Bangla - সামাজিক গল্প

অচেনা বন্ধুত্ব

Spread the love

ইন্দিরা দত্ত


পর্ব ১: জানলার ওপারে

বেলেঘাটা অঞ্চলের পুরনো এক বাড়ির জানালায় বসে আছেন অরুন্ধতী সেন। বয়স প্রায় পঁচাত্তর। বিধবা, প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। একটা সময় ছিল যখন তিনি ছিলেন ‘ম্যাডাম সেন’ — প্রয়োজনে কঠোর, কিন্তু কোমল হৃদয়বিশিষ্ট এক আদর্শ শিক্ষিকা। এখন তিনি শুধু অরুন্ধতী — একা, নিঃসঙ্গ, আর অপেক্ষায় থাকেন রোজ দুপুরে ডাকপিয়নের গলার আওয়াজ শোনার।

তাঁর ছেলে সৌরভ আমেরিকায় চাকরি করে। মেয়ে অদিতি দিল্লিতে থাকে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বছরখানেক আগে একবার এসেছিল… তারপর আর ফেরা হয়নি।

অরুন্ধতী এখন বেশিরভাগ সময় বই পড়ে কাটান। তবে মাঝে মাঝে সে বইয়ের পাতাগুলোর ফাঁকেও যেন খুঁজে ফেরেন কারও কণ্ঠস্বর, কেউ যেন ডাকে—“মা…”

একদিন, দুপুরবেলা দরজায় টোকা পড়ল। দরজা খুলে দেখলেন, এক তরুণী দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট ব্যাগ কাঁধে, মুখে হাসি।

— “আমি রিনু দাশগুপ্ত। সমাজবিজ্ঞানে রিসার্চ করছি। একাকী প্রবীণদের নিয়ে প্রজেক্ট করছি… একটু কথা বলতে পারি আপনার সঙ্গে?”

অরুন্ধতী একটু থমকে গেলেন। অপরিচিত কাউকে এভাবে বাড়িতে ঢোকানোটা স্বাভাবিক নয়, কিন্তু রিনুর চোখে এমন একটা সত্যিকারের আগ্রহ ছিল, যে অরুন্ধতী না বলতে পারলেন না।

রিনু ঘরে ঢুকেই চারপাশে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে বলল,

— “কি দারুণ বইয়ের সংগ্রহ! আপনিই সবটা পড়েছেন?”

অরুন্ধতী হেসে বললেন,

— “আমার স্বামী ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী। আর আমি তো পড়তেই ভালোবাসি। বই আমার একমাত্র সঙ্গী।”

দুই জনে গল্প জমে উঠল। অরুন্ধতী প্রথমে একটু সংকোচে ছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে খুলে বললেন নিজের জীবনের কথা— স্কুলের দিন, বিয়ে, সন্তান, স্বামীর হঠাৎ চলে যাওয়া… একে একে যেন জীবনের পাতাগুলো উল্টে যেতে লাগল।

রিনু মনোযোগ দিয়ে শোনে। সে প্রশ্ন করে, মাথা নেড়ে, মাঝে মাঝে হাসে বা দুঃখ পায়। এ এক অদ্ভুত সম্পর্কের শুরু—যার নাম বন্ধুত্ব কিনা, এখনই বলা যায় না।

ঘণ্টা দেড়েক পর রিনু উঠতে যায়।

— “আমি কাল আবার আসব, যদি আপনি আপত্তি না করেন।”

অরুন্ধতী বললেন,

— “আসবে, খুব ভালো লাগবে।”

রিনু চলে গেলে অরুন্ধতী জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন। বাইরের গলিতে হারিয়ে যাচ্ছে সেই তরুণী। অরুন্ধতী একবার মনে মনে বললেন,

“এই জানলার ওপারে আবার কেউ এল। বহুদিন পর…”

 

পর্ব ২: চায়ের কাপ আর স্মৃতির গল্প

পরদিন ঠিক দুপুর বারোটা নাগাদ কলিং বেল বাজল। অরুন্ধতী জানতেন—রিনুই হবে। ঝুমা, তাঁর পুরনো সহায়িকা, দরজা খুলে দিল। রিনু ঢুকেই হাসিমুখে বলল,

— “আপনাকে বিরক্ত করতে এলাম আবার।”

অরুন্ধতী হেসে বললেন,

— “বিরক্ত না, বরং একটু সঙ্গ পেলাম।”

দু’জনেই বসে পড়লেন ড্রয়িং রুমে। বইয়ের তাকগুলো যেন আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছিল তাদের কথা। টেবিলে চায়ের কাপ রাখলেন ঝুমা। রিনু মুখে চুমুক দিয়ে বলল,

— “এই চায়ের গন্ধটা আমার দাদুর বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়। দাদু প্রতিদিন এমন করে আদা-এলাচ দেওয়া চা বানাতেন।”

অরুন্ধতী চুপচাপ তাকিয়ে ছিলেন রিনুর মুখের দিকে। ওই সরল মুখ, খোলামেলা হাসি—তাঁর ছেলেবেলার ছাত্রছাত্রীদের কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন ক্লাস ফাইভে পড়া এক মেয়ের মুখও এমনই ছিল—চোখে হাজারটা কৌতূহল।

— “আপনি কি স্কুলে পড়াতে খুব ভালোবাসতেন?”

রিনুর প্রশ্নে অরুন্ধতী যেন একটু চমকে উঠলেন। বললেন,

— “খুব। আমার জীবনের সবথেকে সুন্দর দিনগুলো কেটেছে ঐ স্কুলে। শাস্তি দিতে হতো কখনো কখনো, কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা সবাই আমার খুব প্রিয় ছিল।”

চায়ের কাপের ধোঁয়ার ফাঁকে যেন ভেসে উঠল সেই স্কুল বিল্ডিং, টিফিনের শব্দ, লাস্ট বেলের পর ক্লাসরুমে ছুটে বেরিয়ে যাওয়া ছাত্রদের হুল্লোড়। অরুন্ধতীর চোখ দুটো মেঘে ঢাকা।

রিনু আস্তে করে জিজ্ঞাসা করল,

— “আপনার ছেলে-মেয়েরা কতদিন পর ফোন করে?”

অরুন্ধতী হাসলেন। বললেন,

— “সৌরভ ব্যস্ত থাকে… ওর কাজ প্রচণ্ড চাপের। মাঝে মাঝে ইমেল করে। অদিতি তো দুই ছেলেমেয়েকে সামলে নিজেই হাঁপিয়ে যায়। আমারই বা কিসের দুঃখ বলো? তারা ভালো থাকলেই তো শান্তি।”

কিন্তু এই কথাগুলোর মাঝখানেই একটা ক্ষীণ দীর্ঘশ্বাস রয়ে গেল। রিনু বুঝতে পারল।

তখন সে একটা ছোট ডায়েরি বার করল ব্যাগ থেকে।

— “আমি চেয়েছিলাম আজ আপনার জীবনের একটা বিশেষ মুহূর্ত নিয়ে লিখি, যদি আপনি শেয়ার করেন।”

অরুন্ধতী একটু চুপ থেকে বললেন,

— “আমি তো শিক্ষক ছিলাম। কিন্তু নিজে অনেক কিছু শিখেছি ছাত্রদের থেকে। যেমন একবার এক ছেলে আমার কাছে এসে বলেছিল— ‘ম্যাডাম, দুঃখ লুকিয়ে রাখবেন না। নইলে ওটা বড় হয়ে যাবে।’ তখন বুঝেছিলাম, নিজের মনটাকেও মাঝে মাঝে একটু খুলে বলা দরকার।”

রিনু লিখতে লিখতে বলল,

— “আজকে আপনি আমার শিক্ষিকা। আমি শিখছি, আপনি শেখাচ্ছেন।”

চায়ের কাপ খালি হয়ে এসেছে। আলোটা একটু নরম হয়েছে জানালার পাশে। অরুন্ধতী মনে মনে ভাবলেন—এই ছোট্ট মেয়েটা যেন তাঁর জীবনের ফাঁকা জায়গায় নতুন একটা আলো জ্বেলে দিচ্ছে।

দিনটা শেষ হবার আগে, রিনু বলে গেল,

— “আমি আবার আসব, ম্যাডাম। কালকের গল্পটা কিন্তু আরও গভীর হবে!”

অরুন্ধতী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে যেতে দেখলেন। ভেতরে কোথাও একটা অভ্যেস গড়ে উঠছে। এই রোজকার ছোট ছোট গল্প যেন তাঁকে আবার বাঁচতে শিখাচ্ছে।

পর্ব ৩: চিঠির খামে বন্দি অতীত

বিকেলের আলো জানালার কাঁচ ছুঁয়ে পড়ছিল অরুন্ধতীর পড়ার টেবিলে। রিনু এসে গিয়েছে। আজকের আড্ডা একটু অন্যরকম—চায়ের সাথে ঝুমার তৈরি নিমকি, আর রিনুর মুখে হাসির ছায়া একটু বেশি।

— “আজ একটা গল্প বলুন যেটা আপনি কাউকে বলেননি,” রিনু বলল।

অরুন্ধতী একটু চমকে গেলেন। মুখে হাসি রেখে বললেন,

— “সব গল্প বলার নয় রে। কিছু গল্প চিঠির খামে থাকে… খোলা হয় না।”

এই কথা বলেই যেন পুরোনো স্মৃতির ঘরে তালা ভাঙল। হঠাৎ উঠে অরুন্ধতী পাশের আলমারি খুললেন। নিচের তাক থেকে একটা পুরোনো লাল টিনের বাক্স টেনে আনলেন। ধুলো মোছা হলো। ভেতরটা খুলতেই বেরিয়ে এল কিছু পুরনো ছবি, একটা হারিয়ে যাওয়া রজনীগন্ধার শুকনো মালা… আর কয়েকটা হলুদ হয়ে যাওয়া চিঠি।

— “এইগুলো অনেকদিন ধরা হয়নি,” বলে অরুন্ধতী একটা চিঠি হাতে নিলেন। কাগজে হাত রাখতেই যেন একটা নরম কম্পন ছড়িয়ে পড়ল তাঁর আঙুলে।

রিনু চুপ করে বসে। জানে, আজ তার প্রশ্ন নয়, শুধু শোনা।

অরুন্ধতী আস্তে বললেন,

— “এটা সোমেনের লেখা। কলেজের প্রথম প্রেম ছিল। খুবই স্বপ্নময় একটা সময় ছিল সেটা। আমরা তখন ভেবেছিলাম — ‘চিঠি মানেই চিরকাল।’ কিন্তু জীবন তো তার নিজের গল্প লেখে।”

— “বিয়ে হয়নি?”

রিনু খুব সাবধানে প্রশ্ন করল।

— “না, হয়নি। বাবার আপত্তি ছিল। সোমেন বিদেশে চলে যায়। আমি নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে যাই, বিয়ে করি, মা হই… কিন্তু এই চিঠিগুলো ফেলে দিতে পারিনি। প্রতিবার এগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হতো— কেউ একসময় আমাকে ভালোবেসেছিল, নিখাদভাবে। সেটা জানাটা একরকম আশীর্বাদ।”

রিনু অবাক হয়ে শুনে যায়। এই আধুনিক জীবনে যখন প্রেমও ডিজিটাল, তখন এই কাগজে লেখা অনুভব যেন এক অন্যরকম কোমলতা বয়ে আনে।

— “আপনি কি কখনো চিঠির উত্তর পাঠিয়েছিলেন?”

রিনুর প্রশ্নটা অরুন্ধতীর ভেতরে গিয়ে লাগে।

— “না। আমার সাহস হয়নি। আমি ভেবেছিলাম, ভুলে যাওয়াই ভালো। কিন্তু ভুলিনি। আমি শুধু চেপে রেখেছিলাম।”

রিনু আস্তে করে বলল,

— “আমরা অনেক সময় ভাবি কোনো কিছু চাপা দিলে সেটা মুছে যায়। কিন্তু আসলে তো সেটা ঠিক উলটো হয়।”

চিঠিগুলো আবার বাক্সে রেখে দিলেন অরুন্ধতী।

— “তুই ঠিক বলেছিস। এরা আমার জীবনের নিরব সাক্ষী। আজ এতদিন পর আবার একটু আলোতে এল তারা, তোর জন্য।”

সন্ধের আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। জানালার বাইরে কাক ডাকছে। রিনু উঠে পড়ল। কিন্তু তার যাওয়ার আগে অরুন্ধতী একটা চিঠি তার হাতে দিলেন।

— “নাও, এটা পড়ে দেখিস। আমার প্রথম চিঠি ওকে… কিন্তু কোনোদিন পাঠাইনি।”

রিনু চিঠি হাতে নিয়ে বলল,

— “আমি এটাকে যত্নে রাখব। যেন আপনার অতীত আমার বর্তমানের বন্ধু হয়ে যায়।”

অরুন্ধতী মাথা নাড়লেন।

— “বন্ধু তো তুই আগেই হয়ে গেছিস। এই গল্প এখন শুধু আমার নয়, তোরও।”

পর্ব ৪: ফোনকলের অন্য প্রান্তে

সকালের আলো জানালায় এসে পড়েছে। অরুন্ধতী ঘুম থেকে উঠেই স্নান সেরে প্রার্থনা শেষ করেছেন। চা হাতে বারান্দায় বসে ভাবছিলেন—আজ রিনু আসবে কি? গতকাল যখন চিঠির বাক্স খুলে দিয়েছিলেন, মনে হয়েছিল যেন বুকের মধ্যে জমে থাকা কুয়াশাগুলো একটু করে সরছে।

ঠিক তখনই ঘরের ল্যান্ডলাইনটা বেজে উঠল। অরুন্ধতী কিছুটা চমকে উঠে ফোন তুললেন।

— “মা, আমি সৌরভ বলছি।”

গলা শুনেই চেনা গেল, কিন্তু কেমন যেন দূরত্বে মোড়ানো।

— “হ্যাঁ রে… অনেকদিন পর ফোন করলি,” অরুন্ধতীর গলায় কোনো অভিমান নেই, কেবল খানিক নরম পরত।

— “আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম… একটা কথা বলার ছিল।”

সৌরভ থামল।

— “আমি আর শ্রীমতী ভাবছি, তোমাকে আমাদের কাছে নিয়ে যাব আমেরিকায়।”

অরুন্ধতী কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ।

— “আমার এখানে ভালোই লাগে, রে। তোর মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে, তোদের ব্যস্ততা অনেক। আমি গিয়ে কী করব?”

— “মা, একা তো থাকতে পারিস না। ঝুমা তো সব করতে পারে না আর। এখানে থাকলে ভালো চিকিৎসা, ভালো খাওয়া, মানুষজন—সব হবে। আর…” সৌরভ একটু থেমে বলে, “এটাই তো আমার দায়িত্ব।”

ফোন রাখার পর অরুন্ধতী জানালার ধারে দাঁড়ালেন। তাঁর মনে হলো, যাকে চিরদিন চাননি — সেই একাকীত্বই যেন এখন তাঁর নিজস্ব পরিচয় হয়ে উঠেছে। হঠাৎ ছেড়ে দেওয়াটা কি ঠিক হবে?

দুপুরে রিনু এলো। চেহারায় ক্লান্তি, কিন্তু মুখে হাসি।

— “কাল রাতে ঘুম হয়নি ঠিকমতো। আপনার সেই চিঠিটা বারবার পড়ে যাচ্ছিলাম।”

অরুন্ধতী মৃদু হেসে বললেন,

— “চিঠি কি কখনও ঘুমোতে দেয়?”

রিনু থমকে গেল।

— “আপনার কিছু হয়েছে? গলায় অন্যরকম লাগছে।”

অরুন্ধতী ফোনের কথা জানালেন। রিনু শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,

— “আপনার সিদ্ধান্ত আপনার—কিন্তু আমি শুধু একটা কথা বলব, আপনি চলে গেলে শুধু বাড়িটা ফাঁকা হবে না, আমি… খুব একা হয়ে যাব।”

এই সহজ স্বীকারোক্তি শুনে অরুন্ধতীর চোখে জল চলে এল।

— “আমি যখন ভাবি, আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে, তখনই তো বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাই। তোরা এখানে এলে একটা ‘কারণ’ হয়, বুঝলি রিনু?”

রিনু আস্তে বলল,

— “তাহলে একটা কাজ করি? আজ বিকেলে চলুন—আপনার পছন্দের জায়গাগুলো একটু ঘুরে দেখি। হয়তো সিদ্ধান্ত সহজ হবে।”

অরুন্ধতী রাজি হলেন।

বিকেলটা কাটল বইয়ের দোকানে, পুরনো স্কুলের সামনে, গলির কোণে সেই পুরনো ফুচকার দোকানে। স্মৃতির কোলাজে দিনটা যেন জ্যান্ত হয়ে উঠল।

সন্ধেবেলায় ফেরার পথে, অরুন্ধতী বললেন,

— “সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। এখনই যাচ্ছি না। আমার এখানে, আমার গল্পে, একজন পাঠক আছে। তুই।”

রিনু হেসে হাত ধরল তাঁর।

— “এই গল্পের আমি শুধু পাঠক নই, আমি তো চরিত্রও। আপনার পাশে থাকব, যতদিন আপনি চান।”

পর্ব ৫: স্কুলে ফিরে দেখা

রিনুর অনুরোধে আজ অরুন্ধতী ফিরলেন সেই জায়গায়, যেখানে তাঁর জীবনের সবচেয়ে লম্বা সময় কেটেছে—লালমোহন মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। বড় ফটক, জং ধরা লোহার গেট, পেছনের ছোট্ট বাগান—সব কিছুতেই পুরোনো দিনের ছায়া।

এখন স্কুলটায় বড়সড় পরিবর্তন হয়েছে। নতুন দোতলা বিল্ডিং উঠেছে, ক্লাসে স্মার্ট বোর্ড, কম্পিউটার রুম। কিন্তু মাঝখানের সেই গাছটা এখনও আছে—বড় ছাতার মতো ছড়িয়ে।

অরুন্ধতীর চোখে জল এসে গেল।

— “এই গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে একদিন ছাত্রীরা বিদায় নিয়েছিল আমাকে, মনে আছে। সবাই কেঁদেছিল… আমিও।”

রিনু হেসে বলল,

— “আজও যদি ওদের কেউ আপনাকে দেখে, নিশ্চয় চিনে ফেলবে।”

ঠিক সেই সময় এক মহিলা এসে দাঁড়াল সামনে। পরনে সাদা শাড়ি, কপালে লাল টিপ, হাতে attendance register। প্রথমে একবার তাকালেন, তারপর হঠাৎ বিস্ময়ে বলে উঠলেন—

— “ম্যাডাম সেন? আপনি?!”

অরুন্ধতী ভ্রু কুঁচকে বললেন,

— “তুমি… তুমি কি নীতা?”

— “হ্যাঁ ম্যাডাম! আমি তো এখন এখানেই পড়াই! ইংরেজির শিক্ষক। আপনি যখন আমাকে ‘Slow learner’ বলতেন, ভাবতাম আমি কিছুই পারি না। আপনি-ই তো বলেছিলেন, ‘ধৈর্য থাকলে পাহাড়ও নোয়ানো যায়।’ সেই কথাই আজও মনে রেখেছি।”

নীতার চোখে জল। অরুন্ধতী অবাক, খুশি, এবং কিছুটা গর্বিত।

রিনু দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছিল।

একদম সামনে থেকে যেন ইতিহাসের একটা বৃত্ত পূর্ণ হতে দেখছে।

নীতা বলল,

— “আপনি স্কুলে এসেছেন শুনে আমি ছুটে এলাম। আজকের ক্লাস আমি ক্যান্সেল করব। চলুন, ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করুন। তারা জানুক, কারা আমাদের তৈরি করেছেন।”

অরুন্ধতী প্রথমে অস্বস্তি বোধ করলেও পরে রাজি হয়ে গেলেন। স্কুলের অডিটোরিয়ামে বসানো হলো তাঁকে, একঝাঁক কিশোরী তাঁকে ঘিরে বসে পড়ল। কেউ জানে না তিনি কে, কিন্তু মুখের অভিব্যক্তি যেন বলে—“এই মানুষটা কিছু বললে, আমরা শুনব।”

অরুন্ধতী বললেন,

— “তোমরা এখন এমন একটা সময়ে আছো, যখন দুনিয়া তোমাদের অনেক কিছু দেবে—টাকা, মোবাইল, চাকরি। কিন্তু সবকিছুর মাঝেও যদি তুমি ভালো মানুষ না হতে পারো, তবে সবই বৃথা। আর… নিজের গল্প লিখতে শেখো। অন্যের গল্পে বেঁচে থাকলে, নিজের আলোটা হারিয়ে যাবে।”

হালকা হাততালির শব্দ উঠল। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রাপ্তি ছিল সেই নিরব প্রশান্তি, যা ছাত্রীদের চোখে পড়ছিল।

স্কুল থেকে ফেরার পথে, রিনু বলল,

— “আপনার ছাত্রী আপনাকে গুরুদক্ষিণা দিল আজ। দেখলেন?”

অরুন্ধতী মাথা নাড়লেন।

— “তুই জানিস রিনু, এতদিন পর বুঝলাম, আমি শুধু পড়াইনি, ভালোবাসতেও শিখিয়েছি। আর তারাই আজ আমাকে ফের ভালোবাসছে।”

— “আপনি তাহলে ঠিক করেছেন এখানেই থাকবেন, তাই তো?”

রিনু জিজ্ঞেস করল।

— “হ্যাঁ,” বললেন অরুন্ধতী, “এই শহর, এই গাছ, এই স্কুল… আর তুই—এরা সবাই মিলে আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে।”

রিনু চুপচাপ তার হাত ধরল। দুজনের মাঝে যেন এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরি হচ্ছে, দিনে দিনে দৃঢ়তর।

পর্ব ৬: হাসপাতালের বিছানায়, চুপিচুপি কিছু কথা

বিকেলের আলো একটু ঝিমিয়ে পড়েছে। আকাশে সাদা মেঘের দল। অরুন্ধতী সেইদিন বই পড়ছিলেন বারান্দায় বসে। হঠাৎই ঝুমা দৌঁড়ে এসে বলল,

— “দিদিমণি, রিনুদি অসুস্থ। পাশের রোডের ক্লিনিকে ভর্তি করেছে।”

খবরটা যেন মাটি কাঁপিয়ে দিল। কিছু না ভেবেই অরুন্ধতী ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লেন। বয়স তাঁকে আটকাতে পারল না।

হাসপাতালটা ছোট, কিন্তু পরিষ্কার।

রিসেপশনে জিজ্ঞেস করতেই নার্স বলল,

— “রিনু সাহা, ৩১৭ নম্বর কেবিনে। ব্লাড প্রেসার খুব নেমে গেছিল, সঙ্গে হালকা জ্বর। স্ট্রেস-ও থাকতে পারে।”

অরুন্ধতী নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে দেখলেন, রিনু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মুখটা ফ্যাকাসে, তবু শান্ত। তাঁর বুকের মধ্যে হঠাৎ একটা চিনচিনে অনুভব।

রিনুর পাশে বসে হাত ধরে বললেন,

— “তুই না থাকলে আমি কার সঙ্গে কথা বলব রে, পাগলি?”

রিনু আস্তে চোখ খুলল। একগাল হাসি—

— “আপনি এলেন… জানতাম।”

— “তোর কি হয়েছে? ডাক্তার কি বলল?”

— “অনেকগুলো দিন না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। আসলে একটা কাজের প্রজেক্ট ছিল, হাতে সময় কম ছিল… শেষ করে দিতে গিয়ে শরীরটাই বিদ্রোহ করল।”

অরুন্ধতী অবাক হলেন।

— “এত কিছু করলে, আমাকে একটাও বললি না?”

— “চাইনি আপনি চিন্তা করুন। আপনি তো আমার একমাত্র বন্ধু এখন, আপনাকে হারানোর ভয় পাই।”

এই স্বীকারোক্তি অরুন্ধতীর চোখ ভিজিয়ে দিল। তিনি রিনুর কপালে হাত রেখে বললেন,

— “তুই তো আমার ছেলের থেকেও আপন হয়ে গেছিস রে। ওর যত খোঁজ রাখার কথা, সেটা তুই রাখছিস। বড্ড বেশি।”

একটু চুপ থেকে রিনু বলল,

— “আপনি কি জানেন, ছোটবেলায় আমার মা মারা যান। তারপর থেকে আমি সব কিছু নিজের ভিতরেই রেখে দিতাম। কেউ কখনো বুঝতে পারত না আমি কেমন আছি। আপনি প্রথম মানুষ, যাঁকে আমি সত্যি মন খুলে বলতে পেরেছি।”

অরুন্ধতী চুপ করে শুনে গেলেন। সময় যেন থেমে গিয়েছিল ঘরের মধ্যে।

— “আপনি বলতেন না, জীবনের সব গল্প বলা যায় না। কিন্তু আমি আজ বলতে চাই,” রিনু বলল, “আমি আপনাকে ভালোবাসি… মা হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, আশ্রয় হিসেবে। আপনি আছেন বলেই আমার জীবনটা সম্পূর্ণ মনে হয়।”

অরুন্ধতীর চোখে এবার আর জল আটকাল না। তিনি রিনুর কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

— “তুই শুধু একটা গল্পের চরিত্র নোস রিনু, তুই আমার জীবনের পরিণতি। তোর জন্য আজ আমার জীবনটা একটা অর্থ খুঁজে পেল।”

সেই ছোট্ট ঘরে, বেহালার করুণ সুরের মতো, এক নিঃশব্দ সম্পর্ক গড়ে উঠল। রক্তের নয়, ভালোবাসার বাঁধনে গাঁথা।

রিনু ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,

— “আমি এবার সত্যিই ঘুমাবো, নিশ্চিন্তে। আপনি পাশে আছেন তো।”

— “সবসময় থাকব,” অরুন্ধতী মৃদু কণ্ঠে বললেন।

ঘরের আলো নরম, বাতাসে ওষুধের গন্ধ, আর দুটো মানুষের নীরব আশ্বাস—একসাথে গাঁথা এক গল্পের নতুন অধ্যায়।

পর্ব ৭: চুপ করে রেখে যাওয়া স্বীকারোক্তি

রিনুর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দু-একদিনের মধ্যেই অরুন্ধতীর বাড়িতেই তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। অরুন্ধতী নিজের ঘরের পাশে ছোট্ট গেস্টরুমটা গুছিয়ে দিলেন, যেন রিনুর জন্যেই তৈরি।

সেই সকালটা অন্যরকম।

অরুন্ধতী বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন। রিনু ধীরে ধীরে এসে বসল তাঁর পাশে। মুখে একরাশ অস্বস্তি, চোখে কিছু লুকনোর ছায়া।

— “আপনাকে একটা কথা বলার ছিল। আজ বলতেই হবে।”

অরুন্ধতী চমকে তাকালেন।

— “তুই এত গম্ভীর কেন রে?”

রিনু একটু নিঃশ্বাস নিয়ে বলল—

— “আমি এতদিন আপনাকে যেটুকু বলেছি, তার বাইরেও একটা বড় অংশ আছে, যেটা আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমার জীবনের এমন একটা সময়, যেটা আমার আত্মীয়স্বজন কেউই জানে না।”

অরুন্ধতী তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— “তুই যেটুকু বলতে চাইবি, আমি শুনব। বাধ্য করব না। কিন্তু তুই জানিস, আমার কাছে তোর সত্যিটা কখনো তোর মানে বদলাবে না।”

রিনুর চোখ ভিজে উঠল। তারপর ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল—

— “চার বছর আগে আমি একটা সম্পর্কে ছিলাম। খুব গভীর। ওর নাম ছিল তীর্থ। একসঙ্গে থাকার স্বপ্ন দেখতাম আমরা। কিন্তু হঠাৎ একদিন সে হারিয়ে গেল। ফোন বন্ধ, ঠিকানা বদলে ফেলল। আমি বুঝতেও পারলাম না—কী ভুল করেছিলাম।”

— “তারপর?”

অরুন্ধতীর কণ্ঠ নিচু, কিন্তু তীক্ষ্ণ।

— “তীর্থর চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর আমি বুঝলাম, আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমি একা ছিলাম, কাঁদতাম, ভয় পেতাম। তখনও পরিবার জানত না কিছু। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, সন্তানটাকে পৃথিবীতে আনব না। নিজের ক্যারিয়ার, মানসিক অবস্থা—সবই তখন একদম অন্ধকার।”

— “আমি অপারেশনের পর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল, আমি কিছু হারিয়েছি, যা আর কখনও ফিরে পাব না। সেই দিনের পর থেকেই নিজের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম। কাউকে কাছে আসতে দিইনি।”

অরুন্ধতী নিঃশব্দে শুনছিলেন। তাঁর হাত ধীরে রিনুর হাতে রাখলেন।

— “তুই একটা কঠিন পথ পার করেছিস রে… একা। এখন তো বুঝতে পারছিস, তোর কোনো দোষ ছিল না?”

রিনু ফুঁপিয়ে উঠল।

— “কিন্তু সমাজ তো সহজে ক্ষমা করে না, না? আমি নিজেকেই ক্ষমা করতে পারিনি এতদিন।”

অরুন্ধতী উঠে দাঁড়িয়ে রিনুর কাঁধে হাত রাখলেন—

— “সমাজের কথা না ভেবে তুই নিজের চোখে নিজেকে দেখ। তুই বাঁচতে চেয়েছিস, নিজের জন্য, নিজের সম্মানের জন্য—এটাই তো সাহস। আমি তোকে আর ভালোবাসি এখন, কারণ তুই নিজের সঙ্গে লড়েছিস। আমি গর্বিত তোর ওপর।”

রিনু তাকিয়ে থাকল তাঁর দিকে। চোখে বিস্ময়, প্রশান্তি, ভালবাসা।

— “আপনি আমায় গ্রহণ করছেন?”

— “আমি তো তোকে আগেই মেনে নিয়েছি, রে। আজ শুধু নতুন করে জেনেছি, তুই কতটা অসাধারণ।”

সেদিন দুপুরে, প্রথমবারের মতো অরুন্ধতী রান্নাঘরে ঢুকে রিনুর জন্য হাতের রান্না করলেন—খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা। একটুও শব্দ না করে দুজনে খেয়ে নিলেন। একটা নিঃশব্দ স্বীকারোক্তি, আরেকটা গভীর মুক্তি।

রিনু জানে, জীবনের যত দাগ থাকুক, অরুন্ধতীর ভালোবাসার ছায়ায় তার সবটাই ঢেকে গেছে। এবং এই সম্পর্ক—রক্তের নয়, হৃদয়ের—চিরকাল অটুট থাকবে।

পর্ব ৮: একটি চিঠি, একটি সিদ্ধান্ত

শীতের শুরু, সকালের রোদটা জানালার কাঁচ ভেদ করে বারান্দায় এসে পড়েছে। অরুন্ধতী চা নিয়ে বসেছেন নিজের প্রিয় চেয়ারে। সামনে রিনু, খবরের কাগজ খুলে কিছু পড়ছিল। ঠিক সেই সময় ডাকপিয়নের ঘণ্টা।

অরুন্ধতী চিঠিটা হাতে নিয়ে প্রথমে অবাক হলেন।

হাতে লেখা ঠিকানা। সাদা খামে নীল কালিতে লেখা প্রাপক—”অরুন্ধতী সেন”।

প্রেরক—”অভিক সেন”।

তাঁর ছেলে। যে বছর পাঁচেক আগে বিদেশে চলে গিয়ে আর তেমন যোগাযোগ রাখেনি।

অরুন্ধতীর বুকের মধ্যে কেমন যেন ধক করে উঠল।

রিনু বুঝতে পেরে বলল,

— “আপনার ছেলে?”

তিনি মাথা নাড়লেন।

— “হ্যাঁ… অনেকদিন পর লিখেছে। দেখি কী বলেছে।”

খাম খুলে চিঠি বের করলেন। ছেলেটির হাতের লেখা আর আগের মতোই।

চিঠিতে লেখা:

**“মা,

অনেক দেরি করে লিখছি, জানি। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের ভুল বুঝতে একটু সময় লেগে যায়।

তোমার সঙ্গে আমার দূরত্বটা আসলে আমার অহঙ্কার ছিল।

তোমাকে সবসময় একা, কঠিন, নিয়মে বাঁধা মানুষ বলে ভেবেছি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর যখন তুমি নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলে, তখন আমি বুঝিনি, তার পেছনে কতটা কষ্ট লুকোনো ছিল।

কিছুদিন আগে রিনুর ব্লগে তোমার গল্প পড়লাম। ‘অচেনা বন্ধুত্ব’ নামে সে তোমার সম্পর্কে লিখেছে—একজন নারী, যিনি একা থেকেও কখনো ভেঙে পড়েননি।

তখন বুঝলাম, আমি আসলে তোমাকে চিনতেই পারিনি।

আমি ফিরতে চাই, মা।

তোমার কাছে, তোমার জীবনে।

আশা করি তুমি এখনও ক্ষমা করতে জানো।

তোমার ছেলে,

— অভিক”**

চিঠি পড়ে শেষ করতে করতে অরুন্ধতীর চোখে জল।

রিনু ধীরে কাছে এসে বসে বলল,

— “আপনি কি ওকে ক্ষমা করতে পারবেন?”

— “ক্ষমা?”

অরুন্ধতী একটু হেসে বললেন,

— “ও তো আমার ছেলে। ভালোবাসার জায়গা থেকে রাগ করেছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি, আমার সত্যিকারের বড় হওয়া তখনই হবে, যখন আমি মাফ করে আবার বুকে টেনে নেব।”

দুপুরে রিনু একটু চুপ করে থাকল। তারপর বলল,

— “আপনি চাইলে আমি সরে যাব। অভিক ফিরলে আপনার পাশে ও থাকবে। আমার আর প্রয়োজন পড়বে না।”

অরুন্ধতী এবার শক্ত গলায় বললেন,

— “আর একটা কথা বলবি না, রিনু। তুই এখন এই পরিবারের অংশ। অভিক ফিরলে তোকে জানবে। হয়তো অবাক হবে, কিন্তু একদিন বুঝবে—তুই আমার ছায়া, আমার সঙ্গী, আমার গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।”

রিনু হাসল।

— “আপনিই আমার গল্পটা বাঁচিয়ে রেখেছেন।”

সন্ধ্যায় অরুন্ধতী চিঠির জবাব লিখলেন। খুব সংক্ষেপে—

“বাড়ির ঠিকানা তোকে ভুলতে দিইনি। ফিরে আয়, অভিক।

তোর জন্য অপেক্ষা করছি

—আমি আর তোর নতুন দিদি রিনু।”

শেষ দৃশ্যে,

রিনু আর অরুন্ধতী বারান্দায় বসে আছেন, মাঝে একটা খালি চেয়ার—অভিকের জন্য।

হালকা ঠান্ডা বাতাসে দুলছে একটা কাগজের ঘুড়ি।

তাদের গল্প শেষ হয়নি, বরং নতুনভাবে শুরু হচ্ছে।

সমাপ্ত

Lipighor_1749581315736.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *