Bangla - তন্ত্র

কালীঘাটের নীল পদ্ম

Spread the love

অধ্যায় ১: কিংবদন্তির সূচনা

কালীঘাট মন্দিরের অন্ধকার কোণগুলোতে আলোর খোঁচা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, পুরনো কালের গন্ধে ভরা বাতাসে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছিল। মন্দিরের মূল প্রাঙ্গণের পাশের ছোট ঘরে বসে ছিলেন বৃদ্ধ পুরোহিত, যার চোখে বছরের অভিজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট। তার সামনে বসা শিষ্য, কণ্ঠে কৌতূহল আর চোখে অবিশ্বাসের মিশ্রণ নিয়ে, আঙুল ধরে শোনছিল প্রতিটি শব্দ। পুরোহিতের কণ্ঠস্বরে প্রতিটি বর্ণনা যেন ঘরের দেওয়ালকে জীবন্ত করে তুলছিল। তিনি শুরুর দিকে বললেন, “এই মন্দিরের বহু বছরের ইতিহাসে এমন রহস্যময় ঘটনার কথা বহুবার শোনা গেছে, কিন্তু কেউ তা স্পর্শ করতে সাহস পায়নি। নীল পদ্ম সেই রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু।” তার কথায় এক অদ্ভুত গম্ভীরতা ছিল, যেন অতীতের ইতিহাস নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে এখন শিষ্যকে স্বীকার করাতে চাইছে। তিনি বোঝালেন, নীল পদ্ম একটি বিশেষ পদ্ম—যে পদ্মে অর্পণ করা হলে মৃত আত্মা পর্যন্ত উদয় হয়। এই পদ্ম শুধুমাত্র একটি ফুল নয়, এটি এক প্রাচীন তন্ত্রের প্রতীক, যা সময়ের ধারায় অদৃশ্য হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষের কাহিনীতে বেঁচে আছে। প্রতিটি গল্পে বলা হয়, যে ব্যক্তি নীল পদ্মটি খুঁজে পায় এবং পূজায় অর্পণ করে, তার সামনে অতীতের অজানা দৃশ্যগুলো প্রकट হয়, যেখানে মৃত আত্মারা জীবিতদের সাথে কথোপকথন করতে পারে।

পুরোহিতের চোখে গভীর বিষণ্ণতা, আর কথায় এক অদ্ভুত আভা ছিল, যা শিষ্যকে এক অচেনা ভয়ঙ্কর উত্তেজনা দেয়। তিনি বললেন, “শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু তান্ত্রিক চেষ্টা করেছে নীল পদ্মের অস্তিত্ব উদঘাটন করতে, কিন্তু কেউ সফল হয়নি। কেউ বলেছে এটি সাগরের গভীরে, কেউ বলেছে বনজঙ্গল বা পুরনো রাজবাড়ির গোপন কক্ষে লুকানো। প্রতিটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, শুধু লোকমুখে কাহিনী বেঁচে আছে। তবে শিষ্য, মনে রেখো—কোনও কাহিনী নিছক কল্পনা নয়; ইতিহাসের আড়ালে সত্য অপেক্ষা করছে। যে সাহসী হবে, সে সত্যের মুখোমুখি হবে।” শিষ্য যত শুনছিল, তার মনে নানা প্রশ্ন উদয় হচ্ছিল। কি সত্যিই এমন পদ্ম আছে, আর যদি থাকে, কেন এত গোপনীয়তা? পুরোহিত একটুখানি হাসি দিয়ে বললেন, “শুধু জানলেই হবে না, অনুভব করতেই হবে। এই পদ্মের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক শুধু চোখে দেখা বা হাতে স্পর্শ করার নয়, এটি আত্মার অনুভূতির সঙ্গে সংযুক্ত।” কথাগুলো শিষ্যের মনকে উদ্বেলিত করল। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, নীল পদ্মের রহস্য শুধুমাত্র শারীরিক অনুসন্ধান নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক যাত্রা—যাত্রা যেখানে সাহস, বিশ্বাস এবং এক ধরণের ভয়ঙ্কর কৌতূহল একত্রিত হয়।

পুরোহিতের বর্ণনা চলতেই থাকল। তিনি বললেন, “লোকেরা বলে, নীল পদ্ম কেবল একবার পূজিত হয়েছিল, তখনই মৃতদের আত্মা প্রকট হয়। যে ব্যক্তি তা দেখেছে, সে কখনও ভুলে যায়নি। তবে সেই ঘটনার বিবরণ এতটাই রহস্যময় যে, লিখে রাখা সম্ভব হয়নি। শুধু মুখে মুখে, গল্পের আকারে তা বেঁচে আছে।” শিষ্য কৌতূহল এবং ভয়ের মিশ্রণে স্তব্ধ হয়ে গেল। তিনি ভাবছিলেন, এমন রহস্যের সামনে দাঁড়ানো মানে কি শুধুই সাহসী হওয়া, নাকি কিছু হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে? পুরোহিত শেষ করলেন, “শিষ্য, নীল পদ্ম এক অদৃশ্য পৃথিবীর দরজা। যা একবার উন্মোচিত হবে, ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে মনে রাখো, সত্যের পেছনে যদি সাহসী হও, তুমি পাবে সেই জ্ঞানের ঝলক, যা অমরত্বের মতো শাসন করে।” কথাগুলো শিষ্যকে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে মাতিয়ে তুলল। ঘরের নীরবতা, মন্দিরের অদ্ভুত গন্ধ, এবং বৃদ্ধ পুরোহিতের কণ্ঠস্বর মিলিত হয়ে এক চরম রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করেছিল, যা পড়ন্ত সূর্যের আলোয় আরও গভীর হয়ে উঠেছিল।

অধ্যায় ২: সাধকের স্বপ্ন

অঘোরানন্দের জীবন অতীতের সকল সাধারণ মানুষের চোখে অদ্ভুত এবং রহস্যময় মনে হতো। কলকাতার আড়ম্বরপূর্ণ শহরের মধ্যে, যে কোনো চোখের নজরে তিনি এক অচেনা ব্যক্তির মতো ছিলেন—কেউ তার প্রতি আগ্রহী হতো না, কেউ তার দিকে তাকাতেও ভয় পেত। তিনি তান্ত্রিক সাধক, যার জীবনকাল কাটে মন্ত্র, ধ্যান এবং তান্ত্রিক সাধনার মধ্যে। কিন্তু সম্প্রতি তার স্বপ্নগুলো এক নতুন দিশা দেখাতে শুরু করেছিল। বারবার, রাতের নিঃশব্দে, ঘুমের অন্ধকারে, তিনি দেখতে পেতেন এক অদ্ভুত দৃশ্য—কালীঘাটের মাটির গভীরে, কালীমাতার পাদতলে নীল পদ্ম ফুটে আছে। পদ্মের নিখুঁত নীল রঙ যেন চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল হচ্ছে, আর তার চারপাশে ভাসছে অদ্ভুত ধোঁয়াটে আলো। স্বপ্নে অঘোরানন্দ নিজেকে দেখে মাটির নিচে বসে, ধ্যানরত, কিন্তু পদ্মের দিকে তার মন আকৃষ্ট। প্রথম প্রথম তিনি ভাবলেন এটি শুধু স্বপ্ন, কেবল তার চেতনার খেলা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নগুলো ক্রমশ স্পষ্ট, জাগ্রত এবং অতি বাস্তব হয়ে উঠতে লাগল—প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, তার হৃদয়ে এক অচেনা উত্তেজনা এবং অদ্ভুত আবেগ সৃষ্টি করছিল। তিনি বুঝতে পারলেন, এটি নিছক কল্পনা নয়; কিছু দেবীয় শক্তি তাকে নির্দেশ দিচ্ছে।

প্রতিটি স্বপ্নের সঙ্গে তার বাস্তব জীবনের মেলবন্ধন ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকল। অঘোরানন্দ প্রতিদিন মন্দিরের কোণে বসে ধ্যান করতেন, মন্ত্রপাঠ করতেন এবং তার অন্তরের গভীরে যে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে তা অনুভব করার চেষ্টা করতেন। স্বপ্নে দেখা নীল পদ্ম যেন তাকে ডেকে আনে, যেন বলছে—“এখনই তোমার খোঁজ করার সময় এসেছে। আর দেরি করলে তুমি এই দুনিয়ার আবরণে আটকে যাবে।” তার মন-মস্তিষ্কের মধ্যে উত্তেজনা এবং ভয় একত্রিত হয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করছিল। তিনি জানতেন, নীল পদ্ম শুধুমাত্র ফুল নয়, এটি এক শক্তির প্রতীক, যা অতীত ও বর্তমানকে সংযুক্ত করে। যদি তিনি স্বপ্নের নির্দেশ অনুসরণ করে পদ্মের খোঁজে বের হন, তবে তার সামনে শুধু সৌভাগ্য নয়, ভয়ঙ্কর পরীক্ষা ও বিপদও অপেক্ষা করছে। কিন্তু অঘোরানন্দের হৃদয়ে এক দৃঢ় বিশ্বাস জাগল—যে দেবী নিজে নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি কখনও তার প্রিয় শিষ্যকে বিপদে ফেলবেন না। প্রতিটি রাতের স্বপ্নের পর, তিনি ঘুম থেকে উঠতেন এক অদ্ভুত আনন্দ এবং একটুখানি আতঙ্ক নিয়ে, যেন তার জীবন এখন থেকে এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে, যেখানে রহস্য, আধ্যাত্মিকতা এবং স্বপ্নের বাস্তবতা একত্রিত হবে।

এক সময় অঘোরানন্দ সিদ্ধান্ত নিলেন, স্বপ্নকে অবহেলা করা সম্ভব নয়। তিনি মন্ত্রপাঠের সময় নিজের অন্তরে গভীর ধ্যান করলেন এবং অনুভব করলেন যে, নীল পদ্মের খোঁজে বের হওয়া শুধু একটি অভিযান নয়, এটি তার আত্মার পরিপূর্ণ যাত্রা। তিনি ভাবলেন, যদি তিনি এই পদ্ম খুঁজে পান, তবে কেবল তার তান্ত্রিক জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে না, মৃত আত্মাদের সঙ্গে কথোপকথনের অদ্ভুত ক্ষমতাও অর্জন হবে। স্বপ্নে দেখানো প্রতিটি সূক্ষ্ম অঙ্গ, প্রতিটি নীল রঙের ছায়া, প্রতিটি আলো-ছায়ার খেলা—all সবই তাকে নির্দেশ দিচ্ছিল যে, সময় এসেছে পদ্মের সন্ধানের। তিনি সতর্কভাবে পরিকল্পনা করতে লাগলেন, কোন পথে যেতে হবে, কী ধরনের জ্ঞান ও সামগ্রী সঙ্গে রাখতে হবে। তার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, যাকে তিনি বোঝাতে পারছিলেন না, শুধু অনুভব করতে পারছিলেন। প্রতিটি ধ্যান, প্রতিটি মন্ত্রপাঠ, প্রতিটি নিঃশ্বাস তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলছিল, যেন তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছেন সেই অদ্ভুত যাত্রার জন্য, যা কেবল শারীরিক নয়, আধ্যাত্মিক এবং মানসিক পরীক্ষারও। অঘোরানন্দ জানতেন—নীল পদ্ম খুঁজে বের করা মানে নিছক এক ফুল খোঁজা নয়; এটি এক প্রাচীন রহস্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, যেখানে জীবনের সীমা, মৃত্যুর সীমানা, এবং আত্মার অদ্ভুত শক্তি সব একত্রিত হয়ে যায়।

অধ্যায় ৩: দুষ্কৃতীদের ষড়যন্ত্র

কলকাতার অন্ধকার গলিপথ ও পুরনো ইটের ভবনের ছায়ায় লুকানো ছিল একটি গোপন চক্র, যার সদস্যদের কার্যকলাপ শহরের চোখে অদৃশ্য ছিল। এই চক্রের নেতা রক্তেশ্বর—এক ব্যক্তি যার নাম শুনলেই অনেকের মধ্যে ভয় ও কৌতূহল একসাথে উদ্ভূত হয়। তার মুখে ছিল এক অদ্ভুত ধ্বংসাত্মক আনন্দ এবং চোখে লুকানো ছিল নিখুঁত কৌশল। রক্তেশ্বর এবং তার দলের সদস্যরা কয়েক বছর ধরে এক বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজ করছিলেন—নিয়মিত অপরাধ, চুরি, ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শহরের নিচু স্তরে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা। কিন্তু সম্প্রতি তারা এক গোপন তথ্যের খোঁজ পেয়েছে, যা তাদের প্রায় অমরত্বের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। শহরের পুরনো লোকমুখের কাহিনী অনুযায়ী, নীল পদ্ম এমন এক শক্তি ধারণ করে, যা মৃতদের আত্মাকে ফেরিয়ে আনতে পারে। রক্তেশ্বর বিশ্বাস করল যে, যদি সে এই পদ্মের সাহায্যে শহরের মরদেহদের পুনরায় জীবিত করতে পারে, তবে তার হাতে হবে একটি অজেয় বাহিনী—যারা মানুষের বিরুদ্ধে অদৃশ্য কিন্তু মারাত্মক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এই ধারণা তাকে রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, এবং প্রতিটি পরিকল্পনায় তার দলকে আরও নিষ্ঠুর ও চতুর হতে শেখাচ্ছিল।

রক্তেশ্বরের ঘর ছিল শহরের এক অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত ভবনের তৃতীয় তলায়। সেখানে বিশাল টেবিলের চারপাশে তার সদস্যরা বসে, হাতে নানা মানচিত্র, পুরনো কাগজপত্র এবং কিছু গুপ্ত তথ্য নিয়ে। রক্তেশ্বর তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “নীল পদ্ম শুধু একটি ফুল নয়, এটি এক অদ্ভুত শক্তির উৎস। আমাদের লক্ষ্য শুধুই এটিকে খুঁজে বের করা নয়, এটি ব্যবহার করে এমন এক শক্তিশালী বাহিনী গঠন করা, যা কখনও হারাবে না।” তার কণ্ঠে এক অদ্ভুত অঙ্গীকার এবং উন্মাদনা ছিল, যা দলকে এক অচেনা উত্তেজনা দেয়। সবাই জানত, এই কাজের মধ্যে বিপদ, তত্ত্বাবধান, এবং আধ্যাত্মিক বাধা রয়েছে। কিন্তু রক্তেশ্বর বিশ্বাস করেছিল, পৃথিবীর কোনও শক্তি তাদের থামাতে পারবে না। তিনি দলকে বিস্তারিত নির্দেশ দিলেন—কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, কোন মন্দির, পুরনো দালান, বা ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থান থেকে নিখোঁজ তথ্য পুনরুদ্ধার করতে হবে। দল members প্রতিটি নির্দেশ কঠোরভাবে নোট করছিল, যেন এক মুহূর্তের ভুলও তাদের ব্যর্থ করে দিতে না পারে। রক্তেশ্বরের চোখে ঝিলিক উঠল, যেন সে এক অদৃশ্য যুদ্ধের রূপকল্প দেখছে, যেখানে নীল পদ্মই হবে তার বিজয়ের চাবিকাঠি।

চক্রের পরিকল্পনা ক্রমশ বাস্তব রূপ নিচ্ছিল। রক্তেশ্বর জানত, নীল পদ্মের রহস্য ও শক্তি এক সাধারণ মানুষের কাছে উপলব্ধ নয়। তাই তার দলকে প্রায়শই রাত্রিকালীন অভিযান, গুপ্ত অনুসন্ধান, এবং অন্ধকার চুক্তির মধ্যে পাঠানো হত। শহরের ভাঙাচোরা ভেতরের কক্ষে তারা মানচিত্রে চিহ্নিত স্থানগুলো পরীক্ষা করত, যেখানে পদ্মের সম্ভাব্য অবস্থান হতে পারে। প্রতিটি অভিযান নতুন বিপদ, নতুন ধোঁয়া এবং অদ্ভুত ঘটনা আনে। মাঝে মাঝে তারা শোনা যেত অদ্ভুত চিৎকার বা অদ্ভুত আলো, যা তাদের মনে করিয়ে দিত যে, নীল পদ্ম শুধুই স্বাভাবিক জায়গায় নেই—এটি এক আধ্যাত্মিক ও মৃত্যুর সীমার সঙ্গে যুক্ত রহস্য। রক্তেশ্বরের চোখে তা আরও উত্তেজনা তৈরি করছিল। তিনি জানতেন, এই অভিযান শুধু পদ্ম খোঁজা নয়, এটি তার ক্ষমতার পরীক্ষা—যদি সে সফল হয়, তার হাতের শক্তি অমরত্বের কাছাকাছি চলে যাবে। দলের সদস্যরা ক্রমশ এক অপরাধময় উন্মাদনায় আক্রান্ত হচ্ছিল, এবং প্রতিটি পদক্ষেপে তারা আরও ধ্বংসাত্মক ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছিল।

অধ্যায় ৪: শাস্ত্রের পথ

অঘোরানন্দের ধ্যান ও সাধনার ফল ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করল। স্বপ্নের দিশা তাকে এক নতুন লক্ষ্য দেখিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবিক পদক্ষেপ ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব ছিল না। একদিন, মন্দিরের পুরনো লাইব্রেরিতে ঘুরে ঘুরে, বেশ কিছু পাতার মধ্যে তিনি একটি প্রাচীন তন্ত্রশাস্ত্রের সন্ধান পেলেন। পাণ্ডুলিপিটি সময়ের ছায়ায় ধূলোমাখা, পাতার ধারায় ছিন্নভিন্ন চিহ্ন, এবং অতীতের হাতের লেখা—সবকিছুই তাকে এক অদ্ভুত উত্তেজনা দিচ্ছিল। পাতার প্রতি শব্দ, প্রতিটি চিহ্ন যেন তাকে ডেকে আনছে। তিনি ধীরে ধীরে পাণ্ডুলিপি উন্মোচন করলেন, আর চোখে পড়ল এক বিশেষ নির্দেশনা। সেখানে লেখা ছিল, “শ্মশানের ছায়ার মধ্যে, কালরাত্রির চতুর্দশীতে, নীল পদ্ম প্রকাশ পাবে। যা স্বপ্নে প্রদর্শিত হয়, তা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে শুধুমাত্র তখন।” অঘোরানন্দ অনুভব করলেন, এটি নিছক রূপক বা প্রতীকী কথা নয়; এটি নিখুঁত বাস্তব নির্দেশ, যা তাকে পদ্মের সন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও স্থান জানাচ্ছিল। তিনি বারবার পড়লেন, প্রতিটি শব্দের গভীরে ডুবে, যেন তিনি এক অদৃশ্য নক্ষত্র মানচিত্রে দৃষ্টি বিন্যস্ত করছেন। এই শাস্ত্রের নির্দেশনা তাকে এক নতুন আত্মবিশ্বাস প্রদান করল—যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তা কেবল স্বপ্ন বা মানসিক খোঁজ নয়, বরং বাস্তব এবং আধ্যাত্মিক পরীক্ষার সমন্বয়।

অঘোরানন্দ তখন বুঝতে পারলেন যে, নীল পদ্মের সন্ধান সহজ হবে না। শাস্ত্রের কথাগুলোতে লুকানো ছিল এক সতর্কতা: কেবল সাহসী, ধৈর্যশীল এবং তান্ত্রিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি পদ্মকে খুঁজে পাবে। তিনি আরও গভীরে যাচাই করলেন, শ্মশান ও কালরাত্রি কেন নির্দেশিত হয়েছে। শ্মশান ছিল এক স্থান যেখানে মৃত্যুর সীমানা সবচেয়ে স্পষ্ট, যেখানে আত্মার অদৃশ্য উপস্থিতি সবচেয়ে প্রখর। কালরাত্রি চতুর্দশী, অর্থাৎ পলিময় বা পূর্ণিমার পরবর্তী রাত, সেই সময় যখন প্রাকৃতিক শক্তি, চন্দ্র ও অন্ধকার একত্রিত হয়ে আধ্যাত্মিক শক্তি প্রবাহিত করে। এই জ্ঞান তাকে বুঝিয়েছিল যে, পদ্ম শুধুমাত্র স্থানিক বা শারীরিকভাবে নয়, আধ্যাত্মিক শক্তির সঙ্গেও সম্পর্কিত। এই উপলব্ধি তাকে উদ্বেলিত করল, কারণ তিনি জানতেন—যদি সে সঠিকভাবে শাস্ত্রের নির্দেশ মেনে চলতে পারে, তাহলে পদ্মের রহস্য তাকে শিখিয়ে দেবে এমন কিছু যা সাধারণ মানুষের চেতনা অতিক্রম করে। তাই তিনি প্রস্তুতি নিলেন—শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে। প্রতিদিন গভীর ধ্যান, মন্ত্রপাঠ এবং শক্তির প্রবাহ উপলব্ধির মাধ্যমে, তিনি নিজেকে পদ্মের সন্ধানের জন্য প্রস্তুত করলেন।

অঘোরানন্দ একদিন, গভীর রাতে, নিজের কক্ষের বাতাসে মোমবাতি জ্বালিয়ে শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। তিনি কাগজে চিহ্নিত স্থান, তন্ত্রপাঠের ক্রম এবং প্রয়োজনীয় মন্ত্রগুলো মুখস্থ করলেন। তার মনে অদ্ভুত এক শান্তি ও ভয়ঙ্কর উত্তেজনার মিশ্রণ সৃষ্টি হলো—যেন প্রতিটি নিঃশ্বাস তাকে পদ্মের রহস্যের কাছে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর সীমানার উপস্থিতিও মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন, পদ্মের সন্ধান মানে নিছক ফুল খোঁজা নয়; এটি একটি আধ্যাত্মিক অভিযান, যেখানে জীবনের সীমা, আত্মার গভীরতা এবং মৃত্যুর রহস্য সব মিলিত হয়ে এক এক অদ্ভুত পরীক্ষা তৈরি করছে। সেই রাতেই, তিনি নিজের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প করলেন—যাত্রা শুরু হবে, শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসরণ করে, এবং পদ্মের রহস্য উন্মোচিত হবে।

অধ্যায় ৫: প্রথম সংঘর্ষ

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গার ঘাটে ভিড় জমতে শুরু করল, দীপমালার আলো এবং ঘ্রাণে মিশে থাকা ফুলের সুবাসে এক অদ্ভুত আভা সৃষ্টি করছিল। অঘোরানন্দ শ্বাসের সঙ্গে নিজের মনকে শান্ত রাখছিলেন, ধ্যানের মধ্য দিয়ে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নীল পদ্মের সন্ধানের জন্য। তিনি জানতেন, প্রতিটি পদক্ষেপে বিপদ অপেক্ষা করছে, কিন্তু তার বিশ্বাস এবং শাস্ত্রের নির্দেশনা তাকে সাহস দিচ্ছিল। পূজার আয়োজন চলছিল, মানুষজন সনাতন মন্ত্র পাঠ করছিল, আর ঘাটের ধারে নদীর জলের ঢেউ যেন এক অদৃশ্য সুরের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছিল। হঠাৎ, সেই শান্ত পরিবেশ ভেঙে গেল—এক গোপন শোরগোল, অস্ত্রের শব্দ এবং ছায়ার মধ্যে লুকানো মানুষদের উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠল। রক্তেশ্বরের লোকেরা—যারা অঘোরানন্দকে দীর্ঘদিন অনুসরণ করছিল—সত্যিকারের আক্রমণ চালাল। তারা জানত, পদ্মের সন্ধানে বাধা দেবে এমন কোনো শক্তি এড়ানো যাবে না। প্রথম মুহূর্তে অঘোরানন্দ বুঝতে পারলেন, সাধারণ মানুষ এই সংঘর্ষের সাথে মেলাতে পারবে না। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন তান্ত্রিক সাধক, যিনি নিজের আধ্যাত্মিক শক্তিকে ব্যবহার করে এমন মুহূর্তে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

প্রথম গুলির শব্দ, ছুরির ঝলকানি এবং আতঙ্কের মধ্যেও, অঘোরানন্দ নিজের মন্ত্রপাঠ শুরু করলেন। তিনি ধ্যানের শক্তি, প্রাচীন তন্ত্রের জ্ঞান এবং নিজের অভিজ্ঞতা একত্রিত করে একটি অদৃশ্য আড়াল তৈরি করলেন। রক্তেশ্বরের লোকেরা যেমন তার দিকে ছুরি ছুড়ে মারল, তেমনই গুলি বর্ষণ করল, কিন্তু অঘোরানন্দের চারপাশে তৈরি অদৃশ্য শক্তির ঢাল তাদের আঘাত থেকে রক্ষা করল। প্রতিটি আক্রমণকে তিনি তান্ত্রিক কৌশলে প্রত্যাখ্যান করলেন, কখনও ছায়া হয়ে অদৃশ্য হলেন, কখনও গতি পরিবর্তন করে আক্রমণকারীদের বিভ্রান্ত করলেন। গঙ্গার জলের প্রতিফলনে, তার শরীর যেন আলো ও ছায়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে অদৃশ্য শক্তির অভ্যন্তরীণ ঢেউ তৈরি করছিল। অঘোরানন্দ বুঝতে পারলেন যে, শত্রু শুধুমাত্র শারীরিক আক্রমণ করছে না, তারা তার মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু তিনি শান্ত, দৃঢ় এবং আত্মবিশ্বাসী থাকলেন, প্রতিটি মন্ত্র এবং দৃষ্টির মাধ্যমে শত্রুদের ভয় এবং বিভ্রান্তি বাড়ালেন। এই প্রথম সংঘর্ষে অঘোরানন্দ শারীরিকভাবে অক্ষত থাকলেন, কিন্তু তিনি বোঝলেন—শত্রু এবার শুধু দূরে নয়, তারা অনেক বেশি নিকটে এসেছে।

সংঘর্ষের শেষে, অঘোরানন্দ গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে, নিজেকে বিশ্লেষণ করলেন। তিনি অনুভব করলেন যে, রক্তেশ্বর এবং তার দোসররা কেবল পদ্মের জন্য লড়াই করছে না; তারা শহরের নিয়ম, মানুষের বিশ্বাস, এবং প্রকৃতির নিয়মকেই উল্টে দিতে চাইছে। তাদের উদ্দীপনা, নিঃশব্দ নিষ্ঠুরতা এবং কৌশল এক অদ্ভুত প্রলয় সৃষ্টি করছে, যা অঘোরানন্দকে আরও সতর্ক হতে শেখাচ্ছে। তিনি জানলেন, এই প্রথম সংঘর্ষ ছিল কেবল প্রস্তুতির অংশ, আসল বিপদ এখনও সামনে। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী, কারণ তার অলৌকিক শক্তি, তান্ত্রিক জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক দৃঢ়তা তাকে বিপদে দাঁড়িয়েও বাঁচিয়েছে। শত্রু নিকটে এসেছে, এবং এর পর থেকে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকবে—প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি রাত, প্রতিটি মুহূর্তে।

অধ্যায় ৬: গোপন সঙ্গী

অঘোরানন্দ শ্মশানের পথে যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই তার জীবনে এক অপ্রত্যাশিত সংযোজন ঘটল—অনন্যা। তিনি শহরের এক প্রখ্যাত গবেষক পরিবারের কন্যা, যাদের পূর্বপুরুষ কালীঘাট মন্দিরের দীর্ঘকালীন সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। অনন্যার শৈশব, কিশোরকাল এবং পড়াশোনার অভিজ্ঞতা সবই মন্দিরের ইতিহাস, শাস্ত্র, এবং আধ্যাত্মিক প্রথার সঙ্গে মিশে গেছে। কিন্তু শুধুমাত্র গবেষক হওয়া নয়, তার সঙ্গে ছিল এক গোপন ক্ষমতা—যে জ্ঞান এবং তথ্য, যা প্রায়শই সাধক অঘোরানন্দও জানতেন না। প্রথমবার দেখা হওয়ার পর, অঘোরানন্দ বুঝতে পারলেন যে, অনন্যা শুধুমাত্র সহচর নয়; তিনি এক জ্ঞানভান্ডার, যার মধ্যে শাস্ত্র, ইতিহাস, এবং আধ্যাত্মিক শক্তির অসংখ্য সূত্র লুকিয়ে আছে। তিনি অঘোরানন্দকে বললেন, “শিষ্য, পদ্মের সন্ধানে শুধু সাহস বা শক্তি নয়, প্রকৃত জ্ঞানও প্রয়োজন। আমি জানি এমন কিছু তথ্য, যা এক সময় মন্দিরের গোপন কোণে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, এবং যা নীল পদ্মের অবস্থান নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।” অঘোরানন্দ প্রথমে কিছুটা অবিশ্বাস করলেন, কারণ দীর্ঘদিন একা এই যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু অনন্যার দৃষ্টিতে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা, সততা এবং জ্ঞানপ্রবাহ তাকে প্রভাবিত করল। তিনি বুঝলেন, এই যাত্রায় অনন্যা শুধু সহচর নয়, বরং এক অদৃশ্য আলো, যা তাকে অন্ধকারে পথ দেখাবে।

অনন্যার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পর, তারা একত্রে প্রাচীন শাস্ত্র এবং ইতিহাসের কাগজপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে লাগলেন। অনন্যা জানালেন, তার পরিবারের পুরনো নথি ও ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা অনুযায়ী, নীল পদ্ম শুধুমাত্র স্বপ্ন বা শাস্ত্রের নির্দেশে নয়, বরং মন্দিরের আড়ালে লুকানো বিশেষ শক্তি ও প্রতীক দ্বারা সনাক্ত করা যায়। তিনি একটি পুরনো মানচিত্র এবং কিছু লিপিবদ্ধ সূত্র অঘোরানন্দকে দেখালেন, যা আগে কেউ প্রকাশ করেনি। অঘোরানন্দ লক্ষ্য করলেন, এই মানচিত্র ও সূত্র একদিকে যেমন পদ্মের সম্ভাব্য অবস্থান নির্দেশ করে, তেমনি আধ্যাত্মিক শক্তির প্রবাহ ও শত্রুদের কার্যক্রমকেও অদৃশ্যভাবে প্রকাশ করে। অনন্যার তথ্যগুলো অঘোরানন্দকে এক নতুন দিশা দেখালো, যা শুধুমাত্র তান্ত্রিক জ্ঞান দিয়ে সম্ভব নয়। তিনি বুঝতে পারলেন, এই যৌথ অনুসন্ধান, যেখানে সাহস, জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক শক্তি একত্রিত হবে, নীল পদ্মকে খুঁজে পাওয়ার একমাত্র পথ। অনন্যার উপস্থিতি শুধু সহায়ক নয়; এটি অঘোরানন্দকে একটি নতুন আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্যও দিল, যা তাকে আরও বিপজ্জনক অভিযান মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করল।

একসাথে যাত্রা শুরু করার পর, তারা শহরের অন্ধকার গলিপথ, পরিত্যক্ত স্থাপনা এবং মন্দিরের আড়াল ঘেঁটে পদ্মের সূত্র অনুসন্ধান করতে লাগলেন। অনন্যার উপস্থিতি অঘোরানন্দকে নতুন শক্তি দিল, কারণ তিনি জানতেন যে, তার সহচর শুধুমাত্র জানাশোনা নয়, তার মধ্যে আধ্যাত্মিক সংবেদনশীলতাও আছে। প্রতিটি সন্ধ্যা, প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি মন্ত্রপাঠ এবং মানচিত্রের চিহ্ন পরীক্ষা তাদের এক অদ্ভুত একতায় বাঁধছিল। অনন্যা কখনও তার পূর্বপুরুষের স্মৃতিচারণা, কখনও পুরনো কাগজপত্র, কখনও গোপন মন্ত্রপাঠ ব্যবহার করে তাদের পথ নির্দেশ করছিল। অঘোরানন্দ বুঝতে পারলেন, পদ্মের সন্ধান কেবল তার একাকী শক্তির উপর নির্ভর নয়—এটি জ্ঞান, আধ্যাত্মিক দৃঢ়তা এবং নিখুঁত সঙ্গীর সমন্বয়।

অধ্যায় ৭: রক্তাক্ত শ্মশান

কালরাত্রি নামে এক অন্ধকার রাত শ্মশানের দিকে নেমে আসে, যখন আকাশে বজ্রপাতের ঝলকানি এবং কালের আভাসময় চিল্লিয়ে ওঠা বাতাস সমস্ত জায়গাকে কেঁপে দিচ্ছিল। শ্মশানের শ্যাওলা ও ছায়ার মধ্যে অদ্ভুত গন্ধ ও শব্দ ভেসে আসছিল—ভস্মের গরম, হাড়গোড়ের ভাঙন, এবং বাতাসে মিলিত অগ্নিশিখার খড়খড়ানি। অঘোরানন্দ এবং অনন্যা নির্দিষ্ট শাস্ত্র এবং মানচিত্রের নির্দেশে এখানে পৌঁছান, স্বপ্ন এবং সূত্রের মিলিত দিশায়। তারা জানত, এই রাত এবং এই স্থানেই নীল পদ্ম প্রকাশ পাবে। কিন্তু তাদের অদৃশ্য নজরে ধরা পড়ল—রক্তেশ্বরের দলও একই পথে এসেছে, এক অদ্ভুত নিঃশব্দ নিষ্ঠুরতা এবং হত্যার অভিপ্রায় নিয়ে। অগ্নি, ধোঁয়া এবং মৃতদেহের ভিড়ের মধ্যে, শ্মশান যেন এক অদ্ভুত জীবন পেল—যেখানে মৃত্যুর এবং জীবনের সীমারেখা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। প্রথম নজরে অঘোরানন্দ বুঝতে পারলেন, এটি এক সাধারণ অভিযান নয়; এটি হবে আধ্যাত্মিক শক্তি এবং শারীরিক প্রতিভার চরম পরীক্ষা।

যতক্ষণ রাত গভীর হচ্ছিল, ততক্ষণ শ্মশানের প্রতিটি কোণে যুদ্ধের প্রস্তুতি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। রক্তেশ্বরের লোকেরা ছুরি, লাঠি এবং গুপ্তাস্ত্র নিয়ে অঘোরানন্দের দিকে এগোচ্ছিল, এবং প্রতিটি আঘাতকে তারা মৃত্যুর সাথে তুলনা করছিল। অঘোরানন্দ, ধ্যান এবং তান্ত্রিক মন্ত্রের শক্তি ব্যবহার করে, অদৃশ্য ঢাল তৈরি করলেন। প্রতিটি গুলি, প্রতিটি আঘাত যেন বাতাসে আটকে রইল, তাদের শক্তি এবং মনোবলকে ঘিরে রাখল। অনন্যা, তার গবেষক ও তান্ত্রিক জ্ঞান ব্যবহার করে, প্রাচীন মন্ত্রপাঠ এবং মানচিত্রের চিহ্নের মাধ্যমে পথ দেখাচ্ছিল। তারা বুঝতে পারছিলেন, শুধু শক্তি নয়—সঠিক জ্ঞান, শৃঙ্খলিত পরিকল্পনা এবং ধৈর্যই এই যুদ্ধে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। বজ্রপাতের শব্দ, অগ্নিশিখার ঝলকানি এবং ভস্মের গন্ধ যেন যুদ্ধকে আরও বিভীষিকাময় করে তুলছিল। অঘোরানন্দ এবং অনন্যা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে, প্রতিটি আক্রমণকে প্রতিহত করতে লাগলেন, এবং প্রতিটি পদক্ষেপে পদ্মের দিক আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল।

যুদ্ধের মাঝে, শ্মশানের রক্তাক্ত পরিবেশে অঘোরানন্দ অনুভব করলেন—নীল পদ্ম কেবল ফুল নয়, এটি আধ্যাত্মিক শক্তির এক কেন্দ্রবিন্দু, যা জীবনের এবং মৃত্যুর সীমারেখাকে একত্রিত করছে। রক্তেশ্বরের দল প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছিল, তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পদ্মের শক্তি দখল করা। কিন্তু অঘোরানন্দ এবং অনন্যার জ্ঞান, মন্ত্র এবং আধ্যাত্মিক শক্তি তাদেরকে রক্ষা করছিল। প্রতিটি ঝড়ের সাথে, বজ্রপাতের সঙ্গে, এবং অগ্নিশিখার প্রতিফলনে, যুদ্ধ যেন মৃত্যুযজ্ঞের মতো চলছে—প্রতিটি আঘাত, প্রতিটি ক্রম, প্রতিটি চিৎকার তাদের ধৈর্য, শক্তি এবং মনোবল পরীক্ষা করছে।

অধ্যায় ৮: নীল পদ্মের আবির্ভাব

শ্মশানের অন্ধকার, ধোঁয়া এবং ভস্মের মাঝে হঠাৎ এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে। বাতাসে স্থিরতা এবং অগ্নিশিখার ঝলকানি যেন এক মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায়। অঘোরানন্দ এবং অনন্যা দুজনেই অনুভব করলেন, কিছু ঘটতে চলেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে, কালো ছাইয়ের ভেতর হঠাৎ এক নীল আলো ফুটে উঠল, ধূসর পরিবেশকে এক অদ্ভুত আভায় ভরে দিল। আলোটি ক্রমশ প্রখর হয়ে উঠল এবং চোখ ধাঁধানো নীল রঙে শ্মশানের সবকিছুকে আলোকিত করতে লাগল। নীল পদ্ম ধীরে ধীরে তার উপস্থিতি প্রকাশ করল—একেবারে ভেসে থাকা যেন আকাশে স্থাপিত হয়েছে, চারপাশে এক অদ্ভুত আভা এবং শক্তি বিকিরণ করতে লাগল। অঘোরানন্দ প্রথমবার পদ্মের প্রকৃত রূপ দেখলেন। স্বপ্নে দেখানো সেই নীল রঙ, আভা, এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বাস্তবে এত শক্তিশালী যে, তা অনুভব করলেই মনোবল, শরীর এবং আত্মার সমস্ত অনুভূতিতে ঝড় তুলতে সক্ষম। অনন্যা অবাক এবং উত্তেজিত—তার পূর্বপুরুষের সূত্র এবং গবেষণার তথ্য যেন এক মুহূর্তে বাস্তবের সাথে মেলায়।

কিন্তু নীল পদ্মের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে রক্তেশ্বরের দলও হঠাৎ করেই তৎপর হয়ে উঠল। তারা জ্ঞান করল, পদ্মটি তাদের দীর্ঘ দিনের উদ্দেশ্য এবং স্বপ্নের কেন্দ্র। ছুরির ঝলকানি, অস্ত্রের শব্দ, এবং বাতাসে গন্ধিত ধোঁয়া—সবকিছু মিলিয়ে এক চরম উত্তেজনা তৈরি হল। উভয় পক্ষই ঝাঁপিয়ে পড়ল, পদ্ম দখলের জন্য। অঘোরানন্দ মন্ত্রপাঠ শুরু করলেন, তার আধ্যাত্মিক শক্তি এবং ধ্যানের অভিজ্ঞতা দিয়ে অদৃশ্য ঢাল তৈরি করলেন, যা আক্রমণকারীদের আঘাতকে প্রতিহত করল। অনন্যা, মানচিত্র, শাস্ত্র এবং পূর্বপুরুষদের সূত্র ব্যবহার করে পদ্মের দিকে পথ নির্দেশ করছিল। প্রতিটি আক্রমণ, প্রতিটি আঘাত, প্রতিটি গুলি এবং ছুরির ছলনা যেন এক অদ্ভুত রীতিতে তাদের ধৈর্য, শক্তি এবং আধ্যাত্মিক ক্ষমতা পরীক্ষা করছিল। পদ্ম নিজেই যেন তাদের শক্তি যাচাই করছিল—কে সত্যিই প্রাপ্য, কে শুধু লোভী। অগ্নিশিখা, ছাই, বজ্রপাত এবং রাতের অন্ধকারের সঙ্গে মিশে, নীল পদ্ম একটি প্রাণবন্ত শক্তি হয়ে ওঠে, যা যেকোনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

সংঘর্ষের মাঝখানে, অঘোরানন্দ ও অনন্যা বুঝতে পারলেন—এই পদ্ম নিছক ফুল নয়; এটি এক আধ্যাত্মিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু, যা জীবনের এবং মৃত্যুর সীমারেখাকে একত্রিত করে। রক্তেশ্বরের দল নিরন্তর আক্রমণ চালাচ্ছিল, এবং তাদের উদ্দেশ্য শুধুই পদ্ম দখল করা। কিন্তু অঘোরানন্দ এবং অনন্যার সমন্বিত জ্ঞান, তান্ত্রিক শক্তি এবং অভিজ্ঞতা তাদেরকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করছিল। হঠাৎ একটি মুহূর্তে, পদ্মের নীল আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল, যেন এটি নিজের শক্তিকে প্রকাশ করছে। অঘোরানন্দ অনুভব করলেন, পদ্মের শক্তি যে কোনো অজেয় বাহিনী বা অসতর্ক মানুষের হাতের বাইরে—এটি কেবল সেই ব্যক্তি বা জুটির জন্য যা সত্যিকারের সাহস, জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক শক্তি ধারণ করে।

অধ্যায় ৯: ত্যাগের শক্তি

নীল পদ্মের নীরব প্রভা অঘোরানন্দ এবং অনন্যার চারপাশে জ্বলছিল, কিন্তু তিনি জানতেন, এটি কোনো সাধারণ শক্তি বা বস্তু নয়। স্বপ্ন, শাস্ত্র এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মিলিত অন্তর্দৃষ্টি তাকে বুঝিয়েছিল—পদ্ম আসলে ভক্তির পরীক্ষা। এটি লোভ, অহংকার বা ক্ষমতার জন্য তৈরি হয়নি; বরং, যে ব্যক্তি সত্যিকারের আত্মত্যাগ এবং নিঃস্বার্থ ভক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম, সে প্রকৃত অর্থে পদ্মের শক্তিকে অর্জন করবে। অঘোরানন্দ গভীর ধ্যানের মধ্য দিয়ে নিজের অন্তরকে শান্ত করলেন। তার হৃদয় জানত—এই মুহূর্তে পদ্ম কেবল তার বাহ্যিক হাতের কাছে নয়, বরং তার আত্মার সঙ্গে একাত্ম। এই উপলব্ধি তাকে দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিল। তিনি জানতেন, যদি তিনি পদ্মের শক্তিকে সত্যিকারের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে পারেন, তবে এটি কেবল তারই নয়, বিশ্বকে আশীর্বাদ দেবে। সে ধীরে ধীরে নীল পদ্মের দিকে এগোলেন, প্রতিটি পদক্ষেপে তার চিত্ত গভীরভাবে নীরব এবং সতর্ক।

রক্তেশ্বর এবং তার দোসররা পদ্মটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য এখনও আক্রমণ চালাচ্ছিল। ছুরি, গুলি এবং অস্ত্রের ঝলকানি চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল, কিন্তু অঘোরানন্দের অন্তরে এক অদৃশ্য ঢাল তৈরি হয়েছিল, যা আক্রমণকারীদের আঘাতকে প্রতিহত করছিল। অনন্যা পাশ থেকে প্রাচীন মন্ত্রপাঠ ও চিহ্ন ব্যবহার করে তাকে পথ দেখাচ্ছিল। প্রতিটি আক্রমণ তার ভক্তি এবং ধৈর্যকে আরও দৃঢ় করছিল। অঘোরানন্দ বুঝতে পারলেন—যদি তার লক্ষ্য শুধুই পদ্ম দখল করা হতো, তিনি হয়তো হেরে যেতেন। কিন্তু তার ভক্তি, আত্মত্যাগ এবং আধ্যাত্মিক স্থিতি তাকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। তিনি গভীরভাবে জানতেন, পদ্ম নিজেই তাকে পরীক্ষা করছে—কে প্রকৃতভাবে প্রাপ্য, কে কেবল লোভী। এই উপলব্ধি তাকে আরও সাহসী এবং সমর্পিত করল। তিনি নিজের প্রাণের একাংশকে মুক্তভাবে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিলেন, যেন পদ্মকে দেবীর চরণে পৌঁছে দেওয়া যায়।

অঘোরানন্দ ধীরে ধীরে পদ্মকে সমর্পণ করলেন। হঠাৎ, পদ্ম আগুনের মতো জ্বলে উঠল। রক্তেশ্বর তা হাত দিয়ে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার হাত ততক্ষণে পুড়ে গেল। পদ্মের নীল আলো আগুনের আকার ধারণ করল এবং রক্তেশ্বরের দোসররা চিৎকার করে পিছিয়ে গেল। এটি স্পষ্ট করে দিল—পদ্ম কেবল লোভী বা অসতর্কের জন্য নয়, এটি সেই ব্যক্তির জন্য, যার অন্তরে নিঃস্বার্থ ভক্তি এবং আত্মত্যাগ রয়েছে। অঘোরানন্দের আত্মত্যাগ এবং সত্যিকারের ভক্তি পদ্মের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেল, যা কেবল তার শক্তিকে প্রকাশ করল না, বরং রক্তেশ্বরের লোভী হাতকে ব্যর্থ করে দিল। অনন্যা অবাক এবং আনন্দিত—তিনি বুঝতে পারলেন, পদ্ম শুধুমাত্র শক্তি নয়, এটি আধ্যাত্মিক পরীক্ষা, যা নিখুঁত ত্যাগ এবং ভক্তিকে চিহ্নিত করে।

অধ্যায় ১০: সাধনার জয়

ভোরের প্রথম কিরণ শ্মশানের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ল, আর রাতের অন্ধকার ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগল। আকাশে নরম সোনালী আলো, নদীর তীরে ভেসে আসা কুয়াশা, এবং শ্মশানের ধূসর ছায়া সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি সৃষ্টি করছিল। আগের রাতের বজ্রপাত, আগুনের ঝলকানি, এবং মৃত্যুযজ্ঞের ঝড় সব মিলিয়ে যেন কেবল স্মৃতি হয়ে থাকল। কিন্তু অঘোরানন্দ এবং নীল পদ্মের সংঘর্ষের চিহ্ন এখনও যেন আকাশে ধোঁয়ার মতো ভেসে আছে। শ্মশান নিস্তব্ধ, ধোঁয়া ধীরে ধীরে নীরবে মিলিয়ে যাচ্ছে, আর সেখানে কোনো পদ্ম আর দৃশ্যমান নয়। অনন্যা, যিনি সমস্ত রাত জুড়ে সাধকের সঙ্গে ছিলেন, ধীরে ধীরে সামনে এগোলেন। তিনি দেখলেন—অঘোরানন্দের শরীর নেই, শুধু ভস্মের ছায়া রয়েছে। প্রথম মুহূর্তে তার চোখে অবিশ্বাস এবং হাহাকার। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে তার মনে হলো, যে শক্তি, যা তাকে জীবিত রাখতে পারত, তা সম্ভবত পদ্মের হাতে পৌঁছে গেছে। শ্মশানের নিস্তব্ধতা এবং দূরবর্তী কালীঘাট মন্দির থেকে ভেসে আসা মৃদু ঢাকের শব্দ সব মিলিয়ে একটি নিখুঁত আধ্যাত্মিক প্রমাণ দিচ্ছিল—অঘোরানন্দের আত্মা এখন মহাশক্তির সঙ্গে একাত্ম।

অনন্যা ধীরে ধীরে বুঝতে পারলেন—নীল পদ্ম কেবল শক্তির বস্তু নয়, এটি দেবীর এক অলৌকিক প্রকাশ। যে ব্যক্তি আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থ ভক্তি এবং সত্যিকার সাধনা প্রদর্শন করতে পারে, তার জন্য পদ্ম শক্তি প্রকাশ করে। অঘোরানন্দের আত্মত্যাগ, যা প্রাণ দিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল, শুধুমাত্র পদ্মকে অর্জনের জন্য নয়, বরং প্রকৃত আধ্যাত্মিক সাধনার উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অনন্যা তার পূর্বপুরুষদের সূত্র এবং প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী বুঝতে পারলেন, সত্যিকারের সাধনা মানে পাপ, লোভ বা অহংকারকে প্রাধান্য না দিয়ে, নিজের সমস্ত শক্তি দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা। পদ্ম যেন সেই ভক্তি পরীক্ষা করেছিল—যার হাতে সত্যিকারের আত্মত্যাগ নেই, তার শক্তি পদ্মকে ছুঁতে পারবে না। এই উপলব্ধি অনন্যার মনে এক অদ্ভুত শান্তি এবং প্রশান্তি এনে দেয়, যদিও শরীরিকভাবে অঘোরানন্দ নেই। তার ভেতরের শক্তি, তার ভক্তি, তার ধৈর্য এবং আধ্যাত্মিকতা সর্বদা তার সঙ্গে ছিল, এবং পদ্ম সেই শক্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে মহাশক্তির সঙ্গে মিলিত করেছে।

শেষে অনন্যা দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলেন—নীল পদ্ম কি সত্যিই ছিল, নাকি এটি কেবল দেবীর অলৌকিক প্রকাশ, যা প্রয়োজনীয় সময়ে ভক্তির পরীক্ষা নিতে এসেছে? বাস্তব বা মিথ্যা—প্রমাণ একটাই। পাপ নয়, লোভ নয়, শক্তি নয়, কেবল সত্যিকারের সাধনা এবং আত্মত্যাগই বিজয়ী। অঘোরানন্দের ভস্ম, নীরব শ্মশান এবং দূর থেকে ভেসে আসা মৃদু ঢাকের শব্দ সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শিক্ষার অনুভূতি তৈরি করল। অনন্যা জানল, ইতিহাস, স্বপ্ন, শাস্ত্র এবং প্রাচীন সূত্র মিলিত হয়ে এই সত্য প্রকাশ করেছে—যে ব্যক্তি ভক্তি, ধৈর্য এবং ত্যাগ প্রদর্শন করে, তার সাধনা কখনও বৃথা যায় না। গল্পের শেষ মুহূর্তে পাঠক অনুভব করবে—নীল পদ্ম এক শক্তি নয়, বরং এক আধ্যাত্মিক পরীক্ষা, যার বিজয়ী হতে হলে লোভ, অহংকার এবং মৃত্যু আতঙ্ককে অতিক্রম করতে হয়। অঘোরানন্দের আত্মত্যাগ, পদ্মের নিঃশব্দ নীরবতা এবং মন্দিরের ঢাকের ধ্বনি মিলিয়ে, এই অধ্যায় পাঠককে আধ্যাত্মিকতা, ত্যাগ এবং সত্যিকার সাধনার গভীরে ডুবিয়ে দেয়, যেখানে শুধুমাত্র সাধনা বিজয়ী হয়।

***

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *