সৌরভ পাল
শহরের এক ছোট্ট গ্রামে চারজন বন্ধু থাকতো — আর্টি, সোহিনী, রাজু, আর মিথিলা। তারা সবাই খুব সাহসী আর কৌতূহলপূর্ণ। একদিন সোহিনী তার ঠাকুরদার পুরনো আলমারি থেকে একটি মলাটহীন, জীর্ণ মানচিত্র খুঁজে পায়। মানচিত্রটি ছিল এক রহস্যময় দ্বীপের।
“দেখো, এখানে একটা ছোট দ্বীপে লুকানো আছে গুপ্তধন,” সে উত্তেজনায় বলল।
“চলো যাই! ছুটির দিনে আমরা বের হবো,” রাজু বলল।
তাদের ছোট নৌকাটি নিয়ে তারা নদী পার হয়ে সেই দ্বীপে পৌঁছল। ঢেউ আর বাতাসের শব্দের মাঝে তারা যখন পৌঁছল, তখন দ্বীপটি ছিল এক অদ্ভুত নীরবতার আবরণে। চারপাশে লতাপাতা আর গাছগাছালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
দ্বীপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল একটা পুরানো বাতিঘর, যা ভাঙ্গাচোরা অবস্থায়। বাতিঘরের দরজা লক করা ছিল, কিন্তু পাশেই ছিল পাজলের বাক্স। চার বন্ধু পাজলটা বুঝতে শুরু করল। ধীরে ধীরে তারা সেটি সমাধান করল এবং দরজাটি খুলে ফেলল।
বাতিঘরের ভেতরে সিঁড়ি নামছিল গুহার মতো এক অন্ধকার কক্ষে। সাহস করে তারা নেমে গেলো। সেখানে তারা পেল এক প্রাচীন নোটবুক এবং কিছু রহস্যময় যন্ত্র। নোটবুকে লেখা ছিল এক শতাব্দী আগে ওই দ্বীপে থাকা এক বিজ্ঞানীর গল্প, যার গবেষণা আর আবিষ্কার লুকানো ছিল দ্বীপে।
তারা বুঝল, এখানে গুপ্তধন শুধু সোনা নয়, বরং জ্ঞান ও রহস্য।
সেই রাতটি ছিল ভিন্নরকম। বাতিঘরের গোপন কক্ষে পড়ে থাকা নোটবুক আর রহস্যময় যন্ত্রগুলো নিয়ে চার বন্ধু যখন বেরিয়ে এল, তখন তাদের মনে জাগল নতুন প্রশ্ন আর উত্তেজনা। তারা ঠিক করল, পরের দিন আরও গভীরে গুহার ভিতর প্রবেশ করে বিজ্ঞানীর আবিষ্কারগুলো খুঁজে বের করবে।
সকাল বেলা নদীর ধারে এসে তারা ছোট্ট একটি ক্যাম্প গড়ল। সোহিনী খাবার-দাবার নিয়ে ব্যস্ত, আর্টি আর রাজু কাঠ সংগ্রহে, মিথিলা ক্যামেরা হাতে চারপাশের ছবি তুলছিল। দুপুরের আগেই সবাই প্রস্তুত হয়ে গুহার মুখে ফিরে এলো।
সোহিনী নোটবুক থেকে পড়ল, “‘আলো ও সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া হল প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চাবিকাঠি।’” সবাই বুঝতে পারল, গুহার ভেতরের ধাঁধাগুলো তাদের সামনেই।
গুহার দেয়ালে তারা দেখতে পেল এক ছোট হাতল। আর্টি সেটি ঘুরিয়ে খুলল একটি দরজা, যার পিছনে ছিল এক সরু নিচু পথ।
পথটা অন্ধকার আর ঠান্ডা। সবার হাতে টর্চলাইট। তারা ভয় পেয়েও এগিয়ে চলল। কিছুদূর যেতে পেরেই পৌঁছল এক বিশাল কক্ষে, যেখানে জ্যোতির্বিজ্ঞানী যন্ত্র জ্বলজ্বল করছিল।
নোটবুকে লেখা ছিল, যন্ত্রটি সময় ও মহাকাশ গবেষণার জন্য ব্যবহৃত। তাদের প্রথম কাজ হলো দেয়ালে থাকা প্রতীক আর সংখ্যাগুলো বিশ্লেষণ করে ধাঁধার সমাধান করা।
রাজু দ্রুত ধাঁধাটি সমাধান করল। সঙ্গে সঙ্গে গাঢ় নীল আলো ছড়িয়ে পড়ল, আর দরজার আরেকটি অংশ খুলে গেল।
ভেতরে তারা পেল এক ছোট কক্ষ, যেখানে পড়েছিল বিজ্ঞানীর গবেষণাপত্র আর কিছু পুরানো টিউব।
তারা আরও গভীরে গুহার ভিতর গেল, হঠাৎ বড়ো এক গহ্বরের সামনে পৌঁছল, যেখানে ছিল অদ্ভুতভাবে আলোকিত একটি বাক্স।
বাক্সে লেখা ছিল, ‘জ্ঞান, যা প্রকৃতিকে পরাস্ত করে।’
বাক্স খুলতেই তাদের সামনে আসল এক গ্লাসের বোতল, যার মধ্যে সবুজ তরল ছিল।
সোহিনী নোটবুক থেকে পড়ল, “এটি জীবন গতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে এমন তরল।”
হঠাৎ গুহার প্রবেশ পথ থেকে আওয়াজ আসতে শুরু করল, কেউ কি তাদের অনুসরণ করছে?
চারজনই আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে নদীর ধারে নৌকায় উঠে পড়ল।
তারা জানত এই অভিযান এখানেই শেষ নয়, আসল রহস্য এখনো অপেক্ষা করছে।
নৌকাটি নদীর ঢেউ কাটিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছিল। চার বন্ধুর মনে ছিল এক মিশ্র অনুভূতি—উৎসাহ আর অজানা ভয়ের মিশেল। রাজু বার বার চোখ বুলাচ্ছিল পাশে রাখা সেই গ্লাসের বোতলটির দিকে। “এই তরলটা কি সত্যিই কোনো অলৌকিক শক্তি বহন করে?” সে ভাবছিল।
সোহিনী নোটবুক পড়ছিল যেখানে বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত ডায়েরির কিছু পাতা আটকে ছিল। পাতাগুলোতে ছিল তার গবেষণার নানা ফলাফল, গোপনে লিপিবদ্ধ। “বিজ্ঞানীর ভাষায়, এই তরল জীবনের গতি ও প্রক্রিয়া পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে পারে। কিন্তু এর ব্যবহার যথেষ্ট বিপজ্জনক হতে পারে,” সে বলল।
“আমাদের অবশ্যই খুব সতর্ক থাকতে হবে,” আর্টি বলল, “কারণ এই আবিষ্কার সঠিক হাতে গেলে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগতে পারে, আর ভুল হাতে গেলে বিপদ ডেকে আনতে পারে।”
নৌকাটি যখন ধীরে ধীরে নদীর মোহনায় পৌঁছল, তখন চারজনের মনে আরও দৃঢ় হল দ্বীপের গভীরে লুকানো রহস্য উদঘাটনের ইচ্ছা।
সন্ধ্যার সূর্য ধীরে ধীরে ঢলে যাচ্ছিল। নদীর তীরে ছোট্ট ক্যাম্পের চারপাশে চার বন্ধু বসে গল্প করছিল। তাদের মনে উত্তেজনা আর রহস্যের মিশ্র অনুভূতি ছিল। আজকের দিনটি ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে সাহসী এক অভিযান শুরু করার দিন।
সকাল বেলায় তারা আবার সেই গুহার মুখে এসে উপস্থিত হলো। সোহিনী তার হাতে নোটবুক নিয়ে জানাল, “আমাদের এখনো আরও কিছু ধাঁধা সমাধান করতে হবে। বিজ্ঞানী যেসব আবিষ্কার করেছিল, তা পুরোপুরি বুঝতে হলে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।”
গুহার ভিতরে প্রবেশ করে তারা অন্ধকার পথ ধরে এগিয়ে চলল। হঠাৎ করে তারা দেখতে পেল এক বিশাল কক্ষ, যেখানে দেয়ালে অদ্ভুত অক্ষর আর চিহ্ন ছিল। চিহ্নগুলো থেকে একটা প্রাচীন ভাষার ইঙ্গিত মিলছিল।
“আমাদের এই ভাষা বুঝতে হবে,” রাজু বলল। “নোটবুকে হয়তো এর ব্যাখ্যা আছে।”
সোহিনী দ্রুত নোটবুক থেকে কিছু পাতা খুলল, যেখানে প্রাচীন ভাষার কিছু শব্দের অর্থ লেখা ছিল। তারা মিলিয়ে দেখল, দেয়ালের অক্ষরগুলো আসলে একটি ম্যাপ ছিল, যা গুহার ভেতরের লুকানো রাস্তাগুলোর অবস্থান দেখাচ্ছিল।
“চল, আমরা এই ম্যাপ অনুসরণ করি,” মিথিলা বলল, তার ক্যামেরা হাতে প্রস্তুত ছিল।
তারা ম্যাপের নির্দেশনা অনুযায়ী হাঁটতে লাগল। পথে তাদের সামনে এল কিছু রহস্যময় বাধা—কঠিন পাজল আর এমন কিছু যন্ত্র যা চালু করতে তাদের মেধা কাজে লাগাতে হয়েছিল। আর্টি ও রাজু একসঙ্গে পাজলগুলো সমাধান করতে লাগল, আর সোহিনী ও মিথিলা চারপাশ দেখে বুঝতে চাইল যে কোন যন্ত্রের কোন কাজ।
এক সময় তারা একটি দরজা খুলতে পারল, যা নিয়ে গেল এক অদ্ভুত আলোযুক্ত কক্ষে। সেখানে ছিল এক বিশাল যন্ত্র, যা চলছিল যেন সারা গুহার শক্তির উৎস। নোটবুক থেকে তারা বুঝল, বিজ্ঞানী এই যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন গুহার শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
“আমাদের লক্ষ্য হলো এই যন্ত্রের গোপন রহস্য উদঘাটন,” আর্টি বলল। “তবে সাবধানে। এটা ক্ষতিকর হলে বিপদ হতে পারে।”
তারা যন্ত্রের কাছে গিয়ে দেখল কিছু বোতাম আর লেভার। সোহিনী ধীরে ধীরে বোতামগুলো পরীক্ষা করতে লাগল। হঠাৎ যন্ত্র থেকে এক ধরণের সুরেলা শব্দ বের হতে শুরু করল, যা গুহার দেয়াল ধরে ভেসে উঠল।
সেই সুর তাদের মনে এক অদ্ভুত শক্তি জাগিয়ে দিল। কিন্তু সেই সঙ্গে একটা কেঁপুনি হলো গুহার ভিতরে।
হঠাৎ একটি গুহার দেয়াল ধীরে ধীরে সরতে শুরু করল, আর তাদের সামনে আসল এক বৃহৎ গোপন কক্ষ।
কক্ষে ছিল এক বিশেষ বাক্স, যার ওপর লেখা ছিল, “জীবনের রহস্য ও শক্তি।”
তারা বাক্সটি খুলতেই পেয়েছিল এক জটিল যন্ত্র ও এক পুরানো ডায়েরি, যেখানে বিজ্ঞানীর সবচেয়ে গোপন গবেষণার কথা লেখা ছিল।
তারা বুঝল, এই যন্ত্রটির সাহায্যে জীবনচক্রের নানা রহস্য বোঝা সম্ভব, কিন্তু এটি বিপজ্জনক এবং সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
তারা একসাথে সিদ্ধান্ত নিল, এই রহস্য বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করবে, কিন্তু সঠিক সময়ে এবং সঠিক মানুষদের সঙ্গে।
রাত হয়ে এলো, চারজন বন্ধু ক্যাম্পে ফিরে এসে সেই দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। তারা জানতো, আগামী দিনগুলো আরও রহস্যময় এবং চ্যালেঞ্জিং হবে।
পরের সকালে, সূর্যের প্রথম কিরণ নদীর জলে ঝলমল করতে লাগল, আর চার বন্ধু নতুন উদ্যম নিয়ে আবারও গুহার রহস্য উন্মোচনে প্রস্তুত হল। তাদের মধ্যে ছিল গভীর এক আত্মবিশ্বাস, কারণ আগের দিন তারা যে অনেক ধাঁধা সমাধান করেছে, তা তাদের সাহস আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
গুহার মুখে এসে তারা সোহিনীর হাতে থাকা নোটবুকটি একবার আবার দেখে নিল। “এবার আমাদের লক্ষ্য হলো গুহার সবচেয়ে গভীর কক্ষ, যেখানে বিজ্ঞানী তার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার লুকিয়ে রেখেছিলেন,” সে বলল।
তারা আবার সিঁড়ি ধরে নিচে নামতে লাগল, অন্ধকারে টর্চের আলোই তাদের একমাত্র পথপ্রদর্শক। পথে তারা কিছু পুরানো চিত্রকর্ম ও প্রতীক দেখল, যা একেকটি গল্প বলছিল দ্বীপের অতীত এবং সেই বিজ্ঞানীর জীবনের সংগ্রামের কথা।
হঠাৎ, তারা পৌঁছল এক বিশাল কক্ষে, যেখানে ছিল এক অদ্ভুত আকারের যন্ত্র, যেটার চারপাশে নানা রকম জটিল যন্ত্রাংশ আর লেভার। নোটবুকে লেখা ছিল, “এই যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণ করে জীবনের গতি এবং শক্তি।”
আর্টি সাবধানে যন্ত্রটি পরীক্ষা করতে লাগল। “আমাদের আগে যা পেয়েছি, তার থেকে এটা অনেক জটিল,” সে বলল।
সোহিনী, রাজু ও মিথিলা তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখল। তারা বোঝার চেষ্টা করছিল কিভাবে এই যন্ত্রটি কাজ করে।
হঠাৎ, মিথিলা একটি লেভার দেখতে পেল। সে সেটি ধীরে ধীরে টেনে নিল। যন্ত্রটি গড়গড়িয়ে শুরু করল, আর একটি আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল।
চারজনের চোখ বড় হয়ে গেল। যন্ত্র থেকে এমন এক শক্তি বের হতে লাগল, যা যেন জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারে।
তাদের সামনে এক দরজা খুলে গেল, যা নিয়ে গেল এক গোপন কক্ষে। সেখানে ছিল একটি বড় বাক্স, যেখানে বিজ্ঞানীর গবেষণার বিভিন্ন নথি আর আবিষ্কার লুকিয়ে ছিল।
সোহিনী ধীরে ধীরে নথিগুলো পড়তে লাগল। সেখানে লেখা ছিল, “জীবনের শক্তি অর্জন করতে হলে সতর্কতা এবং বুদ্ধি অপরিহার্য।”
চার বন্ধু সিদ্ধান্ত নিল, তারা এই গবেষণা নিরাপদে বাইরে নিয়ে যাবে এবং বিশ্বকে জানাবে। কিন্তু তার আগে তাদের আরও কিছু পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ পেরোতে হবে।
রাত নামতে শুরু করল, আর তারা ক্যাম্পে ফিরে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করল। তারা জানতো, তাদের অভিযান এখনো শেষ হয়নি। দ্বীপে আরও অনেক রহস্য তাদের অপেক্ষা করছে।
রাতের নীরবতা পার হয়ে সকালে, চার বন্ধু আবারও গুহার গভীরে প্রবেশ করল। তাদের মনে এক অন্যরকম উৎসাহ আর ভয় ছিল, কারণ দ্বীপের রহস্য এখনো তাদের কাছে পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি।
সোহিনী নোটবুক থেকে একটি অংশ পড়ল, যেখানে বিজ্ঞানী উল্লেখ করেছিল তার সবচেয়ে বড় আবিষ্কারটি একটি গোপন কক্ষে লুকানো আছে, যা পাওয়া সহজ হবে না।
তারা ধীরে ধীরে কক্ষের ভেতর ঢুকল। দেয়ালে ছিল রহস্যময় প্রতীক এবং কিছু অদ্ভুত যন্ত্রাংশ। রাজু বলল, “আমাদের এই প্রতীকগুলো বুঝতে হবে, কারণ এগুলোই পথ দেখাবে।”
সোহিনী আর্টির সাহায্যে প্রতীকগুলো মিলিয়ে একটি গোপন কোড বের করল। কোড অনুযায়ী তারা একটি বাক্স খুলতে সক্ষম হল। বাক্সের মধ্যে ছিল একটি পুরনো ডায়েরি এবং কয়েকটি রহস্যময় যন্ত্র।
ডায়েরিতে লেখা ছিল, “জীবনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই যন্ত্রগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
তারা বুঝতে পারল, তাদের অভিযান এখন আর শুধু গুহার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দ্বীপের সমস্ত গোপন রহস্য উন্মোচন করা।
তারা একসাথে কাজ করতে লাগল, রহস্য উন্মোচনের জন্য। প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছিল, কিন্তু তাদের সাহস ও বন্ধুত্ব ছিল অটুট।
সকাল উঠতেই চার বন্ধুরা আবার নতুন উদ্যমে গুহার গভীরে প্রবেশ করল। আজকের দিনটা তাদের জন্য বিশেষ—কারণ নোটবুকের একটি অদ্ভুত সংকেত অনুসারে, আজ তারা এমন এক জায়গায় পৌঁছাবে যেখানে দ্বীপের সবচেয়ে বড় রহস্য লুকিয়ে আছে।
সোহিনী আগ্রহভরে বলল, “নোটবুক বলছে, ‘জীবনের চাবি সেই গহ্বরেই লুকানো, যেখানে সময় থেমে গেছে।’”
তারা কড়া নজরে চারপাশ পরিদর্শন করতে লাগল। দেয়ালে এক বিশেষ প্রতীক দেখল, যা আগে কখনো দেখেনি কেউ। রাজু বলল, “এই প্রতীকগুলো হয়তো কোনো প্রাচীন ভাষার অংশ।”
আস্তে আস্তে তারা একটি সংকীর্ণ গুহার মুখোমুখি হল, যেখানে গহ্বরের গভীরতা মাপা কঠিন ছিল। মিথিলা ক্যামেরায় ধারণ করতে লাগল সেই রহস্যময় দৃশ্য।
তারা হেঁটে গিয়ে গহ্বরের গভীরে প্রবেশ করল। হঠাৎ একটি ঝকঝকে আলো তাদের চোখে পড়ল। চারজনেই মুগ্ধ হয়ে গেল। আলো থেকে বেরিয়ে এলো এক রহস্যময় বস্তু—একটি প্রাচীন গোলক, যা সোনার মতো ঝকঝক করছিল।
আর্টি কৌতূহল নিয়ে বলল, “এই গোলকটাই কি জীবনের চাবি?” সোহিনী নোটবুক থেকে পড়তে লাগল, “গোলকটি সময় ও জীবনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এর শক্তি খুবই বিপজ্জনক, তাই সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।”
তারা সিদ্ধান্ত নিল, এই গোলক নিয়ে নিজেদের গ্রামে ফিরে যাবে এবং সঠিক বিজ্ঞানীদের কাছে দেবে। কিন্তু তার আগে, তাদের আরও কিছু পরীক্ষা আর রহস্য সমাধান করতে হবে।
রাতের অন্ধকার ভেদ করে চার বন্ধু আবার সেই রহস্যময় দ্বীপে ফিরে এলো। তাদের মনে গভীর এক আশঙ্কা আর উত্তেজনা মিশ্রিত ছিল, কারণ তারা জানতো, দ্বীপের সবচেয়ে বড়ো গোপন এখনো তাদের সামনে উন্মোচিত হয়নি।
সোহিনী নোটবুকের পাতায় চোখ বুলিয়ে বলল, “বিজ্ঞানীর শেষ লেখা অনুযায়ী, আমাদের সামনে এমন এক গোপন দরজা আছে যা শুধু প্রকৃত সাহসীদের জন্য খুলবে।”
তারা গুহার অন্ধকার পথে এগিয়ে চলল। হঠাৎ, তাদের সামনে দাঁড়ালো এক বিশাল পাথরের দরজা, যা কোনো যন্ত্র বা ধাঁধার সাহায্যে খোলা যাবে। আর্টি এগিয়ে এসে দরজার পৃষ্ঠে থাকা জটিল প্রতীকগুলো পর্যালোচনা করল।
রাজু পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “আমাদের এখন এই প্রতীকগুলো থেকে সঠিক সংকেত খুঁজে বের করতে হবে।” তারা মিলিয়ে দেখল প্রতীকগুলো আসলে এক ধরনের ম্যাট্রিক্স, যেখানে কিছু সংখ্যার সমন্বয় দরকার।
সোহিনী দ্রুত নোটবুক থেকে কোডের সূত্র বের করল। চারজন মিলে সেটি প্রবেশ করাল। কিছুক্ষণ পর, দরজার মাঝে গুঁড়োর মতো ধুলো উঠে, ধীরে ধীরে দরজা খুলতে লাগল।
দরজার পিছনে ছিল এক বিশাল কক্ষ, যেখানে রাখা ছিল এক অদ্ভুত যন্ত্র, যা যেন জীবনের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতো। সেখানে ছিল নানাবিধ যন্ত্রাংশ আর লেভার।
তারা বুঝতে পারল, বিজ্ঞানী তার জীবনের শেষ অধ্যায়ে এই যন্ত্রটির মাধ্যমে জীবনের গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন। আর্টি ও রাজু মিলে যন্ত্রটি পরীক্ষা করল।
হঠাৎ যন্ত্রটি থেকে বের হলো এক সোনালী আলো, যা পুরো কক্ষটিকে আলোকিত করে দিল। সেই আলো চার বন্ধুদের মনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়ে দিল।
তারা জানলো, এই যন্ত্রটির সাহায্যে মানুষ জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারে, তবে এর অপব্যবহার মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
সন্ধ্যা নামতে শুরু করল, আর চার বন্ধু ক্যাম্পের পাশে বসে গোধূলির আলোয় নিজেদের অভিযানের কথা ভাবছিল। তারা জানত, তাদের যাত্রা এখন শেষের দিকে আসছে, কিন্তু দ্বীপের সবচেয়ে বড় রহস্য এখনো মেলে ধরতে হবে।
সোহিনী নোটবুক থেকে পড়ল, “বিজ্ঞানীর শেষ নোটে লেখা ছিল, ‘জীবনের আসল রহস্য হলো সময় এবং তার পরিবর্তনের ক্ষমতা।’”
রাজু বলল, “তাহলে আমাদের আজকের চ্যালেঞ্জ হবে সময়ের গতিকে বোঝা এবং নিয়ন্ত্রণ করা।”
তারা আবার গুহার গভীরে প্রবেশ করল। এবার পথটা ছিল আরও সরু আর ঝুঁকিপূর্ণ। গুহার দেয়ালে ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের জটিল সূত্র, যা তাদের পথ প্রদর্শন করছিল।
মিথিলা ক্যামেরায় সেই অদ্ভুত চিত্রগুলো ধারণ করতে লাগল। তারা একেকটা সূত্র বুঝতে চেষ্টা করল, আর বুঝতে পারল এগুলো ছিল গুহার বিভিন্ন স্তরের দরজা খোলার পাসওয়ার্ড।
সোহিনী একটি সূত্রের উপর নজর দিল, যেটা সময় এবং গতি নিয়ে ছিল। তারা সেটি সঠিকভাবে সমাধান করতেই একটি দরজা খুলে গেল।
দরজার পিছনে ছিল এক রহস্যময় ঘর, যেখানে একটি বিশাল যন্ত্র দাঁড়িয়ে ছিল, যেটা সময়ের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আর্টি সাবধানে যন্ত্রটির বোতামগুলো পরীক্ষা করল। হঠাৎ যন্ত্রটি থেকে এক ঝলমলে আলো বের হল, আর চারজন যেন সময়ের গহ্বরে প্রবেশ করল।
তারা বুঝতে পারল, এই যন্ত্রের সাহায্যে তারা সময়ের গতিকে পরিবর্তন করতে পারবে। কিন্তু এর জন্য তাদের সতর্ক থাকতে হবে।
সকাল হতেই চার বন্ধু আবার সেই রহস্যময় দ্বীপে ফিরে এলো। তাদের মনে ছিল এক মিশ্র অনুভূতি—উৎসাহ, আগ্রহ আর একটু ভয়ও। তারা জানত, আজকের দিনটাই তাদের অভিযানের চূড়ান্ত অধ্যায়।
সোহিনী তার হাতে থাকা নোটবুক থেকে পড়তে লাগল, “বিজ্ঞানীর শেষ বার্তা হলো, ‘সত্যিকারের জ্ঞান শুধু সেইজন্য নয়, যে তাকে খুঁজে পায়, বরং যার মাঝে তা সঠিকভাবে ব্যবহারের শক্তি থাকে।’”
তারা গুহার সবচেয়ে গভীর কক্ষে ঢুকল, যেখানে ছিল এক বিশাল যন্ত্র, যা জীবনের বিভিন্ন শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতো। চারজন সাবধানে যন্ত্রটির বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা করতে লাগল।
হঠাৎ, আর্টি একটি বোতাম চাপল। যন্ত্রটি চালু হয়ে এক মায়াবী আলো ছড়ালো। সেই আলো তাদের চারপাশের পুরো গুহাটাকে আলোকিত করল।
তাদের চোখে পড়ল এক বাক্স, যার ওপর লেখা ছিল, “জীবনের চাবিকাঠি।” তারা বাক্স খুলতেই পেল এক গ্লাসের বোতল, যার মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত তরল।
সোহিনী পড়ল, “এই তরলটি জীবনের শক্তিকে পরিবর্তন করতে পারে, তবে এটি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।”
তারা সিদ্ধান্ত নিল, এই আবিষ্কার সঠিক হাতে পৌঁছে দিতে হবে। তারা জানত, এই শক্তি ভুল হাতে পড়লে বিপদ ডেকে আনবে।
তাদের অভিযানের শেষ ধাপ ছিল দ্বীপ থেকে নিরাপদে বের হয়ে সেই গবেষণাগুলো সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
সন্ধ্যা নাগাদ তারা আবার নৌকায় উঠল, নদীর স্রোতে ভেসে আসতে লাগল নিজের গ্রামের দিকে। তাদের মনে আশার আলো, কারণ তারা জানত, এই অভিযান শুধু নিজেদের জন্য নয়, পুরো পৃথিবীর জন্য এক বড় বার্তা নিয়ে এসেছে।
***