Bangla - হাস্যকৌতুক

আলতা বৌ ও স্মার্টফোন

Spread the love

বিমল রায়চৌধুরী


কুলতলি গ্রামের বিকেলটা ছিল একদম শান্ত। হালকা হাওয়া বইছে, নারকেল গাছের পাতারা ঝিরঝির করে দুলছে। গ্রামের প্রধান রাস্তাটা পেরিয়ে বাঁশবাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে আসছেন এক মহিলার ছায়া। সিঁথিতে গাঢ় সিঁদুর, হাতে কাজ করা শাঁখা-পলা, চোখে আত্মবিশ্বাস। আর সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়—তার হাতে চকচকে একটা স্মার্টফোন!

হ্যাঁ, উনি আলতা বৌ। পুরো গ্রামের প্রথম মহিলা যিনি নিজে উপার্জন করে কিনেছেন একটা স্মার্টফোন। আজ থেকে দুই মাস আগে সিধু ভাইয়ের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে উনি বলেছিলেন, “দাদা, ফোনটা কতো বলো তো?”

সিধু ভাই তো অবাক, “বৌদি, এইটা তেনার ফোন! শহরের লোকেরা চালায়, ফেসবুক-ইউটিউব করে। তোমার কি হবে ও দিয়ে?”

আলতা বৌ একগাল হেসে বলেছিলেন, “তুই দে ভাই, দেখবি আমি কী করি!”

সেই থেকে শুরু। দিনের বেলায় মাঠে ঘাস কাটা, বিকেলে বাড়িতে সেলাই, রাতে ছেলেমেয়েদের পড়ানো—সব মিলিয়ে আলতা বৌ প্রতি পয়সা জমিয়েছেন। দুই মাস পরে, আজ তিনি এসেছেন ফোন কিনতে। দোকান থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে চোখে জল এসে গিয়েছিল তার।

ঘরে ফেরার পথে সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। কেউ বলছিল, “ওরে মা, এখন বৌরাও ফোন চালাবে?” কেউ আবার ফিসফিস করে, “কেন, ও কি বিয়ে করেই শুধু ঘর সামলাবে নাকি?”

আলতা বৌ সেদিকে কানে না দিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরে এসে বললেন, “আমিও এখন ডিজিটাল দীদিমণি!”

পরদিন সকালবেলা গোটা বাড়ি মাথায় তুললেন তিনি।

“এই দ্যাখো দ্যাখো, এইখানে ক্যামেরা, এইখানে ইউটিউব! শুনছো না, এইখানে সব রান্নার ভিডিও!”

স্বামী গোপাল হাঁ করে তাকিয়ে। বৌ ফোন ঘাঁটছে, টাচ করে করছে জাদু! ছেলেমেয়ে দুই কোণে বসে বলছে, “মা, সাবধানে, কিছু ডিলিট কইরো না।”

আলতা বৌ বসলেন উঠোনে, ফোনে খুললেন “How to use smartphone in Bengali”—এক নতুন যাত্রা শুরু হল। আজ সে কুলতলি গ্রামের একজন নতুন নারী, যিনি নিজের আত্মবিশ্বাস আর সাহসের জোরে ছুঁয়েছেন প্রযুক্তির দরজা।

দু’দিন পরে বাড়ির উঠোনে মহিলাদের আড্ডা বসেছে। পঞ্চায়েত সদস্যার বৌ জ্ঞানু বলল, “শুনেছো, আলতা বৌ নাকি ফোনে রান্না শেখে?”

রেনু দিদি বলল, “আমি তো দেখলাম, সে কানে হেডফোন দিয়ে হাঁড়িতে ঝাল দিচ্ছে! ফোনের মধ্যে একটা মাইয়া বলছে—‘এখন রসুন বাটা দাও!’”

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। কিন্তু হাসির মাঝেও একটা স্বীকারোক্তি ছিল—আলতা বৌ যা করেছে, সেটা সাহসের কাজ।

ফোনটা অবশ্য প্রথমদিনেই চুপ করে বসে ছিল না। চার্জ দেওয়া শেখা, মোবাইল ডেটা খোলা, একবার ভুল করে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে সারারাত আলো জ্বালিয়ে রাখা—এই সব ছিল শিক্ষার শুরু।

ছেলে তপন বলল, “মা, এইটা হোয়াটসঅ্যাপ, এইখানে ছবি পাঠাই, কথা বলি। আর এইখানে লেখা থাকে মেসেজ।”

আলতা বৌ মাথা নেড়ে বললেন, “এইটা তো কেরামতি! আগে জানলে অনেক আগেই কিনতাম।”

সন্ধ্যাবেলায় তিনি বারান্দায় বসে ভিডিও খুললেন। নাম—“How to make perfect alu chop in Bengali”। ভিডিওর মধ্যে এক মহিলা হাঁড়িতে ডাল ডাল করে মসলা দিচ্ছে।

আলতা বৌ খাতা কলম নিয়ে বসলেন—লিখছেন, “মেথি দানা – আধা চা চামচ, জিরে – ১ চা চামচ, সরষের তেল – ২ টেবিল চামচ…”

রাত্তিরে সেই আলু চপ বানালেন। গন্ধে পাড়াপাড়া মাথায় তুলেছে।

পাঁচালি বৌ দরজা খুলে বলল, “কী গন্ধ গো বৌদি! কলকাতা হোটেলের মত লাগছে!”

আলতা বৌ গর্বে বললেন, “ইউটিউব থেকে শিখেছি! ফোনটা না থাকলে পারতাম?”

পাঁচালি বৌ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

পরদিন সকালে বাজারে যেতেই চারপাশে ফিসফাস শুরু।

“ওই যে ওই বৌটাই না ফোনে রাঁধে?”

“হ্যাঁ, উনি ফোনে গান শোনেন, আবার ফেসবুকে ছবিও দেন।”

আলতা বৌ দাঁত বের করে হাসেন।

দোকানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “বাজারে WiFi আছে?”

সিধু ভাই তো মাথা চুলকে বললেন, “ও মা, বাজারে এখন WiFi চাই!”

গ্রামে একটা ছোট ছেলে এসে বলল, “বৌদি, আমাদের মোবাইলে ফ্রি ফায়ার চলায়ে দেবে?”

আলতা বৌ বললেন, “আগে আমাকে শেখাও গুগল ম্যাপে কুলতলি কোথায় দেখা যায়, তারপর তোমার গেম!”

সন্ধ্যাবেলায় ছাদে বসে বসে নিজের ফোনে ছবি তুললেন। সেলফি! পেছনে সূর্যাস্ত, মুখে সিঁদুর মাখা হাসি।

ছবিটা দিলেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে, ক্যাপশন দিলেন—“সুখ মানে নিজের জেতা।”

পাঁচজন এসে কমেন্ট করল, “বৌদি তুমি হিরোইন!”

এরপর শুরু হলো আসল উত্তেজনা—ভিডিও কল! প্রথম যেদিন স্বামী ফোন করল, আলতা বৌ বললেন, “কী গো মুখ দেখছি না কেন? মুখ দেখাও তো দেখি।”

গোপাল সাহেব বললেন, “এবার তো আর পালানোর উপায় নেই।”

সেদিন রাতে শোবার সময় গোপাল বলল, “তোমার ফোনে তো বেশি মায়া পড়ে গেছে গো!”

আলতা বৌ হেসে বললেন, “এইটাতে যত্ন নিয়েছি, আমার নিজের হাতে কেনা। কারো দানে নয়।”

শুয়ে পড়ার সময় জানলার পাশে বসে ফোনে ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখতে লাগলেন—“কিভাবে মোবাইল দিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করা যায়?”

চোখে স্বপ্ন, কানে হেডফোন।

এই কুলতলি গ্রামের বৌ হয়তো একদিন ইউটিউব চ্যানেল খুলবে, যেখানে সে শেখাবে—‘কীভাবে চপ বানাতে বানাতে ফোনে ফেসবুক চালানো যায়।’

তখন তার নাম হবে শুধু ‘আলতা বৌ’ নয়—‘বাংলার ডিজিটাল দীদিমণি’।

অধ্যায় ২: ইউটিউব রান্না বনাম পঞ্চায়েতের রাধুনি

আলতা বৌয়ের ইউটিউব দেখে রাঁধার গল্প এখন কুলতলি জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। সকাল হোক বা বিকেল, পুকুরপাড় থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ঘর—সর্বত্র একটাই কথা, “আলতা বৌ তো এখন ইউটিউব রাধুনি!”

কিন্তু এই সফলতার মাঝেও কিছু মানুষের মন খচখচ করছে। বিশেষ করে, পঞ্চায়েতের রাধুনি খুকু বৌয়ের। ও তো বছরের পর বছর ধরে গ্রামের অনুষ্ঠানে রান্না করে আসছে—পঞ্চায়েত ভবনের পেছনের বারান্দায় খুন্তি আর হাঁড়ি সামলানোই যার পরিচয়।

“এই মেয়েটা কে হে? হঠাৎ এসে রাঁধুনি হয়ে গেলো?”—খুকু বৌ বলল, “ভিডিও দেখে সবাই রাঁধতে পারলে, তবে পাটনা রোডের বাবুর্চিরা কি ভুল?”

এই নিয়ে একদিন বৈঠক ডাকা হলো পঞ্চায়েত ঘরে। নাম দেওয়া হলো—“রান্না প্রতিযোগিতা: খুকু বৌ বনাম আলতা বৌ”! সিধু ভাই, পাঁচালি বৌ, রেনু দিদি—সবাই রীতিমতো উত্তেজিত। কেউ বলছে, “আলতা বৌ তো আধুনিক, নতুন নতুন পদ জানে!” আবার কেউ বলছে, “খুকু বৌ-এর হান্ডি কাবাবের গন্ধেই আত্মা লাফায়।”

তারিখ ঠিক হলো, স্থান পঞ্চায়েতের উঠোন। খুকু বৌ রাঁধবেন ‘দেশি কড়াই মাংস’, আর আলতা বৌ বানাবেন ‘ইউটিউব স্পেশাল চিকেন পাকোড়া’। বিচারক হিসেবে থাকবেন—গ্রামের হেডমাস্টার বাবু, পোস্ট মাস্টার কাকু, আর সিধু ভাই নিজে।

সেই দিন সকালবেলায় কুলতলির আকাশ পর্যন্ত রোমাঞ্চে কাঁপছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টল, পেছনে লেখা—“ডিজিটাল বনাম অভিজ্ঞতা”। খুকু বৌ প্রথমেই আগুন ধরিয়ে হাঁড়ি চাপালেন। পাশে আলতা বৌ ফোনে ইউটিউব চালু করে, কানে হেডফোন, বলছেন, “আচ্ছা, এখন আদা বাটা…”

পাঁচালি বৌ তো হেসেই খুন, “বৌদি রাঁধে নাকি গান শোনে বোঝা দায়!”

আধঘণ্টা পরে গোটা মাঠে একদিকে খুকু বৌয়ের মশলা কষার ঘ্রাণ, অন্যদিকে আলতা বৌয়ের পাকোড়া ভাজার খটখট আওয়াজ। দুই বৌয়ের মধ্যে রীতিমতো ঠোঁট ফসকে ঠাট্টা চলছে—

খুকু বৌ: “ভিডিও না থাকলে তো গরুটা পর্যন্ত ঝোল বানাবে না বুঝি?”

আলতা বৌ: “তুমিও তো বাবারবাড়ি থেকে শিখে এসেছিলে, আমি শিখেছি ইউটিউব থেকে! তফাত কী?”

বিচারকরা এসে বসলেন। গন্ধেই মুখে জল। খুকু বৌ-এর মাংস খেয়ে হেডমাস্টার বললেন, “একেবারে শৈশবের স্বাদ!”

আলতা বৌয়ের চিকেন পাকোড়া মুখে দিয়েই পোস্টমাস্টার কাকু চোখ বড় করে বললেন, “ওরে বাবা, কলকাতার দোকানের থেকেও ভালো!”

শেষে রায় ঘোষণা হলো—উভয়েই জয়ী! কারণ একজন অভিজ্ঞতা দিয়ে মুগ্ধ করেছে, অন্যজন প্রযুক্তির সাহায্যে চমকে দিয়েছে।

আলতা বৌ উঠে বললেন, “দেখুন, রান্না তো ভালোবাসা। মোবাইল থাক, না থাক, হৃদয় চাই। আমি শুধু প্রযুক্তিকে বন্ধু করেছি।”

খুকু বৌ একটু গম্ভীর হলেও পরে এসে বললেন, “বুঝেছি, শেখা তো থামে না। আমিও একদিন ইউটিউব দেখব।”

গ্রামের মানুষ তালি দিলো। সেদিন থেকে কুলতলি গ্রামের মেয়েরা ঠিক করল—যারা রান্না শেখে ইউটিউব দেখে, তারা একটুও কম নয়। প্রযুক্তি আর ঐতিহ্য একসাথে চলতে পারে—এই উপলব্ধি হয়তো গ্রামের নারীদের ভিতরে এক নতুন আশার আলো জ্বেলে দিল।

এবং আলতা বৌ? তিনি বললেন, “পরের সপ্তাহে আমি করব ‘ডিজিটাল চাট প্রতিযোগিতা!’”

সবাই হেসে উঠল, কেউ বলল, “এই বৌকে থামানো যাবে না রে!”

***

গ্রামে এখন আলতা বৌ মানেই এক ঘটনা। হাটে গেলে হকাররা বলে—“বৌদি, আজ কী ভিডিও দেখে রান্না হবে?” শ্বশুর বাড়ির পাড়ার মেয়েরা বলে—“তোমার ফেসবুকে ছবি দেখি রোজ!” এমনকি খুদে ছেলেরা এসে বলে, “আলতা বৌ, আমাদের সেলফি তুলিয়ে দাও না!”

সব মিলিয়ে আলতা বৌ এখন কুলতলির সেলিব্রিটি। কিন্তু সেলিব্রিটির জীবনে যে সব সময় রোদ ঝলমলে আকাশ থাকে, তা তো নয়।

একদিন সকালে রান্না ঘর থেকে ধোঁয়া উড়ছে, কড়াইতে ডিম পোচ ফোটাচ্ছে, আর হাতে ফোন—অবশ্যই ইউটিউব খোলা। হঠাৎ গোপাল মিয়াঁ হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে চেঁচিয়ে উঠলেন, “এই যে, এখন কি ফোনে রান্না করবি না সংসার সামলাবি?”

আলতা বৌ কিছু না বলে ফোনটা চুপচাপ বন্ধ করে রেখে দিলেন।

গোপাল বসলেন খাটে, গলা চড়ালেন, “বৌদের হাতে ফোন মানেই সমস্যা। হাটে গেলে নাম শুনি, বাজারে গেলে লোক হাসে। তুই তো এখন তারকা! কিন্তু ঘরে আমার কে?”

আলতা বৌ গলা নিচু করে বললেন, “তুমি আমার কিচ্ছু বুঝতে পারো না। আমি তো কিছু ভুল করিনি, শুধু একটু শিখছি।”

গোপাল বললেন, “কী শিখছো? চপ বানানো, ফেসবুকে ছবি তোলা, ভিডিও কলে পাড়া শোনানো?”

আলতা বৌর চোখে জল চলে এল, কিন্তু মুখ শক্ত। বললেন, “তোমার সঙ্গে কথা বললেই তো তুমি রাগ করো। তাই ভাবলাম ভিডিও কলেই ভালো। অন্তত একবার তোমার মুখ তো দেখি।”

গোপাল হঠাৎ চুপ।

সেই দিন দুপুরে, আলতা বৌ ফোন নিলেন হাতে, বসে রইলেন উঠোনে। ফোন করলেন গোপালকে, ভিডিও কল। মুখে হালকা হাসি।

“হ্যাঁ রে, কাজ শেষ?”

ওপাশে গোপাল মাথা নাড়ালেন, “হুঁ। তুই?”

“আমিও… একটু চুপচাপ। জানো, আজ ইউটিউব চালাইনি। শুধু তোমার মুখটাই দেখছি।”

গোপালের গলা একটু কোমল হলো, “তোর এই ফোনটা নিয়ে আমার একটু ভয় হয়। সব কিছু তো বদলে যাচ্ছে। বুঝিস তো?”

আলতা বৌ বললেন, “বদল তো হবেই, কিন্তু সম্পর্ক বদলাবে না। তোমার কথাই তো রোজ শুনতে চাই। তাই এই ভিডিও কল। একসময় তোমার মুখের দিকেও তাকাতে পারতাম না, এখন তো রোজ দেখি। খারাপ কী?”

একটু নীরবতা। বাতাসে হালকা শালপাতার খসখস।

তারপর হঠাৎ গোপাল বললেন, “তোর জন্য একটা নতুন ফোন কভার এনেছি, গোলাপি রঙের।”

আলতা বৌর মুখে হাসি ফুটল।

“তুমি রাগ করো না তো? আমারও তো একটু শিখতে ইচ্ছে করে, জীবনটা একটু নিজের মতো করে গড়ে তুলতে।”

সেই রাতে আলতা বৌ ফোন নিয়ে ছাদে উঠে গিয়েছিলেন। পেছনে দূরের গঙ্গা নদীর হাওয়া, পাখির ডাক। সে ফোনটা খুলে আবার ভিডিও কলে করলেন গোপালকে।

“আচ্ছা, বলো তো, কাল তোমার প্রিয় তরকারি কী?”

ওপাশে গোপাল হাসলেন, “চিংড়ির মালাইকারি!”

আলতা বৌ বললেন, “ঠিক আছে, কাল ইউটিউব দেখে শেখে নেব। তারপর ফোনে তোমার সামনে রান্না করব। ভিডিও কলেই!”

গোপাল একটু লজ্জা পেয়ে বললেন, “তুই না অদ্ভুত বউ।”

সেই রাতের চাঁদ অনেকখানি আলতা বৌর মুখে আলো ফেলেছিল। সে জানতো, সম্পর্কের মধ্যে যতই ডিজিটাল হয়ে উঠুক, ভালোবাসা যদি আসল হয়—তবে ঝগড়াও ভালোবাসার আরেক রূপ। আর ফোনের ওপারেও মানুষটা যদি কাছের হয়, তবে পর্দা একটুও দূরত্ব তৈরি করতে পারে না।

এইভাবেই আলতা বৌ বুঝে গেলেন, স্মার্টফোন শুধু শেখার জিনিস নয়, সম্পর্ক গড়ার সেতুও হতে পারে।

এখন কুলতলির মানুষ বলে, “ও বৌ না, ও তো কুলতলির ডিজিটাল প্রেমিকা!”

***

সকালবেলা উঠেই আলতা বৌ ফোন হাতে বসে গেলেন উঠোনে। আজ তাঁর ফোনে নতুন অ্যাপ এসেছে—“মিম মেকার”! কাল সন্ধ্যেতেই ডাউনলোড করেছেন, আর এখন তো পাগল হয়ে গেছেন।

প্রথম মিম করলেন—একটা হাঁসের ছবি নিয়ে লিখলেন: “স্বামী যখন বলে আজ আর বাজারে যাব না!” হাঁসের মুখে অদ্ভুত এক হাসি।

আলতা বৌ হাসতে হাসতে বললেন, “এই ছবি তো গোপালের মুখের মতো!”

মেয়ে পাড়ার রিমঝিম এসে বলল, “বৌদি! এই মিমটা তো ভাইরাল হবে! পঞ্চায়েতের গ্রুপে দাও না?”

আলতা বৌ একটু ভাবলেন, “দেওয়া যায়, কিন্তু পঞ্চায়েতের গ্রুপ তো সিরিয়াস জায়গা। সেখানে আবার মিম?”

রিমঝিম বলল, “এই হলো তোমার সমস্যা। এখন সবাই মজা চায়। একটু হালকা মুহূর্ত লাগবেই!”

কাজেই কিছু না ভেবে, আলতা বৌ মিমটা ফরোয়ার্ড করে দিলেন পঞ্চায়েতের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে।

মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে—

গ্রুপে নোটিফিকেশন আসা শুরু:

“এই কী রকম পোস্ট?”

“এটা কি পঞ্চায়েতের শোভা পায়?”

“এই ছবি কি আমাদের সম্মানহানি করছে না?”

আলতা বৌ চোখ কপালে! বললেন, “ধুর, এ যে মজার জিনিস, এত রাগ কিসের?”

ততক্ষণে ফোন বেজে উঠল—প্রধান বুধু সর্দারের কল!

“আলতা বৌ, আপনি বুঝলেন না? পঞ্চায়েতের গ্রুপে এমন জিনিস চলবে না। এবার মিটিং ডাকা হবে। আপনি আসবেন।”

আলতা বৌ তো রীতিমতো ঘাবড়ে গেলেন। ফোন রেখে হাফাতে হাফাতে বললেন, “হায় গো! আমি তো ভেবেছিলাম সবাই হাসবে! মিম যে বিপদ ডেকে আনবে, তা জানতাম না।”

পরদিন সকালবেলা, পঞ্চায়েতের মিটিং। হাটতলায় সবাই বসে। একপাশে সর্দারবাবু, একপাশে গ্রাম্য শিক্ষক নিতাই মাস্টার, পাশে রাধারাণী, যিনি মহিলা সমিতির প্রধান।

আলতা বৌ লাজুক মুখে হাজির হলেন, হাতে ফোনটা আঁকড়ে ধরেছেন।

বুধু সর্দার গম্ভীরভাবে বললেন, “আলতা বৌ, এই মোবাইল নামক বস্তুটিকে সবাই যতটা ভালো ভাবছে, ততটাই কিন্তু বিপদ আছে।”

নিতাই মাস্টার বললেন, “মিম মানে যদি তথ্যপূর্ণ হতো, তাহলে চলত। কিন্তু হাস্যরসের নামে যদি অপমান হয়?”

আলতা বৌ মাথা নিচু করে বললেন, “আমি দুঃখিত। আমি জানতাম না এতটা গুরুতর হবে। আমি শুধু একটু আনন্দ দিতে চেয়েছিলাম।”

রাধারাণী বললেন, “তুমি যা করেছ, তা ভুল। কিন্তু তোমার এই সাহস—তুমি শিখছো, চেষ্টা করছো, এটা প্রশংসনীয়। কিন্তু গ্রুপে পোস্ট করার আগে একটু ভাবতে হবে।”

বুধু সর্দার হেসে বললেন, “এই তো, এই শিক্ষা যদি সবাই মেনে চলে, তাহলে ডিজিটাল গ্রাম বানাতে আর কষ্ট কী?”

আলতা বৌ তখন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি ঠিক করেছি, একটা নতুন গ্রুপ বানাবো—‘হাসির হাট’। সেখানে সবাই মজা করবে, কিন্তু পঞ্চায়েতের মর্যাদা থাকবে অটুট।”

তালিতে ফেটে পড়ল সভা। আলতা বৌ যেন এক নতুন সম্মান পেলেন।

সেই রাতেই গ্রামে নতুন মিম ভাইরাল হল:

একটা কুকুরের ছবি, ক্যাপশন—“যখন বৌদি বলে, আর মিম পাঠাবো না… কিন্তু পরের মিনিটেই আবার পাঠায়!”

নিচে লেখা—“গ্রাম এখন ডিজিটাল, বৌদি এখন ভাইরাল!”

আলতা বৌ হাসলেন। আর গোপাল মিয়াঁ পাশ থেকে বললেন, “এখন দেখি, তুই না ‘ডিজিটাল দিদিমণি’!”

আলতা বৌ চোখ টিপে বললেন, “না, এখন আমি ‘মিম মন্ত্রিণী’!”

এইভাবে চললো কুলতলি গ্রামের নতুন যুগ—যেখানে হাসি, শিক্ষা আর স্মার্টফোনে গড়ে উঠছে এক নতুন সমাজ। আর আলতা বৌ তার কান্ডারী।

***

গ্রামে এখন একটাই আলোচনার বিষয়—আলতা বৌয়ের নতুন রাঁধুনি রিল।

তিনি ঠিক করেছেন, এখন থেকে প্রতিদিন সকালে একেকটা রেসিপি শিখে রান্না করবেন এবং সেই রান্নার ভিডিও বানিয়ে ইনস্টাগ্রামে আপলোড করবেন। প্রথম দিনই বানালেন “আলু চপ কুরকুরে স্টাইল”—উপর থেকে হালকা টমেটো সস, পাশে লেবু আর কাঁচা মরিচ, এবং ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ডে হিন্দি গান: “আজ ফ্রাইডে হ্যায়, মজা কর লে ভাই!”

ভিডিও পোস্ট হতেই বয়ে গেল প্রশংসার ঢেউ। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার—আলতা বৌ যেন এখন গ্রামের নিজস্ব ফুড ইনফ্লুয়েন্সার।

তবে, গোপাল মিয়াঁ খুশি নন।

সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে দেখেন, ডাইনিং টেবিলে কেউ নেই। রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন, আলতা বৌ একটা মোবাইল স্ট্যান্ডে ফোন লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কড়াইতে ঝাল করে কুমড়ো ভাজছেন। পাশে দাঁড়িয়ে রিমঝিম—“লাইট ঠিক আছে, বৌদি?”

আলতা বৌ বললেন, “হ্যাঁ, আরেকটু অ্যাঙ্গেল দাও—ঝাঁঝটা যেন বেশি দেখায়।”

গোপাল কাশলেন, “এই যে, খেতে পাবো কখন?”

আলতা বৌ বললেন, “আরো পাঁচ মিনিট! ভিডিওর জন্য একটু সুন্দর ফুটেজ দরকার।”

গোপালের মুখ কালো। তিনি চুপচাপ ফিরে এলেন বারান্দায়। হুঁকো টানতে টানতে চোখ ঘুরল মোবাইলের দিকে, আর মুখ থেকে বেরলো—“যেখানে রান্না এখন রিল, সেখানে স্বামী তো ফিল্টার ছাড়া কিচ্ছু না!”

রাতে খেতে বসে গোপাল কিছু বললেন না। শুধু বললেন, “আজকের ঝোলটা একটু কাঁচা লাগল।”

আলতা বৌ হেসে বললেন, “ওটা কাঁচা না, ওটা হেলদি। আমি নতুন হেলদি রেসিপি শিখছি—কম তেল, কম ঝাল। ইউটিউবে ট্রেন্ডিং!”

গোপাল বললেন, “আমি তো ট্রেন্ডিং না, আমি লোকাল। আমার পেট চায় গরম ঝাল মরিচে ভাজা খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা!”

পরদিন সকালে গোপাল বেরিয়ে গেলেন বাজারে। পথে সবাই বলছে, “ভাই গোপাল, কাল বৌদি তো মাস্টারচেফের মতো ভিডিও করলো! আমরা রাঁধুনি না, এখন থেকে ‘রাঁধুনী-গ্রাফার’ চাই!”

গোপাল মুখে হাসি চাপিয়ে বললেন, “হ্যাঁ রে, আর আমি ‘টেস্টার হাউজব্যান্ড’!”

দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখলেন—আলতা বৌ এবার বানাচ্ছেন চিংড়ির মালাইকারি। গায়ের শাড়িটা হলুদ-সাদা, চোখে কাজল, মুখে হালকা গানে ঠোঁট নাচছে, আর রিমঝিম ক্যামেরা ধরছে।

গোপাল বললেন, “এই চিংড়ি কি আজ সত্যিকারের খাওয়া যাবে, না শুধু ফ্রেমে থাকবে?”

আলতা বৌ একটু থমকে গেলেন। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বললেন, “বন্ধ করো রিমঝিম।”

তারপর গিয়ে গোপালের সামনে বসলেন।

“তুমি এত রেগে যাচ্ছো কেন বলো তো?”

গোপাল বললেন, “রেগে যাচ্ছি না। শুধু ভাবি—একসঙ্গে বসে খেতাম, গল্প করতাম। এখন খাওয়ার আগে তো তিনটে অ্যাঙ্গেল চেক করতে হয়, আলো ঠিক আছে কিনা দেখতে হয়। আমি তোমার থেকে দূরে হয়ে যাচ্ছি।”

আলতা বৌ চুপচাপ মাথা নিচু করলেন। তারপর মুচকি হেসে বললেন, “তুমি যদি চাও, আজকের রিল তোমার সাথেই করব। তুমি হবে আমার স্পেশাল গেস্ট টেস্টার।”

গোপাল চমকে বললেন, “আমি? আমি আবার ক্যামেরায়?”

আলতা বৌ বললেন, “হ্যাঁ, চিংড়ির মালাইকারির শেষ সিনটা হবে তুমি খেয়ে বলছো—‘এটা তো বউয়ের প্রেমের স্বাদ!’”

গোপাল একটু হাসলেন।

ভিডিও হলো। পোস্ট হলো। ক্যাপশন—“আমার জীবনের প্রথম টেস্টার—গোপাল মিয়াঁ। রান্না নয়, ভালোবাসাই আসল রেসিপি!”

রাতেই ইনস্টাগ্রামে মেসেজ এলো: “বৌদি, তোমরা সত্যিই #CoupleGoals!”

আলতা বৌ ফোন রাখলেন পাশে। মাথা রাখলেন গোপালের কাঁধে। বললেন, “তুমি না থাকলে আমি কোথায়?”

গোপাল মাথায় হাত রাখলেন আলতা বৌয়ের।

স্মার্টফোনটা পাশে টিপটিপ করে লাইট দিচ্ছে, আর আলতা বৌ জানেন—প্রেমের রিল বানানোর জন্য এখন কোনো অ্যাপ লাগে না। শুধু লাগে একজোড়া কাছের চোখ, একফোঁটা সহানুভূতি, আর একমুঠো হাসি।

***

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা চলছে, মণ্ডপে মহিলাদের কীর্তন। কিন্তু আলতা বৌ বসে আছেন বারান্দায়, ফোন হাতে নিয়ে। কারণ আজ তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কল—সোজা তাঁর বড় জা রানি বৌদিকে, যিনি থাকেন কলকাতায়।

রানি বৌদি মানে গম্ভীর, শহুরে, এবং সবসময় ভাবেন, গ্রাম মানেই কাঁচা রাস্তা, গরু, আর অশিক্ষিত লোকজন। সে বৌদি এখনও আলতা বৌয়ের স্মার্টফোন কেনার খবরটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

আজ সেই ভুল ভাঙাতে আলতা বৌ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—ভিডিও কলে সমস্ত ডিজিটাল দাপট দেখাবেন।

ফোন বাজতেই স্ক্রিনে মুখ দেখালেন রানি বৌদি, ঠোঁট লাল লিপস্টিকে চকচক করছে।

“আলতা? এই তুই ফোন চালাতে পারিস নাকি?”

আলতা বৌ মুচকি হেসে বললেন, “না শুধু চালাই না বৌদি, মাঝে মাঝে ওকে রেস্ট দিই, ব্যাটারি চার্জের সময়!”

রানি বৌদি ঠোঁট বাঁকালেন, “এই তো শুরু হয়েছে! তা এই ফোন দিয়ে কী করিস শুনি?”

আলতা বৌ মাথা উঁচু করে বললেন, “রিল বানাই, রেসিপি শিখি, পঞ্চায়েত মিটিং করি, আর হ্যাঁ… তোমার দেওর গোপালকে রোজ ভিডিও কলেও শাসন করি!”

এই বলেই পাশ থেকে গোপাল হাত নাড়লেন ক্যামেরার দিকে, গালে শিশিরের মতো হাসি।

রানি বৌদির চোখ সরু হয়ে গেল, “বাহ! এই তো বেশ অ্যাডভান্সড হয়েছে দেখছি! তা ইন্টারনেট পাবে কোথায়?”

আলতা বৌ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “ওই যে, নতুন মোবাইল টাওয়ার বসেছে না? গতবার নির্বাচনের সময় ওদের দেওয়া উপহার! এখন সিগন্যাল এত জোরালো, মনে হয় মোবাইলই চা চাইবে!”

রানি বৌদি কিঞ্চিত আহত বোধ করলেন। মুখে কৃত্রিম হাসি এনে বললেন, “তা এখন তো তুই দেখছি আমায় ছাড়াও দিব্যি চলছিস!”

আলতা বৌ সোজা হয়ে বললেন, “বৌদি, আগে তুমিই শিখিয়েছিলে—মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়। এখন তো শুধু দাঁড়ানো নয়, মোবাইলে দাঁড়িয়ে ঘুরতেও পারি!”

কথা যত এগোতে থাকে, ততই ভিডিও কলে টান পড়ে যায়। সিগন্যাল কমে আসে, রানি বৌদির মুখ ঝাপসা হয়, আওয়াজ কেমন কেঁদে ওঠে:

“ত…ওর ন…তু…ন ফো…ন টা ভাল…”

আলতা বৌ হেসে উঠলেন, “দেখলে বৌদি, গ্রাম থেকে ভিডিও কল করে শহরকে কাঁপানো যায় এখন!”

সেই মুহূর্তে হঠাৎ গোপাল পাশে এসে বললেন, “এই যেটা হল না? ঝগড়া জয়ের জন্য ভিডিও কল, আর প্রেমের জন্য হুকুমের কলে যাও!”

আলতা বৌ মুখে আঙুল রাখলেন, “চুপ করো! মহাযুদ্ধ চলছে এখানে!”

তবে সেই যুদ্ধ ছিল গর্বের, আত্মবিশ্বাসের, আর এক নারীর প্রযুক্তির সঙ্গে মৈত্রীর যুদ্ধ।

পরের দিনই দেখা গেল—রানি বৌদি ইনস্টাগ্রামে নতুন আইডি খুলেছেন—“@KolkataQueenRani”, আর তার ফলোয়ার এক নম্বর—“@DigitalDidimoni” — অর্থাৎ আমাদের আলতা বৌ।

গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল খুশির হাওয়া।

রিমঝিম এসে বলল, “বৌদি, তুমি শুধু ভিডিও কল করো না, তুমি তো ভিডিও ডমিনেশন করো!”

আলতা বৌ হেসে বললেন, “আর তুমি হয়ে যাও আমার ক্যামেরা কমান্ডার!”

আর গোপাল মিয়াঁ পিছন থেকে বললেন, “এই কল-যুদ্ধে আমি বন্দী স্বামী!”

আলতা বৌ হেসে উঠে বললেন, “তুমি যুদ্ধের জেনারেল। আমি শুধু ভিডিও চালাই, হৃদয়ের কমান্ড তো তোমার হাতেই!”

সেদিন থেকে গ্রামের মেয়েদের মাঝে একটা কথা চালু হয়ে গেল—“মেয়েরা এখন শুধু ফোন ধরেনা, ফোন দিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ে!”

আর সেই ভাগ্য গড়ার পিছনে থাকেন একজন—আলতা বৌ, যিনি এখন শুধুই গ্রামে নয়, শহরেও পরিচিত ‘ডিজিটাল দিদিমণি’ হিসেবে।

***

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আলতা বৌ প্রথম যে কাজটি করেন, তা হল: ফোন অন করা, WhatsApp খুলে পঞ্চায়েত গ্রুপ দেখা।

“আমাদের শিমুলডাঙা গ্রাম” নামের এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আছে সব—মাস্টারমশাই থেকে মৌলভি, পঞ্চায়েত প্রধান থেকে পুকুরঘাটের ধোপা দুলাল। কিন্তু গ্রুপের সবচেয়ে সক্রিয় সদস্য এখন নিঃসন্দেহে আলতা বৌ।

সকাল ৬টা ৪৫: আলতা বৌ একটা মিম পেলেন রিমঝিমের কাছ থেকে—“স্বামী যদি ঝগড়া করে, তাকে বলো: তোমার মুখের চেয়ে তো মোবাইলের স্ক্রিন বেশি সুন্দর।”

মিমে একটা ছবি: স্ত্রী ফোন হাতে, স্বামী কোণায় দাঁড়িয়ে হতভম্ব।

আলতা বৌ হেসে গড়িয়ে পড়লেন। তিনি ভেবেই উঠতে পারলেন না—এটা সেভ করে নিজের স্ট্যাটাসে দেবেন, নাকি ‘বিউটি উইথ ব্রেন’ নামক ফেসবুক পেজে পাঠাবেন!

শেষমেশ করলেন সবচেয়ে মারাত্মক কাজ—গ্রুপে ফরোয়ার্ড দিলেন!

বাটন টিপেই তাঁর মনে হল—উফ! এটা তো “আমাদের শিমুলডাঙা গ্রাম” পঞ্চায়েত গ্রুপে পাঠালাম!

প্রথম ৫ মিনিট কিছুই হল না। চুপচাপ।

তারপর এল প্রথম রিপ্লাই: দুলাল ধোপা—“এটা কি সরকারি চ্যাটের জন্য উপযুক্ত?”

মাস্টারমশাই: “মিম পাঠানো কি এখন গ্রাম উন্নয়নের অংশ?”

মৌলভি সাহেব: “আমরা কি এইসব হাস্যকর বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করব?”

আলতা বৌ: “ওই ওই… ভুল করে চলে গেছে! মানে, আমি আসলে স্ট্যাটাসে দিচ্ছিলাম।”

পঞ্চায়েত প্রধান: “স্ট্যাটাস আর পঞ্চায়েত—এই দুইয়ে পার্থক্য রাখতে হবে, বৌমা। না হলে গ্রাম চালানো কঠিন হবে।”

আলতা বৌ মাথায় হাত দিলেন। বাইরে রোদ উঠেছে, অথচ মনে হচ্ছে ঝড় বয়ে যাচ্ছে!

ঠিক তখনই চমক।

গ্রুপে এল নতুন মেসেজ—“আসলে এই মিমটা আমার উপরেই তো! 😅 – গোপাল”

পুরো গ্রুপে হাসির বন্যা। দুলাল পাঠাল “🤣🤣🤣”, মাস্টারমশাইও পাঠালেন “হা হা হা, ভালোই তো!”

আলতা বৌ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পঞ্চায়েত প্রধান আলাদা করে ম্যাসেজ দিলেন—

“গ্রামে আমরা ডিজিটাল হচ্ছি, এটা ভালো। তবে কনটেন্ট শেয়ার করার সময় ভাবনা থাকা দরকার।”

আলতা বৌ ভাবলেন, ঠিকই তো। ফোন চালানো মানে শুধুই নিজের আনন্দ নয়, দায়বদ্ধতাও আছে।

তবে একটা সিদ্ধান্ত তখনই নিলেন—পঞ্চায়েত গ্রুপে মিম দেবেন না, কিন্তু আলাদা একটা WhatsApp গ্রুপ খুলবেন, নাম দেবেন “বউ-বান্ধবী মিমবাজ”!

সেই গ্রুপে ঢুকলেন গ্রামের চটি দোকানের মালকিন, রিমঝিম, পঞ্চায়েতের তরুণী হিসাবরক্ষক পায়েল, এবং হাটের মোড়ের ফুল বিক্রেতা রিতা।

প্রতিদিন ভোরে এখন সবার শুভ সকাল শুরু হয়:

“নেতা নয়, এখন নারীরাই গ্রুপ অ্যাডমিন!”

“চা দিয়ে নয়, মিম দিয়ে দিন শুরু!”

“জীবন ছোট, হেসে কাটাও—বউমা মিম পাঠাও!”

সন্ধ্যেবেলায় আলতা বৌ যখন গৃহস্থালির কাজ সেরে ফোন ধরেন, তখন ইনবক্সে আসে একগুচ্ছ নোটিফিকেশন, আর প্রতিটি কমেন্টে লেখা থাকে—“ডিজিটাল দিদিমণি রকস!”

সেদিন গোপাল রাতে বললেন, “আজ আর মিম নাই তো?”

আলতা বৌ বললেন, “তোমার জন্য স্পেশাল বানিয়েছি! শোনো—‘স্বামী যদি কষ্ট দেয়, তাকে বলো—তুমি তো মোবাইলের চার্জারও না, অথচ মাথায় এতো বোঝা!’”

গোপাল হেসে উঠলেন, “তাহলে আমি চার্জার না, তবে ডেটা প্যাক তো বটেই। না হলে তোমার এই ফেসবুক স্ট্যাটাস চলবে কী করে!”

রাতের আকাশে চাঁদ উঠেছে। মোবাইল চার্জে বসানো, মনও আজ শান্ত। আলতা বৌ জানেন, মিম শুধু হাসায় না, কখনো কখনো সম্পর্কও জোড়া লাগায়। আর তাঁর জীবন এখন মিম, মুগ্ধতা আর মিতালি—তিনে মিলে এক রঙিন অধ্যায়।

***

গ্রামের ছায়াঘেরা দুপুরে মাঠের ধারে বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে, পাশের বাড়িতে নারকেল কোড়ানো চলছে, আর পঞ্চায়েত অফিসে বৈঠক বসেছে—এই সব কিছু ছাড়িয়ে এখন একটাই নাম মুখে মুখে ঘুরছে: “ডিজিটাল দিদিমণি”।

সেই নামের আড়ালে যিনি, তিনি আর কেউ নন—আমাদের আলতা বৌ।

স্মার্টফোন হাতে পেয়েই তিনি শুধু ছবি তোলেননি, নিজের জীবনটাকেই রঙিন করে তুলেছেন। রেসিপি ভিডিও থেকে শুরু করে মিম, WhatsApp গ্রুপ, ভিডিও কল—সব কিছুর মধ্যেই তিনি যেন এক জন নবযুগের গ্রামীণ নারী।

একদিন পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে চিঠি এল তাঁর নামে। চিঠির খামে লেখা—“শিমুলডাঙা ডিজিটাল সচেতনতা প্রকল্প”।

চিঠি খুলতেই দেখা গেল, জেলাশাসকের দপ্তর থেকে ডাক এসেছে—“ডিজিটাল গ্রাম-নারী সম্মান ২০২৫”-এর জন্য তাঁকে মনোনীত করা হয়েছে।

গোটা পরিবার স্তব্ধ। গোপাল প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিল না।

“তুমি মানে… তুমি আলতা বৌ, তুমি এখন পুরস্কার পাচ্ছো?”

আলতা বৌ হেসে বললেন, “হ্যাঁ রে, আগেই বলেছিলাম না, আমি শুধু বউ নই, এখন এক্সেলেন্সি বৌ!”

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হবে জেলা সদরে, কনফারেন্স হলে। গ্রামের বাসিন্দারা সবাই দল বেঁধে যাওয়ার তোড়জোড় করলেন। মণ্ডল মাস্টার, রিমঝিম, পঞ্চায়েত প্রধান, এমনকি পাকা ধোপা দুলালও নিজে ট্র্যাকসুট পরে রওনা দিলেন।

জেলার কালেক্টর স্বয়ং মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন—

“এই নারী যাঁর হাতে স্মার্টফোন এসেছে, তিনি গ্রামে শুধু নিজের নয়, আরও অনেক নারীর পথ খুলে দিয়েছেন। আমাদের আলতা বৌ হলেন আধুনিকতার মুখ।”

আলতা বৌ মঞ্চে উঠে মাইক হাতে নিয়ে বললেন:

“আমি জানি না আমার ভাষণ কতটা ডিজিটাল, তবে আমি এটুকু বলতে পারি, এই ফোনটা আমার বন্ধু, শিক্ষিকা আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আমরা যারা ঘরকন্নার মধ্যে থেকেও স্বপ্ন দেখি, তাদের কাছে এটা একটা দরজা—বাইরের দুনিয়ার দিকে।”

হলভর্তি করতালি। পত্রিকায় ছবি বেরোল—“শিমুলডাঙার আলতা বৌ এখন রাজ্যের গর্ব”।

ফিরে এসে দেখা গেল গ্রামের পুকুরঘাটে একটা নতুন নামের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে—“ডিজিটাল দিদিমণির ঘাট”।

সন্ধ্যায় বাড়িতে বসে গোপাল বললেন, “তুমি বদলে গেছো, আলতা। আগে তুমি শুধু রান্না করতে জানতে, এখন তুমি পুরো ইন্টারনেট ঘাঁটতে পারো!”

আলতা বৌ বললেন, “আমরা মেয়েরা জল ঘাঁটতে ঘাঁটতেই জীবন কাটিয়ে দিই। কিন্তু এখন একটু করে নেটওয়ার্ক ঘাঁটছি, তবেই তো চারপাশ বদলাচ্ছে।”

গোপাল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন তাঁর স্ত্রীর দিকে। এ যে সেই চেনা মুখ, অথচ নতুন আলোয় দেখা।

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আলতা বৌ মোবাইলে আবার একটা রিল বানালেন। নাম দিলেন—“গ্রামের মেয়ের ডিজিটাল ডায়েরি”।

বিছানায় শুয়ে মনে মনে বললেন, “এই স্মার্টফোনটা শুধু যন্ত্র না, এটা আমার সাহস। এখন আমিই ডিজিটাল দিদিমণি।”

চাঁদের আলো জানালায় পড়ছে, মোবাইল চার্জে বসানো, আর তার পাশেই চার্জে যেন নতুন একটা জীবন—যেখানে একজন গ্রামের বউ হয়ে উঠেছেন একজন অনুপ্রেরণা।

শেষ নয়, এই তো শুরু।

***

শিমুলডাঙা এখন আর আগের মতো নেই। সকালে মাঠে চাষ করতে করতে কৃষকরা ইউটিউবে দেখে নিচ্ছেন ‘জৈবসার তৈরির পদ্ধতি’, বিকেলে চায়ের দোকানে ‘নতুন মিম’ নিয়ে আড্ডা। আর এই সব পরিবর্তনের মূলে রয়েছেন আমাদের আলতা বৌ—ডিজিটাল দিদিমণি।

আজ তাঁর বাড়িতে একটি ছোটো অনুষ্ঠান। রিমঝিমের নতুন চা-পানের দোকানের শুভসূচনা উপলক্ষে গ্রামের মহিলারা একত্রিত হয়েছেন। সঙ্গে আছে কিছু আত্মীয়, পঞ্চায়েত সদস্য, এবং গোপালবাবু, যিনি আজ নিজেই চপ ভাজছেন!

আলতা বৌ ফোন হাতে সেলফি তুলছেন, স্ট্যাটাসে ক্যাপশন লিখছেন—“শেষ পাতে ফ্রাই, আর হাতে ফোন—এই তো জীবন!”

চারপাশে গুঞ্জন—“আলতা বৌ এখন নাকি নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন?”

হ্যাঁ, নাম দিয়েছেন—“আলতার আঙুলে অ্যাপ”। সেখানে এখন রাঁধুনির রেসিপি থেকে শুরু করে ডিজিটাল টিপস, এমনকি গ্রামের হাটের লাইভ ভিডিও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।

তরুণী পায়েল বলল, “বৌদি, আপনাকে তো এখন ব্লু-টিক দেওয়া উচিত!”

আলতা বৌ হেসে বললেন, “এই তো, সাদা-টিকেই গর্ব করছি। আগে ব্লু-টিক দিলে কি রান্না হবে?”

তবে তাঁর হাসির আড়ালে একটা বড়ো সত্য লুকিয়ে আছে—প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে, হাসিঠাট্টা, ভালোবাসা, আর নিজের আত্মবিশ্বাস—এই সব মিলিয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন একটা নতুন পরিচয়।

বিকেলে হঠাৎ ফোন এল জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে—তাঁর ইউটিউব চ্যানেল সরকারিভাবে শিক্ষণীয় কনটেন্ট হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

গ্রামে আনন্দের ঢেউ। রিমঝিম বলল, “বৌদি, তুমি এখন শুধু মিম সেন্সেই নয়, গ্রাম শিক্ষা মিশনের মুখ!”

গোপাল পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “সেদিন যে মেয়েটা ফোনে রিংটোন সেট করতে গিয়ে পাঁচবার লাউডস্পিকার অন করেছিল, সে আজ গ্রামের প্রথম ডিজিটাল আইকন।”

আলতা বৌ একটু লজ্জা পেয়ে হেসে বললেন, “তখন তো ফোনটা মুড়ির বয়ামের ঢাকনার মতো মনে হত, এখন মনে হয় জীবনের দরজা!”

সন্ধ্যায় সবাই একসঙ্গে ছবি তুললেন। ফটো ফ্রেমে লেখা—“নতুন রাস্তা, নতুন আশা, আর আলতা বৌয়ের ডিজিটাল হাসি।”

শেষ পাতে ইলিশ ফ্রাই, হাতে গরম চা, আর অন্য হাতে ফোন—এই ছিল সেই দিনটার চূড়ান্ত ছবি।

আকাশে তখন চাঁদের আলো, নিচে শিমুলডাঙার মাটিতে এক নতুন দিনের সূচনা। আর তার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে—একটি হালকা লাল আলতার পায়ের ছাপ, আর এক হাতে স্মার্টফোন ধরা, গ্রামের সেই নারী—আলতা বৌ, যিনি বলে উঠেন:

“আমরা বদলাতে শিখেছি। এবার গ্রামও বদলাবে, হাসি আর স্মার্টফোন হাতে নিয়ে!”

এ গল্প শেষ নয়। এ গল্প চলবে, যতদিন গ্রামে কোনও মেয়ে ফোন হাতে নিয়ে নিজের গল্প বলতে শুরু করে।

***

শিমুলডাঙার আকাশে আজ এক অদ্ভুত শান্তি। সকালটা একটু বেশি স্নিগ্ধ, বাতাসে যেন এক নতুন আশার গন্ধ। পুকুরপাড়ে লাউগাছ ছায়া ফেলছে, আর আলতা বৌ আজ একটু অন্যরকম। তাঁর চোখে আজ আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে এক গভীর উপলব্ধির ছায়া।

গত কয়েক মাসে তাঁর জীবনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। স্মার্টফোনের মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ পৌঁছেছে এক এমন জায়গায়, যেখানে তিনি শুধু আলতা বৌ নন—তিনি আজ এক পথপ্রদর্শক।

গ্রামের মেয়েরা এখন ফোন চালাতে শেখে তাঁর কাছ থেকে।

বাচ্চারা ইউটিউব থেকে পড়াশোনা করে, মাস্টারমশাই তাঁর ভিডিও দেখিয়ে ক্লাস নেন। এমনকি পঞ্চায়েত অফিসে আলতা বৌ এখন ‘ডিজিটাল সলিউশন কনসালটেন্ট’ হিসেবে পরামর্শ দেন।

একদিন বিকেলে গোপাল বললেন, “তোমার কি মনে হয়েছিল এমন হবে?”

আলতা বৌ হেসে বললেন, “ফোনটা যখন প্রথম হাতে এসেছিল, তখন শুধু জানতাম এতে গান শোনা যায়। আজ বুঝি, এতে পুরো জীবন বদলানো যায়।”

তাঁর ঘরে এখন একটা নতুন বসার ঘর হয়েছে—দেয়ালে একটা ছোট সাদা বোর্ড, তাতে লেখা: ‘আজকের ডিজিটাল ক্লাস’।

রোজ বিকেলে ৪টায় গ্রামের মেয়েরা এসে বসে, ফোন নিয়ে। আলতা বৌ শেখান—Google কীভাবে কাজ করে, কীভাবে WhatsApp-এ গ্রুপ তৈরি করতে হয়, ফেসবুকে কীভাবে নিরাপদে থাকা যায়, কীভাবে অনলাইনে ডাক্তার দেখানো যায়।

তিনি বলেন, “স্মার্টফোন যেন ছুরি—ভালো কাজে লাগালে উপকার, না হলে বিপদ।”

রিমঝিম একদিন বলল, “বৌদি, তোমার মতো সবাই হতে পারে না।”

আলতা বৌ বললেন, “আমি তো তেমন কিছু করিনি রে, শুধু ভয় পেয়ে থেমে যাইনি।

গোটা শিমুলডাঙা আজ তাঁকে দেখে বদলেছে।

আলতা বৌ জানেন, প্রযুক্তি হল একটি হাতিয়ার। সেটা কাকে দিয়ে কীভাবে ব্যবহার করানো হবে, তা ঠিক করে মন, মননের দিক থেকে। এবং মনের এই সাহসই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে এক নতুন জায়গায়।

আজ সকালে তিনি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে একটি নতুন ভিডিও পোস্ট করলেন:

“ডিজিটাল জীবনের ৫টি সহজ পাঠ” ১. ফোন চলবে, মনও চলবে ২. নিজের তথ্য নিজে দেখো, অন্যকে নয় ৩. ফোনে যতটা শেখা যায়, ততটা শিখে ফেলো ৪. প্রযুক্তি মানে শুধু মজা নয়, সুযোগও ৫. একা নয়, সবাই মিলে শিখলে জীবন বদলাবে

ভিডিওর শেষে তিনি বললেন, “আমি আলতা বৌ। আমি বদলাতে পেরেছি, আপনি পারবেন না?”

সেই ভিডিও ভাইরাল হলো। রাজ্যের ডিজিটাল শিক্ষা বিভাগ তাঁকে ডাকল বিশেষ প্রশিক্ষকের আসনে। এখন প্রতি মাসে আলতা বৌ যান অন্য গ্রামে, সেখানে নারীদের শেখান কিভাবে প্রযুক্তি তাঁদের জীবন বদলাতে পারে।

শিমুলডাঙা থেকে শুরু করে আজ মেদিনীপুর, নদীয়া, বীরভূম—সব জায়গাতেই একটা নাম ছড়িয়ে পড়েছে—“ডিজিটাল দিদিমণি আলতা বৌ।”

এখনও তিনি লাল আলতা পরেন, গা ছমছমে গন্ধের মাঝে হেসে বলেন, “লাল আলতা আমার পরিচয়, কিন্তু ফোন আমার শক্তি।”

একদিন সন্ধ্যায় গ্রামের মাঠে ছেলেমেয়েরা জড়ো হয়েছে। তাঁরা চিৎকার করে উঠল, “আলতা বৌ, একটা ছবি, একটা ছবি!”

তিনি বললেন, “ছবি তুলো, কিন্তু ক্যাপশন দিও—‘গ্রাম মানেই পিছিয়ে নয়, প্রস্তুত হও নতুন জয়’।”

সেই ছবি, সেই হাসি, সেই ক্যাপশন—সব মিলে এক গল্প। আর গল্পটা এক বউয়ের, যার হাতে একদিন প্রথম বার এল স্মার্টফোন, আর তারপর থেকে সে বউ হয়ে উঠল গ্রামের ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক।

এই গল্পটা এখানেই শেষ নয়।

কারণ, প্রতিটি গ্রামে আজও কেউ না কেউ অপেক্ষা করছে একটুকু সাহস, একটুকু বদলের আশায়।

আর যদি কখনও কোনো আলতা বৌ ফোনটা হাতে নেন, তবে নিশ্চয়ই শুরু হবে আরেকটা নতুন গল্প—আরও হাসি, আরও মিম, আরও শিক্ষা, আর অবশ্যই—ডিজিটাল দিদিমণির এক অবিরাম জয়যাত্রা।

 

 

1000023811.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *