পারমিতা কর
পর্ব ১: পথের ধুলো আর চোখের স্বপ্ন
ইরাবতী কখনও বাড়ির বাইরে বেড়ায়নি বিশেষ। স্কুল, কোচিং আর ক্লাসিকাল ডান্সের ক্লাস—এই ছিল তার জগৎ। পাড়ার বাসিন্দারা বলত, “ও তো একেবারে বইয়ের পোকা!” সত্যিই তো, ছুটি মানেই ইরাবতীর হাতে বই—সত্যজিৎ রায়, হুমায়ুন আহমেদ, কিশোর ভারতী, আবার কখনও বিজ্ঞানের ম্যাগাজিন।
তবু, একটা স্বপ্ন তার মনের ভেতরে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছিল ছোটবেলা থেকে। একবার এক গল্পের বইয়ে পড়েছিল—”সমুদ্রের ঢেউ যেমন দূরের পাথরকে চিরে ফেলতে পারে, তেমনই কারও জীবনে কখনও কখনও নতুন অধ্যায় এনে দিতে পারে এক ঢেউ-আসা সকাল।” সেই থেকে সমুদ্র যেন তার মনের এক কোণে জেগে ছিল—একটা না-ছোঁয়া বিস্ময়ের মতো।
ইরাবতীর বয়স এখন ষোলো। আর ঠিক এই সময়েই বাবা-মা ঠিক করলেন, পুজোর ছুটিতে তারা সবাই মিলে যাবে পুরী। ছোট ভাই ঈশান তো আনন্দে লাফাচ্ছিল, “সাগর! রিয়েল সাগর!” মা বললেন, “পুরীর জগন্নাথদেব দেখাব, আর তোর স্বপ্নের সমুদ্রও।”
ইরাবতীর বুক কাঁপল। প্রথমবার নিজের চোখে সমুদ্র! শুধু পড়া আর টিভিতে দেখা জলের এই বিশালতা এবার সত্যি হতে চলেছে তার জীবনে।
রাত্রি দশটার ট্রেন। স্টেশনটা মানুষের ভিড়ে গমগম করছিল। মাথায় ব্যাগ, হাতে স্যুটকেস, আর হূদয়ে উৎসবের ঢেউ নিয়ে ইরাবতীরা ট্রেনের ভিতর উঠল। জানালার পাশে বসেই সে চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে থাকল। বাবার ক্যামেরা, মায়ের গুছিয়ে দেওয়া খাবারের ব্যাগ, ঈশানের ছুটোছুটি—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম উন্মাদনা।
ট্রেন ছাড়তেই ইরাবতী জানালার দিকে মুখ ফেরাল। শীতের রাতে হালকা কুয়াশার ভেতর দিয়ে পিছিয়ে পড়ছিল শহর। তার মনে হচ্ছিল, সে যেন নিজের পুরনো জীবনটাকেই ধীরে ধীরে পিছনে ফেলে যাচ্ছে।
গাড়ি যখন প্রথম গ্রামাঞ্চলে ঢুকল, বাইরে চাঁদের আলোয় চাষের জমি চকচক করছিল। দূরে কোথাও পুকুরের ধারে কিছু নাম না-জানা গাছ, আবার কোথাও দিগন্তে ছায়াময় ছাউনির মত বন।
হঠাৎ একটা স্টেশন এলো—জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই সে দেখল, এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন একটা কোলের শিশুকে নিয়ে। পাশেই ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে একটা বিছানা পেতে। হঠাৎ মনে হল, কতরকম জীবনের গন্ধ এই পথে ছড়িয়ে আছে, যা সে আগে কখনও টের পায়নি।
ট্রেনের ভেতরে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, ইরাবতী তখনও একা বসে, বাইরের অন্ধকারে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছিল। সে ডায়েরি বের করল। প্রথম পাতায় লিখল—
“আজ থেকে আমার প্রথম সমুদ্রযাত্রা শুরু হল। আমি জানি না, সমুদ্র কেমন, তার গর্জন কতটা ভয়ংকর বা শান্ত, কিন্তু আমি জানি, এই যাত্রা আমার মনের ভিতর একটা চিরস্থায়ী ঢেউ তোলে দিয়েছে।”
মা এসে পাশে বসে বললেন, “ঘুমাবি না? কাল সকালেই পৌঁছে যাব।”
ইরাবতী হেসে বলল, “মা, তুমি বুঝবে না। আমি সমুদ্র দেখতে যাচ্ছি, ঘুমালে তো স্বপ্ন দেখব—তবে চোখে দেখে কী করে বুঝব!”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “সমুদ্র স্বপ্ন নয় রে মা, সে জেগে থাকা বিস্ময়।”
চোখ দুটো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে এলো। ট্রেনের দুলুনি আর মাঝে মাঝে ভেসে আসা হকারদের ঘুমঘোরে ডাকা শব্দ—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত আবেশে ডুবে গেল ইরাবতী।
ঘুমের ভেতরেও সে যেন দেখতে পেল—একটা বিরাট জলরাশি, দূরে ঢেউ এসে তার পায়ের কাছে ভেঙে পড়ছে। সাদা ফেনা গড়িয়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে। সে দাঁড়িয়ে আছে একা, বালুর উপরে, আর নীল আকাশে উড়ছে শত শত পাখি।
আরও একবার তার মনে পড়ল সেই লাইন—“সমুদ্র এক জীবন্ত গল্প”।
সকালবেলা ট্রেন যখন পুরীর স্টেশনে ঢুকল, তখন সূর্য ঠিক উঠে আসছে আকাশে। একটা মিষ্টি নোনতা গন্ধ, হাওয়ার ভিতর নরম একটা আদ্রতা আর একটু রুক্ষ কেশ গন্ধ—ইরাবতী জানত না ঠিক কীভাবে বুঝবে, কিন্তু তার মনে হল, এই গন্ধ আগে কখনও পায়নি সে। এ যেন সমুদ্র তার আগমন বার্তা দিয়ে দিল।
বাবা বললেন, “এই তো, আমরা চলে এসেছি পুরী। চলো, নতুন শহর তোমায় ডাকছে!”
ইরাবতী ব্যাগের চেন টেনে দিল, ডায়েরিটা আলতো করে রাখল সাইড পকেটে। এবার সে সত্যি এক নতুন পৃথিবীর দিকে পা বাড়াবে। এই যাত্রা শুধু পুরীতে নয়, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের দিকেও।
পর্ব ২: পুরীর সকাল, এক রঙিন বিস্ময়
ট্রেন থেকে নামতেই প্রথম যে জিনিসটা ইরাবতীর মনে জায়গা করে নিল, তা হল বাতাস। একটা অদ্ভুত নোনতা গন্ধে ভরা হাওয়া, হালকা আর্দ্রতা আর ঝাপসা রোদ—যা কলকাতার শুকনো, ধুলো-মাখা বাতাসের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ইরাবতী ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিল, কিন্তু তার মন তখন স্টেশন চত্বরে নয়, যেন কানে কানে বলছে—“সমুদ্র… আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি দেখতে পাবে সেই বিশাল জলরাশি!”
বাবা একটা অটো বুক করলেন। ইরাবতীরা হোটেল বুক করেছিল সমুদ্রের একদম কাছে—মরিন ড্রাইভের লাগোয়া একটা ছোট, পুরনো হোটেল। অটো চলতে চলতে রাস্তার দুই ধারে চোখ বোলাতে লাগল ইরাবতী। সবুজ-হলুদ রঙের ছোট ছোট দোকান, নারকেলের খোলা, শুকনো মাছের গন্ধ, আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা চশমা আর ক্যামেরা হাতে পর্যটকরা—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত চঞ্চলতা।
হোটেলে পৌঁছে মা বললেন, “চলো, আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নিই, তারপর সমুদ্র দেখা যাবে।” কিন্তু ইরাবতীর মন তো তখন জানলার বাইরে, যেখান থেকে দূরে নীল জলরাশির একটুখানি দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু সে জানে, ভালো কিছু পেতে হলে ধৈর্য ধরতেই হয়।
চা খেয়ে, একটু বিশ্রাম নিয়ে, ফ্রেশ হয়ে সবাই যখন তৈরি হল, তখন সকাল প্রায় সাড়ে ন’টা। বাবা বললেন, “চলো, এবার চল সমুদ্রের দিকে।”
রাস্তা পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় হোটেলের গলি শেষ হয়ে এল। ইরাবতীর বুক কাঁপছে। সে জানে, আর কয়েক কদম পরেই যা দেখতে পাবে, তা তার জীবনের সবথেকে বড় বিস্ময় হতে চলেছে।
এবং ঠিক তখনই…
আকাশের রঙ নীল-সাদা ছাপা কাগজের মতো, সামনে সীমাহীন জলরাশি, আর ক্রমাগত আছড়ে পড়ছে ঢেউ। ইরাবতী থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তার মুখ হাওয়ায় ঢেকে যাওয়া চুলে আড়াল হয়ে গেলেও চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। মা বললেন, “এই যে, স্বপ্নের সমুদ্র!”
কথা বলতে পারল না ইরাবতী। শুধু দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। ছোট ভাই ঈশান তো দৌড়ে বালুর ওপর গড়িয়ে পড়ল। বাবা ক্যামেরা তুললেন, মা বললেন, “চলো, বসে পড়ি।”
কিন্তু ইরাবতী হাঁটতে লাগল একা, ধীরে ধীরে জলের কাছে। ঢেউ এসে পায়ের গোড়ালি ছুঁয়ে ফিরে যাচ্ছে। আবার আসছে। যেন কেউ এসে বলছে, “এসো, ভয় পেও না।”
ইরাবতী এক পা, দুই পা করে ঢুকতে লাগল জলে। কিন্তু এই প্রথম সে বুঝল, সমুদ্র শুধু দেখতে নয়, অনুভব করবার জায়গা। সেই গর্জনের শব্দ, বাতাসের চাপ, ঢেউয়ের ধাক্কা—সব মিলিয়ে একটা অনুভূতির বিস্ফোরণ।
“বুক ভরে নিঃশ্বাস নাও,” বলল বাবা।
সে বলল না কিছু, শুধু চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল ঢেউয়ের মাঝে।
এরপর সবাই মিলে একটা নারকেল জল খেল। দোকানদার হেসে বলল, “ম্যাডাম, প্রথম বার?”
ইরাবতী মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই সে বলল, “ভালো করে দেখবেন, এই সমুদ্র অনেক কথা বলে।”
দুপুরে ফিরে এসে হোটেলের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ডায়েরি খুলল ইরাবতী। লিখল—
“আজ আমি এক নতুন পৃথিবীর সামনে দাঁড়ালাম। এই পৃথিবী কোনো বইতে নেই, কোনো গল্পে নেই, কোনো স্ক্রিনেও না। এই পৃথিবী শুধুই আমার চোখের জন্য। ঢেউ ছুঁয়েছে আমার পা, আর আমি প্রথমবার জীবনের অজানা সৌন্দর্যকে ছুঁয়ে দেখলাম।”
বিকেলে সবাই মিলে আবার বের হল সমুদ্রের ধারে। এবার আর হঠাৎ বিস্ময় নয়, এবার এক আত্মীয়তা। যেন সেই সকালে যে ভয় মিশে ছিল চোখে, এখন তা আলগা হয়ে গিয়েছে।
হাতে একটা আইসক্রিম নিয়ে বসে ছিল ইরাবতী বালির ওপর। চারপাশে বেলুন, খেলনা, বেলভর্তি শঙ্খের দোকান। একটা ছোট মেয়ে বালির মধ্যে ঘর বানাচ্ছে। একটু দূরে একদল কলেজ ছাত্র গান গাইছে। সব কিছু যেন একসাথে জীবনের ছবি হয়ে উঠছে।
“মা,” বলল ইরাবতী, “আমাদের স্কুলের বইয়ে শুধু সমুদ্রের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। কিন্তু অনুভূতিটা তো কেউ লেখে না, তাই না?”
মা হেসে বললেন, “সেই অনুভূতি তো তোকে এখনই লিখে ফেলতে হবে।”
রাত্রে খেতে বসে ইরাবতী একবার চুপ করে বলল, “মা, আমি বড় হয়ে হয়ত সমুদ্রের শহরে থাকব।”
মা মুচকি হেসে বললেন, “থাকিস, তবু প্রথম সমুদ্র দেখা কিন্তু সব সময় এই পুরীর সকালে মনে পড়ে যাবে।”
পর্ব ৩: বালির দেশে হারিয়ে যাওয়া
সকালের সূর্য তখনও মাথার উপর উঠে আসেনি। হালকা হাওয়ার সঙ্গে সমুদ্রের গর্জন যেন ভোরের এক অন্য ভাষা। হোটেলের জানালার পর্দা সরিয়ে ইরাবতী তাকিয়ে রইল বাইরে। তার মন যেন এক অন্য ছন্দে বাজছে। আজ তারা সমুদ্রস্নানে যাবে—সত্যিকারের জলে নেমে, ঢেউয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হবে।
মা আগেই সাবধান করেছিলেন, “পুরীর ঢেউ কিন্তু সহজ নয়। সাবধানে থাকিস।”
বাবা হেসে বলেছিলেন, “কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। সমুদ্র যত বড়ই হোক, তাকে আলতো করে ছুঁয়ে দেখা শিখতে হয়।”
ইরাবতীর মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তেই সে ছুটে গিয়ে জলে নেমে পড়ে। কিন্তু সে জানত, অপেক্ষার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে গভীর আনন্দ।
নাশতা সেরে সবাই যখন তৈরি হয়ে বেরোল, তখন আকাশে হালকা রোদ। বালির উপর দিয়ে হেঁটে চলল তারা, সঙ্গে একটা ছোট ব্যাগে শুকনো পোশাক, তোয়ালে, সানস্ক্রিন আর মায়ের টোকা দেওয়া নারকেল তেল।
ইরাবতী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। তার মনে হচ্ছিল, ঢেউ যেন তাকে ডাকছে, আবার পরীক্ষা নিচ্ছে—তুই কতটা সাহসী?
সে ধীরে ধীরে জলে নামল। প্রথমে গোড়ালি, তারপর হাঁটু। হঠাৎ একটা ঢেউ এসে তার পায়ে আছড়ে পড়ল। সে সামলে নিল নিজেকে, কিন্তু বুঝল—এটা খেলার জায়গা নয়, সম্মানের জায়গা।
বাবা পেছন থেকে বললেন, “আয়, একসাথে দাঁড়াই।”
ইরাবতী বাবার হাত ধরে আরও একটু ভিতরে এগোল। ছোট ভাই ঈশান তো আগেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে ঢেউয়ের কোলে।
একটা বড় ঢেউ এল। তার জল ছিটকে গিয়ে ইরাবতীর মুখ ভিজিয়ে দিল। সে চোখ বন্ধ করে হাসল। এই তো সেই মুহূর্ত—যার জন্য এতদিনের অপেক্ষা ছিল। টিভির পর্দা আর বইয়ের পাতার বাইরে এই জলটা ঠিক কেমন, সে এখন বুঝতে পারছে।
কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে, তারা বালির উপর ফিরে এল। গায়ে তোয়ালে মুছে, রোদে শুয়ে পড়ল ইরাবতী। রোদটা যেন শরীরের ভেতরে ঢুকে হাড় পর্যন্ত গরম করে দিচ্ছে, অথচ তা সুখের।
সে শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকাল। নীল আকাশে দু’তিনটে মাছরাঙা উড়ছে। দূরে সমুদ্রের গর্জন আর কাছাকাছি দোকানদারদের হাঁক—“শঙ্খ নিন, ঝিনুক নিন!”
ইরাবতী উঠে বসল। মা বললেন, “শুধু রোদে পোড়া হয়ে যাবি না?”
সে হেসে বলল, “না মা, আজ আমি বালির দেশ ঘুরে দেখতে চাই।”
এরপর সে একা একা হাঁটতে লাগল বালির উপর দিয়ে। এক জায়গায় দেখল, একজন বালির উপর বিশাল এক দুর্গ তৈরি করছে। শিশু আর তাদের বাবা-মা মিলে গড়ছে বালির ঘর, দরজা, জানালা, এমনকি ছোট শঙ্খ দিয়ে সাজানো বারান্দাও।
“তুমি চাও তো, আমিও একটা বানাতে পারি,” হেসে বলল এক ছোট মেয়ে।
ইরাবতী হাঁটু গেড়ে বসল ওর পাশে। বলল, “চলো, দুজনে মিলে বানাই।”
তারা শুরু করল। বালির উপর ছেলেমানুষি হাতে আঁকা ছবি, জল দিয়ে ভিজিয়ে তাতে গেঁথে দেওয়া ঝিনুক। সময় যেন উড়ে যাচ্ছিল।
মেয়েটির নাম ছিল দিয়া। ওরা খুব অল্প সময়েই বন্ধু হয়ে গেল। সমুদ্রের ধারে বসে তারা কথা বলতে লাগল—কে কোন স্কুলে পড়ে, কার প্রিয় বই কী, কাকে বড় হয়ে কী হতে ইচ্ছে করে।
“তুমি কি লেখিকা হতে চাও?” দিয়া জিজ্ঞেস করল।
ইরাবতী বলল, “হয়তো… কিন্তু তার চেয়ে বেশি, আমি এমন কিছু লিখতে চাই যা মানুষ অনুভব করতে পারে।”
দিয়া হেসে বলল, “তবে তোমার লেখা শুরু হোক এই বালির দুর্গ দিয়ে!”
সন্ধেবেলা মা ডাকতে এলেন, “ইরাবতী, অনেক হয়েছে। এবার চলো।”
ও দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। ঢেউ এসে সেই বালির দুর্গটা ধীরে ধীরে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ওর মনে হল, এই তো জীবন—যা আমরা গড়ি, তা সময় ভাসিয়ে নেয় ঠিকই, কিন্তু গড়া সময়ের অনুভূতি কোথাও থেকে যায়।
রাত্রে হোটেলে ফিরে ইরাবতী ডায়েরি খুলে লিখল—
“আজ বালির দেশে আমি এক বন্ধুত্ব খুঁজে পেলাম, একটা ঢেউয়ের ছোঁয়ায় নিজের ভয়কে সরিয়ে রাখলাম। হয়তো সমুদ্র তার বিশালতায় অনেক কিছু গ্রাস করে, কিন্তু সে-ই আবার শেখায়—যা তৈরি করি, তাকে ভালোবেসে যেতে হয়। যতক্ষণ না সে নিজে এসে ভেঙে দিয়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে আমাদের গল্প হয়ে থাকে।”
পর্ব ৪: মন্দিরের সিঁড়ি ও পুরনো ইতিহাস
পুরী মানে শুধু সমুদ্র নয়, পুরী মানে জগন্নাথদেবের শহর। সমুদ্রের ঢেউ যেমন শহরের পাশে সর্বক্ষণ জেগে থাকে, তেমনই শহরের প্রাণ রয়েছে সেই প্রাচীন মন্দিরে, যাকে ঘিরে একাধারে ইতিহাস, ধর্ম আর মানুষের বিশ্বাস ঘন হয়ে জমে আছে শত শত বছর ধরে।
সকালে মা বললেন, “আজ আমরা জগন্নাথ মন্দির যাব। মাথায় ঘোমটা দিতে হবে, পায়ের জুতো বাইরে খুলে রাখতে হবে, ঠিক আছে?”
ইরাবতী মাথা নেড়ে জানাল, সে প্রস্তুত। এই তো সেই ইতিহাস, যেটা সে বইয়ে পড়েছে। এখন তা দেখতে পাবে নিজের চোখে।
মন্দির চত্বরে পৌঁছানোর আগেই সে অভিভূত হয়ে গেল। এত মানুষ! এত রঙ! এত গন্ধ! সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে মনে হচ্ছিল, যেন সে একটা সময়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে, যেটা এখনকার নয়—যেটা বহুকাল আগের।
সিংহদ্বারের উঁচু কাঠের ফটক পেরিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল বিশাল পাথরের স্তম্ভ, যার গায়ে খোদাই করা আছে নানা পৌরাণিক দৃশ্য। কোথাও নারায়ণ, কোথাও গরুড়, কোথাও যুদ্ধরত রাজারা। ইরাবতীর মনে হল, এই মন্দির শুধু দেবতার জন্য নয়, ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও।
হঠাৎই চারপাশের আলো-আঁধারির মধ্যে সে দেখতে পেল মূল মন্দির—চূড়ায় ওড়া পতাকা, ঢাকের আওয়াজ, ধূপের গন্ধে ঘোলাটে বাতাস আর মানুষের ভক্তির স্রোত।
মা বললেন, “এই যে দেখ, ওই পতাকাটা প্রতিদিন একজন পুরোহিত উঁচু করে ওড়ান। হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এই নিয়ম চলছে। ভাবতে পারিস?”
ইরাবতী ভাবতে পারছিল না—তবে অনুভব করছিল। বাতাসের গায়ে একটা ভারী গাম্ভীর্য ছিল। মন্দিরের প্রতিটি কোণ যেন কথা বলছিল, “আমি শুধু পাথর নই, আমি যুগের সাক্ষী।”
ভেতরে প্রবেশ করার আগে একজন পাণ্ডা এগিয়ে এসে বললেন, “মা, ভোগ নিবেদন দেবেন তো?”
বাবা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। প্রসাদ নেওয়ার সময় ইরাবতীর মনে হল, এটা শুধু খাবার নয়—এটা সেই সংস্কৃতির ছোঁয়া, যেটা শুধু এই মন্দিরেই পাওয়া যায়।
মন্দিরের মূল গর্ভগৃহে দাঁড়িয়ে ইরাবতী প্রথমবার দেখল—জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। তাদের চেহারা আলাদা, চোখ বড় বড়, চেহারায় একরকম নির্লিপ্তি। কিন্তু সেই নির্লিপ্তিতেই যেন ছিল এক অদ্ভুত টান।
ইরাবতীর মনে হল, এ এক অদ্ভুত সাক্ষাৎ। কোনো শব্দ নেই, তবু যেন ঈশ্বর নিজে বলে উঠলেন, “তুই বুঝতে এসেছিস, ভালোবাসতে এসেছিস—তাহলে থাক।”
দুপুরে মন্দিরের পাশেই সবাই মিলে প্রসাদ খেল। কাঁসার থালায় ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি, পাঁপর, চাটনি আর মিষ্টির স্বাদ যেন সাধারণ নয়। ইরাবতীর চোখে জল এসে গেল।
“মা,” সে বলল, “এই খাবারটা শুধু স্বাদে নয়, মনে হচ্ছে যেন এর মধ্যে সময় মিশে আছে।”
মা হেসে বললেন, “সত্যি বলেছিস। জগন্নাথের ভোগ হাজার বছরের চর্চা—এই রন্ধনপ্রণালী, এই পরিবেশন, সবকিছুতেই আছে ইতিহাসের ছোঁয়া।”
খাওয়ার পর হালকা হাঁটতে হাঁটতে তারা গেল মন্দিরের পেছনের দিকে—সেখানে তুলনায় নির্জন, একটা পাথরের সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। একজন বৃদ্ধা বসেছিলেন কোলে ঝাঁপি নিয়ে।
তিনি বললেন, “মা, একখানা শঙ্খ নিন না, নিজের হাতে কুড়িয়ে এনেছি।”
ইরাবতী একটি ছোট শঙ্খ বেছে নিল, আর বৃদ্ধার মুখে সেই হাসি যেন স্বপ্নের মতো।
সে বুঝল, এই শহর শুধু মন্দির বা সমুদ্র নয়, এই শহর মানুষ, তাদের বিশ্বাস, আর একটা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের মিশ্রণ।
বিকেলবেলা তারা ফিরে এল হোটেলে। বাবা, মা, ঈশান একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল। কিন্তু ইরাবতী জানালার পাশে বসে ডায়েরি খুলল।
সে লিখল—
“আজ আমি এক হাজার বছরের সিঁড়ি বেয়ে নেমে গিয়েছিলাম এক গল্পের জগতে। যেখানে প্রতিটি পাথর কথা বলে, প্রতিটি ধূপের গন্ধে আছে শতাব্দীর স্মৃতি। জগন্নাথদেবকে দেখে মনে হল, তিনি কেবল দেবতা নন, এক বিশাল সময়ের ধারক। আমি তাঁর চোখে তাকিয়ে বুঝতে চাইলাম—আমি কে, কোথা থেকে এসেছি, আর কী খুঁজছি।”
ডায়েরি বন্ধ করে ইরাবতী জানত, তার পুরীর যাত্রা আজ আরও গভীর হয়ে উঠল।
পর্ব ৫: শেষ বিকেলের ঢেউ
পুরীতে থাকার শেষ বিকেল। হোটেলের ঘরের জানালা দিয়ে ইরাবতী তাকিয়ে ছিল সমুদ্রের দিকে। সে জানত, কিছু কিছু বিদায় কষ্টের নয়, বরং মিষ্টি হয়। কারণ তাদের মধ্যে থাকে ফিরে আসার এক অলিখিত প্রতিশ্রুতি।
সেদিন সকালের সমুদ্রস্নান বা মন্দির ঘোরার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। শুধু এই শেষ বিকেলটা নিজের মতো করে কাটাতে চেয়েছিল ইরাবতী। মা বলেছিলেন, “চলো আজ সন্ধ্যেটা সমুদ্রে বসেই কাটাই।”
ইরাবতী যেন এই প্রস্তাবের অপেক্ষাতেই ছিল।
চারটের দিকে সবাই বেরোল। পথে নারকেল জল, ঝিনুকের দোকান আর ভেলপুরির গন্ধ—সব ছিল, কিন্তু আজ যেন সেসবের প্রতি মন ছিল না ইরাবতীর। তার চোখ খুঁজছিল ঢেউয়ের দিকে চেয়ে থাকা সেই বিশেষ জায়গাটা, যেখানে সে প্রথম পা ভিজিয়েছিল।
আজ সমুদ্র ছিল শান্ত। বাতাসে অতটা হুংকার ছিল না, ঢেউ ছিল ধীর, কিছুটা যেন ক্লান্ত। ইরাবতী বালুর ওপর বসে রইল, দু’পা ছড়িয়ে, মাথার ওপর খোলা আকাশ, সামনে অনন্ত জলরাশি।
সে চুপ করে বসে ছিল। কথা বলার প্রয়োজন ছিল না। শুধু বাতাসের শব্দ, ঢেউয়ের তাল, আর মনে জমে থাকা অসংখ্য অনুভব—এই নিয়ে সে একা।
বাবা হঠাৎ বললেন, “তুই আজ অনেক বড় হয়ে গেলি রে, ইরা।”
সে একটু অবাক হয়ে বলল, “কেন?”
“এই সমুদ্র তোদের মতো ছেলেমেয়েদের বড় করে দেয়। শুধু পড়া দিয়ে নয়, এইভাবে পৃথিবীকে ছুঁয়ে দেখেই মানুষ বড় হয়।”
ইরাবতী কিছু বলল না, শুধু মাথা নিচু করে বালিতে আঙুল চালিয়ে চলল। একরকম প্যাটার্ন আঁকছিল, আবার ঢেউ এসে তা মুছে দিচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পর সে একা হাঁটতে লাগল সমুদ্রের ধারে। দূরে কয়েকটা কাক উড়ছিল। এক বৃদ্ধ দাদু একটি ছোট ছেলেকে বোঝাচ্ছিলেন—কীভাবে ঢেউ আসে, আর কীভাবে যায়।
ইরাবতীর মনে হল, এই ছোট ছোট দৃশ্যই জীবনের বড় শিক্ষা।
হঠাৎ একটি ছোট ছেলেমেয়ে বালির মধ্যে “ভালোবাসি মা” লিখে ফেলল। ঢেউ এসে তা ধুয়ে দিল। কিন্তু মায়ের মুখে যে হাসি ফুটল, তা কিছুতেই মুছে যায়নি।
ইরাবতী দাঁড়িয়ে থেকে বুঝল, “কিছু কথা হয়ত মুছে যায় বালির উপর থেকে, কিন্তু তার আবেগ কখনও মুছে যায় না।”
তাও সে হাঁটছিল। হঠাৎ তার পায়ের কাছে একটা ছোট শঙ্খ এসে থেমে গেল। সে তুলল সেটা, দেখল ভেতরে হালকা গোলাপি আভা, আর একটা ছোট ফাটল।
তবু শঙ্খটা সুন্দর।
সে বুঝল—ভাঙার মধ্যেও সৌন্দর্য আছে। হয়তো জীবনও এমনই—একটু ফাটল থাকা সত্ত্বেও, সে সম্পূর্ণ।
রোদ ক্রমে হালকা হয়ে এল। আকাশে লাল, কমলা, বেগুনি রঙের খেলা। সমুদ্রের রঙও যেন একটু ভারী, একটু গভীর হয়ে উঠল।
সেই সন্ধ্যায় ইরাবতী একটুও কথা বলেনি কারো সঙ্গে। সে শুধু চেয়েছিল, এই মুহূর্তটা নিজের করে রাখতে। না ফেসবুকে ছবি দিয়ে, না ক্যামেরায় বন্দি করে—শুধু নিজের মনে।
হোটেলে ফেরার পথে মা বললেন, “কাল সকালেই ফিরব… খারাপ লাগছে?”
ইরাবতী বলল, “খুব বেশি না… কারণ আমি জানি, আবার আসব। হয়তো এই জায়গাতেই, আবার এই বিকেলটা ফিরে আসবে আমার মধ্যে।”
রাত্রে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে ডায়েরিটা খুলল সে। শঙ্খটা রেখে দিল একটা ছোট কাগজে জড়িয়ে। তারপর লিখল—
“শেষ বিকেলের এই আলো, এই নরম ঢেউ, এই হাওয়া—সবটাই যেন আমাকে বলছে, ‘তুই এখন অনেকটা নিজেকে চিনেছিস’। সমুদ্র শুধু একটা জায়গা নয়, একটা আয়না—যার মধ্যে নিজেকে দেখা যায় একটু পরিষ্কার করে। আমি আজ সেই আয়নায় নিজের ছায়া দেখেছি।”
পর্ব ৬: ফিরে দেখা, ফেলে আসা
পুরীর শেষ রাতটা কেমন যেন অন্যরকম ছিল। হোটেলের ঘরে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লেও ঘুম এল না ইরাবতীর। জানালার কাঁচে কানে এল সমুদ্রের গর্জন—কিছুটা গম্ভীর, কিছুটা শান্ত, যেন সে বিদায়ের আগে নিজের ভাষায় কিছু বলছে।
ইরাবতী উঠে জানালার কাছে দাঁড়াল। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিন্তু তাতেও সমুদ্রের উপস্থিতি অনুভব করা যায়। চোখ বুজল সে। মন মনে বলল, “আমি আবার আসব। তোমাকে শুধু দেখব না, বুঝব আরও গভীরে।”
ভোরবেলা উঠে প্রস্তুতি শুরু হল ফেরার। ব্যাগ গুছোনো, চেকআউটের হ্যাপা, ছোট ভাইয়ের শেষবারের মত আইসক্রিম খাওয়ার আবদার—সব মিলিয়ে একটা ব্যস্ত সকালের ভেতরে ছিল একরাশ নিরবতা।
কেউ বলছিল না, কিন্তু সবাই জানত—এই জায়গাটা আজ থেকে স্মৃতির খাতা হয়ে যাবে।
ট্রেনে ওঠার পর জানালার পাশে বসে রইল ইরাবতী। বাবা, মা, ঈশান সবাই তখন নিজেদের মধ্যে গল্প করছে, খাবার খুলছে। কিন্তু সে চুপ করে বাইরে তাকিয়ে রইল। ট্রেন যখন ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল, তার চোখে জল জমে এল। সমুদ্র দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু তার গন্ধটা যেন এখনও মিশে আছে চুলে, জামাকাপড়ে, মনের ভেতর।
বাবা হেসে বললেন, “কি রে, মন খারাপ?”
ইরাবতী বলল না কিছু, শুধু মৃদু হাসল।
মা বললেন, “তোর চোখে যে কিছু গল্প লুকিয়ে আছে।”
সে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি লিখব। একদিন এই সমুদ্রের সঙ্গে আমার দেখা, আমার অনুভব—সব লিখে রাখব।”
ট্রেন ছুটছে গ্রাম পেরিয়ে। জানলার বাইরে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, মাঠে চাষের লোক, দূরে পাখির ঝাঁক। কিন্তু ইরাবতীর চোখে তখন পুরীর ছবিগুলো ঘুরে ঘুরে আসছে—
🔹 প্রথম দেখা সমুদ্র
🔹 জগন্নাথের মন্দির
🔹 বালির দুর্গ
🔹 শেষ বিকেলের আলো
🔹 ঢেউয়ের গর্জনে নিজেকে হারিয়ে ফেলার সেই মুহূর্ত
সে ডায়েরি খুলে লিখল—
“এই কয়েকটা দিনে আমি এক অন্যরকম আমি-কে চিনেছি। পুরী আমাকে শুধু সমুদ্র দেয়নি, দিয়েছে একটা আত্মপরিচয়ের দিশা। হয়তো আমি এখনও শিশুই, কিন্তু এই শিশুটার মনে এখন একটা বিশাল জলরাশির গভীরতা জন্মেছে।”
ঘরের পথ যখন ধরা পড়ল, সন্ধ্যে নেমেছে শহরে। ছাদে বসে ইরাবতী যখন পুরী থেকে আনা সেই ছোট শঙ্খটা হাতে নিয়ে বসেছিল, মা এসে বললেন,
“তুই জানিস, সমুদ্রের ঢেউ কিন্তু সবসময় ফিরে আসে… ঠিক যেমন তুই আবার যাবি।”
ইরাবতী বলল, “হ্যাঁ মা, আমি আবার যাব—সেই পুরীতে, সেই ঢেউয়ের কাছে। কারণ প্রথম ভালোবাসা কোনোদিন মুছে যায় না, তাই না?”
সেদিন রাতের আকাশে তারা ছিল অনেক। ইরাবতীর মনে হচ্ছিল, সমুদ্র তার ভেতরে এখনো বয়ে চলেছে—শুধু ঢেউ নয়, সেই গর্জন, সেই ভালোবাসা, সেই একান্ত নিজস্ব মুহূর্তগুলো।
এভাবেই শেষ হল ইরাবতীর প্রথম সমুদ্রযাত্রা। কিন্তু শুরু হল একটা নতুন জীবনের, যেখানে সে বুঝেছে—পৃথিবী শুধু বইয়ে লেখা নয়, অনুভবে গড়া।
সমাপ্ত




