Bangla - সামাজিক গল্প - স্মৃতিকথা

ধুলো জমা স্মৃতি

Spread the love

মৈনাক ঘোষ


অধ্যায় ১

ঈশানীর কাছে উত্তর কলকাতার সুবর্ণা দিদার বাড়ি মানে ছিল একটা নিঃশব্দ, ধুলো জমে যাওয়া সময়ের বাক্স। বহুদিনের পুরনো এই দোতলা বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই একটা শীতল বাতাস শরীর বেয়ে নামে, যেটার উৎস জানে না কেউ। দালানে ফেলে রাখা কাঠের চেয়ার, দেয়ালে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ছবি, আর সিঁড়ির কর্কশ কড়কড়ে শব্দ সব যেন এক অতীতের গর্জন ছড়িয়ে রাখে। সে এসেছে এইবার ছুটি কাটাতে, কিন্তু সঙ্গে নিয়েছে নিজের ল্যাপটপ আর কিছু গবেষণার বই—কারণ প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে তার এম.ফিল. চলছে, আর সে এই ছুটির সময়টাও খালি যেতে দিতে চায় না। দ্বিতীয় দিনের সকালে, বৃষ্টি নামার পরপরই, সে দিদার ঘরের পাশে একটা তালা বন্ধ দরজা খুঁজে পায়। দিদা তখন রান্নাঘরে, ঈশানী চুপিচুপি ওই দরজার তালা ঘাঁটে, এবং অবাক হয়ে দেখে চাবি ঘুরিয়ে খোলাই যাচ্ছে! ঘরের ভেতরে ঢুকতেই তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে—ঘরটা যেন থেমে থাকা সময়ের মতো দাঁড়িয়ে, বদ্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে আসা সূর্যের আলোয় ধুলোয় ঝিকিমিকি করছে সব। মাঝখানে একটা পুরনো কাঠের আলমারি, তাতে মরচে ধরা হাতল। আলমারির দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ যেন একটা অতীত জীবনের সুবাস এসে ঢুকে পড়ে ঘরের বাতাসে।

আলমারির ভিতরে ছিল কিছু হলুদ হয়ে যাওয়া খাম, তার ভিতরে হাতে লেখা চিঠি—অদ্ভুত সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা—আর একটা পুরনো চামড়ার বাঁধানো ছবি-অ্যালবাম। ঈশানী প্রথমে ভাবছিল কেবল দিদার পারিবারিক স্মৃতি, কিন্তু চিঠির প্রথম বাক্যেই সে থমকে যায়—“প্রিয়তমা সুবর্ণা, আমি জানি হয়তো আমরা আর দেখা পাবো না…” বাক্যটা যেন শ্বাসরুদ্ধ করে দেয় ঈশানীকে। কে এই লেখক? দিদার জীবনে কি এমন কোনো মানুষ ছিলেন যাঁর কথা কেউ জানে না? ছবিগুলোতে এক তরুণ—কালো পাঞ্জাবি পরা, গলায় স্কার্ফ—যার চোখে আগুন, মুখে স্নেহ। প্রতিটি চিঠিতে একদিকে প্রেমের ছোঁয়া, আবার অন্যদিকে বিপ্লবের ভাষা—রাষ্ট্র নিয়ে প্রশ্ন, মুক্তির কাব্য, আদর্শের চিঠি। ঈশানী চোখ সরাতে পারে না। তার দিদা, যাঁকে সে চিনতো এক গম্ভীর, প্রায়-নীরব নারী হিসেবে—তাঁর ভিতরে যে এমন গভীর আবেগ ছিল, এমন এক ভালোবাসা যা হয়তো কখনো প্রকাশ পায়নি, তা ভাবতেই ঈশানীর চোখ ছলছল করে ওঠে। সে বুঝতে পারে, এই চিঠি এবং ছবি শুধু স্মৃতি নয়—এ এক অসমাপ্ত জীবনের দলিল।

ঈশানী চিঠিগুলো গোছাতে গোছাতে খেয়াল করে, বেশ কিছু চিঠির তারিখ ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে। অর্ঘ্য সেন—এই নামটাই চিঠিতে দেখা যাচ্ছে—তাঁর পরিচয় সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়, কিন্তু চিঠির ভিতরে বহুবার উঠে এসেছে পুলিশের নজরদারি, গোপন মিটিং, পলাতক থাকা ইত্যাদি শব্দ। ঈশানী নিজের গবেষণার ফাঁকে এও জানে, এই সময়টা ছিল রাজনৈতিক ভাবে অস্থির, স্বাধীনতার পরে ভারত গড়ার লড়াই চলছে তখনও। চিঠিগুলোর ভাষা একদিকে সাহিত্যময়, অন্যদিকে বাস্তবতা-বোঝানো। এই চিঠি শুধু প্রেমপত্র নয়—এ এক প্রান্তিক মানুষের আত্মদর্শন। ঈশানী তীব্র আকর্ষণে টানা পড়তে থাকে সেগুলো, আর তার ভিতরে জন্ম নিতে থাকে এক অদ্ভুত অনুভব—যেন তার দিদা কেবল তার আত্মীয় নন, বরং এক নারী, যিনি প্রেম করেছিলেন, অপেক্ষা করেছিলেন, আর হয়তো নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে গেছেন চিরকালের মতো। সেই রাতে ঈশানী ঘুমোতে পারে না। জানালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি নামছিল, আর তার মন কেবলই ভাবছিল, দিদার চোখের নিচে যে গাঢ় ছায়া ছিল, সেইটা কি শুধু বয়সের চিহ্ন? নাকি কোনো হারিয়ে যাওয়া মানুষের প্রতীক্ষার দীর্ঘ ছায়া?

অধ্যায় ২

পরদিন সকালে ঈশানীর মন ছিল অস্থির। গতরাতের আবিষ্কার যেন তার ভিতরে ঝড় তুলেছে। সে আর দেরি না করে দিদার সঙ্গে নাস্তা খেতে বসে। সুবর্ণা মুখার্জী, যাঁকে ঈশানী চিরকাল এক রহস্যময়, নিয়ন্ত্রিত মানুষ বলে জেনেছে, সেই মানুষটার মুখে আজ সে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু সুবর্ণার চোখে মুখে কোনো বিশেষ পরিবর্তন নেই। চিরাচরিত কায়দায় তিনি তার নাতনিকে বলেন—”তোর দুধটা শেষ করে খা, ঠান্ডা হয়ে গেছে।” ঈশানী দ্বিধায় পড়ে যায়। চিঠিগুলোর কথা কি বলবে? এই অতীতের দরজায় সে কি কড়া নাড়বে? দুপুরে যখন সুবর্ণা ঘুমাতে যান, তখন ঈশানী আবার সেই ঘরে যায়। এবার সে পুরো আলমারিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। নিচের তাকে পাওয়া যায় কিছু পুরনো পত্রিকা, আর একটা টিনের ছোট বাক্স। বাক্স খুলতেই আরও কিছু কাগজ আর একটা কালো-সাদা ছবি—যেখানে সুবর্ণা, অনেক তরুণ বয়সে, দাঁড়িয়ে আছেন এক লোকের পাশে—তাঁর মুখটা ঝাপসা, কিন্তু ঈশানী নিশ্চিত হয়ে যায়, এটাই সেই ‘অর্ঘ্য সেন’। ছবির পিছনে লেখা—“আলোকউৎসবের সন্ধ্যায়—১৯৫৫”।

ঈশানী ঠিক করে, তার দিদার অতীতের ছায়া তাকে স্পর্শ করেছে, আর সে এটাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে না। এই অর্ঘ্য সেন কে ছিলেন? কেন তিনি হঠাৎ করেই চিঠিতে নিখোঁজ হয়ে গেলেন? কোনো উত্তর নেই। ঈশানী সিদ্ধান্ত নেয়, শহরে যাদের কাছে পুরনো ইতিহাসের দলিল থাকে, যেমন কলেজ স্ট্রিটের পুস্তকবিপণি, বা পুরনো সংবাদপত্রের অফিস—সেখানে গিয়ে সে খোঁজ করবে। সেই সন্ধ্যায় সে রেকর্ডরুম থেকে এক পুরনো “স্বাধীন ভারত” নামের সাপ্তাহিক পত্রিকায় একটা ছোটো সংবাদ খুঁজে পায়—“যুবক কবি অর্ঘ্য সেন রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের জন্য গ্রেপ্তার, অনির্দিষ্টকালের জন্য নিখোঁজ।” তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এই সেই অর্ঘ্য? এই সেই মানুষ যার সঙ্গে দিদার আত্মার যোগ ছিল? বাড়ি ফিরে সে আবার বসে চিঠিগুলোর পাশে, এবং খেয়াল করে, শেষ চিঠির পর আর কিছু নেই। যেন জীবনের একটা অধ্যায় হঠাৎ ছেঁটে ফেলা হয়েছে।

ঈশানী এবার দিদার মুখোমুখি হয়। রাতে, অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে, চুপিচুপি বলে, “দিদা, একটা জিনিস পেয়েছি তোমার আলমারিতে। কিছু চিঠি… আর কয়েকটা ছবি।” সুবর্ণা প্রথমে স্তব্ধ হয়ে যান। তারপর ধীরে ধীরে মুখ তুলে বলেন—”তুই পড়ে ফেলেছিস বুঝি?” ঈশানী মাথা নাড়ে। দিদার চোখে জল, কিন্তু সেই জল যেন কোনো অভিমান নয়, বরং শান্তির। বহু বছর ধরে জমে থাকা অভিজ্ঞতার ভার যেন একটু হালকা হয়। সুবর্ণা বলেন, “অনেক কিছু আছে যেটা আমি কাউকে বলিনি রে… অর্ঘ্য শুধু আমার প্রেমিক ছিল না, ও ছিল আমার চেতনার দিকদর্শন। যখন ও গেল, আমার সব শব্দ থেমে গিয়েছিল।” এই প্রথম ঈশানী তার দিদার কণ্ঠে প্রেমের হাহাকার শুনতে পায়। সেই রাতে তারা একসঙ্গে বসে থাকে অনেকক্ষণ। বাইরে হালকা বাতাস বইছে, ঘরের ভিতরে দু’জন নারী—দুই প্রজন্ম—একই ভালোবাসার গল্পের দুই পাঠিকা। ঈশানী বুঝে যায়, সে এখন শুধু একজন নাতনি নয়, বরং এক অসমাপ্ত ইতিহাসের উত্তরসূরি।

অধ্যায় ৩

সুবর্ণা ধীরে ধীরে খুলে দিতে থাকেন সেই অধ্যায়, যা দীর্ঘ ছিয়াশি বছরের জীবনে কারো কাছে কখনও উন্মুক্ত করেননি। এক সন্ধ্যায়, যখন ঈশানী বারান্দার চেয়ারে বসে দিদার হাত থেকে ধোঁয়া ওঠা চা নিয়ে চুপ করে ছিল, সুবর্ণা নিজে থেকেই বললেন, “তুই তো ভাবছিস অর্ঘ্য ছিল আমার ভালোবাসা, কিন্তু আসলে ও ছিল অনেক বড় কিছু… একটা আন্দোলনের রূপক, এক অনন্ত প্রতিজ্ঞা।” ঈশানী নিঃশব্দে শোনে। তারপর সুবর্ণা বলতে শুরু করেন—”১৯৫৪ সালের কথা, আমি তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা করি। কলেজ ফেস্টিভ্যালে প্রথম দেখা অর্ঘ্যর সঙ্গে। একটা কবিতা পাঠ করছিল—‘রাষ্ট্রের নামে রক্ত চাই, অথচ মানুষের দুঃখে তারা বধির।’ লোকটা যেমন তীব্র, তেমনি কোমল। আমাদের আলাপটা শুরু হয়েছিল একটা বিতর্ক সভায়, শেষ হয় চিঠিতে। অর্ঘ্য তখন রাজনীতি করত না, ওর ভাবনা ছিল আদর্শকে নিয়ে, মানুষকে জাগিয়ে তোলার কথা বলত। কিন্তু সময় তাকে টেনে নিয়ে যায় অন্য খাতে।”

ঈশানী দিদার কণ্ঠে ব্যথার পাশাপাশি এক ধরনের শ্রদ্ধা টের পায়। সুবর্ণা বলেন, “তুই কি জানিস, তখনকার কলকাতায় ছাত্র রাজনীতি ছিল একপ্রকার বিদ্রোহ—পুলিশি নজরদারি, গোপন সভা, রাতের অন্ধকারে ছড়ানো প্যামফ্লেট। অর্ঘ্য সেই সবের মধ্যেও আমাকে চিঠি লিখত, যাতে থাকত একদিকে ভালোবাসার ভাষা, অন্যদিকে প্রতিরোধের স্পৃহা। একটা চিঠিতে সে লিখেছিল—‘তুই যদি শুধু আমার হইস, আমি হয়তো নিজেকে হারিয়ে ফেলবো। কিন্তু যদি তুই আমার স্বপ্নের সাথী হইস, আমি সব হারিয়ে তোর কাছেই ফিরবো।’ আমি সেদিন বুঝেছিলাম, অর্ঘ্যর হৃদয় কেবল প্রেমে বাঁধা নয়, ওর আত্মা বাঁধা দেশের মুক্তি আর বিবেকের কাছে।” ঈশানী তখন প্রায় স্তব্ধ। কীভাবে এত বছর এই কাহিনি আড়ালে ছিল? সে প্রশ্ন করে না, কেবল চুপ করে শোনে। তার মনে হয়, সে যেন কোনো কাল্পনিক উপন্যাস পড়ছে, অথচ চরিত্রগুলো আসল, তাদের ব্যথা জ্যান্ত।

সুবর্ণার বলা গল্পে উঠে আসে এক সন্ধ্যা—আলোকউৎসবের ঠিক আগের দিন—যেদিন শেষ দেখা হয়েছিল তাঁদের। কলকাতার এক গলির কোণে দাঁড়িয়ে অর্ঘ্য বলেছিল, “আমার ওপর নজর আছে, কাল হয়তো আর দেখা হবে না।” তারপর এক চিঠি… তারপর নিঃশব্দ অন্ধকার। সুবর্ণা বলেন, “আমি প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম—ডাকঘরের শব্দ শুনলেই ভাবতাম, চিঠি এসেছে। কিন্তু কিছু আসত না। তারপর একদিন পত্রিকায় দেখলাম—‘অর্ঘ্য সেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার।’ তবু ও কোথায় গেল, কী হল, কেউ জানে না। আমার বিয়ে হয়ে গেল, সংসার হল, কিন্তু ওই একটা কোণায় আমি চিরকাল এক শূন্যতা রেখেছিলাম। আজ তো তুই সেটা খুঁজে বার করেছিস।” ঈশানীর চোখে জল এসে যায়। সে জানে না কী বলবে, কেবল হাত রাখে দিদার কাঁপা হাতে। সেই রাতে, বারান্দায় চাঁদের আলো পড়ছিল দিদার মুখে—সেই মুখে প্রেমের স্মৃতি, পরাজয়ের বিষাদ, আর আশ্চর্য এক শান্তি। ঈশানী অনুভব করে, এই স্মৃতির ধুলো ঝাড়তে গিয়েই সে নিজের অস্তিত্বের নতুন মানে খুঁজে পেয়েছে।

অধ্যায় ৪

পরের কয়েকদিন ঈশানী যেন নিজেকে আর চিনতে পারে না। প্রত্নতত্ত্ববিদের মতোই সে নিজেই যেন একটা আবিষ্কারের ভেতর ঢুকে গিয়েছে—যার মাটির নিচে প্রেম, সংগ্রাম আর নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া এক ইতিহাসের ধ্বংসাবশেষ। দিদার প্রতিটি কথা, প্রতিটি চিঠি, আর অর্ঘ্যর ছেঁড়া কবিতার খাতা তার মনে এমন এক আবেগ তৈরি করে যা সে আগে কখনও অনুভব করেনি। তবু এই কাহিনির একটা মোড় যেন তাকে পেছনে টেনে রাখছে—কেন অর্ঘ্য আর ফিরে আসেনি? কেবল রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগেই কি তার অস্তিত্ব মুছে গেল? নাকি এর পেছনে আছে আরও গভীর কিছু? এই অজানাই যেন ঈশানীর গবেষণার নতুন লক্ষ্য হয়ে ওঠে।

সে ফের নামে খোঁজে। প্রথমে যায় কলেজ স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানগুলিতে—প্রতিটি ধুলোমলিন স্টলে সে অর্ঘ্যর নাম খুঁজে বেড়ায়। পুরনো পত্রিকা বিক্রেতা রামদা, যিনি ষাট বছরের বেশি সময় ধরে বই বিক্রি করছেন, একদিন বলেন, “সেন বাবু? অর্ঘ্য সেন? কবি ছিলেন বটে… স্বাধীনতার পর রাজনীতি করতেন… হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেলেন। পরে শোনা যায়, জেলখানায় কিছু ঘটেছিল, আর নাম-নিশানা মুছে গেল।” ঈশানী স্তব্ধ হয়ে যায়। এইবার সে যায় ‘রবীন্দ্র পরিষদ লাইব্রেরি’-তে, যেখানে পুরনো লেখকদের কবিতা সংরক্ষিত থাকে। সেখানেও এক পাতায় লেখা আছে অর্ঘ্য সেনের নাম—“প্রতিশ্রুতি” নামে একটি নিষিদ্ধ কবিতা সংকলনের উল্লেখ। তবে বইটি কোনও পাঠাগারে নেই, কারণ ১৯৫৭ সালে সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করেছিল। ঈশানী দেখে অর্ঘ্যর নাম, কিন্তু কোনও ছবি নেই, জীবনপঞ্জিও অসম্পূর্ণ।

সন্ধ্যাবেলায় সে যখন বাড়ি ফিরে আসে, মুখে ধুলোর ছাপ, চোখে ক্লান্তির রেখা, তখন সুবর্ণা তার দিকে তাকিয়ে একটুখানি হাসেন। “তুই ঠিক করেছিস, ওকে খুঁজে বার করবি,” বলেন দিদা। তারপর ছোট্ট করে যোগ করেন, “কিন্তু অনেক কিছু থাকে যেগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়ার থেকেও জরুরি হয়, তাদের অস্তিত্বটাকে স্বীকার করা।” ঈশানী এই কথার অর্থ বুঝতে পারে না তখনই। কিন্তু রাতে, দিদার ঘরে ঢুকে আবার শেষ চিঠিটা পড়ে, যেটার তারিখ ৭ই জুন ১৯৫6—সেখানে অর্ঘ্য লিখেছিলেন, “সুবর্ণা, আগামীকাল একটা কাজের জন্য আমাকে যেতে হবে। যদি না ফিরি, তবে জানিস, আমার হৃদয় ছিল তোকে নিয়ে, আর প্রতিজ্ঞা ছিল দেশকে নিয়ে। যদি তুই কাউকে কখনও ভালবাসিস, তাকেও এই সত্যটা বলিস—আমি তোকে কোনওদিন ফাঁকি দিইনি।” চিঠির নিচে কোনও স্বাক্ষর নেই—শুধু এক ফোঁটা কালির দাগ, যেন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল শব্দটা, কিংবা সময় নিজেই শেষ বাক্যটা কেটে দিয়েছে। ঈশানী চুপ করে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলোয় সেই চিঠিটা ধরে। বাতাসে বইছে এক অসমাপ্ত বিদায়ের দীর্ঘশ্বাস, যার উত্তর খুঁজতে হলে তাকে আরও গভীরে নামতে হবে—স্মৃতির অতলে, ইতিহাসের আঁধারে।

অধ্যায় ৫

ঈশানী জানতো, সব উত্তর সে দিদার কাছ থেকে পাবে না। এক মানুষ, যিনি ছয় দশকের বেশি সময় ধরে এক প্রেমকে বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখেছেন, তিনি নিশ্চয়ই অনেক কিছু বলতে না বলেই জীবনের ভার সামলেছেন। তাই এবার ঈশানী ঠিক করে তার নিজের পথে এগোবে—একজন গবেষক হিসেবে, একজন উত্তরসূরি হিসেবে। সে ইন্টারনেট ঘাঁটে, পুরনো লাইব্রেরির আর্কাইভে ঢোকে, কলেজের ইতিহাস বিভাগের এক প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করে যিনি “স্বাধীনতা পরবর্তী কলকাতার যুববিপ্লব” নিয়ে গবেষণা করছেন। সেই প্রফেসর সৌম্যেশ মৈত্র ঈশানীর কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে বলেন, “অর্ঘ্য সেন নামটা আমি শুনেছি… কিন্তু তার সব দলিল একরকম মুছে ফেলা হয়েছিল। যাঁরা তাঁর সমসাময়িক ছিলেন, তাঁদের অনেকেই রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যান। কিন্তু একটা জায়গা আছে, যেখান থেকে কিছু সূত্র মিলতে পারে—কলকাতা শহরের উত্তরের এক গলিতে ‘স্মৃতি সংগ্রাহক কেন্দ্র’ নামে একটি প্রাইভেট আর্কাইভ, যেখানে সরকারের চোখ এড়িয়ে কিছু ব্যক্তি নানা নিষিদ্ধ সাহিত্য ও ব্যক্তিগত দলিল সংরক্ষণ করেছেন।” ঈশানীর চোখে আলো পড়ে। সে ঠিক করে পরের দিনই সেখানে যাবে।

‘স্মৃতি সংগ্রাহক কেন্দ্র’—একটুকরো ভাঙা বাড়ির মধ্যেই যেন অতীত লুকিয়ে আছে। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় একটা পরিত্যক্ত পুরনো দালান, কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই ঈশানী দেখে, ধুলোর মধ্যে সাজানো আছে নানা লেখকের ব্যক্তিগত ডায়েরি, অসমাপ্ত চিঠি, ছেঁড়া কবিতার খাতা। দায়িত্বপ্রাপ্ত বৃদ্ধ লোকটি—অরবিন্দ দা—প্রথমে উৎসাহী ছিলেন না, কিন্তু অর্ঘ্য সেনের নাম শুনে থমকে যান। “তুমি সেনবাড়ির আত্মীয়া?” ঈশানী একটুখানি থেমে বলল, “আমি তাঁর প্রেমিকার নাতনি।” অরবিন্দ দার চোখে চকচক করে ওঠে। “চলো,” বলেন তিনি, “তোমার জন্য কিছু আছে।” তিনি একটা কাঠের বাক্স টেনে বার করেন, যার ভিতরে অর্ঘ্য সেনের হাতে লেখা দুটি কবিতা, একটি অসমাপ্ত নাটক, এবং একটি ব্যক্তিগত নোট—যেখানে লেখা, “যদি আমার নাম ভুলিয়ে দেওয়া হয়, যদি আমার উপস্থিতিকে রাষ্ট্র মুছে দেয়, তবু কেউ যদি ভালোবাসা দিয়ে খোঁজ করে, সে আমাকে পাবে… শব্দে, সুরে, আর প্রতিজ্ঞায়।” ঈশানী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যেন ছুঁয়ে ফেলেছে হারিয়ে যাওয়া এক আত্মাকে।

ফিরে এসে সে দিদার সামনে সেই বাক্স রাখে। সুবর্ণা ধীরে ধীরে সব খুঁজে দেখেন। সেই কবিতার খাতার পৃষ্ঠায় আঙুল বুলিয়ে বলেন, “এই লেখাগুলো আমি চিনি, কিন্তু কখনও চোখে দেখিনি। অর্ঘ্য বলেছিল, ‘যদি আমি হারাই, আমার কবিতা তোর গান হয়ে বাজবে।’” ঈশানী চুপ করে বসে থাকে, আর দেখে তার দিদার চোখে জল, ঠোঁটে এক দীর্ঘ শ্বাস। সেই রাতে তারা আর ঘুমোয় না। দিদা হারমোনিয়ামে বসে গাইতে শুরু করেন একটি সুর—যেটা ছিল অর্ঘ্যর প্রিয়। ঈশানী পাশে বসে থাকে, আর অনুভব করে—তাদের মধ্যে যেন আর কোনো দূরত্ব নেই। দিদা আর নাতনি নয়, দুটি আত্মা যাদের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে ইতিহাস, প্রেম, আর বিস্মৃত আত্মত্যাগের সুর। এবং ঈশানী এবার বুঝে যায়—এই গল্প শুধু অতীতের নয়, এই গল্প জীবনের। এবং এই প্রেম, যা কখনও পূর্ণতা পায়নি, তবু সবচেয়ে সত্য, সবচেয়ে শুদ্ধ হয়ে থেকে গেছে সময়ের ধুলোয় ঢাকা এক অলিখিত পাতায়।

অধ্যায় ৬

আলমারির ধুলোঝরা খাম আর বিবর্ণ ছবিগুলো যেন এক অলিখিত ডায়েরির পাতা—যেখানে প্রতিটি চিঠি, প্রতিটি মুখাবয়ব জুড়ে আঁকা আছে একটি ভিন্ন জীবন। শ্রীমতী নিরুপমা বসু নিজের চেয়ারে বসে কাঁপা হাতে খুললেন আরেকটি খাম। এই খামটির গায়ে লেখা—”দিল্লি, ১৯৭২”। চিঠিটি লিখেছেন সুধাংশু। ‘তোমার অনুপস্থিতি আমার প্রতিটি দিনকে নির্জন দ্বীপ করে তুলেছে’—এই লাইনেই থমকে গেলেন নিরুপমা। চোখে জল এসে গেল অজান্তে। এই চিঠিতে কোনো অভিযোগ নেই, কোনো আকুতি নেই—শুধু এক গোপন আশাভরসা—যে নিরুপমা কোনো একদিন আবার ফিরবেন, হয়তো পুরনো সম্পর্ক নয়, তবে একটি বন্ধুর পরিচয়ে। চিঠির শেষে ছিল একটি ছোট্ট কবিতা—‘যদি আবার দেখা হয়, চেনা যাবে কি আমায়? নাকি স্মৃতির ছায়াতেই হারিয়ে যাব চিরকাল?’

সেই চিঠির সঙ্গে রাখা ছিল একটি ছবি—রাঙা ফুলের গাছের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিরুপমা আর সুধাংশু। হয়তো কোনো কলেজের ক্যাম্পাসে, হয়তো কোনো বসন্তের দুপুরে। নিরুপমা অনুভব করলেন তাঁর বুকের মধ্যে হঠাৎ যেন এক চিরচেনা স্পর্শ ফিরেছে। এই মুহূর্তে, এই নিঃসঙ্গ বার্ধক্যে, সেই পুরনো দিনের কোনো একটি স্মৃতি যেন ফের এসে হাত রাখছে তাঁর কাঁধে। দীর্ঘদিন পর তিনি যেন নিজেকে আবার চিনতে পারলেন। এই চিঠিগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেই অমূল্য বন্ধন, সেই নির্ভেজাল ভালোবাসা, যা সময়ের অবিচারে হেরে গেলেও, মুছে যায়নি একটুও।

পরদিন সকালে, নিরুপমা টেবিলে চিঠিগুলো সাজিয়ে বসলেন। পেছনের জানালা দিয়ে আসা আলোয় ধুলোভরা খামগুলোর গায়ে যেন এক আশ্চর্য উজ্জ্বলতা খেলে গেল। তিনি বুঝলেন, তাঁর জীবনের এই না-বলা গল্পগুলি শুধু তাঁর একার নয়—এগুলি যেন এক সমগ্র প্রজন্মের চুপিচুপি কান্না, ত্যাগ আর অপেক্ষার সাক্ষ্য। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন—এই গল্পগুলো তিনি একত্রে লিখে রাখবেন, যেন ভবিষ্যতের কেউ এগুলো পড়ে বুঝতে পারে—ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, শুধু রূপ বদলায়। তাঁর প্রৌঢ় কণ্ঠে তখন আবার সেই পুরনো কণ্ঠস্বর ফিরে আসে, সেই কণ্ঠ যে বলে, ‘আমি ভুলিনি তোমায়, সুধাংশু। আমি শুধু থেমে গিয়েছিলাম সময়ের কারণে।’

অধ্যায় ৭

পরে দুপুরের আলো ছায়ার খেলা করছে বারান্দার কার্নিশে। নিরুপমা বসু আজ অনেকটাই শান্ত, অনেকটাই হালকা। সকাল থেকে চিঠিগুলোর পাতা ওল্টাচ্ছিলেন, কিন্তু এবার আর চোখে জল আসেনি—বরং এক ধরনের কোমল প্রশান্তি ছড়িয়ে আছে তাঁর মুখজুড়ে। স্মৃতিরা যেন তাঁর কাছে এবার আর কষ্টের নয়, বরং সহচর, বাল্যবন্ধুর মতোই স্নেহময়। তিনি ধীরে ধীরে এগোলেন বাড়ির পেছনের ছোট্ট বাগানে, যেখানে একসময় সুধাংশু নিজ হাতে একটি গুল্মরাশি গাছ লাগিয়েছিলেন। তখনকার নাম ছিল—“আশাবৃক্ষ।”

আজ সেই গাছটি কেমন বড়ো হয়ে উঠেছে। শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ছায়া দিয়েছে চারপাশে। নিরুপমা হাত বুলিয়ে দেন গাছের কাণ্ডে—যেন কোনও চেনা বন্ধুর কাঁধ ছুঁয়ে দেখছেন। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন—গাছের গায়ে ছোট করে খোদাই করা একটি নাম—“N+S, 1973”। দীর্ঘদিন ধরে যা ধুলোয় ঢাকা ছিল, আজ হঠাৎই তা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। স্মৃতি শুধু কাগজে লেখা নয়, তা মাটি, বৃক্ষ, আলো, বাতাসে মিশে থাকে। তিনি হাঁটতে হাঁটতে বসলেন একপাশে পাতা কাঠের বেঞ্চে। চারপাশে জুঁই ফুলের সুবাস। তাঁর বুকের ভেতর সেই পুরনো গানটা বাজতে শুরু করে—যা একদা সুধাংশু গুনগুন করে গাইতেন—

“তোমায় গান শোনাবো…”

নিরুপমা এবার ভাবলেন, তিনি শুধু চিঠিগুলো সংরক্ষণ করবেন না, তিনি একটি বই লেখার কাজ শুরু করবেন—এই ভালোবাসার, এই অপেক্ষার, এই সমাজ-স্বীকৃতিহীন সম্পর্কের কথা মানুষকে জানানো দরকার। যেন কেউ যদি আবার এমন এক গল্পে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে পারে—এটা দুর্বলতা নয়, বরং সাহস। ভালোবাসার সাহস।

সন্ধে নামছে ধীরে ধীরে। পাখিরা ফিরছে বাসায়। নিরুপমা উঠে দাঁড়িয়ে ঘরে ফেরেন। তাঁর চোখে এখন একটা আলোকজ্জ্বল লক্ষ্য। বয়সের ভারে কাঁপলেও তাঁর চলন যেন দৃঢ়, স্থির। হঠাৎ সেই পুরনো টাইপরাইটারটার কথা মনে পড়ে তাঁর—যেটা বহু বছর আগেই বন্ধ করে রেখেছিলেন। তিনি ঠিক করলেন—আগামীকাল থেকেই আবার টাইপরাইটারের চাবিতে শব্দ উঠবে, উঠবে হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি।

আর সেই চিঠিগুলো? সেগুলো থাকবে লেখার মূল কাহিনির মধ্যে—যেখানে সময়, অনুভব আর মানুষের মনের না-বলা কথা একসূত্রে বাঁধা থাকবে।

আজ নিরুপমা বসুর জীবনে আবার একটি বিকেল জেগে উঠেছে—যা শুধুই স্মৃতি নয়, বরং নতুন যাত্রার আলোকচিহ্ন।

অধ্যায় ৮

হেমন্তের শেষ বিকেল। সূর্যের আলো আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছিল বৃদ্ধাশ্রমের ছোট্ট ফুলের বাগানটিকে। রাধা বসে আছেন নিজের চিরচেনা বারান্দার দোচালা চেয়ারে, হাতে ধরা সেই চিঠি, যেটি আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে লেখা হয়েছিল। মেঘলা চোখে চেয়ে আছেন দূর আকাশের দিকে, যেন কারও প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করছেন। বর্ণার দেওয়া ছবি ও চিঠিগুলি তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে সেই সময়ে, যখন বয়স কম ছিল, ভালোবাসা ছিল একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। তাঁর ও অরিন্দমের অসমাপ্ত প্রেমের পরতে পরতে যে যন্ত্রণা জমে ছিল, তা এই কিছুদিনে যেন নতুনভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বর্ণা তাঁর নাতনির মতো হয়ে উঠেছে—একটা ছোট্ট পরির মতো, যে তাঁর নিঃসঙ্গ জীবনকে আবার আলোতে ভরিয়ে দিয়েছে।

বর্ণা ঠিক করেছে, সেই চিঠিগুলো ও ছবির ভিত্তিতে একটি বই লিখবে—“ধুলো জমা স্মৃতি।” সেই বইয়ে লেখা থাকবে একজন নারীর জীবনের সেই অধ্যায়, যা হয়তো সমাজের চোখে কোনো মূল্য পায় না, কিন্তু একজন নারীর ভেতরের আবেগ, ত্যাগ, ভালোবাসা, অপেক্ষার মূল্য সেই লেখার প্রতিটি লাইনে ফুটে উঠবে। বর্ণা প্রতিজ্ঞা করেছে, অরিন্দমের শেষ চিঠি, যেটা রাধার কাছে পৌঁছায়নি কোনোদিন, সেটাও সে সংগ্রহ করবে। পুরোনো ট্রাঙ্কে খোঁজ করে অবশেষে সেই চিঠিটিও পাওয়া গেছে—একটি হলুদ হয়ে যাওয়া খামে, যার ওপরে অরিন্দমের অজস্র ভালোবাসা আর চোখের জল লুকানো। চিঠিতে লেখা ছিল, “রাধা, আমি আসছি… সমস্ত কিছু ছেড়ে তোমার জন্য ফিরছি… যদি এখনও অপেক্ষা করো…” কিন্তু সেই চিঠি পৌঁছায়নি সময়মতো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অরিন্দমের ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তিনি আর ফিরতে পারেননি। অথচ রাধা, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করেছেন প্রতিদিন ঠিক সেই সময়টিতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে।

আজ, অনেক বছর পর, সেই প্রেমের গল্প বই হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রজন্ম সেই বই পড়ে চোখের জল মুছে বলে—“ভালোবাসা এখনো সত্যি।” রাধা হয়তো আজও জানেন না, অরিন্দম আর আসবে না। বা হয়তো জানেন, তবু মনের গভীরে একটা আশার প্রদীপ জ্বলতে দিয়েছেন সবসময়। বর্ণা যখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় বইটি হাতে নিয়ে, রাধা ধীরে করে বলেন, “আমার প্রেম অসমাপ্ত ছিল না, ও তো আজও আমার সঙ্গে আছে… প্রতিটি হাওয়ার পরশে, প্রতিটি বিকেলের ছায়ায়।” তারপর এক হালকা হাসি—শান্ত, ধ্যানমগ্ন, আত্মতৃপ্ত। সেই হাসির মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক জীবনের প্রেম, ব্যথা আর বিসর্জনের সমস্ত প্রতিধ্বনি। ধুলো জমা স্মৃতির পাতা ওল্টায়, কিন্তু সেই স্মৃতিগুলোর দ্যুতি অনন্ত সময় বেঁচে থাকে—এক নারী, এক প্রেম, এক চিঠি, আর একটি অপেক্ষার গল্প হয়ে।

সমাপ্ত

1000042733.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *