অর্কদীপ রায়
এক
কলেজ স্ট্রিট থেকে একটু ভেতরে, লাল রঙের দোতলা স্কুলবাড়িটা ঠিক আগের মতোই আছে—বাইরের দেওয়ালে এখনো পুরনো শ্যাওলা, আর ক্লাসরুমের জানালায় একই ধরনের কাঁচের শিক। একটা দশক কেটে গেছে, অথচ সৌরভ দত্তের মনে হয় যেন কালই সে এখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল পরীক্ষার পর দিন। পায়ে পায়ে এগোতে থাকে স্কুল গেটের ভেতরে, একটা অদ্ভুত কেমন খোঁচা খোঁচা অনুভূতি হচ্ছে বুকের বাঁ দিকে। স্কুলের মাঠে সাজানো চেয়ার, ব্যানারে বড় করে লেখা ‘ব্যাচ অব ২০১১—রিইউনিয়ন’, মাইক্রোফোনে পুরনো দিদিমণির কণ্ঠস্বর, এবং অজস্র চেনা মুখ—তবু সৌরভের চোখ খোঁজে শুধু একজনকেই। অন্বেষা মুখার্জী। একসময় তার পাশে বসে ছড়া পড়ত, প্রশ্ন করত, হাসত, আবার হঠাৎ চুপ হয়ে যেত—তাঁকে আজ দশ বছর পর দেখবে সে। সৌরভ নিজের জন্য বিস্ময় অনুভব করে, এত বছর পেরিয়ে গিয়েও মনের কোথাও এখনও সেই অনুভূতিটা কেমন টাটকা। সে ভাবে, আজকের দিনটা শুধু বন্ধুরা মিলে গল্প করার দিন নয়—এটা এক ধরণের অজানা উত্তর খোঁজার দিনও।
হঠাৎ, মঞ্চের একপাশ দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে আসে অন্বেষা। পরনে হালকা নীল শাড়ি, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, কপালে ছোট্ট টিপ। চুলগুলো পিঠে এলোমেলো, চোখে যেন একরাশ ক্লান্তি—তবু সেই চেনা হাসিটা এখনও আছে। সৌরভের শ্বাস গলায় আটকে যায়। তারা একে অপরকে দেখে, মুহূর্তখানেক থেমে থাকে, তারপর অন্বেষা হেসে বলে, “তুই অনেকটা বদলে গেছিস রে, সৌরভ!” সৌরভ কিছু বলতে পারে না, শুধু হাসে। তারা পাশাপাশি দাঁড়ায়, হাতে কফি—কিন্তু কফির কাপের থেকে বেশি গরম যেন তাদের মনের ভিতরের আবেগে। অন্বেষা জানায়, সে এখন একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে ইংরেজি পড়ায়, আর এখনও মাঝে মাঝে ডায়েরি লেখে। সৌরভ অবাক হয়ে শোনে—অথচ কিছুতেই অবাক হয় না, কারণ ও জানত, মেয়েটার ভেতরে সবসময় একরকম শব্দের ঘরবসতি ছিল। হঠাৎ অন্বেষা বলে, “চল, তোদের ক্লাসরুমে গিয়ে বসি না? আজকের দিনে সেখানে না গেলে, পুরোটা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।” সৌরভ চমকে উঠে বলে, “চল।” মনে মনে ভাবে, এত বছর পরও দুজনের ভাবনার রঙ একটাই রয়ে গেছে।
তারা গিয়ে বসে সেই পুরনো বেঞ্চে—যেখানে ক্লাস ইলেভেন আর টুয়েলভে প্রায় প্রতিদিন পাশাপাশি বসত। দেওয়ালে এখনও সেই পুরনো খোদাই করা নামগুলো আছে, একটা জায়গায় ছোট করে লেখা—”সৌ + অ…”, যেটা সৌরভ কখনও শেষ করতে পারেনি। জানালার বাইরের আলো এসে পড়ছে তাদের মুখে, ঠিক যেমন পড়ত এক সময়। অন্বেষা ধীরে ধীরে ব্যাগ থেকে একটা পুরনো চিঠির খাম বের করে দেয়। চিঠিটা কাঁপা হাতে সৌরভের দিকে এগিয়ে দেয় সে। বলে, “তুই হয়তো কখনও জানিসনি… কিন্তু এটা তোকে দেওয়ার সাহস পাইনি তখন। তুই স্কুল ম্যাগাজিনে একটা ছড়া লিখেছিলি, পড়ার পর বুঝেছিলাম, সেটার অনেকটা আমার জন্যই ছিল।” সৌরভ চুপচাপ চিঠিটা খোলে—পাতাগুলো হলুদ হয়ে গেছে, কিন্তু অক্ষরগুলো স্পষ্ট। “তুই যখন জানালার দিকে তাকিয়ে ছড়া লিখিস, তখন আমি চুপিচুপি তোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি… আমার ইচ্ছে করে তোকে বলি, আমি তোর প্রতিটা ছন্দ বুঝি… শুধু বুঝি না, কেন তুই আমাকে একটাও কথা বলিস না…” —এমন অনেক না বলা কথায় ভরা সেই চিঠি। সৌরভর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে অন্বেষার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি তোকে তখনই ভালোবাসতাম… শুধু সাহস ছিল না বলার। ভেবেছিলাম, বললে তুই হয়তো দূরে চলে যাবি। তাই শুধু ছড়াতেই বলতাম।” অন্বেষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, জানালার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমরাও না! একই বেঞ্চে বসে, একে অপরের এতটা কাছে থেকেও—দূর ছিলাম সব থেকে।” এবং সেই পুরনো স্কুলবাড়ির বেঞ্চে বসে দুজন বুঝে ফেলে—সময়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা আবার সময়কেই হাত ধরে ফিরে আসে, যদি কেউ অপেক্ষা করে।
দুই
সেই পুরনো ক্লাসরুম, জানালার ধারে বসা বেঞ্চটা যেন এক মুহূর্তে কুড়িয়ে আনে বহু পুরনো একটা দুপুর। সৌরভ আর অন্বেষা পাশাপাশি বসে, সময়কে ছুটি দিয়ে ফিরে যায় সেই দিনগুলোর কাছে, যখন ব্ল্যাকবোর্ডের ঠিক পেছনে তাদের কল্পনার কালো-সাদা গল্প চলত নিঃশব্দে। সৌরভ মনে করে, সে যখন প্রথম ছড়া লিখেছিল, তখন ক্লাসে বাংলার দিদিমণি বলেছিলেন, “এই ছেলে একদিন কবি হবে।” তখন হেসে সবাই উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু অন্বেষা হেসে বলেনি—সে তাকিয়েছিল চোখের ভেতর দিয়ে। সেই চোখদুটো আজও ঠিক একই রকম, শুধু একটু বেশি নীরব। সৌরভ বলে, “তুই জানিস? প্রথম যে ছড়াটা লিখেছিলাম, তাতে নাম ছিল না। কিন্তু ছদ্মনামের পেছনে তো তুই ছিলি। ‘নীলমেঘ’—এটাই তো তোর নামের মানে।” অন্বেষা ম্লান হাসে, বলে, “আমি ঠিক বুঝেছিলাম… শুধু বিশ্বাস করিনি। ভাবতাম, হয়তো সবটাই আমার কল্পনা।” জানালার বাইরে হাওয়ার দোলায় কাঁপছে বটগাছের ডাল, যেন তারাও সেই পুরনো ছন্দে ফিরে গিয়েছে।
অন্বেষা খাতার পাতা ওল্টাতে থাকে—একটা ছোট নীল খাতা, যেখানে কয়েকটা পুরনো ছড়া এখনো টিকে আছে। “এইটা তুই লিখেছিলি ক্লাস টুয়েলভের প্রথম দিন… মনে আছে?”—সে পাতাটা সৌরভের দিকে ধরে। সৌরভ পড়ে, “তুই তো বসিস জানালার পাশে, আমি খুঁজি শব্দ, তুই খুঁজিস ক্লাসের শেষে…” ছড়াটা অসম্পূর্ণ ছিল, তখন শেষ হয়নি। সৌরভ হেসে বলে, “তখনই তো শেষ করতে পারিনি, আজও পারি না।” অন্বেষা খাতাটা বন্ধ করে রাখে নিজের কোলের উপর, বলে, “তুই জানিস? আমি এই ছড়াগুলো পড়েই তোর প্রেমে পড়েছিলাম। অন্য কেউ নয়, এই লাইনের সৌরভ—যে বলে, ‘তোর চুলে হাওয়ার ছোঁয়ায় আমার কবিতা নামে’। কিন্তু সেই কবি আমার সঙ্গে কোনওদিন কথা বলেনি।” সৌরভ চোখ নামিয়ে নেয়, দেয়ালে হাত বুলিয়ে বলে, “আমি ভেবেছিলাম, তুই জানিস… আমি ভয় পেতাম তুই যদি না বুঝিস, বা হাসিস।” দুজনেই চুপ করে যায়। ক্লাসরুমে শোনা যায় কাকের ডাক, দূর থেকে ভেসে আসে রিইউনিয়নের মিউজিক। কিন্তু এই ঘর, এই বেঞ্চ, এই জানালা—সব মিলিয়ে এখন আর শুধু স্কুল নয়; এটা হয়ে উঠেছে দুটো মানুষের আবেগের তীর্থস্থল।
এক সময় অন্বেষা জানালার বাইরে তাকিয়ে বলে, “জানিস সৌরভ, আমি যখন তোর পাশে বসতাম, তখন রোজ ভাবতাম—তুই যদি হঠাৎ একদিন বলিস, ‘অন্বেষা, তুই আমার কবিতার লাইন’—আমি তখনই হাত ধরতাম তোর। কিন্তু তুই কিছু বলিসনি। আমিও সাহস পাইনি, কারণ আমরা দুজনেই চুপ ছিলাম।” সৌরভ হঠাৎ নিজের ব্যাগ থেকে একটা পাতলা খাতা বের করে দেয়। সেটাতে লেখা, “পুরনো ছন্দ”। সে বলে, “আজও লিখি… কিন্তু তোকে ছাড়া ছন্দগুলো ব্যাকরণ হয়ে গেছে, অনুভব নেই। যদি তুই চাস, আমি আবার লিখতে পারি… এইবার তোকে নিয়ে।” অন্বেষা ধীরে ধীরে খাতা নেয়, চোখে জল চিকচিক করে। বলে, “তুই যদি এবার সত্যিই লিখিস, তবে আমি আর তোর ছড়া চুরি করে পড়ে রাখব না। আমি সেগুলো নিজের নামে পড়ব, সব্বার সামনে। কারণ এবার আমি জানি, এই কবিতা শুধু আমারই জন্য।” ক্লাসরুমে তখন রোদ পড়ছে তাদের পায়ের কাছে, যেন নতুন গল্প শুরু হবার সংকেত।
তিন
স্কুলবাড়ির করিডোরটা নির্জন। জানালার কাঁচে রোদের খেলা, নিচে ধুলোমাখা সিঁড়ি—আর তার মাঝখানে সৌরভ আর অন্বেষা দাঁড়িয়ে, যেন সময়ের এক ফাঁকে আটকে গেছে দুটো মানুষ। রিইউনিয়নের মূল অনুষ্ঠান শেষ, সবাই এখন বাইরে, ছবিতে ব্যস্ত বা গল্পে মগ্ন। অন্বেষা সৌরভকে নিয়ে আসে লাইব্রেরির পেছনের সেই ফাঁকা করিডোরটায়, যেখানে একসময় তারা দাঁড়িয়ে থাকত ক্লাস শেষে, হয়তো বইয়ের নাম নিয়ে কথা বলার অজুহাতে। কিন্তু আজকের দেখা আলাদা—এটা কোনো বইয়ের আলাপ নয়, এটা সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া, যা এত বছর ধরে কেউ করেনি, কেউ শোনেনি। অন্বেষা ধীরে ধীরে ব্যাগ থেকে একটা হলদেটে খাম বের করে দেয়। খামের ওপর নেই কোনো নাম, নেই কোনো ঠিকানা। শুধু এক কোণে পেনসিল দিয়ে লেখা, “২০ জানুয়ারি ২০১১, ইংরেজি ক্লাসের পর।”
সৌরভ খামটা কাঁপা হাতে নেয়। ভিতরে একটা ভাঁজ করা কাগজ। খুলতেই তার চোখ চলে যায় সেই অক্ষরে—চেনা হাতের লেখা, তবু অচেনা অনুভব। অন্বেষা লিখেছিল, “সৌরভ, আমি জানি তুই জানিস না আমি এই চিঠিটা লিখছি। জানি না তুই কোনোদিন পাবি কি না। কিন্তু আমি পারছি না চুপ করে থাকতে। তুই যখন ক্লাসে কবিতা লিখিস, আমি ভাবি—এই শব্দগুলো আমার জন্য? তুই যখন জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকিস, আমি ভাবি—তোর মনও কি আমার মতো ছুঁয়ে যেতে চায় কোথাও? আমি ভয় পাই, কারণ আমি তোর বন্ধু হতে চাই, আবার চাই তুই বুঝে ফেলিস কিছু। কিন্তু কিছু বললে যদি সব বদলে যায়?” তারপর চিঠিটা হঠাৎ থেমে গেছে। নিচে লেখা নেই কিছুই। শুধু একটুকরো ফাঁকা জায়গা, যেন লেখক নিজেই জানত না কী করে শেষ করতে হয় এই অনুভব। চিঠির শেষ দিকটায় একটু ভেজা দাগ—হয়তো জল পড়েছিল কোনো এক সন্ধ্যায়, অথবা লেখা মুহূর্তেই অশ্রু।
সৌরভ চোখ তুলে চুপ করে অন্বেষার দিকে তাকায়। বলে না কিছু। অন্বেষা হাসে, বলে, “আমি তোকে দিতে পারিনি… শেষ দিন খামটা ব্যাগেই ছিল। তোকে ডাকলাম, কিন্তু তুই বন্ধুদের সঙ্গে চলে গেলি হাসতে হাসতে। আমি কিছু বলতে পারিনি।” সৌরভের চোখে তখন ঝাপসা চেহারা। সে ধীরে ধীরে বলে, “তুই জানিস না… আমি ফিরে এসে খুঁজছিলাম তোকে। একটা ছড়ার খাতা তোকে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই ছিলি না। আমিও কিছু বলিনি, কারণ ভেবেছিলাম, আমি একাই ভালোবাসি।” অন্বেষা বলে, “দেখ, আমাদের দুজনেই ভয় পেয়েছিলাম। দুজনেই ভালোবাসতাম, কিন্তু কেউ সাহস করিনি বলার।” করিডোরে বাতাস আসে, কাগজের পাতা একটু উড়ে যায়। সময় যেন থমকে দাঁড়ায় দুজনের মাঝে। সৌরভ তখন ধীরে ধীরে বলে, “তুই কি চাইছিস আমি এবার সেটা বলি?” অন্বেষা বলে, “না। আমি চাই তুই এবার সত্যি করিস… যেটা তখন করিসনি।” এবং তারপর সেই মুহূর্তে—কোনো কবিতা, কোনো ছড়া, কোনো চিঠি—কিছুই দরকার পড়ে না। শুধু একটি চোখ, একটি হাতের স্পর্শ—আর দুই মানুষ, যারা অবশেষে স্বীকার করে, ভালোবাসা কখনও হারায় না, শুধু সময় পায় না ঠিক সময়ে বলে ওঠার।
চার
পুরনো স্কুলবাড়ির ছাদে এখন নরম বিকেলের রোদ। মেঘগুলো আলোর দাগ কেটে যাচ্ছে দক্ষিণের আকাশে। ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে সৌরভ আর অন্বেষা। নিচে মাঠে কিছু প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী হেসে গল্প করছে, সেলফি তুলছে, কিন্তু এই ছাদে নিঃশব্দ ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে তারা দুজন। এক সময়কার ছেলেমানুষির হাসি, চুপি চুপি তাকিয়ে থাকাগুলো, হারিয়ে যাওয়া চোখের আভাস—সব যেন ফিরে এসেছে এই এক বিকেলে, ধরা দিয়েছে আবার, আবার অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। সৌরভের গলায় কিছু আটকে থাকে, যেন শব্দ হয়ে বেরোতে চায় না। শেষে সে নিজেই বলে ফেলে, “অন্বেষা… তোকে ভালোবাসতাম। তখনও, এখনও।” এতো সহজ করে বলা কথা, অথচ বলতে এতগুলো বছর লেগে গেল!
অন্বেষা তাকায় না ওর দিকে। রেলিং-এর ওপরে ঠেকে থাকা হাতটা নেড়ে দিয়ে বলে, “তুই জানিস, আমি স্কুলে আসতাম শুধু তোর কবিতা শোনার জন্য। ক্লাসের শেষে তুই খাতায় কিছু লিখলেই আমি পড়তাম। অনেকদিন তোকে না জানিয়ে তোর খাতা খুলে দেখতাম… পরে আবার একই জায়গায় রেখে দিতাম।” একটু থেমে অন্বেষা বলে, “আমি ভাবতাম, যদি তোকে বলি, তুই হেসে ফেলবি। কিংবা বন্ধুত্বও নষ্ট হয়ে যাবে। আবার কখনও ভাবতাম, তুই বুঝে গেছিস… কিন্তু তুই তো কিছুই বলিসনি।” সৌরভ ধীরে মাথা নিচু করে। তার চোখে অপরাধবোধ, অভিমান, আর একটা গভীর বিষণ্ণতা। “আমি ভেবেছিলাম, তুই আমার মতো ভাবিস না। কিংবা তুই হয়তো কাউকে ভালোবাসিস। তুই তো খুব সহজে সবাইকে মিশে যেতে পারতিস। আমি তো তখন একেবারে অন্তর্মুখী ছিলাম।” একটু চুপ থেকে সৌরভ জিজ্ঞেস করে, “তুই যদি একবার বলতিস, আমি হয়তো… সাহস পেতাম। তুই কেন বললি না, অন্বেষা?”
অন্বেষা এবার চোখ তুলে সৌরভের দিকে তাকায়। চোখে জল নেই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি কিছু—চোখে অভিযোগ আর ভালোবাসার মিলেমিশে তৈরি এক অদ্ভুত আবেগ। সে ধীরে ধীরে বলে, “কারণ আমিও ভেবেছিলাম, তুই বলবি একদিন। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম। প্রতিদিন, প্রতিটা ছড়ার পর। শেষ ক্লাসে যখন তোকে বলেছিলাম ‘আবার দেখা হবে, নিশ্চয়ই?’—তুই বলেছিলি ‘হবে’। কিন্তু আর কোনোদিন তোকে পাইনি।” সেই মুহূর্তে হাওয়া বয়ে যায় তাদের চারপাশে, ছাদের ওপরে স্কুলের পুরনো পতাকা হালকা দুলে ওঠে। সৌরভ এগিয়ে আসে অন্বেষার পাশে, একটুখানি দূরত্বে দাঁড়িয়ে বলে, “তুই কি তখন আমায় একটু হলেও ভালোবাসতিস?” অন্বেষা নিঃশব্দে মাথা নাড়ে—না ‘হ্যাঁ’ বলার মতো, না ‘না’ বলার মতো। একরাশ অতীত এক মুহূর্তে চোখে খেলা করে যায়। সে শুধু বলে, “ভালোবাসা তো কখনও অল্প হয় না, সৌরভ। সেটা হয়, বা হয় না। আর যেটা একবার হয়, সেটা ফুরোয় না। শুধু অনেকসময় দেরি হয়ে যায়।” সেই ছাদে দাঁড়িয়ে, তারা বুঝে ফেলে—ভালোবাসা শব্দের মধ্যে নয়, চোখের ভেতরেই সবচেয়ে স্পষ্ট হয়। এবং আজ, এত বছর পর, তারা প্রথমবার দুজনেই সেটা স্বীকার করে।
পাঁচ
রিইউনিয়নের দিনটা শেষ হতে চলেছে, আর এখন পুরনো স্কুলের বারান্দা নীরব হয়ে গেছে। একদিনের হইচই, হাসি-গল্প আর ক্যামেরার ঝলক, সব কিছু ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছু মানুষ এখন ফিরছে, কিছু নতুন মুখ আলাপ করতে আসছে। তবে সৌরভ আর অন্বেষা কোথাও যেতে চায় না। তারা দুইজনেই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, পুরো স্কুল ক্যাম্পাসটা চুপচাপ দেখে যাচ্ছে। এই বারান্দা, এই পরিবেশ—এত বছর পরেও যেন একই রকম। সৌরভ জানে, এই স্নিগ্ধ মুহূর্তটুকুই হয়তো তাদের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান। বারান্দায় দাঁড়িয়ে, তারা দুজনেই চুপচাপ একে অপরের দিকে তাকায়। সৌরভ অবশেষে বলে, “তুই কি কখনও জানিস, আমার মনের ভিতর কতগুলো কথা জমে ছিল? কিন্তু তোকে কিছু বলার সাহস কখনও পাইনি।” অন্বেষা সাদাসিধে হাসে, কেমন যেন এক হতাশার সঙ্গে মিশে। “আমি জানি, সৌরভ। আমি তো মনে করতাম, তুই নিজেই বুঝে নেবি, আমি কী চাই।”
সৌরভ মনে মনে ভাবে, কত সহজ ছিল সেটা যদি কিছুটা আগে বলা যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই সব না বলা কথা, নিঃশব্দ ইচ্ছাগুলো যেন অনেক দূর চলে গেছে। তবে আজ, এই মুহূর্তে, সে আর কোনো কথা লুকাতে চায় না। সে জানে, যে কিছুই আর হারাতে নেই, এমনকি এই স্কুলের মতো পুরনো, মৃদু আবেগও। “তুই যখন প্রথম বারের জন্য স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য ছড়া লিখেছিলি, আমি চুপচাপ পড়ে গিয়েছিলাম। তখনও আমি বুঝতে পারিনি, যে তোর খাতা একটু দেখলেই আমার সব অনুভব বেরিয়ে আসবে,” সৌরভ বলে, ঠোঁটে এক ফাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। অন্বেষা আবার একটু হাসে, একটু শূন্য চোখে তাকিয়ে বলেই চলে, “তুই জানিস, সৌরভ, স্কুলের দিনগুলো এখন মনে হলে সবকিছু যেন কেমন ধোঁয়াশা হয়ে যায়, কিন্তু তুই, তোর লেখা, তোর না বলা কথা—সবকিছু আজও পরিষ্কার।”
সে নিজের কাঁধের ব্যাগে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, “আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটা ছিল তখন, যখন তুই জানালার পাশে বসে লিখতে শুরু করেছিলি আর আমি ঠিক তোর পাশেই বসে থেকে মনে মনে ভাবছিলাম—তুই যে দিন একবার আমাকে বলবি, তুই আমাকে ভালোবাসিস।” সে একটু থেমে যায়, তারপর আস্তে আসে। “কিন্তু আমি তো কখনও তা জানতে পারিনি, সৌরভ। কারণ তুই বলোনি। আর সেই না বলাটাই আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে।”
সৌরভ অবশেষে এক নিঃশ্বাসে বলে, “তুই জানিস, অন্বেষা, আমার ভালোবাসা কখনও কম ছিল না। সেটা শুধু তখন বলা হয়নি। আজ, এখানে, এই মুহূর্তে, আমি বুঝতে পারছি—এটা অনেক দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু আমার অনুভব এখনো অটুট। আজও আমি জানি, তুই, আমি, আমাদের ছড়া—এই সব কিছু একটা না বলা গল্পের অংশ।” সে ধীরে বারান্দার রেলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ, এই বিকেলে, আমরা যেটা করতে পারি, সেটা হলো বলাটা—বলতে না পারার যন্ত্রণা আরও না বাড়ানো।”
অন্বেষা একটু ভেবে চুপ থাকে, তারপর ধীরে বলে, “তুই যদি আমার পাশে থাকিস, সৌরভ, তাহলে আমি জানি, আমাদের গল্প কখনো শেষ হবে না।” তার চোখে শান্তি আর ভালোবাসার মিষ্টি মেলবন্ধন। সৌরভ হাসে, তার চোখের মধ্যে নতুন এক স্বপ্নের প্রতিফলন। তারপর দুজনেই জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে, মেঘলা আকাশে বেলা নামছে। সৌরভ তার হাত বাড়িয়ে দেয়, আর অন্বেষা হাতটা একটু শক্ত করে ধরলে, সে জানে, এই শেষ বিকেলেই তাদের গল্পের নতুন শুরু হচ্ছে।
ছয়
স্কুলভবনের ভেতরে আর তেমন কেউ নেই। ছায়ার মতো ফাঁকা ক্লাসরুমগুলো নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে, যেন অপেক্ষা করছে কিছু অপূর্ণতা মেটানোর। সৌরভ আর অন্বেষা হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছায় সেই পরিচিত ক্লাসটায়—একাদশ শ্রেণির সেই রুম, জানালার ধারে শেষ বেঞ্চটা, যেখানে তারা একসঙ্গে বসত। ঘরে ঢুকে সৌরভ থমকে দাঁড়ায়। ধুলোর আস্তরণে ঢাকা বেঞ্চ, জানালায় ঝাপসা কাঁচ, আর দেয়ালে পুরনো লেখা—সবকিছু যেন এক মুহূর্তে তাদের কিশোর বয়সে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অন্বেষা ধীরে ধীরে বেঞ্চটার গায়ে হাত রাখে। “এখনও আছে রে,” বলে, “এই দেখ, ‘সৌ + অ’—তুই তো কখনও শেষ করিসনি।” সৌরভ হেসে বলে, “তখন মনে হয়েছিল, যদি তুই দেখে ফেলিস, যদি রেগে যাস… তাই আর লিখিনি।” অন্বেষা চুপ করে বসে পড়ে বেঞ্চে, ধুলোমাখা কাঠের গায়ে আঙুল বুলিয়ে দেয়, যেন খুঁজে ফিরছে পুরনো স্পর্শ।
সৌরভ বসে পড়ে ওর পাশে। দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ থাকে। চারপাশের নিস্তব্ধতা তাদের ভেতরের কথাগুলোকেই যেন জোর করে শোনায়। দেওয়ালে তাদের একসঙ্গে লেখা ছড়ার অংশগুলো আজও অদ্ভুতভাবে জীবন্ত। “তুই আমার কবিতার জানালা, আমি তোর মৌন দুপুর…” —সেই লাইনটা দেখে অন্বেষা একটুখানি মুচকি হাসে। “তুই এইটা লিখেছিলি যেদিন আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছিল। তুই তখন এসে বলেছিলি, ‘দেখিস, তুই একদিন সবার সেরা হবি’। আমি তো ভেবেছিলাম, তুই শুধু আমার বন্ধু।” সৌরভ বলে, “আমি তখনও বুঝতাম, শুধু বন্ধু হতে চাই না। কিন্তু ভয় পেতাম, যদি তুই মুখ ঘুরিয়ে নিস।” অন্বেষা মাথা নাড়ে, “আমরা তখন দুজনেই ভয় পেতাম। অথচ একটু সাহস দেখাতে পারলে—তোর একটা শব্দ, বা আমার একটা চিঠি—আমাদের জীবনের এত বছর হয়তো আলাদা কাটতো না।”
সৌরভ হঠাৎ তার পকেট থেকে একটা বলপেন বের করে দেয়। বলে, “আজ লিখে ফেলি, যা তখন লেখা হয়নি।” সে ধীরে ধীরে বেঞ্চের গায়ে আবার লেখে—“সৌ + অ = গল্প এখনো চলছে…” অন্বেষা হেসে ফেলে, চোখে জল চিকচিক করে। বলে, “এই গল্প যেন থেমে না যায়, সৌরভ। অনেক বছর তো হারিয়ে ছিলাম… এবার না হারাই।” সৌরভ তার হাতটা ধরে, শক্ত করে, যেন এইবার আর সময় কিংবা ভয় কোনো বাধা না দিতে পারে। তারা দুজন সেই পুরনো বেঞ্চে বসে থাকে—এইবার আর ছাত্র নয়, না বলা ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে ওঠা দুই পূর্ণ মানুষ। জানালার বাইরেও সময় থমকে দাঁড়ায়, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এক অন্যরকম শান্তি। পুরনো বেঞ্চটার কাঠে যেন আঙুলের ছাপ গেঁথে যায়, আর সেই ছাপে লেখা থাকে—দুজন মানুষের গল্প, যাদের ভালোবাসা কখনও বলা হয়নি, কিন্তু হারিয়েও যায়নি।
সাত
রিইউনিয়নের সপ্তাহখানেক কেটে গেছে। শহর আবার তার চেনা ছন্দে ফিরেছে। সকালের ট্র্যাফিক, অফিসের হুটোপাটি, আর ব্যস্ত মোবাইল স্ক্রিন — সব কিছুতেই সৌরভ নিজেকে আবার গুঁজে নিয়েছে, কিন্তু এইবার যেন কোথাও কিছু আলাদা। কলকাতার রাস্তা দিয়ে যখন সে হাঁটে, বা অফিসের ডেস্কে বসে যখন নতুন বিজ্ঞাপনের ক্যাম্পেইন লেখে—মন তখনও কোথাও পেছনে তাকিয়ে থাকে। প্রতিদিন অফিসে ঢোকার আগে সে চায়ের কাপে চোখ রাখে কিছুক্ষণ, যেন সেই স্কুলের জানালার পাশে বসা ছেলেটা আবার ফিরে আসে। তার বুকের ভেতরে এখন একটা স্পষ্ট প্রশান্তি—একটা বোঝা নামার মতো অনুভব, যেটা আসে সত্যি কিছু বলার পর, বা সত্যি কিছু পাওয়ার পর। আর সেই শান্তির মধ্যেই একদিন সকালে সে পায় একটা খাম।
সাদা রঙের খামে হাতের লেখা — অন্বেষার। সৌরভ অবাক হয়, কারণ এখন তো হোয়াটসঅ্যাপ, ইনবক্স, মেসেঞ্জার—সবকিছুতেই সহজেই কথা হয়। তবু চিঠি এসেছে। তার বুক ধুকধুক করে ওঠে, যেন আবার স্কুলে ফিরে গেছে। খামটা খোলে। ভেতরে এক টুকরো কাগজে লেখা — সেই পুরনো চিঠি, যা অন্বেষা তাকে দিয়েছিল রিইউনিয়নের দিনে। কিন্তু আজ তার পাশে একটা নতুন লেখা যুক্ত হয়েছে। অন্বেষার হাতে লেখা, আধা জোছনার মতো নরম অক্ষরে—
“সেই অপূর্ণ চিঠির পাশে বসে এবার আমি কিছু যোগ করছি। তুই তো বলেছিলি, তুই এখনো লিখিস, শুধু ছন্দটা কেমন যেন হারিয়ে গেছে। আমি চাই, তুই আবার লিখিস—তোর মতো করে, কিন্তু এবার আমার সঙ্গে নিয়ে। তুই যদি ভাবিস, তোর ছড়া আবার চলতে পারে, তাহলে এবার আমাদের গল্পটাও নতুন করে শুরু হোক। আর হ্যাঁ, আমার ছেলেবেলার স্বপ্নের কবি—আমি এখনও তোর কবিতা পড়ি। এখন শুধু চাই, কবিতার মানুষটাকেও পাশে পেতে। আসবি তো?”
সৌরভ চিঠি পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। জানালার পাশে রাখা একগাছি বেলিফুলের মালা হাওয়ায় নড়ে। তার মনে হয়, সেই পুরনো ক্লাসরুম, সেই বেঞ্চ, সেই বিকেল—সব আবার ফিরে এসেছে। সে একটুও দেরি করে না। মোবাইলটা হাতে নেয়, মেসেজ লেখে—“আমি রওনা দিলাম, অন্বেষা। এবার আর দেরি করব না। কবিতার পৃষ্ঠা ভরে ফেলতে হবে—তোর নাম দিয়েই।” সেই মুহূর্তে কলকাতার আকাশে একটু হালকা বৃষ্টি নামে। শহরের জানালাগুলো ধুয়ে যায়, ঠিক যেমন করে সৌরভের বুকের দুঃখ, সময় আর অপেক্ষার জমে থাকা ক্লান্তি।
আট
সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। কলকাতার উত্তর দিকের ছোট্ট এক ক্যাফে — শান্ত, সাজানো, জানালার পাশে টেবিলগুলো খালি। ক্যাফের এক কোণে বসে অন্বেষা। তার পরনে হালকা হলুদ সালোয়ার, চোখে চুপচাপ একটা অপেক্ষার ছায়া। ছয়টার সময় বলেছিল সৌরভ আসবে — এখনও পাঁচ মিনিট বাকি, কিন্তু অন্বেষার মন বলছে, কেউ আসছে। ঠিক তখনই কাঁচের দরজাটা খুলে যায়। সৌরভ ঢোকে ধুলো লাগা ট্রেনের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে, চোখে ক্লান্তি আর ঠোঁটে একরাশ নিশ্চিন্ততা। দুজনের চোখ মিলতেই একটা অদ্ভুত আবেশ ছড়িয়ে পড়ে, যেন শহরের ব্যস্ততা থেমে যায় হঠাৎ। সৌরভ এসে চুপচাপ বসে পড়ে অন্বেষার সামনে, কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই, কোনো ‘কেমন আছো’ নেই — শুধু চুপ করে বসে থাকা, একে অপরের দৃষ্টির ভেতর কথার মতো ডুবে থাকা।
ওয়েটার এসে দুটো কফি রেখে যায়। সৌরভ মুচকি হেসে বলে, “এই টেবিলে বসে আমাদের স্কুল ক্যান্টিনের সেই পুরনো দিন মনে পড়ছে।” অন্বেষা হেসে ওঠে, “তুই তখনও কম কথা বলতিস, আর আমি ভেবেই যেতাম—কখন বলবি?” সৌরভ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে, “আজ আর কিছু লুকোব না। অন্বেষা, আমি সত্যিই চাই—তুই আর আমি, একসাথে থাকি। কোনো কবিতা বা চিঠি নয়, এবার জীবনটা লিখি আমরা দুজনে।” অন্বেষা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর ধীরে বলে, “তুই দেরি করিসনি। সময় ঠিক ছিল। আমাদের গল্পটা যে এখনই শুরু হওয়ার ছিল।”
তারপর তারা দুজনেই বারান্দায় এসে দাঁড়ায়, শহরের হালকা বাতাসে চুল উড়ে যায় অন্বেষার মুখে। সৌরভ ওর হাতটা ধরে—এইবার আর ভয় নেই, এইবার আর ফিরে না পাওয়ার ভয়, বা মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেই হাতের মধ্যে যত না প্রেম, তার চেয়েও বেশি বন্ধুত্ব, মুছে ফেলা স্মৃতি, আর একসাথে গড়া আগামী। দূর আকাশে আলো জ্বলে উঠছে, শহরের আলোগুলো একে একে জ্বলে উঠছে, ঠিক যেমনভাবে সৌরভ আর অন্বেষার মধ্যে জ্বলে উঠছে এক নতুন সম্পর্কের দীপ্তি। সেই মুহূর্তে, কোনো ঘোষণা নেই, কোনো ছড়ার প্রয়োজন নেই — শুধু একটা চোখ আর একজোড়া হাত জানিয়ে দেয়, জীবনের এই নতুন প্রথম দিনটা আর কখনও অপূর্ণ থাকবে না।
—
শেষ




