Bangla - ভ্রমণ

পুরুলিয়ার লাল মাটি

Spread the love

ঐশী মুখার্জি


ট্রেনটা আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ছিল পুরুলিয়ার ছোট্ট স্টেশনে। জানালার ফাঁক দিয়ে লালচে ধুলো হাওয়ায় উড়ছিল, যেন মাটির গন্ধে মাখানো কোনো অদৃশ্য ধোঁয়া। রিনি ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে বসেছিল জানালার ধারে। কলকাতার চাকরিজীবনের ব্যস্ত, ধাতব আওয়াজে ভরা দিনগুলো থেকে বেরিয়ে সে এসেছিল, ঠিক এক মাসের জন্য। নিজের ইচ্ছেতেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে, বন্ধুদের কাছে এখনো সে সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক, অনেকটা পাগলামির মতো শোনায়। কিন্তু রিনির মনে হচ্ছিল, এই লালমাটি-ঢাকা পথই তাকে নতুন কিছু শিখিয়ে দেবে।

স্টেশনটা ছোট, নিস্তব্ধ, বাইরে নামতেই সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি আর হকারের ডাক একসাথে কানে বাজলো। রোদটা ঝলমল করছিল, তবুও হাওয়ায় একটা শুষ্ক ঠান্ডা মিশে ছিল। রিনি বুকের ভেতর হঠাৎ একটা অদ্ভুত হালকা অনুভূতি পেল—যেন বহুবছরের বোঝা নামিয়ে রাখছে এই অপরিচিত শহরে পা রেখেই।

তাকে নিতে এসেছিল এক স্থানীয় হোমস্টের মালিক, নাম সুশান্ত। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, কাঁধে সাদা গামছা, চোখেমুখে খাঁটি হাসি। “আসুন, মেমসাহেব, গাড়ি দাঁড়ানো আছে বাইরে।” গাড়ি বলতে একটা জীর্ণ জিপ, তবে চাকা ঘুরতেই চারপাশের ধুলো উড়ে গিয়ে সূর্যের আলোয় ঝকঝক করছিল।

গ্রামের পথে ঢুকতেই দুপাশে লালমাটির ফাঁক গলে শালপল্লবের ছায়া নেমে এলো। রিনি জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। শহরের উঁচু দালান, ভিড় বাস, ক্লান্তিকর মিটিং রুম যেন দূর অতীতে হারিয়ে গেল। তার জায়গায় এল কাঁচা রাস্তা, খোলা আকাশ, আর শালগাছের পাতায় ভেসে আসা ঝিরঝির শব্দ।

সন্ধের পর হোমস্টেতে পৌঁছে রিনি চমকে গেল। মাটির ঘর, খড়ের চাল, সামনের আঙিনায় তুলসী গাছ—সব যেন পোস্টকার্ড থেকে তুলে আনা। সুশান্ত বলল, “এখানেই আপনার থাকার ব্যবস্থা। গ্রামের খাবার খেয়ে দেখবেন, শহরের হোটেল ভুলে যাবেন।” রিনি হেসে মাথা নাড়ল।

রাতের খাবার এল মাটির থালায়—গরম ভাত, আলু-পোস্ত, শালপাতায় মুরগির ঝোল। এমন সরল অথচ তৃপ্তিকর স্বাদ সে বহুদিন পায়নি। খাওয়ার পর আঙিনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রিনি বুঝল, কলকাতায় থেকেও এত তারা সে কখনো দেখেনি। বাতাসে একটা নরম সোঁদা গন্ধ, দূরে কোথাও ঢোল বাজছিল, হয়তো গ্রামেরই কোনো মহড়া।

হঠাৎ সুশান্ত এসে বলল, “আগামীকাল গ্রামে মেলা আছে, যেতে চাইলে আমি নিয়ে যাব। লোকগান, নাচ—সবই পাবেন।” রিনির চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ভেতরে ভেতরে একটা কৌতূহল জেগে উঠেছে—এই লালমাটির মানুষদের হাসি, গান, নাচ কি তাকে তার নিজের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া কোনো সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করবে?

আকাশ ভরা তারা তখন নেমে এসেছে যেন তার বুকের ভেতর। শহরের ধূসর দিনগুলো থেকে পালিয়ে এসে রিনি দাঁড়িয়ে আছে এক নতুন যাত্রার দোরগোড়ায়।

সকালের রোদটা ছিল নরম, শালপাতার ফাঁক গলে সোনালি দাগ কেটে পড়ছিল মাটির উঠোনে। রিনি ঘুম ভাঙতেই শুনতে পেল দূরে কোথাও বাঁশির সুর ভেসে আসছে। হোমস্টের আঙিনায় দাঁড়িয়ে সে তাকাল—গ্রামের মেয়েরা পুকুরের ধারে জল তুলছে, মাথায় কলস রেখে হাঁটছে ধীরে ধীরে। এই দৃশ্য যেন কোনো ছবির মতো। কলকাতায় এভাবে দিন শুরু হয় না—সেখানে ভোর মানেই ঘড়ির এলার্ম, কাজের তাড়া, বাস বা মেট্রোর ভিড়। এখানে যেন সময় একটু ধীর।

সুশান্ত এসে বলল, “আজ মেলা আছে, চলুন বিকেলের দিকে বেরোব।” দুপুরে ভাত-ডাল-শাক-ভাজা খেয়ে রিনি তারপরে অনেকদিন পর খোলা মাঠে বসে বই পড়ল। বইয়ের পাতার শব্দের সাথে মিলেমিশে চলছিল পাখিদের ডাক। তার মনে হচ্ছিল, এই নিস্তব্ধতা একধরনের ওষুধ, যা তার ভেতরের ক্লান্তি মুছে দিচ্ছে।

বিকেলে তারা বেরোল জিপে করে। পথে দুপাশে লালমাটির ধুলো উড়ছিল, রোদটা একটু নরম হয়ে এসেছে। রিনি মাথার চুল আঁচড়ে বেঁধে শুধু চারপাশে তাকিয়ে চলল। রাস্তার ধারে ছোট ছোট দোকান সাজানো—হস্তশিল্প, কাঠের মুখোশ, শালপাতার থালা, রঙিন শাড়ি।

মেলায় পৌঁছে সে চমকে গেল। গ্রাম জুড়ে যেন উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়েছে। মাঠের মাঝে বাঁশের মঞ্চ, একপাশে নাগরদোলা, আরেকপাশে মিষ্টির দোকান। বাতাসে জিলিপির গন্ধ ভেসে আসছে, তার সাথে মিশে আছে ধূপ আর ধুলোর মিশ্র গন্ধ।

প্রথমে সে থমকে দাঁড়াল এক লোকগানের আসরের সামনে। ঢোলক, করতাল, বাঁশি—সব মিলিয়ে এক অচেনা অথচ মোহময় সুর। গ্রামের পুরুষ-মহিলারা গাইছিল সহজ কথা—মাটির, বৃষ্টির, ফসলের গান। সেই সুরে রিনির মনে হলো, মানুষ আর প্রকৃতি কত গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে, শহরে হয়তো এ অনুভূতি হারিয়ে গেছে।

হঠাৎ পাশের মঞ্চে ঢোলের আওয়াজ জোরে উঠল। শুরু হলো ছৌনৃত্য। লাল-নীল মুখোশ পরে, ঝলমলে সাজে নাচছে কয়েকজন। তাদের শরীরী ভঙ্গি শক্তিশালী, একসাথে রঙিন, যেন কোনো পৌরাণিক নাটক। রিনি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখল। তার মনে হলো, জীবনের প্রতিটি ক্ষণই এক ধরনের ছৌ—কখনো ভয়ঙ্কর, কখনো হাসির, কখনো বীরত্বের।

মেলার ভিড়ে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা ঘুড়ি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। এক বৃদ্ধা শালপাতার থালা নিয়ে ডাকছে—“চুড়ি নিন, খই নিন।” রিনি একমুঠো খই কিনে খেল, গরম গরম, সোজা কড়াই থেকে উঠোনে আসা।

মেলার শেষে সুশান্ত বলল, “কেমন লাগল?”
রিনি চোখে জল জমতে জমতে হেসে বলল, “আমি জানি না কেন, কিন্তু মনে হচ্ছে এতদিন ধরে আমি একটা বড়ো কিছু মিস করছিলাম।”

সেই রাতে হোমস্টের আঙিনায় বসে তার মনে হলো, লাল মাটির এই অচেনা গ্রাম তাকে শেখাচ্ছে সহজে বাঁচার পাঠ। শহরে যে আত্মবিশ্বাস, যে সাফল্যের দৌড় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে ক্লান্তির দিকে, এখানে এসে তা যেন খুলে যাচ্ছে, মাটির মতো নরম হয়ে।

পরদিন ভোরে রিনি উঠোনে বসে চা খাচ্ছিল। চারপাশে হালকা কুয়াশা, শালগাছের মাথায় পাখির ডাক। মাটির মগে চায়ের ধোঁয়া উঠছে, আর সেই ধোঁয়ার গন্ধে ভেসে আসছে আঙিনার পাশের রান্নাঘর থেকে জ্বালান কাঠের গন্ধ। এমন শান্ত সকাল তার শহুরে জীবনে কবে পেয়েছিল, মনে করতে পারল না।

সুশান্তের মেয়ে, মাধুরী, তখন জল আনতে যাচ্ছিল। বয়সে রিনির চেয়ে ছোট, হয়তো বাইশ-তেইশ। লম্বা বেণী, সাদা-লাল শাড়ি পরে, মাথায় কলস রেখে সে হেসে বলল, “আপনি শহর থেকে এসেছেন, না? এখানে কেমন লাগছে?”
রিনি হেসে উত্তর দিল, “খুব আলাদা। একেবারে অন্যরকম।”
মাধুরী চোখ টিপে বলল, “অন্যরকম মানে ভালো?”
রিনি মাথা নেড়ে বলল, “ভালোই, খুব ভালো।”

সেই থেকেই আলাপ জমে গেল। মাধুরী বিকেলের দিকে রিনিকে নিয়ে গেল মাঠে। সেখানে গ্রামের মেয়েরা বসে শালপাতা দিয়ে থালা বানাচ্ছিল, কেউ রঙিন চুড়ি বিক্রি করছিল। রিনি প্রথমে একটু অস্বস্তি বোধ করছিল, যেন বাইরের মানুষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মাধুরী হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল, পরিচয় করিয়ে দিল সবাইকে।
“এ আমাদের অতিথি, শহর থেকে এসেছে। লিখতে পারে নাকি!”

মেয়েরা হেসে বলল, “তাহলে আমাদের নিয়েও লিখবেন, বৌদি?”
রিনির বুক হালকা হয়ে গেল। কতদিন পর সে নিজেকে ‘অতিথি’ নয়, বরং ‘নিজেদের একজন’ মনে করল।

বিকেলের দিকে তারা পুকুরপাড়ে বসে কথা বলছিল। মাধুরী বলল, “আপনাদের শহরে নাকি মেয়েরা অনেক কিছু করতে পারে—চাকরি, কলেজ, বাইরে ঘোরা… এখানে মেয়েদের জীবন আলাদা। কিন্তু তবুও আমি এই মাটিকে ভালোবাসি। গান, নাচ, মেলা—এসব আমাদের প্রাণ।”

রিনি মন দিয়ে শুনছিল। হঠাৎ বুঝল, শহরে থেকেও সে স্বাধীন ছিল না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের চাপ, প্রতিযোগিতা, অফিসের রাজনীতি—সবই যেন অদৃশ্য শিকল। আর এখানে, এই মেয়েদের সরলতায় সে অনুভব করছে অন্য এক স্বাধীনতা, যা মাটির মতো দৃঢ়, অথচ কোমল।

সন্ধে নামল। পুকুরের জলে চাঁদের আলো পড়েছে। মাধুরী তখন গান ধরল—একটা সহজ লোকগান, ধান কাটা আর বৃষ্টির কথা। সুরটা ভেসে এল নির্জন আকাশে, রিনির বুক কেঁপে উঠল।
সে ভাবল, “এ গান কোথাও লেখা নেই, রেকর্ড হয়নি। তবু এই মুহূর্তটা আমার জীবনের সবচেয়ে সত্যি মুহূর্ত।”

রাতের দিকে হোমস্টের আঙিনায় ফিরে রিনি ডায়েরি খুলল। লিখল—
আজ বুঝলাম, জীবনকে নতুন করে দেখা যায় শুধু তখনই, যখন তুমি অন্যের চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতে শিখো।

সকালে ঘুম ভাঙতেই রিনি শুনল আঙিনায় কোলাহল। হোমস্টের পাশের উঠোনে সুশান্তের পরিবার আর আশপাশের কয়েকজন প্রতিবেশী জড়ো হয়েছে। আজ পূর্ণিমার দিন, আর গ্রামে বিশেষ পূজা হবে। মাধুরী খুশিতে নেচে বলল, “আজ রাতে মেলা হবে আবার, কিন্তু ভিন্ন রকম—পূজার সাথে গান-নাচ।”

রিনি অবাক হয়ে দেখল, ছোট্ট গ্রামে এত প্রাণচাঞ্চল্য। মেয়েরা লালপাড় শাড়ি পরে পুকুরের ধারে ফুল তুলতে যাচ্ছে, ছেলেরা বাঁশের খুঁটি গাঁথছে। দুপুরে খিচুড়ি-লাবড়া রান্না হচ্ছে বড়ো হাঁড়িতে। গন্ধে চারদিক মাতোয়ারা।

মাধুরীর মা, গায়ের রঙ মাটির মতো গাঢ়, সদা হাসিখুশি এক মহিলা, রিনিকে বললেন, “তুমি আমাদের সঙ্গে খেয়ে নিও, মা। অতিথি তো!”
রিনি মাথা নেড়ে রাজি হলো। ভেতরে এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে গেল। এই মানুষগুলো অচেনা, তবুও কতটা আপন করে নিচ্ছে।

বিকেলের দিকে রিনি মাধুরীর সঙ্গে মাঠে গেল। সেখানে বড় মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। ছেলেরা বাঁশের সাজে আলো জড়াচ্ছে। কেউ ঢোলের চামড়া টেনে নিচ্ছে, কেউ মাইক্রোফোন ঠিক করছে। রিনি দাঁড়িয়ে সব দেখছিল, মনে হচ্ছিল যেন শহরের কনসার্ট নয়, কিন্তু এখানে এক ধরনের গভীর আবেগ কাজ করছে।

সন্ধ্যা নামতেই মঞ্চ ভরে উঠল সঙ্গীতে। প্রথমে স্থানীয় ছেলেরা গান গাইল, তারপর মেয়েরা দল বেঁধে নাচ শুরু করল। ঢোলের তালে তাদের পায়ের আঘাতে ধুলো উড়ছিল, লাল মাটির সেই ধুলো আলোয় ঝলমল করে উঠছিল। রিনির চোখে জল এসে গেল। এ কেবল একটা সাংস্কৃতিক উৎসব নয়, এ এক জীবনের গান।

মাধুরী পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল, “দেখেছো, আমরা কত গরিব, তবুও গান-নাচ ছাড়তে পারিনি।”
রিনি উত্তর দিল, “গরিবি আমি দেখছি না, মাধুরী। আমি দেখছি আনন্দ।”

রাত গড়াতে গড়াতে রিনি ভিড়ের মাঝে হাঁটছিল। দোকানে পুঁইশাকের বড়া, ঝালমুড়ি, মাটির হাঁড়িতে চা—সব কিনে খেল। ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন তাকে ডাকল, “আপা, শহর থেকে এসেছেন? আবার আসবেন তো?”
রিনি হেসে বলল, “অবশ্যই আসব।”

কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে ভাবছিল, এই অচেনা গ্রাম কি সত্যিই তার জন্য এক নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে? কলকাতার অ্যাপার্টমেন্ট, চাকরি, সভ্যতার শৃঙ্খল—সেসব কি একদিন ফেলে আসা যাবে?

রাতের দিকে হোমস্টেতে ফিরে এসে রিনি আকাশের দিকে তাকাল। পূর্ণিমার আলো লাল মাটির ওপর পড়েছে, যেন সাদা শাড়ির আঁচল। বুকের ভেতর দ্বন্দ্ব উঠছিল—ফিরবে তো, না কি এখানেই থেকে যাবে?

পরদিন ভোরে হঠাৎ হৈচৈ শুনে রিনির ঘুম ভাঙল। উঠোনে সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। সুশান্ত তাড়াহুড়ো করে বলল, “ওপারের গ্রামে আগুন লেগেছে! কয়েকটা কুঁড়ে ঘর ভস্ম হয়ে গেছে।”

রিনি চমকে উঠল। শহরে থাকলে হয়তো শুধু খবরের কাগজে এইরকম সংবাদ পড়ত, কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে সে প্রত্যক্ষ করছে মানুষের দুর্দশা। দ্বিধা না করে মাধুরীর সঙ্গে সে ছুটল ঘটনাস্থলে।

দূরে কালো ধোঁয়া উড়ছে। কয়েকটা ঘর পুরো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মহিলারা ছুটোছুটি করছে, বাচ্চারা কাঁদছে। রিনি দেখল, এক বৃদ্ধা মাটিতে বসে হাহাকার করছে—তার সবকিছুই পুড়ে গেছে। মুহূর্তে রিনির বুকটা ভারী হয়ে গেল।

গ্রামের পুরুষেরা মিলে বাঁশের বালতি দিয়ে জল ঢালছিল, কিন্তু আগুন ততক্ষণে থেমে গেছে। শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। মাধুরী তার হাত চেপে ধরল, “দেখলে? আমাদের জীবন এভাবেই ঝুঁকির মধ্যে কাটে।”

রিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। সে এগিয়ে গিয়ে মহিলাদের শান্ত করল, বাচ্চাদের কোলে তুলে নিল। তারপর নিজের ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে সুশান্তকে দিল, “এগুলো দিয়ে অন্তত নতুন কিছু জিনিস কেনা যাক।”
সুশান্ত অবাক হয়ে তাকাল, “আপনি তো অতিথি, এসব করার দরকার নেই।”
রিনি দৃঢ় গলায় বলল, “এখন আমি শুধু অতিথি নই, আপনাদের একজন।”

বিকেলের মধ্যে গ্রামের অন্যরাও এসে সাহায্য করল। কেউ চাল দিল, কেউ কাপড় আনল। রিনি ভেতর থেকে বুঝতে পারল, এই মানুষগুলো কতটা একে অপরের পাশে দাঁড়াতে জানে। শহরে হয়তো এই দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না।

সন্ধে নামার আগে রিনি বসেছিল নদীর ধারে। চারপাশে শান্ত হাওয়া, পুড়ে যাওয়া ঘরের গন্ধ এখনও ভাসছে, তবুও বাতাসে এক ধরনের দৃঢ়তা। সে ভাবল, এতদিন ধরে শহরের চাকরিটাকে সে জীবন ভেবেছিল। অথচ আসল জীবন হয়তো এটাই—সংগ্রামের মধ্যে থেকেও একে অপরকে আঁকড়ে ধরা, নতুন করে শুরু করার সাহস।

মাধুরী পাশে বসে বলল, “তুমি শহরে ফিরে গেলে এসব ভুলে যাবে, তাই না?”
রিনি ধীরে উত্তর দিল, “না, মাধুরী। এবার আমি জানি, ভুলতে চাইলে ও ভুলতে পারব না।”

রাতে ডায়েরিতে সে লিখল—
আজ বুঝলাম, দায়িত্ব মানে শুধু নিজের স্বপ্ন নয়। দায়িত্ব মানে অন্যের চোখের জল মুছে দেওয়া। পুরুলিয়ার লাল মাটি আমাকে তা শেখাচ্ছে।

আগুন লাগার ঘটনার পর থেকেই রিনি বুঝতে পারল, গ্রামের মানুষ তাকে আর বাইরের কেউ বলে মনে করছে না। পরদিন সকালে সুশান্ত এসে বলল, “আপনি যদি চান, বিকেলবেলায় আমাদের পাড়ার বাচ্চাদের একটু পড়িয়ে দিন। স্কুল আছে বটে, কিন্তু মাস্টারমশাই সবসময় আসতে পারেন না।”

রিনির চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এতদিন শহরে সে শুধু অফিসের প্রেজেন্টেশন করেছে, কম্পিউটারের স্ক্রিনে সারাদিন ডেটা সাজিয়েছে। আজ প্রথমবার তার সামনে এমন সুযোগ এসেছে যেখানে সে সরাসরি জীবনের সাথে মিশে যাবে।

বিকেলে নদীর ধারে পাকা তালগাছের নিচে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে জড়ো হলো। কেউ স্লেট নিয়ে এসেছে, কেউ ছেঁড়া খাতায় আঁকিবুকি করছে। রিনি তাদের অক্ষর শেখাতে শুরু করল। এক শিশুর কাঁচা হাতে যখন “ক” অক্ষরটা ধীরে ধীরে ফুটে উঠল, তার বুক ভরে গেল এক অদ্ভুত আনন্দে।

মাধুরী পাশে বসে দেখছিল। হঠাৎ বলল, “তুমি যদি এক মাস থেকেও যাও, এই বাচ্চাদের অনেক উপকার হবে।”
রিনি হাসল, “এক মাস তো থাকবই। তারপরও হয়তো আবার আসব।”

পড়ানোর শেষে সবাই মিলে খই আর গুড় খেল। বাচ্চারা তাকে ঘিরে ধরল, যেন সে তাদের দিদিমণি। ছোট্ট একটি মেয়ে রিনির আঁচল টেনে বলল, “আপা, তুমি আমাদের গানও শেখাবে?”
রিনি মুগ্ধ হয়ে তার মাথায় হাত রাখল।

সেই রাতে হোমস্টের উঠোনে বসে রিনি আকাশের তারা গুনছিল। মনে হচ্ছিল, এতদিন ধরে সে নিজের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই ছোট্ট গ্রামের বাচ্চারা, তাদের নিষ্পাপ হাসি আর কৌতূহল তাকে আবার জীবনের মূল জায়গায় ফিরিয়ে এনেছে।

কলকাতায় যখন সে কর্পোরেট অফিসে বসত, তখন তার পরিচয় ছিল শুধু একটা পদবী, একটা কাজের তালিকা। এখানে তার পরিচয় একেবারে আলাদা—একজন দিদিমণি, এক বন্ধু, এক সহযাত্রী।

মাধুরী এসে পাশে বসল। বলল, “তুমি যদি সত্যিই লিখতে চাও, আমাদের নিয়েই লিখো। আমরা যে কেমন করে বাঁচি, কেমন করে হাসি আর কাঁদি, তা তো বাইরের মানুষ জানে না।”
রিনি গভীরভাবে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, এ গল্প আমি লিখবই।”

রাতের ডায়েরিতে সে লিখল—
আজ প্রথমবার মনে হচ্ছে, আমার জীবন কেবল আমার নিজের জন্য নয়। আমি যদি একটু আলো জ্বালাতে পারি, তবেই এই যাত্রা সার্থক।

বিকেলের পড়ানো এখন রিনির প্রতিদিনের নিয়ম হয়ে উঠেছে। নদীর ধারে তালগাছের নিচে বাচ্চারা জমে যায়, আর রিনি স্লেট-খাতায় অক্ষর আঁকায়, সহজ যোগ-বিয়োগ শেখায়। সে বুঝতে পারছে, তাদের চোখে নতুন জগত খুলে যাচ্ছে। সেই উজ্জ্বলতা রিনির ভেতরেও আলো জ্বালায়।

কিন্তু ধীরে ধীরে সে আরেক বাস্তবতা দেখতে শুরু করল। স্কুলে যাওয়ার বদলে অনেক শিশুকে মাঠে কাজ করতে হয়। কেউ বাবার সাথে গরু চরায়, কেউ মায়ের সাথে জ্বালান কাঠ কুড়োয়। মাধুরী একদিন আক্ষেপ করে বলল, “পেট ভরলে তবে না পড়াশোনা হয়। অনেকেই তো দু’মুঠো ভাতের জন্য হন্যে।”

সেদিন সন্ধ্যায় রিনি দেখল, মাধুরীর মা রান্না করছে কিন্তু হাঁড়িতে অল্প ভাত। পরিবারের সবাই মিলে ভাগ করে খাচ্ছে। রিনির বুক কেঁপে উঠল—শহরে সে কত অপচয় করেছে, অথচ এখানে প্রতিটি দানা খাবার অমূল্য।

পরের দিন পড়াতে গিয়ে সে বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করল, “তোমরা বড় হয়ে কী হতে চাও?”
এক ছেলে বলল, “চাষি হব।”
আরেক মেয়ে লজ্জা পেয়ে বলল, “আমি মাস্টারমশাই হতে চাই।”
রিনি অবাক হলো, এ স্বপ্নগুলো কত ছোট অথচ কত বিশুদ্ধ।

পড়ানোর ফাঁকে সে তাদের গান গাইতে শেখায়, কখনো গল্প বলে। একদিন শালপাতার থালায় চক দিয়ে লিখিয়ে দিল—‘স্বপ্ন’। তারপর জিজ্ঞেস করল, “স্বপ্ন মানে কী জানো?”
সবাই চুপ। রিনি হেসে বলল, “স্বপ্ন মানে ভবিষ্যতের আশা, যেটার জন্য তুমি লড়বে।” বাচ্চাদের চোখে নতুন আলো ফুটল।

সন্ধ্যায় মাধুরী রিনিকে নিয়ে গেল এক পরিবারের বাড়ি। সেখানকার করুণ চেহারা—পড়শিরা সবে আগুনে হারানো ঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘর বানাচ্ছে। সবাই মিলে বাঁশ বেঁধে চাল দিচ্ছে। রিনি সাহায্য করল, মাটি কেটে গর্ত করল, হাত ময়লা হলো। তবু তার মনে হলো, এত আনন্দ সে আগে কখনো পায়নি।

রাতে ডায়েরিতে লিখল—
আজ আমি বুঝলাম, আসল শিক্ষা কেবল বইয়ের মধ্যে নয়। আসল শিক্ষা হলো কষ্টের মাঝেও আশা বাঁচিয়ে রাখা। এই মানুষগুলো আমার শিক্ষক।

সকাল থেকেই আকাশে অদ্ভুত রঙ। মেঘ জমে কালো হয়ে আছে, হাওয়ার গায়ে কেমন একটা অস্থিরতা। রিনি প্রথমে বুঝতে পারছিল না, কিন্তু গ্রামের মানুষরা চিন্তিত দৃষ্টি বিনিময় করছিল। সুশান্ত বলল, “মনে হচ্ছে আজ ঝড় আসবে।”

দুপুর গড়াতেই আকাশ আরও ঘন অন্ধকারে ঢেকে গেল। হঠাৎ করেই হাওয়া বেড়ে উঠল, তালগাছ কাঁপতে শুরু করল। পুকুরের জল উথালপাথাল। বাচ্চারা ভয়ে কাঁদতে লাগল, মহিলারা দৌড়ে ঘরে ঢুকছে। রিনি বুঝল, এ কেবল বৃষ্টির ঝড় নয়—এ হলো প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল ঝড় শুরু হলো। খড়ের চাল উড়ে যাচ্ছে, বাঁশের বেড়া ভেঙে পড়ছে। রিনি আর মাধুরী দৌড়ে গিয়ে এক বৃদ্ধাকে ধরল, তাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেল। সুশান্ত চেঁচিয়ে বলছিল, “সবাই স্কুলঘরে যাও, ওখানেই আশ্রয় নাও!”

রিনি জীবনেও এমন ঝড় দেখেনি। হাওয়া যেন ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে চারদিক, লাল মাটির ধুলো বাতাসে উড়ছে। তবু গ্রামের মানুষ একে অপরকে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। রিনিও তাদের সাথে দৌড়াতে লাগল।

স্কুলঘরের ভেতর অন্ধকার, মোমবাতি জ্বলছে। সবাই গাদাগাদি করে বসে আছে। বাচ্চারা কাঁদছে, মহিলারা স্তব্ধ মুখে প্রার্থনা করছে। রিনি মাধুরীর হাত শক্ত করে ধরল। তার মনে হচ্ছিল, জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে তারা।

কিন্তু আশ্চর্যভাবে ভয় নয়, বরং অন্যরকম কিছু অনুভব করল রিনি। চারপাশের মানুষ একে অপরকে আঁকড়ে ধরে আছে—কেউ পানি দিচ্ছে, কেউ শিশুদের গান শোনাচ্ছে ভয় কাটাতে। প্রকৃতির নির্মম আঘাতের মাঝেও মানবিকতা অটুট।

ঘণ্টাখানেক পর ঝড় থেমে গেল। বাইরে বেরিয়ে রিনি দেখল, কয়েকটা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত, গাছ ভেঙে পড়েছে। তবু মানুষরা হাঁপ ছেড়ে বেঁচে গেল। সবাই একসাথে মিলে ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে শুরু করল।

রিনির বুক ভরে গেল এক অদ্ভুত শক্তিতে। শহরে সে সবসময় ভেবেছে, একা লড়াই করতে হবে। অথচ এখানে, জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তেও মানুষ একসাথে দাঁড়িয়ে যায়।

রাতে ডায়েরিতে সে লিখল—
আজ ঝড় আমাকে শিখিয়েছে, ভরসা মানে শুধু ছাদ নয়, ভরসা মানে একে অপরের হাত ধরে টিকে থাকা।

ঝড়ের পরদিন ভোরেই রিনি মাঠের ধারে দাঁড়াল। চারপাশে ভাঙাচোরা দৃশ্য—কোথাও গাছ উপড়ে গেছে, কোথাও খড়ের চাল ছিঁড়ে পড়েছে। তবুও বাতাসে এক অদ্ভুত নির্মলতা, যেন ঝড়ের পর প্রকৃতি নিজেই আবার নতুন করে শ্বাস নিচ্ছে।

গ্রামের মানুষরা ইতিমধ্যেই কাজে লেগে পড়েছে। কেউ ভাঙা ঘর মেরামত করছে, কেউ গরু-ছাগল খুঁজছে, কেউ বা গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করছে। রিনি দেখল, এই পরিশ্রমের মাঝেও তাদের মুখে হতাশা নেই, আছে কেবল দৃঢ়তা।

মাধুরী এসে বলল, “ঝড় গেল তো কি হয়েছে? কাল থেকেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হবে। জীবনে কষ্ট আসবেই, কিন্তু আনন্দ বন্ধ করা যাবে না।”
রিনি অবাক হয়ে তাকাল। শহরে হলে ঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মাস লেগে যেত, কিন্তু এখানে মানুষরা যেন কষ্টকে উৎসব দিয়ে প্রতিহত করে।

বিকেলের দিকে গ্রামের মেয়েরা মাঠে জমল। কেউ আলপনা আঁকছে, কেউ ঢাক বাজাচ্ছে, কেউ গানে সুর ধরছে। রিনি হেসে যোগ দিল তাদের সাথে। প্রথমে একটু অস্বস্তি হলেও পরে সে হাত মেখে আলপনা আঁকতে শুরু করল। মাধুরী হেসে বলল, “দেখো, শহুরে হাত দিয়েও লাল মাটির আঁকিবুঁকি সুন্দর হয়।”

সন্ধ্যা নামতেই শুরু হলো উৎসব। আগুন জ্বালানো হলো মাঠের মাঝখানে, সবাই মিলে চারপাশে গান গাইল, নাচল। রিনিও তাল মিলিয়ে নাচল, তার শরীরের ক্লান্তি যেন কোথাও হারিয়ে গেল। সে অনুভব করল, জীবনের আনন্দ কেবল বড় শহরের আলোতে নয়, বরং এমন সরল মিলনে লুকিয়ে থাকে।

এক বৃদ্ধ এসে তাকে বললেন, “মা, তুমি শহরের মেয়ে হয়েও আমাদের সাথে মিলেমিশে গেছো। মনে হয় তুমি এখানেই জন্মেছ।”
রিনির চোখ ভিজে উঠল। এতদিন ধরে সে ভেবেছিল তার পরিচয় কেবল শহুরে দৌড়ঝাঁপের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজ বুঝল, মানুষের আসল পরিচয় মাটির সাথে, গান-নাচের সাথে, একে অপরের সাথে।

রাতে ঘরে ফিরে সে ডায়েরিতে লিখল—
ঝড় আমাকে ভয় দেখায়নি, বরং উৎসব আমাকে শক্তি দিয়েছে। পুরুলিয়ার লাল মাটি আমার ভেতরে এক নতুন সুর জাগিয়েছে, যেটা আমি কোনোদিন ভুলব না।

মাসটা কেটে গেল অচেনা দ্রুততায়। দিনগুলো একে একে গলে গেল শালবনের ছায়ায়, মেলার ঢোলের তালে, বাচ্চাদের হাসির শব্দে। রিনি অনুভব করল, সে যেন এক ভিন্ন মানুষ হয়ে উঠেছে।

শেষ দিন সকালে আঙিনায় বসে চা খেতে খেতেই তার বুকটা ভারী হয়ে উঠছিল। কলকাতায় ফেরার টিকিট কাটা হয়েছে, ব্যাগ গোছানোও প্রায় শেষ। কিন্তু মনটা যেন এই লাল মাটির উঠোনেই আটকে আছে।

মাধুরী এসে চুপচাপ তার পাশে বসল। দীর্ঘ নীরবতার পর বলল, “তুমি গেলে আবার ফাঁকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তোমায় মনে রাখব।”
রিনি তার হাত ধরে বলল, “আমি ফিরব, মাধুরী। এই জায়গা এখন আমার নিজের হয়ে গেছে।”

বিকেলের দিকে গ্রামবাসীরা তাকে বিদায় জানাতে জড়ো হলো। বাচ্চারা তার আঁচল ধরে বলল, “দিদিমণি, আবার আসবেন তো?”
রিনি তাদের চোখে তাকিয়ে হাসল, “অবশ্যই আসব। আর ততদিন তোমরা পড়াশোনা চালিয়ে যেও।”

স্টেশনের পথে লাল ধুলো উড়ছিল। রিনি জানালার পাশে বসে তাকিয়ে রইল শালবনের দিকে। প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাখির ডাক যেন তাকে বলছে—তুমি একদিন আবার ফিরবে।

ট্রেন ধীরে ধীরে গতি নিতে লাগল। শহরের পথে যাত্রা শুরু হলো, কিন্তু রিনি জানত, কলকাতায় ফিরলেও সে আর আগের মতো হবে না। পুরুলিয়ার এই এক মাস তার ভেতরে নতুন এক দর্শন জন্ম দিয়েছে—
জীবন মানে কেবল সাফল্য বা প্রতিযোগিতা নয়, জীবন মানে মাটির গন্ধ, মানুষের হাসি, একে অপরের হাত ধরে টিকে থাকা।

জানালার বাইরে সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, আকাশ লাল হয়ে উঠছিল। সেই লাল আভা যেন পুরুলিয়ার মাটির রঙের প্রতিচ্ছবি। রিনি চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিল—
আমি ফিরছি শহরে, কিন্তু আমার ভেতরে এখন লাল মাটির সুর বাজছে। সুর আর কোনোদিন থামবে না।

WhatsApp-Image-2025-09-06-at-8.25.55-AM.jpeg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *