সায়ন সান্যাল
লখনৌ পৌঁছানোর মুহূর্তটা যেন কোনো সিনেমার প্রথম দৃশ্যের মতো মনে হলো। ট্রেনের জানালা দিয়ে যখন শহরের আকাশ দেখা যাচ্ছিল, তখনই অনুভব করেছিলাম—এই শহর কেবল জায়গার নাম নয়, বরং ইতিহাসের এক অমর কাব্য। স্টেশনে নামার পর প্রথম যে জিনিসটা চোখে পড়ল, সেটা হলো মানুষের ভিড় আর ভিন্ন ধরনের এক প্রাণবন্ত আবেশ। কলকাতার মতোই ভিড়, কিন্তু এখানে একটা অদ্ভুত মায়া কাজ করে, যেন প্রত্যেকেই কোনো এক অচেনা কাহিনির চরিত্র। হকারদের টানাটানি, রিকশাওয়ালার ডাক, দোকানিদের মিষ্টি আওয়াজ—সব মিলিয়ে একটা বহমান নাটকের মতো লাগছিল। আমার বুকের ভেতর কেমন একটা দোলা উঠল, কারণ এ শহরে আমি শুধু ভ্রমণকারী নই, বরং এক খোঁজের মানুষ। নবাবি ঐতিহ্য, রাজকীয় প্রাসাদ আর হারিয়ে যাওয়া দিনের কাহিনি আমাকে ডাকছিল। স্টেশন থেকে বের হতেই বাতাসে ভেসে আসছিল কাবাবের গন্ধ, তাতে মিলেমিশে ছিল মশলার ঝাঁঝ আর তেলের সোঁদা সুবাস। মনে হচ্ছিল শহরটা প্রথমেই নিজেকে স্বাদের মাধ্যমে চিনিয়ে দিচ্ছে, যেন বলছে—“স্বাগতম, তুমি এখন লখনৌতে।” রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখতে পেলাম পুরনো অট্টালিকা, অর্ধেক ভেঙে পড়া প্রাচীর, তবু যেন তাদের ভেতর এক অমর মর্যাদা লুকিয়ে আছে। সূর্যের আলো তাদের উপর পড়ছে, আর সেই সোনালি আভা যেন বলছে, সময় পেরোলেও ইতিহাস হারায়নি। প্রতিটি ইট, প্রতিটি জানালার কারুকাজ, প্রতিটি পাথর যেন অতীতের কাহিনি বহন করছে। আমার চোখে-মনে তখন শুধু প্রশ্ন—এই শহর কত গল্প লুকিয়ে রেখেছে, আর আমি তার কতটুকুই বা জানতে পারব?
রিকশা ধরে শহরের ভেতরে প্রবেশ করার সময় মনে হচ্ছিল আমি সময়ের ভেতর দিয়ে ভেসে যাচ্ছি। রাস্তার একদিকে আধুনিক বিল্ডিং, শপিং মল, উজ্জ্বল আলোতে ঝলমলে দোকান, অন্যদিকে পুরনো হাভেলি আর ধূসর প্রাচীর। দুই ভুবন যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে না। এটা যেন দুই সময়ের সহাবস্থান, অতীত আর বর্তমানের এক অদ্ভুত সেতুবন্ধন। ছোট ছোট গলিতে ঢুকলে দেখা যায় রঙিন বাজার, যেখানে মহিলারা গয়না কিনছে, পুরুষেরা সস্তায় জামা বা জুতো খুঁজছে। দোকানদাররা ভাঙা-ভাঙা বাংলায়ও কথা বলছে, যাতে ভ্রমণকারীদের সঙ্গে একটা মেলবন্ধন হয়। চায়ের দোকানে লোকজন জড়ো হয়ে রাজনীতি, কবিতা আর ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করছে, যেন শহরের প্রাণচাঞ্চল্য এখানেই জমে উঠেছে। গোমতী নদীর ধার দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, নদীর জলে আকাশের লালচে প্রতিফলন, আর তার পাশে দাঁড়িয়ে পুরনো কেল্লার ভগ্নাবশেষ। নদীর হাওয়ায় কেমন একটা নরম ছোঁয়া, যেন প্রকৃতিও এই শহরের স্মৃতিকে আপন করে রেখেছে। রিকশাওয়ালার কণ্ঠে লখনৌর উপভাষা শোনা যাচ্ছিল—গভীর, মধুর আর ধীরলয়ে বলা কথাগুলো। আমি জানতাম, এখানেই শুরু হতে চলেছে আমার ইতিহাসের সফর।
রাত নামতেই শহর যেন আরেক রূপ নিল। বাজারে লাইট জ্বলে উঠল, দোকানের ঝলমলে আলো যেন উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিল চারপাশে। রাস্তার ধারে কাবাবের দোকান থেকে ধোঁয়া উঠছে, টিক্কা, গলৌটি কাবাব, শেখ কাবাব—সবকিছুর গন্ধ মিলেমিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করল। আমি থেমে গেলাম এক দোকানে, আর প্রথম কামড়েই বুঝলাম কেন লখনৌর খাবারকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা বলা হয়। প্রতিটি মশলা যেন ইতিহাস বহন করছে, প্রতিটি স্বাদ যেন কোনো এক নবাবি রান্নাঘরের গোপন কাহিনি বলছে। খাবার খেতে খেতে দেখলাম, রাস্তায় মানুষজন হাসছে, গল্প করছে, কেউবা কবিতা আবৃত্তি করছে। এই শহর কেবল স্থাপত্য বা রাজকীয় প্রাসাদের শহর নয়, এটি মানুষের প্রাণে বেঁচে থাকা এক ঐতিহ্যের প্রতীক। হঠাৎ মনে হলো, আমি কেবল ভ্রমণকারী নই—আমি সাক্ষী, একজন ইতিহাসপাঠক, যে পুরনো দিনের কাহিনি নিজের চোখে দেখছে। রাতের আকাশে তারা ঝলমল করছিল, আর শহরের বাতাসে ভেসে আসছিল অতীতের ফিসফিসানি। সেদিনের শেষে আমি বুঝেছিলাম—লখনৌ আমার কাছে শুধুই একটা শহর নয়, বরং সময়ের ভেতর দিয়ে যাওয়া এক অমর যাত্রার শুরু।
***
লখনৌ শহরের প্রকৃত পরিচয় খুঁজে পেতে হলে আমাদের সময়ের অনেক পেছনে ফিরে যেতে হয়, সেই অওধ নবাবদের যুগে, যখন এই শহর হয়ে উঠেছিল উত্তর ভারতের অন্যতম শক্তিশালী ও সাংস্কৃতিক রাজধানী। আঠারো শতকের শুরুতে যখন মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছিল, তখন অওধ অঞ্চলের নবাবরা নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। সাদাত আলি খান ছিলেন প্রথম নবাব, যিনি দিল্লির মুঘল সম্রাটের অধীনে থাকলেও নিজের প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে চালাতে শুরু করেন। এরপর তাঁর উত্তরসূরিরা শুধু প্রশাসন নয়, সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও স্থাপত্যে অভূতপূর্ব অবদান রাখেন। লখনৌ শহর সেই সময় থেকেই নবাবি রুচি, আভিজাত্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। রাজকীয় দরবার, গম্ভীর সভা, কবিদের কণ্ঠে গজল, বাদশাহি নৃত্যের আসর—সব মিলিয়ে এক অপূর্ব পরিবেশ গড়ে ওঠে। ভ্রমণকারী হিসেবে আমি যখন এই ইতিহাসের পাতা উল্টে পড়ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন কোনো নাট্যমঞ্চে বসে আছি, আর চোখের সামনে নবাবি আমল জীবন্ত হয়ে উঠছে। ইতিহাস বইয়ের প্রতিটি লাইন আমার কাছে দৃশ্যপট হয়ে ফুটে উঠছিল, আর শহরের প্রতিটি প্রাচীর, প্রতিটি প্রাসাদ যেন তার সাক্ষ্য বহন করছিল।
নবাব আসফ-উদ-দৌলার সময়কালে লখনৌ শহর তার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছায়। তিনি ছিলেন দানশীল ও দূরদর্শী শাসক, যিনি শুধু প্রশাসনে নন, স্থাপত্য ও মানবিক দিকেও অনন্য ছিলেন। ১৭৮৪ সালে যখন ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন তিনি বিশাল এক কর্মসূচি হাতে নেন—হাজার হাজার মানুষকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন বিখ্যাত বড় ইমামবাড়া। কেউ দিনে কাজ করত, আবার কেউ রাতে কাজ করত, যাতে সকলে কিছু না কিছু কাজ পায়। একদিকে ইতিহাস বলছে এটি ছিল স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন, অন্যদিকে মানবিকতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এভাবেই নবাবরা শুধু শাসক ছিলেন না, তাঁরা ছিলেন মানুষের বন্ধু, শিল্পের পৃষ্ঠপোষক, আর সংস্কৃতির অভিভাবক। লখনৌতে কাওয়ালি, গজল, উর্দু সাহিত্য, নৃত্যশিল্প ও কারুকলার এমন বিকাশ ঘটেছিল যে শহরটি একসময় ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এখানে শুধু রাজকীয় প্রাসাদের আভিজাত্য ছিল না, ছিল মানুষের হৃদয়ে ছোঁয়া এক উষ্ণতা, যা আজও অনুভব করা যায়। আমি যখন এই কাহিনি শুনছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল লখনৌ যেন আমাকে আলতো করে তার অতীতে টেনে নিচ্ছে। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি নাম, প্রতিটি স্থাপত্য আমার সামনে ইতিহাসের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
কিন্তু ইতিহাস শুধু সোনালি অধ্যায়ে থেমে থাকেনি। নবাবি আমলের শেষ দিকে যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে তাদের দখল বাড়াচ্ছিল, তখন লখনৌর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশরা নবাব ওয়াজিদ আলি শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে, আর লখনৌ শহর অওধের রাজধানী হিসেবে তার স্বাধীন মর্যাদা হারায়। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতপ্রেমী ও সংস্কৃতির রসিক। তাঁর শাসনকাল হয়তো রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল, কিন্তু সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে তিনি লখনৌকে এক অমর স্বর্ণযুগ উপহার দিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের অত্যাচার ও লোভে ভরা সেই ইতিহাস হয়তো বেদনাদায়ক, কিন্তু তার ভেতর দিয়েই ফুটে উঠেছিল লখনৌর প্রকৃত শক্তি—মানুষের একাত্মতা, প্রতিরোধ ও আত্মসম্মান। ভ্রমণকারী হিসেবে আমার মনে হচ্ছিল, লখনৌর এই ইতিহাস কেবল অতীত নয়, বরং বর্তমানেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শহরের প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি প্রাসাদ, প্রতিটি গলি যেন আজও নবাবি আমলের গৌরব ও সংগ্রামের কাহিনি শোনাচ্ছে। আমি বুঝলাম, লখনৌকে জানতে হলে কেবল স্থাপত্য দেখতে হবে না, এর প্রতিটি ইট, প্রতিটি প্রাচীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কণ্ঠস্বরকে শুনতে হবে। আর সেখানেই শুরু হলো আমার আসল ইতিহাসের যাত্রা।
***
লখনৌ ভ্রমণের তৃতীয় দিনে আমি পৌঁছালাম শহরের অন্যতম বিখ্যাত স্থাপত্য, বড় ইমামবাড়া-তে। দূর থেকে তাকালেই চোখে পড়ে বিশাল এক দরজা, যার ভেতরে লুকিয়ে আছে ইতিহাস আর রহস্যের এক অপূর্ব জগৎ। ইমামবাড়ার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল যেন আমি কোনো রাজকীয় মঞ্চে এসে পড়েছি, যেখানে প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি খিলান, প্রতিটি অলঙ্করণ অতীতের স্মৃতি বহন করছে। নবাব আসফ-উদ-দৌলার স্বপ্নে গড়ে ওঠা এই স্থাপনাটি শুধু স্থাপত্য নয়, বরং মানবতার প্রতীকও বটে। ১৭৮৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময়, যখন হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিল, তখন নবাব এই ইমামবাড়া নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এখানে দিনে শ্রমিকরা কাজ করত, আবার রাতে যারা সম্মান রক্ষার্থে দিনের আলোয় কাজ করতে চাইত না, তারাও এসে কাজ করত। এভাবে ইমামবাড়ার প্রতিটি ইট মানুষের ঘাম, আশা আর বেঁচে থাকার লড়াই দিয়ে গড়ে ওঠে। আজও যখন আমি সেই স্থাপনাকে দেখি, মনে হয় এর ভেতরে শুধু রাজকীয়তার গৌরব নেই, আছে মানুষের কষ্ট আর সংগ্রামের গল্প। ইমামবাড়ার মূল হলঘরে প্রবেশ করতেই যে বিশালত্ব চোখে পড়ে, তাতে বিস্ময়ে অভিভূত না হয়ে উপায় নেই—এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গম্বুজবিশিষ্ট হল, যেখানে কোনো লোহার কাঠামো ব্যবহার হয়নি। স্থপতি কিফায়তউল্লাহ এই কাজের নকশা করেছিলেন, আর তাঁর মেধা আজও পৃথিবীর মানুষকে অবাক করে দেয়।
তবে বড় ইমামবাড়ার প্রকৃত আকর্ষণ কেবল মূল হলঘরে সীমাবদ্ধ নয়, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে রহস্যময় ভূলভুলাইয়া। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতে আমি যেন এক অন্য জগতে প্রবেশ করলাম। ভূলভুলাইয়ার অসংখ্য করিডর, সরু পথ আর হঠাৎ হঠাৎ বাঁক নেওয়া সিঁড়ি আমাকে বারবার বিভ্রান্ত করে তুলছিল। ইতিহাস বলে, এখানে প্রায় এক হাজারেরও বেশি রাস্তা রয়েছে, যেগুলির অনেকগুলিই একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত যে সহজে বের হওয়া সম্ভব নয়। আমি একজন স্থানীয় গাইডকে সঙ্গে নিয়েছিলাম, তবু প্রতিটি বাঁকে কেমন এক ভয়ের স্রোত বয়ে যাচ্ছিল মনে—যদি হঠাৎ হারিয়ে যাই! তবে এই ভীতিটাই আসলে ইমামবাড়ার অন্যতম আকর্ষণ। করিডরগুলোতে দাঁড়ালে শোনা যায় এক জায়গার আওয়াজ অন্য জায়গায় গিয়ে প্রতিধ্বনি হয়, যেন স্থপতি ইচ্ছাকৃতভাবে এক অদ্ভুত সাউন্ড সিস্টেম তৈরি করেছিলেন। একসময় এই ভূলভুলাইয়া শত্রুদের বিভ্রান্ত করতে ব্যবহার করা হতো বলেও শোনা যায়। আমি যখন ভেতরে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন সত্যিই মনে হচ্ছিল যেন সময় থেমে গেছে। আলো-আঁধারে ভরা সরু পথ, অচেনা প্রতিধ্বনি, আর জানালা দিয়ে দেখা লখনৌ শহরের দৃশ্য আমাকে এক অন্য আবেশে ভাসিয়ে নিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমি ইতিহাসের কোনো এক অদৃশ্য চরিত্র, যে শতাব্দী পেরিয়ে আজও সেই যুগের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ভূলভুলাইয়া থেকে বেরিয়ে আসার পর আমি কিছুক্ষণ বসেছিলাম ইমামবাড়ার আঙিনায়। চারপাশে বিদেশি পর্যটক, স্থানীয় দর্শনার্থী, গাইডের কণ্ঠে ভেসে আসা কাহিনি—সব মিলিয়ে জায়গাটা যেন এক জীবন্ত ইতিহাসের পাঠশালা। আমি লক্ষ্য করলাম, প্রতিটি মানুষ এই স্থাপত্য দেখে বিস্মিত হলেও তাদের অনুভূতি আলাদা। কেউ কেবল সৌন্দর্য দেখছে, কেউ স্থাপত্যের কৌশল নিয়ে ভাবছে, আর আমি খুঁজে নিচ্ছিলাম মানবতার ছোঁয়া। মনে হচ্ছিল, ইমামবাড়ার দেয়ালগুলো যেন আমায় বলছে—“আমরা কেবল পাথর নই, আমরা মানুষের অশ্রু, কষ্ট আর আশা নিয়ে বেঁচে আছি।” সেই মুহূর্তে উপলব্ধি করলাম, বড় ইমামবাড়া শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি লখনৌর আত্মা। এর ভেতরে নবাবি ঐশ্বর্য যেমন আছে, তেমনি আছে সাধারণ মানুষের ঘাম-ঝরা শ্রমের ছাপ। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ছিল, আঙিনায় আলো-আঁধারের খেলা শুরু হয়েছিল। সেই দৃশ্য দেখে আমার মনে হলো—এই শহর, এই স্থাপত্য, আর এই ইতিহাস কখনও ম্লান হবে না। লখনৌ তার স্মৃতিকে এভাবেই ধরে রেখেছে, আর আমি সেই স্মৃতির অংশ হয়ে ফিরে এলাম।
***
বড় ইমামবাড়ার মহিমা দেখার পরের দিনই আমি রওনা দিলাম আরেকটি বিখ্যাত স্থাপত্য, ছোট ইমামবাড়া-র দিকে। স্থানীয়রা একে “হুসেইনাবাদ ইমামবাড়া” নামেও চেনে, কারণ এটি নবাব মুহাম্মদ আলি শাহের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। দূর থেকে তাকালেই বোঝা যায়, এই স্থাপত্যের সৌন্দর্য আলাদা ধরণের—এখানে নেই বড় ইমামবাড়ার বিশালত্ব, কিন্তু আছে অদ্ভুত রকমের নকশা আর অলঙ্করণের জৌলুস। প্রবেশদ্বারেই চোখে পড়ল ঝলমলে খিলান, দেয়ালে সূক্ষ্ম কারুকাজ, আর গম্বুজের উপর সোনালি ফিনিয়াল। আমি যখন ভেতরে প্রবেশ করলাম, মনে হলো যেন ঝাড়বাতির স্বপ্নরাজ্যে ঢুকে পড়েছি। বলা হয়, ছোট ইমামবাড়া একসময় এত আলোয় সজ্জিত হতো যে তাকে “ঝাড়বাতির প্রাসাদ” বলা হতো। আজও সেই ঐশ্বর্যের আভাস পাওয়া যায়—ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বিশাল ঝাড়বাতি, ইউরোপ থেকে আনা লণ্ঠন, আর দেয়ালে ঝলমলে নকশা। প্রতিটি জিনিসই যেন বলে দিচ্ছে নবাব মুহাম্মদ আলি শাহ কতখানি সৌন্দর্যপ্রেমী ছিলেন।
ছোট ইমামবাড়ার ভেতরে প্রবেশ করার সময় এক অদ্ভুত নীরবতা আমায় ঘিরে ধরল। মূল কক্ষে শায়িত আছেন নবাব মুহাম্মদ আলি শাহ এবং তাঁর মা। তাঁদের সমাধির চারপাশে আলো-ছায়ার খেলা এমন এক আবহ তৈরি করেছিল, যা একদিকে রাজকীয়, আবার অন্যদিকে গভীরভাবে আধ্যাত্মিক। এখানে এসে মনে হচ্ছিল, লখনৌর নবাবরা শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, তাঁরা ছিলেন ধর্মপ্রাণ ও সংস্কৃতির রসিক মানুষও। গাইডের মুখে শুনলাম, প্রতিটি ঝাড়বাতি আর অলঙ্কার বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যে ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়েছিল। ঝাড়বাতির কাঁচের নকশা, ধাতুর কারুকাজ আর আলো প্রতিফলনের খেলা এমন এক জাদু সৃষ্টি করেছিল, যা আধুনিক আলোয়ও পাওয়া যায় না। প্রতিটি ঘরে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন কোনো পরীর প্রাসাদে এসে পড়েছি। বড় ইমামবাড়ার মতো এখানে ভূলভুলাইয়া নেই, নেই বিশাল খোলা প্রাঙ্গণ, কিন্তু আছে রূপকথার মতো এক রাজকীয় সৌন্দর্য।
ভ্রমণের শেষ দিকে আমি বাইরে এসে দাঁড়ালাম ছোট ইমামবাড়ার আঙিনায়। চারপাশে ফুলের বাগান, ছোট ছোট ফোয়ারা আর নরম সবুজ ঘাসের আস্তরণে পুরো পরিবেশটা স্বপ্নময় হয়ে উঠেছিল। আঙিনার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুমি দরওয়াজার ছায়া দূর থেকে চোখে পড়ছিল, যেন এই দুই স্থাপত্য একে অপরকে সম্পূর্ণ করে তুলছে। সন্ধ্যার আলোয় ঝাড়বাতিগুলো যখন জ্বলে উঠল, তখন মনে হলো সময় থমকে গেছে—ইতিহাস আর বর্তমান একসঙ্গে মিশে গেছে সেই মুহূর্তে। বিদেশি পর্যটকের ভিড়ের মধ্যেও আমি এক অদ্ভুত একাকিত্ব অনুভব করছিলাম, যেন প্রাচীন নবাবি আমল থেকে কেউ এসে আমার কানে কানে বলছে—“এই ঐতিহ্য তোমার, একে মনে রেখো।” ছোট ইমামবাড়া আমার চোখে কেবল স্থাপত্য নয়, বরং সৌন্দর্য ও স্মৃতির এক জীবন্ত কাব্য হয়ে উঠল। রাতে যখন ফিরে যাচ্ছিলাম, তখনও ঝাড়বাতির আলোয় ঝলমলে সেই দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল, আর আমি বুঝলাম লখনৌর প্রতিটি স্থাপত্যই এক একটি ইতিহাসের কবিতা।
***
লখনৌ ভ্রমণের পরের ধাপে আমি পৌঁছালাম শহরের এক প্রতীকী স্থাপত্যের সামনে—রুমি দরওয়াজা। দূর থেকে তাকালেই বোঝা যায়, এটি কেবল একটি প্রবেশদ্বার নয়, বরং এক অমর শিল্পকীর্তি। ১৭৮৪ সালে নবাব আসফ-উদ-দৌলার উদ্যোগে এই দরওয়াজা তৈরি হয়, যখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে মানুষ দিশেহারা। তাঁর নির্দেশেই গড়ে ওঠে এমন এক স্থাপত্য, যা আজও লখনৌ শহরের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উচ্চতায় প্রায় ষাট ফুট, দরওয়াজার গম্বুজাকৃতি খিলান আর সূক্ষ্ম অলঙ্করণ দেখে মনে হয় যেন তুরস্কের কোনো রাজপ্রাসাদ থেকে উঠে এসেছে। নামের সঙ্গেও সেই মিল রয়েছে—‘রুমি দরওয়াজা’, কারণ এটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রোমান শৈলীর স্থাপত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত। আমি যখন দরওয়াজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন ইতিহাসের কোনো মহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করলে এক অনন্ত কাহিনির শুরু হয়। দিনের আলোয় এর গম্ভীর সৌন্দর্য একরকম লাগে, আর রাতের আলোয় যখন বিদ্যুতের ঝলকানি পড়ে, তখন মনে হয় যেন দরওয়াজা জেগে ওঠে নতুন করে।
দরওয়াজার ভেতরে প্রবেশ করতেই আমি অনুভব করলাম তার অনন্য স্থাপত্যের মায়াজাল। এর খিলানগুলো এত উঁচু আর মহিমান্বিত যে মাথা উঁচু করে তাকিয়েও পুরোটা একসঙ্গে দেখা যায় না। ভেতরে নেই কোনো লোহার সাপোর্ট, নেই কংক্রিটের ব্যবহার—কেবল ইট-চুনে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। গাইড বলছিলেন, দরওয়াজার নকশায় এমনভাবে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল যে ভেতরে দাঁড়ালেই ঠান্ডা বাতাস অনুভূত হয়। ভাবতে অবাক লাগে, আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই কীভাবে এত নিখুঁত স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল। আমি করিডরের ভেতরে হাঁটছিলাম, আর প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিধ্বনি হচ্ছিল, যেন দরওয়াজা নিজেই তার অতীতের কাহিনি শোনাচ্ছে। ইতিহাস বলে, একসময় এই দরওয়াজা নবাবি শহরের রাজকীয় প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নবাবের মিছিল, হাতির কাফেলা, ঘোড়ার গাড়ি, বাদশাহি বাদ্যযন্ত্র—সবকিছু এই দরওয়াজা পেরিয়ে প্রবেশ করত শহরের ভেতরে। আমি চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলাম সেই দৃশ্য, আর মনে হলো আমি যেন সময়ের ভেতর দিয়ে পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আঠারো শতকের লখনৌতে।
দরওয়াজার চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। সামনে ছোট দোকানপাট, চারপাশে পর্যটকের ভিড়, তবুও মনে হচ্ছিল এই স্থাপত্য তার ভেতরে এক গভীর নীরবতা ধারণ করে রেখেছে। সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে পড়ছিল, আর তার লালচে আলো দরওয়াজার খিলানে পড়ছিল, যা একেবারে অপূর্ব লাগছিল। আমি ভাবছিলাম, রুমি দরওয়াজা কেবল একটি স্থাপত্য নয়, এটি লখনৌর ইতিহাসের প্রতীক। এটি সেই সময়ের স্মারক, যখন নবাবরা শুধু রাজনীতি নয়, মানবিকতা আর শিল্পকলার জন্যও নাম কুড়িয়েছিলেন। দুর্ভিক্ষের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও তাঁরা এমন এক স্থাপত্য উপহার দিয়েছিলেন, যা আজও পৃথিবীর বিস্ময়। আমি জানতাম, এ শহরের ভ্রমণ শেষ হলে অনেক কিছুই মনে থাকবে, কিন্তু রুমি দরওয়াজার বিশাল দরজা দিয়ে প্রথম প্রবেশের অভিজ্ঞতা কখনোই মুছে যাবে না। এটি যেন আমন্ত্রণ জানায়—“এসো, অতীতের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করো, এখানে আছে ইতিহাস, আছে কাহিনি, আছে লখনৌর অমর আত্মা।” সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, লখনৌকে বুঝতে হলে রুমি দরওয়াজা পার হওয়াটা অপরিহার্য, কারণ এই দরজার ভেতর দিয়েই শুরু হয় নবাবি ঐতিহ্যের প্রকৃত যাত্রা।
***
লখনৌ ভ্রমণের আসল স্বাদ পাওয়া যায় তখনই, যখন শহরের নবাবি সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের আবেশকে কাছ থেকে অনুভব করা যায়। স্থাপত্য ও প্রাসাদের বাইরে এই শহর আসলে বেঁচে থাকে মানুষের জীবনধারায়—তাদের আড্ডায়, পোশাকে, ভাষায় আর শিল্পকলায়। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখি, নবাবদের আমলে লখনৌ শুধু রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল না, এটি হয়ে উঠেছিল সংস্কৃতি, কবিতা, সঙ্গীত ও রন্ধনশৈলীর রাজধানী। দরবারে বসে কবিরা গজল আবৃত্তি করতেন, গায়কেরা কাওয়ালি পরিবেশন করতেন, আর নর্তকীরা উপস্থাপন করতেন “কথক” নৃত্য। কথক নৃত্যরীতিই লখনৌতে নতুন রূপ লাভ করে—যেখানে গল্প বলার ছন্দ, দেহভঙ্গি, হাতের অঙ্গভঙ্গি সবকিছু মিশে এক অনন্য শিল্পরূপে পরিণত হয়েছিল। আমি যখন শহরের এক সাংস্কৃতিক আসরে গিয়েছিলাম, তখনও সেই পুরনো ঐতিহ্যের ঝলক দেখতে পেলাম। ছোট্ট একটি মঞ্চে কথক নৃত্যশিল্পীর ঘণ্টার ঝনঝন, ঢোলকের আওয়াজ, আর গজলের সুর যেন আমায় নিয়ে গেল কয়েক শতাব্দী পেছনে, নবাবদের রাজসভায়। মনে হচ্ছিল সময় থেমে গেছে, আর আমি সেই জৌলুসময় আসরের এক অতিথি মাত্র।
নবাবি সংস্কৃতির আরেকটি বিশেষ দিক ছিল তাঁদের জীবনযাপন ও রুচিবোধ। রাজপ্রাসাদের প্রতিটি কক্ষে সূক্ষ্ম কারুকাজ, ঝাড়বাতি, রেশমের পর্দা, মূল্যবান গালিচা—সবকিছুই ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। কিন্তু সেই সঙ্গে ছিল এক অদ্ভুত মাধুর্য ও আতিথেয়তা, যা আজও লখনৌর মানুষ বহন করে। এখানকার ভাষা, যাকে “তেহজীব” বলা হয়, তা একেবারে ভিন্ন রকমের। স্থানীয় লোকজনকে যখন শুনলাম, তখন অনুভব করলাম কেমন মধুরতা আর ভদ্রতা মিশে আছে তাঁদের প্রতিটি শব্দে। বাজারের দোকানদার থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা—প্রত্যেকেই এমনভাবে কথা বলে, যেন সম্মান জানানো তাদের রক্তে মিশে আছে। নবাবরা এই শহরে যে কাব্যিকতা এনে দিয়েছিলেন, তা কেবল স্থাপত্যে বা গানে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ছড়িয়ে পড়েছিল। খাবারের দিকেও সেই আভিজাত্য স্পষ্ট। লখনৌর কাবাব, বিরিয়ানি, নান, কোরমা—প্রতিটি খাবার নবাবি রুচির নিদর্শন। আমি যখন একটি পুরনো খাবারের দোকানে বসে গলৌটি কাবাব খেলাম, তখন মনে হলো প্রতিটি কামড়ে যেন ইতিহাস গলে যাচ্ছে। বলা হয়, এক বৃদ্ধ নবাবের দাঁত না থাকার কারণে বিশেষ মশলা ও কৌশলে এই কাবাব তৈরি হয়েছিল, যাতে মুখে দিলেই গলে যায়। আজও সেই স্বাদ লখনৌকে অন্য শহর থেকে আলাদা করে তোলে।
শহরে কাটানো প্রতিটি দিনে আমি লক্ষ্য করছিলাম, নবাবি জীবনযাপন আসলে কেবল রাজপ্রাসাদে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সাধারণ মানুষও সেই ঐতিহ্য নিজেদের মধ্যে ধারণ করেছে। এখানকার চায়ের আড্ডা, কাওয়ালির আসর, ঈদের জমকালো উৎসব, এমনকি প্রতিদিনের সৌজন্যতাও নবাবি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার। সন্ধ্যায় গোমতী নদীর তীরে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম কিশোরেরা গজল গাইছে, বয়স্করা তাস খেলছে, আর মহিলারা বাজার থেকে কাপড় কিনে ফিরছে। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল লখনৌ এক জীবন্ত সংস্কৃতি, যার প্রতিটি শ্বাসে নবাবি আবেশ মিশে আছে। আমি বুঝলাম, এই শহরের আসল সৌন্দর্য শুধু তার স্থাপত্য নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রার ভেতরে লুকিয়ে থাকা ঐতিহ্যে। নবাবি সংস্কৃতি আজও লখনৌর প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি আড্ডায়, প্রতিটি গানের সুরে বেঁচে আছে। আর আমি সেই আবেশের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করলাম—লখনৌকে ভালোবাসার মানে কেবল একটি শহরকে ভালোবাসা নয়, বরং এক অনন্ত ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করা।
***
কিলার প্রবেশদ্বার থেকেই দর্শকের মন জয় করতে থাকে তার বিশালতা ও প্রাচীনতার প্রতীকী শিলালিপি দিয়ে সাজানো দেয়ালগুলো। প্রতিটি কোণ, প্রতিটি খিলান যেন গল্প বলে, যেখানে ইতিহাস আর স্থাপত্যের সমন্বয় ঘটেছে এক অনন্য রূপে। দিলকুশা কিলার ভেতরের হর, ছোট বারান্দা, এবং রাজকীয় আসনগুলো দর্শকের কল্পনাকে ছুঁয়ে যায়, যেখানে নবাবেরা তাদের দৈনন্দিন জীবন, ভোজন ও রাজকীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন। কিলার চারপাশে থাকা বাগানগুলো কেবল সৌন্দর্য্য নয়, বরং শান্তির প্রতীক। উদ্যানের মাঝখানে ছোট ছোট জলাধার, পদ্মফুলে ভরা পুকুর, এবং ছায়াময় গাছগুলো প্রাকৃতিক ছন্দে স্থাপত্যের সঙ্গে একাত্মতা সৃষ্টি করেছে। ভ্রমণকারী এখানে হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করে নবাবি সভ্যতার নরম স্পর্শ, যা আজও তার ভাস্কর্য, বুলেট-গহ্বর ও ধ্বংসপ্রাপ্ত দেয়ালে জীবন্ত রূপে উপস্থিত।
এরপর যাত্রা অব্যাহত হয় কায়সারবাগ প্যালেসের দিকে, যা লখনৌয়ের অন্যতম প্রধান প্রাসাদ হিসেবে পরিচিত। প্যালেসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দর্শক প্রথমেই মুগ্ধ হয় তার বহুমুখী স্থাপত্য ও প্রাচীন সজ্জার কারণে। প্রতিটি জানালা, ফটক, ও বারান্দা যেন ইতিহাসের পাতার মতো খুলে দেয় নবাবদের রাজকীয় জীবনধারার গল্প। প্যালেসের অভ্যন্তরীণ হলগুলোতে প্রবেশ করলে প্রাচীন ভাস্কর্য, দেয়ালে কাশীদা, এবং সোনার সূক্ষ্ম অলঙ্কার চোখে পড়ে, যা তার ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও বর্ধিত করে। এখানে ঘুরে বেড়ানোর সময় দর্শক অনুভব করে রাজকীয় অভিজাত জীবন, যেখানে নবাবেরা বেলাশয়, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও কাব্যপাঠের আয়োজন করতেন। কায়সারবাগের পার্শ্ববর্তী উদ্যানগুলোও দর্শনীয়। খোলা মাঠ, সুগঠিত পথচিহ্ন, ফুলের বাগান ও জলের প্রবাহ সব মিলিয়ে এক শান্তি ও সৌন্দর্যের অনুভূতি জাগায়। ভ্রমণকারী প্রতিটি কোণে যেন সময়ের গভীরে প্রবেশ করে, যেখানে প্রাসাদের ইতিহাস শুধু চিত্র নয়, বরং জীবন্ত স্মৃতি হিসেবে তার কাছে উপস্থিত হয়।
শেষে কুকরাইল গার্ডেনের দিকে যাত্রা হয়, যা লখনৌয়ের প্রাণকেন্দ্রের কাছাকাছি একটি প্রাকৃতিক ও স্থাপত্যের মিলনস্থল। এই উদ্যানটি মূলত রাজকীয় বিনোদন ও প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হতো। ঢাকনা-ছায়া গাছ, সুগঠিত পদচিহ্ন, লেক ও ঝর্ণার সঙ্গে সংযুক্ত pathways দর্শকের মনকে প্রশান্তি দেয়। গার্ডেনের কেন্দ্রে থাকা প্যাভিলিয়নগুলো নবাবি স্থাপত্যের নিখুঁত উদাহরণ, যেখানে ছাদ, কলাম ও খিলানগুলো সূক্ষ্ম কৌশলে নির্মিত। প্রতিটি স্থান যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও মানবসৃষ্ট স্থাপত্যের সাদৃশ্য তুলে ধরে। কুকরাইল গার্ডেনে হাঁটতে হাঁটতে ভ্রমণকারী শুধু ইতিহাস নয়, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতার অনুভূতিও লাভ করে। উদ্যানের কোণে ছোট ছোট পাথরের সিঁড়ি, নীরব জলধারার ধ্বনি, এবং পাখির কূজন এক অনন্য মেলডি তৈরি করে। এই অধ্যায় শেষে পাঠক উপলব্ধি করে যে, দিলকুশা কিলা, কায়সারবাগ প্যালেস ও কুকরাইল গার্ডেন শুধু স্থাপত্য নয়, বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক অভূতপূর্ব সমন্বয়, যা লখনৌ শহরের নবাবি ঐতিহ্যের প্রাণস্পন্দন হয়ে আছে।
***
প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বা সিপাহী বিদ্রোহ যখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, লখনৌ তখন রাজকীয় ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রাখত। শহরের প্রতিটি গলি, প্রাসাদ ও জমিদার বাড়ি যেন সেই সময়ের উত্তেজনা ও সংগ্রামের সাক্ষী। সিপাহিরা যেভাবে দাপটে ঘুরে বেড়াতো, ও তাদের বিক্ষোভের স্লোগানগুলো যেভাবে শহরের চারপাশে প্রতিধ্বনিত হতো, তা আজও ঐতিহাসিক স্থানগুলোয় স্পষ্টভাবে অনুভূত করা যায়। লখনৌয়ের বীর সিপাহিরা এবং সাধারণ নাগরিকরা একত্রিত হয়ে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। শহরের বিভিন্ন দুর্গ, প্রাসাদ ও সরকারি ভবন সেই সময়ের রণক্ষেত্র হিসেবে কাজ করেছিল। ইতিহাসপ্রেমী দর্শক যখন এই স্থানগুলোতে হাঁটেন, তখন প্রতিটি প্রাচীর, প্রতিটি ভাঙা ঘর যেন শহরের ত্যাগ ও সাহসের গল্প বর্ণনা করে। লখনউ-এর লুকানো গলিপথ, গোপন মিছিলের স্থান ও গৃহযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন এক গভীর আবেগের সঙ্গে শহরের ইতিহাসকে জীবন্ত রাখে।
এই অধ্যায় অব্যাহত থাকে লখনউ অবরোধের কাহিনী দিয়ে, যা শহরের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। অবরোধকালে শহরের বাসিন্দারা নিজেদের জীবনধারাকে একেবারে নতুন করে সাজাতে বাধ্য হয়েছিল। খাদ্য, জল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য নগরবাসীকে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করতে হত। এই সময় লখনউয়ের সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, রাজকীয় পরিবার এবং সৈন্যরা একযোগে শহরের রক্ষা ও বিদ্রোহ পরিচালনায় সক্রিয় ছিল। অবরোধকালে নগরের প্রতিটি প্রান্তে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়লেও, মানুষের অদম্য সাহস ও একতার ফলে শহর টিকে থাকল। এই সময়ের গল্পগুলো আজও কেবল ইতিহাসের পাতা নয়, বরং মানুষের আত্মত্যাগ, ধৈর্য এবং একতার এক অমূল্য শিক্ষা হয়ে আছে। অবরোধকালে লখনউয়ের বাতাবরণে যে উত্তেজনা ও সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তা দর্শকের হৃদয়ে এক বিশেষ ছাপ ফেলে, যেখানে প্রত্যেক প্রাচীন প্রাসাদ, দুর্গ এবং সিপাহি ক্যাম্প যেন সেই সময়ের নাট্যশালার অংশ হয়ে ওঠে।
শেষে অধ্যায়টি শহরের বীরত্ব ও ত্যাগের কাহিনীকে কেন্দ্র করে, যেখানে লখনউয়ের সাধারণ মানুষ ও সৈন্যরা এক অনন্য ঐক্যের উদাহরণ স্থাপন করে। এই শহরের প্রতিটি কোণে এখনও সেই বীরত্বের ছাপ ফুটে আছে—প্রতিটি ভাঙা প্রাসাদ, প্রতিটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং প্রতিটি সংরক্ষিত গলি যেন ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের গল্প বলে। লখনউর ভূমিকা কেবল প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল ঐক্য, সাহস এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। শহরের মানুষ তাদের জীবনের সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে ইতিহাস গড়েছিল, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক অমুল্য উত্তরাধিকার। অধ্যায়টি শেষ হয় এই উপলব্ধিতে যে, লখনউ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, বরং স্বাধীনতার লড়াইয়ের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে প্রতিটি পাথর, প্রতিটি প্রাচীন ভবন, এবং প্রতিটি গলিপথ অতীতের বীরত্বের প্রতিফলন হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
***
কিন্তু চোখ ঘুরিয়ে দেখলেই চোখে পড়ে আধুনিকতার ছোঁয়া, যেখানে নতুন ভবন, উচ্চতর অফিস কমপ্লেক্স ও রেসিডেন্সিয়াল এলাকা শহরের আকাশরেখাকে নতুন রূপে সংজ্ঞায়িত করেছে। এই পুরনো ও নতুনের মেলবন্ধন লখনউকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। প্রাচীন স্থাপত্যগুলো, যেমন দিলকুশা কিলা বা কায়সারবাগ প্যালেস, এখনও শহরের মাঝখানে শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যেন সময়ের সঙ্গে লড়ছে। এদের পাশে নতুন রাস্তাঘাট, ব্রীজ ও শপিং কমপ্লেক্স শহরের প্রাণবন্ততা ও গতিশীলতা বাড়িয়েছে। ভ্রমণকারী যখন শহরের সড়কগুলোতে হাঁটেন, তখন চোখে পড়ে এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ—পুরনো লোহার দরজা, কাঠের জানালা, আর পাশেই চকচকে গ্লাসের ফassade। এই দৃশ্য শহরের একটি জীবন্ত চরিত্র তৈরি করেছে, যেখানে ইতিহাস আর আধুনিকতা একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপন করছে।
এরপর যাত্রা চলে গোমতী নদীর তীরে, যা লখনউর প্রাণ। নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো আজও শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। নদীর শান্ত পানিতে প্রতিফলিত শহরের আলো, সকালে জগাখিচুড়ি করা হাট, বিকেলে নদীর ধারে বসা মানুষদের আড্ডা—সব মিলিয়ে এক জীবন্ত চিত্রের জন্ম দেয়। নদীর তীরবর্তী পথ চলতে গিয়ে দর্শক দেখতে পান ছায়াময় গাছের ছায়া, ছোট ছোট প্যাভিলিয়ন ও রিসোর্ট, যা শহরের আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয়। নদীর ধারে বসে মানুষদের চা-আড্ডা, গল্প ও হাসি-মুখর পরিবেশ শহরের সংস্কৃতি এবং মানুষের সম্পর্কের প্রতিফলন। এই আধুনিক আড্ডাগুলো কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং শহরের সামাজিক বন্ধন ও যোগাযোগের ক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভ্রমণকারী নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে শহরের ইতিহাস ও বর্তমানের একাত্মতা অনুভব করে, যেখানে গোমতীর জলধারার ধ্বনি যেন শহরের গতিশীল জীবনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলে।
শেষে অধ্যায়টি শহরের বাজার ও রাস্তাঘাটের জীবন্ত দৃশ্য নিয়ে এগোয়, যা আধুনিক লখনউর একটি স্বতন্ত্র পরিচয়। पुराने কাঠের দোকান, রঙিন বাতি, এবং বিভিন্ন হস্তশিল্পের দোকান এখনও শহরের ঐতিহ্যকে ধরে রাখে। একইসঙ্গে, নতুন শপিং মল, ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ শহরের ক্রমবর্ধমান আধুনিকতার প্রতীক। হাটবাজারে ভিড়, বিভিন্ন প্রকারের ফল, মসলার গন্ধ এবং মানুষের চেঁচামেচি একটি উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত পরিবেশ তৈরি করে। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পর্যটক—সবাই মিশে শহরের এই রাস্তাঘাটে এক নতুন ছন্দ সৃষ্টি করে। চা-আড্ডার মাঝখানে বসে গল্প করা, রাস্তায় ছোট ছোট কর্মশালা দেখা, এবং শিল্পকলার প্রদর্শনী উপভোগ করা—সব মিলিয়ে শহরের আধুনিক সংস্কৃতিকে জীবন্ত করে তোলে। এভাবেই লখনউয়ের পুরনো স্থাপত্য, নদী তীরের সৌন্দর্য এবং আধুনিক বাজার ও আড্ডা একত্রিত হয়ে একটি সমৃদ্ধ, প্রাণবন্ত এবং বহুমুখী শহরের অভিজ্ঞতা দর্শকের মনে স্থাপন করে, যা শুধু ইতিহাস নয়, বরং বর্তমানের জীবনধারারও চিত্র তুলে ধরে।
***
প্রতিটি গলি, প্রতিটি প্রাসাদ, এবং প্রতিটি পুরনো প্রাচীর যেন বিদায়ের সঙ্গে এক গভীর সংলাপ শুরু করে। দিলকুশা কিলা বা কায়সারবাগ প্যালেসের মতো স্থাপনাগুলো কেবল স্থাপত্য নয়, বরং নবাবি আবেশের জীবন্ত সাক্ষী। কিলার খিলান, বাগানের পুকুর ও পদ্মফুলের ধ্বনি, প্রাচীন বারান্দার নকশা—সবই দর্শকের মনে নবাবি রাজকীয়তার স্বাদ জাগিয়ে তোলে। লখনউয়ের প্রতিটি প্রাচীন স্থাপত্য শুধু ইতিহাসের ধ্বনি নয়, বরং শহরের আত্মার প্রতিফলন। ভ্রমণকারী যখন শেষবারের মতো এই স্থাপত্যগুলোর দিকে তাকান, তখন মনে হয় যেন সময় এক মুহূর্তের জন্য স্থবির হয়ে গেছে। প্রতিটি কোণ, প্রতিটি জানালা যেন বিদায়ের এক অমোঘ বার্তা নিয়ে আসে—“আমরা তোমার সঙ্গে আছি, ইতিহাস ও আবেশের মাঝে।” এই অনুভূতিটি শুধু নান্দনিক নয়, বরং গভীরভাবে অনুভূতিপ্রবণ, যা শহরের সঙ্গে ভ্রমণকারীর সম্পর্ককে আরও ব্যক্তিগত করে তোলে।
এরপর অধ্যায়টি চলে শহরের ইতিহাস এবং স্মৃতিচিহ্নের দিকে, যা বিদায়ের মুহূর্তে বিশেষভাবে মনকে স্পর্শ করে। লখনউ শহর শুধু স্থাপত্য বা সৌন্দর্যের কেন্দ্র নয়, বরং ইতিহাসের এক জীবন্ত পাঠশালা। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, লখনউ অবরোধ এবং শহরের বীরত্বের স্মৃতি প্রতিটি প্রাসাদ, দুর্গ ও স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে লুকিয়ে আছে। প্রতিটি প্রাচীন প্রাচীর, প্রতিটি ভাঙা দরজা যেন যুদ্ধের কাহিনী, ত্যাগের গল্প এবং সাহসের প্রতিফলন বহন করে। বিদায়ের সময় ভ্রমণকারী যখন এই স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখেন, তখন শহরের ইতিহাস কেবল অতীত নয়, বরং জীবন্ত হয়ে ওঠে, যা মনকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। শহরের প্রতিটি স্থান যেন বলেন, “আমরা তোমার সঙ্গে আছি, তোমার স্মৃতিতে আমাদের স্থান আছে।” এই উপলব্ধি ভ্রমণকারীর মনে এক ধরনের সংযোগ তৈরি করে, যেখানে ইতিহাসের প্রতিটি স্তর এবং শহরের প্রতিটি সৌন্দর্য একত্র হয়ে আবেগের এক গভীর স্রোত তৈরি করে।
শেষে অধ্যায়টি আবির্ভূত হয় শহরের প্রতি প্রেম ও বিদায়ের অনুভূতিতে। গোমতী নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে, শহরের আড্ডা, চা-স্টল, বাজার, এবং নকশা করা প্রাসাদের নিখুঁত ছায়া সব মিলিয়ে ভ্রমণকারীর মনে লখনউয়ের প্রতি এক অমর ভালোবাসা তৈরি করে। বিদায়ের সময় মনে পড়ে শহরের প্রতিটি মুহূর্ত—নবাবি আবেশ, প্রাচীন ইতিহাস, বীরত্বের কাহিনী, নদীর ধারে সোনালি আলো, এবং চা-আড্ডার মাঝখানে মানুষের হাসি। এই সব স্মৃতি মিলিয়ে শহর শুধু একটি স্থান নয়, বরং একটি অনুভূতি, একটি জীবন্ত অধ্যায়, যা মনে চিরকাল বেঁচে থাকে। লখনউ ছেড়ে যাওয়ার পরও প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি শব্দ এবং প্রতিটি আবহ শহরের সঙ্গে ভ্রমণকারীর আত্মিক সংযোগকে অমোঘভাবে ধরে রাখে। এই অধ্যায় শেষে পাঠক উপলব্ধি করে যে, লখনউ কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং আবেগ, সংস্কৃতি এবং নবাবি সৌন্দর্যের এক চিরন্তন ধারার প্রতীক, যা সব সময় হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।
***