সন্দীপন সাহা
১
জলতলার আকাশটা সকাল থেকেই ধূসর হয়ে ছিল। মেঘগুলো যেন জমাট বাধা দুঃখের মতন মাথার ওপর ঝুলছিলো, আর ঠিক বেলা এগারোটা নাগাদ প্রথম বৃষ্টি নামে। টিনের ছাউনি মাথায় চাপিয়ে থাকা ছোট ছোট ঘরগুলোর ওপর বৃষ্টির শব্দ ধাতব ঘন্টাধ্বনির মতো বাজতে থাকে। সজল জানালার ফাঁকে মুখ গলিয়ে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে তখন ঈশ্বরের খেলা—যেন নীলের বদলে আকাশের রং হয়ে গেছে রুপালি। ঘন জলকণা মাটিতে পড়তেই কাঁচা রাস্তা একাকার হয়ে যাচ্ছে, নালার জল ফুলেফেঁপে উঠছে, আর বৃষ্টির ধারায় সেই জল যেন দিকবিদিক ছুটে যাচ্ছে। সজল ভাবে—”এই জলে যদি একখানা নৌকা ভাসাই, কোথায় যাবে সেটা?” তার মা তখন ভাঙা বাসনের ওপরে ছেঁড়া ছাতি রেখে গ্যাস জ্বালাতে ব্যস্ত, আর বাবা বেরিয়ে গেছে রিকশা নিয়ে সকালেই। কিন্তু সজলের মন আজ ঘরে নেই। তার চোখ আটকে আছে বাইরে, তার মনে চলছে অন্য এক অভিযান।
সে জানে কাগজের নৌকা বানাতে কতটা মুন্সিয়ানার দরকার—তবু তার ছোট্ট আঙুলে অভ্যেস আছে। সে বিছানার নীচে রাখা পুরনো খাতা থেকে একখানা পাতা ছিঁড়ে নেয়। কাগজটি ময়লা, কিছুটা ভাঁজ, তাতে পুরনো অক্ষরের ছায়া। তাতে কী? তার কাছে সেটাই এখন জাহাজ। তার নখ দিয়ে চেপে চেপে কাগজের ভাঁজ বানায়—প্রথমে ত্রিভুজ, তারপর তার ওপরে দুটি পাড় ভাঁজ করে নিয়ে একটি ছোট্ট ত্রিকোণ, তারপর দুদিকে টান দিলে উঠে আসে একখানা নৌকার আকৃতি। নৌকাটি নিখুঁত না হলেও, তার চোখে সেটাই শ্রেষ্ঠ। সে তাতে নিজের নাম লিখে ফেলে এক কোণে—”সজল (৩৮ নম্বর ঘর)”। তারপর দৌড়ে বারান্দা পেরিয়ে রাস্তায় নামে, গলির মাঝখানে জমে থাকা জল একাকার হয়ে গেছে ড্রেনের সঙ্গে। সে হাঁটু পর্যন্ত ভেজা হতে হতে সজাগভাবে সেই নৌকাটি জলে রাখে, তারপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে সেটা কেমন করে ভাসে। প্রথমে একটু দুলে ওঠে, তারপর বৃষ্টির টানে ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে সামনের দিকে। সজলের মুখে হাসি—তাঁর মনে হয়, যেন সে কোনো দূত পাঠিয়েছে। কিন্তু সে জানে না, সেই কাগজের পাতায় লেখা ছিল একটি পুরনো হাতের লেখা—যা কোনো এক কালের অপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
যখন নৌকাটি ভেসে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় ড্রেনের বাঁকে, সজল তখনো দাঁড়িয়ে থাকে। মাথার চুল থেকে জল ঝরছে, জামা ভিজে গা সেঁটে গেছে, কিন্তু তার চোখে বিস্ময়। হয়তো সে জানে না, তার ঐ এক মুহূর্তের নিষ্পাপ খেলার মধ্যে বোনা আছে কোনো এক অলৌকিক সংযোগের বীজ। আকাশ তখনো কাঁদছে, এবং জলতলার প্রতিটি নালা যেন একটা সম্ভাবনার পথ—একটু পুরনো, একটু ভুলে যাওয়া, আর খুব একটু মানুষী। নীলুদি বলে থাকেন, “কখনও কখনও ঈশ্বরও খেলা করেন শিশুদের খেলনার মাধ্যমে।” সজল যদিও ঈশ্বর মানে না, তবু তার মনে হয়, বৃষ্টির এই দিনটা একটু অন্যরকম। দূরে কোথাও এক রিকশার ঘণ্টা বাজছে, মায়ের হাঁক শোনা যাচ্ছে ভেতর থেকে, কিন্তু তার মনে তখনও ঘুরছে সেই ছোট্ট নৌকার যাত্রা—সেটা কোথায় গেল? কেউ কি খুঁজে পাবে ওটা? আর যদি পায়, তাতে লেখা নামটা কি কেউ পড়বে? সে জানে না, বোঝেও না—কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, শহরের অন্য এক প্রান্তে শুরু হয়ে গেছে সেই নৌকার অলৌকিক ভ্রমণের পরবর্তী অধ্যায়।
২
বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে জলতলার আকাশটা যেন আরও বেশি শান্ত হয়ে উঠল। পাশের নালার জল ধীরে ধীরে সরে গিয়ে কাদায় মিশে যাচ্ছে, কিন্তু সজলের মনের মধ্যে তখনো এক রকমের দোলা। সে নিজের ছোট্ট ঘরে ফিরে এলো ভেজা পায়ে, জামা কাঁধে ঝুলে, মুখে হাসি। মা চেয়ে বললেন, “তুই আবার নৌকা ভাসালি, তাই না? ট্রাঙ্কে আমার কাগজপত্র নষ্ট করলি বুঝি?” সজল চুপ করে থাকল। ট্রাঙ্কটার কথা শুনেই তার মনে পড়ে গেল—সেই পুরনো কাঠের বাক্স, যার ঢাকনাটা একপাশে ভাঙা, আর ভিতরে পুরনো কাপড়, কিছু বই, অচেনা লোকের ছবি আর অনেকগুলো চিঠির খাম। সেদিন দুপুরে সে খেলতে খেলতে সেই ট্রাঙ্কটা খুলেছিল। তার চোখে তখন যেন গুপ্তধনের মতো লাগছিল সব কিছু—ভাঁজ করা চিঠি, মলিন কাগজের পাঁজরা, আর একটা চিঠি ছিল যেখানে লিখে রাখা হয়েছিল কারও দিকে পাঠানো কোন এক পুরনো বার্তা। সে চিঠিটা খুব সুন্দর ছিল—হাতের লেখা গোলগাল, পাশে কিছু জলছাপের দাগ। তখন সে বুঝতেই পারেনি ওটা কী। কাগজটা সুন্দর দেখে ছিঁড়ে নিয়ে তাতে বানিয়ে ফেলেছিল সেই নৌকাটা।
ট্রাঙ্কটা ছিল তার বাবার শৈশবের স্মৃতি রক্ষার জায়গা—কিন্তু সজলের কাছে সেটা এক নতুন জগতের খেলা। তার অজান্তেই যে কাগজে সে ভাঁজ দিয়ে খেলনার নৌকা বানিয়েছে, সেটাই ছিল একটি হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের সেতু—একটি চিঠি, যা বহু বছর আগে হরিপদ লিখেছিলেন তার ছোট ভাই আরিনকে। সেই সময় আরিন তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল—হঠাৎ ঝগড়াঝাঁটির পর, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই। হরিপদ পরের দিন সকালে চিঠিটা লিখে রেখেছিলেন—ক্ষমার, আহ্বানের, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অনুরোধে পূর্ণ এক চিঠি। কিন্তু চিঠি পাঠাতে পাঠাতে সময় কেটে যায়, এবং তার পরে আর দেখা হয়নি ভাইয়ের সঙ্গে। সেই চিঠি বহু বছর ধরে সেই ট্রাঙ্কেই থেকে গিয়েছিল—ভুলে যাওয়া আর ব্যথায় মোড়া হয়ে। সজল যখন সেটা পায়, তার কাছে ওটা স্রেফ এক সুন্দর কাগজ—যার ভাঁজে সে এক নৌকা বানায়, এবং জানেও না তার খেলনায় জড়িয়ে আছে অতীতের ব্যথা আর মিলনের সম্ভাবনা।
সন্ধেবেলা হরিপদ যখন ঘরে ফেরেন, ভেজা গামছা পিঠে ফেলে বসে পড়েন বিছানায়, তখন সজল একটু দূরে বসে থাকে। তার মনে একটু কাঁপুনি—জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে ট্রাঙ্কটা আধখোলা, আর মা ভেতর থেকে কাপড় সরিয়ে কিছু খুঁজে চলেছেন। হঠাৎ মা বলে ওঠেন, “এই কাগজটা কই গেল? ওই চিঠিটা?” হরিপদও তাকান এক ঝলক—তার মুখ কঠিন হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে বলেন, “ছেলেটা হয়তো নিয়ে খেলেছে…” এরপর তিনি চুপ করে যান। কণ্ঠে এক অজানা ভার। বাইরে তখন আবার মেঘ জমছে, সন্ধ্যের আলো টিমটিম করছে, আর ঘরের মধ্যে যেন বাতাস ঘন হয়ে উঠছে। সজল জানে না সে কী ভুল করেছে। সে জানে না, তার নৌকা আর তার ভাঁজে থাকা চিঠি এখন নতুন এক যাত্রায় পাড়ি দিয়েছে—এক অলৌকিক, কিন্তু অদ্ভুতভাবে বাস্তব সংযোগের পথে।
৩
রাত তখন গভীর। শহরের বিভিন্ন রাস্তা ভিজে আছে দিনের বৃষ্টির জলে, কোথাও কোথাও নিকাশির খোলা মুখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে চলেছে এক আশ্চর্য গতিতে। সেই পানির স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে সজলের বানানো ছোট্ট নৌকাটি—সাদা কাগজের তৈরি, তার গায়ে সজলের হাতের লেখা আর ভিতরে ভাঁজ হয়ে থাকা সেই পুরনো চিঠি। শহরের বাইপাসের ধারে নালা পেরিয়ে, ইট-কাঠের গলি মাড়িয়ে নৌকাটি চলে আসে একটি বহুতলের ড্রেনপাশে জমে থাকা জলে। জলের নিচে তার শরীর ভিজে গেছে, কিন্তু এখনও ভেসে আছে, স্থিরভাবে। ঠিক তখনই, এক গুলপসা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ, হালকা কোট পরে, ছাতা ছাড়া, জুতোর ভেতর জল গড়িয়ে পড়ছে—বুক পকেট থেকে কী যেন বের করতে গিয়ে নিচু হন। তার চোখে পড়ে নৌকাটি। এক মুহূর্তের জন্য থমকে যান তিনি, তারপর হাত বাড়িয়ে সেটি তুলে নেন।
মানুষটির নাম আরিন। বয়স হবে তিরিশের কোঠায়, কপালে চাপা ভাঁজ, মুখে ক্লান্তি আর চোখে অন্যমনস্কতার ছাপ। সে এই শহরেই থাকে—তবে একা। এক অফিসে কাজ করে, নিয়ম করে সকাল-সন্ধ্যা বাড়ি ফেরা ছাড়া তার জীবনে অন্য কোনও সংযোগ নেই। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেছে, পরিবার বলতে কেউ নেই। আজকাল সে প্রায়ই ভাবেন, কীভাবে পরিবার থেকে নিজেকে এমনভাবে আলাদা করে ফেলল। ছোটবেলায় মায়ের গলা, বড় ভাই হরিপদের সঙ্গে রিকশা ঠেলতে শিখে নেওয়া দিনগুলো, তারপর হঠাৎ এক ঝগড়ার রাত—যখন সে বিদ্রোহ করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল—সব কিছু যেন ফসকে যাওয়া সময়ের মতো। তখন থেকেই সে আর ফিরে যায়নি, চিঠি পায়নি, খোঁজও রাখেনি। সেই স্মৃতিগুলো আজও তাকে ধাওয়া করে। তাই নৌকার ভিতর থেকে চিঠি বেরিয়ে আসতেই তার চোখ বড় হয়ে যায়। চিঠিতে লেখা: “প্রিয় আরিন, আমি জানি তুই রাগ করে গেছিস… তবু তোর দাদা হিসেবে একটা কথা বলার আছে…” বাকিটা ভিজে, কুয়াশায় মোড়া—কিন্তু অক্ষরগুলো পরিষ্কার, সেই চেনা হাতের লেখা, সেই শব্দের ভঙ্গি।
চিঠিটা পড়তে পড়তে আরিনের বুকের ভেতর কেমন একটা শব্দ উঠল—অশ্রু, অনুশোচনা আর স্মৃতির মিলনধ্বনি। তার ঠোঁট কাঁপে, সে বসে পড়ে রাস্তার পাশের সিঁড়িতে, ভেজা পকেটে ভাঁজ করে রাখে সেই চিঠি—যেন এখন হারিয়ে গেলে আর কিছুই থাকবে না। তার মনে হয়, এই তো সেই কথা, যা সে সবসময় শুনতে চেয়েছিল, এই তো সেই বার্তা—যা সময় পৌঁছে দেয়নি, কিন্তু আজ কে জানে কেন, এত বছর পর বৃষ্টির জলে ভেসে এসে ঠিক তার হাতে পড়েছে। সে জানে না এই ঘটনা কাকতালীয় না অলৌকিক, কিন্তু তার হৃদয়ের ভিতর এক ভার খুলে যায়। বহু বছর ধরে চেপে রাখা অভিমান, দুঃখ আর একলা থাকার ক্লান্তি যেন এক নিমেষে মুছে যায়। সে উঠে দাঁড়ায়—তার চোখে ফিরে আসে দৃঢ়তা, মনে হয় এবার ফিরে যেতে হবে, একবার কথা বলতে হবে হরিপদের সঙ্গে, জানতে হবে—সে চিঠিটা আজ কেন এসে পৌঁছাল। আর হয়তো, তার উত্তর লুকিয়ে আছে সেই ছোট ছেলের চোখে—যে বৃষ্টির দিনে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছিল অলৌকিক বিশ্বাস নিয়ে।
৪
আরিন রাতের ঘুমে চোখে আসতে আসতে বারবার ভেসে উঠতে থাকে সেই হাতের লেখা, সেই কথাগুলি—যা এত বছর পর তাকে এক আশ্চর্যভাবে ছুঁয়ে দেয়। সকালবেলা সে জানালার পাশে বসে থাকে, হাতে সেই চিঠি—এখনো কিছুটা ভেজা, কিন্তু অক্ষরগুলো যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার মনে। চিঠিটা পড়ে শেষ করলে আবার পড়ে, বারবার। হরিপদ লিখেছিলেন—”তোকে যদি কোনোদিন চিঠিটা পৌঁছায়, তুই জানবি আমি দোষ স্বীকার করেছি, তোকে ছাড়া বাড়ি বাড়ি ছিল না। মা আজও তোর নাম করে হাঁপ ধরে কাঁদে। ফিরে আয় রে, ভাই—অন্তত একবার…” বাকিটা কিছুটা অস্পষ্ট, জল আর সময় মিশিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যে কথাগুলি চোখের ওপর ছাপ ফেলেছে, তা আর ভুলে থাকা যায় না। এত বছর ধরে নিজের সিদ্ধান্তে স্থির থেকেও কেন জানি আরিনের মন টলতে শুরু করে—এতদিন পরেও কেউ যদি এমন করে ফিরে চায়, তবে কি ফিরে যাওয়া যায় না?
বাড়ির দেয়ালে লেগে থাকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আরিন নিজের মুখ দেখে। একটু একটু করে চিনতে পারে পুরনো দিনের নিজেকে। তার মনে পড়ে—তাদের ছোট্ট ঘর, মায়ের চুল আঁচড়ে দেওয়া বিকেল, আর দাদার হাতে রিকশার প্যাডেলে ভর দিয়ে শেখা প্রথম চলা। সেইসব স্মৃতি আজ ভেসে ওঠে খুব গাঢ় রঙে। সে ভাবে, হরিপদ এখন কেমন আছে? মা কি এখনো আছেন? নাকি… এই ভেবে বুকটা কেঁপে ওঠে। তার মনে হয়, যদি এই চিঠি সময় মতো পৌঁছত, হয়তো জীবন অন্যরকম হত। কিন্তু এমন অলৌকিকভাবে আজ যদি এই চিঠি এল, তবে কি এটা নিছক কাকতাল নয়? সে ভাবতে থাকে সেই ছোট ছেলেটির কথা—যে এই নৌকা বানিয়েছে, এবং অজান্তেই পৌঁছে দিয়েছে সম্পর্কের হারিয়ে যাওয়া সেতু। সে কে? কোথা থেকে নৌকাটা ভেসে এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগ্রহ তার মনে এক নতুন আলো জ্বালায়।
কিছুক্ষণ পরে সে নিজের ব্যাগ গোছায়। পুরনো এক পৈত্রিক ঠিকানা, যেখানে তাদের ছোটবেলা কেটেছে—সেই ঠিকানাটাই এখন তার গন্তব্য। বহু বছর পর সে সেই পথে পা বাড়াতে চায়। ভয়ে নয়, তাড়া নেই কোনো—শুধু একটা গভীর তৃষ্ণা, একটা সম্পর্ককে ছুঁয়ে দেখার তাগিদ। সে ভাবে—এতদিনে যদি কিছু বদলেও যায়, অন্তত দেখা হবে। একটা বার্তাই যদি ফেরে, সেটাই হয়তো জীবনের সবচেয়ে সত্য বার্তা হয়ে থাকবে। আর এই ভাবনা থেকেই সে চিঠিটা নিজের বুকপকেটে রাখে, নৌকাটার কাগজটা যতটা সম্ভব মসৃণ করে ভাঁজ করে নেয়, যেন নিজের সঙ্গে সব প্রমাণ বহন করে সে যাত্রা শুরু করতে পারে। বৃষ্টির ছায়া তখনো জানালার ওপরে, আকাশ এখনো ধূসর, আর তার ভেতরে সেই ছোট্ট বিশ্বাস—যা এক শিশুর ভাঁজ-করা খেলনা থেকে জন্ম নিয়েছে, যেটা সত্যি সত্যি মানুষকে মানুষে মিলিয়ে দিতে পারে।
৫
জলতলার সন্ধ্যা মানেই কোলাহল আর অন্ধকারের খেলা। সজলের গলির মাথায় কেরোসিন লাইট টিমটিম করে জ্বলে ওঠে, আর পাড়ার মেয়েরা বাসন মাজে রাস্তার একপাশে। সজল সে সন্ধ্যাগুলোতে প্রায় নিয়ম করেই যেত নীলুদি’র কাছে—বৃদ্ধা, যিনি একসময়ে স্কুলে পড়াতেন, আর এখন নাতিনাতনিদের না পেয়ে পাড়ার ছেলেমেয়েদের গল্প শোনাতেন। নীলুদি থাকেন একটা খুপরি ঘরে—চোখে মোটা চশমা, কণ্ঠস্বর নরম, আর গলায় এক ধরণের দার্শনিক ধৈর্য। সজল তার আঁচল ধরে বসে, মুখে অদ্ভুত এক অন্যমনস্কতা—আজ সে যেন মন দিয়ে কিছুই শুনছে না। নীলুদি বলেন, “আজ একটা গল্প বলি রে, একরকম সত্যি আবার একরকম না-সত্যি। ছোটবেলায় এক ছেলের ছিল একটা লাল গুঁড়ির নৌকা। সে সেটা বৃষ্টির জলে ভাসাতো। একদিন সে ভাবল, ওটা যদি দূরে গিয়ে কাউকে খুশি করে—তবে কেমন হয়? তারপর হঠাৎ একদিন এক লোক এসে বলে, ‘তোমার বানানো নৌকাই আমার জীবন বদলে দিল।’ জানিস রে, কেবল খেলা মনে করে বানানো একটা নৌকাও কারো কাছে হতে পারে এক বার্তা।” সজলের চোখে তখন জল ঝিকমিক করে ওঠে—সে ভাবে, সত্যিই কি এমন হয়?
সে কিছু বলে না, শুধু মাথা নিচু করে বসে থাকে। নীলুদি তার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলেন, “তোর চোখ বলছে তুই কিচ্ছু লুকাচ্ছিস না, শুধু বুঝে উঠতে পারছিস না।” সজল আস্তে আস্তে বলে, “আমি একটা নৌকা বানিয়েছিলাম, পুরনো কাগজে… তাতে কিছু লেখা ছিল বোধহয়… আমি বুঝিনি…” নীলুদি শুনে থমকে যান, তারপর চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকান। “জগতে কাকতাল বলে কিছু নেই, সজল। সবই একটা সূত্রে বাঁধা। তোর খেলাও হয়তো কারো জীবনের দরজা খুলে দিয়েছে।” সজলের মনে হয়, তার খেলনা নৌকাটাই যদি সত্যিই কারো কাছে পৌঁছায়, তবে সে শুধু শিশু নয়—একটা পাথেয় হয়ে উঠেছে। সে ভাবে, বড় হয়ে সে কী হতে চায়, আর ভাবে—এই যে তার মনে আজ এমন প্রশ্ন আসছে, এটা কি নীলুদি’র গল্পের প্রভাব? নাকি সেই ভেসে যাওয়া নৌকার অলৌকিকতা?
তখনই বাইরে হঠাৎ এক তীব্র হাওয়া বয়ে যায়, আবার বৃষ্টির ছিটে পড়ে জানালায়। নীলুদি বলেন, “আজকের রাতটা বিশেষ, সজল। এমন রাতে মানুষ ফিরে আসে—মনে, ঘরে, কিংবা জীবনে।” সজল সেই কথা বোঝে না পুরোপুরি, কিন্তু তার বুকের মধ্যে একটা অচেনা আলো নড়ে ওঠে। সে উঠে দাঁড়ায়, নীলুদি’র পায়ের কাছে একটা ভাঁজ করা কাগজ রাখে—“এইটে রাখুন, যদি আবার কোনোদিন গল্প বানাতে চান।” নীলুদি চেয়ে দেখেন, সেটা একটা সাদা কাগজ, যার ভাঁজে আঙুলের চিহ্ন। সজল হেঁটে চলে যায় কাদামাখা পথ দিয়ে—মাথার ভেজা চুল, পা ভিজে, কিন্তু তার পায়ের ছাপ যেন রেখে যাচ্ছে গল্পের ভিতর এক নতুন অধ্যায়ের শুরুর রেখা। অন্ধকারে, বৃষ্টির ধারে, আর নীলুদি’র চোখে—সব জায়গায় যেন সেই কাগজের নৌকার ভেসে চলা, অদৃশ্য এক স্রোতের মধ্যে।
৬
সন্ধ্যার পর বৃষ্টিটা আবার নামে টুপটাপ করে, যেন জানালার ধারে জমে থাকা বাতাস আর অশান্ত স্মৃতি মিলেমিশে কেঁদে উঠেছে। হরিপদ চুপচাপ বসে থাকেন ঘরের এক কোণে, রিকশা চালিয়ে ফেরা ক্লান্ত শরীরটা যেন আজ আরও ভারী লাগছে। এক হাতে জুতো খোলেন, অন্য হাতে একটা ধূমায়িত বিড়ি ধরেন, চোখে অন্যমনস্কতা। সজল ঘরের অন্য কোণে গুটিশুটি হয়ে বসে—সে জানে না কেন, কিন্তু বাবার চোখে আজ একটা অন্যরকম বিষাদ। হরিপদ বিড়িটা ফুঁকে ফুঁকে বারান্দার দিকে তাকিয়ে বলেন, “তোকে আমি ছোটবেলায় কতবার বলেছি রে, পুরনো ট্রাঙ্কটা খুলিস না। ওখানে যা আছে, সব আমার বুকের ভেতরের মতো।” সজল কিছু বলে না, শুধু মাথা নিচু করে রাখে। হরিপদ ধীরে ধীরে বলেন, “তুই জানিস না, কিন্তু ওই চিঠিটার জন্য কত রাত আমি ঘুমোতে পারিনি। ওই চিঠিটার মধ্যে ছিল আমার ক্ষমা—যেটা আর কখনও পাঠানো হয়নি।” কথাগুলো যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়, কিন্তু প্রতিটি শব্দ সজলের ছোট্ট মনে পাথরের মতো চাপে।
হরিপদের চোখ ধীরে ধীরে ভিজে ওঠে। তার মনে পড়ে সেই রাতের কথা—যখন ছোট ভাই আরিন চলে গিয়েছিল একটা তীব্র ঝগড়ার পর। রাগে, অভিমানে, ভুল বোঝাবুঝিতে। পরদিন সকালে সে একখানা চিঠি লিখেছিল, নিজের হাতের লেখা দিয়ে, কান্না চেপে রেখে—যেন ওটা দিয়েই সব ঠিক করে দেবে। কিন্তু চিঠিটা আর পাঠানো হয়নি—কি ভেবে যেন রেখে দিয়েছিল পুরনো ট্রাঙ্কে। সেই ভুলের বোঝা সে সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছে। “মা তোকে খুঁজে খুঁজে মরে গেল, আর আমি…” তার গলা রুদ্ধ হয়ে যায়। সজল চুপচাপ উঠে এসে বাবার পাশে বসে। তখনই হরিপদ বলে ওঠেন, “আজকাল রাত হলেই মনে হয়, আরিন যদি হঠাৎ ফিরে আসে… যদি শুধু একবার বলে—‘দাদা, তোকে আমি মাফ করে দিলাম’…” সেই কল্পনার ভিতরেই যেন হরিপদের বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে। বহু বছর ধরে চেপে রাখা, মুখে না বলা, বুকের মধ্যে জমা এক কান্না—আজ প্রথম ফেটে পড়ে। সেই কান্না যেন শুধু একজন ভাইয়ের অনুশোচনা নয়, বরং একটা অসম্পূর্ণ সম্পর্কের আর্তনাদ।
সজল বাবার হাত ধরে থাকে—তার ছোট্ট, নরম হাত বাবার কাঁপা আঙুলে চেপে যায়। বাইরে তখনো টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, আকাশের কান্নার সঙ্গে যেন মিলেমিশে গেছে ঘরের ভিতরের দু’টি মানুষের নিঃশব্দ যন্ত্রণা। কিন্তু সেই নিঃশব্দতার মধ্যেই যেন একটা সুর বেজে ওঠে—একটা অচেনা আশার সুর। হরিপদের অজান্তেই, সেই চিঠিটা আজ পৌঁছে গেছে ঠিক জায়গায়, ঠিক মানুষের হাতে। যেটা সে জীবনে করে উঠতে পারেনি, সেটা কোনো এক ছোট্ট শিশুর নিষ্পাপ খেলা করে ফেলেছে। আর হয়তো তার চোখের জলে, সেই সত্যিটা ঝাপসা হয়ে থাকলেও, ভাগ্যের হাতে লেখা এক অলৌকিক পুনর্মিলনের শুরু হয়ে গেছে। সজল তখনো বোঝে না সবকিছু, কিন্তু তার শিশুসুলভ হৃদয় অনুভব করে—এই বৃষ্টির মধ্যেও যেন একটা রোদ জেগে উঠছে বাবার বুকের গভীরে।
৭
শহরের একটি ছোট্ট লোকাল ট্রেনের কামরায় বসে আছে আরিন, তার হাতে শক্ত করে ধরা সেই চিঠি আর নৌকার কাগজ। জানালার পাশে বসে সে বাইরের পেছনে ছুটে চলা দৃশ্য দেখে—পথ, কাদা, ভিজে পিচ, নামহীন স্টেশন। মনে হচ্ছে যেন গোটা শহরটাই কুয়াশার মতো অস্পষ্ট, শুধু তার ভেতরে স্পষ্ট হয়ে আছে একটাই লক্ষ্য—ফিরে যাওয়া। সে এই পথে বহু বছর আগেও এসেছিল, কিন্তু তখন বুকের মধ্যে ছিল রাগ, অভিমান আর অহংকার। আজ যখন ফিরছে, তার বুকের মধ্যে গুমরে উঠছে এক আলগা কান্না, এক নিঃশব্দ অনুশোচনা, আর এক নিঃশেষ প্রাপ্তির ব্যাকুলতা। চিঠির প্রতিটি শব্দ আজ যেন তার শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে সেই বাক্যটা: “তোর দাদা হিসেবে একটা কথা বলার আছে…”। ট্রেন থামে, আবার চলে—আরিন উঠে দাঁড়ায়, জানে তার ঠিকানাটা বদলায়নি। এখনও সেই পুরনো ঘর, ট্রান্সফর্মার পেরিয়ে বাঁ দিকে গলি, পানের দোকানটা হয়তো আছে, অথবা নেই। কিন্তু একটা কিছু ভেতর থেকে বলছে—সব ঠিক আছে, শুধু সে দেরি করে ফেলেছে।
জলতলার সেই চেনা রাস্তায় হেঁটে আসা আরিনের জন্য যেন এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম দেয়। চারপাশের গলিগুলো এখনও কাঁচা, কিছু ঘর টিনের, কিছু জায়গায় পলিথিনের ছাউনি। সে থমকে যায় একটা বাঁকে—সেখানে এক পুচকে ছেলে, বৃষ্টিতে ভেজা গায়ে, কাগজের আরেকটা নৌকা ভাঁজ করছে। তার বুকের মধ্যে কেঁপে ওঠে কিছু। ছেলেটা তাকিয়ে দেখে, তারপর হাসে। আরিন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে—এই মুখের ভিতরে যেন কারও ছায়া। কিন্তু সে কিছু বলে না। হেঁটে চলে আসে বাঁধা পুকুর পাড়, যেখানে ছোটবেলায় সে ও হরিপদ খেলত। সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে এক মুহূর্তের জন্য, তারপর চোখে জল নিয়ে এগিয়ে যায় সেই ঘরের দিকে—যার ভেতর সে একদিন শপথ করে বলেছিল, “আর ফিরবো না।” কিন্তু আজ পা থামছে না তার। দরজার কাছে গিয়ে একটু ইতস্তত করে, তারপর ধীরে ধীরে কড়া নাড়ে।
ভেতর থেকে দরজা খুলে যায়। হরিপদ দাঁড়িয়ে, চোখে বিস্ময়, বিড়ি অর্ধেক জ্বলছে, কপালে শিরা টানটান। দুজনের চোখে লেগে থাকা বিস্ময় আর কান্না একই সঙ্গে চেপে বসে। কিছু বলা হয় না প্রথমে, শুধু চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মিলে যায় এক গভীর দৃষ্টিতে। আরিন চিঠিটা বাড়িয়ে দেয়, ভেজা হলেও চেপে ধরা সেই পুরনো লেখা। হরিপদ কাঁপা হাতে চিঠিটা নেয়, তারপর শুধু বলে—“তুই এলি…”। বাকিটা কান্না। আরিন বলে—“চিঠিটা পেয়েছিলাম… একটা নৌকার ভিতর… একটা ছোট ছেলে…”। হরিপদ তাকিয়ে বলে, “আমার ছেলে… সজল… ও কিছু জানে না, শুধু খেলছিল…”। সেই মুহূর্তে, শতভাগ বাস্তবের মাঝখানে যেন এক অলৌকিক আলো ছড়িয়ে পড়ে ঘরের ভিতর। এই কান্না, এই নীরবতা, এই চিঠি—সব কিছু মিলিয়ে জীবন যেন আবার শুরু হয় এক নতুন খাতা থেকে, আর একটা নৌকা হয়ে ওঠে সম্পর্কের সেতু। বাইরে তখনো বৃষ্টি পড়ে, কিন্তু দুই ভাইয়ের বুকের ভেতরে সেই সব পুরনো অভিমান ধুয়ে যায় এক অলক্ষ্য জলধারায়।
৮
পরদিন সকালে জলতলার আকাশ ছিল ঝকঝকে নীল। কুয়াশা সরেছে, বৃষ্টি নেই, কিন্তু মাটিতে তখনো সোঁদা গন্ধ ছড়িয়ে। সজল উঠেই শুনল, এক “অতিথি কাকা” এসেছে—একটা লোক, যার চোখজোড়া উজ্জ্বল, গলা মোলায়েম, আর যিনি বারবার সজলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন, “তুই জানিস, তোর বানানো নৌকাটা একটা চিঠি বহন করেছিল, যেটা আমি বহু বছর ধরে খুঁজছিলাম।” সজল প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না—তার কল্পনার জগতে এতদিন তার নৌকা ছিল স্রেফ একটা খেলনা, এখন কেউ এসে সেটাকে জীবনের সত্যি বলে মানছে, তাও একজন বড় মানুষ। আরিন হেসে বলে, “তুই একটা অলৌকিক কাজ করেছিস রে ভাই। তোর ঐ খেলায় আমার ভাই আবার আমার কাছে ফিরেছে।” তখন হরিপদ এসে দাঁড়ান দরজার কাছে, কাঁধে হাত রাখেন আরিনের। তাদের চোখে যে বোঝাপড়া, তা কোনো শব্দের দরকার রাখে না। মা নেই, সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এই পুনর্মিলনের মুহূর্তটাই যেন সব ক্ষত জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে।
সজল চুপচাপ বসে পুরনো খাতার পাতাগুলো নিয়ে আবার একটা নৌকা বানাতে শুরু করে। এবার সে সাবধানে কাগজ বেছে, নতুন একটা পৃষ্ঠা, সাদা আর মসৃণ। ভাঁজ করে যত্নে বানায় নৌকাটি, যেন সে জানে—এটা আর শুধু খেলার জন্য নয়। একটা নীল রঙের পেন নিয়ে এবার সে নিজের নাম লেখে না—লিখে: “ভালোবাসা হারায় না”। লেখাটা লিখে সে একটু থামে, তারপর পাশে একটুকরো সূর্যের আলোয় দাঁড়িয়ে নিজের বানানো নৌকাটিকে দেখে। হরিপদ ও আরিন তখন দরজার ধারে দাঁড়িয়ে, হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন তার দিকে—যেন তারা বুঝতে পারছেন, এই ছোট ছেলেটির হাতেই কোনো এক সূত্র লুকিয়ে ছিল, যা এতগুলো বছর পর দুই ভাইকে আবার মিলিয়ে দিতে পেরেছে। সময়, দূরত্ব, অহংকার—সব হেরে গেছে একটা কাগজের ভাঁজের কাছে, এক নিষ্পাপ খেলার কাছে। আর সেই খেলা আজ আর শুধু খেলা নয়—তা হয়ে উঠেছে জীবনের গভীর বার্তা।
সজল ধীরে ধীরে হাঁটে গলির দিকে। আগের দিনের সেই জায়গা, যেখানে সে প্রথম ভাসিয়েছিল তার নৌকাটি, আজও সেখানে জল জমে আছে। সজল জুতো খুলে হাঁটু ডুবিয়ে দাঁড়ায়, দুই হাতে ধরে নতুন নৌকাটিকে জলের ওপর রাখে। তার চোখে তখন এক দৃঢ়তা, একটা বিশ্বাস, যেন সে নিজেই এখন বুঝতে পারছে নিজের কাজের গুরুত্ব। সে চুপচাপ বলে, “যা, আবার কারো কাছে পৌঁছে যা”—আর ঠেলে দেয় নৌকাটিকে জলে। ভেসে যায় তা, ধীরে ধীরে ড্রেনের দিকে—আর তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে তিনটি মানুষ—এক শিশু, আর দুই ভাই—যাদের মধ্যে সম্পর্ক আবার নতুন করে গড়া হয়েছে। এই শেষ নৌকাটিও হয়তো যাবে দূরে, আবার কোনো এক ভুলে যাওয়া সম্পর্ক ছুঁয়ে দেবে, আবার কোনো হৃৎপিণ্ডকে নরম করে দেবে। আর সজল, তার চোখে তখন আনন্দ নয়—একটা উপলব্ধি। সে জানে না ঠিক কী ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে, কিন্তু সে বুঝে গেছে, তার কাগজের নৌকা শুধু খেলার বস্তু নয়—তা বয়ে আনতে পারে জীবনের সবচেয়ে গভীর বার্তা।
—-
				
	

	


