান গাইল না। শুধু বাজাল।
আর তাতেই শহর জানল, তারা ফিরে এসেছে।

পর্ব ৯

কলকাতা আবার বৃষ্টি পেয়েছে। যেন শহর নিজেই অপেক্ষা করছিল এই দিনের জন্য—যেদিন মেঘলা আর তপন আবার একসঙ্গে বাজাবে, গাইবে, কিংবা হয়তো শুধু বসে থাকবে দু’জনে। রাস্তায় ভিজে পাতা, বাস স্টপে জড়ো হয়ে থাকা ছাত্রছাত্রী, আর ফুটপাথের কোণে সেই পরিচিত জায়গায় দুই শিল্পী।

এইবার কিন্তু কোনও লাইভ নেই, ক্যামেরা নেই, প্রোডিউসার নেই। শুধু গান আর দুইটা মন।
তারা গেয়েছে না, শুধু বাজিয়েছে। মেঘলার পিয়ানো আর তপনের গিটার যেন মিলে তৈরি করেছে এক নতুন ভাষা, যেখানে শব্দ দরকার হয় না, শুধু ছোঁয়া লাগে।

চারদিকে লোকজন দাঁড়ায়নি, কারও ফোন ওঠেনি, তবুও রাস্তা যেন শুনছিল।
তাদের মধ্যে আর কোনও আতিশয্য নেই, নেই কোনও “ক্যামব্যাক” জ্বরে ভোগা অভিনয়। তারা জানে—ফিরে আসার মানে হচ্ছে হারানোর ভয় থাকা সত্ত্বেও আবার শুরু করা।

তারা এরপর দিনকয়েক শহরের বাইরে গেল—গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, তারপর নদিয়ার দিকে। একটা ছোট গানের সফর।
কোনও আনুষ্ঠানিকতা নেই, ফেসবুক লাইভ নেই, ব্যানার নেই।
যারা গান শুনেছে, তারা ফিরতি রাস্তায় শুধু বলে গেছে,
“এদের গানটা যেন বুকের ভিতর বাজে।”

রাতে এক হোমস্টের বারান্দায় বসে তপন বলল, “তুই কী চাইস, আমাদের গান নিয়ে?”
মেঘলা একটু চুপ করে রইল। তারপর বলল, “আমি চাই আমাদের গান কেউ না জানুক, কিন্তু কেউ ভুলতেও না পারুক।”
তপন হেসে বলল, “মানে, অদৃশ্য থেকে যাওয়ার প্ল্যান?”
মেঘলা চোখ মেলে তাকাল, “মানে, থেকে যাওয়ার এমন এক পদ্ধতি, যেখানে খ্যাতি আমাদের ছুঁতে পারে না, আর ভোলা আমাদের পেরোতে পারে না।”

তারা ঠিক করল, অ্যালবামটা শেষ করবে না। বরং প্রতিটি গান এক একটি ঋতুর মতো ছেড়ে দেবে ইউটিউবে। ঠিক কোনও ঘোষণা ছাড়াই, হঠাৎ করে।
মানুষ জানবে না, কবে আবার ‘বৃষ্টির সুর’ বাজবে।

এরপর একদিন তপন মেঘলাকে বলল, “তুই চাইলে আমি গানের দুনিয়াটা ছেড়ে অন্য কিছু করতেও পারি। তোর গলা যদি পুরোপুরি না ফেরে, আমি অন্যভাবে থেকেও তোর পাশে থাকতে পারি।”
মেঘলা হেসে বলল, “তুই বুঝিস না, তুই গাইলে আমি ফিরে আসি। তুই থেমে গেলে আমি নিঃশব্দ হয়ে যাব।”
তপন বলল, “তুই তো আমার নিঃশব্দের সঙ্গেও কথা বলতে শিখে গেছিস।”

রাত তখন গভীর।
বাইরে হালকা বৃষ্টি।
মেঘলা বলল, “আজ একটা গান লিখবি?”
তপন বলল, “লিখে ফেলেছি মনে মনে।
শিরোনাম হবে—‘তুমি থেমে গেলে, আমি বাজবো’।”

মেঘলা চোখ বুজল।
তার গলা এখনো ফেরেনি পুরোপুরি। কিন্তু সে জানে, তপনের প্রতিটি সুরে তার উপস্থিতি রয়ে গেছে।
তারা একসঙ্গে গাইতে পারুক বা না পারুক,
তাদের ভালোবাসা এখন এক ‘ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ’।
তাতে কথা নেই, তবু সব বলা থাকে।

শহর জানে, তারা এখন আর আগের মতো নেই। তারা ফিরে এসেছে বদলে গিয়ে।
তাদের মাঝে এখন একটা সুর আছে, যা কোনও মঞ্চে গাওয়া যায় না—
শুধু সেইসব শ্রোতারা শুনতে পায়, যারা একবার ভালোবেসে হারিয়েছিল।

পর্ব ১০

সেই সকালে বৃষ্টি পড়ছিল না, তবুও আকাশ ছিল সীমানাহীন ধূসর। তপন জানত না কেন, মনে হচ্ছিল কিছু একটা শেষ হতে চলেছে—অথচ সেই শেষটা দুঃখ নয়, বরং এক ধরণের পূর্ণতা।

সে জানালার পাশে বসে ছিল, সামনে খোলা একটা খাতা। ভেতরে লেখা ছিল গানের নাম—“যতক্ষণ তুমি শুনতে পাও”।
এটাই তাদের শেষ গান, অন্তত এই পর্বের।

মেঘলা তখন বারান্দায়। গলায় কিছু না লাগিয়ে, নীরব পায়ে সে এক কাপ চা নিয়ে এল। তপন তাকে দেখল, তারপর চোখ সরিয়ে বলল, “আজ রেকর্ডিংটা করেই শেষ করব। তারপরে কিছুদিন গান বন্ধ।”
মেঘলা বলল, “তুই ক্লান্ত?”
তপন মাথা নাড়ল, “না। আমি পূর্ণ। তোর গলায় আজ সুর নেই, তবু তোর চা-নেওয়া ভঙ্গিতে একটা তাল আছে। সেটাই আমার রেওয়াজ।”

সেই বিকেলে তারা স্টুডিওতে গেল। ছোট টিম, কোনও মিডিয়া নেই, কোনও ঘটা নেই। শুধু একটা মাইক, একটা গিটার, আর একটা পিয়ানোর ইন্ট্রো ট্র্যাক।

তপন গাইল।
মেঘলা শুধু হেসে তাকিয়ে রইল। সে এবার কোনও কর্ড বাজায়নি, কোনও কথা বলেনি। কিন্তু তপনের কণ্ঠ যেন দ্বৈতস্বর হয়ে গেল।
শ্রোতারা জানবে না, কোথায় কোথায় মেঘলার নিঃশ্বাস ঢুকেছে, কোথায় কোথায় সে ঠোঁট নাড়িয়ে গাইতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি।

গান শেষে স্টুডিও নিঃশব্দ হয়ে গেল।
তপন শুধু বলল, “এটাই আমাদের শেষ?”
মেঘলা বলল, “শেষ নয়। এটা একটা টান। একটা সুরের শেষ লাইনে যে থেমে যাওয়া থাকে, সেটা যেন পরের লাইনের প্রতীক্ষা।”

তারা সেই গানটি ইউটিউবে দিল না। কোথাও রিলিজ করল না। শুধু নিজেদের জন্য রেখে দিল।
তারা বলল, “এই গানটা শুধু তাদের জন্য, যারা গান না শুনে সুর বোঝে। যারা প্রেম না বলেও ভালোবাসে।”

মাস ঘুরে গেল। মেঘলার গলা একটু একটু করে ফিরে এল।
ডাক্তার বললেন, “তুমি চাইলে আবার গাইতে পারো, কিন্তু সাবধানে। অতিরিক্ত চাপ নিও না।”
তপন বলল, “ওর ভয়টাই তো গান হয়ে গেছে। এখন ও চাইলেই আবার ফিরতে পারবে।”

কিন্তু মেঘলা বলল, “এইবার আমি শুধু তোর পাশে বসে থাকতে চাই। গান গাই না হয় না-ই গাইলাম। কিন্তু আমি তোর সমস্ত গান শোনার জন্য তৈরি।”
তপন তাকিয়ে রইল। তারপর গিটারটা পাশে রেখে বলল,
“তুই থাকলে আমি গান গাই।
আর যদি তুই গান গাস, আমি শুনতে শিখব।”

একদিন হঠাৎ করেই বৃষ্টি নামে। অনেকদিন পর।
তারা আবার ফিরে যায় যাদবপুর মোড়ের সেই পুরনো ফুটপাথে।
তপন গিটার হাতে নেয়, মেঘলা বসে থাকে চুপচাপ।
লোকেরা চিনতে পারে না। কেবল সুরটা শুনে থমকে যায়।

এক বালক এসে জিজ্ঞেস করে, “আপনারা কি রেডিওতে গান গাইতেন?”
তপন হাসে। বলে না কিছু।
শুধু আঙুল ছোঁয়ায় গিটারের তারে।
পাশে বসা মেয়েটি চোখ বন্ধ করে শোনে।

তারা জানে, এখন আর কাউকে প্রমাণ করার কিছু নেই।
তাদের প্রেম এখন মিউজিক অ্যালবামের পরিসংখ্যান নয়,
তাদের গান এখন অর্কেস্ট্রার শিরোনাম নয়।
তারা নিজেরা এখন একেকটা সুর—
যা বৃষ্টির দিনে ভিজে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে,
কেউ কুড়িয়ে পায়, কেউ হারিয়ে ফেলে।

কিন্তু কেউ ভুলতে পারে না।

তাদের শেষ গানটা কখনো রিলিজ হয়নি।
তবে কোনও এক শ্রোতা একদিন শুনে ফেলবে,
কোনও অন্ধকার রাত্রিতে, কোনও চুপচাপ বাসস্ট্যান্ডে,
আর ভাববে—
“এই গলার মধ্যে যেন আমার নিজের গল্পও ছিল।”

সেই দিনও বৃষ্টি পড়বে।

– সমাপ্ত –

1000024465.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *