Bangla - ছোটদের গল্প - সামাজিক গল্প

প্লাস্টিকের শহর

Spread the love

কৌস্তভ হালদার


মেগাসিটি—এক আধুনিক নগরী, যেখানে একদিকে ঝকঝকে আকাশচুম্বী ভবন, অন্যদিকে দমবন্ধ করা বর্জ্যের পাহাড়। দিনের আলো ফোটার আগেই গাড়ির হর্ণ, ফ্যাক্টরির ধোঁয়া আর মানুষের ভিড়ে শহর জেগে ওঠে। কিন্তু সেই ভোরের সৌন্দর্য অনেক দিন আগেই হারিয়ে গেছে। সূর্যের আলো ধোঁয়া আর কুয়াশার মতো জমাট ধুলায় আটকে যায়, আকাশের নীল রঙ চাপা পড়ে থাকে ধূসর চাদরের নিচে। রাস্তার ধারে যেখানেই তাকানো যায়, সেখানেই প্লাস্টিকের রঙিন ব্যাগ, বোতল, খাবারের মোড়ক, একবার ব্যবহার করা চামচ বা গ্লাস। প্লাস্টিক এতটাই জায়গা দখল করে নিয়েছে যে মানুষ যেন তার ভেতরে বাস করছে—এ শহর এখন কংক্রিটের নয়, এক অদৃশ্য প্লাস্টিকের কারাগার। নদী-খালগুলো কেবল নামমাত্র থেকে গেছে। একসময় যেসব জলধারা শহরের প্রাণ ছিল, আজ সেগুলো কালো বর্জ্যে ঢেকে গন্ধ ছড়ায়, আর তার ওপরে ভাসতে থাকে প্লাস্টিকের বোতল ও পলিথিনের প্যাকেট। মাছেরা বহু বছর আগেই উধাও হয়ে গেছে, আর বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যায় কারণ ড্রেন ভর্তি থাকে জমে থাকা প্লাস্টিকে। পথচারীদের চোখে-মুখে বিরক্তি আর অসহায়তা—সবাই যেন জানে সমস্যা আছে, কিন্তু কারও আর কিছু করার নেই।

এই শহরের প্রতিদিনের জীবনে প্লাস্টিক এমনভাবে মিশে গেছে যে মানুষ তা ছাড়া কিছু কল্পনাই করতে পারে না। বাজার থেকে কেনাকাটা মানেই প্লাস্টিক ব্যাগ, খাবার খাওয়া মানেই প্লাস্টিক প্লেট বা চামচ, অফিস থেকে কফি আনা মানেই প্লাস্টিকের কাপে ভরসা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে, কখনো কখনো পৌরসভার গাড়ি এসে সেগুলো তুলে নিয়ে যায়, কিন্তু গন্তব্য হয় দূরের কোনো খোলা মাঠ বা নদীর তীর। সেই স্তুপ আরও এক জায়গায় পাহাড় হয়ে ওঠে, সেখান থেকেও গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকাজুড়ে। স্কুলে যেতে গিয়ে বাচ্চারা প্রায়ই নাক চেপে ধরে, কেউ কেউ কাপড় বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকে, তবু গন্ধ আর ধোঁয়া ঢুকে পড়ে শরীরে। প্লাস্টিক পুড়িয়ে দেওয়া হলে ধোঁয়ায় পুরো মহল্লা ভরে যায়, মানুষ হাঁপাতে থাকে, রোগ-বালাই বাড়ে। তবু এই চক্র যেন থামার নয়—প্রতিদিন আরও প্লাস্টিক তৈরি হচ্ছে, প্রতিদিন আরও মানুষ ব্যবহার করছে, আর শহর ক্রমে গ্রাস করছে নিজেকেই। মানুষের মুখে মুখে সমস্যা নিয়ে অভিযোগ শোনা যায়, কিন্তু কেউ সত্যিই এগিয়ে আসে না। কারণ সবাই ভাবে—“আমি না বদলালেও শহর চলবে, অন্য কেউ হয়তো কিছু করবে।” এই নির্লিপ্ততা, এই অচেতনতা শহরটিকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয়।

এমন এক নগরের বুকে জন্মেছে ছোট্ট কিশোর আৰ্য। বয়স চোদ্দো, কিন্তু চোখে মুখে প্রশ্নের ঝিলিক। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রতিদিন সে দেখে কীভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য জমে ছোট পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে, কীভাবে মানুষের পা কাদাজলের মতো আটকে যাচ্ছে আবর্জনায়। তার সহপাঠীরা এই দৃশ্যকে সাধারণ মনে করে—তাদের কাছে এটা শহরের স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু আৰ্য একে সাধারণ বলে মেনে নিতে পারে না। তার বুকের ভেতর এক ধরনের চাপা অস্বস্তি তৈরি হয়—কেন মানুষ নিজের শহরকে এভাবে নষ্ট করছে? কেন নদী হারিয়ে যাচ্ছে? কেন আকাশ ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে? রহমান স্যারের পড়ানো বিজ্ঞানের বইয়ে সে পড়েছে পৃথিবীর উষ্ণতা, দূষণ আর পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা। কিন্তু বইয়ের পাতায় পড়া বিষয় হঠাৎ করে যখন প্রতিদিন চোখের সামনে দৃশ্য হয়ে ওঠে, তখন সেটা কেবল তথ্য থাকে না, হয়ে ওঠে যন্ত্রণার বাস্তবতা। স্কুল থেকে ফেরার পথে একদিন সে দেখে, আবর্জনার স্তূপের পাশে খেলা করতে গিয়ে এক পথকুকুর প্লাস্টিকের ব্যাগ গিলে ফেলেছে, আর কিছুক্ষণ পরেই যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মারা গেল। সেই মুহূর্তে আৰ্যর বুক কেঁপে ওঠে। সে বুঝে যায়—এই পথ চলতে থাকলে শুধু পশু নয়, মানুষও একদিন এই প্লাস্টিকের পাহাড়ে দম বন্ধ হয়ে মরবে। তার মনে তখনই দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায়—“এভাবে চলতে পারে না, কিছু একটা করতেই হবে।” আর সেই উপলব্ধিই হয়ে ওঠে গল্পের আসল যাত্রার শুরু।

সকালের স্কুলটা শহরের কোলাহলের ভেতরেও যেন আলাদা এক আশ্রয়। যদিও চারপাশে প্লাস্টিক বর্জ্যের গন্ধ ভেসে বেড়ায়, তবু স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকলেই কিছুটা নিরাময় পাওয়া যায়। গাছপালা আগের মতো নেই, কিন্তু যেটুকু সবুজ টিকে আছে, সেখানেই বাচ্চারা একটু হাওয়া পায়। সেদিনের বিজ্ঞান ক্লাসটা ছিল অন্যরকম। রহমান স্যার ব্ল্যাকবোর্ডে বড় করে লিখলেন—“পরিবেশ দূষণ ও আমাদের ভবিষ্যৎ”। ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত এই বিষয় শুনে হাই তোলে, কারণ এগুলো কেবল পরীক্ষার জন্য পড়তে হয়। কিন্তু সেদিন স্যারের কণ্ঠে ছিল অদ্ভুত দৃঢ়তা। তিনি বোঝাতে শুরু করলেন, কীভাবে প্রতিদিনের প্লাস্টিক ব্যবহার শহরের নদী, মাটি আর বাতাসকে হত্যা করছে। ছবির মাধ্যমে দেখালেন সমুদ্রের মাঝে ভাসমান প্লাস্টিক দ্বীপ, যেখানে মাছ মরছে, পাখি গলায় পলিথিন আটকে শ্বাসরোধে মারা যাচ্ছে। ক্লাসে নীরবতা নেমে এলো—শব্দ নেই, কেবল চক দিয়ে আঁকা ছবি আর স্যারের গম্ভীর কণ্ঠ। আৰ্য গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, আর মনে হচ্ছিল প্রতিটি কথা যেন তার নিজের চোখে দেখা বাস্তবতার প্রতিধ্বনি। তার মনে ভেসে উঠছিল সকালের দৃশ্য—রাস্তার ধারে প্লাস্টিকের স্তুপ, কালো হয়ে যাওয়া ড্রেন, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বাতাস। হঠাৎ যেন বইয়ের তত্ত্ব আর শহরের বাস্তবতা এক হয়ে গেল।

ক্লাস শেষে সবাই যখন গুছিয়ে বেরোতে লাগল, আৰ্য চুপচাপ বসে রইল। তার মাথায় নানা চিন্তা ঘুরছিল। ঠিক তখনই মীনা এসে পাশে বসল। মীনা কিছুটা অস্থির হয়ে বলল, “তুই খেয়াল করেছিস, স্যারের কথা যেন আমাদের শহরকেই বোঝাচ্ছিল? নদীটা তো একসময় নৌকা চলার মতো ছিল, আর এখন কেবল আবর্জনার গন্ধ।” ওদের কথোপকথনে যোগ দিল রোহিত, যার হাতে সদ্য কেনা একটা পুরোনো স্মার্টফোন। সে বলল, “সবাই শুধু সমস্যা নিয়ে বলে, কিন্তু সমাধানের কথা ভাবে না। আমরা কি চাইলে কিছু করতে পারি না?” সোনালি, যে সাধারণত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আগ্রহী, হাসিমুখে বলল, “আমরা তো বাচ্চা, আমাদের কথা কে শুনবে? কিন্তু যদি আমরা একসাথে দাঁড়াই, তবে হয়তো শোনা যাবে।” জয়, দলের সবচেয়ে ছোট, ব্যাকপ্যাকে হাতড়াতে হাতড়াতে একটা ভাঙা প্লাস্টিকের খেলনা বের করল আর হেসে বলল, “দেখো, আবর্জনা দিয়েও খেলনা বানানো যায়। তাহলে যদি মানুষ বুঝত প্লাস্টিক শুধু ময়লা নয়, কাজেও আসতে পারে?” তার সরল কথায় সবাই থমকে গেল। ছোট্ট শিশুর ওই নির্দোষ পর্যবেক্ষণ যেন অনেক বড় প্রশ্ন ছুড়ে দিল। সবাই বুঝল—আসলে কোনো না কোনো জায়গা থেকে শুরু করতে হবে, তা যত ছোটই হোক না কেন।

দলটা সেদিন স্কুলের লাইব্রেরির পেছনের বাগানে গিয়ে বসলো। গাছের নিচে ছায়া, চারপাশে পাতার মর্মর ধ্বনি—সেখানে তারা মিলে নতুন এক পরিকল্পনার বীজ বপন করল। আৰ্য প্রথমে নিজের মন খুলে বলল, “আমাদের শহর কেউ বাঁচাবে না। বড়রা ব্যস্ত, সরকার হয়তো পরিকল্পনা করবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে না। তাহলে কেন আমরা শুরু করব না?” মীনা উত্তেজিত হয়ে বলল, “আমরা যদি প্লাস্টিক জমা দেওয়ার একটা জায়গা বানাই? যেখানে মানুষ বর্জ্য দিয়ে কিছু পাবে।” রোহিত তৎক্ষণাৎ প্রযুক্তির সম্ভাবনা খুঁজে পেল—“আমি একটা অ্যাপ বানাতে পারি, যেখানে প্লাস্টিক জমা দিলে পয়েন্ট আসবে। আর সেই পয়েন্ট দিয়ে মানুষ পুরস্কার নিতে পারবে।” সোনালি বলল, “মানুষকে বোঝানো সবচেয়ে কঠিন হবে। কিন্তু আমি যদি রাস্তার মোড়ে মোড়ে গিয়ে বলি, যদি আমরা সবাই মিলে চিৎকার করি, তবে হয়তো কারও কানে পৌঁছাবে।” জয় আনন্দে হাততালি দিল—“তাহলে নাম দিই ‘প্লাস্টিক ব্যাংক’। ঠিক যেমন টাকা জমা দিলে সুদ মেলে, এখানে প্লাস্টিক জমা দিলে পয়েন্ট মেলে।” সবাই এক মুহূর্ত থেমে গেল, তারপর হেসে উঠল। হাসির ভেতরেই যেন এক নতুন স্বপ্নের জন্ম হলো। এ ছিল ছোট্ট এক আইডিয়া, কিন্তু তারা বিশ্বাস করল—এটাই হয়তো একদিন শহরের অন্ধকার সরিয়ে দেবে।

বিকেলের শেষ আলোয় স্কুলের মাঠে পাঁচ বন্ধুর চোখেমুখে অদ্ভুত এক উত্তেজনা ফুটে উঠেছিল। তারা জানত, তারা যা ভাবছে তা নিছক খেলার ছেলেখেলা নয়—এটা এমন কিছু যা সত্যিই শহর বদলে দিতে পারে। প্লাস্টিকের পাহাড় তাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে, আর সেটাকেই বদলানোর স্বপ্ন দেখছে তারা। আৰ্য এক অদ্ভুত দৃঢ়তা নিয়ে বলল, “যদি মানুষ বুঝতে পারে প্লাস্টিক জমা দিয়ে কিছু পাওয়ার মতো উপকার আছে, তাহলে তারা হয়তো আগ্রহী হবে।” তার চোখে আগুনের মতো ঝিলিক, যেন সে আজই শুরু করে দিতে চায়। মীনা হাত নেড়ে বলল, “ঠিক তাই, মানুষকে বোঝাতে হলে শুধু উপদেশ দিলে চলবে না, তাদের জন্য কিছু প্রাপ্তি থাকতে হবে।” রোহিত তখনই একটা নোটবুক বের করে আইডিয়াগুলো লিখে ফেলতে শুরু করল—কীভাবে অ্যাপে মানুষ তাদের জমা দেওয়া প্লাস্টিকের হিসাব দেখতে পাবে, কীভাবে পয়েন্ট যোগ হবে, আর সেই পয়েন্ট দিয়ে কোন কোন জিনিস পাওয়া যাবে। সোনালি খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে যেন নিজের মনের কথা বলল, “এটা শুধু একটা খেলা হবে না, এটা হবে মানুষের জীবনের নতুন অভ্যাস।” জয় উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে উঠল, তার কণ্ঠে ছিল নিখাদ সরলতা—“আমরা যদি নাম দিই ‘প্লাস্টিক ব্যাংক’, তাহলে সবাই বুঝবে এটা শুধু বর্জ্য ফেলার জায়গা নয়, বরং জমা রাখার মতো জায়গা।” মুহূর্তেই তারা অনুভব করল, যেন সত্যিই কোনো ব্যাংকের মতো এক প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে যাচ্ছে—যেখানে জমা হবে প্লাস্টিক, আর লাভ হিসেবে পাওয়া যাবে ভবিষ্যতের আশা।

পরের কয়েকদিন তারা প্রতিদিন স্কুল শেষে জড়ো হলো। রহমান স্যার সরাসরি সাহায্য না করলেও চোখে-মুখে একরাশ মমতা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, “তোমরা যদি সত্যিই কিছু করতে চাও, তবে প্রথমে ছোট থেকে শুরু করো। মানুষকে বোঝাও সহজভাবে।” মীনা রঙতুলি নিয়ে বসে গেল—সে পোস্টার বানাতে শুরু করল, যেখানে একদিকে প্লাস্টিক বর্জ্যের পাহাড়, অন্যদিকে সবুজ গাছ আর হাসিখুশি শিশুদের ছবি। সেই ছবির নিচে বড় অক্ষরে লেখা থাকল—“প্লাস্টিক জমা দিন, ভবিষ্যৎ বাঁচান।” সোনালি তার কথার শক্তি ব্যবহার করল, একখানা ছোট্ট বক্তৃতা লিখে ফেলল—যেটা পরে স্কুলে, কিংবা এলাকার মানুষদের সামনে বলবে। রোহিত বসে বসে অ্যাপের খসড়া বানাল। যদিও ফোন বা ল্যাপটপ খুব উন্নত ছিল না, কিন্তু তার প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ তাকে অসম্ভব শক্তি দিল। অ্যাপে একটা ছোট্ট প্রোফাইল বানিয়ে মানুষ সেখানে নাম রেজিস্টার করবে, তারপর তারা কত কেজি প্লাস্টিক জমা দিল, তার ওপর ভিত্তি করে পয়েন্ট পাবে। সেই পয়েন্ট দিয়ে প্রথমদিকে ছোটখাটো পুরস্কার যেমন পেন্সিল, খাতা, বা পুরোনো বই দেওয়া যাবে। জয় এই প্রস্তাবে আনন্দে নেচে উঠল, কারণ সে জানত ছোটরা এই পুরস্কারে ভীষণ খুশি হবে। ধীরে ধীরে সবাই বুঝল, এই উদ্যোগ শুধু বর্জ্য কমানো নয়, বরং মানুষের মানসিকতাকেও বদলে দিতে পারে।

তাদের স্বপ্ন তখন যেন রূপ নিতে শুরু করেছে। শহরের কোলাহলের মাঝেও, আবর্জনার গন্ধ আর দূষিত বাতাসের ভেতরেও তারা ভবিষ্যতের সবুজ শহরের ছবি আঁকছিল। আৰ্য প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকত, যেখানে একসময় তার দাদু নৌকা বাইতেন। এখন সেখানে শুধু পচা জল আর ভাসমান প্লাস্টিক। কিন্তু তার চোখে ভেসে উঠত নতুন এক চিত্র—এই নদী পরিষ্কার হয়ে আবার নৌকা চলবে, শিশুরা সেখানে খেলবে। সে অনুভব করত, তাদের উদ্যোগ যদি সত্যিই ছড়িয়ে পড়ে, তবে একদিন শহরের মানুষ নিজেদের অভ্যাস বদলাতে বাধ্য হবে। বন্ধুদের চোখেও সেই বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছিল। মীনা বলল, “ভাব তো, যদি শহরের প্রতিটি মানুষ এক মুঠো প্লাস্টিকও জমা দেয়, তবে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি প্লাস্টিক কমে যাবে।” রোহিত যোগ করল, “এবং অ্যাপে আমরা দেখাতে পারব মোট কত প্লাস্টিক জমা হলো—এটা মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।” সোনালি দৃঢ় গলায় বলল, “আমাদের কণ্ঠ থামানো যাবে না। ছোট হোক, বড় হোক, আমরা সবাইকে জানাবো। কারণ কেউ যদি এগিয়ে না আসে, তবে পরিবর্তন কখনো ঘটবে না।” জয় হাসিমুখে সবাইকে বলল, “তাহলে তো আমরা সত্যিকারের নায়ক হতে পারি!” তাদের হাসি আর স্বপ্নের ভেতরেই জন্ম নিল এক নতুন যাত্রার পথ—একটা ছোট্ট আইডিয়া, যা একদিন হয়ে উঠবে শহরের মুক্তির আলো।

রোদে ঝলমলে এক দুপুরে পাঁচ বন্ধুরা বসেছিল স্কুলের লাইব্রেরির শান্ত কোণে, সবার চোখে এক ধরনের স্বপ্নের ঝিলিক। তারা জানত, তাদের “প্লাস্টিক ব্যাংক” কেবল কল্পনা থাকলে চলবে না—এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। রোহিত তার ছোট্ট ল্যাপটপ খুলে টেবিলের উপর রাখল। তার চোখে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস, যেন সে জানে যে প্রযুক্তিই তাদের স্বপ্নকে ছুঁয়ে দিতে পারবে। কোডের লাইনগুলো একের পর এক স্ক্রিনে ভেসে উঠতে থাকল, আর বাকিরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। “এখন থেকে যেই প্লাস্টিক জমা দেবে, আমি অ্যাপে তার নাম আর পয়েন্ট লিখে রাখব। এভাবে কেউ ভুলতে পারবে না,” রোহিত গর্বভরে বলল। মীনা কাগজে রঙিন পেন্সিল দিয়ে আঁকছিল একটি প্রতীক—একটি হাতের তালুর ভেতর ছোট্ট পৃথিবী, চারপাশে প্লাস্টিকের বোতল ও ব্যাগকে বৃত্তের মতো সাজানো। সে বলল, “এটাই হবে আমাদের লোগো। সবাই বুঝবে, পৃথিবী বাঁচাতে হলে আমাদের হাতেই দায়িত্ব নিতে হবে।” এই কাজগুলো দেখে আৰ্যর মনে হলো, তাদের ছোট্ট দলটিই যেন বিশাল কোনো যুদ্ধে নেমে পড়েছে, আর প্রতিটি অবদানই অস্ত্রের মতো শক্তিশালী।

তাদের প্রচেষ্টার মধ্যে সোনালি ছিল একেবারে আলাদা। সে কথা বলার মধ্যে এক ধরনের আগুন জ্বালাতে জানত। সেদিন দুপুরে সে স্কুলের অ্যাসেম্বলি হলে দাঁড়িয়ে গেল, হাতে পোস্টার আর চোখে দ্যুতি। চারশো ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকের সামনে তার কণ্ঠ ভেসে উঠল—“আমরা যদি না বদলাই, শহর কখনোই বাঁচবে না।” প্রথমে সবার মধ্যে হাসি-ঠাট্টা ছিল, কেউ কেউ ভাবছিল এ কেবল শিশুসুলভ খেলা। কিন্তু সোনালির কণ্ঠে এমন দৃঢ়তা ছিল যে, ধীরে ধীরে হলঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। প্রতিটি বাক্যে সে যেন সবাইকে এক অদৃশ্য আয়নায় নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখাচ্ছিল। “তোমরা কি চাও নদী শুকিয়ে যাক? তুমি কি চাইবে বাতাসে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ুক?” তার কথাগুলো প্রশ্ন হয়ে গেঁথে যাচ্ছিল প্রত্যেকের মনে। শেষে যখন সে বলল, “আমাদের হাতে এখনো সময় আছে, আর যদি আমরা পাঁচজন পারি, তাহলে তোমরাও পারবে,” তখন হাততালির শব্দে পুরো হল কেঁপে উঠল। এই মুহূর্তেই “প্লাস্টিক ব্যাংক” আর পাঁচজন বন্ধুর গোপন স্বপ্ন থাকল না; এটা স্কুলজুড়ে আলোড়ন তুলল।

অন্যদিকে জয় তার নিজস্ব পথে কাজ শুরু করল। সে জানত, ছোটরা যদি আগ্রহী না হয় তবে পুরো উদ্যোগটাই টেকসই হবে না। তাই সে বাড়ি থেকে, প্রতিবেশীর কাছ থেকে, এমনকি স্কুলের আবর্জনা থেকেও রঙিন প্লাস্টিকের বোতল, ঢাকনা, স্ট্র-সব সংগ্রহ করল। সেগুলো দিয়ে বানাতে লাগল গাড়ি, পুতুল, এমনকি ছোট্ট রোবটের মডেল। একদিন সে স্কুলের মাঠে সবাইকে দেখাল—একটি খেলনা গাড়ি, যা পুরোটাই প্লাস্টিকের ঢাকনা দিয়ে তৈরি, ছোট্ট ব্যাটারির সাহায্যে সত্যি সত্যি চলতে লাগল। বাচ্চারা হইচই করে উঠল, যেন এটি কোনো জাদু। জয় তাদের হাতে তুলে দিয়ে বলল, “এইসব প্লাস্টিক যদি মাটিতে থাকত, তাহলে শুধু দূষণ বাড়াতো। কিন্তু আমরা চাইলে এটাকে খেলনা, সাজসজ্জা কিংবা দরকারি জিনিসে রূপ দিতে পারি।” বাচ্চাদের চোখে আগ্রহ দেখে সে বুঝল—এভাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনে পরিবর্তনের বীজ বপন করা যাবে। ধীরে ধীরে “প্লাস্টিক ব্যাংক” শুধু একটি পরিকল্পনা থাকল না, বরং একে ঘিরে জন্ম নিল নতুন এক আন্দোলন, যেখানে প্রযুক্তি, শিল্প, কণ্ঠ আর সৃজনশীলতা একসাথে হয়ে উঠল শহরের আশার আলো।

প্লাস্টিক ব্যাংকের শুরুটা যতটা উচ্ছ্বাস আর আশার আলোয় ভরা ছিল, বাস্তবে এগোতে গিয়ে ততটাই কণ্টকাকীর্ণ হয়ে উঠল। শহরের রাস্তায় পোস্টার ঝুলতে শুরু করতেই অনেকেই মজা করতে লাগল। মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একদল বয়স্ক মানুষ হেসে বলল, “হাহ, বাচ্চারা আবার শহর বাঁচাবে নাকি? আমরা তো জীবনের অর্ধেক কাটালাম, এতদিনে যদি কিছু না হয়, এখন ওরা কী করবে?” কথাগুলো যেন উপহাসের মতো ছুরির ফলার মতো বিঁধতে লাগল আৰ্যের কানে, কিন্তু সে নীরবে চুপ করে রইল। মীনার আঁকা লোগো, রোহিতের বানানো অ্যাপ আর সোনালির সাহসী বক্তৃতা সবার কাছে কৌতুকের বিষয় হয়ে দাঁড়াল। শহরের পাড়ায় যখন তারা প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক জমা করার ব্যাগ নিয়ে দাঁড়াল, তখন দোকানদাররা তাচ্ছিল্য করে হাসল। “প্লাস্টিক ছাড়া ব্যবসা হয় নাকি? প্লাস্টিকই তো আমাদের জীবন চালায়—দোকান, বাজার, রাস্তাঘাট সব জায়গায় এর দরকার।” কেউ কেউ আবার খারাপ মন্তব্য করল, “এইসব ফালতু কাজে সময় নষ্ট না করে পড়াশোনা করো।” কিন্তু কিশোরদের চোখে তাতে ভয় নয়, বরং এক ধরনের দৃঢ়তা জন্ম নিল।

সহপাঠীদের উপহাসও কম ছিল না। স্কুলে একদিন রোহিতের বানানো অ্যাপটা দেখাতে গিয়েছিল দলটা, ক্লাসের এক কোণে কয়েকজন ছেলেমেয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। “এই আবার কী নতুন খেলা? প্লাস্টিক জমা দিলে নাকি বই পাওয়া যাবে?” কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলল, “তোমরা নায়ক নাকি? শহর বাঁচানোর নাটক করছো।” সোনালির বক্তৃতার কথা টেনে ব্যঙ্গ করে তারা ফিসফিস করে বলল, “শহর বাঁচাতে হলে প্রথমে নিজেদের ক্লাস পাশ করো।” এইসব কটাক্ষে মীনার চোখ ভিজে উঠলেও সে মুখ তুলে কিছু বলল না, বরং খাতার পাতায় আঁকতে লাগল একেকটা ফুল, যেন প্রতিটি ফুলের মধ্যে নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে আছে। আৰ্য তখন মৃদু কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, “তাদের কথা শোনার দরকার নেই। তারা হাসছে কারণ তারা ভয় পাচ্ছে, যদি সত্যিই পরিবর্তন হয় তবে তাদের অভ্যস্ত জীবন বদলে যাবে।” জয় ছোটদের সামনে নতুন খেলনা দেখানোর সময়ও একই উপহাস শুনতে হলো, কেউ বলল, “এগুলো দিয়ে হবে কী? বাজারে এর চেয়ে ভালো খেলনা পাওয়া যায়।” অথচ জয় জানত, তাদের কাজের গুরুত্ব এখন হয়তো বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু একদিন নিশ্চয়ই মানুষ বুঝবে।

এইসব প্রতিকূলতার ভিড়ে দাঁড়িয়ে ছিল কেবল এক নিঃশব্দ উৎসাহদাতা—তাদের বিজ্ঞান শিক্ষক রহমান স্যার। তিনি কখনো প্রকাশ্যে কিছু বলতেন না, যাতে অন্য শিক্ষক বা অভিভাবকরা প্রশ্ন না তোলে, কিন্তু তার দৃষ্টিতে ছিল সমর্থনের আলো। একদিন ল্যাবরেটরির কোণে তিনি আৰ্যকে আলাদা ডেকে বললেন, “স্মরণ রেখো, বড় কোনো কাজ কখনোই শুরুতে সবার প্রশংসা পায় না। যাঁরা পৃথিবী বদলেছেন, তাঁদের সবাই প্রথমে নিয়ে হাসাহাসি করেছে।” এই কথা শুনে আৰ্যের বুকের ভেতর যেন এক অদৃশ্য শক্তি ভরে উঠল। রহমান স্যার আরও যোগ করলেন, “আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্যে হাততালি দিতে পারব না, কিন্তু আমি আছি পাশে। যতটুকু সম্ভব বিজ্ঞান দিয়ে তোমাদের সাহায্য করব।” এই উৎসাহ যেন অন্ধকারের মধ্যে টিমটিম করে জ্বলা আলো, যা পাঁচজন বন্ধুকে নতুন করে সাহস দিল। তারা বুঝল, উপহাস আর বাধা থাকবেই, কিন্তু যদি তারা হাল না ছাড়ে, তবে হয়তো একদিন প্লাস্টিকের এই শহর সত্যিই বদলে যাবে।

শুরুর দিনগুলোতে প্লাস্টিক ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত কেবল আৰ্য, মীনা, রোহিত, সোনালি আর জয়। তাদের চোখে প্রত্যাশার আলো থাকলেও হাতে জমা পড়ত গুটিকয়েক বোতল, থলি বা প্লাস্টিকের মোড়ক। প্রথম সপ্তাহ শেষে অ্যাপের তালিকায় নাম উঠেছিল মাত্র দশজনের, আর পয়েন্টের পরিমাণ এতটাই কম যে কেউ চাইলে কোনো পুরস্কার তুলতে পারত না। অথচ এই ছোট্ট সাফল্যও তাদের কাছে বিরাট প্রাপ্তির মতো লাগল। মীনা হেসে বলেছিল, “দেখো, অন্তত দশজন তো আমাদের বিশ্বাস করেছে।” সেই মুহূর্তে পাঁচ বন্ধু বুঝেছিল, পরিবর্তন হয়ত ঝড়ের মতো আসে না; সেটা আসে টিপটিপ বৃষ্টির মতো, ফোঁটা ফোঁটা করে। একদিন স্কুল শেষে তারা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দেখল, এক বৃদ্ধ ভ্যানচালক নিজের ভ্যান থেকে প্লাস্টিক বোতল নামিয়ে দিচ্ছে তাদের হাতে। ভদ্রলোক বললেন, “ছোটরা যখন এত কিছু করছে, আমি কেন বসে থাকব?” সেই মুহূর্তে তাদের মনে এক অভূতপূর্ব আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল। প্রথমবারের মতো তারা বুঝল—তাদের কাজ সত্যিই কারও হৃদয় ছুঁতে পেরেছে।

সময় গড়াতে গড়াতে মানুষ ধীরে ধীরে কৌতূহলী হয়ে উঠল। রোহিতের বানানো অ্যাপে যখন পয়েন্ট জমতে শুরু করল আর সেই পয়েন্ট দিয়ে কেউ বই, খাতা, এমনকি ছোটখাটো খেলনা পেল, তখন চারপাশে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। অনেকে ভেবেছিল এটা বাচ্চাদের খেলা, কিন্তু যখন বাস্তবে পুরস্কার হাতে পাওয়া গেল, তখন তাদের চোখে অবাক বিস্ময় ফুটে উঠল। সোনালি তখন আবার স্কুলের অডিটোরিয়ামে দাঁড়িয়ে বলল, “দেখছো তো? তোমরা যদি প্লাস্টিক জমা দাও, শুধু শহরই পরিষ্কার হবে না, তোমাদের নিজের জীবনও সমৃদ্ধ হবে।” ধীরে ধীরে শহরের ভিড়ে প্লাস্টিক ব্যাংকের সামনে মানুষের সারি লম্বা হতে লাগল। সকালের বাজার থেকে ফেরা মানুষ ব্যাগভর্তি প্লাস্টিক জমা দিচ্ছে, আবার সন্ধ্যায় অফিস ফেরত কর্মীরাও থেমে যাচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য। জয় ছোটদের হাতে পুরস্কার হিসেবে প্লাস্টিক দিয়ে বানানো খেলনা তুলে দিলে তাদের মুখে যে আনন্দ ঝিলিক দিত, তা দেখে আশেপাশের অভিভাবকরাও অনুপ্রাণিত হতো। শহরের যে রাস্তাগুলো এতদিন ধরে নোংরা আর দুর্গন্ধে ভরা ছিল, সেখানে ছোট ছোট কোণ পরিষ্কার হতে শুরু করল।

এই পরিবর্তন ছিল ধীর কিন্তু স্পষ্ট। এক বিকেলে আৰ্য হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের পাশের গলিটা দেখল—যেখানে একসময় আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকত, সেখানে এখন জায়গাটা অনেকটা খালি। বাতাসে আগের মতো দুর্গন্ধ নেই, বাচ্চারা সেখানে দাঁড়িয়ে লুডু খেলছে। দৃশ্যটা দেখে তার চোখ ভিজে উঠল, যেন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। মীনা বলল, “দেখো, আমরা আসলেই পারছি।” রোহিত অ্যাপের স্ক্রিনে দেখাল, “আজ মোট একশো কেজির বেশি প্লাস্টিক জমা পড়েছে।” সংখ্যাটা শুনে সবার বুক ভরে গেল গর্বে। কিন্তু এর চেয়েও বড় প্রাপ্তি ছিল মানুষের চোখে পরিবর্তনের ঝিলিক দেখা। যারা একসময় হাসাহাসি করেছিল, তারাও এখন নীরবে এসে সারিতে দাঁড়াচ্ছে। রহমান স্যার দূর থেকে তাদের কাজ দেখছিলেন, মুখে মৃদু হাসি। তিনি জানতেন, এই ছোট্ট উদ্যোগ হয়তো পুরো শহর রাতারাতি বদলে দেবে না, কিন্তু যে অন্ধকারের বিরুদ্ধে তারা লড়ছে, সেখানে প্রথম আলোর রেখা দেখা দিয়েছে। আর সেই আলোই একদিন পুরো শহরকে জাগিয়ে তুলতে পারে।

সোনালির দৃঢ় কণ্ঠে বলা সেই কথাগুলো—“আমরা যদি না বদলাই, শহর কখনোই বাঁচবে না”—ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল স্কুলের দেয়াল পেরিয়ে শহরের অলিগলিতে। প্রথমে স্থানীয় এক ছোট পত্রিকা তাদের উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদন ছাপল। শিরোনাম ছিল, “স্কুলের বাচ্চারা শহর বাঁচাচ্ছে।” প্রতিবেদনের ছবিতে দেখা গেল—আৰ্য, মীনা, রোহিত, সোনালি আর জয় প্লাস্টিক ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে প্লাস্টিক সংগ্রহ করছে। এই খবর দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠল। কেউ ভাবতে পারেনি, শহরের পরিবেশের ভার কমানোর কাজ শুরু করেছে কিশোর-কিশোরীরা। পরদিন খবরটা আরও বড় আকারে ছাপা হলো শহরের জনপ্রিয় দৈনিকে। অফিসগামী থেকে শুরু করে চায়ের দোকানের ক্রেতা—সবাই আলোচনা করতে লাগল, “শুনেছো? কয়েকটা স্কুলের ছেলে-মেয়ে নাকি প্লাস্টিক দিয়ে শহর পরিষ্কার করছে!” হাসাহাসি আর উপহাসের জায়গায় এবার ধীরে ধীরে জন্ম নিল কৌতূহল, আর সেই কৌতূহল থেকেই উৎসাহ।

মীনার আঁকা দেয়ালচিত্রও তখন শহরে আলোড়ন তুলেছিল। সে শহরের একটি পুরনো দেওয়ালে রঙতুলি দিয়ে এঁকে ফেলল বিশাল এক পৃথিবীর ছবি—যেখানে একপাশ অন্ধকার, প্লাস্টিকের স্তূপে ঢাকা; অন্যপাশ সবুজে ঘেরা, স্বচ্ছ আকাশ আর নদী। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ কিশোর, হাতে প্লাস্টিক সংগ্রহের ব্যাগ, যেন তারা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে পৃথিবীকে টেনে নিচ্ছে। এই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ থমকে যেত, কেউ ছবি তুলত, কেউ আবার নিজের সন্তানকে দেখিয়ে বলত, “দেখো, যদি আমরা না বদলাই, তোমাদের ভবিষ্যৎ এমন অন্ধকার হবে।” কয়েক দিনের মধ্যেই ছবিটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার—সব জায়গায় শেয়ার হতে লাগল। মানুষ লিখল, “একটা ছবি কতটা শক্তিশালী হতে পারে, তা মীনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।” ধীরে ধীরে এই দেয়ালচিত্র হয়ে উঠল শহরের পরিবর্তনের প্রতীক, আর মীনা বুঝল শিল্পের শক্তি কেবল সৌন্দর্য তৈরিতেই নয়, মানুষের বিবেক জাগ্রত করতেও সক্ষম।

অন্যদিকে জয় আয়োজন করল প্লাস্টিক দিয়ে বানানো খেলনার একটি ছোট প্রদর্শনী। স্কুলের হলঘরে সারি সারি টেবিলে সাজানো রঙিন গাড়ি, নৌকা, পুতুল, এমনকি ছোট ছোট ঘরের মডেল দেখে দর্শকেরা বিস্মিত হয়ে গেল। অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছিল না, এইসব জিনিস একসময় আবর্জনার স্তূপে ছড়ানো ছিল। বাচ্চারা হইচই করে খেলনা ছুঁতে চাইছিল, আর তাদের অভিভাবকেরা ফিসফিস করে বলছিল, “বর্জ্যও যদি এত সুন্দর কিছুতে রূপান্তরিত হতে পারে, তাহলে আমরা এতদিন কেন এটাকে নোংরা বলে ফেলে দিচ্ছিলাম?” প্রদর্শনীর শেষে জয় বলল, “আমরা যদি বর্জ্যকে বোঝা না ভেবে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করি, তবে আমাদের শহর শুধু পরিষ্কারই হবে না, নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলবে।” এই কথাগুলো মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ কেটে গেল। কেউ কেউ ভাবতে শুরু করল, হয়তো সত্যিই এই শিশুদের হাতে ভবিষ্যতের বীজ বপন হচ্ছে। পত্রিকার খবর, ভাইরাল হওয়া দেয়ালচিত্র আর খেলনা প্রদর্শনী মিলিয়ে শহরে এক অভূতপূর্ব জনমত তৈরি হলো—মানুষ বুঝতে শুরু করল, পরিবর্তন সম্ভব, আর সেই পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে তাদেরই চোখের সামনে।

যখন শহরের মানুষ প্লাস্টিক ব্যাংকের ধারণাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে শুরু করল, তখনই শক্তিশালী এক ঝড় এসে দাঁড়াল তাদের সামনে। শহরের বড় বড় প্লাস্টিক কোম্পানিগুলো বুঝতে পারল, যদি এভাবে চলতে থাকে তবে তাদের ব্যবসায় সরাসরি আঘাত আসবে। যত বেশি মানুষ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করতে লাগবে, ততই নতুন প্লাস্টিকের চাহিদা কমে যাবে। কয়েকজন শিল্পপতি গোপনে বৈঠক করল—তাদের চোখেমুখে ছিল উদ্বেগ আর রাগ। “এইসব বাচ্চাদের খেলাধুলা আমাদের কোটি টাকার ব্যবসা শেষ করে দেবে,” বলল একজন। আরেকজন টেবিল চাপড় দিয়ে উঠল, “শহরের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ওরা। আমাদের দেখাতে হবে, এইসব কিশোরদের পরিকল্পনা ফালতু।” এর পর থেকেই তারা শুরু করল চাপ সৃষ্টি। কিছু সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ছাপানো হলো—“প্লাস্টিক ছাড়া আধুনিক জীবন অসম্ভব।” বাজারে প্রচার হতে লাগল, “প্লাস্টিকই সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং আধুনিকতার প্রতীক।” এইসব প্রচারণা সাধারণ মানুষের মনে আবার সন্দেহ জাগাতে লাগল, আর পাঁচ বন্ধুর চোখে ধীরে ধীরে ছায়া নেমে এলো।

এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলেন শহরের মেয়র অরুণাভ সেন। তিনি একজন সৎ কিন্তু বাস্তববাদী মানুষ। একদিকে তিনি দেখছেন, শিশুদের এই উদ্যোগ শহরে আলোড়ন তুলেছে, পরিবেশ কিছুটা হলেও পরিষ্কার হচ্ছে, নাগরিকরা উৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিনি জানেন, প্লাস্টিক কোম্পানিগুলোর হাতে প্রচুর অর্থ আর প্রভাবশক্তি। তারা চাইলে রাজনীতিতেও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে মেয়র দ্বিধায় পড়ে গেলেন। একদিন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা সরাসরি প্রশ্ন করল, “স্যার, আপনি কি প্লাস্টিক ব্যাংকের পাশে দাঁড়াবেন, নাকি শিল্পপতিদের পাশে?” অরুণাভ সোজাসাপ্টা উত্তর দিতে পারলেন না, শুধু বললেন, “শহরের উন্নতি আর মানুষের স্বার্থ—দুটোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।” তার এই নিরপেক্ষ অবস্থান মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করল। কিশোর দলও মনমরা হয়ে পড়ল। মীনা ফিসফিস করে বলল, “যদি মেয়রই পাশে না থাকেন, তাহলে আমরা টিকব কীভাবে?” রোহিত হতাশ হয়ে বলল, “ওরা টাকা দিয়ে সব জায়গা কাবু করে ফেলবে।” সোনালি আর জয় নীরব হয়ে মাথা নিচু করে বসেছিল। মনে হচ্ছিল, এতদিনের চেষ্টা হয়তো এক মুহূর্তেই ভেঙে পড়বে।

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই সামনে এগিয়ে এলো আৰ্য। তার চোখে ভয় নয়, বরং এক ধরনের দৃঢ়তা। সে ধীরে ধীরে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, “শোনো, আমাদের এই কাজ যদি সত্যিই এত শক্তিশালী হয় যে বড় বড় কোম্পানিগুলো ভয় পাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে আমরা সঠিক পথে হাঁটছি। লড়াই ছাড়া কোনো জয় আসে না।” তার কণ্ঠে ছিল এমন শক্তি যে বাকিরা থমকে তাকাল। সে আবার বলল, “আমরা যদি হাল ছেড়ে দিই, তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে—ওদের টাকাই সবকিছু। কিন্তু যদি দাঁড়িয়ে থাকি, মানুষ আমাদের বিশ্বাস করবে।” সোনালির চোখে তখন আবার আগুনের মতো জেদ জ্বলে উঠল, জয় আবার কাগজে নতুন খেলনার নকশা আঁকতে লাগল, রোহিত কোডে আরও শক্তিশালী অ্যাপ বানানোর পরিকল্পনা করল, আর মীনা ভাবতে লাগল নতুন পোস্টারের কথা। সেই রাতে তারা সিদ্ধান্ত নিল—যে বাধাই আসুক, তারা পিছিয়ে যাবে না। কারণ শহরকে বাঁচানো তাদের দায়িত্ব, আর দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বাঁচা যায় না।

শহরের আকাশে যেন এক নতুন ভোর উদিত হলো। যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল পাঁচ কিশোরের হাত ধরে, তা এখন রূপ নিল এক জনসমুদ্রের জাগরণে। প্লাস্টিক ব্যাংকের সামনে দিন দিন মানুষের ভিড় বাড়তে লাগল। একসময় যে জায়গায় মাত্র কয়েকজন এসে প্লাস্টিক জমা দিত, এখন সেখানে ভিড় সামলানো দায় হয়ে গেল। সকালের বাজার থেকে ফেরা গৃহিণী, অফিসগামী কর্মচারী, রিকশাচালক, দোকানদার—সবাই প্লাস্টিক জমা দিতে আসতে লাগল। হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি হলো। প্লাস্টিকের স্তূপ, যা একসময় রাস্তাঘাটে দম বন্ধ করে রাখত, তা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে শুরু করল। রাস্তার ধারে যে গলিগুলো একসময় দুর্গন্ধে ভরা থাকত, সেখানে এখন শিশুরা খেলা করছে, মানুষ নিশ্চিন্তে হাঁটছে। সোনালির কণ্ঠে বলা কথাগুলো—“আমরা যদি না বদলাই, শহর কখনোই বাঁচবে না”—এখন যেন পুরো শহরের স্লোগান হয়ে উঠেছে।

এই পরিবর্তন শুধু চোখে দেখা নয়, প্রকৃতিতেও ছড়িয়ে পড়ল। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, যেটি এতদিন আবর্জনায় দম বন্ধ হয়ে ছিল, ধীরে ধীরে তার পুরনো রূপ ফিরে পেতে লাগল। প্লাস্টিক কমতে থাকায় নদীর জলে মাছ ফিরতে শুরু করল। নদীর ঘাটে গিয়ে একদিন আৰ্য বিস্মিত চোখে দেখল, জেলেরা বলছে, “মাসের পর মাস পর আবার মাছ ধরা যাচ্ছে।” বাতাসও কিছুটা পরিষ্কার লাগছিল; ধোঁয়া আর দুর্গন্ধের ভেতরেও যেন নতুন প্রাণের ছোঁয়া আছে। জয় শিশুদের হাতে নতুন নতুন খেলনা তুলে দিল, আর তারা খুশিতে চিৎকার করে উঠল। মীনার আঁকা নতুন দেয়ালচিত্র শহরের অলিগলি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল, যেখানে সে এঁকেছিল পরিষ্কার নদী, সবুজ গাছ আর হাসিমুখে মানুষ। রোহিত অ্যাপে নতুন ফিচার যোগ করল, যাতে মানুষ নিজেদের জমা দেওয়া প্লাস্টিকের পরিমাণ দেখে গর্ব অনুভব করতে পারে। ধীরে ধীরে মানুষের চোখে ভরসা জন্ম নিল—তারা বুঝল, পরিবর্তন সত্যিই সম্ভব।

মেয়র অরুণাভ সেন সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি দেখলেন, শিশুদের এই উদ্যোগ কেবল প্লাস্টিক কমাচ্ছে না, নাগরিকদের মধ্যে এক নতুন সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলছে। রাজনৈতিক চাপ আর শিল্পপতিদের হুমকির মাঝেও তিনি আর নিরপেক্ষ থাকতে পারলেন না। অবশেষে এক জনসভায় তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, “এই প্রকল্প আর কেবল শিশুদের নয়, এখন এটি সরকারি উদ্যোগ। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্লাস্টিক ব্যাংক গড়ে তোলা হবে, যাতে সবাই অংশ নিতে পারে।” মুহূর্তেই জনসমুদ্রে বজ্রধ্বনির মতো হাততালি পড়ে গেল। আনন্দে শহরের রাস্তায় মিছিল বের হলো, মানুষ গান গাইল, নাচল। সেদিন শহরের বাতাসে ছিল এক অদ্ভুত উল্লাস—যেন কেউ একসাথে বোঝা নামিয়ে রেখে মুক্ত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। পাঁচ কিশোরের চোখে তখন জল ঝিলিক দিচ্ছিল, কিন্তু সেই জল দুঃখের নয়—সেটা ছিল গর্বের, বিজয়ের, আর ভবিষ্যতের প্রতি নতুন বিশ্বাসের।

শহরটাকে একসময় মানুষ চিনত আবর্জনার দুর্গন্ধ, রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক আর নদীর নোংরা জলে ভাসমান বর্জ্যের জন্য। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে দৃশ্যপট বদলে গেল একেবারে। শহরের প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি মোড়ে, এমনকি স্কুলগুলোর সামনে ছোট ছোট প্লাস্টিক ব্যাংক গড়ে উঠেছে। মানুষ এখন অভ্যাস করে ফেলেছে আলাদা করে বর্জ্য জমা দেওয়া, অ্যাপে পয়েন্ট সংগ্রহ করা আর পুরস্কার পাওয়া। শহরের বাচ্চারা তাদের বাবা-মাকে শেখাচ্ছে, আর বাবা-মায়েরা প্রতিবেশীদের শেখাচ্ছেন। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় চিহ্ন ছিল নদীর জলে মাছের ফিরে আসা, আকাশে আবার পাখিদের ঝাঁক উড়ে বেড়ানো। ভোরবেলায় বাতাসে আর আগের মতো কটু গন্ধ ভেসে আসে না; বরং ভোরের শীতল হাওয়ায় মিশে থাকে ফুলের সুবাস। মানুষের মনে তখন একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে—“আমরা পারি, যদি চাই।” এ শহর আর শুধু ইট-পাথরের শহর নয়, এ যেন মানুষের চেতনার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।

আৰ্য আর তার দল যখন একসাথে দাঁড়িয়ে এই নতুন শহরের দৃশ্য দেখে, তখন তাদের চোখে এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা খেলে যায়। তারা জানে, এ শুধু একটি জয় নয়, এ এক যাত্রার শুরু। ৰোহিত বলে, “আমাদের অ্যাপটা আজ হাজারো মানুষের হাতে পৌঁছেছে, কিন্তু আসল অর্জন হলো মানুষের মনে পৌঁছানো।” মীনা দেয়ালের আঁকা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে হাসে—এখন মানুষ তার ছবি দেখে শুধু সৌন্দর্য নয়, পরিবর্তনের প্রতীক খুঁজে পায়। জয় নিজের হাতে বানানো খেলনাগুলো ছোটদের মাঝে বিলিয়ে দেয়, আর দেখে আনন্দে ওরা কীভাবে খেলতে খেলতে পরিবেশের গল্প শিখছে। সোনালি আবারও স্কুলে বক্তৃতা দেয়, কিন্তু এবার তার কণ্ঠে শোনা যায় না কোনো হতাশা, বরং গর্ব। সে বলে—“আমরা দেখিয়েছি, শহর বাঁচানো সম্ভব, যদি আমরা সবাই মিলে চাই।” রহমান স্যার চুপচাপ এই সবকিছু দেখেন, তার চোখে জল আসে। তিনি জানেন, ইতিহাস হয়তো এই ছোট্ট কিশোরদের নাম লিখবে না, কিন্তু শহরের প্রতিটি গলির মানুষ মনে রাখবে তাদের আলো ছড়ানো পথচলা।

তবুও, আৰ্য মনে করিয়ে দেয় সবার কাছে—“এটা শেষ নয়, শুরু।” প্রকৃতি শুদ্ধ হয়েছে কিছুটা, শহর বদলেছে অনেকটাই, কিন্তু আসল যুদ্ধ এখনো বাকি। প্লাস্টিকের ভয় এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি, আর নতুন নতুন সমস্যা আসবে। তবে এবার তারা জানে—ভয় পেতে নেই, লড়াই করতে হবে। তাদের চোখে জ্বলে ওঠে এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন, যেখানে প্রতিটি মানুষ পরিবেশের রক্ষক, প্রকৃতির বন্ধু। একদিন তারা শুধু এই শহর নয়, সারা দেশকে, হয়তো পুরো পৃথিবীকে দেখাতে চায়—মানুষ চাইলে সবকিছু সম্ভব। সূর্যাস্তের লাল আলোয় দাঁড়িয়ে তারা হাত ধরাধরি করে শপথ নেয়—“আমরা থামব না।” শহরের উপর দিয়ে ভেসে আসে পাখির উড়ান, বাতাসে মিশে থাকে আশার গান, আর দূর থেকে নদীর টলমলে জল ফিসফিস করে বলে—“হ্যাঁ, এ এক নতুন শহরের শুরু।”

___

1000062772.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *